![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
পরবাসে পরিযায়ী
Farha Kazi
আজকে ভারতে চাঁদরাত। অনেকটা দূরে বসে আমি ভাবছি কি হচ্ছে আমার বাড়িতে, আমার পাড়াতে। প্রতিবারের মতো এবারেও নিশ্চয়ই সুন্দর করে সাজিয়েছে পুরো শহরটা।
আমাদের বাড়ির সামনের ক্লাবে সার সার দিয়ে বসে আলুকাবলি, আচার, ফুচকা, আইসক্রীম এবং আরো কতকি খাবারের স্টল!
আমি বহুদূরে অতলান্তিক পেরিয়ে অন্য এক মহাদেশে, তবু মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছি নতুন জামা পরে ছোটো ছোটো বাচ্চারা দুইহাতে মেহেন্দি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবার কাছে ম্যাচিং ছোট্টো ব্যাগ যাতে সারাবছরের জমানো টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে তারা বুঝতে পারছে না আইসক্রীম খাওয়া উচিত নাকি বারোভাজা। সবথেকে সমস্যার হলো মাইক। আমাদের বাড়ির তিনকোণ থেকে তিনটে মাইকের আওয়াজ আসে, যাতে তিনরকম গান বাজে। আমাদের বাড়িতে তা ইউনিফায়েড হয়ে বিতিকিচ্ছিরি একটা আওয়াজ তৈরী হয়। আজানের সময় যা একটু বাঁচোয়া। অবশ্য কখনো কখনো পাড়ার কেউ অসুস্থ থাকলেও বন্ধ রাখে।
কাল ঈদের নামাজের সময় জানিয়ে পাড়ায় পাড়ায় অ্যানাউন্স হবে। সবাই আনন্দে হৈ দিয়ে উঠবে। বাড়ি বাড়ি প্রস্তুতি। মোমসদের বিউটি পার্লারে আজ বহুরাত অবধি ভীড় থাকবে। পাড়ার মেয়েরা বাড়ির সব কাজ শেষ করে অনেক রাতে আসবে একটু ফেসিয়াল, আই ব্রো করতে যাতে ঈদের দিন তাদের একটু সুন্দর লাগে।
ছোটোবেলায় ঈদের অন্যরকম মজা ছিলো। সে মজা ভুলবার নয়। পনেরোটা রোজা বাকি থাকতে থাকতেই নতুন জামা কেনার জন্য নিউয়ের বায়না শুরু হতো। প্রতিদিন সন্ধ্যেয় নিয়ম করে একবার কাঁদতে বসতো নিউ। তারপর পুরো পাড়ার সবার নতুন জামা হয়ে গেলে রোজার একেবারে শেষের দিকে আম্মু আমাদেরকে বাজার নিয়ে গিয়ে ফ্রক আর ম্যাচিং ক্লিপ কিনে দিতো। আমার দাদা বেঁচে থাকতে আমাদের দুটো জামা হতো ঈদে। সলমা চুমকি বসানো সালোয়ার কিংবা ফ্রিলের ফ্রক।
ঈদের আগেরদিন সব্জিবাজারের চুড়ির দোকানগুলোতে তুমুল ভীড়। রাণীগঞ্জ চৌমাথা থেকে স্টেশন অবধি জ্যাম। পুরো বর্ধমান নেমেছে শেষ মূহুর্তের বাজার করতে... শুকনো ফল, বাদাম, কিসমিস, সিমাই, লাচ্ছা, বিরিয়ানির মশলা, মাংস, দুধ। পুরো চত্বর গমগম করছে। সবাই আনন্দে। ঈদের আগের দিন থেকে সবাই কেমন জানি ভারী খুশি হয়ে যায়। জীবনের সব দুঃখ ভুলে মেতে ওঠে উৎসবের আনন্দে।
নিউ আমার কাছে মেহেন্দি পরবে বলে ধৈর্য্য ধরে বসে আছে। এই ছোট্টোবোনটা একসময় আমার উপর ভারী নির্ভরশীল ছিলো। আইলাইনার থেকে আরম্ভ করে মেহেন্দি সবকিছুই আমাকে পরিয়ে দিতে হবে। আমার কাছে না সাজলে তার মন ভরতো না। সেই মেয়ে এখন ফ্যাশন কুইন হয়ে গেছে। ফ্যাশনে আমকে গুনেগুনে পাঁচ গোল দেবে!
বড়ো হয়ে যাওয়ার পরে ঈদ অন্যরকম। এখন কেউ আর নতুন জামা কিনে দেয়না। এখন কেউ আর যত্ন করে মেহেন্দি পরিয়ে দেয়না। বড়ো হওয়ার জ্বালা অনেক, দায়িত্বও।
সময়গুলো বদলে যায়, মানুষগুলোও... শৈশব থেকে যায়।
প্রতি বছর চাঁদ রাত আসে, স্মৃতি ভার করে মনের মণিকোঠায়।
খুব ভালো ঈদ কাটুক। সবাই যেন ভালো থাকে এই প্রার্থনা পবিত্র দিনে।
চাঁদ রাতের শুভেচ্ছা। আলো, মেহেন্দি, চুড়িতে ঝলমল হোক চাঁদ রাত। ভালো থেকো, ভালো রেখো। এটাই হোক পবিত্র চাঁদ রাতের প্রার্থনা।
আমাদের বাড়ির সামনের ক্লাবে সার সার দিয়ে বসে আলুকাবলি, আচার, ফুচকা, আইসক্রীম এবং আরো কতকি খাবারের স্টল!
আমি বহুদূরে অতলান্তিক পেরিয়ে অন্য এক মহাদেশে, তবু মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছি নতুন জামা পরে ছোটো ছোটো বাচ্চারা দুইহাতে মেহেন্দি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবার কাছে ম্যাচিং ছোট্টো ব্যাগ যাতে সারাবছরের জমানো টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে তারা বুঝতে পারছে না আইসক্রীম খাওয়া উচিত নাকি বারোভাজা। সবথেকে সমস্যার হলো মাইক। আমাদের বাড়ির তিনকোণ থেকে তিনটে মাইকের আওয়াজ আসে, যাতে তিনরকম গান বাজে। আমাদের বাড়িতে তা ইউনিফায়েড হয়ে বিতিকিচ্ছিরি একটা আওয়াজ তৈরী হয়। আজানের সময় যা একটু বাঁচোয়া। অবশ্য কখনো কখনো পাড়ার কেউ অসুস্থ থাকলেও বন্ধ রাখে।
কাল ঈদের নামাজের সময় জানিয়ে পাড়ায় পাড়ায় অ্যানাউন্স হবে। সবাই আনন্দে হৈ দিয়ে উঠবে। বাড়ি বাড়ি প্রস্তুতি। মোমসদের বিউটি পার্লারে আজ বহুরাত অবধি ভীড় থাকবে। পাড়ার মেয়েরা বাড়ির সব কাজ শেষ করে অনেক রাতে আসবে একটু ফেসিয়াল, আই ব্রো করতে যাতে ঈদের দিন তাদের একটু সুন্দর লাগে।
ছোটোবেলায় ঈদের অন্যরকম মজা ছিলো। সে মজা ভুলবার নয়। পনেরোটা রোজা বাকি থাকতে থাকতেই নতুন জামা কেনার জন্য নিউয়ের বায়না শুরু হতো। প্রতিদিন সন্ধ্যেয় নিয়ম করে একবার কাঁদতে বসতো নিউ। তারপর পুরো পাড়ার সবার নতুন জামা হয়ে গেলে রোজার একেবারে শেষের দিকে আম্মু আমাদেরকে বাজার নিয়ে গিয়ে ফ্রক আর ম্যাচিং ক্লিপ কিনে দিতো। আমার দাদা বেঁচে থাকতে আমাদের দুটো জামা হতো ঈদে। সলমা চুমকি বসানো সালোয়ার কিংবা ফ্রিলের ফ্রক।
ঈদের আগেরদিন সব্জিবাজারের চুড়ির দোকানগুলোতে তুমুল ভীড়। রাণীগঞ্জ চৌমাথা থেকে স্টেশন অবধি জ্যাম। পুরো বর্ধমান নেমেছে শেষ মূহুর্তের বাজার করতে... শুকনো ফল, বাদাম, কিসমিস, সিমাই, লাচ্ছা, বিরিয়ানির মশলা, মাংস, দুধ। পুরো চত্বর গমগম করছে। সবাই আনন্দে। ঈদের আগের দিন থেকে সবাই কেমন জানি ভারী খুশি হয়ে যায়। জীবনের সব দুঃখ ভুলে মেতে ওঠে উৎসবের আনন্দে।
নিউ আমার কাছে মেহেন্দি পরবে বলে ধৈর্য্য ধরে বসে আছে। এই ছোট্টোবোনটা একসময় আমার উপর ভারী নির্ভরশীল ছিলো। আইলাইনার থেকে আরম্ভ করে মেহেন্দি সবকিছুই আমাকে পরিয়ে দিতে হবে। আমার কাছে না সাজলে তার মন ভরতো না। সেই মেয়ে এখন ফ্যাশন কুইন হয়ে গেছে। ফ্যাশনে আমকে গুনেগুনে পাঁচ গোল দেবে!
বড়ো হয়ে যাওয়ার পরে ঈদ অন্যরকম। এখন কেউ আর নতুন জামা কিনে দেয়না। এখন কেউ আর যত্ন করে মেহেন্দি পরিয়ে দেয়না। বড়ো হওয়ার জ্বালা অনেক, দায়িত্বও।
সময়গুলো বদলে যায়, মানুষগুলোও... শৈশব থেকে যায়।
প্রতি বছর চাঁদ রাত আসে, স্মৃতি ভার করে মনের মণিকোঠায়।
খুব ভালো ঈদ কাটুক। সবাই যেন ভালো থাকে এই প্রার্থনা পবিত্র দিনে।
চাঁদ রাতের শুভেচ্ছা। আলো, মেহেন্দি, চুড়িতে ঝলমল হোক চাঁদ রাত। ভালো থেকো, ভালো রেখো। এটাই হোক পবিত্র চাঁদ রাতের প্রার্থনা।
282
বার পঠিত (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে)
শেয়ার করুন |
আপনার মতামত দেবার জন্য নিচের যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করুন