![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
হারানো ফিল্ম ক্রিটিকের সন্ধানে
Parichay Patra
রাজকাহিনীর বেশকিছু রিভিউ বাজারে ঘুরছে, যার মধ্যে দুটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। একটি অনুজপ্রতিম বন্ধু সুয়াভোর রচনা, অন্যটি অভিলাষ রায় নামক একজনের। আমি সুয়াভোর লেখাটি পড়ে প্রচুর হেসেছি, মজা পেয়েছি, অভিলাষবাবুর লেখাটি আমার অপছন্দ হয়েছে, অপেশাদার মনে হয়েছে। রাজকাহিনী আমি দেখিনি, দেখার সুযোগ বা উৎসাহ নেই, তাই সে নিয়ে কিছু বলব না। কিন্তু সমস্যা হল এই যে বেশ কয়েকজন বন্ধু, যারা দর্শক হিসাবে সৃজিতের ছবি পছন্দ করেন, তারা কিছু আপত্তি তুলেছেন, কিছু কিছু কার্টুন ইত্যাদিও বানিয়েছেন। তাঁদের প্রধান বক্তব্য, যেমন অনিকেত চট্টোপাধ্যায় স্পষ্টই বলেছেন, বাংলা সাহিত্য পড়তে গেলে যেমন বিশ্বের অন্য নানা সাহিত্য পড়া বাধ্যতামূলক নয় তেমন বাংলা ছবি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, দেখতে গেলে, কেন ডায়াজ, গোদার, ফেলিনি দেখা অবশ্যকর্তব্য (আমি প্রায় ভার্বেটিম কোট করলাম)।
এখান থেকে লাভ ডায়াজকে শুরুতেই বাদ দিলাম, এনাকে বাংলা বাজারে চেনানোর দায় আমি যেচে নিয়েছি কার্যত, আর বাঙালি কতজন লাভের ছবি দেখেছেন তা সম্ভবত হাতে গুনে বলা যায়। গতবারের ফেস্টিভ্যালে আমার প্রবল ফেসবুক প্রচারণা সত্ত্বেও নন্দন তিনে লাভের পৌনে ৬ ঘণ্টার ‘ফ্রম হোয়াট ইজ বিফোর’ দেখতে শেষ পর্যন্ত ১০ জন পেরেছিলেন বলে শুনেছি। লাভ দেখা রীতিমত ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জিং, শরীর যখন আর দেয় না তখন দাঁতে দাঁত চেপে মনের জোরে ছবিটা দেখতে হয় শেষের ঐশ্বরিক অনুভূতির জন্য, অনেকটা বিভূতিভূষণের জলসত্র গল্পের শিরোমণি মশায় যেমন মরুভূমি প্রতিম মাঠ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন মনের এই জোরে যে পথের শেষে তাঁর জন্য এক ঘটি ঠাণ্ডা কনকনে হিমজল পুরস্কার স্বরূপ রয়েছে। বহু লোক পালিয়েছে, ঘুমিয়ে পড়েছে, ছটফট করেছে, এমনকি আমার প্রিয়তম মাস্টারমশাইদের অন্যতমও এই শহরে লাভের ৮ ঘণ্টার ‘মেলানকলিয়া’ দেখতে গিয়ে এক চতুর্থাংশ দেখে পালিয়ে নিজ জানমালের হেফাজত করেন।
আর গোদার ফেলিনি প্রমুখ? বাঙালিরা বরাবরই নামসর্বস্বভাবে এঁদের উচ্চারণ করেন। যদিচ ভুলেও লেট গোদার নিয়ে বেশি কথা বলেন না, লেট গোদার বড় কঠিন ঠাঁই, কাছা খুলে যাবে। তো কিছু টিপিক্যাল নন্দন ব্র্যান্ড আছেন বইকি যারা এই নামগুলি ব্যবহার করেন, সে নিয়ে প্রশ্ন নেই। সৃজিতের বা বাংলা বাজারের অন্য কারুর ছবি নিয়ে বেশি কথাও বলার কিছু নেই। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল এই বিচ্ছিন্নতার ধারণা কোথা থেকে আসছে? কিভাবে তৈরি হল এই ইনসুলারিটি? আন্তর্জাতিক সিনেমার তুলনা-প্রতিতুলনার ধারণা অবান্তর, বাংলার মাটি বাংলার জল, এটা কেন মনে হল?
ভাবলেই মনে হবে এর জন্য আমাদের ফিল্ম সোসাইটি আর ফিল্ম স্টাডিজ উভয়েরই দায় বড় কম নয়। ফিল্ম সোসাইটি ফিল্ম ক্রিটিসিজমের কোন দীর্ঘস্থায়ী ধারাই তৈরি করতে পারেনি কণ্টিনেণ্টের মত। আর ফিল্ম স্টাডিজ জনপ্রিয় সিনেমার কালচারালিস্ট আলোচনায়, ইতিহাসাশ্রয়ী গবেষণায়, তার সঙ্গে নেশন-স্টেটের সম্পর্ক খুঁজে পেতে এত বেশি ইনভেস্ট করেছে যে সিনেমার ট্রান্স-ন্যাশনাল সংযোগের জায়গাগুলিকে ভাবতে সে ভুলে গিয়েছিল। এবং ভুলে গিয়েছিল ফিল্ম-টেক্সটটির বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক সংযোগের প্রশ্ন ছাড়াও একটা মস্ত জিনিস আছে, সেটা টেক্সটটা স্বয়ং। তার মিজঁ-সীন, তার ইমেজ, তার শব্দ, তার সময়ের এক্সপ্লোরেশন, তার দৃষ্টিপাত (কে দেখছে? কোথায় বসছে রেকর্ডিং অ্যাপারেটাস, কেন বসছে?), তার ফিজিক্যালিটি, তার মেটিরিয়ালিটি। মহৎ ক্রিটিক ছবির এনক্লোজড বিশ্বে ঢুকে পড়বেন অন্তর্ঘাতের মত, এবং খুঁজে নেবেন বা বানিয়ে নেবেন করিডোর, যা খুলে যাবে ছবির মুক্তবিশ্বে, এক ছবি থেকে আরেক ছবিতে, ছবির সমালোচনার ভাষা হয়ে যাবে ছবিরই ভাষা। যেমন জোনাথন রোজেনবম কিয়ারোস্তামির ‘টেস্ট অব চেরি’র উপরে লেখা প্রবন্ধে ছবির স্টাইলকেই হুবহু রচনাবয়বে নিয়ে এসেছিলেন, একটি তখন অপরের প্রতিবিম্ব, একে আমরা বলি মাইমেটিক ক্রিটিসিজম। লেসলি স্টার্ন যেমন ছবিকে পড়েন ক্রমাগত নিজের জীবন আর ছবি-শরীরে ঢুকে বেরিয়ে, যা একেবারেই এক শারীরিক অভিজ্ঞতা, ছবির রিদম আর একো, সেনসেশন আর স্টিমুলেশন সমস্ত কিছুতে তখন লেখা রেসপণ্ড করতে শুরু করে। এই হচ্ছে দ্য সাটল সায়েন্স এবং এক্স্যাক্ট আর্ট অব ফিল্ম ক্রিটিসিজম, যেখানে কোন ফুলিশ ওয়াণ্ড-ওয়েভিং না থাকায় সবাই বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে এও ম্যাজিক। বহু সাধনার প্রয়োজন এমনিতেই। ইনসুলার হয়ে থাকলে, সারাজীবন ইন্ডিজিনাস ছবির আলোচনাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখলে, দেশের ছবির আলোচনায় অন্য প্রসঙ্গ না আনতে চাইলে, কি করে আমাদের দেশে ফিল্ম ক্রিটিসিজম ডেভেলপ করবে?
এখান থেকে লাভ ডায়াজকে শুরুতেই বাদ দিলাম, এনাকে বাংলা বাজারে চেনানোর দায় আমি যেচে নিয়েছি কার্যত, আর বাঙালি কতজন লাভের ছবি দেখেছেন তা সম্ভবত হাতে গুনে বলা যায়। গতবারের ফেস্টিভ্যালে আমার প্রবল ফেসবুক প্রচারণা সত্ত্বেও নন্দন তিনে লাভের পৌনে ৬ ঘণ্টার ‘ফ্রম হোয়াট ইজ বিফোর’ দেখতে শেষ পর্যন্ত ১০ জন পেরেছিলেন বলে শুনেছি। লাভ দেখা রীতিমত ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জিং, শরীর যখন আর দেয় না তখন দাঁতে দাঁত চেপে মনের জোরে ছবিটা দেখতে হয় শেষের ঐশ্বরিক অনুভূতির জন্য, অনেকটা বিভূতিভূষণের জলসত্র গল্পের শিরোমণি মশায় যেমন মরুভূমি প্রতিম মাঠ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন মনের এই জোরে যে পথের শেষে তাঁর জন্য এক ঘটি ঠাণ্ডা কনকনে হিমজল পুরস্কার স্বরূপ রয়েছে। বহু লোক পালিয়েছে, ঘুমিয়ে পড়েছে, ছটফট করেছে, এমনকি আমার প্রিয়তম মাস্টারমশাইদের অন্যতমও এই শহরে লাভের ৮ ঘণ্টার ‘মেলানকলিয়া’ দেখতে গিয়ে এক চতুর্থাংশ দেখে পালিয়ে নিজ জানমালের হেফাজত করেন।
আর গোদার ফেলিনি প্রমুখ? বাঙালিরা বরাবরই নামসর্বস্বভাবে এঁদের উচ্চারণ করেন। যদিচ ভুলেও লেট গোদার নিয়ে বেশি কথা বলেন না, লেট গোদার বড় কঠিন ঠাঁই, কাছা খুলে যাবে। তো কিছু টিপিক্যাল নন্দন ব্র্যান্ড আছেন বইকি যারা এই নামগুলি ব্যবহার করেন, সে নিয়ে প্রশ্ন নেই। সৃজিতের বা বাংলা বাজারের অন্য কারুর ছবি নিয়ে বেশি কথাও বলার কিছু নেই। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল এই বিচ্ছিন্নতার ধারণা কোথা থেকে আসছে? কিভাবে তৈরি হল এই ইনসুলারিটি? আন্তর্জাতিক সিনেমার তুলনা-প্রতিতুলনার ধারণা অবান্তর, বাংলার মাটি বাংলার জল, এটা কেন মনে হল?
ভাবলেই মনে হবে এর জন্য আমাদের ফিল্ম সোসাইটি আর ফিল্ম স্টাডিজ উভয়েরই দায় বড় কম নয়। ফিল্ম সোসাইটি ফিল্ম ক্রিটিসিজমের কোন দীর্ঘস্থায়ী ধারাই তৈরি করতে পারেনি কণ্টিনেণ্টের মত। আর ফিল্ম স্টাডিজ জনপ্রিয় সিনেমার কালচারালিস্ট আলোচনায়, ইতিহাসাশ্রয়ী গবেষণায়, তার সঙ্গে নেশন-স্টেটের সম্পর্ক খুঁজে পেতে এত বেশি ইনভেস্ট করেছে যে সিনেমার ট্রান্স-ন্যাশনাল সংযোগের জায়গাগুলিকে ভাবতে সে ভুলে গিয়েছিল। এবং ভুলে গিয়েছিল ফিল্ম-টেক্সটটির বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক সংযোগের প্রশ্ন ছাড়াও একটা মস্ত জিনিস আছে, সেটা টেক্সটটা স্বয়ং। তার মিজঁ-সীন, তার ইমেজ, তার শব্দ, তার সময়ের এক্সপ্লোরেশন, তার দৃষ্টিপাত (কে দেখছে? কোথায় বসছে রেকর্ডিং অ্যাপারেটাস, কেন বসছে?), তার ফিজিক্যালিটি, তার মেটিরিয়ালিটি। মহৎ ক্রিটিক ছবির এনক্লোজড বিশ্বে ঢুকে পড়বেন অন্তর্ঘাতের মত, এবং খুঁজে নেবেন বা বানিয়ে নেবেন করিডোর, যা খুলে যাবে ছবির মুক্তবিশ্বে, এক ছবি থেকে আরেক ছবিতে, ছবির সমালোচনার ভাষা হয়ে যাবে ছবিরই ভাষা। যেমন জোনাথন রোজেনবম কিয়ারোস্তামির ‘টেস্ট অব চেরি’র উপরে লেখা প্রবন্ধে ছবির স্টাইলকেই হুবহু রচনাবয়বে নিয়ে এসেছিলেন, একটি তখন অপরের প্রতিবিম্ব, একে আমরা বলি মাইমেটিক ক্রিটিসিজম। লেসলি স্টার্ন যেমন ছবিকে পড়েন ক্রমাগত নিজের জীবন আর ছবি-শরীরে ঢুকে বেরিয়ে, যা একেবারেই এক শারীরিক অভিজ্ঞতা, ছবির রিদম আর একো, সেনসেশন আর স্টিমুলেশন সমস্ত কিছুতে তখন লেখা রেসপণ্ড করতে শুরু করে। এই হচ্ছে দ্য সাটল সায়েন্স এবং এক্স্যাক্ট আর্ট অব ফিল্ম ক্রিটিসিজম, যেখানে কোন ফুলিশ ওয়াণ্ড-ওয়েভিং না থাকায় সবাই বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে এও ম্যাজিক। বহু সাধনার প্রয়োজন এমনিতেই। ইনসুলার হয়ে থাকলে, সারাজীবন ইন্ডিজিনাস ছবির আলোচনাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখলে, দেশের ছবির আলোচনায় অন্য প্রসঙ্গ না আনতে চাইলে, কি করে আমাদের দেশে ফিল্ম ক্রিটিসিজম ডেভেলপ করবে?
428
বার পঠিত (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে)
শেয়ার করুন |

Re: হারানো ফিল্ম ক্রিটিকের সন্ধানে
"ছবির সমালোচনার ভাষা হয়ে যাবে ছবিরই ভাষা। যেমন জোনাথন রোজেনবম কিয়ারোস্তামির ‘টেস্ট অব চেরি’র উপরে লেখা প্রবন্ধে ছবির স্টাইলকেই হুবহু রচনাবয়বে নিয়ে এসেছিলেন, একটি তখন অপরের প্রতিবিম্ব, একে আমরা বলি মাইমেটিক ক্রিটিসিজম।"
এভাবে কি "বাবা কেন চাকর"এর সমালোচনা লেখা যায়? একবারটি এমন একটা ছবির সমালোচনা লিখবেন ভাই।
কিন্তু, এখনো বোঝা গেলো না যে বজরঙ্গি ভাইজান দেখতে গেলে কেনো ফ্যানি অ্যান্ড আলেকজেন্ডার বা কোমল গান্ধার দেখতে হবে।
এভাবে কি "বাবা কেন চাকর"এর সমালোচনা লেখা যায়? একবারটি এমন একটা ছবির সমালোচনা লিখবেন ভাই।
কিন্তু, এখনো বোঝা গেলো না যে বজরঙ্গি ভাইজান দেখতে গেলে কেনো ফ্যানি অ্যান্ড আলেকজেন্ডার বা কোমল গান্ধার দেখতে হবে।

Re: হারানো ফিল্ম ক্রিটিকের সন্ধানে
যেহেতু এই লেখাটা নিয়ে অনেক আলোচনা এখানেও চলছে, লিংটা রইলো।
https://www.facebook.com/groups/guruchandali/1094934610524484/?notif_t
=group_comment_follow
https://www.facebook.com/groups/guruchandali/1094934610524484/?notif_t
=group_comment_follow

Re: হারানো ফিল্ম ক্রিটিকের সন্ধানে
অনগ, সুয়াভোর লেখাটি ফেসবুকে পাবেন। আর সোসেন, পৌনে বা পুরো ছয় ঘণ্টার ছবি লাভের কাছে কিছুই নয়। ওনার ৮, ১০, ১১ ঘণ্টার ছবি আছে। নতুন ছবি যেটা করছেন সেটা নাকি ২০ ঘণ্টা হতে পারে, সেটার ট্রেলার আধ ঘণ্টার। আর ওনার ছবি উনি সবসময় ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেন ব্রেকহীন ভাবে দেখাতে। আমার ওনার পৌনে ছয় এবং পুরো ছয় ঘণ্টার ছবি হলে বসে দেখার অভিজ্ঞতা আছে। সদ্য পৌনে ছয়ের ছবিটা এই আগস্ট মাসেই দেখলাম, পাছে বাথরুমে যেতে হয় তাই জল খাইনি।
আপনার মতামত দেবার জন্য নিচের যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করুন