উনিজির কোনো এক অর্থনৈতিক উপদেষ্টার নাম সঞ্জীব সান্যাল। তিনি বাঙালি সম্পর্কে চাড্ডিরা যা বলে এবং ভবে থাকে, আরেকবার বলেছেন। মোদ্দা কথা হল, বাঙালি ধূমপান করে, মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে সারা বিশ্বের ব্যাপারে জ্ঞান দেয়, আর মৃণাল সেনের সেনের ছবি দেখে, এই হল তার অধঃপতনের কারণ। এইসব অর্থনৈতিক উপদেষ্টাকে কোথা থেকে বেছে আনা হয় কে জানে, উনিজি বলেই সম্ভব। কিন্তু সেটা কথা না, কথা হল এই নিয়ে বাঙালিরও তেমন আলোড়ন নেই। এমনকি মমতাশঙ্কর নিয়েও যতটা আলোড়ন, তার ধারেকাছেও নেই। কারণ, এই গল্পটা দিয়ে দিয়ে শিক্ষিত বাঙালিকে একরকম করে খাইয়ে দেওয়া গেছে। "বাঙালি অপদার্থ" বললে তারা জাতিবিদ্বেষ খুঁজে পায়না, পবন সিং এর মতো লোকে বাঙালি মেয়েদের নিয়মিত ব্যবধানে "মাল" বললে তাদের কিছু এসে যায়না।
সুবা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানান দোষগুণ বহুল আলোচিত এবং এই নিয়ে প্রচুর লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ইতিহাসের সহজলভ্য জনপ্রিয় সূত্রগুলি দেখলে, সেখানে সচরাচর তাঁকে নিয়ে একতরফা বিরূপ অভিমতই চোখে বেশি পড়ে, যেমন- সর্বসাধারণের তথ্য সংগ্রহের প্রধান উৎস উইকিপিডিয়া তে সিরাজ যে তথ্য পাওয়া যায় তা বাঙালির পক্ষে খুব স্বস্তিকর নয়। শুধু সিরাজ নয়, ওই শতকের বাংলার ইতিহাস আমরা সচরাচর যেভাবে পাই তা যেন বাংলা ও বাঙালির প্রতি একটু বেশিই বিরূপ। ইতিহাসের student হয়ে ইতিহাসচর্চা করতে গিয়ে জেনেছি ঐতিহাসিক বিবরণ লেখার প্রধান শর্ত হল নিরপেক্ষতা বা পক্ষপাতিত্ব ত্যাগ করা। সময় বা মহাকাল ও সেই নিয়ম মেনে চলে। তবে ওই অষ্টাদশ শতকের বর্ণনা একটি জাতির প্রতি কীভাবে এত বিরূপ হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে, খটকা লাগে। এই লেখা সেই খটকা, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।
আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করলেন না সুচিত্রা মাহাতো এবং মঙ্গল। নেতার নির্দেশ। গুলি ছুঁড়তে, ছুঁড়তেই জঙ্গলের ভেতরে দৌড়লেন সুচিত্রা, সঙ্গে মঙ্গল মাহাতো। আলাদা দিকে দু’জনে। ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার দেখলেনও না কিষেণজি। একটা ম্যাগাজিন শেষ। এ কে ৪৭ রাইফেলে নতুন ম্যাগাজিন ভরলেন তিনি। ফের শুরু করলেন এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে। কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না। জওয়ানরা কিন্তু জঙ্গলের ভেতরে আলাদা আলাদা জায়গায় পজিশন নিয়ে নিয়েছেন ততক্ষণে। ঘিরে ফেলেছেন কিষেণজিকে। একজনের রেঞ্জের মধ্যে চলে এলেন তিনি। ব্যাস...। নিজের এ কে ৪৭ রাইফেলে সেকেন্ড ম্যাগাজিনটা শেষ করতেও পারলেন না। আধা সামরিক বাহিনীর ট্রেনড জওয়ানদের পরপর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল শরীরটা। ধুপ করে একটা শব্দ হল শুধু।
তিনি কিভাবে জানবেন একই ঘরে অবস্থানকারী পরিবারের সদস্যদের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা ভিডিও আসে? কিছুতেই বুঝতে পারেন না কিভাবে একটি বাচ্চা যে মানসিক অবসাদে ভুগছে তার কাছে অজস্র ভিডিও নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আসতে থাকে, আস্তে আস্তে যা আত্মহত্যায় পথে ঠেলে দেয়? একটা ক্লিক, একটা সার্চের থেকেই তৈরী হতে থাকে এই অ্যালগরিদিমের জাল। আর ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে অপরিণত মস্তিস্ক। কিছুক্ষণ একটা বিষয় দেখলে বা সার্চ করলে আকৃষ্ট করার উপাদান দিয়ে সময় বাড়ানো- আর বিজ্ঞাপন থেকে আরো আরো রেভিনিউ।
এইবার বাবা তার কারিগরি দক্ষতার প্রকল্প চালু করল। লতানে গাছের জন্য মাচা বাঁধার খুঁটি বানাতে লাগবে বলে বেশ কিছু বাঁশের টুকরো রাখা ছিল। তারই একটাকে নিয়ে এসে দা, করাত, আর কি কি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাটাকাটি করে একটা নল বানিয়ে ফেলা, তারপর সেটার যেদিক থেকে রঙ বের হবে সেদিকের দেয়ালে, তুরপুন দিয়ে ছ্যাঁদা করা ইত্যাদির পরে একটা লম্বা টুকরোর দুই প্রান্তে দুই কাপড়ের টুকরো জড়িয়ে একটা দিক হাতলের কাজে আর অন্য দিকটা বাঁশের খোলের মধ্যে ঢুকিয়ে রঙ টানা আর বের করার পিস্টন বানিয়ে ফেলতেই পিচকারি তৈরি হয়ে গেল। আর আমাদের পায় কে! কিন্তু তিনজনের জন্য দুটো পিচকারি করা হয়েছিল, এইটাতে সুবিধা হয়েছিল না অসুবিধা সেইটা এখন আর নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। যেটা নিশ্চিত করে বলা যায় সেটা এই যে সমস্ত বাহুবলি সিনেমায় যেমন দেখায়, অস্ত্রশস্ত্র যতই ব্যবহার হোক, চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হাতাহাতি সম্মুখ সমরে। প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে শক্তিশালি দলও হেরে যায়, আমারাও আমাদের সেই প্রথম বছরের যুদ্ধে মনে হয় না খুব সুবিধা করতে পেরেছিলাম। পরের বছর থেকে রসদ সংগ্রহের দায়িত্ব নিজেরা নিয়ে নিয়েছিলাম। হাতের তালুতে রঙ মেখে নিয়ে এগিয়ে চলো, যুদ্ধে হেরে যাওয়া কোন কাজের কথা না। মুস্কিল হল, এই রঙের যুদ্ধশেষে সবাই একই রকম হেরে বসে। সবাই রঙে রঙে রাঙা আজব প্রাণী।
কোনো কোনো মানুষকে কখনো ভোলা যায়না। তা তিনি যেখানেই থাকুন না কেন। সালামদা, আপনাকেও কখনো ভুলবো না।
নতুন বছরে নতুন বই। কিশোরদের জন্যে নটি গল্পের সংকলন। তেঁনারা।
এ লেখা সাহিত্য না। ছাত্রবন্ধুর নোট। LaTex নামের এক ‘লেখা সাজানোর কল’ ব্যবহার করে কীভাবে বই বানানো যায় — তাই নিয়ে পাঁচ-সাত প্যাঁচানো। যাদের কাজে লাগবে না, নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিন।
যাইহোক, নিচের পরিস্থিতি দেখে ছেনু ঠিক করল, আহত সৈন্যদের বোমা মারার কোনো মানে হয়না। তাদের আশেপাশের কিছু বাড়ির ছাদ থেকেও মাঝে সাঝে শেলিং হচ্ছে, তাই যেসব সৌভাগ্যবান সেসব এড়িয়ে তাদের বাড়ি পর্যন্ত বেরঙিন, বেদাগ জামায় আসতে পেরেছে, শুধুমাত্র তাদেরকেই সে নিশানা করবে। পুঁচকে হলেও তার হাতের টিপ মারাত্মক। সে রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে তাক করে টপাটপ রং-বেলুন ছুঁড়ছে আর গায়ে ঠিকমতো পড়লেই বারান্দা থেকে ছুট। এভাবে অন্তত গোটা ছাব্বিশ লোককে সে উজালার খরিদ্দার বানালেও দুঃখের বিষয় উজালা কোম্পানি এতবড় উপকারের প্রতিদান কোনো দিনই তাকে দিতে পারেনি, হয়ত বিষয়টা তাদের গোচরেই আসেনি, কে জানে।
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২১. বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। আহা রে - মরে গেছে নাকি! তার শুয়ে থাকার ভঙ্গি - পিছনে ঘুরঘুর করা কুকুর দেখে আচমকা মনে পড়ে যায় সুদানের দুর্ভিক্ষের ওপর তোলা, দক্ষিণ আফ্রিকার ফটো-জার্নালিস্ট কেভিনের ছবিটির কথা - The Struggling Girl. ছবিটি ১৯৯৪ সালের মার্চে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিল। কেভিনের জন্ম আমার দশদিন আগে কিন্তু আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে সে স্বেচ্ছায় চলে গেছে এই ধরাধাম ছেড়ে। পুরস্কৃত হওয়ার চারমাস পরেই সে আত্মহত্যা করে। ব্যক্তিগত দারিদ্র্যর সাথে সুদানের মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ্য করার মর্মপীড়া হয়তো তাকে ঠেলে দিয়েছিল জীবনের কিনারায়। ছবিটি দেখলে আমার একটাই ক্যাপশন মাথায় আসে - The waiting vulture. তবে কেভিনের ছবিটির মতো ধৈর্য্যসহকারে অপেক্ষারত মরা মাসখেকো হুডেড ভালচার নয় - সমাজে চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে নানা পোষাক পরা শকুন, তাদের তীক্ষ্ম নির্মম ঠোঁটে বহুকিছু ছিঁড়ে খেতে - জীবিকা - জীবন - সম্মান। তাদের কেউ কেউ দৃশ্য - অনেকেই অদৃশ্য
আজ আর একবার ‘চৈতন্যে’র আবির্ভাব হোক আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতির সন্ধ্যাকালে। আসুক নবজাগরণ।
৫ই অগাস্ট, ২০১৯। ভারত রাষ্ট্র এবং জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের কাছে নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতির আদেশনামা বলে বিগত ৭০ বছর ধরে জম্মু-কাশ্মীরে লাগু থাকা ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের ঐতিহাসিক বিলুপ্তি। শুধু তাই নয়, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরের অস্তিত্বকে বিলোপ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভাজন। আশ্চর্যজনক হলেও সেইসঙ্গে একথাও ধ্রুব সত্য যে, তা ঘটানো হয়েছিল কাশ্মীরকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ করে এবং কাশ্মীরী জনতাকে সম্পূর্ণভাবে অন্ধকারে রেখেই। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের এই অবলুপ্তির পক্ষে-বিপক্ষে তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তিতর্ক নিয়ে কাঁটাছেঁড়ার আগে জম্মু-কাশ্মীরের ঐতিহাসিক অবস্থান এবং জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রবর্তনের সূত্রপাত বিষয়ক কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের সাথে আলাপচারিতা অবশ্য প্রয়োজন।
আবু সিম্বেল মন্দির লেক নাসের-এর পশ্চিম তীরে আর নীলনদের দ্বিতীয় ক্যাটারাক্ট বা খরস্রোতের কাছে (প্রথমটি ছিল আসোয়ানে)। প্রথম মন্দিরটি অর্থাৎ ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের মন্দিরটি দেবতা আমুন, পিতাহ এবং রা-হোরাখতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। দ্বিতীয় মন্দিরটি অর্থাৎ রানী নেফারতারির মন্দিরটি দেবী হাথোরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এই দুটি মন্দির-ই আসোয়ান হাই ড্যাম তৈরীর সময় জলস্তরের উচ্চতা বেড়ে ডুবতে বসেছিল। ইউনেসকোর সহায়তায় মন্দির-দুটিকে খন্ড খন্ড করে মাপ অনুযায়ী কেটে এনে প্রায় ২০০ মিটার দূরে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এনে আবার একইভাবে বসানো হয়, প্রায় চার বছর ধরে এই বিপুল কর্মযজ্ঞ চলেছিল। বলা হয়, বেলজোনি, যিনি এই মন্দির দুটিকে নতুন করে আবার জনসমক্ষে আনেন, তাঁকে আবু সিম্বেল নামে একটি বালক পথ দেখিয়ে এই মন্দিরের চত্বরে পৌঁছে দিয়েছিল, সেই থেকেই এই জায়গার নাম হয় আবু সিম্বেল।
নির্বাচনী বন্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাল্টে দিতে পারে আসন্ন নির্বাচনের গতিপথ। যদি এ সংক্রান্ত সব প্রশ্ন ও তার জবাব দেশের মানুষের কাছে পৌঁছয়, তবেই এমনটা হবে। মানুষ যদি বুঝতে পারে যে, রাজনীতিতে কালো টাকা দূর করার জন্য নয়, বরং কালো টাকা সাদা করার জন্য এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতি পদে কেন সরকার নির্বাচনী বন্ডের পরিসংখ্যান আড়াল করার চেষ্টা করেছে তা জনগণ যদি জানতে পারে। দিবালোকে এই ডাকাতির পুরো সত্য প্রকাশ পেলে এই নির্বাচনী বন্ডের এই ব্যাপক দুর্নীতির তুলনায় বোফর্স বা ২জি-এর মতো দুর্নীতির ঘটনাগুলো ছেলের হাতের মোয়ার মত তুচ্ছ মনে হবে। অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকরা বোফর্সে ৬৪কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগ করেছিলেন, যা সরকার কখনওই স্বীকার করেনি এবং আদালতে প্রমাণিত হয়নি।
গণিতের সঙ্গে লেখকের প্রেম ও অপ্রেমের এক বর্ণময় ব্যক্তিগত আখ্যান — যার পর্বে পর্বে উন্মোচিত হবে হাজারো জিজ্ঞাসা, ফিরে ফিরে আসবে নানান স্মৃতিভার। সুপাঠ্য ঝরঝরে ভাষায় গণিতের আলো-আঁধারি পথে এ এক নতুন পদচারণার অভিজ্ঞতা।
অসুস্থ সুভাষ তখন জামাডোবায়, তাঁর চিকিৎসক-বড়দার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে তাঁর। সারা বাংলা যখন ক্ষোভে উত্তাল, বিশেষ একটি উচ্চকিত কবিকণ্ঠের কোন স্বর শোনা গেল না কিন্তু সেই মুহূর্তে। সে-কণ্ঠটি বেশ কিছুদিন ধরেই নীরব হয়ে আছে। শুধু রাজনীতিতেই যে সে নীরব তা-ই নয়, সবাই জানে কবিতা সে আর লেখেই না প্রায়, গ্রামোফোন কম্পানীর রিহার্স্যাল রূমের বাইরে যা বলে সে, তাতে ঘন ঘন আল্লাহ্ বা কোন ভগবানের নাম শোনা যায়, কোন পরম শক্তির অস্পষ্ট ইচ্ছার কথা সাধারণের বোধগম্যতার ঊর্ধ্বেও হয়তো শোনা যায় কখনও কখনও! তরুণ সুভাষ যে “জ্যান্ত মানুষের” নেতৃত্বে কংগ্রেস দলকে উজ্জীবিত করবার আশায় ভলান্টিয়ার বাহিনী গড়ে তোলবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক সময়, সেই নজরুল – আজকের প্রায় নিঃস্ব নজরুল – কী করছিলেন তখন? শোনা যায়, অনেককেই তখন পণ্ডিচেরিতে স্থিত অরবিন্দর সঙ্গে তাঁর যোগ-শরীরে সাক্ষাতের কাহিনী কেমন-একটা ঘোরের মধ্যে শোনাতেন তিনি সেই-সব দিনে। অরবিন্দকে যোগ-শরীরে নিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে নজরুল কি পরামর্শ করছিলেন কিছু? তাঁর যাবতীয় বঞ্চনার কাহিনী অন্তত মনে-মনেও নিবেদন করছিলেন যোগাভ্যাসের পায়ে?
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২০. পরিচিত ভ্রমণের জায়গা হিসেবে - উত্তরে কালিঞ্জর কেল্লা, পূবে পূণ্যতীর্থ মৈহার, দক্ষিণে কাটনী এবং পশ্চিমে খাজুরাহো আর পান্না জাতীয় উদ্যান। এসবের মাঝে রয়েছে, মধ্যপ্রদেশের এক অখ্যাত প্রান্তিক গ্ৰাম কছগাঁও। এরই কাছে রয়েছে একাদশ তীর্থংকর শ্রেয়াংসনাথজীর নামানুসারে জৈনতীর্থ শ্রেয়াংসগিরি। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছেও স্থানটির বিশেষ গুরুত্ব আছে সপ্তম খ্রীস্টাব্দের প্রাচীন চৌমুখনাথ মহাদেব মন্দিরের জন্য - যেটি ASI এর অধীনে থাকলেও আজও নিয়মিত সেখানে পূজার্চনা হয়। সেবার পথে নামার আগে ঘরে বসে গুগল ম্যাপ ঘাঁটাঘাঁটি করছিলুম। আচমকা পেয়ে গেলুম সন্ধান - মায়াবী নির্জন নাচনার। বেঁচে থাক গুগল ম্যাপ। এর দৌলতে খুঁজে পেয়েছি প্রচলিত ট্যূরিস্ট সার্কিটের বাইরে এমন বেশ কিছু অখ্যাত খাজানা যা ভরিয়ে দিয়েছে আমার একাকী ভ্রমণের আনন্দের ডালি - যেমন এই নাচনা
বাংলার নতুন সামাজিক, রাজনৈতিক বিপ্লব ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া এলিট শ্রেণীর হাত ধরে আসেনি। এসেছে মাটির গন্ধ, কাদা মাখা, নন-এলিট কিছু মার খাওয়া মানুষের হাত ধরে।
প্রতিবাদে বাবাও বোধহয় কাঁসার থালাতেই খেতেন। 'হিন্দু' বাড়িতে কাঁসার থালা সম্মানসূচক হলেও আমাদের বাড়িতে যতদিন ঠাকুমার শাসন ছিল, কাঁসার থালা ছিল সংরক্ষিত। গেলাম। খেলাম। কাঁসার থালায় চুড়ো করে ভাত। পাশে আলু ভাজা, একটা সব্জি, ডাল আর হাঁসের মাংস। হাঁসের মাংস ততো মশলাদার নয়। খেলাম তো বটে, মনে মনে খচখচ করতে লাগল, ভাতটা কি পাথর হয়ে পেটে থেকে যাবে। রাত কাটলে, দিব্যি সব, পায়খানা হয়ে বেরিয়ে গেল। তা অনেকেই বোধহয়, এখনো আমার ঠাকুমার মতো হয়ে আছেন।
এগুলা সব সত্য, কিন্তু কথা হচ্ছে আমরা কেন মরতেছি? সব দুশ্চিন্তা আমাদেরই? আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় দশা চলছে এখন। আমাদের মাথা ঘামাইতে হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির কঠিনতম প্যাচ নিয়ে! মধ্যপ্রাচ্যরে দেখেন, তুরস্ক যে তুরস্ক, মুসলিম দুনিয়ার নেতা হিসেবে যারা আবির্ভূত হয়েছে অনেকের মনে, তাদের দেখেন! সবাই গরম গরম বক্তব্য দিচ্ছে, হেন করবে তেন করবে বলে যাচ্ছে অথচ সবার সাথে ইজরাইলের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক সব ধরণের সম্পর্ক আছে। নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েই তারা যা করার তা করে যাচ্ছে। আমাদেরই এই অদ্ভুত প্রেম! ওরা নিজেরা নিজেদেরটা গুছিয়ে নিয়ে আমাদেরকে মুসলিম উম্মাহর গল্প শোনাচ্ছে, আমরা বয়কট বলে আমার প্রতিবেশী যে কোকের কোম্পানির উপরে নির্ভর করে বেঁচে আছে তারে বিপদে ফেলে দিচ্ছি। যে হাজার হাজার কর্মী কোক কোম্পানিতে কাজ করছে তাঁদেরকে একটা মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিচ্ছি।
‘স্যার, কিষেণজি ১০-১২ জনের দল নিয়ে কুশবনির জঙ্গলে ঢুকেছে।’ খবরটা এল ঝাড়গ্রামে সিআরপিএফের ১৮৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের অফিসে। এক লাইনের ইনফর্মেশন। সিআরপিএফের এক অফিসারের কাছে ফোনটা এল বিনপুরের একটা গ্রাম থেকে। যিনি টেলিফোনটা করলেন, তিনি তাঁর নাম বললেন না। সিআরপিএফের অফিসারকে শুধু বললেন, ‘স্যার, আমি নিজে দেখেছি। কিষেণজি ১০-১২ জনের একটা দল নিয়ে কুশবনির জঙ্গলে ঢুকেছে।’
জার্মানিতে বাড়ির গেটের পাশে, ফ্ল্যাটের দরোজায় কেবল গৃহীর নামের বোর্ড সাঁটা থাকে না , তিনি যে ডক্টর, ইনগেনিউর, আরখিটেখট, রেখটসআনভালট ( উকিল) নিদেন পক্ষে উচ্চ ডিগ্রির অধিকারী কোনো হের বা ফ্রাউ সেটি জানিয়ে খ্যাত হতে চান। সকালবেলা ফ্রাঙ্কফুর্টের স্পর স্ত্রাসের বাড়ি থেকে অফিস যাবার সময়ে ফ্রিডবেরগার লানড স্ত্রাসের ট্রাম স্টপে অপেক্ষা করার সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে জেনে ফেলেছি লাগোয়া বাড়ির বাসিন্দারা কে কোন কর্ম করেন, কোন ডিগ্রি ধারণ করেন। লন্ডন এসে ইস্তক দেখলাম এখানে বাড়ির মালিক তাঁর সংক্ষিপ্ত সি ভি জানাতে অনিচ্ছুক, , ফ্ল্যাটের দুয়োরে বড়জোর মিস্টার বা মিসেস অমুক । গোলডারস গ্রিনে সেটাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সারের গ্রামে , আমাদের পাড়া পড়শির বাড়ি নম্বর বিহীন , গেটে নাম লেখা – রাসটন লজ, ইনউডস, পার্কভিউ। কারো দেয়ালে মালিকের পরিচিতি সাঁটা নেই। পাস বা পেশা তো নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ফর অ্যান ইংলিশম্যান , হিস হোম ইজ হিস কাসল । তাঁরা খুবই প্রাইভেট পারসন। থাকতে দে না আপন মনে আমায়, অথচ বাড়ি জমি বিক্রির কিসসা সকলকে জানাতে চান ! জার্মানির ঠিক উলটো !
বক্ষবিভাজিকা নিয়ে এত হুজ্জুতি স্রেফ মনুষ্যসমাজেই দেখা যায়। হামলে দেখা হোক, নিন্দে করা হোক বা দেখানো। সে অবশ্য মনুষ্যপ্রজাতি অনেক ক্ষেত্রেই একমেবাদ্বিতীয়ম। এর আগে কেউ জামাকাপড়ও পরেনি, পরমাণু বোমও বানায়নি। কিন্তু তার পরেও জিনিসটা জৈবিকভাবেই রহস্যজনক। কারণ দুখানা জিনিস কোন যুক্তিতে এরকম, কেউ জানেনা। এক হল পুরুষের যৌনাঙ্গ। সেটা এতটাই বাইরে, এতটাই অরক্ষিত যে আক্রমণের লক্ষ্য। ওই জন্যই খেলতে গেলে আলাদা করে গার্ড নিতে হয়, '... তে ক্যাঁত করে লাথি মারব' এই সব প্রবাদের জন্ম হয়েছে। জায়গাটাকে এতটাই দুর্বল করে রেখে বিবর্তনের নিরিখে পুং দের কী লাভ হয়েছে কে জানে। কিন্তু সেটা আপাত কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে না। আজকের বিষয় হল মহিলাদের বুক। সেটাও সম্পূর্ণ উদ্ভট অপ্রয়োজনীয় একটা ব্যাপার। দুগ্ধগ্রন্থির জন্য অত জায়গা লাগেনা। শিম্পাঞ্জি কি গরিলা, কারো স্তন অত বড় না। গরু তো লিটার-লিটার দুধ দেয়। অনুপাতে তারও আকার বেশ কম।
অফিসটাইমের শেয়ালদা স্টেশনের কথা ভাবুন। স্টেশন লোকে থিকথিক করছে, প্রচুর লোক এদিক থেকে ওদিকে যাচ্ছে। এই বিপুল জনসমষ্টি যেন হিগস ক্ষেত্র। এই স্টেশনের মধ্যে দিয়ে একদিক থেকে আরেক দিকে যেতে আমার আপনার মিনিট-দুই লাগবে। টিভি সিরিয়ালের মোটামুটি মুখচেনা কোনো অভিনেতার, পেরোতে আরেকটু বেশি লাগবে, কারণ আমাদের ধরে তো কেউ অটোগ্রাফ নেবে না, কিন্তু তাঁকে ধরে দু-চারজন নিশ্চয়ই নেবে। আর শাহরুখ খান বা সচিন তেন্ডুলকর (বারো বছর আগের লেখা। এখন হলে হয়তো কোহলির নাম করতাম) স্টেশন পেরোবার চেষ্টা করলে ঘণ্টাখানেক তো লাগবেই। অর্থাৎ চলার বেগ এক হলেও, এই জনসমষ্টির সঙ্গে যাঁর আদানপ্রদান যত বেশি, তাঁর একই দূরত্ব যেতে সেইমত বেশি সময় লাগবে। সুতরাং বলা যেতেই পারে, তাঁর জড়তা তত বেশি। হিগস ক্ষেত্রের মধ্যেও এই ব্যাপারটাই ঘটে। যে কণার সঙ্গে হিগস ক্ষেত্রের ভাব বেশি, তার জড়তা তত বেশি। আর জড়তাই তো ভরের মাপ।
আগে ভারতবর্ষ স্বর্গরাজ্য ছিলনা, শিল্পপতিরা এমনকি স্বাধীনতার আগে থেকেই পার্টিতে পয়সা দিতেন। জিডি বিড়লার আত্মজীবনী পড়লেই দেখা যাবে, কংগ্রেসের পিছনে তিনি কত টাকা ঢেলেছিলেন, স্বাধীনতার আগেই। ইংরেজের সঙ্গে দরকষাকষির জন্য কংগ্রেসকে তাঁর দরকার ছিল। গোলটেবিল বৈঠকেও উপস্থিত হয়েছিলেন এক আধবার। টাটা কোনো পয়সা-টয়সা দিতেননা, কারণ ইংরেজ তাঁকে পুষত। নিজের স্বার্থেই।
ঘটনাক্রম জটিল থেকে জটিলতর হয়ে চলেছে, কিন্তু কথায় আছে না: "আশায় বাঁচে চাষা"। আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ব্রিকস দেশগুলির (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) আসন্ন ১৪ তম শীর্ষ সম্মেলন। যে কোনো দেশ, যে আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা সনদ, রোম সংবিধি অনুমোদন করেছে, সে দেশের এখতিয়ারের মধ্যে আসা একজন অভিযুক্ত যুদ্ধপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য। দক্ষিণ আফ্রিকা, এই বছরের ব্রিকস আয়োজক, সে আবার আইসিসির এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সুতরাং, চেপে বসুন দর্শকবৃন্দ, খেলা চালু হলো বলে! ভয় একটাই: জুমা'দের মতো বিশ্বাসঘতকেরা থাকতে আল-বশির'দের আর নাগাল পায় কে? ভাববেন না, আমি আগে থাকতেই কূ গাইছি, আসলে ঘরপোড়া গরু তো, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরাই!
দু বছর আগে গুরুচণ্ডালির পাতায় কিশোর ঘোষালের আগমন নয় আবির্ভাব হলো। এক বিদ্যুৎচমক। ক্রমশ তিনি আমার হাতে ধরে নিয়ে গেলেন, বর্তমানের আলোয় অতীতকে চেনালেন। সলতে না পাকালে সাঁঝবাতি জ্বলে না। তিনি সেই সলতে পাকানোর পর্বটি দেখালেন সযত্নে। আমার পৃথিবীকে চেনার জানার যে বিশাল ফাঁক ছিল, সেটিকে তিনি অবহিত করালেন, প্রতিটি লেখা পড়ে ভেবেছি – এতো দিন কোথায় ছিলেন?
আমার বাবার মুখে শ্রদ্ধেয় কয়েকজন নেতার নাম উচ্চারিত হতো। মুজফ্ফর আহমেদ, আবদুল হালিম, পি সুন্দরাইয়া, হরেকৃষ্ণ কোঙার এবং নাগি রেড্ডি। পি সুন্দরাইয়া ১৯৭৬-এ পার্টি সংশোধনবাদী হয়ে যাচ্ছে বলে চিঠি লিখে পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদ ও পলিটব্যুরো সদস্যপদ ছেড়ে দেওয়ায় কষ্ট পান। জনসঙ্ঘের সঙ্গে হাত মেলানোয় ছিল মূল আপত্তি সুন্দরাইয়ার। বাবা অবশ্য ইন্দিরা জমানার অবসানে প্রাণপণ লড়ে যান।
পাঁচশ বছরের অটোমান রাজত্বে মাসিদোনিয়া কোন রাজ্য (সঞ্জক) ছিল না, ভারদার নদী বয়ে গেছে উত্তর থেকে দক্ষিণে, সেই নদী অথবা প্রধান শহর উস্কুপ (আজকের স্কপয়ে) এর নামেই তার নাম। ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনসের (এন আর সি) প্রশ্ন ওঠে নি, কোনো রাজদপ্তরে পাসপোর্ট জন্মকুণ্ডলীর কাগজ দেখিয়ে প্রমাণ করতে হয় নি, তাঁরা কেউ ঘুসপেতিয়া নন। মাসিদোনিয়ানরা কোন স্বতন্ত্র জনজাতি নয়, আজকের বুলগারিয়া গ্রিস আলবানিয়া সর্বত্র মিলে মিশে বাস করেছেন – তাঁরা সংখ্যালঘু কিন্তু সুলতানের কাছে সবাই প্রজা।
ইতিহাস ঘেঁটে এই ফিকশন তৈরী। এখানে অনেক মশলা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
অরিন্দম দেখে, মাওবাদী কমান্ডোদের জংলা পোশাক, কালো টুপি পরা এক যুবক কাঁধে এক সেল্ফ লোডেড রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই যুবকই সিংরাই মান্ডি ওরফে জয়ন্ত ওরফে ফড়িং! হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে অরিন্দম। কানে আসতে থাকে রাজ্য পুলিশের ডিজির কথা, ‘তিন রাজ্য মিলে খুন, নাশকতা সহ অন্তত ৫০ টি মামলা রয়েছে সিংরাইয়ের নামে। তাকে গ্রেফতারের জন্য বাংলা এবং ঝাড়খন্ড সরকার মিলিয়ে ৪০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এই রাজনীতির ভুল বুঝতে পেরেছে সে। তাই সে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেছে...।’
সংখ্যাগুলো সবই কোটি টাকার অঙ্কে। আর কোম্পানিগুলোও খুবই বিখ্যাত। ১। ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস। কোম্পানিটি চালান লটারিসম্রাট সান্তিয়াগো মার্তিন। বহু বছর ধরে ইডি-সিবিআই এর নজরে আছেন, রেডও হয়েছে অনেকবার। কিন্তু ইডি সবাইকে ধরেনা। তার জন্য মূল্য চোকাতে হয় নিশ্চয়ই। কোম্পানি দিয়েছে ১৩০০ কোটি টাকারও বেশি। কোন দেবতার পায়ে গেছে, আন্দাজ করার জন্য কোনো পুরস্কার নেই। ২। মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং। তেলেঙ্গনার দুই রেড্ডির কোম্পানি। ২০১৯ এ আয়কর হানা হয়েছিল আপিসে। ক্যাগ রিপোর্টেও এদেরকে হাজার পাঁচেক কোটি টাকা অতিরিক্ত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারের দিক থেকে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত কোথাও এগিয়েছে বলে খবর নেই। অভিযোগ বড়, মূল্যও বড়।
মনে হয় জার্মানি, সুইজারল্যান্ড , অস্ট্রিয়া, লিখটেনস্টাইন, লুকসেমবুরগ - এই দেশগুলি একই ভাষা দ্বারা বিভক্ত! এদের সকলের মূল ইন্দো ইউরোপিয়ান ভাষা গোষ্ঠীর প্রাচীনতম শাখা জার্মান , যা সুযোগ সুবিধে মতন ল্যাটিন গ্রিক শব্দ ধার করেছে, কেউ বেশি কেউ কম । মূল ব্যাকরণ এক মনে হলেও সুইসদের শব্দ চয়ন, শব্দবন্ধ আলাদা , উচ্চারণে যথেষ্ট বৈষম্য আছে । চিনি চিনি করি চিনিতে না পারি ! মানে লিখিত সুইস অনেকটাই বোঝা যায় কথিত সুইস একেবারে অন্য জগতের খেলা।এই নিয়ে হাসি ঠাট্টার অন্ত নেই । দুবাই বিজনেস লাউঞ্জে সেদিন এক মহিলার ফোনালাপ শুনছিলাম অনেকক্ষণ ধরে। তিনি থামলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ কিছু মনে করবেন না , সুইস জার্মান বলেছিলেন, তাই না ?’ হেসে ফেললেন। আমার বোধগম্য জার্মানে বললেন, কতটা বুঝলেন ? বললাম, এই যখনই মনে হচ্ছিল মোটামুটি বিষয়টার খেই ধরতে পারছি, তখুনি গভীরে তলিয়ে গেলাম !
উপরের (এর আগের কিস্তিতে প্রকাশিত) চিঠিতে আমার আর নতুন করে জোড়ার কিছুই নেই - এটা নিজেই সব বলে দিয়েছে; তবে তখন আমি ভেবেছিলাম যে এটা আমার সাফল্যের সব থেকে বড় প্রমাণ। আমার নিজের কথা বলতে, আমার তাঁর আবিষ্কার সম্পর্কে এক বিন্দুও মাথাব্যথা নেই, একমাত্র যতক্ষণ না যে সংবাদপত্র আমাকে এই অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিল, তারা সেই বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে। তবে একথা সত্যি যে তাঁর ভ্রমণের ফলাফল সম্পর্কে কৌতূহল ছিল; তবে, তিনি যখন স্বীকার করেছেন যে তাঁর শুরু করা কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি, তখন থেকে আমি স্বেচ্ছায় যতটুকু বলেন তার বেশি এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কুণ্ঠাবোধ করেছি।
সম্প্রতি বিজেপি পরিচালিত, যা রাজ্যপালের অনুমোদন সাপেক্ষে আইনে পরিণত হয়ে সমগ্র উত্তরাখণ্ড রাজ্যে লাগু হবে। উত্তরাখণ্ড সরকারের এই পদক্ষেপ ভারতবর্ষে আবহমান কাল ধরে প্রতিষ্ঠিত ও লালিত ‘বহুত্ববাদ’ সম্পর্কিত বেশ কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রশ্নও খুঁড়ে বার করে ফেলেছে। ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ বা ‘ইউসিসি’ আসলে এমন কিছু দেওয়ানি বিধি, যার দ্বারা ধর্ম-বর্ণ-জাতপাত নির্বিশেষে সমাজের সকল অংশের মানুষের ব্যক্তি জীবনের ধারাকে এক সূত্রে বেঁধে রাখার উদ্দেশ্যে প্রযুক্ত জাতীয় নিয়মবিধি, যা সকলের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার, দত্তক ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়সমূহের অভিন্ন নিয়মবিধি ‘ইউসিসি’-র আওতাধীন।
গণিতের সঙ্গে লেখকের প্রেম ও অপ্রেমের এক বর্ণময় ব্যক্তিগত আখ্যান — যার পর্বে পর্বে উন্মোচিত হবে হাজারো জিজ্ঞাসা, ফিরে ফিরে আসবে নানান স্মৃতিভার। সুপাঠ্য ঝরঝরে ভাষায় গণিতের আলো-আঁধারি পথে এ এক নতুন পদচারণার অভিজ্ঞতা।
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ১৯. এ লেখাটি ‘রিয়াবুতু’ নামক ত্রিপুরার একটি ওয়েবজিন প্রকাশ করেছিল ২৪.১.২৪. তবে সেখানে লেখাটি পাঠিয়েছিলাম সংক্ষিপ্ত আকারে। এখানে রইলো বিশদে। বেতয়া নদীর তীরে উত্তরপ্রদেশের ললিতপুর জেলার একটি প্রান্তিক গ্ৰাম দেবগড়। স্থানটি জৈন ও হিন্দু ধর্মের প্রেক্ষিতে পুরাতাত্ত্বিকদের কাছে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ওখানকার পুরাকীর্তিগুলি আছে ASI এর তত্ত্বাবধানে। দেবগড় পাহাড়ে রয়েছে ভগবান মহাবীর বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ২০১৯ এর ৭ ও ৮ই মার্চ পর্যটকবিরল নির্জন সুন্দর সেই স্থানে দুটি রাত ছিলাম। সেখানে কয়েকজন স্থানীয় মানুষের সাথে আলাপচারিতার অভিজ্ঞতা, ধর্মশালার ম্যানেজার ও এক কর্মী পরিবারের সহৃদয়তা এবং সর্বোপরি এক নির্লোভ অটোচালক রামুর আচরণ আমায় অভিভূত করেছিল। তাই পাঁচবছর পরেও স্মৃতিতে তা অমলিন। এ লেখার প্রোটাগনিস্ট - রামু
এক বৃদ্ধ অসুস্থ ছিলেন বলে, কয়েকমাস পরে পেনশন তুলতে গেছেন সরকারি আপিসে। গিয়ে শোনেন আইন বদলে গেছে। এবার শুধু হাজিরা দিলেই হবেনা, কাগজ লাগবে। কী কাগজ? কর্তব্যরত কেরানি বললেন, জ্যান্ত সার্টিফিকেট।- সেটা আবার কী? কেরানি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গীতে বললেন, ডেথ সার্টিফিকেট শোনেননি? শ্মশানে দরকার হয়? সেইরকম জ্যান্ত সার্টিফিকেট লাগবে। নইলে সরকার জানবে কীকরে আপনি জ্যান্ত আছেন? যান কাগজ নিয়ে আসুন।
সংশোধন করে কী হবে? সে বলেননি। কিন্তু আন্দাজ করা যায়। হিন্দুরাষ্ট্র হবে। অবাধ বাঙালি বিতাড়ন হবে। বাংলা হবে হিন্দুস্তান। একনায়কতন্ত্রের দিকে কয়েকধাপ এগোনো হবে। রাজ্য সরকারগুলো এখনই প্রায় মিউনিসিপ্যালিটি, তাকে ক্লাবের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে। তা তুলেও দেওয়া হতে পারে। তারপর দেশজুড়ে একদিকে হিন্দি-হিন্দু--হিন্দুস্তান, অন্যদিকে আদানি-আম্বানির রাজত্ব। তাদের অনুদান নিয়ে শাসক দল ফেঁপে উঠবে, লুঠ-তরাজের অবাধ বন্দোবস্তো করে দেবে, বিনিময়ে পেটোয়া গণমাধ্যম জুড়ে সর্বক্ষণ গেয়ে চলা হবে, দেশে স্বর্গরাজ্য এসে গেছে।
ভাবতেই আশ্চর্য্য লাগে, অসহায় মানুষদের নির্বিচারে ঠান্ডা মাথায় খুন করে যারা, তাদের বাঁচানোর জন্য কত না আইনের মারপ্যাঁচ রয়েছে, নিত্যনতুন তৈরিও হচ্ছে, অথচ ইউক্রেনে ব্রোভারি'র চার বছরের বাচ্চা মেয়েটির উপর যে রুশ সৈন্যরা যৌন নিপীড়ন করল, তার বাবার সামনে বন্দুকের মুখে তার মাকে গণধর্ষণ করল, তাদের পৈশাচিক অপরাধের দায়ভার কে নেবে? অথবা বুচার ৬৯ বছর বয়সী পেনশনার ভ্যালেন্টিনা জেন--কী দোষ ছিল তাঁর? ২৫ মার্চ, ২০২২-এ রাশিয়ার দখলদার বাহিনী ভ্যালেন্টিনাকে তাঁরই বাড়ির উঠোনে গুলি করে হত্যা করে। ভ্যালেন্টিনার মৃতদেহটি সেখানেই পড়ে ছিল যতক্ষণ না ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রাশিয়ানদের কবল থেকে ৩১ মার্চ বুচাকে আবার মুক্ত করে– এত বড়ো অন্যায়ের কি কোনো বিচার নেই?
দা জোন অফ ইন্টারেস্ট সিনেমার কথা আলাদা করে বলতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে গল্প। যুদ্ধের সিনেমায় আমরা যা সাধারণত দেখি এখানে তা সরাসরি নাই কিন্তু প্রবল ভাবেই আছে। ইংলিশ পরিচালক জোনাথন গ্লেজার পোল্যান্ডের কাহিনী নিয়ে জার্মান ভাষায় তৈরি করেছেন সিনেমাটি। জার্মান এক অফিসারের বাড়ির গল্প দেখানো হয়েছে। নির্বিকার ভাবে ইহুদি নিধনের পরিকল্পনা করছে, গল্পের পিছনে গ্যাস চেম্বারের ধোয়া দেখা যাচ্ছে, গুলি শোনা যাচ্ছে, মাঝেমধ্যেই আর্ত চিৎকারের শব্দ আসছে। কিন্তু তাদের সমস্ত আগ্রহ অন্য কিছু নিয়ে। চার পাঁচজন মহিলা বাড়িতে কাজ করছে, সব যথাসময়ে হচ্ছে, বাচ্চারা বাড়ির সামনে খেলাধুলা করছে, রোদে গা এলিয়ে বসে থাকছে! মাঝে মধ্যেই গা ঘিনঘিন একটা অনুভূতি আমার হইছে। সেরা সিনেমা না জিতলেও এইটা যে এ বছর সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমার পুরস্কার জিততে চলছে তা এক প্রকার নিশ্চিত।
গিজা থেকে দাশুর প্রায় ঘন্টাদেড়েকের রাস্তা, পঞ্চাশ কিলোমিটার মতো, দুই-তৃতীয়াংশ যাওয়ার পর যেখান থেকে মেমফিসের রাস্তা আলাদা হয়ে গেছে, শুরু হলো ম্যাজিক। রাস্তার দুপাশের ছবি যেন হঠাৎ কোনো জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেল! সবুজ শীতের ফসলের ক্ষেত আর খেজুর গাছের সারি। ঘন নীল আকাশের গায়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, অপূর্ব শোভা এই রাস্তার, সঙ্গে ভর-দুপুরে প্রাণ-জুড়নো ঠান্ডা হাওয়া! সায়িদি বললো, সাক্কারা আর দাশুরের খেজুরের বাগান খুব প্রসিদ্ধ। আর এখানকার এক বাগানের খেজুরের স্বাদ আর মিষ্টত্ব অন্য বাগানের থেকে আলাদা! পরে খেয়ে দেখেওছিলাম সত্যি তাই। আমরা সাক্কারার রাস্তা ছাড়িয়ে আগে চলে গেলাম দাশুরের পথে। দূর থেকে স্টেপ পিরামিড দেখতে পেলাম। দাশুরের পিরামিড চত্বর একেবারেই খাঁ খাঁ মরুভূমির মধ্যে, ঢোকার সময় রীতিমতো গাড়ির লাইসেন্স ইত্যাদি দেখেশুনে ঢুকতে দেওয়া হলো, এই এলাকাটি মিশরীয় সেনার আওতায়