এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    ইদবোশেখির লেখাপত্তর - গুরুচণ্ডা৯ | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়শীতকাল বইমেলা হইচই-এর দিনকাল ফুরিয়ে এসে গেল শান্ত হয়ে বসে লেখালেখির কাল। বাইরে তাপমাত্রা বাড়ছে রোদ্দুরের জন্য, নির্বাচনের জন্য। সাথে কোথাও প্যাচপ্যাচে ঘাম তো কোথাও ঝরঝর বৃষ্টি। সন্ধ্যের আবছায়ায় দোকানে ভিড় জমায় সারাদিন রোজা রাখা ক্লান্ত মানুষ, গাজনের প্রস্তুতি নেওয়া শ্রান্ত মানুষ, চৈত্রসেলের হাতছানিতে মুগ্ধ মানুষ। টুপটাপ জমে ওঠে গল্পেরা, কবিতারা। নির্বাচনী জনসভার কোণাকাঞ্চিতে, ইফতারির থালার পাশে, গাজনের সন্ন্যাসীর ঝোলায় চুপটি করে অপেক্ষা করে তারা মানুষের জন্য। আমরা আপনাদের কাছে ডাক পাঠিয়েছিলাম তাদের খপ করে ধরে ফেলে, ঝপ করে লিখে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে। এসে গেছে তারা। আগামী কয়েকদিন ধরে রোজ দুটি-তিনটি করে তারা এসে হাজির হবে বুলবুলভাজার পাতায় - টাটকা ভাজা, গরমাগরম। পড়তে থাকুন। ভাল লাগলে বা না লাগলে দুই বা আরো অনেক লাইন মন্তব্য লিখে জানিয়ে দিন সে কথা। মন চাইলে, গ্রাহক হয়ে যান লেখকের। আর হ্যাঁ, আপনিও লেখা নিয়ে চলে আসুন গুরু আর চন্ডালের আড্ডা গুরুচন্ডা৯-র পাতায়।সূচীপত্রঃস্মৃতিচারণবর্ষশেষ, বর্ষশুরু: অমিতাভ চক্রবর্ত্তীও চাঁদ: সেমিমা হাকিমসারেতে থাই নববর্ষ: হীরেন সিংহরায়চান রাত: সাদেকুজ্জামানকাব্যজলের সমাধি: জগন্নাথ দেব মন্ডলগিরগিটি ও অন্যান্য কবিতা: ফরিদাসমুদ্রে সনেট: সোমনাথ রায়পাঁচটি কবিতা: অমিতরূপ চক্রবর্তীতিনটি কবিতা: অরিত্র চ্যাটার্জিউপগ্রহ: অমিত চট্টোপাধ্যায়আব্বু আব্বা বাবা: মাজুল হাসানশেষের কবিতা: দীপ্তেনকবিতাগুচ্ছ: মণিশংকর বিশ্বাসসিন্দবাদের গল্প ছড়ানো ছাদে: সুকান্ত ঘোষকবিতাগুচ্ছ: বেবী সাউগপ্পোখুচরো: সুমন মুখার্জীসুফি: আফতাব হোসেন রতন, দ্য ব্যাকবেঞ্চার: নরেশ জানাডাক দিয়ে যায়: এস এস অরুন্ধতীমহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও মার্কণ্ডেয়র চিঠি: রমিত চট্টোপাধ্যায়পাখির অন্তর্ধান রহস্য: মৃণাল শতপথীএই ঘুম শারীরবৃত্তীয়: দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ওয়েথসাম: উপল মুখোপাধ্যায়কোশিশ কিজিয়ে: কিশোর ঘোষালটুনিমুনির জীবন: দময়ন্তীদৌড়বাজ হাউসকীপার: সমরেশ মুখোপাধ্যায়হন্য: সৈয়দ তৌশিফ আহমেদসীমান্তরেখা: প্রতিভা সরকারসাদা খাম: দীপেন ভট্টাচার্যসুর: অনুরাধা কুন্ডাবুড়োশিবতলা: পায়েল চট্টোপাধ্যায়ইদ বৈশাখ মানে মা: ইমানুল হকউনিশে এপ্রিল: সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়নভেলাফকির ফয়জুল্লাহ: মুরাদুল ইসলামনিবন্ধ আজ নববর্ষের আখ্যান: সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
    উনিশে এপ্রিল - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়এখানে এই এক আপদ—দরজা সবসময় খোলা, যে যখন এসে ঢুকে পড়লেই হল, যেন ওদের বাবার লঙ্গরখানা। সাতসকালে ইংরেজের খোঁচড়টা দরজা দিয়ে ঢুকছে দেখেই সিরাজের মাথাটা গরম হয়ে যায়। দূর থেকে চিৎকার করে বলে, এই হারামির বাচ্চাটা এখানে কেন? নামে দরবার হলে কী হবে, সিরাজের এই চিড়িয়াখানায় চ্যাংড়া ছোঁড়া প্রচুর। উৎপটাং হোমরাচোমরারা মুরুব্বি বনে গেলেও সবকটা আসলে আমোদগেঁড়ে। একটু ফুর্তির ফুলঝুরি আসতে চলেছে দেখে, তাদেরই কে একটা বলে, নবাব, এ তো ইংরেজের উকিল। - জানি তো। চোখ লাল করে বলে সিরাজ। সাদা ঘোড়াচোদ একটা। ওরে কে আছিস রে, এটাকে দরজা দেখা।সিরাজের কারবারই এরকম। খচে যখন গেছে, ঘাড়ধাক্কাই দিয়ে দেবে। অতদূর অবশ্য গড়ায় না ব্যাপারটা। লোকটা নবাবের মেজাজ আর দরজা দুইই বিলক্ষণ চেনে। নিজেই চটপট পাতলা হয়। সিরাজ পিছন থেকে চিৎকার করে বলে, এই ফিরিঙ্গি জাতটাকে আমি খতম করেই ছাড়ব।ইয়ারদোস্তরা শুনে হইহই করে ওঠে। এই না হলে তেজ? নবাব হল বফাদারের ফরিশতা, বেত্তমিজের যম। কম লোককে শায়েস্তা করেছে নাকি? এর আগে একবার জগৎশেঠকে তো এক চড় মেরেছিল। আর মিরজাফরকে খিস্তি করে যা হাল করেছিল, যে, সে হারামজাদা লজ্জায় মুখ দেখাত না ক-দিন। এখন অবশ্য আবার ল্যাল্যা করে দরবারে আসছে।গালমন্দ করে সিরাজের মন একটু খুশ হয়। একবার আড়মোড়া ভাঙে। তারপর, কোথাও কিছু নেই, বলে, মিইইইর জাফর। - জি। - আপনি কিন্তু কুচ করবার জন্য তৈয়ার হন।মীরজাফর তো শুনে হাঁ। কুচ মানে? এ কি রাজকার্য না ফুক্কুড়ি, যে সক্কালবেলা একটু মেজাজ খারাপ হয়েছে বলে লালমুখোদের সঙ্গে একদম যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে? রাজা-বাদশাদের খেয়ালকে একটু তোয়াজ করতে হয়—সবাই জানে, কিন্তু এই আস্ত গাছপাঁঠাটা যেমন আহাম্মক, তেমনই বদমেজাজি—রাজনীতি তো বোঝেই না, আদবকায়দাও না। নবাব না হনুমান বোঝা মুশকিল, ওদিকে ধড়িবাজি আছে দুশো আনা। কোন এক ভাগাড় থেকে তুলে এনে মোহনলালকে মহারাজা বানিয়ে মাথার উপর বসিয়েছে, সেটা আবার ওর চেয়েও এককাঠি বাড়া। সে মালটা বিষ খেয়ে অবশ্য এখন আধমরা, দরবারে নেই—এই এক রক্ষে। - এত কী ভাবছেন? সিরাজ বলে। ঝুঁকির কথা, না টাকার কথা? টাকা আবার এখানে কোথা থেকে এল? মীরজাফর কানে হাত দিয়ে বলে, টাকা কেন হুজুর? - জনাব। আপনি টাকা ছাড়া আর কিছুর কথাও ভাবেন?সাঙ্গপাঙ্গরা এবার হ্যাহ্যা করে হাসে। আজ সিরাজ তো ভয়ানক খেলছে। পুরো মুন্ডু নিয়ে গেন্ডুয়া। জ্জিও নবাবজাদা। মিরজাফর বলে, তা কেন হুজুর? এই দরবারি ইমান, এই নবাবি...- বাজে কথা ছাড়ুন। দশ লক্ষ টাকা দেব। করবেন কুচ?মিরজাফর ফাঁপরে পড়ে মাথা নাড়ে। যার মানে হ্যাঁ-ও হতে পারে, না-ও। দশ লক্ষ টাকা চাই-ও হতে পারে, অথবা কুচ করবে না-ও হতে পারে।সিরাজ বলে, তাহলে তাইই ঠিক রইল। আপনি কুচ করবেন আগে। আমি পিছনে আসব।ইয়ার্কি হচ্ছে, নাকি সত্যি-সত্যি, ইয়ারদোস্তরা বুঝতে পারে না। বুজুর্গরাও। আমিরচাঁদ বহুদিন দরবার করছে। কিন্তু এ জিনিস এর আগে কখনও দেখেনি। এত দুমদাম করে কেউ যুদ্ধ করে নাকি? কিন্তু এ ছোঁড়াকে বিশ্বাস নেই। যা খুশি করতে পারে। সে একটু ঘাড় ঝুঁকিয়ে নিখুঁত দরবারি কায়দায় জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু হুজুর, এই হামলার কারণ?সিরাজ মাছি ওড়ানোর ভঙ্গিতে বলে, ওরা হরদম ফরাসিদের ধরিয়ে দেবার জন্য লিখছে। ওদের রোকা আমি আর নেবো না। তারপর মিরজাফরের দিকে ফিরে বলে, তাহলে ফয়সালা তাই-ই রইল। আপনি তৈয়ার হোন। আজ দুপুরে একটু মৌজ করে নিন। কাল থেকে কুচ।মিরজাফর আর আমিরচাঁদ ফরমান শুনে থ। আর ছোকরারা মৌজের কথাটা শুনে আমোদে আটখানা। সবাই জানে, মিরজাফর দুপুরে একটু ভাঙ খেয়ে দিবানিদ্রা দেয়। তখন পুরো কুম্ভকর্ণ। কাড়ানাকাড়া বাজালেও ঘুম ভাঙবে না।আমিরচাঁদ কালো মুখ করে বেরিয়ে আসে দরবার থেকে। ইংরেজদের বড়কর্তা স্ক্র‌্যাফটন বাইরেই ছিল। আমিরচাঁদ তাকে দেখে বিড়বিড়িয়ে বলে, ছোঁড়া ক্ষেপে গেছে। মানিকচাঁদ ক্ষেপিয়েছে। মনে হয় আবার কোনো ফন্দি এঁটেছে। ফন্দি-টন্দি কিন্তু তখনও কিছুই ছিল না। দুপুরে স্রেফ একটু আয়েশ করবে ভেবেছিল, কিন্তু তখনই আর এক আপদ। এবার দুয়ারে গুপ্তচর। গোয়েন্দা দপ্তরের এক হোমরাচোমরা, যার নাম নারায়ণ। কী একটা খবর এনে বলছে, জরুরি। গুরুতর ব্যাপার না হাতি, যত ফালতু হুজ্জুতি, গোয়েন্দাদের ফিকির। কিন্তু মসনদে বসলে এইসব ফালতু ঝুটঝামেলা এক-আধটা হবেই। সিরাজ লোকটাকে ভিতরে ডেকে জিজ্ঞাসা করে, বল রে ব্যাটা। এত জলদবাজিটা কীসের? এই গোয়েন্দা দপ্তরের লোকগুলোকে দেখতে হয় মুদির দোকানদারদের মত। কী ভাবছে কিচ্ছু টের পাওয়া যায় না। দেখলেই গা চিড়বিড় করে। ‘এক সের চাল দিচ্ছি’ বলার মত মুখ করে নারায়ণ বলে, হুজুর কামগর খান। সিমাইয়ের জমিদার। - তাকে নিয়ে কী করতে হবে? মাথায় তুলে নাচব?নারায়ণ আরও নির্বিকার মুখে বলে, না হুজুর। কামগর খান আর পাটনার নায়েব রামনারায়ণের ফৌজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। কাল সাত ক্রোশ দূরে ছিল। আজ কতদূরে জানি না। শুনে সিরাজের পিত্তিটা চটে যায়। এটা খবর? দুই জমিদার লাঠালাঠি করছে শুনে আমি এখন কী করব? লেঠেল পাঠাব? আমার আর কাজ নেই?নারায়ণ ঘাঘু লোক—এসবে ঘাবড়ায় না, এমনি এমনি তো আর গুপ্তচর বিভাগের কর্তা হয়নি। সে শান্তভাবে বলে, না হুজুর। সেটা যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে হয় না। তবে আরেকটা খবর আছে। - কী?এবার নারায়ণ আসল বোমাটা ফাটায়, আহমদ শাহ আবদালি। মোগল বাদশাহ-র উজির গাজিউদ্দিন খান আর দুই শাহজাদাকে নিয়ে বাংলার দিকে কুচ করার তোড়জোড় করছেন। আগ্রা থেকে পাটনার দিকে আঠারো ক্রোশ চলেও এসেছেন। অ্যাঁ? সে কী? এইবার সিরাজ নড়েচড়ে বসে। ই কী রে ভাই, এ তো জিনিস একটি। শিয়রে মোগল, আর এইটা এতক্ষণ পেটে চেপে রেখেছিল? দাঁত খিঁচিয়ে বলে, সেটা এতক্ষণ বলতে কী হয়েছিল? হারামজাদা, তোমার ঘাড়ের উপর মুন্ডুটা কেন দিয়েছে আল্লাতালা? যাতে আমি কুচ করে গর্দানটা নামিয়ে নিতে পারি, সেজন্য?এতক্ষণে, দিনের মধ্যে প্রথমবার, সিরাজের মাথায় আসে, ফন্দির কথাটা। একা ইংরেজে রক্ষে নেই, তার সঙ্গে এবার এরাও এসে জুটেছে, শাকের আঁটির মত মারাঠারা তো আছেই। আর এর মধ্যে কামগর আর রামনায়ারণ চুলোচুলি করছে। বলিহারি বুদ্ধি। নবাব না থাকলে তোদের জমিদারি থাকবে রে বজ্জাতের বাচ্চা? সিরাজ মোহনলালকে এত্তেলা দেয়। তারপর অস্থির হয়ে একটু পায়চারি করতে শুরু করে। নাঃ, এবার একটা ফন্দি খাটানো দরকার। কিন্তু এই বাজারের মধ্যে নিরিবিলিতে একটু মাথা খাটানোর উপায় আছে? পরের আপদ হাজির হয়ে যায়, তৎক্ষণাৎ। এবার খাস চাপরাশি। - এখন কী চাই? - দু-খানা চিঠি এসেছে। জরুরি মনে হয়। হুজুর যখন বিশ্রাম নিচ্ছেনই না, তখন দেখবেন কি?এর মধ্যে আবার চিঠিচাপাটি, লেখাপড়া? এর নাম নাকি নবাবি। যত্তসব। কার চিঠি? দেখা যায়—একটা ওয়াটসনের, আরেকটা ক্লাইভের। দেখে সিরাজের মাথাটা আরও গরম হয়ে যায়। এত আস্পর্ধা ক্লাইভ হারামজাদাটার, যে, স্পষ্টই লিখেছে—ফরাসি লকে পালাতে দিয়ে নবাব আলিনগরের চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন। সুযোগ পেলেই ল ব্যাটা মোগল বা মারাঠাদের সঙ্গে যোগ দেবে। আর ওয়াটসনের চিঠিতে এত প্যাঁচ-পয়জারও নেই, পরিষ্কার তম্বি। হ্যাঁ রে অজরাইলের বাচ্চা, আমি বাংলার নবাব, আর তোরা শিখিয়ে দিবি—কাকে আমি ছেড়ে দেব, আর কার গর্দান নেব? সিরাজ দাঁত কিড়মিড় করতে থাকে। সকালে যদি চিঠিটা পাওয়া যেত, তখনই একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যেত। ওই উকিল ব্যাটার, গর্দান না হোক—গোটা কতক আঙুলই কেটে বাক্সে পুরে ভেট পাঠানো যেত। ওয়াটসন টের পেত কত ধানে কত চাল।দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। গরম কমে আসে। এই সময়টায় যথারীতি গঙ্গা থেকে মিঠে হাওয়া আসে এই দিকে। কিন্তু মোহনলাল আসে না। বিষ খেয়ে উল্টে পড়েছিল, এখন একটু হাঁটাচলাও করছে, কিন্তু সবসময় সে খাড়া থাকতে পারে না। নইলে আসত অবশ্যই। গা চিড়বিড় করে সিরাজের। প্রাসাদভর্তি ষড়যন্ত্র। এই সবকটাকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিতে পারলে তবে কলিজা ঠান্ডা হত। আর তখনই, এই প্রায়ান্ধকার প্রাসাদচত্বরে দাঁত কিড়মিড় করে পায়চারি করতে করতেই, সিরাজের মাথায় বিদ্যুৎচমকের মত ফন্দিটা খেলে যায়। প্রথমবারের মত। এই চুতমারানিদের বড্ড বাড় বেড়েছে তো। ওদের ওষুধই ওদের দেওয়া দরকার। চিৎকার করে চাপরাশিকে ডাকে সিরাজ। - জি হুজুর। - ইংরেজের উকিলকে এত্তেলা দাও। - উকিল মানে? ওই সকালের লোকটা?- আবার কে? এখনই তলব কর। মুর্শিদাবাদ ছেড়ে যাবার আগে। - এই রাতেই আসতে বলব?- হ্যাঁ। আর তার আগে নারায়ণকে। এখনই। - জি হুজুর। সিরাজ পায়চারি করা বন্ধ করে। ছোটো দরবারে গিয়ে বসে। মাথার মধ্যে কিলবিল করে রাজনীতি। এক এক করে পিণ্ডি চটকাতে হবে। আজকে থেকেই খেলা শুরু। মেজাজ আবার খুশ হতে শুরু করে সিরাজের। কী করতে হবে বোঝা হয়ে গেছে। এবার শুধু সামান্য প্রতীক্ষা। নারায়ণ আসে হাঁপাতে হাঁপাতে। এই কাজের তো দিনরাত নেই। অন্য খবরের সন্ধানে যাচ্ছিল, তার মধ্যেই জরুরি তলব। এখন কপালে কী নাচছে কে জানে। কিন্তু সিরাজ, এই রাতে—খুবই শান্ত। সোজা কাজের কথায় চলে আসে, শোনো। বিশ্বস্ত দু-জন ঘোড়সওয়ার লাগবে। এখনই। - হবে নবাব। কী হুকুম তাদের উপর? - এখনই পলাশি যেতে হবে। রায়দুর্লভের ফৌজ যেখানে ছাউনি ফেলেছে। কোথায় জান তো?নারায়ণ মৃদু হাসে। জানাটাই তো তার কাজ। সিরাজ বলে, রায়দুর্লভকে হুকুম, বাগানের গাছ কেটে, নদী আটকে দিতে হবে। কাল সকালের মধ্যে।- কেন হুজুর? যদি জানতে চায়?গুপ্তচরের বাচ্চা কি সাধে বলে? সব জানা চাই। কিন্তু সিরাজ কোনো গালাগাল দেয় না। সোজাসাপ্টা করে বলে, ওই ইংরেজ ওয়াটসনের নওয়ারা যেন নদী দিয়ে এ তল্লাটে ঢুকতে না পারে। সেইজন্য। যাও। ব্যস, প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। এবার শুধু সকালের খেলাটা শেষ করতে হবে। আসুক উকিলের বাচ্চাটা। সেও একটু বাদেই চলে আসে। মুর্শিদাবাদ ছেড়ে তো যায়নি, বরং ধারেকাছেই ছিল। চাপরাশির মত সেও সিরাজের মেজাজের ব্যাপারে বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল। ঢুকে সেলাম করে নবাবকে। সিরাজ মুখ তুলে বলে, বোসো বোসো। অ্যাই কে আছিস। এদিকে আয়।চাপরাশি এগিয়ে আসে, যাও একটু পান নিয়ে এসো।- আপনি এখন পান খাবেন?- না। আহাম্মকের বাচ্চা। এই মেহমানকে একটু খাতিরদারি করব। অ্যাঁ? এইবার চাপরাশি টের পায় কী হতে যাচ্ছে। শান্তমনে খাতিরদারি, যেমন ছাগল কাটার আগে কাঁঠালপাতা। এ জিনিস সিরাজ আগেও করেছে। উকিলও সব খবরই রাখে। সে বলে, হুজুর আমি খাস কোম্পানির উকিল। মেহমানদারির জন্য কোম্পানির তরফে অনেক ধন্যবাদ। তারও গলা শান্ত। অর্থাৎ কিনা মনে করিয়ে দেওয়া, যে, তার কিছু হলে কোম্পানি কিন্তু ছেড়ে দেবে না। এইসব সময়ে সিরাজের চোখ দেখে কিছু বোঝা যায় না। ঝাড়বাতির আলো ঝিকমিক করে চোখে। চেঁচায় তো নাই, একটুও দাঁত কিড়মিড়ও করে না। বরং পান এলে বলে, খাও, খাও। খাতিরদারি যতক্ষণ, আরাম করে নাও।লোকটা শান্তমনে পান খায়। সিরাজ বলে, তা, তোমাদের ওই স্ক্র‌্যাফটন লোকটা এখনও এখানে?উকিল বলে, জি।- তুমিও এখানে। পুরো কোম্পানিই মুর্শিদাবাদে। কেন বল তো?উকিল চুপ করে থাকে। সিরাজ মুখটা একটু সরু করে কাছে এনে বলে, ওই স্ক্র‌্যাফটন, ওই বাইজির বাচ্চা বেটিচোদ ঢাকা চলে যাচ্ছে না কেন?উকিল শান্তভাবে বলে, নবাব সাহেব, উনি বকেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। সিরাজ বলে, ও। যার যা পাওনা—সব মিটিয়ে দেওয়া হবে। এখনই। কেন বল তো?উকিল কী ঘটতে চলেছে, আন্দাজ করে, নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। সিরাজ বলে, কারণ, ওকে আর আমি কোনোদিন দেখতে চাই না।উকিল তখনও তাকিয়ে। তার দিকে তাকিয়ে সিরাজ হেসে বলে, আর তোমার পাওনা? সেটা মেটাবো না?উকিল এবার চোখ বুজে ফেলে। সিরাজ চিৎকার করে বলে, এই কে আছিস, আমিরচাঁদকেও ডেকে আন। দু-জনকে একসঙ্গে সম্মান জানাব আমি।আমিরচাঁদকে নিয়ে আসা হয়। সে তখনও জানে না কী ঘটতে চলেছে। সিরাজের জমানাই এরকম। সিরাজ বলে, তোমরা এরকম মুখ করে আছ কেন? নবাবের দেওয়া সম্মান কি তোমাদের পছন্দ না?সেই রাতেই বহুমূল্য খেলাৎ সহযোগে নবাবি সম্মাননা দেওয়া হয় দু-জনকে। জারি হয়ে যায় ঢাকার কুঠি বাবদ স্ক্র্যাফটনকে ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেবার ফরমানও। সত্যি-সত্যিই। আমিরচাঁদ আর ইংরেজের উকিল এতক্ষণে টের পায়—খেলা সত্যিই ঘুরে গেছে। ইংরেজের উপর চড়াও হবার সিদ্ধান্ত বাতিল, এই উনিশে এপ্রিল ১৭৫৭ সালে। এর কয়েক মাসের মধ্যেই হবে পলাশি। চাপরাশি বা সিরাজ, কেউই অবশ্য তখনও সেটা জানে না।এখানে যা লেখা হয়েছে—তা বর্ণে বর্ণে না হলেও, অনুচ্ছেদে অনুচ্ছেদে সত্য। উনিশে এপ্রিল, সত্যিই ইংরেজের উকিল এসেছিলেন সিরাজের দরবারে। সিরাজ তাকে দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেন। সংলাপগুলোও মোটের উপর ঠিক। আমিরচাঁদ খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন এবং সেদিন রাতেই সেই উকিল এবং আমিরচাঁদকে সম্মাননা প্রদান হয়, এ সবই সত্য কথা (সূত্র: রজতকান্ত রায়ের ‘পলাশীর ষড়যন্ত্র ও সেকালের সমাজ’, পৃষ্ঠা ২১২। তিনি মূল সূত্রও উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সেটা যাচাই করা হয়নি)। ক্লাইভ এবং ওয়াটসনের চিঠিও বয়ানসহ সম্পূর্ণ সত্য। তবে সিরাজ সেই দিনই সেটা পড়েছিলেন কিনা—জানা নেই। পরেরদিনও পড়ে থাকতে পারেন। ওইটুকু এই কাহিনির কল্পনা।তার চেয়েও বেশি জরুরি হল, সিরাজের দরবারের আবহ এবং ভাষা। সমসাময়িক ফার্সি লেখক, গুলাম হুসেন খান—যিনি সিরাজ এবং শওকত উভয় দরবারের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিলেন, তিনি খুব স্পষ্ট করে লিখেছেন, সিরাজ অত্যন্ত রূঢ় ছিলেন, নিত্যদিন মুখ খারাপ করতেন। খোলাখুলিই বুজুর্গদের অপমান করতেন এবং অর্বাচীনদের মাথায় তুলে রাখতেন (সাইর উল মুতাখিন, দ্বিতীয় খণ্ড, ইংরিজি অনুবাদে পৃষ্ঠা ১৮৯। তাঁর নৈতিক অবস্থানটি বাদ দিয়ে, শুধু পর্যবেক্ষণটুকুই এখানে নেওয়া হয়েছে)।এবার কথা হল, মুখ খারাপ মানে ঠিক কী? সেটাও বাস্তবানুগ। উনিশে এপ্রিল রাতে ইংরেজ উকিলকে সিরাজ যা বলেছিলেন, সেটি ওয়ালশকে লেখা চিঠিতে স্ক্র্যাফটন স্বয়ং লিপিবদ্ধ করে গেছেন। ইংরিজিতে কথাটা হল, “The metichut of a garden chap”। রজতকান্ত রায় বলেছেন, মেটিচুৎ কথাটার কোনো মানে হয় না, ওটা বেটিচোৎ হবে (পূর্বোক্ত বই, পৃষ্ঠা ২১৩)। গার্ডেন চ্যাপ কথাটারও কোনো মানে হয় না ওখানে। কথাটা “দা বেটিচোদ সান অফ আ বিচ” জাতীয় কিছু হলেই ঠিকঠাক হত। ইংরেজ কান খিস্তিটা নিঃসন্দেহে ঠিকঠাক শোনেনি। আমি তাই ‘গার্ডেন চ্যাপ’ কে ‘বাইজির বাচ্চা’ করে দিয়েছি। সেটা হওয়া খুবই সম্ভব। এমনকি ‘বাইজি ছাপ’ ও হতে পারে। না হলেও কিছু এসে যায় না। মুখ-খারাপের মাত্রাটা এখানে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।এবার, শান্তির আলোচনায়, শান্তমনে যে লোক এইরকম খিস্তি দিতে পারে, অপমান করার সময় সে কী করতে পারে, সেটা সহজবোধ্য। সেটুকু ধরে নিয়েই বাকি সংলাপগুলি রচিত। এতে যদি কিছু ধাক্কা খায়, তা আমাদের অতীত সম্পর্কিত বানিয়ে তোলা ধারণা—যা বস্তুত প্রতিটি লোক তার বর্তমান থেকে নির্মাণ করে। সেটুকুই এখানে শুধু বর্জন করা হয়েছে। সচেতনভাবে। ইতিহাস তো আদতে এত পেলব না। মোগল শাহজাদারা শিখতেন—বাকি ভাইদের মেরে যে টিকবে, সে-ই পরবর্তী বাদশাহ। টোলের পন্ডিত ও ছাত্ররা ব্যাকরণ ও সাহিত্যের পাশাপাশি আদিরসের লব্জে ওস্তাদ ছিলেন। বিলিতি পাদ্রীরা যখন সতীদাহ নিয়ে চোখের জলে ভাসছেন, তার কিছুদিন আগেও ওই দ্বীপে ডাইনি পোড়ানো হয়েছে সোৎসাহে। আমাদের কোনো আখ্যান যদি এসব ধারণ না করে, তো সে সমস্যা আখ্যানের।* মাও-এর প্রকৃত উদ্ধৃতিটি (ইংরিজি অনুবাদে) যা বদলে নিয়ে গল্পের উপরে ব্যবহার করা হয়েছে: A revolution is not a dinner party, or writing an essay, or painting a picture, or doing embroidery; it cannot be so refined, so leisurely and gentle, so temperate, kind, courteous, restrained and magnanimous. A revolution is an insurrection, an act of violence by which one class overthrows another. (Report on an Investigation of the Peasant Movement in Hunan)গল্পটি আগে গুরুচণ্ডা৯-রই 'ছয়ে রিপু' গল্পগ্রন্থে প্রকাশিত।
    কবিতাগুচ্ছ - বেবী সাউ | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়চে গুভ্যেরামানুষকে কখনো কখনো শার্দূল হয়ে উঠতে হয় বাড়িতে তখন পোষ মানানো হচ্ছে কুকুরের বাচ্চা পোষ্য এবং পোষক দু'জনেই লোভনীয় খোঁড়া পা নিয়ে আমার বিপ্লবী জেঠু শার্দূলকে ভেবে বসছে কুকুরকুকুর নিজেকে জেঠু ভেবে সেজে উঠছে অযোধ্যায় যাবে বলে পোষ্যদের খাদ্য প্রয়োজন প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক সমস্যা বোঝা একটা হাড়ের লোভে শার্দূল ছুটছে পেছনে পা খুঁড়িয়ে জেঠু হাড় এবং লোভ এবং খোঁড়া পাহো হো করে হেসে উঠছেন আমাদের প্রণম্য সন্তোষ রাণা নির্বাচন কাক এবং ময়ূর এ জীবনে কার সঠিক কতটা দরকার!যুক্তিতর্কে কেঁপে উঠছে পার্লামেন্ট বিরোধী পক্ষের শের ঝাঁপিয়ে পড়ছেন সরকারী সিংহের ওপর শান্তি পক্ষের পায়রা খুঁটে দিচ্ছেন মালতীপক্ষের লতা সারা দেশ উত্তালঔরঙ্গজেব কিছু না পেয়ে জড়িয়ে ধরছেন দিন-ই-ইলাহির নথিপত্র দিল্লির বাকবিতন্ডা পৌঁছে যাচ্ছে হোয়াইট হাউসের লনে ব্রিটেনের রাজপ্রসাদ দূরবীন নিয়ে দেখছেভারত মহাসাগরের জলকাক এবং ময়ূর গেছেন জম্মু-কাশ্মীর, পক্ষীজাতি তারাউড়ে বেড়াতেই ভালোবাসেন... বধ্যভূমি আমার ভালোরকম মনে আছে—ক্লান্ত বিধ্বস্ত চোখ নিয়েবাবা একবার বিড়বিড় করে বলে ফেলেছিল, অপমান হজম করতে করতে মানুষ পাথর হয়ে ওঠে... আর সেই পাথর চলে যায়, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে তৈরি হয় সড়ক, রাস্তা বড়লোকদের রাজপ্রাসাদ গরীবের কুটিরও মাঝে মধ্যেআমি কঠিন কঠোর সময়ের দিকে তাকাইদেখি বাঘ-ছাগলের খেলাবুঝি, কর্মঠ বাঘের বুদ্ধির কাছে হার মানা সিংহ কেমন রাজা হয়ে ওঠে... অপমান গুরুত্বপূর্ণ কুমিরের গায়ের মতো করে তোলে মন এবং সময়কেদুর্ভিক্ষ বাঘের খাবার জোটাতে জোটাতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম ধুঁধলা চোখে দেখেছিলাম এই নদী পাহাড় পর্বত এমনকি নীল ঘন আকাশ সবটাই নিরর্থ এবং অপাংক্তেয় রাষ্ট্র জানাল, যেহেতু বাঘ রাজাতাই বাদবাকি জাহন্নামে যাক! অভিমানে সমস্ত জনগণ হেঁটে যাচ্ছিল আন্দামানের দিকে জলের কুমির সুযোগ বুঝে নেমন্তন্ন জানিয়েছিল জলখাবারেরকৃতার্থ আমরাটেবিলে পৌঁছে দেখি, থরে থরে প্লেটে সাজানো আমাদের লাশ ও মস্তিষ্ক...পরিচয়পত্র দু'টো হাত কিংবা দু'টো পা প্রমাণিত হলেইমানুষকে মানুষ ভাবার উপযুক্ত প্রমাণ পত্র নয়তার অতীত এবং বর্তমান ঘেঁটে ঘেঁটে একটা সুস্বাদু ডিস বানিয়ে পেশ করতে হবে মহামান্য আদালতে সেই আদালত তোমাকে বিচার করতে করতে করতে করতে একদিন নিজে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখবে দু'টো হাতও পা হয়ে উঠছে কবেইআর হামাগুড়ি দিচ্ছ তুমি...
  • হরিদাস পালেরা...
    ভোটুৎসবে ভাট - লক্ষ্মীবাবুর নকলি সোনার টিকলি - সমরেশ মুখার্জী | এখন বড় দুঃসময়। দূষণমুক্ত পরিবেশ, পর্যাপ্ত খাদ‍্য, পরিশ্রুত পানীয় এখন অধিকাংশ‌ মানুষের ভাগ‍্যে নেই। ভাগ‍্যচক্রে আমি অতোটা দুর্ভাগা ন‌ই। তবে নিত‍্য নানান তিক্ত, খবর, পোষ্ট দেখে মন ভারাক্রান্ত হয়। অথচ কিছু করার নেই। কারণ SMW বা Social Media Warrior এর ভূমিকা ছেড়ে জমিতে 'কিছু' করার জন‍্য যে সব চারিত্রিক গুণাবলী‌র প্রয়োজন - সাহস, ক্ষমতা, উদ‍্যম, নিষ্ঠা, বিশ্বাস, সমর্পণ - সেসব কিছু‌‌ই আমার চরিত্রে নেই। আমার সম্বল ভয়, সংশয়, আত্মকেন্দ্রিক‌তা। ফলে বাড়তে থাকে হতাশা, চাপ।  চাপ কমাতে  ব‌ই পড়ি। ভারী নয় - হালকা। টিভি দেখি‌না বারো বছর। নেটে দেখি ডকু, ভ্রমণ ভিডিও। কিছুক্ষণ আত্মমগ্ন হয়ে থাকতে কিছু লিখি। বৃষ্টি‌ভেজা পথকুকুরের মাথা ঝাঁকিয়ে জল ঝাড়ার মতো আমার লেখাও মনে জমা চাপ ঝাড়তে। তাতে ঋদ্ধ পাঠকের কাঙ্খিত সারবস্তু নেই। এসব নিছক আমোদিত কালক্ষেপ। Pleasurable Pastime. সুনীল বলেছিলেন, মাতৃভাষা‌র চর্চায় মগজের পুষ্টি হয়। অসংলগ্ন ভাবনা গুছিয়ে ধরার প্রয়াস আমার কাছে cognitive exercise. তাই এসব লিখি।              * * * * * * * * * *  আটাত্তরের কাছাকাছি। নিউ এম্পায়ারে লবঙ্গলতিকা‌র প‍্যাঁচের মতো তিনথাক গ্ৰীলের লাইনে ভ‍্যাপসা গরমে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কাটতে হোতো ৭৫ পয়সার টিকিট। তার‌পর সিঁড়ি ভেঙ্গে পাঁচতলা‌য় উঠে দূর থেকে কাঠের সীটে বসে সিনেমা দেখার মজা ছিল অনবদ‍্য। ওটা আদতে ছিল থিয়েটার হল - পি সি সরকার সিনিয়র‌‌ ওখানে দেখিয়েছেন ম‍্যাজি‌ক। তাই গদী আঁটা দামি টিকিটের আসন ছিল নীচে, মঞ্চে‌র কাছে। সিনেমা হলে রূপান্তরিত হতে পাঁচতলা‌র গ‍্যালারী হয়ে গেলো গরীব দর্শকের ৭৫ পয়সার স্বর্গ। ১৯৭৬ থেকে ৯০ - সেই স্বর্ণালী ১৪ বছরে ওখানে অনেক সিনেমা দেখেছি। এই প্রসঙ্গে আসছে একটা সিনেমার কথা - The Spaghetti Western Classic - The Good, The Bad and The Ugly. তখনকার হলিউডি ওয়েস্টার্ন সিনেমার পটভূমি ছিল পশ্চিম আমেরিকার টেক্সাস, আ্যারিজোনা, নেভাডা, উটা, কলোরেডো, নিউ মেক্সিকো, মন্টানা রাজ‍্যের দিগন্ত‌বিস্তারি পাহাড়ি মরু অঞ্চল। ডাকাবুকো ডাকাত, ভাড়াটে খুনি, বাউন্টি হান্টার, জেল পালানো পলাতক - অর্থাৎ আইনকে কাঁচকলা দেখানো Outlaw বা দুর্বৃত্ত‌রাই হোতো ঐ ধরনের সিনেমার প্রোটাগনিস্ট। রুক্ষ, শৈলকঠিন মুখ। পেটানো চেহারা। গায়ে বাঁটুল বা অরণ‍্যদেবের মতো সাত জন্মে না খোলা চামড়ার জ‍্যাকেট। মাইলের পর মাইল মরুপথে ঘোড়া ছুটছে ধূলো উড়িয়ে। যেন অতিপ্রাকৃত দৃশ‍্যপট। ধূ-ধূ প্রান্তরের মাঝে দ্বীপের মতো গুটিকয় ঘরের কোনো জনপদ। সেখানে এসে হাজির হয় আগন্তুক। সরাইখানা‌র দরজায় ঝোলা ঘন্টি। ঢং আ‌ওয়াজ তুলে ঢুকলো ঘর্মাক্ত কলেবরে। তারপর ম‍্যাজিক - কাউন্টারে সরাই সেবিকা ভরা বসন্তের স্বর্ণ‌কেশী। কাউন্টারে ঝুঁকে  - she shows more than what she supposed to sell. মরুভূমিতে  দৃশ্যমান মোলায়েম মরুদ্যান। মেদুর কটাক্ষে হেলায় তাকায় তারা  আগন্তুক পানে। সেই  কটাক্ষাঘাতে দূর্ধর্ষ  দস‍্যুর‌ দৃষ্টি হয়ে আসে মিয়োনো পাঁপড়ের মতো নরম।  খেলা জমে ওঠার সম্ভাবনা‌য় ৭৫ পয়সার টিকিটের ৫০ শতাংশ ওতেই উশুল। আইন শৃঙ্খলা‌র বালাই নেই। পুলিশের টিকি দেখা যায় না। তাই আত্মরক্ষার্থে সবাই রাখে বন্দুক। দস‍্যুদের হাতে তা গ‍্যাস ওভেনে খটাস খটাস করে লম্বা পিজো-ইলেকট্রিক লাইটার জ্বালানোর মতো‌‌ চলে অবলীলায়। পলক ফেলার আগেই ছোটে কয়েক রাউন্ড গুলি। সোয়াটার (flyswatter) ব‍্যাটের চপেটাঘাতে ফটাস ফটাস করে নিমেষে মরা মশার মতো হেথা হোথা ছিটকে পড়ে জলজ্যান্ত মানুষ।    সেসব দৃশ‍্য বিস্মৃত জমানার। ফ‍্যাঁও ফ‍্যাঁও করে ম‍্যারিকান বুলি‌তে কী যে তারা বলতো তখন সিকিভাগ‌‌‌ও বুঝতাম‌ না। এখন কষ্টেসৃষ্টে কিঞ্চিৎ বুঝি। তবু তখন কথা না বুঝেও দেখতাম। মজা লাগতো বেশ। হিরো, ভিলেন, সবার মাথায় ঝুলবারান্দার মতো কাউবয় হ‍্যাট। তার নীচে মরুভূমি‌র উজ্জ্বল রোদে সরু চোখের দৃষ্টি। তাতে মেশা সাপের শীতলতা বা ঈগলের ক্রুরতা। নিভে যাওয়া চুরুট ভাবলেশহীন মুখে ওষ্ঠের কোনে অনর্থক চর্বিত হয়ে চলেছে। গলায় বাঁধা ব‍্যান্ডানা। কোমরে চামড়ার খাপে ঝিমোচ্ছে বিরাট নলের রিভলবার। দেখতে মোটেও শৌখিন নয় - তবে বহু ব‍্যবহারে চকচকে। হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে বিহারী কুটির‌শিল্প -  মুঙ্গেরী 'কাট্টা' গোছের।    কিন্তু না - হলিউড ওয়েস্টার্ন সিনেমা‌য় দেখানো সে সব যন্ত্র এক একটি রত্ন বিশেষ। যেমন কোল্ট 1873 সিঙ্গল এ্যাকশন আর্মি স্পেশাল, .45 লং ব‍্যারেল কোল্ট, রেমিংটন 1858 নিউ আর্মি, কোল্ট প‍্যাটারসন, স্মিথ এ্যান্ড ওয়েসন শোফিল্ড ইত‍্যাদি। অর্ধশতাব্দীর অধিক প্রাচীন সেই সব মডেলের নির্ভরযোগ্য‌তা প্রশ্নাতীত। ঠিক‌মতো চালালে অব‍্যর্থ যমদূত। মানুষ তো ছার বেজায়গায় লাগলে ঘোড়াও জমি নিতে পারে। মজবুত কব্জি, হিমশীতল কলিজা না হলে কিলো খানেক ওজনের সেসব মারণাস্ত্র হঠাৎ খাপ থেকে তুলে চোখের পলকে চালানো সোজা কথা নয়। যেমন জন ওয়েন ঘোড়ার বসে একহাতে টুসকিতে ঘোরাতে‌ন হেভি শটগান। দক্ষিণী রজনী অমন কায়দায় সিগারেট নিয়ে ঠোঁটে-আঙ্গুলে কেরামতি দেখা‌তেন। তাতেই উল্লসিত দেশী পাবলিক দিতো সিটি। অধূনা অনেকে দু আঙ্গুলে স্মার্টফোন ঘোরায়, তেমনই কায়দার ডিজিটাল ভার্সন বোধহয়।   পুলিশ পিতার দৌলতে বছর আঠারো বয়সে একদা তাঁর স্মিথ এ্যান্ড ওয়েসন পুলিশ স্পেশাল সার্ভিস রিভলবারটি দেখা‌র সুযোগ হয়েছিল। হয়তো সেটা ছিল .38 ক‍্যালিবারের মডেল 10 বা 15. কিন্তু কিলোখানেক ওজনের সেই লং ব‍্যারেল ধূসর যন্ত্র‌টির গাম্ভীর্য‌ময় ধাতব শীতলতা ছিল বেশ সমীহ উদ্রেককারী। বলেছিলাম, একবার চালিয়ে দেখবো? বাবা বুলেট বার করে বললেন, চালা। তখন একটু ব‍্যায়াম ট‍্যায়াম করতাম, তাও একহাতে তুলে চালাতে কব্জি ও আঙুলে বেশ জোর লাগলো।  বাবা বললেন, এটা এভাবে চালায় না, রিকয়েলের ঝটকায় কব্জিতে সটকা লাগতে পারে। এটা চালাতে হয় দুহাতে ধরে, এভাবে। এটা মেয়েদের হ‍্যান্ডব‍্যাগে রাখার উপযোগী পুঁচকে পিস্তল নয় যা স্বল্প দুরত্বে আত্মরক্ষায় চালাতে হতে পারে। এটা আরক্ষাকর্মীদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আক্রমণের উদ্দেশ্যে নির্মিত। তাই তাক করে চালাতে পারলে ৫০ ফুট দুরে‌‌ও কোনো  পলাতক দুর্বৃত্ত ধরাশায়ী হতে পারে।  এখন নেট ঘেঁটে দেখলাম এর গুলি বেরোয় প্রায় ১০০০ ফুট/সেকেন্ড গতিতে। অর্থাৎ ৫০ ফুট দুরত্ব অতিক্রম করতে সময় নেবে ০.০৫ সেকেন্ড। মানুষের চোখের পলক ফেলার সময় ০.১০ সেকেন্ড। অর্থাৎ চোখের পাতা পড়ার অর্ধেক সময়ে ৫০ ফুট দুরে পলাতক ঘায়েল হবে। শুধু বুলেট গায়ে লাগা চাই। অভ‍্যাসে‌র অভাবে পুলিশের গুলি এদেশে প্রায়শই লাগে ফুটপাতে হাঁটা বালকের গায়ে। ডাকাত পালায় পাঁচিল টপকে।  তবে .38 পুলিশ স্পেশালের গুলি ৩০০ ফুট দুরত্বে‌‌ও কারুর গায়ে লাগলে‌ বেশ জখমের সম্ভাবনা। রাইফেলের গুলি পেড়ে ফেলতে পারে ১৬০০ ফুট দুরে কাউকে। টেলিস্কোপিক সাইট লাগানো হাই ক‍্যাপাসিটি স্নাইপার বা এ্যান্টি মেটেরিয়াল ব‍্যালাস্টিক রাইফেল তো ২কিমি দুরে কাউকে শু‌ইয়ে দিতে পারে চিরনিদ্রায়। এখনো অবধি সর্বাধিক দূরত্বে ঘায়েল করার রেকর্ড ২.৪৭ কিমি। তার গুলি‌ বেরোয় ৬৫০০  ফুট/সেকেন্ড গতিতে। দু কিমি দুরে কাউকে শোয়াতে সে বুলেট সময় নেবে মাত্র ১ সেকেন্ড। দুগ্গা দুগ্গা! প্রসঙ্গত বলি, এযাবৎ যাত্রী‌বাহী বিমানের সর্বাধিক গতির রেকর্ড আছে ব্রিটিশ এয়ার‌ওয়েজের অধুনালুপ্ত সুপারসোনিক কনকর্ড বিমানের - ঘন্টা‌য় ২১৮০ কিমি. এযাবৎ তৈরি সর্বোচ্চ ক্ষমতার স্নাইপার রাইফেলের বুলেটের গতিবেগ সে জায়গায় ঘন্টা‌য় ৭১৫০ কিমি - কনকর্ড বিমানের ৩.৩ গুণ।      একদা ওয়েস্টার্ন ছবিতে দাপিয়ে বেরিয়ে‌ছেন ক্লিন্ট ইস্ট‌উড, জন ওয়েন, হেনরী ফন্ডা, ওমর শরীফ, বার্ট ল‍্যাঙ্কাস্টার,  চার্লস ব্রনসন, টেরেন্স হিল, বাড স্পেন্সার, জেমস কোবার্ন, এলি ওয়ালচ্, লী ভ‍্যান ক্লীফ, বার্ট রেনল্ডস, রোনাল্ড রেগন (আমেরিকার চল্লিশ‌তম রাষ্ট্রপতি হ‌ওয়া‌র আগে জীবনের শুরুয়াতি পর্বে) এবং কিয়দংশে গ্ৰেগরী পেক্, হামফ্রে বোগার্ট, ট‍্যালি স‍্যাভালস্, স্টিভ ম‍্যাকুইন, ইয়ুল ব্রে‌ইনারের মতো অন‍্য গোত্রে‌র অভিনেতা‌রা‌। সে তুলনায় সেই সব ছবির অভিনেত্রী‌কুল -  আমান্ডা ব্লেক, র‍্যাকোয়েল ওয়েল্চ, কেটি জুরাডো, রোন্ডা ফ্লেমিং, ডোনা রীড, ক্লেয়ার ট্রেভর - আপামর দর্শকদের স্মৃতি‌তে সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেন নি।    স্প‍্যাঘেটি ওয়েস্টার্ন সিনেমা বলতে বোঝাতো সেই‌সব ওয়েস্টার্ন ছবি যার মূল কলাকুশলীরা - প্রযোজক, পরিচালক, সম্পাদক, সঙ্গীত‌কার, ক‍্যামেরা‌ম‍্যান‌ হতেন ইতালিয়ান। যদিও বিশ্বের বাজারে বাণিজ্য করতে সেসব ছবির নায়ক নায়িকা হতেন মূলত হলিউডি। হলিউডে প্রতিষ্ঠিত ইতালিয়ান অভিনেতা‌ও ছিলেন - টেরেন্স হিল, বাড স্পেন্সার, (Django খ‍্যাত) ফ্রাংকো নিরো ইত্যাদি। সে সব ছবি নির্মিত ও বিশ্ব বাজারে বিতরিত হোতো  বিখ্যাত সব হলিউড প্রোডাকশন হাউস দ্বারা যেমন ওয়ার্নার ব্রাদার্স, এমজিএম, ইউনিভার্সাল পিকচার্স, কলম্বিয়া পিকচার্স, ইউনাইটেড আর্টিস্ট‌স্ ইত্যাদি। এসব ছবি ইংরেজি‌তে হলেও ইতালিয়ান, স্প‍্যানিশ, জার্মান ভাষায় ডাবিং বা সাবটাইটেল দিয়ে তৈরী হোতো তার মাল্টিলিঙ্গুয়াল ভার্সন। The Good, The Bad and The Ugly নির্মিত হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। পরিচালনায় ডিপ ক্লোজআপ ও লং ডিউরেশন শটের সাহায্যে সিচুয়েশন তৈরীতে সিদ্ধহস্ত বিখ্যাত ইতালিয়ান পরিচালক - সের্গি‌ও লিওন। পদবী‌টা চেনা চেনা লাগছে?  সানি লিওনের দৌলতে সেটা স্বাভাবিক তবে সের্গেইয়ের সাথে সানির কোনো যোগসূত্র‌ নেই।  সানি কানাডা প্রবাসী এক শিখ মেয়ে - করণজীৎ কৌর ভোরা। সানি তার ডাক নাম। ছোট থেকে খেলাধুলা‌য় উৎসাহী, টমবয় স্বভাবের সানি রাস্তায় ছেলেদের সাথে হকি খেলতো। এগারো বছরে পেলো প্রথম চুম্বনের স্বাদ। ষোলো বছরে এক বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সৌজন্যে খেলাচ্ছলে‌ হারালো কুমারী‌ত্ব। একুশে পা দিয়ে ২০০১ সালের মার্চের পেন্টহাউস পত্রিকার প্রচ্ছদে নূন‍্যতম আচ্ছাদনে অপরিণত সম্পদে হাজির হয়ে‌ই পেলো 'পেন্টহাউস পেট' খেতাব। যেমন প্লেবয় ম‍্যাগাজিনে আবির্ভূতা মডেল‌রা পায় 'প্লেবয় প্লেমেট' তকমা। ২০০৭ সালে সানি বাণিজ্যিক প্রয়োজনে কৃত্রিম উপায়ে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হোলো। যেমন অধূনা হোয়াটস‌এ্যাপ ফরোয়ার্ডে‌ড পোষ্ট পড়ে (বা না পড়েই) সমৃদ্ধ হয় নেটিজেন। ২০১২তে পূজা ভাটের 'জিসম-2' দিয়ে বলিউডে হোলো সানি‌র সাহসী আত্মপ্রকাশ। ভূতপূর্ব জীবিকা পরিত্যাগ করে প্রাচুর্যময় প্রতিস্থাপিত উপস্থিতিতে বলিউডে নিজেকে নবরূপে উদ্ভাসিত করায় সানি‌র নিষ্ঠা ও শৈলী প্রশংসনীয়।  সানি‌র স্বামী ড‍্যানিয়েল ওয়েবারের সংস্কারহীনতা মধ‍্যবিত্ত মানসিক‌তায় অনুধাবনের অতীত।  সানি‌র লিওন পদবী‌টি দেন পেন্টহাউস পত্রিকার তদানীন্তন মালিক বব গুচ্চিয়ন। হয়তো তাঁর পদবী‌র শেষাংশে‌র সাথে সমধ্বনীয় সাযুজ‍্যে - গুচ্চিয়ন - লিওন। এই আর কী। ইতালিয়ান পরিচালক সের্গেই লিওনের সাথে সানি লিওনের কেবল এটুকুই যোগসূত্র - এক পদবী‌তে।   ফিরে আসি সের্গেই‌তে । তিনি বানিয়ে‌ছিলেন দুটি ট্রিলজি। প্রথমটি 'ডলার ট্রিলজি'। পরে 'ওয়ান্স আপন এ টাইম ট্রিলজি'। ডলার ট্রিলজির প্রথমটি ছিল A Fistful of Dollar (১৯৬৪)। দ্বিতীয়‌টি For a Few Dollars More (১৯৬৫) এবং শেষে ঐ TGTBATU (১৯৬৬). আগের দুটি ছবি তখন কেবল ইতালি‌তে মুক্তি পেয়েছে। দুটি‌তেই মুখ‍্য ভূমিকা‌য় ছিলেন ছ ফুট চার ইঞ্চির সুপুরুষ ম‍্যাচো ম‍্যান - ক্লিন্ট ইস্ট‌উড। প্রথম ছবিটি‌ আমেরিকা‌য় মুক্তি পাবে ১৯৬৭তে।   তবে তার আগে‌ই সের্গি‌ও বানাতে  চাইলেন ট্রিলজির শেষ ছবি - TGTBATU. ছবির বাজেট মাত্র ১২ লক্ষ ডলার - বাস্তবিক‌ই fistful - মুষ্টিমেয়। কিন্তু ততদিনে ক্লিন্ট বুঝে গেছেন নিজের বাজার‌দর। তাই চেয়ে বসলেন আড়াই লক্ষ ডলার - ছবির বাজেটের ২০% (আজকের দিনে ভারতীয় মূদ্রা‌য় প্রায় ৫০ কোটি টাকা) এবং আমেরিকা‌য় প্রদর্শনের লভ‍্যাংশের ১০%. কিঞ্চিৎ অসন্তুষ্ট হলেন সের্গেই। কিন্তু চাই তার ক্লিন্টকে‌ই - কারণ The Good চরিত্র যা ভেবেছেন, তাতে তিনি নিশ্চিত - ক্লিন্ট মাত করবে বক্স অফিস। তাই রাজী হয়ে গেলেন। পরিচালকের মুন্সীয়ানা, চমৎকার ওয়াইড স্ক্রিন ক‍্যামেরা‌র কাজ, সঙ্গীত পরিচালক এন্নিও মরিকনের অপূর্ব আবহ সঙ্গীত - পর্দায় ক্লিন্ট ও লী ভ‍্যান ক্লীফের চুম্বকীয় উপস্থিতি‌ - সব মিলিয়ে এক ডেডলি প‍্যাকেজ।    ক্লিন্টের এই ডলার ট্রিলজি‌র সাফল্য‌ই তাকে ১৯৭১ এ প্রতিষ্ঠিত করে আইকনিক 'ডার্টি হ‍্যারি' চরিত্রে। যার রেশ চলে ১৯৮৮ অবধি বিভিন্ন নামে মোট পাঁচটি ছবির সিরিজে। চতুর্থ‌টির পরিচালক‌ও ক্লিন্ট। ছবিতে তিনি সানফ্রানসিস্কো পুলিশ বিভাগের নির্ভীক এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট - হ‍্যারি ক‍্যালাহান। মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চের রিয়েল লাইফ এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট দয়া নায়কের ওপরে তৈরি হয়েছিল 'অব তক ছপ্পন' সিনেমা। তাতে ইন্সপেক্টর সাধু আগাসের চরিত্রে ফাটিয়ে দিয়ে‌ছেন নানা। পরে ডলার ট্রিলজির প্রযোজকের বিনিয়োগ‌ও ফিরে এসেছে বহুগুণ হয়ে। সের্গেই বিখ্যাত হলেন Godfather of Spaghetti Western Movies হিসেবে।   ১৮৬২ সালে আমেরিকা‌ন সিভিল ওয়ারের পটভূমি‌কায় তৈরি কাহিনী‌ TGTBATU ছবির শেষে আছে একটি গোলাকার সমাধিক্ষেত্রের দৃশ‍্য - টানটান ক্ল‍্যাইম‍্যাক্সে ত্রিমূর্তীর মধ‍্যে সংঘটিত হবে ক্ল‍্যাসিক 'মেক্সিকান স্ট‍্যান্ড‌অফ' দৃশ‍্য। তাতে আহবান জানায় ক্লিন্ট (Good)। ডাকুদের মধ‍্যে অলিখিত নিয়মে পুরুষোচিত অহংকারে তাতে সাড়া দিতেই হয় লী ভ‍্যান ক্লীফ (Bad) এবং নিরুপায় হয়ে এলি ওয়ালচ্‌কেও (Ugly). ক্ল‍্যাসিক ব্রিটিশ ডুয়েল হোতো দুজনের মধ্যে যাতে দুজন বা একজনের মরার সম্ভাবনা অবধারিত। মেক্সিকান স্ট‍্যান্ড‌অফে সাধারণত তিনজন বন্দুকধারী নিজেদের মধ‍্যে হিসাব বরাবর করতে ১২০ ডিগ্ৰি কোনে দাঁড়িয়ে একে অপরকে মাপতে থাকে‌। যে আগে বন্দুক তুলবে সেই জ্বালবে স্ফুলিঙ্গ।   ছবিতে Sad Hill Cemetery নামে পরিচিত ঐ সমাধিক্ষেত্র‌টি সেই ১৯৬৬ সালে‌ই স্পেনের বুর্জোস প্রদেশে স্প‍্যানিশ সৈন‍্যদের দিয়ে পয়সার বিনিময়ে তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র ঐ একটি দৃশ্যে‌র জন‍্য। দৃশ‍্যটি আমি বেশ কয়েকবার দেখেছি। এমন দীর্ঘায়িত নাটকীয় সাসপেন্স সৃষ্টিতে সের্গি‌ও ছিলেন বিখ‍্যাত। সিনেমা‌টির দৈর্ঘ্য‌ও তাই চার ঘন্টা।  (দৃশ‍্য‌টার লিংক র‌ইলো শেষে)।    শুটিংয়ের পর ঝোপঝাড় কেটে বানানো নকল সমাধিক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত হয়। ক্রমশ প্রকৃতি আবার অধিকার করে নেয় তাকে। তবে পৃথিবী‌ব‍্যাপী TGTBATU ফ‍্যানদের স্বেচ্ছা দানে স্পেনের The Sad Hill Cultural Association ২০১৭ সালে - মানে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পর - বিস্মৃত, জঙ্গলাকীর্ণ সেই শ‍্যূটিং স্পটটি আবার খুঁজে বার করে। সাফ সাফাই করে সেটাকে রূপান্তরিত করে একটি নস্টালজিক পর্যটন‌স্থলে। পাঁচ দশক পরেও একটি পাতি এ্যাকশন সিনেমার প্রতি ফ‍্যানেদের এমন হৃদয়ের টান বেশ আশ্চর্য‌জনক।   ১৯৭০ সালে শোলে ছবির কাহিনী‌কার সেলিম-জাভেদ যে তিনটি ছবি থেকে সবিশেষ প্রভাবিত হয়েছিলেন তার একটি ছিল সের্গেই লিওন পরিচালিত 'Once upon a time in the West' - মূখ‍্য ভূমিকা‌য় হেনরি ফন্ডা ও চার্লস ব্রনসন। সে ছবির কাহিনী নির্মাণে সের্গেই‌য়ের সাথে যুক্ত ছিলেন আর এক দিকপাল ইতালিয়ান পরিচালক - বার্নার্দো বেত্রোলুচি। বাকি দুটি ছবি কুরোশোয়ার 'Seven Samurai' ও জন স্ট্রাজেসের 'The Magnificent Seven'. রাজ কুমার সন্তোষীর 'China Gate' ছবিতে‌ও The Magnificent Seven এর সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ‍্য করা যায়।    শোলের শ‍্যূটিং‌য়ের জন‍্য‌ও ব‍্যাঙ্গালোর থেকে মাইশোরের পথে ৫০ কিমি দুরে রামনগরে হাইওয়ে থেকে ভেতরে ছবির প্রয়োজনে তৈরী হয়েছিল এক গ্ৰাম। প্রায় আড়াই বছর ধরে শ‍্যূটিং চলাকালে সেই অস্থায়ী গ্ৰামের নাম হয়ে গিয়েছিল 'সিপ্পি নগর'। স্থানীয় কিছু লোক কাজ পায়। তাদের দেখা গিয়েছিল সিনেমার পর্দায় গ্ৰামবাসী হিসেবে। ওখানেই জলের ট‍্যাঙ্কের ওপরে চড়ে  ধর্মেন্দ্র‌ করেছি‌লেন সেই বিখ্যাত সুইসাইড নাটক।    কাছেই রামদেবরা টিলায় হয়েছিল গব্বরের ডেরা। সেখানে আমজাদ রাগে গরগর করতে করতে হুঙ্কার ছেড়েছিল - আরে, এ সাম্বা, কিতনা ইনাম রখ্খে হ‍্যায় রে সরকার হম পর? খাড়া গ্ৰানাইট পাথরের টঙে পা ঝুলিয়ে বসে সাম্বা বলেছিল - পুরা পচাশ হাজার, সরকার। এসব সংলাপ এখন কিম্বদন্তীপ্রায়। এখন সেই শোলে গাঁওয়ের  কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে। সে জায়গা এখন বন‍্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ‌দের কাছে অন‍্য কারণে গুরুত্বপূর্ণ। "রামদেবরা বেট্টা ভালচার স‍্যাংচুয়ারী" এখন বিলুপ্ত‌প্রায় ভারতীয় শকুনের সংরক্ষণের জন‍্য একমাত্র ঘোষিত ESZ (Notified Eco Sensitive Zone).  অবশ‍্য ভারতের নানা জায়গা এখন ঘাস, ফুল, পদ্ম শোভিত এবং গদা, তরোয়াল, ত্রিশূল আন্দোলিত অন‍্য জাতীয় শকুনের মুক্তাঞ্চল - কেবল তাদের ডানা নেই বলে চট করে চেনা যায় না। তবে খুবলে নিলে টের পাওয়া যায়।    তো যা বলছিলাম। সেই সমাধিক্ষেত্রের শেষ দৃশ‍্যে ক্লিন্ট ইস্ট‌উড এলি ওয়ালচ্‌কে একটা বিলিয়ন ডলার ডায়লগ ঝাড়ে - “You see, in this world, there’s two kinds of people, my friend. Those with loaded guns and those who dig. You dig.” কিন্তু what to dig? সিনেমা‌য় তা একটি বিশেষ কবরের নীচে লুক্কায়িত গুপ্তধন। বাস্তবে ক্ষমতাসীন‌দের শোষণে তাদের জন‍্য সম্পদ আহরণে নিম্নবর্গীয় মানুষের আমৃত্যু খুঁড়ে যাওয়া নিজেদের কবর। অথবা নির্মাণ করা নিজেদের জেল। যেমন আসামের দিনমজুর সরােজিনী হাজং। তিনি নিজেই নিজের জন্য বানাচ্ছেন জেল। সরােজিনীর মত অনেক দিনমজুর আসামে ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মানে পেটের দায়ে ঘাম ঝড়াচ্ছেন, যাঁদের নাম আসামে চুড়ান্ত NRC তালিকা থেকে বাদ গেছে। তৈরী হলে ওখানেই স্থান হবে সরোজিনী‌দের।   ১৯৭৩ সালে আমেরিকা‌য় প্রতিষ্ঠিত হয় Grammy Hall of Fame. এখানে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন‍্য প্রতি বছর কিছু বাছাই করা উচ্চমানের বা ঐতিহাসিক‌‌ গুরুত্ব আছে এমন সঙ্গীত, বাদ‍্য, কন্ঠস্বর বা বক্তৃতা সংরক্ষণের জন‍্য মনোনীত হয়। তবে তা হতে হবে অন্ততপক্ষে ২৫ বছরের প্রাচীন - অর্থাৎ অবশ‍্য‌ই থাকতে হবে তার enduring appeal. অনেক নমিনেশনের মধ‍্যে বিশেষজ্ঞ‌দের ভোটাভুটির মাধ‍্যমে নির্বাচিত হয় অল্প কিছু।  এভাবেই এখানে সংরক্ষিত হয়েছে টমাস আলভা এডিসনের ১৮৭৮ সালের রেকর্ডিং, ১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের "I have a Dream" বক্তৃতা। বব ডিলান, বীটলস, এলভিস প্রেসলি, পল রবসন, বব মার্লে, ফ্রাংক সিনাত্রা, ইহুদি মেনুহিন, জন ডেনভার, এলটন জন, জন লেনন, সাইমন ও গারফাঙ্কেলের 'সাউন্ড অফ সাইলেন্স', বার্‌বারা স্ট্রেসান্ড্ ও এমন নানা দিকপাল গায়ক, বাদ‍্যকার, বাগ্মী‌র রেকর্ডিং। এখানে আছে ১৯৫৬ সালে হিচকক্ পরিচালিত - মুখ‍্য ভূমিকা‌য় জেমস স্টূয়ার্ট ও ডোরিস ডে অভিনীত - The Man Who Knew Too Much সিনেমা‌য়  শেষ দৃশ‍্যে ডোরিসের স্বকণ্ঠে গাওয়া বিশ্ববিখ্যাত গান - Que Sera Sera - Whatever will be, will be গানটি, যার মর্মার্থ - বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই প্রযোজ্য - যা হবার, তাই হবে। (অহেতুক ভেবে কী হবে)। কিন্তু Grammy Hall of Fame এর অবতারণার কী হেতু? একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে এই গরুর রচনায় - সানি লিওন থেকে গ্ৰ‍্যামী হল অফ ফেম - কোনো প্রসঙ্গ‌ই সম্পূর্ণ সম্পর্কবিযুক্ত নয়। প্রতিটি প্রসঙ্গের দড়ি‌ই কোনো না কোনোভাবে একটি মুখ‍্য গরু‌র গলায় বাঁধা - শেষবেষ ঘুরে ফিরে - 'সেই ঘাস গরু খায়' - করে প্রসঙ্গ আবার ফিরে আসবেই সেই গরুতে। এখানে সেই গরুটি TGTBATU. এ ছবিতে সের্গেই‌য়ের প্রতিটি ছবির সঙ্গীত পরিচালক এন্নি‌ও মরিকনের একটি অনবদ‍্য থিম টিউন ছিল, যেটি পরে আইকনিক হয়ে যায়। সেটা আমি বহুবার শুনেছি - হয়তো অনেকেই শুনেছে। (তবু ড‍্যানিশ ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রা কর্তৃক সেটার রিক্রিয়েশনের ভিডিও লিংক র‌ইলো শেষে। অবাক হয়ে গেছি দেখে - একটি সিনেমার টিউন তৈরিতে এতো হ‍্যান্ডস লাগে!)   এন্নিও ছিলেন উঁচু দরের কম্পোজার। দীর্ঘ সঙ্গীত‌জীবনে তিনি ৭০টি পুরস্কার‌প্রাপ্ত সিনেমা‌য় ও টিভিতে প্রায় চারশো‌টি স্কোর ও একশোটি ক্ল‍্যাসিক সিম্ফনি কম্পোজ করেছেন। নিজে ছিলেন দক্ষ ট্রাম্পেট বাদক। TGTBATU সিনেমার সেই টিউনটি তাঁর পরিচালনায় পরিবেশন করে প্রাগ সিটি ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রার শিল্পী‌বৃন্দ। এন্নি‌ও পান ইতালির সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান - OMRI (Order of the Merit of the Italian Republic) - যা আমাদের দেশের ভারতরত্ন সদৃশ।  সঙ্গীতে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ‌টি ৬.৭.২০২০- পতনজনিত আঘাতে মারা যান ৯১ বছর বয়সে। তাঁর সুরকৃত TGTBATU সিনেমা‌র সেই বিখ‍্যাত থিম টিউনটি গ্ৰ‍্যামী হল অফ ফেমের (GHF) অন্তর্ভুক্ত হয় ২০০৯ সালে। এবার  হয়তো পাওয়া গেল GHF এর সাথে TGTBATU নিয়ে এই বাঁজা রচনার যোগসূত্র।   এই বাঁজা রচনায় আমি খাল বিল থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আমার হালহীন মনপানসি ইচ্ছা‌মতো ভাসিয়ে এমন ঘন্ট পাকিয়েছি যে মনযোগী পাঠক‌ও হয়তো এযাবৎ পড়ে খেই হারিয়ে ভুলে যেতে পারে এ লেখার শিরোনামে‌র তিলমাত্র তাৎপর্য তো এখনো অবধি বোঝা গেল না? চিন্তা নেই। এবার আসবে।    সেদিন আবার শুনছিলাম ভি শান্তারাম প্রযোজিত ও পরিচালিত 'জল বিন মছলি নৃত‍্য বিন বিজলী' সিনেমা‌য় মুকেশের কণ্ঠে আমার প্রিয় একটি গান - 'তারো মে সজকে'। বহুবার শুনে‌ও সাধ না মেটা অনেক গানের একটি।  ১৯৫৩ সালে সোহরাব মোদী প্রযোজিত, পরিচালিত 'ঝাঁসি কি রাণী'  ছিল ভারতে নির্মিত প্রথম টেকনিকালার ছবি। ১৯৭১ সালে 'জবিম-নৃবিবি' সিনেমার প্রতিটি গান স্টিরিওফোনিক সাউন্ডে রেকর্ড করে শান্তারাম‌ও করূছিলেন আর এক রেকর্ড। রিমিক্সিং করেছিলেন মঙ্গেশ দেশাই, শান্তারামের‌ রাজকমল কলামন্দির স্টুডিও‌তে।    মজরুহ সুলতানপুরীর সরল সুন্দর কথা। লক্ষীকান্ত প‍্যারেলালের অনবদ‍্য সুর। সেই গানের শুরুতে (prelude) এবং মাঝে (interlude) TGTBATU সিনেমার সেই আইকনিক থিম টিউনটির সিগনেচার শিসটি এই গানে হুবহু ব‍্যবহৃত হয়েছে। তাই এই লেখার শিরোনাম 'লক্ষীবাবুর নকলি সোনার টিকলি'। চৌরঙ্গী, এলগিন, মুন্সীবাজার রোডে গেলে দেখা যাবে পর পর কয়েকটি  'লক্ষী বাবুকা আসলি সোনা চাঁদি‌কা দোকান'। সবকটি‌ই প্রথম, একমাত্র এবং আসল। এই গানে ঐ শিস লক্ষ্মীদা জুটি প‍্যারসে নিজেদের  বলে চালিয়ে দিয়েছেন নাকি ভদ্রতার খাতিরে এন্নি‌ও‌র প্রতি অন্তত রোলিং ক্রেডিটে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন, জানা নেই।   প্রতিমা‌র মতো সুন্দর কপালে একটি ঝলমলে টিকলি ঝুললে ভালো‌ই লাগে দেখতে। তবে তা না থাকলেও অসুন্দর লাগে না। 'তারো মে সাজকে' গানটি‌ও তেমন। ঐ টিউনটি গানে অবশ্যই যোগ করেছে এক মনোহর মাত্রা। তবে তা না থাকলেও গানটি ভারতীয় আমেজের সুন্দর সুরের জন‍্য মোটেও খারাপ লাগতো না। মুকেশের গায়কীর গিটকিরি তো কান-মন জুড়ানো।   লক্ষীকান্ত‌-প‍্যারেলাল জুটি সুরকৃত গানে ঐ টুকলি করা টিউনে‌র টুকরোটা‌ই এই গরুর রচনার প্রেরণা। তাই শিরোনামে জ্ঞাপন করেছি কৃতজ্ঞতা। তবে শেষ অবধি না পড়লে তা বোঝা সম্ভব নয়। এই টুকলির কথা জেনেছি তিন দশক আগে।  দুঃসময়ে ছোট্ট স্ফূলিঙ্গ জোগায় অবান্তর রচনা লেখার প্রয়াসে আত্মমগ্নতায় ডুবে থাকা‌র দাওয়া‌ই। লেখার মশলা সংগ্ৰহকালে জানতে পারা যায় নানা আনন্দময় তথ‍্য। পলায়নবাদীরা এভাবে‌‌ও এড়িয়ে থাকতে পারে বিষাক্ত বর্তমানে‌র অভিঘাত। 
    চান রাত!  - মহম্মদ সাদেকুজ্জামান শরিফ | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়ইদের আসল মজা কখন? বয়স্ক মানুষ, বাড়ির মা খালাদের খবর জানি না, বাকি সবার সম্ভবত একটাই রা হবে, তা হচ্ছে ইদের আগের রাত মানে চান রাত! কোন কথা হবে না, সবাই মেনে নিবে যে আসল মজা আগের রাতেই। কী হয় এই রাতে? কিচ্ছু না, স্রেফ গুলতানি মারা চলে, লম্বা আড্ডা চলে। এই দিন সবাই দেরি করেই বাড়ি ফিরবে এইটা অলিখিত আইন। আড্ডার মধ্যেই আগামী দিনের নীতি নির্ধারণ হয়ে যাচ্ছে, নতুন কিছুর ইঙ্গিত তৈরি হচ্ছে, প্রেমের চাবি নাড়াচাড়া হচ্ছে, প্রাণ খোলা হাসি হচ্ছে! এই রাতে মন খারাপের কোন জায়গা নেই। মা খালাদের কথা জানি না কেন বললাম? কারণ এই রাতে তাঁদেরকে প্রচুর খাটাখাটনি করতে হয় ইদের প্রস্তুতি হিসেবে। তাই তাঁদের চান রাত খুব মজায় কাটবে এইটা সম্ভবত বেশি বেশি কল্পনা। তাই জানি না বললাম। কিশোর কিশোরী, তরুণ তরুণী, সবারই একই রকম অনুভূতি হবে। মেয়েরা হাত ভরতি করে মেহেদি দিচ্ছে, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি দৌড়াদৌড়ি চলছে। কারণ মেহেদি শিল্প হাতে গোনা দুই একজনই পারে, আর চান রাতে তাকে ঘিরেই বসে থাকে বাকিরা। উপগ্রহের মতো ঘুরপাক খেতে থাকে এরা যতক্ষণ না পর্যন্ত হাত মেহেদি দিয়ে পূর্ণ হচ্ছে। আবার আমাদের আড্ডায় ফিরি। ইদ যেহেতু আলাদা করে উদযাপনের কিছু না। সকালে ইদের নামাজ পড়লেই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে যায়। তাই খাওয়া, আড্ডা, বেড়ানো আর ঘুম ছাড়া ইদের ছুটিতে আর কিছুই করা হয় না। বিশেষ করে রোজার ইদে। চান রাতে ছুটির কয়দিন কী করে কাটানো যায়, কী করা যায় এর পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি সময় যায়। যেমন এবার সারাদিন শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত আমাদের কাটছে ইদের পরদিন কী করা যায় এই সলাপরামর্শ করেই। স্থান নির্বাচন হয় তো মানুষ হয় না, মানুষ, স্থান হয় তো যানবাহন মিল হয় না। ঠ্যালা ধাক্কা, ধুর শালা সব বাদ! এই চলছে, চলতে চলতে দেখি ঘড়িতে রাত বারোটা! শেষ পর্যন্ত কী করলাম, কী হইল, ছাতু মাখাইলাম গু হইল... যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাঁদের আমাদের মতো এমন সৌখিন চিন্তা ভাবনা করার ফুসরত নাই। শেষ মুহূর্তে কেনাকাটার হিড়িক লাগে কেন জানি। কিছু মানুষই আছে যারা কোন অজ্ঞাত কারণে সারা মাস কেনাকাটার আশপাশ দিয়েও যেতে রাজি না। প্রথম থেকেই নিয়ত পাকা যে তিনি যাবেন চান রাতেই! কেউ কেউ তো এমনও বলে যে চান রাত ছাড়া শপিং করে মজাই পাওয়া যায় না। কেউ চান রাত ছাড়া আবার ইদ শপিং হয় না কি? এমন প্রশ্নও করে। তো এই খদ্দেরদের জন্য চান রাতে চলে ভোর পর্যন্ত জমজমাট কেনাকাটা। রাত একটা দুইটা তিনটা যেন সন্ধ্যা রাত! ঢাকায় কোন দিন ইদ করা হয়নি। কিন্তু বন্ধুদের অনেকের কাছেই শুনেছি যে ঢাকায় চান রাতের জৌলুসের সাথে কোন কিছুর তুলনাই হয় না। দেড় দুই কোটি মানুষ চান রাতের আগে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। ঢাকা হাঁফ ছেড়ে গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা বের হচ্ছে তারা চলে ফিরে, দেখে শুনে, কিনে না কিনে আলাদা সুখ পাচ্ছে। ঢাকার জ্যাম ঘাম গরম যে দেখছে সে চান রাতে না থাকলেও অনুমান করতে পারে যে কতটা হালকা লাগছে সবার এই দিন! তবে সবার সমান না। শেষ মুহূর্তেও যারা কিছুই কেনাকাটা করতে পারে নাই আপনজনের জন্য তাঁদের চান রাত এক বিভীষিকার নাম! আমার জীবনে আমি এমন বেশ অনেক ইদ করছি যে ইদে একটা সুতাও কেনা হয়নি আমার জন্য। এমন বহু ঈদ কেটেছে যে কোন একটা দেওয়া হবে আমাকে এইটা আগেই বলা হয়েছে! হয় শুধু জুতা, না হয় শুধুই প্যান্ট বা শার্ট! আপদমস্তক নতুন, ইদের জন্য কেনা এইটা সম্ভবত বহু বহু পরে কপালে জুটেছে। তখন যখন নতুন কিছু না হলেও সমস্যা না, যখন জানি নতুন জামা কাপড়ে ইদ নাই, পুরোটাই সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু। যাই হোক, অপ্রাপ্তির ওই চান রাত গুলি কীভাবে কাটিয়েছি এখন চিন্তা করলে বুঝি যে কতটা কঠিন অনেকের জন্য এই রাত। এই বোধটা আমাকে উদার হতে শিখিয়েছে। হাত খুলে সাহায্য করতে শিখিয়েছে। ইদটা যেন সবার জন্য আনন্দের হয় এইটা ভাবতে শিখিয়েছে। এখন আমাদের একটা ফাউন্ডেশন হয়েছে, ওইখান থেকে এমন সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ইদের জন্য নানা সাহায্য করছে। এগুলা আলাদা তৃপ্তি দেয়। আরও কিছু মানুষের জন্য চান রাত অভিশাপ! যারা আপনজন হারিয়েছে! সবার সমান অনুভূতি হবে না আমি জানি। কিন্তু আমি আমার খবর জানি। চান রাতের ফুর্তি শেষ হচ্ছে যতক্ষণ সবার সাথে আছি ততক্ষণ। যখন বাড়ির পথে আগানো শুরু করছি তখন থেকে প্রতিটা পদক্ষেপ আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমি যেখানে ফিরছি সেখানে যারা আমার শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যকে যারা আলোকিত করে রেখেছিল, যারা কিছু নাই নাই করেও রঙিন করে দিয়ে গেছিল আমার ইদ গুলি তাঁরা কেউ নাই! আমার মা, যে খুব সাদাসিধে কিছু পদ রান্না করত ইদের দিন, সেই সামান্য আয়োজনই সম্ভবত স্বর্গীয় কোন উপদান ব্যবহার করে তৈরি করত। হয়ত আঁচল থেকে গোপনে মিশিয়ে দিত কোন জাদুকরী উপদান! হাতের স্পর্শে হয়ত পরশ পাথরের মতো কিছু ছিল, যার স্পর্শে সামান্য সেমাই হয়ে উঠত অমৃত! কাঁচা চুলায় রান্নার সময় আগুন ধরানোর জন্য বাঁশের চোঙায় যখন মা ফু দিত তখন হয়ত সেই ফুঁয়ের সাথে মিশে আম্মার অদ্ভুত স্নেহ, আদর্শ, ভালোবাসা, আর যার ফলে তৈরি হয় ইদের নানান বেহেশতি খাবার, যা আমাদের এখন পর্যন্ত বিস্ময়, এখন পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে বসে থাকি আমি। আমি জানি ভোরে সব সময়ের মতো, যা ছিল আশৈশবের সেরা স্মৃতি। আব্বা আমাদের ঘুম থেকে উঠার অনেক আগেই গোসল করে তৈরি হয়ে গেছেন, আতরের গন্ধ নাকে আসছে যেন এখনও, যা আর কোনদিন আসবে না। আমি জানি নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে আর কোনদিনই আম্মা আব্বাকে ইদের সালাম করা হবে না। আমি জানি এই বছর অনেকেই হতভম্ব হয়ে বসে আছে, হয়ত বুঝতেছেই না কেন এমন লাগছে, কোথা থেকে শূন্যতা এসে খোঁচা দিচ্ছে! আমি জানি দিনে দিনে এমন হতভম্ব হয়ে যাওয়াদের সংখ্যা বাড়বে। আর একদিন নিজেদের সময় এসে হাজির হবে! চান রাতে মন খারাপের জায়গা নেই শুরুতে লিখছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, শেষ লাইনে এসে আমি জানি মনটা খারাপ হবেই। মানুষ উৎসব আনন্দে একটা সময় স্বজন হারানোর বেদনা অনুভব করবেই, এই থেকে কি আর রেহাই আছে? সবাইকে শুভেচ্ছা ইদের। ইদ মুবারক। আমার আত্মীয়, বন্ধু সকলকে শুভেচ্ছা। কত দূর দূরান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমার কত শুভাকাঙ্ক্ষী। সকলকে শুভেচ্ছা। অপাত্রে বুঝে না বুঝে যে স্নেহের নানা উপকরণ আমার প্রতি ঢেলে গেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ইদ মুবারক, ইদ মুবারক, ইদ মুবারক। সুখি সমৃদ্ধ হোক সকলের জীবন।
    ভারত -- শেষ ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে - Partha Banerjee | ভারত -- শেষ ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে। লেখক -- পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযান পাবলিশার্স, কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা। মার্চ ২০২৪। দাম ৩০০ টাকা। বুক রিভিউ -- লেখক প্রশান্ত ভট্টাচার্য্য। প্রকাশিত হয়েছে "দৈনিক সুখবর" কাগজে। _____________________'...হিন্দুরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলিয়া 'হিন্দুরাজের' ধ্বনি শোনা যায়। এগুলি সর্বৈব অলস চিন্তা। ... শ্রমসিক্ত জনসাধারণ যে সব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন, সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি তাহার কোনোটির সমাধান করিতে পারিবে কি? কীভাবে বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, দারিদ্র প্রভৃতি সমস্যার সমাধান হইবে সে সম্বন্ধে তাহারা কোনো পথ নির্দেশ করিয়াছে কি?' ১৯৩৮ সালের ১৪ জুন কুমিল্লায় ভাষণে এই কথাগুলো উচ্চারণ করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজীর তথাকথিত ভক্তকুলের শিরোমণি নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের মূল সমস্যাকে ডেস্কের তলায় ফেলে দেশটাকে হিন্দু বানানোর যজ্ঞে আহুতি দিয়ে চলেছেন। এটা প্রায় সব বিরোধী নেতারা নিজেদের ভাষণে বলছেন, মোদী ফের ক্ষমতায় এলে, দেশে আর ভোট হবে না। অথচ মোদীর তৃতীয়বার মসনদে আসীন হওয়া ঠেকাতে তাঁদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব।  এমন পরিস্থিতিতে পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের  'ভারত শেষ ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে' বইটি হাতে এল। পার্থ মার্কিন প্রবাসী ভারতীয়। আরএসএসের গর্ভগৃহ থেকে জন্ম তাঁর। ফলে যে উৎকণ্ঠা থেকে এই বইয়ের প্রবন্ধ ক'টি পার্থ লিখেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সমাজে তো নেইই, এমনকী, অ্যাকাডেমিক ওয়ার্ল্ডেও নেই। এই দুই বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা, এরা আরএসএস ও বিজেপির মধ্যে একটা বিভেদ রেখার কল্পনা করে নিয়ে, তাকেই মান্যতা দেয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কোনো এক সভায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে সচকিত করে জানালেন, 'আরএসএস নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই; ধর্ম নিয়ে তারা থাকেন, কাজ করে ইত্যাদি, প্রভৃতি।  অর্থাৎ সেই বিসমিল্লাহে গলদ। যত সঙ্কট ও হাঙ্গামা নাকি ভারতীয় জনতা পার্টি নামক রাজনৈতিক দলটিকে নিয়ে। আরও নির্দিষ্ট৷ করে, মোদী-শাহর বিজেপিকে নিয়ে, বাজপেয়ী-আদবানির বিজেপিটা যেন ছিল পাতে দেওয়ার মতো! যেমনটা, একসময়ে জ্যোতি বসুদের নেতৃত্বাধীন বামপন্থী দলগুলো বুঝত। অনেকটাই সেই রবীন্দ্রনাথের 'ভালো ইংরেজ', 'খারাপ ইংরেজ' এর মতো, এঁরাও খোঁজেন 'ভালো-বিজেপি', 'খারাপ-বিজেপি'। আলোচ্য গ্রন্থের লেখকের ব্যথাটা এখানে। কেননা, 'দানবের পেটে দু-দশক' কাটিয়ে আসা পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় এই মনুবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী দলটির বিষাক্ত নখ-দাঁত দেখে এসেছেন তার সঙ্গে ঘর করে। বিজেপির হিংস্র হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে নরম হিন্দুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। রামমন্দির নির্মাণের কালাপাহাড়ি হিন্দুত্বকে জগন্নাথ মন্দির গড়ে মোকাবিলা করা যায় না। বড়োজোর ভোটে জেতা যায়।  আলোচ্য গ্রন্থটিতে মোট ১৪টি প্রবন্ধ আছে। কোনো প্রবন্ধই অতিদীর্ঘ নয়। বেশির ভাগই ১২ থেকে ১৪ পাতায় শেষ। আমার বিবেচনায় এ বইয়ের সেরা প্রবন্ধটি হল --  ফাঁকা আওয়াজ, কিন্তু 'দেশপ্রেমমূলক' পজিটিভ বার্তা প্রচারের ফ্যাসিস্ট রাজনীতি-- শিরোনামের লেখাটি। প্রবন্ধটির শুরুতেই  লেখক তাঁর গুরু নোম চমস্কির কথা এনেছেন। এই মহান ভাবুক-অ্যাক্টিভিস্টের 'ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট' বা গণসম্মতি উৎপাদনের তত্ত্ব থেকে তিনি কী আহরণ করেছেন, তার পণ্ডিতি না ফলিয়ে ঢুকে পড়ছেন ঘটমান বর্তমানে।   লেখকের আলোকপাত, 'একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। কীভাবে স্পোর্টসকে মনোপলি করে এবং তার বুক বাজানো উল্লাসকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে মেকি মেসেজ দেওয়া হয়, এবং ড্রাগের মতোই মানুষ হয় ঘুমিয়ে থাকে আর নয়তো বিকটভাবে দেশপ্রেম দেখায়, যার সঙ্গে দেশ বা প্রেম কোনোটারই সম্পর্ক নেই, শুধু মগজের ডোপামিন নামক হরমোনের হার্ডরক ড্যান্স আছে, তাঁর সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ আমেরিকা, ব্রিটেন এবং আজকের ভারত। আমেরিকায় ফুটবল (যার সঙ্গে ফুটের কোনো সম্পর্কই নেই), ব্রিটেনে ফুটবল (যেখানে ভায়োলেন্স একেবারে প্রাতঃকৃত্যের মতোই অবশ্যম্ভাবী), আর ভারতে ক্রিকেট। দশ দেশের 'বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন'। লক্ষ কোটি টাকা জুয়া।' এই যে দেশপ্রেমের বা নিওনরম্যাল ন্যাশনালিজম, এরসঙ্গে না আছে জাতীয়তাবাদ, না আছে দেশপ্রেম। একটা মেকি ফানুস। এমনভাবে একটা 'গণচেতনা' ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যে রোটি-কাপড়া-মকান এর মতো জরুরি সমস্যা ও সঙ্কটগুলো রিসাইকল বিনে ফেলে, এই দেশপ্রেমে মেতে ওঠো। মোদী দেশের পদকজয়ী মহিলা কুস্তিগিরদের সম্মান রক্ষার্থে না এগিয়ে, এবেলা-ওবেলা ট্যুইটবাজি করে যাচ্ছেন কারও সাফল্যে। বিজেপি ও তার রাজনৈতিক মেন্টর আরএসএস জানে, মানুষকে যদি শুধুমাত্র দেশপ্রেম বা হিন্দুত্ব বা রামমন্দির বা উগ্র ইসলাম বা ইউএসএ বা মোদী, বা ক্রিকেট-কোহলি-সচিন-ধোনি বা চন্দ্রযান বা বন্দে ভারত  বা সুপারপাওয়ার বা পুলওয়ামা -- যেটা যখন কাজে লাগে লাগিয়ে নাচানো যায়, তাহলেই কেল্লা ফতে।এই ফ্যানাটিক ন্যাশনালিজমের জন্য সবসময় একটা অপর লাগে। দেশের মধ্যে মুসলিম আর বাইরে পাক-ই-স্তান আর চিন। অথচ কতকাল আগে ১৮৯৫ সালে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের 'স্বপ্নলব্ধ ভারতের ইতিহাস' ছাপা হয়।  তাতে তিনি লিখেছিলেন, 'আমাদের এই জন্মভূমি চিরকাল অন্তর্বিবাদানলে দগ্ধ হইয়া আসিতেছিল, আজি সেই বিবাদানল নির্বাপিত হইবে। আজি মাতৃভক্তিপরায়ণ পুত্রেরা সকলে মিলিত হইয়া ইহাকে শান্তিজলে অভিষিক্ত করিবেন। ভারতভূমি যদিও হিন্দুজাতীয়দেরই যথার্থ মাতৃভূমি, যদিও হিন্দুরাই ইঁহার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তথাপি মুসলমানেরাও আর ইঁহার পর নহেন, ইনি উঁহাদিগকেও আপন বক্ষে ধারণ করিয়া বহুকাল প্রতিপালন করিয়া আসিতেছেন। অতএব মুসলমানেরাও ইঁহার পালিত সন্তান। এক মাতারই একটি গর্ভজাত আর একটি স্তন্যপালিত দুইটি সন্তানে কি ভ্রাতৃত্ব-সম্বন্ধ হয় না? অবশ্যই হয়- সব শাস্ত্র মতেই হয়।' কী অদ্ভুতভাবে সোশাল মিডিয়া দিয়ে মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে মিথ্যার ন্যারেটিভ। রীতিমতো পেশাদার ভক্তদের দিয়ে একাজ করানো হচ্ছে। বুস্ট করিয়ে লাইক বাড়ানো হচ্ছে৷ শেয়ার করা আর লাইকের ঠেলায় ভাইরাল করা হচ্ছে। লেখককে হন্ট করেছে, বাঙালির বদলে যাওয়া চেহারাটা। গত ৫০ বছরের শাসকদের অবিমৃষ্যকারিতায় আর ইদানীংকালের গোদিমিডিয়ার কল্যাণে একাংশ বাঙালি বিজেপিকে দুর্নীতিমুক্ত পার্টি হিসেবে ঠাউরে নিয়েছে।  লেখকের ভাষায় 'মিডিয়ার কল্যাণে বহু সাধারণ মানুষ মনে করেন যে, বিজেপি দুর্নীতিমুক্ত পার্টি, নরেন্দ্র মোদী পরিচ্ছন্ন নেতা এবং অমিত শাহ ভদ্র মানুষ। অনেক বাঙালি এদের ইতিহাস, রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং বিজেপির সঙ্গে আরএসএসের যোগসূত্র নিয়ে মোটেই ভাবেন না। আরএসএস যে বিজেপিকে চালায় এবং আরএসএস যে ফ্যাসিস্ট শক্তি, মানুষের সে বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা নেই। পশ্চিমবঙ্গে এমন কিছু মানুষও আছেন যাঁরা নাথুরাম গডসে কে, অথবা গডসে-সাভারকারের গান্ধিহত্যার বিষয়টি জানলেও বিষয়টা নিয়ে সরব নন। আর অন্য একদল নব্য বাঙালি গান্ধি-হত্যাকে সমর্থন করেন।' আমরা যার সর্বশেষ উদাহরণ দেখলাম অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তমলুকের এই বিজেপি প্রার্থী ভারতীয় জনতা পার্টিকে যেমন দুর্নীতিমুক্ত মনে করেন, তেমনই গান্ধী না গডসে প্রশ্নে গডসেতে আশ্রয় খোঁজেন। এ যদি ফ্যাসিস্টবান্ধব ও আত্মঘাতী বাঙালি না হয়, তবে কে?  বিজেপি ও তার দুধ খাওয়ানো আরএসএসের কতগুলো কায়দা আছে। ওদের সবচেয়ে বড়ো সুবিধে হল, আজকের দিনে এক বিশালসংখ্যক মানুষ-শিক্ষিত মানুষ কিছু পড়ে না। সুতরাং, মিডিয়াকে কিনে ফেলতে পারলেই, আর আইটি সেলের মাধ্যমে গার্বেজ ছড়িয়ে যেতে পারলেই ওদের কাজ অর্ধেক হয়ে গেল। বাকি অর্ধেক বিরোধীরা নিজেরাই ব্যবস্থা করে গেছে এবং করে যাচ্ছে, মূলত তাদের অনৈক্য এবং মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতার অভাব প্রমাণ করে। এই বিপদে নিঠক ভোট রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করা যেতে পারে কিন্তু চূড়ান্তভাবে পারা যায় এই লড়াই আসলে মতাদর্শ বনাম মতাদর্শের নয় তাই বিজেপি মার্কা ফ্যাসিবাদ আটকানোর জন্য দরকার যেমন গণ আন্দোলন ঠিক তার পাশাপাশি দরকার চিন্তার স্বচ্ছতা।   ধর্মনিরপেক্ষ মন গণতন্ত্রের প্রতি ষোলআনা আস্থা ছাড়া কোনোভাবেই বিজেপিচারিত ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা সম্ভব নয়।  যদিও এই বইয়ের লেখক পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তত এখনো অনেক আশাবাদী, কেননা বইয়ের নামকরণে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। তিনি এখনো মনে করছেন ভারত ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে, অতএব সেই সন্ধিক্ষণ দাঁড়িয়ে যদি সব লড়াইটাই মতাদর্শগতভাবে হয় তবে সুড়ঙ্গের শেষে আলো পাওয়া যাবে।  জার্মান কবি-দার্শনিক ফ্রেডরিখ হ্যেল্ডার্লিন বলেছিলেন, 'ভাষা মানুষের সবচেয়ে বিপজ্জনক সম্পত্তি'। একসময় বুঝিনি, এখন বুঝছি, যখন 'মোদীর গ্যারান্টি' মোদী নিজেই গেয়ে চলেছেন আর ভক্তরা প্রণিপাত করছেন।
  • জনতার খেরোর খাতা...
    হেদুয়ার ধারে - ১২৪  - Anjan Banerjee |              নরেণ পাল এল বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ । দিন পনের পরে এল ।বলল, ' কি মাণিকবাবু ... ঘড়ির খবর কি ? আর কিছু ভুতুড়েপনা করেনি তো ? '------ ' এখন পর্যন্ত তো আর কিছু করেনি ... জানিনা , কখন কি করে ... ডাক্তার গোবিন্দ সেনের কথাই মনে হয় ঠিক ... ' মাণিকলাল বললেন ।----- ' কি ? '----- ' ওই যে ... চেতন অবচেতন ... কি সব বলছিল ... বলল ঘড়িটা সবসময়ে চোখের সামনে রাখতে ... তাতে কাজ হয়েছে বলেই তো মনে হচ্ছে ...  '----- ' অ ... তা হবে হয়ত ... দেখুন ... 'সৌদামিনী বললেন, ' হ্যাঁ ... দেখা ছাড়া গতি কি ? কি উটকো ঝামেলায় যে পড়েছি ... ভাল লাগে না মোটে ... '----- ' আরে ... আপনি অত চিন্তা করবেন না গিন্নীমা । কিছু হলে আমি তো আছি ... আমি হলাম গিয়ে ঘড়ির ওঝা ... হাঃ হাঃ ... 'সৌদামিনী দেবী প্রতিবারের মতো এবারও যথারীতি বললেন, ' নরেন ... খেয়ে যেও কিন্তু ... বেলা অনেক হয়েছে ।নরেনও প্রতিবারের মতো মৃদু হেসে সম্মতিসূচকভাবে মাথা নীচু করল । তারপর বলল, ' গিন্নীমা ... ঘরে এবার লক্ষ্মী আনুন । এখনও সময় আছে ... 'সৌদামিনী মুখ তুলে তাকালেন নরেন পালের দিকে ।----- ' হায় ভগবান ... আমার কি আর সে সৌভাগ্য হবে ? বোঝাও ওকে বোঝাও ... 'মাণিকবাবু বিড়ম্বিত মুখে বললেন , ' আঃ ...  নরেনদা তুমি আবার শুরু করলে ... বুড়ো হয়ে গেছি ... এসব ছাড় না এবার ... এই বেশ আছি ...'নরেন পাল সহজে ছাড়ার পাত্র নয় ...----- ' আরে দূর ... কি যে বলেন ভাই  আমার ...পুরুষমানুষ সত্তর বছরের আগে বুড়ো হয় নাকি ...'----- ' তা সত্তর তো প্রায় হয়েই এল ... '----- ' হাঃ হাঃ ... ভাল বলেছেন । আমার তো তা'লে নব্বই ছুঁই ছুঁই বলতে হবে ... ' নরেন বললেন ।------ ' যাক ওসব কথা এখন থাক । আমাদের পানিহাটির জমিটা একটু বিক্রি করার ব্যবস্থা কর না নরেন ... দশ কাঠার মতো আছে ... ওটা রক্ষা করার ঝক্কি আর নিতে পারছি না । এটা একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে । দেখ তো কেনার মতো  লোক পাও কিনা ... অল্প দামেই ছেড়ে দেব ... ' সৌদামিনীদেবী বললেন ।----- ' ও ... আপনাদের ওই পানিহাটির জমিটা ... বিক্রি করবেন ... আচ্ছা ঠিক আছে ... খদ্দের দেখছি ... ক'টা দিন সময় দিন .... 'টং করে  একটা ঘন্টা পড়ল এই সময়ে ।  অ্যাংলোসুইস কোম্পানির গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের দিকে তাকিয়ে সবাই দেখল একটা বেজেছে ।  ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাটা চলছে চিকচিক চিকচিক ...নরেন পাল বলল, ' আজ আর চাবি দেব না । মনে হচ্ছে ভালই দম আছে এখনও।  চলবে কিছুদিন ...সামনের সপ্তাহে এসে দেখব একবার ... 'সৌদামিনী দেবী বললেন , ' চল খেয়ে নাও এবার। গায়ত্রী ... ওদের ভাত বেড়ে দাও ... 'গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের ওপর সূর্যের আলো এসে পড়ছে জানলা দিয়ে । ঘড়ির মুখ হয়ে উঠেছে যেন পরিতৃপ্তিতে হাস্যোজ্জ্বল।  কেন তা কে জানে । গুরুতর  অসুখ থেকে সেরে ওঠা এই  বুড়ো দেয়াল ঘড়িটা এ পরিবারের তিন প্রজন্মের বহু সুখ দুঃখের সাক্ষী । এখন কি কোন সুখের সময় সমাসন্ন , নাকি দুঃখের তা ওই ঘড়িই জানে । সওয়া একটা বেজে গেল । আকাশ থেকে সূর্য গনগনে তাপ ছড়াচ্ছে বাতাসে ।      রাস্তায় হঠাৎ সাগরের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল সুরেশ্বর মল্লিকের । ওই রামদুলালের মোড়ে । সাগর বলল, ' মল্লিকবাবু যে ... কেমন আছেন ? 'জমিদার বংশের ছেলে সুরেশ্বর একটু আধটু মদ্যপান ছাড়া  বাকী অভ্যাস আদতগুলো সবই  বদলে নিয়েছেন । তার জীবনযাত্রা এখন সহজ সরল । এর পিছনে যে সাগরের অবদান আছে তাতে সন্দেহ নেই ।      সুরেশ্বর বলল, ' মোটামুটি ভালই আছি । আমি তো আর আগের মতো নেই ... আপনি অন্যরকম করে দিয়েছেন আমাকে ... ওদিকের পাড়াতেও আর যাই  না ... ঘর সংসার ছেলেপিলে ... মানে,  দুটো সোমত্ত মেয়ে রয়েছে ... এখন আর ওসব নয় ... 'সাগর বলল, ' হমম্ ... তা ভাল ... 'সুরেশ্বর ভয় পাচ্ছিল সাগর আবার সেদিনকার মতো কঠিন বাংলা না বলে । নিমগ্ন টিমগ্ন কি সব বলছিল সেদিন ... সে ঘোর মনে হয় কেটেছে । সাগর বলল, ' পটলের দোকানে যাব ... আপনি কোনদিকে ? '----- ' ওই... একটু হাতিবাগানের দিকে যাব ... জলযোগের দই কিনব একটু ... '----- ' জলযোগ তো ফড়িয়াপুকুরের ওখানে ... '----- ' হ্যাঁ ... ওই ফড়িয়াপুকুরেই । বলছিলাম যে , আমার বড়মেয়ে ... ওই যে আপনি আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন , অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা ... রাত্তিরবেলা ... '----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... এখন ভাল আছে তো ? '----- ' হ্যাঁ , তা আছে ... বলছিলাম যে ... আজকে ওর জন্মদিন ... কোন দিন কিছু করতে তো পারিনি ... তাই এবার একটু ইচ্ছে হল ... মানে, সন্ধেবেলায় যদি সময় করে একটু  আসেন ... খুব আনন্দ পাব ... দু চারজনকেই বলেছি ... বেশি কেউ তো আমার মতো লোকের সঙ্গে মেশে না ... ইয়ে ... '----- ' এ তো খুব আনন্দের ব্যাপার... আপনি এত দোনামোনা করছেন কেন ? আর কেউ যাক না যাক , আমি যাবই এবং জলযোগের দই খাবই ...নিশ্চিন্তে থাকুন ... '----- ' হ্যাঁ ... এটা জানতাম ... অনেক ধন্যবাদ ... রাস্তার মধ্যে বললাম অপরাধ নেবেন না ... '---- ' আরে ... মল্লিকবাবু , কি যে বলেন ! আপনি কি জানেন না , রাস্তাই আমার ঘরবাড়ি । 'সুরেশ্বরবাবু বিগলিতভাবে বললেন, ' তা অবিশ্যি ঠিক ... কি আর বলব ... 'ওরা কথা বলতে বলতে পটলের দোকানের সামনে পৌঁছে দাঁড়াল । সাগর পকেট থেকে রুমাল বার করে গলার , মুখের ঘাম মুছল।  রোদের বড় তাপ । জ্বালিয়ে মারছে ।সুরেশ্বর কি একটা বলতে যাচ্ছিল । বোধহয়' তা'লে ওই কথা রইল ... এখন তা'লে আসি ... ' গোছের কিছু একটা বলে ফড়িয়াপুকুরের দিকে দইয়ের সন্ধানে পা বাড়াবার কথা ভাবছিল , এমন সময়ে হন্তদন্ত হয়ে উদ্বিগ্ন মুখে এক ভদ্রলোক এসে হাজির হলেন ওখানে ।সাগর বলল, ' আরে অভয়দা ... কি ব্যাপার ? এত ঘামছ কেন ... কি হয়েছে ? বস বস দোকানে বস ...পটল দোকানের ছোট ফ্যানটা চালিয়ে দিল, যা সচরাচর চালানো হয় না ।ছাপোষা মানুষ অভয়চরণ পাল দোকানের ভিতরে একটা টুলে গিয়ে বসল । দরদর করে ঘামছে। সুরেশ্বর মল্লিকও কৌতূহলবশত সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন ।সাগর অভয়ের সামনে বসে জিজ্ঞাসা করল, ' কি হয়েছে বলুন তো ... 'অভয় পাল কোন কথা না বলে তার হাতের ঝোলা থেকে একটা লম্বা মতো খাম বার করে সাগরের দিকে বাড়িয়ে ধরল ।----- ' কি এটা ? ' সাগর খামটা হাতে নিয়ে বলল ।----- ' উকিলের চিঠি । রেজিস্ট্রি ডাকে এসেছে ... '----' কী আছে কী এতে ? ' ----- ' পাড়ার পাঁচুগোপাল সরকারকে দিয়ে পড়িয়ে জানতে পারলাম যে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির তরফে উকিল চিঠি পাঠিয়েছে । তাতে নাকি লেখা আছেসাতদিনের মধ্যে আমরা যদি তাদের তার মক্কেলের ঘরের বৌকে স্বামীর কাছে ফেরত না পাঠাই তা  হলে  আমার বিরুদ্ধে আইনের কি সব ধারা অনুযায়ী কড়া কড়া সব অপরাধমূলক ব্যাপারে ফৌজদারি মামলা রুজু করা হবে । পাঁচুগোপাল বলল, এতে নাকি আমার হয়রাণির শেষ থাকবে না কোর্ট কাছারি করতে করতে । মামলায় হেরে গেলে মেয়েকে তো ওদের কাছে ফেরত পাঠাতেই হবে এবং তাদের ঘরের বৌকে অপহরণ এবং গুম করার অপরাধে আমাদের বাড়ির সবাইয়ের জেল হাজতও হতে পারে । সাত দিনের মধ্যে এ চিঠির উত্তর না দিলে কোর্ট থেকে পেয়াদা আসবে .... এসব শুনে তো আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সাগরবাবু ... ছাপোষা লোক আমি ... এসব কান্ড পড়ল তো পড়ল আমারই কপালে ... সব গ্রহের ফের ...  ওঃ ... 'সাগর সব শুনে কপালে চাপড় মেরে বলল, ' যাচ্ছলে ... এ তো পরের ছেলে পরমানন্দ , যত উচ্ছন্নে যায় তত আনন্দ । কোথায় ভাবলাম বেশ একটা জমাটি অ্যাকশান হবে , তা না যত সব ইকড়ি মিকড়ি চাম চিকড়ি । এসব তো ভদ্দরলোকেদের ফেরেব্বাজি ... পাঁচমিশেলি ঘ্যাঁট রান্না । যাক অভয়দা ... তুমি ওসব চিন্তা কোর না । তুমি এক কাজ কর । আমাকে একটা দিন সময় দাও ... একটা উকিল ধরতে হবে আগে । সে চিঠি চাপাটিগুলো করবে । বাকি ব্যাপারটা আমি সামলে নেব । কিন্তু ... মুশ্কিল হচ্ছে খরচাপাতির ব্যাপারটা । উকিল তো টাকা নেবে .... ঠিক আছে তুমি ওসব নিয়ে ভেব না ... দেখি আমি আ...মি ...  হুঁ উ উ ... হাঁ হাঁ হাঁ ... আ... ই ... কত যেন, কত  যেন .... দূর শালা ... ও হ্যাঁ ... ঠিক ... উনত্রিশ নম্বর কর্ণওয়ালিস স্ট্রিট,  শ্রীমানি বাজারের কাছে ... একদম একদম ... মনে পড়ে গেছে ... ' অভয় হাঁ করে তাকিয়ে আছে সাগরের মুখের দিকে । পটল বলল, ' সাগরদা কি হল তোমার ... উল্টাপাল্টা বকছ কেন ? নাও জল খাও... 'সাগর ওর কথায় কোন কর্ণপাত না করে আপনমনে বলল, ' অ্যাডভোকেট অলোকেন্দু মিত্র । মেয়ের নাম সুমনা মিত্র ....  ঠিক ঠিক ঠিক ... 'সাগর অভয় পালের কাঁধে হাত দিয়ে বলল, ' ঠিক আছে ... তুমি বাড়ি যাও অভয়দা ... আমি আজ রাত্রে কিংবা কাল সকালে তোমার সঙ্গে দেখা করব । এই  খামটা আমার কাছে থাক এখন ... '    সুরেশ্বর মল্লিক বিস্তর উকিল মুহুরী ঘাঁটা লোক । সে তো সারা জীবন এই সবই করেছে ।  সে  এতক্ষণ কৌতূহলী দৃষ্টিতে এর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটার আন্দাজ পাওয়ার চেষ্টা করছিল । তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বিষয়টা ঠিক ঠিক বুঝে নিল । এতক্ষণ চুপচাপ ছিল । এবার এই কথাগুলো ছুঁড়ে দিল ---- ' যদি কোন ফৌজদুরি উকিল লাগে বলবেন ... অসুবিধে হবে না ... পয়সার কথা চিন্তা করবেন না ... 'সাগর বলল, ' তা'লে তো খুবই ভাল । আপনি কাল সকাল এগারোটা নাগাদ একবার এখানে আসুন । আপনাকে জানাব ... ' সুরেশ্বর বলল, ' তাই হবে , কোন অসুবিধে হবে না ... কিন্তু আমার মেয়ের জন্মদিন ... আজ সন্ধেবেলা ... 'সাগর বলল, ' যাব তো ... জলযোগের দইয়ের লোভ কি সামলানো যায় ... '    ( চলবে )********************************************    
    নমোসম্ভব কাব্য - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | লঙ্কায় তখন প্রচণ্ড যুদ্ধ। রামচন্দ্র হেবি বেকায়দায়। মোটাভাই বেআইনীভাবে ইন্দ্রজিৎকে মেরেছে বলে রাক্ষসরা হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে বলছে। সমস্যা সেটা নয়, হেগে তো ওরা বড়া ভাজবে। গোটা প্যানেলটাই আর্যদের, ওখানে রাক্ষসরা কখনও জিতবেনা। সমস্যা হল, পাবলিক এই সব খুচরো জিনিস নিয়ে বহুত ঝামেলা পাকায়। সেবার বালি-সুগ্রীবের বাওয়ালে বালিকে পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে, এক ফচকে ছোঁড়া ছড়া কেটেছিল, "তুমিও বানর, আমিও বানর, তফাত শুধু ল্যাজনাড়ায়", সেটাই ভাইরাল। এবারও মধু বলে কোন এক কেরেস্তান রামের হাতে বাটি ধরিয়ে দিয়ে মিম বানিয়েছে "আমি কি ডরাই কভু ভিখারি রাঘবে?"। আদেখলা পাবলিক দেখছে আর শেয়ার করছে। দুই দিনেই দেড় কোটি ভিউ। ব্যাটাকে ঢিট করতে রামিও স্কোয়াড বা বজরঙ্গী ভাইজান কাকে নামাবেন ভাবছেন, এমন সময় আর এক দুঃসংবাদ। সুষেণ এসে বিটকেল মুখ করে বলল, রাবণ ফাঁকতালে মোটাভাইকে পাইয়ে দিয়েছে মহারাজ। এখন-তখন অবস্থা।শুনে তো রামচন্দ্রের মাথায় হাত। শূর্পনখার নাক কাটা থেকে, ইন্দ্রজিতকে নিকেশ পর্যন্ত, যত অপকর্ম সবই তো একে দিয়েই করিয়েছি। এবার কী করা যায়? আর তো রক্ষে নেই। রামচন্দ্র ধনুক টনুক ফেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। সুষেণ মিউমিউ করে বলল, মহারাজ একটা উপায় হতে পারে। কিন্তু তার জন্য একটু অনুসন্ধান লাগবে। - কী উপায়?- বিশল্যকরণী বলে এক ওষধি আছে। লাগালেই মোটাভাই আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।রামচন্দ্র ধড়মড় করে  উঠে বসে বললেন, তা এখানে বকবক করছ কেন, লাগাও।সুষেণ বিড়বিড় করে বলল, সে কি আর মুখের কথা। সে বস্তু আছে অনেক দূরে গন্ধমাদন পর্বতে। যেতে-আসতে সময় লাগবে। ততদিনে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে।কোনো উপায় কি নেই? রামচন্দ্র সব ব্যাটাকে ডেকে পাঠালেন। কোনো কাজে তো লাগেনা, একটু পরামর্শ অন্তত দিক। শুনে টুনে হনুমান বলল, আমি হেবি লাফাতে পারি স্যার। যদি অনুমতি দেন তো যাব আর আসব।এত ভালো তো ভালো না। রামচন্দ্র সন্দিগ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তা বাবা টিএ বিলে ক পয়সা পড়বে? হনুমান বলল, কী যে বলেন স্যার। আপনার আমার অচ্ছেদ্য বন্ড। নতুন আর কী লাগবে। আপনি শুধু একটু দেখবেন, তাহলেই হবে। যেমন কথা তেমন কাজ। হনুমান লাফ দিয়ে চলে গেল অনেক দূরে। ভেবেছিল এ এমনকি ব্যাপার। কিন্তু গিয়ে দেখে, সব অপরাধীরই যেমন দুটো পা, সব মানুষেরই যেমন দুটো হাত, সব গাছেরই তেমনই সবুজ পাতা। এর মধ্যে বিশল্যকরণী পাবে কোথায়। জীবজন্তুরাও তেমন। পাখিদের জিজ্ঞাসা করতে তারা বলে পিউপিউ। ছাগলদের জিজ্ঞাসা করতে তারা বলে ব্যা। সহযোগিতার নামগন্ধ নেই। কিন্তু হনুমান তো হনুমানই। এর আগে ল্যাজে আগুণ দিয়ে লঙ্কা জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাকে ঠেকায় কে। খুঁজে না পেয়ে আস্ত গন্ধমাদনটাই উপড়ে নিল। চারদিকে হইচই পড়ে গেল। হরিণ বলে আমার বাড়ি কোথায় গেল। পাখিরা বলে বসব কোথায়। বর্বর লোকেরা বলল, চাষের জায়গা না থাকলে তো না খেয়ে মরব। কিন্তু হনুমান ততক্ষণে যা করার করে পগারপার।ওদিকে ততক্ষণে রামচন্দ্র খুবই অস্থির। যাব আর আসব বলে গেল, আসেইনা। হঠাৎ ঘাড়ে আস্ত পাহাড় নিয়ে  হনুমানকে আসতে দেখে তো তিনি হাঁ। করেছিস কী ব্যাটা। হনুমান ঘাড় থেকে পাহাড় নামিয়ে বলল, হেঁহেঁ, এ আর এমন কি।রামচন্দ্র ঘাড় ঘুরিয়ে সুষেণকে ডাকতে যাবেন, এমন সময় হনুমান আবার বলল, স্যার। - এবার কী? - আমার ব্যাপারটা দেখবেন বলেছিলেন যে। তাও তো বটে। রামচন্দ্র এক কথার মানুষ। সন্তুষ্ট হলে যে যা চায় তাকে তাইই দিয়ে দেন। হনুমানের মাথায় হাত ঠেকিয়ে বললেন, যা, তোকে হাইকোর্টের জজ করে দিলাম। সেই থেকে জগতে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হল।
    মাননীয়  - Eman Bhasha | মাননীয় শব্দ নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। মাননীয় তো নয় Honourable ! ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি গঠিত হয়। এর আগে ঔপনিবেশিক সরকারে কাজ করা বাবুরা নিজেদের জেন্টলম্যান বলে আখ্যায়িত করে নিজেদের হর্ষ বর্ধন করেন। বাকি দেশিয়রা ছোটলোক- নেটিভ। তাঁরা কেবল জেন্টলম্যান। ভদ্রলোক। ১৮৬১ তে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে যে চার ভদ্রলোক ঠাঁই পেলেন তাঁরা নিজেদের পেডিগ্রি এক ধাপ তুলতে চাইলেন। তাঁরা  চাইলেন নতুন শব্দ। ইতিমধ্যে সভা-সমিতার সভাপতি, পত্রিকা সম্পাদক, শিক্ষকদের উদ্দেশে মাননীয় শব্দ ব্যবহার সমাজে অল্পবিস্তর চালু হয়ে গেছে।এদিকে ইউরোপিয়ান সদস্যরাও জেন্টলম্যান বলে নিজেদের খাটো করতে চান না।অতএব ইংলিশ পার্লামেন্টের অনুসরণে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে আইন করা হল কাউন্সিল সদস্যরা এবার থেকে honourable.বাবলু দাদা তো ব্রিটিশদের লোক।অতএব অনারেবল না বলা ভারি অলেহ্য কথা।ঋণ: ঐতিহাসিকের নোটবুক।।সিরাজুল ইসলাম২০২১
  • ভাট...
    commentkk | অরিন লান, আমি আপনাদের এই গবেষণার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। সময় করে কখনো লিখবেন। ঐ লিংকটা ছাড়াও, পুরো 'ক্যুইয়ার কথা কও' সংখ্যাটাতেই অনেকগুলো খুব ইনফর্মেটিভ লেখা আছে। ঐ লিংকের ওপরেই সূচীপত্র দেওয়া আছে আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন।
    commentঅরিন | "এর পরেও হৈ হৈ করে কোরাপশনের সরকার চলবে , নাটক হয়তো বাড়বে। লোকে এসব এত বছর ধরে দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ।"
    পুরোটাই কোরাপশনের নাটক। এবং আজ বলে নয়। 
    commentঅরিন | "কেউই ভুক্তভোগী নন। এমনকি তাঁদের সন্তানরাও সরকারি সিস্টেমের বাইরে পড়াশোনা করে "
     
    ভুক্তভোগী সকলেই।
    আজ না হয় কাল।
    বাংলা থেকে foreign education consultant রা পাততাড়ি গোটাতে শুরু করলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে। এমনিতেই বহু বিশ্ববিদ্যালয় আজকাল কলকাতা থেকে ছাত্র রিক্রুট করতে চান না। 
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত