এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    ইদবোশেখির লেখাপত্তর - গুরুচণ্ডা৯ | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়শীতকাল বইমেলা হইচই-এর দিনকাল ফুরিয়ে এসে গেল শান্ত হয়ে বসে লেখালেখির কাল। বাইরে তাপমাত্রা বাড়ছে রোদ্দুরের জন্য, নির্বাচনের জন্য। সাথে কোথাও প্যাচপ্যাচে ঘাম তো কোথাও ঝরঝর বৃষ্টি। সন্ধ্যের আবছায়ায় দোকানে ভিড় জমায় সারাদিন রোজা রাখা ক্লান্ত মানুষ, গাজনের প্রস্তুতি নেওয়া শ্রান্ত মানুষ, চৈত্রসেলের হাতছানিতে মুগ্ধ মানুষ। টুপটাপ জমে ওঠে গল্পেরা, কবিতারা। নির্বাচনী জনসভার কোণাকাঞ্চিতে, ইফতারির থালার পাশে, গাজনের সন্ন্যাসীর ঝোলায় চুপটি করে অপেক্ষা করে তারা মানুষের জন্য। আমরা আপনাদের কাছে ডাক পাঠিয়েছিলাম তাদের খপ করে ধরে ফেলে, ঝপ করে লিখে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে। এসে গেছে তারা। আগামী কয়েকদিন ধরে রোজ দুটি-তিনটি করে তারা এসে হাজির হবে বুলবুলভাজার পাতায় - টাটকা ভাজা, গরমাগরম। পড়তে থাকুন। ভাল লাগলে বা না লাগলে দুই বা আরো অনেক লাইন মন্তব্য লিখে জানিয়ে দিন সে কথা। মন চাইলে, গ্রাহক হয়ে যান লেখকের। আর হ্যাঁ, আপনিও লেখা নিয়ে চলে আসুন গুরু আর চন্ডালের আড্ডা গুরুচন্ডা৯-র পাতায়।সূচীপত্রঃস্মৃতিচারণবর্ষশেষ, বর্ষশুরু: অমিতাভ চক্রবর্ত্তীকাব্যজলের সমাধি: জগন্নাথ দেব মন্ডলগিরগিটি ও অন্যান্য কবিতা: ফরিদাসমুদ্রে সনেট: সোমনাথ রায়পাঁচটি কবিতা: অমিতরূপ চক্রবর্তীতিনটি কবিতা: অরিত্র চ্যাটার্জি গপ্পোখুচরো: সুমন মুখার্জীসুফি: আফতাব হোসেন রতন, দ্য ব্যাকবেঞ্চার: নরেশ জানাডাক দিয়ে যায়: এস এস অরুন্ধতীমহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও মার্কণ্ডেয়র চিঠি: রমিত চট্টোপাধ্যায়পাখির অন্তর্ধান রহস্য: মৃণাল শতপথীএই ঘুম শারীরবৃত্তীয়: দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ওয়েথসাম: উপল মুখোপাধ্যায়নভেলাফকির ফয়জুল্লাহ: মুরাদুল ইসলামনিবন্ধ আজ নববর্ষের আখ্যান: সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
    ওয়েথসাম - উপল মুখোপাধ্যায় | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়বাড়ি কোথায় খুঁজে না পেয়ে অহনাকে বললাম, 'বাড়ি কোথায় বলত ?'-    কার?-    কার আবার। -    কার?-    আমার, আমার।-    অত আমার আমার করছ কেন?-    তবে কী করব?-    কিছুই করবে না।-    করব না?-    না।-    কিছু না করে থাকতে পারব কি?-    জানি না।এই বলে অহনা হাঁটতে আরম্ভ করে দিল। সে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের খাঁজে চলে গেল। দু পাহাড় যেখানে জোড় খেয়েছে আর দুটো দেশ তৈরি হয়েছে গাছেদের। হ্যাঁ, গাছেদের আর বৃষ্টিদের। সেখানে প্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেইখানে অহনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখব বলে বলে ভাবছি আর দেখি সে অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটা দিয়েছে। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। অনেকটা পাহাড় দেখার মত এক দূরত্ব। মনে হয় কাছে কিন্তু দূরত্বটা বেশ। যত কাছে যাওয়া যায় ততো দূরত্বটা থেকে যেতে থাকে, থেকে যেতে থাক – দূরত্বটা শেষ হয় না। বোঝা যায় না পাহাড়টা দূরে, বোঝা যায় না পাহাড়টা কাছে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়। সে রকমই হচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না জোরে কথা বলব না আস্তে কথা বলব। তাই দেখতে লাগলাম। প্রথমে গাছেদের এ ওর পাশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। তারা ফুল দেয় না আর দিলেও দেখাতে চায় না যে ফুল দিয়েছে। ছোট ছোট গাছ না কিন্তু তাদের ছোট ছোট লাগে। পাশে একটা বড়ো গাছ ছিল। সেই গাছ দেখে আশ্বস্ত হয়েছি, সেখানে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম গাছ কথা কইছে আর আওয়াজ হচ্ছে কথাদের। সেই আওয়াজে গাছ কেঁপে কেঁপে উঠল। আমি আরো হেলান দিয়ে সেই কম্পন বুঝছি। এমন সময় দেখি অহনা আসছে তার সঙ্গে একটা ছেলে আর মেয়ে। আমাকে ওইভাবে গাছে সম্পূর্ণ হেলান দিয়ে থাকতে দেখে সে হেসে উঠল। তার সঙ্গে সঙ্গে ওই দুটো ছেলেমেয়েও হাসতে লাগল। আমি হাসির আগের মুহূর্ত দেখতে থাকি। কেমন করে হাসি শুরু হয় সেটা লক্ষ্য করি। হাসির শুরু দেখতে পেয়ে আমার খুবই আনন্দ হয়। আর লক্ষ্য করি আমিই হাসছি। অহনা হাসি থামিয়ে দিয়ে, আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি হাসছ কেন?-    তোমাদের হাসতে দেখে।-    আমরা তো তোমাকে দেখে হাসছিলাম। কেমন অদ্ভুত ভাবে ভ্যাবাচ্যাকা মেরে দাঁড়িয়ে থাকছ তো থাকছই আর মাঝে মাঝে গাছটাকে প্রায় জড়িয়েই ধরছ আর ছেড়ে দিচ্ছ।-    তাই?-    নয়তো কী? এরা হল আমার বন্ধুরা। এরা জলপ্রপাত দেখতে দেখতে অনেকদূর চলে গিয়েছিল।-    তারপর?-     সেখান থেকে ফিরে আসার সময় রাস্তা হারিয়েছিল। -     তারপর ?-    তখনই হঠাৎ আমার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আমি ওদের রাস্তা দেখাতে দেখাতে এখানে নিয়ে এসেছি। আমি বললাম, 'চলুন চা খাই। তারপর বাড়ি খুঁজতে হবে।' অহনার এক বন্ধু বলল, 'বাড়ি?' অহনা ওদের বোঝাতে থাকে, ‘তোরা যেমন জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলি। কিছুতেই এক রাস্তা থেকে ঠিক রাস্তায় না যেতে পারে কেবলই অন্য রাস্তার দিকে চলে যাচ্ছিলি, অনেকটা সে রকমই হয়ে গেছে আর কি। ওইজন্য বাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না বলে যাচ্ছে সমানে।’-    সত্যিই বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না।-    ওই দেখ বার বার একই কথা বলছে।এই শুনে অহনার বন্ধুরা আবার হাসতে আরম্ভ করে দিয়েছে আর গাছ যেন কেঁপে কেঁপে উঠেছে এটা বাস্তব। সেই সব কিছু থেকে ভুলে আমি আবার বললাম, 'চলুন।'-    কোথায়?-    চা খাই।-    চলুন।এই বলে আমরা সম্পূর্ণ অপরিচিত আর পরিচিতরা কিছুক্ষণের জন্য চা খেতে চললাম।সেদিন চা-এর সঙ্গে সঙ্গে আমরা অপূর্ব বিস্কুটও খাই। তারপর হাঁটা দিই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'আমরা কোথায় যাচ্ছি?' অহনা বলল, 'জলপ্রপাত'। অহনার বন্ধুরা বলল, ‘হ্যাঁ, জলপ্রপাতেই বারবার যাওয়া যাক।' শুনে আমি বলেছি, সেকি!'-    কেন?-    বারবার ওরা জলপ্রপাতেই যাবে?-    তবে কোথায় যাবে?-    বাড়ির দিকে যাওয়া যায় না?-    জলপ্রপাতের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ঠিক বাড়ি পৌঁছে যাব।-    যাব?-    নিশ্চয় যাব।-    জলপ্রপাতের ব্যপারে এতটা নিশ্চিত হচ্ছ কেন?-    কারণ ওটা আছে।-    কোথায়?-    এসো দেখি।-    চল।এই বলে আমরা চারজনে হাঁটা শুরু করলাম। ঘন পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম আর জঙ্গল এসে গায়ে গায়ে পড়ছিল। সে পড়ায় গা শিরশির করে ওঠে আর আমি একটা অস্ত্র দিয়ে সেই গায়ে পড়া জঙ্গল কাটছিলাম। কাটার ফলে গাছেরা শিউরে ওঠে আর চারিদিকে কান্নার রোল উঠল। সে কান্না খুব আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে আর ফুলেরা সেই সকালে ফুটে উঠে আবার কান্নার আওয়াজে কুঁড়ি হয়ে গেল। চারিদিকে প্রচুর কুঁড়ি দেখে অহনা আশ্চর্য হল। যে বলল, 'দূর থেকে ফুল দেখছি আর কাছে আসতে না আসতে কুঁড়ি।' তার দুই বন্ধু, যারা একজন ছেলে ও অপরজন মেয়ে, একসঙ্গে কথা বলছে তারা, 'সত্যিই তো কুঁড়ির মতো লাগছে।'-    কুঁড়ির মতো লাগছে বলিস না।-    তবে?-    কুঁড়িই।-    এতো?-    হ্যাঁ।-    কী করে? -    ফুলগুলো কুঁড়ি হয়ে যাচ্ছে।-    সে কী করে হবে?-    হচ্ছে তো।-    তাই?-    হ্যাঁ।আমি কিছু বলি না। শুধু দূর থেকে ফুল দেখি আর তার ডালপালা জঙ্গল হয়ে গায়ে পড়লে এক অদ্ভূত তলোয়ার দিয়ে কাটতে থাকি। সে কাটায় শিউরে শিউরে উঠে ফুলেরা কুঁড়িতে ফিরে যায়। সেটা বুঝতে পারছে না দেখে অহনা আর তার দুই বন্ধু আশ্চর্য হচ্ছে কিন্তু আমি হচ্ছিনা। এটা অহনা লক্ষ্য করেছিল। সে অনায়াসে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটে আসছে বন্ধুদের সঙ্গে সঙ্গে আর আমি হেঁটে চলেছি আগে অথচ তারা কথা বলতেই থাকছে আশ্চর্য হতেই থাকছে এটা সে আর কতক্ষণ সহ্য করবে ? তাই সে বলে উঠল, 'তুমি কিছু বলছ না কেন? কোন কিছুই কি বলবে না বলে ঠিক করেছ?' আমি কোন উত্তর দিতে পারি না। জঙ্গল পরিষ্কার না হলে রাস্তা হবে না, রাস্তা না হলে আমরা এগোতে পারব না, পাহাড়েরা জলপ্রপাতেরা কত কাছে মনে হবে অথচ সেখানে পৌঁছনই যাবে না। অথচ জঙ্গল কাটলে গাছেরা শিউরে উঠবে, কান্নার বোল উঠবে, ফুলেরা আবার কুঁড়ি হয়ে যাবে এই সব দোটানায় আমি চুপ করে জঙ্গল কেটে যাই। কিন্তু অহনা ছাড়ার পাত্র নয় সে বলল, 'আমরা সবাই এতো আশ্চর্য হচ্ছি আর তুমি হবে না?' আমি বললাম, 'কেন হব?'-    মানে ?-    কেন হব?-    আশ্চর্য হবে না?-    কেন?-    দেখছ না?-    কী ?-    ফুলেরা কাছাকাছি এলে কুঁড়ি হয়ে যায়।-    আর জঙ্গল?-    সে তো অনবরত একটা হচ্ছে – তুমি কাটছ?-    আমি?-    হ্যাঁ।-    তুমিও তো কাটতে পার। এই নাও ধরো।এই বলে আমি এক অস্ত্র ধরিয়ে দিতে যাই অহনার দিকে। অহনা সেই অস্ত্রের বর্ণনায় আরো আশ্চর্য হয়। আমি বলি, 'ধরো।'-    কী করে ধরব।-    এই অস্ত্র দুজনে ধরতে পারে?-    মানে?-    এই দেখ দুটো ধরার জায়গা আছে।-    একই সঙ্গে?-    একই সঙ্গে দুজনে।-    এটা এতো লম্বা কেন?-    খুব।-    এতো লম্বা।-    হ্যাঁ।-    আর ধারালো?-    একটা দিকেই এর ধার।-    কেমন ধার?-    খুব। দেখছ না জঙ্গল সাফা হয়ে যাচ্ছে। গাছেরা শিউরে উঠছে।-    শিউরে?-    গাছেরা। তাই ফুলেরা সে জন্য কুঁড়িতে ফিরে যাচ্ছে।-    ফুলেরা ফেরে?-    হ্যাঁ, এই অস্ত্র ফেরাতে পারে।-    এতো লম্বা কেন?-    জানি না।-    লম্বা লম্বা গাছ তাড়াতাড়ি কাটতে পারে বলে?-    হবে। শুধু গাছ কেন আরো অনেক কিছু এ কাটে।-    এ একাই কাটে?-    একাই। দুজনে ধরতে পারে। তুমি ধরবে?অহনা এবার কুঁড়ি বা ফুল ছেড়ে অস্ত্রের দিকে তাকাতে থাকে। সেই তরবারি অথচ লম্বা বর্শার মত অস্ত্র, যা দুজনে ধরা যায় তার একটা নাম আছে আর সেই নামটা অহনার দিকে তাকিয়েছিল। সেই দেখে ও বলল, ' এ আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছে কেন?-    কে?-    এই লম্বা মতো ধারালো অস্ত্র। এ যেন কথা বলতে চায়। আমি এর সঙ্গে কথা বলব। তুমি এর নাম বল।-    ওয়েথসাম।-    আমি ওয়েথসামের সঙ্গে কথা বলতে বলতে যাব।-    তুমি এর দুটো হাতলের একটা ধরতে পার।-    না। আমি একে ছুঁলে এ আর কথা বলে উঠবে না। -    আমি একাই কি জঙ্গল কাটব?অহনা বা তার বন্ধুরা কোন উত্তর দেয় না। আর শুনি পেছন পেছন ও ওই ওয়েথসাম অস্ত্রের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আসছে অথচ অস্ত্রটা আমার হাতেই ধরা। ওঠা অনবরত জঙ্গলে উঠছে আর পড়ছে। আমি দরদর করে ঘামতে থাকছি অস্ত্রের ভারে। আমার হাতের শিরারা ফুলে ফুলে উঠছে। পেশি টনটন করছে, সব টাকা আমি খরচ করে ফেলছি। সব পেট্রোল আমার পোড়ানো হয়ে গেছে। এক অলীক আগুনে নেভানোর জন্য আমি আরো পেট্রোল ঢেলে চলেছি তো চলেছিই। সেই আগুনের ভেতরে ও ভেতরে কোথাও অস্ত্র তৈরি হবার মতো উত্তাপ বেড়ে চলেছে তো চলেছেই। এমন এক অস্ত্র যার দুটো হাতল, দুজন ধরতে পারে অথচ ধরে না - লম্বা, একদিক ধারালো, ক্ষুরধার। প্রাচীন লোহা গলানোর যন্ত্রে সেই অস্ত্রের লোহাকে পোড় খাওয়ানো চলছে তো চলছেই। কোথায় সেই অস্ত্র বানানোর কাহিনি। সেই সন্ধান করতে করতে আমরা জঙ্গল পেরিয়ে পেরিয়ে অসংখ্য সিঁড়ির কাছাকাছি এসে পড়ি। হাজার হাজার সিঁড়ি আমাদের পেরতে হয়, তবু হাজার হাজার সিঁড়ি পেরনো বাকি থাকে। কে তাদের তৈরি করে আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখে দেয়। এতো সিঁড়ি দেখে অহনার বন্ধুরা উৎফুল্ল হয়। তারা ছুটে ছুটে নামতে থাকে আর আমরা ওদের পেছন পেছন যাই – আমি ও অহনা, অহনা ও আমি। আমার হাতে সেই প্রাচীন অস্ত্র ওয়েথসাম ধরা ছিল আর অহনা তার সঙ্গে কথা বলে বলে বেশ বন্ধুত্ব করে ফেলেছে। সিঁড়ি এসে পড়ায় আর জঙ্গল কাটতে হয় না কারণ তা আগেই কাটা হয়ে গেছে। অহনা বলল, 'এবার ওকে ছেড়ে দাও?'-    কাকে?-    অস্ত্র। ওয়েথসাম।-    সে কী?-    হ্যাঁ।-    ও চলে যাবে।-    কী করে বুঝলে?-    আমার সঙ্গে কথা হয়েছে।-    কার?-    অস্ত্রের।-    কখন?-    এতক্ষণ আমি ওর সঙ্গেই কথা বলেছি।-    সে কী?-    হ্যাঁ।-    বুঝেছ?-    কী?-    ওর কথা?-    হ্যাঁ।-    সব?-    স্পষ্ট বুঝিনি কিন্তু ওকে তুমি ছেড়ে দিলে তখন আবার চলে যেতে পারবে সে বুঝেছি।-    আর যদি না আসে?-    আসবে।-    যদি জঙ্গল কাটার দরকার হয়?-    হবে না।-    যদি বাড়ি যাবার রাস্তা পরিষ্কার করতে হয়?-    সামনেই জলপ্রপাত, তার তার পাশেই আসলে বাড়ি।-    কে বলল?-    জলের শব্দ?-    কে?-    ওয়েথসাম। অস্ত্র বলেছে।-    কী?-    জলপ্রপাতের ধারে রাস্তা আর তার পাশেই আমাদের বাড়ি।-    ওই জন্য!-    কী ?-    ওই জন্য জঙ্গলের দিকে তাকাতেই শব্দ শুনছিলাম।-    কখন?-    যখন বাড়িতে ছিলাম।হাজার হাজার সিঁড়ির পর আরো সিঁড়ি পেরতে পেরতে অবশেষে আমরা জলপ্রপাতের সব কটা ধাপ শেষে পৌঁছলাম। তখন আর সিঁড়ি নেই এটা তো বুঝেছি। শুধু জলের স্পর্শ পাওয়া যায়। সে জলের ধারে বসলাম। কখনও জল আস্তে যাচ্ছিল, কখনও তীব্রতম স্রোত। সেই স্রোতে ওয়েথসামকে ফেলে দিলাম। ঝপাং করে আওয়াজ হল। খানিকটা জল এসে আমাদের চারজনের মুখে চোখে ছিটিয়ে গেল। সেই জলের ভেতর দিয়ে জল ছাড়া ওয়েথসামকে দেখা গেল স্থির হয়ে ভাসছে, নড়ছে না চড়ছে না। এক লম্বা স্থির, দুই হাতলওলা, প্রাচীন, পোড় খাওয়া ইস্পাতের তরবারির থেকে অনেক বছরের রক্ত ধুয়ে ধুয়ে জল লাল লাল হয়ে যাচ্ছে। তারপর সেই তীব্র রক্তের মতো জলেরা কমে আসায় আবার ধীরে জল বইছে, জলপ্রপাতের জল। আর ভেজা ভেজা চশমার বিন্দু বিন্দু জলকণার মধ্যে দিয়ে দেখছি ওয়েথসাম অস্ত্র ভেসে ভেসে যাচ্ছে। চারিদিক কুয়াশা। জলের শব্দ শুনতে পাই অথচ জলপ্রপাত দেখিনি। চারজন আমরা চারদিকে মুখ করে আছি অথচ পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম কোণটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সেই সব কোণের একটায় আমাদের দুজনের বাড়ি। অহনা আর আমার, তাতে আরো দুই বন্ধুকে নিয়ে যাবার জন্য আমরা পা বাড়ালাম। অসংখ্য সিঁড়ি সেই ঘন দূর্ভেদ্য কুয়াশার মধ্যে জেগে জেগে রয়েছে। সিড়িতে পা বাড়াতে যাব অহনা বলে ঊঠল, 'ওদিকে নয়, সিঁড়ি নয়।' আমি বললাম, 'জঙ্গল, গাছপালা, ফুলেরা, কুঁড়ি।' অহনা বলল, 'আর কাটতে হবে না।' নদীর কোল ঘেঁসে ঘেঁসে আমরা নদী ছেড়ে এক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। অথবা বাড়ি। বড় একটা জানলা ছিল বাথরুমে। সেখানে সুন্দর কপাট। আর কপাটের আগে, ওপরে পর্দা। সেই পর্দা সরানো যাচ্ছে না, সরালেই যদি রোদ্দুর এসে পড়ে। সেখানে এতো ছায়া আর বাষ্পময় সকাল যে বিকেলের আগে বাড়ি পৌঁছব বলে কিছুতেই মনে হচ্ছে না। আর বাড়ির কথা ভাবছি তো ভাবছিই। সকাল থেকে বিকেল তারপর রাত্রি আসে না। বাড়ি পৌঁছতে না পারায় ঘুরছি হ্রদের আশপাশ, প্রপাতের আগে ও পরে। ওয়েথসাম অস্ত্রের কথা মনে পড়ছে। অহনা কথা বলেছে। ওটা নাকি আর দরকার পড়বে না।(ওয়েথসাম হল বর্শার মতো সূঁচালো ও লম্বা দুই হাতল বিশিষ্ঠ প্রথাগত খাসি তলোয়ার)
    তিনটি কবিতা - অরিত্র চ্যাটার্জি | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়ভালোবাসার কাছেভালোবাসার কাছে যদি পারো, খুলে রেখো               তোমার মুখোশ ও দস্তানাএসব এমন, এমনই একটা সময়যখন নিজের কাছে নিজের উপস্থিতি সন্দিগ্ধ ঠেকছে খুবখানিক তফাত রেখে তোমায় নিরীক্ষণ করছে তোমারই পাথরের অবয়ব, ওইতার চোখের মণিহীন চাউনি, ধারালো পেরেকপ্রবণ দৃষ্টিতে দূরের নীলাকাশে, অনাগত মেঘের মত ওই তোমার ছায়া লম্বালম্বি বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে দেখো, সবুজাভ দেওয়ালের গায়ে লেগে থাকা তার টুকরো হাতের ছাপ, অঙ্গ ও মাংসপেশি, পড়ে আছে অবিন্যস্ত, নকশাকাটা স্ক্রু ও সেতারের সুরের মত এতদূর অবধি হেঁটে এসে এসে এইখানে তার পা’টুকু থেমে গিয়ে অবশেষে প্রকাণ্ড ও প্রস্তরেরহয়ে দেহ অবধি বিচ্ছিন্ন হয়েছে আজ, দেখো এমনই চৈত্রের দিনে তার কালো ও মসৃণ জ্যামিতি, দেখো নষ্ট ফুল, পড়ে থাকা ধূসর আতাফল দেখো,এবং তোমার এ নশ্বর হৃদয়ে অনুরূপ আকৃতিরক্রমশ বেড়ে ওঠা গোল, গভীর একটা গর্ত… ট্যুরিস্ট কাহিনীসানগ্লাস পরে নাও বন্ধুরা, পারলে সাথে রেখো টুপি ও টর্চ দেখো এখানে ঠিক একটা নদী ছিল, এখন শুকিয়ে গেছেআর একটা হরিণছানা এসব না জেনেই চলে এসেছে এত দূর – পাহাড়ের গায়ে তার খুরের ঘষা লেগে সেই নুন ও ধুলোর খানিক খাদে চলকে পড়ল – সেদিকে তাকিও না তুমি,আত্মহত্যার আগে, শোনো, আর কোনোদিকে তাকিও না তুমিবরং উঠে যাও সোজা, দ্রুততর এগিয়ে আসা একরৈখিক ট্রেনমুখোমুখি হওয়ার কথা মনে কর, মধ্যাহ্নের কালে তোমার সেই দারুণ জঙ্গম স্মৃতি, এতদিন পর কি পিছুটান জানাতে সক্ষম?এভাবে অন্যমনস্ক রাখো অপর ও নিজেকে, যেভাবে অহেতুক দুর্বোধ্যতা আমাদের আড়াল করেছে, পাতলা টিনের আস্তরণআমাদের মুখ ও ঠাণ্ডা খাবারের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবধান আজ ভাবলে হাসি পায়, কেবলই শ্রী শ্রী কালীমাতা সহায় সম্বল করে ওই প্রৌঢ় দম্পতি পরবর্তী পদক্ষেপটুকু নেবে কিনা,ভাবতে ভাবতে পিচ্ছিল স্মৃতির মত নীলচে কাদায় তাদের আঙুল ডুবে যায় ওই, এ পৃথিবীতে সম্ভবত বিশুদ্ধ নীল বলে কিছু নেই-তবু ভেঙে পড়ার আগে পুরাতন গাছের নীরবতা লক্ষ্য কর তুমিলক্ষ্য কর, রাতের নিভু নিভু উত্তাপ জিইয়ে রাখতে তার টুকরোশরীর, হাড় এবং বিশুষ্ক মজ্জা অনায়াসে আগুনে গুঁজে দেয় যারা, যে প্রজন্ম এতদ্বারা খানিক উল্লাস করে, অধিকতর জটিল হওয়ার জন্য তাদের আলাদা করে পাহাড়ের আর কোনো প্রয়োজন নেই … এপ্রিল অবধি অপেক্ষা করা ভালোএপ্রিল অবধি অপেক্ষা করা ভালো-আধো ঘুমে যে অস্বস্তিকর সংলাপ হানা দেয় মাথার ভেতরআমি তাকে সন্দেহ করি, অপ্রস্তুতের মত তার শব্দগুলো এড়িয়ে যেতে চাই আর পেরিয়ে যেতে চাই বিষণ্ণ মার্চের দেওয়ালে সযত্নে টাঙানো ওই নীল পর্দার সারি -বড় পর্দার আড়ালে আরেকটা ছোট পর্দা সেখানে চলে যাওয়া একটা সংশয়ী মানুষ, ঘরের মধ্যে তার পরিত্যক্ত পোশাক হয়ে শেষপর্যন্ত রয়ে গেল- ঠিক সময় হলে নিজেকে খুব ভালবাসবে, এই ভয়ে ওরা তার হাতগুলোবেঁধে দিয়েছিল একদিন– সেসব বরফ ঋতুর কাল আর কাঠগুলো একটু পরেই আগুনে চলে যাবেজেনেও তাদের সন্নিকটে ওই তার তুমুল ভালবাসাবাসিআড়চোখে দেখে ফেলে, বলতে নেই, ভালো লাগেভালোই লাগে যখন দুহাতে কেউ কুড়িয়ে আনছে ফল, সাজিয়ে রাখছে গ্লাস, কিংবা বৃষ্টি নামার আগেইহাতছানি দিয়ে ঘরে ডেকে নিল কেউ- আসন্ন এপ্রিলের দুপুরে নদীর কিনার থেকে উঠে আসছে ওই নীরক্ত একজোড়া জঙ্ঘা ও জানু, মাটিতে উজ্জ্বল পদছাপ তার ভালো লাগে এই - তবু কেন এ’সকল চিন্তার প্রেক্ষিতেএকটি বেপরোয়া উদ্ধত ঘোড়া দেখি বারেবারে অনায়াসে পিষে চলে যায় যা কিছু, আজ হয়েছে ফলন্ত নীলাভ বসতজমি, ওই পড়ে থাকা সবুজ আপেল…
  • হরিদাস পালেরা...
    বৈঠকি আড্ডায় ১২  - হীরেন সিংহরায় | ভোটাভুটি খরচাপাতি পর্ব ৬ (ভোটে)  যদি  লাগে টাকা,  দেবে ক্রুপ দেবে থুসেন ৯ নভেম্বর ১৯১৮ সালে বার্লিনে অনধের নগরী,  চৌপট রাজা ।নৌ বিদ্রোহ বন্দরে বন্দরে , ভিলহেলমসহাফেন , কীল , হামবুর্গ থেকে নৌসেনা হাঁটছেন বার্লিনের দিকে;   মিউনিক এমনকি  বার্লিনের নয় কোয়লন নিজেদের স্বাধীন রিপাবলিক বলে ঘোষণা করেছে -  পার্লামেন্টের  সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব তাদের দাবিতে অনড় , সম্রাটের পদত্যাগ চাই । ৯ নভেম্বর ১৯১৮ সকাল এগারোটায় বেলজিয়ামের স্পা থেকে টেলিফোন বার্তায়  সম্রাট ভিলহেলম তাঁর পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে ট্রেনে চড়ে  নিরপেক্ষ হল্যান্ডের ডুরণ রওয়ানা হলেন ; আর কোন দিন জার্মানিতে পা দেবেন না , বত্রিশ বছর বাদে ভগ্ন মনোরথ সম্রাট সেখানেই ধরণী থেকে  চির বিদায় নেবেন।বার্লিনে রাইখসটাগেরসামনে সমবেত জনতা উত্তাল- এবার তাহলে কি ? পার্লামেন্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট মন্ত্রী ফিলিপ শাইডেমান সমবেত জনতাকে বললেন“ হোহেনজোলারন সম্রাট পদত্যাগ করেছেন । এই দিনটি জার্মান ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে । জার্মান প্রজাতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক ।এগারোই নভেম্বর এগারোটা বেজে এগারো মিনিটে প্যারিসের সত্তর মাইল উত্তর পূর্বে কম্পিয়েনে এক নির্জন বনের মাঝে টেনে আনা মার্শাল ফখের নিজস্ব ট্রেনের বগিতে জার্মানি  স্বাক্ষর করলো  সন্ধিচুক্তি-  পশ্চিম রণাঙ্গন হলো নিশ্চুপ।  শুরু হলো নভেম্বর বিপ্লব , পুলিশ দফতর দখল, যুদ্ধ ফেরত ফৌজ – ফ্রাইকরপস - বনাম কমিউনিস্ট বিপ্লবী,  স্পারটাসিসট , রোজা লুকসেমবুরগ কার্ল লিবককনেখট – যারা চাইলেন রাশিয়ান স্টাইলে সোভিয়েত গড়ে তুলতে।  খুন কা বদলা খুন মুখোমুখি লড়াইয়ে জিতল সরকারি সেনা; পথে পথে রক্তাক্ত অভিযান । ইতিমধ্যে দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে থাকে পাড়া।  সরকার প্রাগে পলাতক। জানুয়ারি মাসে বার্লিন থেকে নিরাপদ দূরত্বে , ভাইমারে নতুন সংবিধান রচিত হলো , জার্মানির ইতিহাসে গণতন্ত্রের প্রথম অভিষেক – অজানা অচেনা পথে একটা দেশের প্রথম পদক্ষেপ। এতদিন দেশটা চালিয়েছেন অভিজাত সমাজ এবং বনেদী জমিদারবর্গ ( ইউঙ্কার )  সেখান থেকে এসেছেন সেনাপতি , বিচারপতি ,সমাজপতি এবং অনেক শিল্পপতি। ।এখন এই নতুন ব্যবস্থায় প্রধান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ এবারট , তাঁর বাবা ঘোড়ার জিন বানাতেন।গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন এবং সেটি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হিসেবে – ষাট হাজার ভোট পেলে একটি সিট।  ১৯২০ সালর নির্বাচনে ছাব্বিশটি দল , আশি শতাংশ নাগরিক ভোট দিলেন । নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা মানে ৫০.১% ভোট কোন দল পেলেন না – সবচেয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠিত পার্টি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ৩৮%, আসন সংখ্যা ১০৩ ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় কোন জার্মান শহর গ্রামের ওপরে বোমা বর্ষণ হয় নি , শত্রু সৈন্য দেখা দেয় নি দুয়োরে। তাবৎ পরিকাঠামো,  রুর এলাকার কয়লাখনি ইস্পাত কারখানা বার্লিনের ব্যাঙ্ক মিউনিকের ব্রুয়ারি হামবুর্গ ব্রেমেনের জাহাজ কারখানা অক্ষত অটুট ।  ডুসেলডরফ কলোন ডরটমুণ্ডের শিল্পপতিরা যুদ্ধে হারান নি কোন সম্পদ কিন্তু বিজয়ী পক্ষ চাইছেন ক্ষতিপূরণ ( রেপারেশন )-সেটা আসবে তাঁদের ট্যাঁক থেকে।  ফ্রান্স বেলজিয়াম তাদের সেনা বসিয়ে রেখেছে রাইনল্যান্ডে , কারখানার দরোজায়, খনির মুখে । দেশে নিরঙ্কুশ অরাজকতা , কমিউনিস্টরা ট্রেড ইউনিয়নকে হাওয়া দিচ্ছে-  আমাদের দাবি মানতে হবে ঝাণ্ডা তুলে হেড অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন বিক্ষুদ্ধ জনতা । এবং স্ট্রাইক!   প্রাশিয়ান আমলে যা  ছিল অকল্পনীয় । দেশ চলত  একটা কঠোর ডিসিপ্লিনের শেকলে -সমাজে কারখানায় অফিসে সকলের স্থান ছিল নির্দিষ্ট।  সবাই তা মানতেন, সব্বাই করে বলে সব্বাই করে তাই !  কোন বিকল্প ছিল নাঅন্য দেশের রাষ্ট্রীয় সৈন্য বাহিনী থাকে; প্রাশিয়াতে রাষ্ট্রীয় সৈন্য বাহিনীর একটা দেশ ছিল।*জার্মান শিল্পপতিরা কখনো শ্রমিক নেতার মুখোমুখি বসেন নি , সেটা সামলাত স্থানীয় প্রশাসন -বেতনের দাবিতে কেউ অফিসের সামনে দাঁড়ায় নি , জমিদাররা ভূমিহীন কৃষকদের যেমন ইচ্ছে এমনি মজুরি দিয়েছেন। । যুদ্ধের পরে এই এলোমেলো অবস্থার সুযোগে গড়ে উঠেছে কমিউনিস্ট পার্টি যারা রাশিয়ান কায়দার সোভিয়েত বানাতে বদ্ধ পরিকর।  সেটা ব্যর্থ হল এক বছর বাদে কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি খুঁটি গেড়ে বসল , পার্লামেন্টের ভোটে প্রার্থী দিলো । রুর বার্লিনের বিজনেস ম্যাগনেটরা কথা বলবেন কার সঙ্গে?তাঁদের আতঙ্ক কমিউনিস্টরা এবার শ্রেণি সংগ্রাম শুরু করবে , তার মানে শিল্পে অশান্তি, খরচা বেশি , বোর্ডরুমে কমিউনিস্ট কর্মীদের অনধিকার প্রবেশ। তাদের ঠেকায় কে ?  সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকের রক্ষা করেছেন কিন্তু এই আগ্রাসী শ্রমিকদের হাত থেকে শিল্পপতিদের রক্ষা করে কে ?  তাঁরা চান রাজনৈতিক স্থিরতা এবং শ্রমিকদের দাবিয়ে রাখা-যেটা প্রাশিয়ান সরকার করে এসেছেন। তারই ছত্রছায়ায় জার্মান শিল্প, বাণিজ্য অতি দ্রুত উন্নতি করে দুনিয়ার ঈর্ষা অর্জন করেছে। আজ এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাঁরা খুঁজছেন একজন বিশ্বাসযোগ্য শক্ত রাজনৈতিক নেতা যার সঙ্গে   এই সফল  ধনী ব্যবসায়ীরা আলোচনায় বসে একটা বন্দোবস্ত করতে পারেন – সার  আপনি আমার কেসটা দেখুন আমি আপনার ব্যপারটা সামলে দেবো। নৈরাজ্য তখন এমন পর্যায়ে যে জার্মানির অন্যতম ধনী ব্যক্তি ফ্রিতস থুসেন ফ্রান্সের নরমান্দিতে তাঁর বাবার কয়লাখনির মালিকানা পাবার অভিলাষে শত্রুদেশ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নিতেও প্রস্তুত।নির্বাচন হয়, কোন দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় না।  কার সঙ্গে হাত মেলাবেন তাঁরা ? এলো অকল্পনীয় মুদ্রাস্ফীতি , আম জনতা হারালেন তাঁদের সঞ্চয় ; কিন্তু রুর মিউনিক বার্লিনের ধনপতিদের  সম্পদ অটুট  তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ গেলেন আমেরিকা- সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যের কি হালচাল ? নতুন নতুন যন্ত্রপাতি , কর্ম মুখর কল কারখানা দেখে চমকিত হয়ে দেশে ফিরে বললেন তাঁদেরও চাই ঐ সব খেলনা ।  কিন্তু তাঁদের স্বার্থ দেখার  ও অর্থ সরবরাহের জন্য কেউ নেই ।এমন সময়ে দক্ষিণ দিক থেকে উদিত হলেন এক অস্ট্রিয়ান নাগরিক , যুদ্ধে কর্পোরাল হয়েছিলেন , দ্বিতীয় শ্রেণির আয়রন ক্রস ঝোলানো থাকে গলায় ।  মিউনিকের পাবে তাঁর বক্তিমে শুনতে ভিড় জমে যায় ( হোফব্রয় হাউসের তিনতলায় সেই হলটি দেখতে পাবেন ) ; তাঁর মতে জার্মানি একটা জেতা গেমে হেরেছে কারণ সৈন্য বাহিনীর পিছন থেকে ছুরি মারা হয় । তার জন্য দায়ী কমিউনিস্ট , ইহুদি ও কিছু চক্রান্তকারী বিদেশি । ৯ নভেম্বর ১৯২৩  শখানেক লোক যোগাড় করে ব্যাভেরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ব্যর্থ অভ্যুথানের পরে গ্রেপ্তার হলেন সেই নেতা , আডলফ হিটলার । সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল ১৯২৩ সালে কিন্তু কোন অজানা কারণে তাঁর রেহাই হল নয়  মাস বাদে ।  তাঁর বহুল প্রচারিত ( এমনকি দুনিয়ার অনেক সংবাদ পত্রে ) বিচার পর্ব হিটলারকে রাতারাতি পরিচিত করাল সারা দেশে । তাঁর পার্টি,  জার্মান শ্রমিক দল  ( ডয়েচে আরবাইটার পারটাই ) প্রথম ইলেকশন লড়ে ১৯২৪ সালে, ব্যাভেরিয়ার বাইরে সম্পূর্ণ অচেনা এই দল পেলো ০.১২% ভোট , আসন শূন্য.  পার্টির নাম বদলাল -  হলো  নাতসিওনাল সোৎসিয়ালিস্তিশে ডয়েচে আরবাইটার পারটাই  সংক্ষেপে নাৎসি ( প্রথম দু  অক্ষর নিয়ে )।  মুদ্রাস্ফীতি ও যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের ঝক্কি কাটিয়ে জার্মান অর্থনীতি দুর্বার বেগে ঊর্ধ্বগামী । হিটলারের অগ্নিগর্ভ বাণী বাজারে কাটে না।  ১৯২৮ সালে নাৎসি পার্টি পেলো মাত্র ১২টি  আসন।  ১৯২৯ সালের অক্টোবরে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার বাজারে লঙ্কা কাণ্ড লাগলে যে ডিপ্রেশন দেখা দিলো জার্মানিতে তার প্রত্যক্ষ ফল দেখা গেলো ১৯৩০ সালের নির্বাচনে - ১৮% ভোট এবং ৯৫টি আসন পেলো নাৎসি দল । কিন্তু কোন দল সরকার গঠনে অক্ষম – শাসন চলে ভাইমার সংবিধানের সেই ৪৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী – রাষ্ট্রপতির ডিক্রি দ্বারা!  পার্লামেন্ট যখন সিদ্ধান্ত  নিতে অপারগ, রাষ্ট্রপতি হিনডেনবুরগ চ্যান্সেলরের পরামর্শ অনুযায়ী অথবা তা উপেক্ষা করে আপন ডিক্রি মাফিক দেশ শাসন করেন সেই মোতাবেক ।প্রসঙ্গত , যতদূর মনে পড়ে ভারতীয় সংবিধানে এই ধরণের একটি ক্লজ আছে- রাষ্ট্রপতি যুক্তিযুক্ত মনে করলে ( মনে করাটাই যথেষ্ট ) বা প্রধানমন্ত্রীর  পরামর্শ মতন পার্লামেন্ট ভাঙতে পারেন, ছ মাস নিজের  শাসন চালাতে পারেন, নতুন নির্বাচন ফলপ্রসূ নাহলে আবার রাষ্ট্রপতির শাসন ।  এটি কেউ দেখে দিলে কৃতজ্ঞ হব ।বার্লিন হামবুর্গ মিউনিকের পথে পথে লাল পতাকা বনাম সাদা কালো স্বস্তিকার লড়াই চলে ( উৎপল দত্তের ব্যারিকেড নাটকটি স্মরণ করুন) দেওয়াল লিখন দেখে জেনে নিতে হয় কাদের  পাড়ায় আছেন । তফাৎ এই যে কমিউনিস্ট বা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ছেঁড়া খোঁড়া জামা কাপড় পরে  হাতে কেবল পতাকা নিয়ে আওয়াজ তোলে - নাৎসি বাহিনী ব্রাউন ইউনিফরম পরিহিত , হরসট ওয়েসেলের ডি ফানে হোখ ( আমার পতাকা উচ্চে ) গান গেয়ে মার্চ করে , লাইন দিয়ে, হাতে লাঠি , কোমরে পিস্তল , যেখানে সেখানে প্রতিপক্ষকে পেটায়, সভা ভাঙ্গে - তাদের উপস্থিতি রীতিমত উচ্চকিত ।লাইপজিগের এক সভায় (১৯৩০) নাৎসি প্রবক্তা গ্রেগর স্ত্রাসার বললেন , আমরা দশটা  আইন পাস করে এই গোলমালের সমাধা করে দিতে পারি – কেউ স্ট্রাইক করলে তাকে গুলি মারা হবে , বাকিরা কোন দেওয়ালের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে চাইবেন না “দেশের এই টালমাটাল অবস্থায় এক সবল কাণ্ডারির খোঁজে ব্যাভেরিয়ার কিছু ধনী মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন - যেমন কোবুরগের ডিউক, প্রিন্স হেঙ্কেল ভন ডোনারসমার্ক, ব্যাভেরিয়ান শিল্পসমিতির প্রধান প্রিন্স আরেনবেরগ।১৯৩১ সালে বেশ কয়েকজন জার্মান ব্যবসায়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘুরে এলেন- তাঁরা কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার প্রচণ্ড বিরোধী কিন্তু আশ্চর্য হয়ে  দেখলেন কিভাবে শ্রমিক কৃষকের সেই সরকার শ্রমিক কৃষকদেরই   দাবিয়ে রেখেছে , সেখানে কারো  ঝাণ্ডা তুলে মাইনে বাড়ানোর দাবি করার হিম্মত নেই ।  ঠিক যেমন গ্রেগর স্ত্রাসার বললেন পার্টির নামের ভেতরে সোশ্যালিস্ট শব্দটা আছে বটে কিন্তু সেটা লোক দেখানো মাত্তর।আরও খানিকটা দূর থেকে নাৎসি জয়রথের অগ্রগতি লক্ষ করছিলেন কয়েকজন শিল্পপতি – তাঁরা চান স্টেবল গভর্নমেন্ট এবং এমন কাউকে যার সঙ্গে ইউ ক্যান ডু বিজনেস উইথ ! মহা ধনপতি ফ্রিতস থুসেন জনান্তিকে বলেছিলেন উদার উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাম্য আছে ,আমাদের ধন সম্পদ বাড়ানোর সুযোগ নেই ; কমিউনিস্টরা আয়ের সাম্য আনতে পারে কিন্তু আমাদের সম্পদের পরিমাণ শূন্যে দাঁড়াবে । ক্ষমতা  যদি কেন্দ্রীভূত হয় আমরা চাইব তার অংশীদার হতে।২৭শে জানুয়ারি ১৯৩১ ডুসেলডরফের হর্ম্য মণ্ডিত ইন্দুস্ত্রি ক্লুবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফ্রিতস থুসেন সমবেত ধনপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমাদের দেশের ভাবি পরিত্রাতার সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিই -ইনি আডলফ হিটলার ।লম্বা বক্তৃতা দেবার অভ্যেসটি ত্যাগ করে হিটলার মাত্র দশ মিনিট বললেন । তিনি শুরু করলেন  “অনেকে আমাকে বলেন আপনি  জাতীয়তাবাদী জার্মানির একক ঢোল বাদক । তাই কি ? আজ এক দেশভক্তের মতন আমি এই ঢোল আবার বাজাতে চাই , জার্মানিকে দিতে চাই এক  বিশ্বাস,  সেই  আস্থা যা জার্মানি হারিয়েছে “ ।শেষে বললেন“আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই  একটি  জাতীয়তাবাদী  সরকার । বারো বছর যাবত আমি এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি । আমরা এ দেশের রাজনীতির বিশুদ্ধিকরণ করে এমন একটি দেশ ও সরকার গড়ব যেখানে কোন প্রকারের দেশদ্রোহীর কোন ক্ষমা নেই । যদি কেউ আমাদের এই জাতীয়তাবাদী দেশনীতির বিরোধিতা করেন তাদের কঠিনতম  শাস্তি দেওয়া হবে । বন্ধুত্বের হাত যদি কেউ বাড়ান সেটি আমরা সাগ্রহে  গ্রহণ করবো.”  তুমুল করতালি ।ভাবী একনায়কের সঙ্গে শিল্পপতি ও ধনপতিদের সেতু বন্ধনের প্রারম্ভক্রমশ*”Some states have an army, the Prussian Army has a state” Voltaire  আউগুস্ট থুসেন স্ত্রাসে ১ডুসেলডরফ  ফ্রিডরিখ থুসেন (১৮৭৩-১৯৫১ )পিতা আউগুসট থুসেনের ইস্পাত ও খনিজ সাম্রাজ্যের একমাত্র অধীশ্বর ( জার্মানির ৭৫% আকরিক লোহা, দু লক্ষ কর্মী)।  ১৯২৩ সালে হিটলারের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে পাঁচ লক্ষ গোল্ড মার্ক দান করেন  -কমিউনিস্ট পার্টির অরাজকতা থেকে নাৎসি পার্টি জার্মান শিল্পকে বাঁচাবেন এই আস্থায় । পার্টি মেম্বারশিপ নম্বর ২, ৯১৭, ২৯২ । মোহভঙ্গ হতে দেরি হয় নি -ইহুদি এবং ক্যাথলিকদের প্রতি দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে হিটলারকে চিঠি লেখেন।  ফলং  পদচ্যুতি , দাখাউ কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে সাময়িক আবাস। সেই কারণে তাঁর নাৎসি মেম্বারশিপকে ক্ষমা ঘেন্নার চোখে দেখা হয়েছিল ।  সেই প্রতিষ্ঠান  এখন থুসেন ক্রুপ নামে পরিচিত ।  পরিবারের শেয়ার প্রায় শূন্য , ক্রুপের ২১% । স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ফ্রাঙ্কফুর্টে কাজ করার সময়ে জয়েন্ট ম্যানেজার হ্যারমান এরেনবেরগারের সঙ্গে ডুসেলডরফ অফিসে যেতাম ।  রিসেপশনের দেওয়ালে  তাঁর ছবি দেখেছি । আমার আলোচনার পার্টনার ছিলেন ফ্রিডহেলম বাবেরসকে । কোন কোম্পানীকে তিনি সবসময় "আউটফিট "বলতেন যেমন স্টেট ব্যাংক  অফ ইন্ডিয়া একটি আউটফিট ! 
    কাইজার গান্ধী   - Nabhajit | বের্নার কথা দীনেশ কে বলে আর লাভ নেই। বের্না জীবন থেকে সরে গেছে অনেক দিন।  কলেজ শেষ করার পর বেশ কিছুদিন বের্না থেকে যায় ভারতে।  একা একা ঘুরতে যেত বিভিন্ন শহরে।  কাইজার তখন চাকরি খোঁজার জন্য মরিয়া।  অনেক গুলো কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিতে হচ্ছিলো। ফোনে কথা হতো।  তখন মোবাইল ফোন ছিল না তাই ঘন ঘন কথাও হতো না, মেসেজ নামের কোনো জিনিস তখনো আবিষ্কার হয় নি। কাইজার হিমাচল থেকে দিল্লি এসে থাকতে শুরু করেছে।  আভাস গান্ধী  আর কামত গান্ধী  তখন দিল্লিতে চাকরি পেয়েছে। একসাথে ওদের ছোটবেলা কেটেছিলো জুবিনের আশ্রমে।  কত স্মৃতি , কত ভালোবাসা , নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, অভিমান আবার ভালোবাসা।  এমন দিন গেছে যখন ওরা এ ওর জাঙ্গিয়াও পড়েছে, কিছুই আলাদা ছিল না ।  একটাই আলমারি ছিল ঘরে, গুছিয়ে কাপড় জামা রাখার অভ্যাস ছিল না, একসাথেই সব কিছু থাকতো, নিজের বলে কিছু নেই, কিন্তু কোনো অভাব বোধ ও ছিল না। জুবিন জানতো এই আশ্রমের ছেলেরা এই ভাবেই মানুষ হচ্ছে, ছেলেদের শেখাতে চায়নি কোনো কোনো  জিনিষকে নিজের বানানো দরকার। হোক না কিছু মানুষ যাদের নিজের কোনো চাহিদা থাকবে না , হোক না কিছু মানুষ নিঃস্বার্থ।  স্বার্থপরতা আমাদের গণ্ডিকে ছোট করে দিচ্ছে সারা বিশ্বে। আমরা বেশির ভাগ লোক নিজের চোখ দিয়ে নিজেকে দেখি, অন্যের চোখ দিয়ে দেখতে শিখিনি, কিন্তু জুবিনের ছেলেরা অন্য ধাতুতে তৈরী হয়েছে। টাকা পয়সায় কেউ হয়তো চূড়ান্ত বড়লোক হয়নি , কিন্তু মানুষ হিসাবে অনেক বড় মাপের মানুষ তৈরী করেছে জুবিন দর্জি।আভাস আর কামাত কাইজারকেও  ডেকে নেয় নিজেদের কাছে। গ্রীন পার্কে একটা ফ্ল্যাটে তিনজন থাকতো। কাইজার সারাদিন পড়াশোনা করতো কম্পিটিটিভ পরীক্ষার জন্য , দুটো ছাত্র পড়াতো বারো ক্লাসের।  সেই পয়সায় হাত খরচ মিতে যেত।  বাড়ি ভাড়ার টাকা আর খাওয়া দাওয়া আভাস আর কামত  দিতো।  কেউ কখনো এই নিয়ে কথাও বলেনি।  হয়তো একেই বলে আসল আত্মীয়তা। মাঝে মাঝে কাইজার রান্না করতো আর বিয়ার বা রামের বোতল কিনে আনতো ছুটির দিনে একটু আড্ডা মারার জন্য। *           *           *           *           *           *দীনেশ আর কাইজার দুজনেই পোস্টিং পেয়েছে দিল্লির পুলিশ হেডকোয়াটারে। দিল্লী পুলিশের স্পেশাল কমিশনার ইন্টেলিজেন্সের অফিসে দুজনেই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার । ওদের কাজ ছিল দিল্লিতে যত বিদেশী লোকজন আছে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা। সারাদিন ইন্টারপোলের সাথে যোগাযোগ, সন্দেহভাজন লোকজনের রেজিস্ট্রেশন, তারপর তাদের ওপর নজরদারি ।  অবশ্যই গোপনে।  এই কাজের জন্য সবসময় পুলিশ মোতায়েন করা যেত না, ভরসা করতে হতো কিছু সাধারণ খবরিদের ওপর। এক কথায় একটা প্যারালাল স্পাই নেটওয়ার্ক চালাতো এই ডিপার্টমেন্ট।  প্রত্যেক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের নিজস্ব নেটওয়ার্ক থাকতো। ডিপার্টমেন্টের কেউ জানতো না কারা  এই নেটওয়ার্কে কাজ করছে।  হয়তো ডিপার্টমেন্টের সকলকে বিশ্বাস করাও মুশকিল ছিল। কাইজারের নেটওয়ার্কে একজন ছিল মুনাবার। *       *      *        *       *        *       *       *    * কে এই মুনাবার ? এবার মুনাবারের গল্প বলি।   দিল্লির দিলশাদ গার্ডেনের একটা এম আই জি ফ্ল্যাটে নিজের বৌ উষা আর তাদের মেয়েকে  নিয়ে মুনাবারের ছোট সংসার। শাহাদরার কাছে একটা রেডিমেড গার্মেন্ট কোম্পানির টেলর ছিল মুনাবার। মুনাবার কলকাতার লোক, টেলরের কাজ শিখেছিল মেটেবুরুজে। তখন থেকেই বামপন্থী রাজনীতি করতো মুনাবার। নিজের আত্মীয় স্বজন কেউ তেমন ছিল না। কৃষ্ণনগর থেকে একটু দূরে তাহেরপুরে ওদের বাড়ি ছিল। ছোট চাষের জমিও ছিল। মুনাবারের বাবা মা অন্য শরিকদের সাথে সেই জমি চাষ করে কোনো রকমে সংসার চালাতো। একবার কলেরার মহামারীতে মা বাবা দুজনে চলে গেলো। মুনাবারের তখন ১৬ বছর বয়েস। মাধ্যমিক পাস্ করেছিল গ্রামের স্কুলে তারপর আর পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। একজন জ্যেঠা ছিলেন , তিনি মেটেবুরুজে এক দর্জির কাছে মুনাবারকে রেখে এলেন। তার পর থেকে মুনাবার আর তাহেরপুর যেতে পারেনি। দিন রাত কাজ করতো ওই দর্জির দোকানে।  জামিল মন্ডলের দোকান। জামিলদা তখনও অবিবাহিত , নিজের বাড়িতেই দোকান ,  ওপরে দুটো ঘর আর নিচে দোকানের পেছনে একটা ঘর আর একটা বাথরুম পায়খানা ছিল। মুনাবারকে ওখানেই থাকতে দিলো জামিলদা।  জামিলদার সাথে মুনাবারের জেঠার কি সম্পর্ক মুনাবার জানতে পারেনি কখনো , জানতে চায় ও  নি। দুবেলা খাওয়া পড়া জুটতো , কাজ ছিল কিন্তু মুনাবারের ভালোও লাগতো। জামিলদাই হাতে ধরে মুনাবারকে কাজ শিখিয়েছিলো। জামিলদা কখনো মসজিদ যেত না , নামাজও পড়তে দেখেনি মুনাবার।  মুনাবার মাঝে সাথে মসজিদে যেত কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যাসটা কেটে যায়। সন্ধ্যেবেলা জামিলদা দোকান বন্ধ করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে যেত, মুনাবারও নিজের কিছু বন্ধু জুটিয়েছিলো যারা একটা স্কুল ঘরে রোজ রাতে কিছু আলোচনা করতো , বেঁচে থাকার লড়াই, সাম্যবাদ এই নিয়ে বক্তিতা দিতো কিছু ভালো চেহারার লোকজন , দেখে মনে হতো তাঁরা শিক্ষিত ভদ্রলোক। কেউ কেউ ক্লাস চালাতেন , পড়াশোনা করতে বলতেন সব ছেলেদের। মুনাবার এমন এক ক্লাসে যেতে শুরু করলো। বাদলদা বাংলা সাহিত্য পড়াতেন। অনেক বই পরে শোনাতেন , পড়তেও বলতেন। নতুন নতুন গল্প। ধীরে ধীরে গত তিন চার বছরে মুনাবার এক অন্ধকারময় অস্তিত্বের মধ্যে কোথাও যেন আলোর দেখা পাচ্ছিলো। কি ভাবে জানেনা কিন্তু , মুনাবারের  ধীরে ধীরে বামপন্থী রাজনীতির ওপর আস্থা বাড়তে শুরু করে। জামিলদা জানতো সব কিন্তু কোনোদিন বাধা দেয় নি। কাজের সময় মুনাবার ছিল খুব একনিষ্ঠ। জামিলদা সম্প্রতি মুনাবারকে দিয়েই কাটটিং করাতো। কিছুদিন পর জামিলদা বিয়ে করে উষা নামের একটি মেয়েকে।  হিন্দু মেয়ে , ঘরে পুজো আর্চাও করতো , জামিলদার কোনো মানা ছিল না।  এক কথায় জামিলদা ছিল উদার মনের মানুষ। প্রায় একবছর জামিলদার প্রেমের সংসার চললো। ঊষা ছিল মুনাবারের বয়েসী কিন্তু মুনাবার ‘বৌদি’ ডাকতো ঊষাকে। মুনাবারকে দেওরের চোখেই দেখতো ঊষা। বৌদির দয়ায় ভালো মন্দ খাবার জুটতো মুনাবারের কপালে। একদিন সন্ধ্যের পর মুনাবার নিজের ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। ও টের পায় কেউ আছে ওই ঘরে। দরজায় কান লাগিয়ে জামিলদার গলা শুনতে পায় আর এক মহিলার গলাও। ঘন ঘন নিঃস্বাস এর শব্দ। মুনাবারের সংস্কারে বাঁধে কান লাগিয়ে শুনতে , তাই বাইরে এসে রাস্তার ধারে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে এককাপ চায়ের অর্ডার দেয়। ভাবতে থাকে, জামিলদা আর বৌদি নিজেদের ঘর ছেড়ে ওর ঘরে কি করছে? মিনিট কুড়ি চায়ের দোকানে কাটানোর পরও নিজের ঘরে যেতে সংকোচ হচ্ছে মুনাবারের।  দোকানের দরজা বন্ধ , তাই বাড়ির পাশের গলি দিয়েই নিজের ঘরে যেতে হবে , এই সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মুনাবার দেখতে পায় বাড়ির গলি দিয়ে চুপিসারে জরিনা বেরোচ্ছে। জরিনা ওদের পাড়ার মেয়ে , ব্লাউস বানাতে ও এই দোকানেই  আসে, জামিলদার পুরোনো খরিদ্দার।  বৌদি কি ওপরের ঘরে ? জরিনার ব্লাউসের  মাপ সবসময় জামিলদাই নেয়। কোনো মহিলা কাস্টমার এলে জামিলদা বা মুনাবার দোকানের পেছনে একটা ট্রায়াল রুম আছে সেখানে দাঁড়িয়ে মাপ নেয় , আজ তো দোকান বন্ধ , জরিনা কোথা দিয়ে ঢুকলো ? মুনাবার ঠিক এই সময়ে ঢুকতে চাইছে না নিজের ঘরে। একটু অপেক্ষা করতে চাইছে।  নিজের মাথাও ঘুরছে উষা বৌদির কথা ভেবে।  কি হবে যদি জানতে পারে জামিলদা আর জরিনার কোনো গোপন সম্পর্ক আছে ? কিছুক্ষন পর উষা বৌদি কে দেখতে পায় রিক্সা করে ফিরছে , হাতে অনেক বাজারের ব্যাগ। মুনাবার এগিয়ে যায় বৌদিকে সাহায্য করতে।- ব্যাগগুলো দাও বৌদি আমি নিয়ে যাচ্ছি- বাঁচালে মুনাবার, ব্যাগগুলো খুব ভারী -  উষা বলে- বাজারে জামিলদা কেও নিয়ে গেলে পারতে- সারাদিন দোকানে কাজ করে তাই ভাবলাম আমি গিয়ে মাসকাবারি বাজারটা  সেরে নিই - ঊষার গলায় জামিলদার জন্য সহানুভূতি দেখে মুনাবারের অবাক লাগে।  এই মানুষটা ধোঁকা দিচ্ছে নিজের বৌকে।  দুজন মিলে যখন বাড়ি ঢুকলো তখন জামিলদা ওপরের ঘরে।  বৌদি 'শুনছো' বলে ডাকতে নিচে মেনে আসে জামিলদা। একদম স্বাভাবিক আচরণ। মুনাবার ব্যাগগুলো ওপরে তুলে দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে। আজকাল রাতে বৌদি ওপরেই খাবার দেয় আর মুনাবার গিয়ে ওদের সাথেই এক টেবিলে খেয়ে আসে , যেন এই ঘরের ছোট ভাই। আজও খেতে গেছে , ওদের দুজনের কথায় কোনো বিবাদ নজরে পড়েনি। রাতে শুয়ে শুয়ে মুনাবারের ঘেন্না লাগছিলো নিজের বিছানায় শুতে।  এর পর বেশ কিছুদিন মুনাবার বুঝতে পেরেছে যে ওর এই ঘরে আরো কেউ এসেছিলো। এভাবে বেশিদিন চললে উষা বৌদি নিশ্চই জানতে পারবে , তখন কি হবে ?মাসখানেক পরের ঘটনা, একদিন বৌদির কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় মুনাবার , জামিল বকা বকি করছে , নিজের ঘরে শুয়ে সব শুনতে পাচ্ছে মুনাবার। জামিলের কুকীর্তি ধরে ফেলেছে বৌদি , নালিশ জানাচ্ছে কিন্তু জামিলদা নিজেকে বলছে ' আমার যা ইচ্ছা হবে তাই করবো , তোমার ভালো না লাগে চলে যায় বাপের বাড়ি' , বৌদি কাঁদছে। দিন কে দিন ঝগড়া বাড়তে লাগলো , জামিলদা একদিন বোধহয় বৌদিকে মারধর ও করেছে। এদিকে মুনাবার সব শুনছে, দোকানে এসে জামিলদার মন বসছে না। একদিন জামিলদা মুনাবার কে ডেকে বললো যে ও কিছুদিনের জন্য কলকাতার বাইরে যাবে , দোকানটা যেন মুনাবার ঠিকমতো সামলায়। মুনাবার জিজ্ঞাসা করেছিল- বৌদি কে নিয়ে যাচ্ছ জামিলদা ?- না, আমার নিজের কাজে যাচ্ছি, তুই খেয়াল রাখিস।  বৌদির কিছু দরকার পড়লে বাজার থেকে নিয়ে আসিস।গত দু দিন মুনাবার বৌদি কে দেখে নি। জামিল ওপর থেকে মুনাবারের খাবার নিচে দিয়ে গেছে।  পরদিন সকালে জামিলদা চলে গেলো ছোট একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে।  দিনের বেলা বৌদি খেতেও ডাকে নি , মুনাবার বাজারের দোকান থেকে ভাত দল তরকারি খেয়ে এসেছে। বিকেলে সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে ডেকেছে বৌদি কে , কোনো সারা শব্দ নেই।  বুকটা একটু ছ্যাৎ করে উঠেছে। কি হলো বৌদির।  ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করেছে মুনাবার।  দোতালার ল্যান্ডিঙে উঠে আবার ডেকেছে  - বৌদি, তুমি কোথায় ?কোনো সাড়া নেই, মুনাবার বেডরুমের দরজা খোলা দেখে ঢুকেছে, সেখানেও নেই। আর একটা ঘর আছে , বসার ঘর, সেখানেই এক কোনে ডাইনিং টেবিল পাতা , এই ঘরেই ওরা খাওয়া  দাওয়া করে , সেখানেও নেই। নিচেই নেমে যাচ্ছিলো মুনাবার , হঠাৎ ল্যান্ডিং কোনায় বাথরুম থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পায়। একটা গোঁঙানির আওয়াজ। দু বার বৌদি বৌদি করে ডেকেও যখন সুবিধা হয়নি , তখন সব সংকোচ ভুলে বাথরুমের দরজা জোরে ধাক্কা দেয়।  এক ধাক্কাতেই দরজার ছোট ছিটকিনি খুলে যায়। বাথরুমে বৌদি উপুড় হয়ে পরে আছে।  সায়া পরনে কিন্তু গায়ে কিছুই নেই , পিঠে  লাল দাগ।  বৌদির নাকের কাছে হাত রেখে মুনাবার বুঝতে পেরেছে শ্বাস চলছে।  কাউকে কি ডেকে আনবে। লোকজন এসে গেলে কি ভাবতে কি ভাববে এই নিয়েও মুনাবারের একটু সংকোচ হচ্ছে। বাথরুমে একটা বড় তোয়ালে ছিল , তাই দিয়ে বৌদি কে জড়িয়ে পাঁজাকোলা করে বেডরুমে নিয়ে শোয়াতে গিয়ে দেখতে পেলো যে বৌদির গালে আর কপালে আঘাতের চিহ্ন। কোনো ভাবে নিজের সম্মান বাঁচিয়ে আর বৌদির কোনো অসম্মান না করে ভেজা সায়া পাল্টে বিছানার চাদরে বৌদিকে ঢেকে দিয়েছে মুনাবার।  জল খাইয়াছে। বৌদি চোখ খুলেছে, কিন্তু এখনো ভালো করে কিছু বুঝতে পারেনি। গরম চা এনে দিয়েছে মুনাবার , সাথে বিস্কুট। ধীরে ধীরে উঠে বসেছে বৌদি।  লজ্জায় এখন মুনাবারের দিকে তাকাতে পারছে না।  ঘরের আবহাওয়া হালকা করার জন্য মুনাবার বলে ওঠে- কদিন ধরেই দেখছি তোমাদের ঝগড়া বাড়ছে।  কি হচ্ছে এসব ? আজ জামিলদা সকালে চলে গেলো কলকাতার বাইরে, বললো না কোথায় যাচ্ছে।বৌদি কান্নায় মুখ ঢেকে ফেললো।  তারপর যা বললো তার সারমর্ম এই রকম  -বিয়ের এক বছর পরও বৌদি প্রেগনেন্ট হয়নি , স্বভাবতই শারীরিক দোষ বৌদির। জামিল বাচ্চা চায় কিন্তু বৌদি ওকে বাচ্চা দিতে পারছে না, তাই জামিলদা জরিনাকে বিয়ে করতে চায়। বৌদি এই সংসারে সতীনের সাথে থাকতে চায় না , তাই জামিলদার হাতে রোজ মার খেতে হয়।  গত কয়েকদিন ধরে মারধরের মাত্রা বাড়তে থাকে, জামিলদা তালাক দিতে চায় বৌদি কে , বৌদি বাপের বাড়ি বলে কিছু নেই।  মামার বাড়িতে ছিল । মা বাবা মারা যাওয়ার পর মামার বাড়িতেই বারো হয়েছে উষা। পড়াশোনাও করেছে , উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। মামার একটা ছেলে। বাড়ির আদর সব তার জন্যই , উষা বারো হয়েছে মামীর বাড়ির কাজ করে আর গঞ্জনা শুনে। আর পাঁচটা বাড়ির মতো মামা নিজের কাজে ব্যাস্ত বা ব্যাস্ততার ভান করে উষা কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে। মামার ছেলেটাও উষা কে নিজের দিদি ভাবতে পারেনি কখনো। মামা একদিন ঊষার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলো। মামার চেনা একটি ছেলে , একা থাকে , কেউ নেই ওর  সংসারে, ছেলেটা মুসলিম কিন্তু গোঁড়া নয় , শুধু নামটাই মুসলিম। খিদিরপুরে দর্জির দোকান।  একদিন মামার সাথে এই বাড়িতে এসে নাকি ও ঊষাকে দেখেছে , ভালো লেগেছে। ঊষার মনেও নেই।  ছেলেটা কোনো যৌতুক চায়নি।  তার ওপর কোনো ধর্মীয় বিয়ে ছেলেটা করতে চায় না , সাধারণ কোর্ট ম্যারেজ করে ঊষাকে নিজের ঘরে নিয়ে যেতে চায়। ঊষার ভালো লাগতে শুরু করে ছেলেটার মানসিকতা। কিন্তু ছেলেটা দর্জি শুনেমনে মনে একটা ছবি তৈরী করে নেয় , কানে পেন্সিল , হাতে মাপের ফিতে , ছাগল দাড়ি আর পান মসলা খেয়ে খেয়ে তেতুলবিচির মতো কালো কালো দাঁত।কিছুদিন পর মামা ছেলের ছবি দেখায় ঊষাকে। ছেলের ছবি দেখে উষার তলপেটের নিচে প্রজাপতি উড়তে থাকে।  বাদামি চোখ , সুন্দর স্বাস্থ্য , একটা এক রঙের জামা পরা, হাতের পেশী দেখা যাচ্ছে , এক কথায় বলিউড না হলেও টলিউডের অনেক নায়কের চেয়ে জামিলকে দেখতে ভালো।  মামা আজই ছেলেটার নাম বললো ঊষাকে। আজ মামী বাড়ি ছিল না তাই মামা অনেক দুঃখের  কথা মন খুলে বলতে পারলো ঊষাকে। নিজের ইচ্ছা থাকলেও ঊষাকে আগলে রাখতে পারেনি , প্রায় জোর করেই বিয়ে দিতে হচ্ছে মামীর ইচ্ছায়। উষা মামাকে সান্তনা দেয় -তুমি অনেক করেছো  মামা , আমি তোমার কথা বুঝতে পারি , আমার কোনো আপত্তি নেই এই বিয়েতে।  তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। ঊষার কথা শুনে  মামা যেন অনেক শান্তি পেলো। ঊষার বিয়ের পর জামিল ওকে নিয়ে বাড়ি আসে , ভালোবাসা ছিল , শান্তি ছিল , কিন্তু শারীরিক মিলনের সময় জামিল খুব অস্থিরতা দেখাতো , কোথায় যেন তাল মিলতো না। অশান্ত মন নিয়ে দুজনেই অসস্থিতে ভুগতো।  উষা একবার বলেছিলো জামিলকে কোনো ডাক্তার এর কাছে যাওয়ার জন্য। জামিল রাজি হয় নি। দেখতে দেখতে একবছরের  বেশি কেটে গেলো কিন্তু উষা প্রেগনেন্ট হলো না।  এদিকে জরিনার সাথে জামিলের ঘন ঘন মেশা বাড়তে থাকলো। উষা বুঝতে পারছিলো কিন্তু প্রথমে অত গ্রাহ্য করেনি। কিছুদিন আগে জামিল বলে বসলো জরিনা কে বিয়ে করতে চায় , সেই থেকেই ঝগড়া শুরু।  জরিনার সাথে হয়তো শারীরিক মিলনের তাল মিলে গেছে।উষা কাঁদে , মুনাবারের মনে কোথায় যেন ঊষার জন্য দুঃখ হয়। মুনাবারের জীবনে কখনো কোনো মহিলা আসে নি। মুনাবার এখন ২৭ /২৮ বছরের যুবক। শরীরের চাহিদা অনুভব করে কিন্তু ঊষাকে নিয়ে কোনোদিন কোনো খারাপ চিন্তা মাথায় আসে নি।  আজ ঊষা মুনাবারের হাত ধরে অনুরোধ করে ' আমাকে এখন থেকে নিয়ে যাও'। আর একজনের স্ত্রী কে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো মানসিকতা মুনাবারের নেই, সাহসও নেই। ঊষার হাত ছাড়িয়ে সেদিন বাদল দার সাথে দেখা হয়। বাদল দা মুনাবারের বন্ধু এখন। সব কথা বলতে পারে মুনাবার বাদল দাকে। বাদল দা বলেন ' যদি ঊষাকে বাঁচাতে চাস তাহলে ওকে নিয়ে চলে যা  কোথাও , দুজনের দু কূলে কেউ নেই চিন্তা করার। কে কি বললো তাতে কি আসে যায় ? নিজে কাজ জানিস কাজ পেয়ে যাবি'। - কোথায় যাবো বাদল দা ? - দিল্লি চলে যা , আমার একটা চেলা আছে দিল্লি তে,  তোদের সাহায্য করবে , যাবি ? - আপনি ভরসা দিলে চেষ্টা করতে পারি , কিন্তু জামিল ফিরে এসে যদি পুলিশ লাগায়? - জামিল তা করবে না, ওর তো ঝামেলা মিটে গেলো , ওকে জরিনার সাথে থাকতে দে , কিছুদিন পর ওকে সব জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিস্।  জামিল ঝামেলা করার লোক নয় , আমি ওকে চিনি। পরদিনই কিছু করতে হবে।  হাতে কিছু টাকাও আছে মুনাবারের।  বাদল দার চেনা ভদ্রলোকের ঠিকানা নিয়ে আর একটা চিঠি নিয়ে বাড়ি ফেরে মুনাবার।  ঊষার সাথে দেখা করে জানায় যে কাল ভোরেই বেরোতে হবে।  ঊষার মুখে আনন্দের ঝলক দেখতে পায়। উষা কোনো প্রশ্ন করে নি , কোথায় যাবো কি করবো ইত্যাদি। কিছু মানুষের জীবন এতো অস্থায়ী যে প্ল্যান করার বিলাসিতা এদের সাজে না। ছোট্ট থলিতে কিছু জামা কাপড় আর মামার দেওয়া একজোড়া সোনার চুরি ছাড়া কিছুই নেয় নি ঊষা। জামিল ও কিছু কিনে দিয়েছিলো ঊষা কে , সাধারণ কিছু গয়না, সব ছেড়ে ঊষা চললো নতুন জীবনের আশায়। কি সম্পর্ক আছে ঊষার সাথে মুনাবারের , এতো কথা ভাবার সময় নেই।  রাত থাকতেই বেরিয়ে পরে দুজন, দরজায় তালা দিয়ে , চাবি জানালা দিয়ে ভেতরে ফেলে দেয়। জামিলের কাছে দরজার চাবি আছে।    শুরু হলো দুজনের যাত্রা। হাওড়া থেকে দিল্লি , কোনো রেজারভেশন ছাড়াই টিকিট কিনলো মুনাবার। এক দালাল বেশ কিছু পয়সা নিয়ে থ্রী টিয়েরের একটা বগিতে দুটো সিট দিয়ে দিলো , বিকেলে ট্রেন। সারাদিন হাওড়া স্টেশনে কি করবে ? স্টেশন থেকে একটু দূরে একটা সাধারণ রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করলো। বেশি কথা হচ্ছে না দুজনের কিন্তু মাঝে মাঝে ঊষা মুনাবারের হাত ধরছে। গায়ে গা লাগছে , ঊষার কোনো সংকোচ নেই কিন্তু মুনাবার এখনো মানিয়ে নিতে পারেনি।  দুপুরে স্টেশনে বসে উষা জিজ্ঞাসা করে - কি পরিচয় দেবে অন্য লোকেদের ? আমাদের কি সম্পর্ক ?  মুনাবার এই কথা তা ভাবে নি এখনো।  সত্যিই চিন্তার কথা। ওকি বলবে যে ঊষা জামিলের বৌ , তাকে ভাগিয়ে নিয়ে এসেছে , এখন দুজনে একসাথে থাকবে ? মুনাবার জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় ঊষার দিকে। উষা নিঃসংকোচে বলে- বলবে আমরা বিবাহিত স্বামী স্ত্রী। নাম ভাঁড়ানোর দরকার নেই।  পরে কখনো সুযোগ বুঝে --- বলেই ঊষার মনে হলো মুনাবারকে জিজ্ঞাসা করে হয় নি ওর জীবনে কোনো মেয়ে আছে কি না। এবার অস্বস্থি শুরু হলো ঊষার।  না জেনে শুনে মুনাবারকে ওর জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেললো !সেদিন যখন মুনাবার ঊষাকে বাথরুম থেকে ঘরে নিয়ে এসেছিলো , কাপড় বদলে দিয়েছিলো , ঊষার মনে হয়েছিল মুনাবার হয়তো ঊষার প্রতি আকর্ষিত , কিন্তু আজ মুনাবার কে দেখে মনে হচ্ছে না। তাহলে ? ঊষা এক গভীর চিন্তায় পরে যায়। মুনাবার বুঝতে পারে ঊষার মনের কথা। - আমাকে একটু সময় দাও ঊষা , এই প্রথম ঊষা কে বৌদি না বলে নাম ধরে ডাকলো মুনাবার।  তারপর ঊষার হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে একটু চাপ দিলো কিছুটা আশ্বাস দেওয়ার জন্য। কথা না বলে বোঝাতে চাইলো ঘাবড়িয়োনা , ভরসা রাখো। 
    দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ৪ - সমরেশ মুখার্জী | সুবাসে উতলা মনসেল্ফ ইন্ট্রোডাকশনের পর চা এসে গেল। চায়ের গ্লাস হাতে সবাই ইতস্ততঃ ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। সুমন চা খেয়ে একটু দুরে বারান্দা‌র উল্টো‌দিকের সিঁড়িতে বসে সিগারেট ধরায়। ছেলেদের মধ‍্যে সুমন,  গৌরব আর ইনস্ট্রাক্টররা ছাড়া আর কেউ সিগারেট খায় না। গৌরব বা ইনস্ট্রাক্টরদের কোনো ব্র‍্যান্ডের বাছবিচার নেই। যা পায় তাই খায়। বলাইদার দোকানে বিড়ি ছাড়া চারমিনার, পানামা, নাম্বার টেন গোছের সস্তা সিগারেট পাওয়া যায়। গোল্ড ফ্লেক, ক‍্যাপস্টান কিং সাইজ গোছের একটু দামি সিগারেট ওখানে অমিল। ওরা চারমিনার‌ খাচ্ছে। সুমন ধরায় ওর পছন্দের উইলস ফিল্টার। ওটা ছাড়া ওর চলে না। ও জানতো এসব জায়গায় তা পাওয়াও যাবে না তাই তিনদিনের ট্রিপের জন‍্য কলকাতা থেকেই কিনে এনেছে দশ প‍্যাকেট। এসেই তিন ইনস্ট্রাক্টরকে এক প‍্যাকেট ক‍রে দিয়ে দিয়েছে। খুব খুশি তারা। বলে, "আরে বাঃ! এতো মেঘ না চাইতে‌ই জল। বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে খাবো!" সামান্য কারণে সরল আনন্দের প্রকাশ দেখে ভালো লাগে। পর্বতারোহীদের সিগারেটের নেশা না থাকলে‌ই ভালো‌। দমে টান পড়ে। তবে থাকলে, এমন জায়গায় তার যোগান না পেলে মজাই মাটি। সুমন একটু বেশি এনেছি‌ল এই জন‍্য‌ই। তাছাড়া শৈলারোহণ সুমনের নিছক শখ। এ নিয়ে বেশীদুর যাওয়ার ইচ্ছা ওর নেই। তাই ও সিগারেট খেতেই পারে।মেয়েদের মধ‍্যে ঈশিতা‌কে আগের বার কোর্সেই মাঝে মধ‍্যে খেতে দেখেছে। পরে একটা প্র‍্যাকটিসে‌ও দেখেছে। বোধহয় হালকা নেশা আছে ওর। চুনি কচিৎ কখোনো একটু আধটু টান মারে। তুলির ওসব বালাই নেই। ঈশু পাশে এসে বসে। বলে, "জেঠু, কাউন্টারটা দিস।" - "দ‍্যাখ, ওসব কাউন্টার ফাউন্টার দেওয়া নেওয়া আমার পোষায় না। তুই একটা গোটাই নে।" প‍্যাকেট খুলে একটা গোটা সিগারেট ওর দিকে বাড়ায় সুমন।- "না, না, তোর স্টক শেষ হয়ে যাবে। আমি বলাইদার কাছে খোঁজ নিয়ে‌ছি এখানে পাওয়া‌ যায় না এটা"। একটু ইতস্ততঃ করে ঈশু।- "নে, নে, ধর, বেশি ফর্মালিটি করিস না। এখনো সাত প‍্যাকেট আছে। ভুলে যাস না  আমি চাকরি করি, মাইনে যদিও সাতশো টাকা, তবু তোদের মতো নির্ভেজাল বেকার ন‌ই। তুই বরং একটা গোটা প‍্যাকেট‌ই রাখ।"সিগারেট‌টা ঠোঁটে নিয়ে ঈশুর আর দেশলাই‌য়ের তর সয় না। সুমনের ঠোঁটে জ্বলা সিগারেট থেকে‌ই ধরানোর জন‍্য ঝুঁকে আসে। শিউরে ওঠে সুমন। ধারালো কাঁচের মতো মেয়েরা কেন যে এসব করে! এমন নৈকট্যে মিষ্টি পারফিউমের সুবাসে যে মন উতলা হয়ে উঠতে পারে তা কি বোঝে না ওরা?পারফিউম ব‍্যবহার করা ঈশুর শখ। ও বলে তাতে নাকি ওর মন ভালো থাকে। কিন্তু ও জানে না, তাতে কখনো অন‍্যের‌ মন খারাপ‌ও হয়ে যেতে পারে। তখন শুশুনিয়া পাহাড়ের রেখা ছাড়িয়ে চাঁদের আভা ক্রমশ বাড়ছে। চাঁদ অবশ‍্য তখনো পাহাড়ের আড়ালে। কাল দোল পূর্ণিমা।  কয়েকটা সুখটান মেরে ঈশু বলে - "না রে, তার চেয়ে এই ভালো। যখন ইচ্ছে হবে তোর কাছে চাইবো।"-"কী?" জেনে বুঝে ন‍্যাকা সাজে সুমন।-"কী মানে? সিগারেট। আবার কী?" -"ও তাই বল, আমি ভাবলাম বুঝি ..."-"জেঠু, ইউ আর জাস্ট ইনকরিজিবল, এমন ইন্সট‍্যান্ট ফিচলেমি তোর মাথায় আসে কী করে বলতো?" বলার ভঙ্গিতে মনে হয় চোখ পাকিয়ে তাকালো। পাহাড় চোঁয়ানো হালকা জ‍্যোৎস্নার পেলব আলো পড়েছে মুখে, চোখে তখনও আলোছায়া।নারীবাদীকে নাড়িয়ে- "এই, তোরা দুজনে মিলে হুইসপারিং গেম খেলছিস নাকি রে?" তুলি এসে বসে ওদের পাশে। গৌরব কোথায় ঘুরছে কে জানে। বরুণ, চিতা আর দুটো নতুন ছেলে মোমবাতি জ্বালিয়ে বারান্দায় তাস খেলতে বসেছে। ইনস্ট্রাক্টররা নিজেদের মধ‍্যে পাহাড়ের গল্প করছেন। এক‌ই দলের মধ‍্যে তৈরী হয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট উপদল। যেন মেঝেতে পড়া ফোঁটা ফোঁটা গুড়ের পাশে জমা হ‌ওয়া পিঁপড়ে‌। চুনিও এসে যোগ দেয় ওদের উপদলে। কিছু করার নেই বলে সুমন ভাবে ঈশুকে একটু নাড়িয়ে দেখা যাক।- "আচ্ছা ঈশু, এই যে তুই নিজেকে ফেমিনিস্ট বলিস, এটা তো একটা মতবাদ। এ বিষয়ে কিছু বল না শুনি।"- "আগে বল, তুই কী জানিস।"- "কিছুই না। তবে আন্দাজে মনে হয় ফেমিনিজম মুভমেন্টের মূলে আছে সমাজে মহিলা‌দের প্রাপ‍্য স্বীকৃতি ও অধিকার আদায়ের লড়াই। যেহেতু সারা পৃথিবীতেই সমাজের নানান একপেশে নিয়মকানুন মূলত পুরুষদের দ্বারা‌ই তৈরী ও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে তাই আমার অনুমান প্রতিবাদ হিসেবে ফেমিনিস্ট আন্দোলনের সূত্রপাত‌‌ হয়তো হয়েছে মহিলা‌দের দ্বারা‌ই। আর কিছু বলতে পারবো না।"- "সাধে কী আর তোকে আমরা জেঠু বলি"। ট্রেনে বলা তুলির কথাটা ঈশু‌ও পুনরাবৃত্তি করে। "কিছু না জেনেও তুই আন্দাজে‌ বুলস আইতে হিট করেছিস।" ঈশু সুমনের পিঠটা একটু চাপড়ে দেয়। তুলি সুমনের কলারটা তুলে নাচিয়ে দেয় কয়েকবার। ঈশু বলে, "পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলা‌রা চিরকাল পুরুষের নিয়ন্ত্রণ ও দমনের শিকার। তাই ফেমিনিস্ট আন্দোলনের মূলে আছে, যা তুই বললি, সমাজে পুরুষের সাথে মহিলা‌দের সমান অধিকারের দাবিতে লড়াই। কর্মক্ষেত্রে সুযোগ, অর্থ‌নৈতিক মুক্তি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা,  জীবনের নানান ব‍্যক্তিগত ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমানাধিকার, সামাজিক ন‍্যায়বিচার ইত‍্যাদির জন‍্য জনসচেতনতা গড়ে তোলা। এবং তা শুধু মহিলাদের মধ‍্যে নয়, পুরুষ‌দের মধ‍্যেও"। তুলি বলে, "কেন? পুরুষ যদি মেয়েদের ওপর অধিকার কায়েম রাখতে চায়, তাহলে পুরুষ‌রা মহিলা‌দের থেকে এসব কথা শুনতে চাইবে কেন?"ঈশু বলে, "কারণ প্রকৃতি‌গতভাবে দূর্বল নারী, পুরুষের বিরূদ্ধে গলাবাজি, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, প্রত‍্যাখ‍্যান, সমালোচনা করে তাদের মূল লক্ষ্যে বেশিদূর এগোতে পারবে না। সমাজে এবং ব‍্যক্তিগত পরিসরে‌ও নারী‌র উন্নতি ও সুষ্ঠু জীবনযাপনের  জন‍্য পুরুষকে তার পাশে পাওয়া জরুরি। নারী ও পুরুষ যে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, পরিপূরক, এই ধারণার সার্বিক মান‍্যতা প্রতিষ্ঠা না করে পুরুষের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ফেমিনিস্ট‌রা কোনো বৃহত্তর সাফল‍্য পাবে বলে মনে হয় না। পুরুষদের বোঝাতে হবে যে পোষা কুকুরের মুখে ছুঁড়ে দেওয়া রুটি‌র টুকরো‌র মতো যুগ যুগান্ত ধরে মেয়েদের পুরুষের দিকে ভিক্ষের ঝুলি হাতে তাকিয়ে থাকতে বাধ‍্য করা আসলে পৌরুষের‌ই অপমান।" চুনি বলে, "ঠিক বলেছিস। শুধু‌ই পুরুষের বিরোধিতা নয়, ওদের বোঝা‌তে হবে। ওদের এটা অনুভব করতে প্রভাবিত করতে হবে"।ঈশু বলে, "সৌভাগ্যের কথা অনেক পুরুষ‌ই হীনমন্য, সঙ্কীর্ণ‌মনা, কুচুটে বা মেনীমুখো ধরণের নয়। অনেক পুরুষের মধ‍্যে‌ই কাজ করে মেল ইগো - মানে হিমালয়ের মতো চিন্তার মহানতা, সমূদ্রে‌র মতো দরাজ হৃদয় হবার প্রবণতা। এটা তাদের মেল সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স। এহেন উদারমনস্কতার ফলে তারা যদি মহিলা‌দের প্রতি অবিচার করার আগে দুবার ভাবে বা করে ফেললেও আত্মগ্লানি‌তে ভোগে তাও আখেরে মহিলা‌দের পক্ষে মঙ্গল‌জনক। তাই পুরুষ‌রা মহিলা‌দের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অবিচার করে এসেছে বলে মহিলা‌রা‌ও যদি নিয়ত পুরুষদের সর্বসমক্ষে তুলোধোনা করতে থাকে তাহলে ব‍্যাপার‌টা এক‍‌ই ভুলের অন‍্যরকম পুনরাবৃত্তি হয়ে যাবে। বরং পুরুষ‌দের সেই উচ্চমন‍্যতা বোধ জাগিয়ে তুলে তাদেরকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যে তারা যা করছে সেটা ঠিক নয়। এটা মোটে‌ও সহজ কাজ নয়। চটজলদি সমাধান তো নয়‌ই।" মুগ্ধ হয়ে ওরা শুনছিল ঈশিতার কথা। মনে হচ্ছিল শুশুনিয়ায় কোলেবাংলোর সিঁড়িতে তিন বন্ধু‌র সাথে নয় যেন কোনো অডিটোরিয়ামের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে কিছু মনযোগী শ্রোতা‌র সামনে বক্তব্য পেশ করছে ঈশু। সুমন বলেই ফ‍্যালে, "ঈশু, তুই কিন্তু খুব ভালো বক্তা।"- "আসলে তুই আমার একটা প‍্যাশনেট জায়গায় টাচ করেছি‌স। তোরা মন দিয়ে শুনছিস বলে আমার‌ও বলতে ইচ্ছে করছে। তোরা‌ নিজেরা  কনভিন্স‌ড হলে, হয়তো এমন কথা কখোনো অন‍্য কোথাও বলবি। তোদের কথা শুনে‌ আরো কিছু মানুষ অনুপ্রাণিত হবে, হয়তো তাদের‌ ভাবনা চিন্তা‌য় প্রভাব পড়বে, আচরণ বদলাবে। এভাবেই ধীরে ধীরে আসে সামাজিক পরিবর্তন। বহুশতাব্দী প্রাচীন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, অভ‍্যাস তো আর কয়েক দশকে বদলাতে পারে না।"- "ঠিক বলেছিস। তোর যা বলতে ইচ্ছে করছে বল। আমরা শুনতে চাই। কী তাই তো?" সুমন তুলি আর চুনির দিকে তাকায়। ওরাও মনোযোগ দিয়ে শুনছি‌ল ঈশিতার কথা। সুমন কেবল সূত্রধরের কাজটা করছিল। দুজনেই একযোগে সম্মতি‌সূচক মাথা নাড়ে। - "আচ্ছা, শোন তাহলে। মাতৃত্বেই যদি নারীত্বের সম্পূর্ণ‌তা হয় তাহলে সন্তানধারনের ক্ষেত্রে মহিলা‌দের সম্পূর্ণ না হলেও সামান‍্য ইচ্ছার‌ও মূল‍্য থাকে না কেন? অনেক মহিলা কেবল স্বামী‌র অতিরিক্ত শরীরের ক্ষুধার প্রতিবাদ না করতে পেরে অগুনতি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে‌ই অকালে ফুরিয়ে যায়। যেমন ধর খুররম আর আর্জুমান্দ বানুর কথা।"অমর প্রেমের অন্তরালে- "খুররম! আর্জুমান্দ বানু! তাঁরা আবার কে? বলে‌ই ফ‍্যালে সুমন। মুখ দেখে বোঝা যায় চুনি, তুলি‌ও জানেনা।- "মহান মূঘল সম্রাট শাহজাহান ও তাঁর  প্রিয় পত্নী মুমতাজ মহল। শাহজাহান তো একটা রাজকীয় উপাধি, মানে জগতসম্রাট, যেমন ঔরঙজেব নিয়েছিলেন, আলমগীর। যেমন জাহাঙ্গীর পত্নী ও শাহজাহানের বিমাতা অপূর্ব সুন্দরী মেহেরুন্নিসা বেগম অধিক পরিচিত ছিলেন নূরজাহান বা জগতের আলো নামে, সেই রকম।" - "ওমা তাই নাকি, এটা তো জানতাম না" বলে তুলি।ঈশু বলে, "শাহজাহানের জন্মনাম ছিল - শাহাবুদ্দীন মহম্মদ খুররম। আর মূমতাজের আর্জুমান্দ বানু। তো যা বলছিলাম, শাহজাহানের অনন‍্য পত্নীপ্রেমের নিদর্শন তাজমহল, এক অসাধারন স্মৃতি‌সৌধ, পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি, এসব‌ তো অনেকেই জানে। তবে উনিশ বছর দাম্পত্য জীবনে চতুর্দশতম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে বুরহানপুর কেল্লায় তিরিশ ঘন্টা গর্ভযন্ত্রনা ভোগ করে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে যে মুমতাজের জীবনদীপ নিভে গেল - এটা হয়তো অনেকেই জানে না।"- "এ্যাঁ, তাই নাকি?" চোখ গোল হয়ে যায় চুনি‌র। "এ তো আমি‌ও জানতাম না। সত‍্যি ইতিহাসের কত কী যে জানিনা। কিন্তু ঈশু, তুই তো ইংরেজি সাহিত‍্য নিয়ে পড়ছিস অথচ ইতিহাসেও তো তোর খুব দখল দেখছি।"ঈশু বলে, "সব পড়াশোনা‌ই তো পরীক্ষা পাশ করার জন‍্য নয়। এসব আমি পড়ি ভালো লাগে বলে। তো, যা বলছিলাম। রাজকীয় হেকিম সম্রাটকে আগাম সতর্ক করেছিলেন, মুমতাজের যা শরীরের অবস্থা পরবর্তী সন্তানের জন্ম দিতে গেলে ওনার জীবনসংশয় হতে পারে। শুনলেন সে কথা পত্নী‌প্রেমে গদগদ মহান পতি শাহজাহান? সম্রাটের নিত‍্য স্বাদবদলের জন‍্য মূঘল হারেমে বন্দিনী ছিল বহু সুন্দরী রমণী। মুমতাজ ছাড়াও তাঁর ছিল আরো চারটি বৈধ পত্নী ও বেশ কিছু উপপত্নী। তা স্বত্তেও দুর্বল, রক্তাল্পতায় ভোগা মুমতাজ‌কে মাত্রাতিরিক্ত উপভোগ ক‍রে  মাত্র সাঁইত্রিশ বছরে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে মহান সম্রাট তাঁর অনন‍্য পত্নী‌প্রেমের ধ্বজা উড়িয়ে বেঁচে র‌ইলেন চুয়াত্তর বছর। কী আয়রনি বল তো!"- "এর নাম ভালো‌বাসা? পত্নী‌প্রেম?" তুলি রাগে গনগন করে। ঈশু বলে, "না রে, শাহজাহান কিন্তু সত‍্যি‌ই মুমতাজকে খুব ভালোবাসতেন। তাই পত্নীর মৃত্যুতে তিনি শোকে এমনই মূহ‍্যমান হয়ে যান যে রাজকার্য শিকেয় তুলে বুরহানপুর কেল্লার একটি ঘরে সাতদিন দরজা বন্ধ করে বসেছিলেন। একমাত্র খাবার দেওয়ার জন‍্য খাস খিদমৎগার ছাড়া শোকার্ত সম্রাটের কাছে যাওয়ার হিম্মত আর কারুর হয়নি। সাতদিন পর তিনি যখন সে‌ই ঘর থেকে বেরোলেন তাঁর মাথার সব চুল পেকে সাদা হয়ে গিয়েছে! সবাই হতবাক। তবে মুমতাজের যদি আর সন্তান‌ধারণে অনিচ্ছা প্রকাশের বৈধ অধিকার থাকতো তাহলে এহেন অকালমৃত্যু তাঁকে গ্ৰাস করতো না। তুলির মতে এটা ভালো‌বাসা না ছাই, নির্লজ্জ শরীরের ক্ষিধে। তুই কী বলবি জেঠু?'সুমন ম্রিয়মান কণ্ঠে বলে, "আমি কী বলবো বল? শাহজাহানের প্রতিনিধি না হলেও, স্রেফ পুরুষসমাজের একজন হয়ে‌ও তো এসব শুনে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। তুলির কথা তো ফেলে দেওয়ার নয়। রাজবৈদ‍্যর নিষেধ সত্ত্বেও এমন অবিবেচনা‌র কাজ করেন কী করে উনি? আর তুই যখন বললি সে ক্ষিধে মেটানোর আরো নানা উপায় ছিল তখন রুগ্ন মুমতাজকে রেহাই দিলেন না কেন সম্রাট? মুমতাজের প্রতি তাঁর যে কিংবদন্তী‌প্রায় প্রেমের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারিত হয় এতো দেখা যাছে তা মূলতঃ ইন্দ্রিয়াসক্তি। কতজন শিক্ষিত মানুষ এসব জানে জানি না তবে স্বীকার করছি আমি‌‌ও এ ঘটনা জানতাম না।"  ঈশু বলে, "ঠিক আছে, সাড়ে তিনশো বছর আগে শাহজাহানের অসংবেদনশীল‌তার জন‍্য তোর লজ্জিত হ‌ওয়ার  কোনো কারণ নেই। তাছাড়া, তখন অনেক মন্ত্রী, রাজকর্মচারী বা প্রজাদের‌ও মনে হয়েছিল  এটা শাহজাহানের চূড়ান্ত স্বার্থপর‌তার নিদর্শন। তিনি কেবল নিজেকে ভালোবাসেন। কিন্তু কেউ ভয়ে তাঁর সামনে মুখ খুলতে পারেনি।" চিতার দৌলতে টি ব্রেকজল খেতে থামে ঈশিতা। একটু আগে এসেছিল চিতা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনে কপট বিষ্ময়ে বলে, "ওরে বাবা, তোরা তো হেব্বি সব টপিক নিয়ে কথা বলছিস! ওসব আমার মাথায় ঢুকবে না ভাই। আমি বরং তাস‌‌ই খেলি গিয়ে। তবে তোদের জন‍্য বলাইদাকে একটু চা বলে আসি। এ্যাতো গেরেমভারি আলোচনা কী চা ছাড়া জমে?" এই হচ্ছে টিপিক্যাল চিতা-সুলভ আচরণ। বন্ধুদের জন‍্য ওর মমতা অকৃত্রিম। কার কী দরকার সেসবের প্রতি তীক্ষ্ম নজর। চিতাকে বাদ দিয়ে তাই আউটিং জমে না। একটু বাদে চিতার বলে আসা চা কেটলি করে নিয়ে আসে বাবলু।ঈশিতা সুন্দর কথা বলছে। শুনলেই বোঝা যায় ওর অনেক পড়াশোনা। চিন্তার স্বচ্ছতা, বক্তব্যের সাবলীল‌তা‌ও প্রশংসনীয়। যেন ও এক অধ‍্যাপিকা আর ওরা ওর গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রী। এমনি‌তে ইয়ারকী ফাজলামি মারলেও এরকম সঙ্গী পেলে সিরিয়াস আলোচনাতেও সুমনের দারুণ উৎসাহ। কোনো বিষয়-ভিত্তিক আলোচনা‌য় নিজের জানাটুকু অন‍্যের কাছে সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ করতে পারলে নিজের ধারণা আরো পরিষ্কার হয়। যা জানা নেই তা অন‍্যের কাছ থেকে জানা যায়। এভাবে‌‌ই জীবনে চলতে ফিরতে‌ও অনেক কিছু জানা যায়। শুধু জানার ইচ্ছা, বোঝার চেষ্টা, বিষয়ে‌র গভীরে গিয়ে ভাবনা চিন্তা করার আগ্ৰহটুকু থাকা চাই। চায়ের পর সিগারেট ছাড়া চলে না। ঈশুকে একটা সিগারেট বাড়িয়ে সুমন বলে, "দিদিমণি, নাউ ইউ ডিজার্ভ ইট"। ঈশু ওর সুন্দর মুখে মুক্তোর মতো দন্তশোভার ঝিলিক তুলে লাজুক হাসে। বিরল উপহার। একটু আগে শাহজাহান-মুমতাজ কিসসা বলার সময় আবেগতাড়িত হয়ে ওকে একটু উত্তেজিত দেখাচ্ছিল। এখন আবার স্বাভাবিক লাগছে।   সিগারেট‌টা ধরিয়ে ঈশু বলে, "চল না একটু পায়চারি ক‍রে আসা যাক। অনেকক্ষণ এক‌ জায়গায় বসে আছি।" চুনি‌ বলে, "ঈশু, শেষে একটু দিস, পুরো খাবো না। চা টা খুব ভালো বানিয়ে‌ছিলেন বলাইদা।"  নির্জন সন্ধ্যায় ফুটফুটে জোৎস্না‌য় ওরা ঝর্ণার দিকে হাঁটতে যায়। চাঁদ তখন পাহাড়ের রেখে ছাড়িয়ে সবে উঁকি দিয়েছে।
  • জনতার খেরোর খাতা...
    বাঙালির জাতীয় নববর্ষ উৎসব নিয়ে একটু কথা - Eman Bhasha | ভাষা ও চেতনা সমিতি উদ্যোগে গত ২৬ ধরে সারাদিন জাতীয় নববর্ষ উৎসব উদযাপন হয় আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে রাণুচ্ছায়া মঞ্চে।নাচ গান কবিতা শ্রুতিনাটক নাটক হয়েছে।পথের আলপনা দেওয়া শুরু হয়েছে ১৯৯৯ থেকে।এবারও ছিল।পান্তা ভাত শুঁটকি, মাছভাত আলু পোস্ত খাবার ছিল।আর ছিল আমপোড়া শরবতের আয়োজন।সব মিলিয়ে তিনশোর বেশি শিল্পী অংশ নেন।গণগায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, কবি জিয়াদ আলী, বাংলাদেশের সাহিত্যিক জাফর ইকবাল, শিল্পী জয়শঙ্কর, মালবিকা চক্রবর্তী, দেবযানী বসু কুমার, সুপ্রিয় চক্রবর্তী, মধুছন্দা তরফদার, হানুফা বানু, মুক্তধারা বসু, বাংলাদেশের প্রাবন্ধিক মোহিদ হায়দার, মিল্টন বিশ্বাস, শিল্পী তৃষা,  আসামের সমাজকর্মী পারিজাত নন্দ, বিশ্বেন্দু নন্দ, অত্রি ভট্টাচার্য প্রমুখ অংশ নেন। নাচে অংশ নেন বর্ধমানের স্পন্দন-এর শিল্পীরা। উত্তরপাড়ার তা থৈ এবং কলকাতার চলন্তিকা।টানা সাড়ে ১২ ঘন্টা চলে অনুষ্ঠান।সকাল আটটার সময় পার্ক স্ট্রিট সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের সামনে থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা।শেষ হয় রাণুচ্ছায়া মঞ্চের সামনে।তারপর দিনভর অনুষ্ঠান।প্রচণ্ড দাবদাহেও এক মুহুর্ত থামেনি অনুষ্ঠান।ভাষা ও চেতনা সমিতির পক্ষ থেকে সম্পাদক বলেন,  বাঙালিকে কাঙালি বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে।এর বিরুদ্ধে আমাদের সাংস্কৃতিক লড়াই।খাদ্য পানীয় সংস্কৃতি সব রক্ষা করাই এখন জাতীয় কর্তব্য।পুরাতন জামাকাপড় কেচে ইস্ত্রি করে টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে ২০১৫ থেকে।এটাই কলকাতায় প্রথম এধরনের উদ্যোগ।
    বাংলা নামফলক আন্দোলন - Eman Bhasha | বাংলায় নামফলক আন্দোলন নিয়ে কিছু কথা।সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম বিখ্যাত বলে সবাই বলেন, আসলে এই উদ্যোগ নবজাগরণ এবং ভাষা ও চেতনা সমিতির। পরে সুনীলদারা আমাদের অনুরোধে যুক্ত হোন।একটি কাগজ 'বাংলাবাজ দুর্বৃত্ত' লেখার পর সুনীলদা আর আসেননি। পরে টানা একবছর আমরা মাসে দুবার করে অভিযান চালিয়েছি ধর্মতলা পার্ক স্ট্রিট রবীন্দ্র সদন গড়িয়াহাট বেলেঘাটা উল্টোডাঙ্গা শ্যামবাজার কলেজ স্ট্রিট এলাকায়।।গোটা কলকাতা ঘুরেছি লরি ভর্তি করে।২০০৪ এর ১৯ মে শুরু।২০০৫ এর ১৯ মে এই অভিযান শেষ হয়।কলকাতা পুরসভা বিকাশ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে আইন তৈরি করে বাংলা লিখতে হবে।তারপর আন্দোলন থামে।
    হেদুয়ার ধারে - ১২০ - Anjan Banerjee | সাগরের পরামর্শ অনুযায়ী চৈতালির শ্বশুরবাড়িতে চিঠি লিখল অভয় পাল। লিখল যে তার মেয়ে স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চায়, তবে সে যেন নিজে এসে বৌকে নিয়ে যায়।----- ' দেখুন কি বলে ... তারপর ভাবব কি করা যায়। এখানে ওরা আসবে বলে মনে হয় না ... কিছু একটা করবে। দেখুন কি করে ... ' সাগর বলল।সাগর যাবার সময়ে বলে গেল, ' আমরা যাচ্ছি এখন ... কোন দরকার হলে পটলের দোকানে খবর দেবেন ... '----- ' পটলের দোকান মানে ... বিডন স্ট্রিটের মোড়ে ... সাইকেল টাইকেল সারায় .... ওটা ? '----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ওটাই ... '---- ' ওখানে খবর দিলেই হবে ... ঠিক আছে। এখন চললাম ... চল ... 'দুজনে বেরিয়ে গেল। দরজার কাছে চৈতালি তার মা বাবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে রইল ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।সাগর রাত্রিকে বলল, ' এখন কোথায় যাবে ? 'ঘন্টা দু তিনের মধ্যে দুজনে দুজনের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছে।রাত্রি বলল, ' বাড়ি যেতে হবে। বাড়ি ফিরে অনেক কাজ আছে। বাবা ফিরবে এক্ষুণি। তুমি কোথায় যাবে ? '----- ' দেখি কোথায় যাই ... রাস্তায় নেমেছি, রাস্তা যেদিকে নিয়ে যায় ... '----- ' ও বাবা ... হঠাৎ বাউল বাউল ভাব ! বলি, এমন বাউল হয়ে গেলে এত লোককে আগলে রাখবে কে ? '----- ' না না বাউল টাউল না ... বলছি যে রাস্তাই তো রাস্তা দেখায়। আমার কি যাবার জায়গার কোন ঠিক আছে। মানুষ যেদিকে টানে আমায় সেদিকেই যাই ... '----- ' হমম্ .... কিছুটা বুঝলাম মশাই ... পুরোটা নয়। আর বুঝবই বা কি ? তুমি তো এক মহাসাগর ... এখনও তো ডুবই দিতে পারিনি ... '----- ' এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করে ফেলছ ... আমাকে লোকে গুন্ডা বলে তা জান ? 'রাত্রি দ্রুত উত্তর দিল, ' অবশ্যই জানি। আবার এটাও জানি বহু মানুষ তোমাকে দেবতা মানে। এটা জান তো ... '----- ' কি যে সব বল ... ওসব ফাঁপা কথা। কোন মানেই হয় না। আমি আবার একটা মানুষ ... '----- ' আমি বলছি না গো ... লোকে বলছে ... হ্যাঁ সত্যি লোকে বলছে .... তাদের কেউ বলতে বলেনি ... নিজেরাই বলছে। সাধারণ মানুষের কথা তুমি ফেলে দেবে কি করে ? 'সাগর রাত্রির পাশাপাশি হাঁটতে লাগল।সাগর আর রাত্রি হাঁটতে হাঁটতে রঙমহল পর্যন্ত এসেছে। রঙমহলে আজ বোধহয় দুটো শো আছে। হলের সামনে বেশ জমজমাট পরিবেশ। এখনও মনে হয় টিকিট বিক্রি চলছে। দুজনে ভিড় কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল রূপবাণীর দিকে। এমন সময়ে একটা ব্যাপার ঘটল। এমন কিছু ঘটনা নয় অবশ্য। রাস্তাঘাটে আকছারই ঘটছে। লোকজনের এসব গা সওয়া হয়ে গেছে। কেউ বিশেষ মাথা ঘামায় না। কিন্তু কেউ কেউ মাথা ঘামায়।দুই তরুণ তরুণী, মনে হয় কলেজের ছেলেমেয়ে, ফুটপাথের ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকাওয়ালার সামনে দাঁড়িয়ে আলুকাবলি খাচ্ছিল। নিজেদের মধ্যে কথা বলতে মশগুল ছিল। এরমধ্যে ওদেরই বয়সী তিনটে গাট্টাগোট্টা ছেলে ওদের দুজনের মধ্যে ঢুকে পড়ে বলল, ' একটু মেরে দাঁড়ান ... মেরে দাঁড়ান ... অত মস্তি ভাল না ... ' বলে একজন ওদের দুজনের মাঝখানে ঢুকে পড়ে মেয়েটার গায়ে হাল্কা ধাক্কা মারল। ব্যাপারটা আচমকা ঘটায় মেয়েটা বিভ্রান্ত হয়ে গেল। তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, ' ননসেন্স ... 'ধাক্কা মারা ছেলেটা মেয়েটার প্রায় মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল, ' কি কি কি.... আর একবার বল তো সোনামণি... 'মেয়েটার সঙ্গী রুখে দাঁড়াল।---- ' অ্যাই অ্যাই ... কি হচ্ছে কি ? অসভ্যতার জায়গা পাওনি ? খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু ... 'ছেলেটা রোগা পাতলা। রাগে অপমানে তার চোখমুখ লাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু গাট্টাগোট্টা ছেলে তিনটের সামনে তাকে অসহায় লাগছিল। মেয়েটার গায়ে পড়া ছেলেটা ঘুরে গিয়ে ' চল হাট ... ' বলে মেয়েটার দুবলা পাতলা বন্ধুর বুকে এক ধাক্কা মারল। ছেলেটা হতচকিত অবস্থায় পিছনদিকে ছিটকে গেল বেশ খানিকটা। পড়েই যেত, একজনের গায়ে গিয়ে পড়ায় মাটিতে পড়ে গেল না। যার গায়ে গিয়ে পড়ল সে ধরে ফেলল তাকে। মেয়েটা ভয়বিস্ফারিত চোখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল সাহায্যের আশায়। কিন্তু রঙ্গালয়ের সামনে জমায়েত নাট্যপিপাসুরা সব দেখেও না দেখার ভান করে হলের দিকে তাকিয়ে ম্যাটিনি শো ভাঙ্গার অপেক্ষা করতে লাগল। তারা এসব নিত্যনৈমিত্তিক 'ক্যাচাল' -এর মধ্যে ঢুকে এই শীতের সন্ধেয় নিজেদের পরিপাটি মজা অপরিচ্ছন্ন করতে চাইল না।কিন্তু ওই ছেলেটি ধাক্কা খেয়ে যার শরীরে গিয়ে পড়ল এবং পতনের হাত থেকে রক্ষা পেল, ঘটনাক্রমে তার নাম সাগর মন্ডল। সাগরের বাঁ দিকটা পুরোপুরি সুস্থ থাকলেও ডান কাঁধে এখনও চিনচিনে ব্যথা আছে।সাগর রাত্রির পাশে ছেলেটাকে জমা করে দিয়ে বলল, ' এখানে একটু দাঁড়াও ... আমি এক্ষুণি আসছি ... 'মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল, ' তুমি ওখানে গিয়ে দাঁড়াও ... 'মেয়েটা ওখানে যাচ্ছিল, এমন সময়ে সেই ঝামেলা পাকানো ছেলেটা বলে উঠল, ' তুই কে রে ... যা যা ... নিজের কাজে যা ... হিরোগিরি করতে আসিসনা ... '----- ' চিন্তা করিস না ... বাঁ সাইডটা ঠিক আছে ... ওটাই যথেষ্ট তোদের তিনটেকে নেবার জন্য ... আরে আরে আমি নিজের কাজই তো করছি ... অত গরম খাচ্ছিস কেন ? 'সাগর একেবারে আদি ও অকৃত্রিম সাগর মন্ডলে ফিরে গেল।একটা ছেলের মাথা সত্যি গরম হয়ে গেল সাগরের কথাবার্তা শুনে। সে তেড়ে এল সাগরের দিকে চোখমুখ পাকিয়ে। লোকজন ইতিমধ্যে উত্তেজক পথনাটিকা দেখার জন্য নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই মনে হয় সাগরকে চেনে।ড্রেনপাইপ প্যান্ট পরা বলিষ্ঠ চেহারার কালোমতো ওই ছেলেটা দাঁত মুখ খিচিয়ে বলল, ' স্বরূপ খাঁড়ার নাম শুনেছিস তো ... আমরা তার লোক ... তোর বাবার নাম খগেন করে ছেড়ে দেবে ... 'এরপর আর শান্তি বজায় রাখতে পারল না সাগর। তার মাথায় আগুন জ্বলে গেল। সে তিন চার পা হেঁটে গেল দ্রুত পায়ে। চোখের পলক ফেলার আগে তার ভয়াবহ বাঁ হাতের একটা বজ্রের মতো পাঞ্চ গিয়ে আছড়ে পড়ল ছেলেটার ডান চোখের নীচে।প্রায় পঞ্চাশ জন লোক দেখে আঁতকে উঠল, প্রায় পঁয়ষট্টি কেজি ওজনের একটা যুবকের শরীর ছিটকে প্রায় সাতফুট দূরের ট্রামলাইনের ধারে গিয়ে পড়েছে। এরকম অবস্থায় বাকি দুজন সঙ্গীরএগিয়ে আসার কথা তাদের স্যাঙাতের সুরক্ষায়।কিন্তু তারা সাগরের সম্বন্ধে সাঙ্ঘাতিক কিছু আন্দাজ করে নিল এবং পাড়ার তাড়া খাওয়া কুকুরের মতো হেদুয়ার দিকে ছুটতে লাগল তাদের সঙ্গীকে ভাঙাচোরা অবস্থায় ফেলে রেখে।সে প্রায় মিনিট তিনেক ধরে ট্রামলাইনের ওপর পড়ে আছে। রাস্তায় বাস ট্রাম দাঁড়িয়ে গেছে। আশপাশের জনগন দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় উসখুস করছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।এই সময়ে সাগর নিজেই দায়িত্ব নিল রাস্তা পরিষ্কার করার।একটা মিষ্টির দোকান থেকে এক পাত্র জল নিয়ে গিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা ছেলেটার মাথায় মুখে ঢেলে দিল। তাতে একটু নড়েচড়ে উঠল ও। মুখের ডানদিকটা বিশ্রীরকম ফুলে আছে রক্ত কালচে হয়ে জমাট বেঁধে।সাগর ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে বলল, ' ওঠ ওঠ ... অনেক হয়েছে। যা ঠেকে যা ... তোর বাপকে বলবি চিকিৎসা করিয়ে দিতে। এদিকে যেন আর না দেখি। যা ভাগ... 'বলে ওর পিঠে একটা হাল্কা ধাক্কা মারল। ছেলেটা কোন কথা না বলে টলতে টলতে ওপারের বৃন্দাবন বোস লেনের মধ্যে ঢুকে গেল। দৈহিক বা মানসিকভাবে ওর সুস্থ হতে সময় লাগবে এটা নিশ্চিত।সেই ছেলেমেয়ে দুটো যাদের আলুকাবলি খাওয়া অর্ধসমাপ্ত রইল তারা রাত্রির সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। রাত্রির একটা গোপন দীর্ঘশ্বাস পড়ল। ভাবল, আর একটা শত্রু বাড়ল সাগরের। অন্যের পাপের আর কত গরল পান করবে লোকটা ...ভিড় পাতলা হয়ে গেছে। অনেকে রঙমহলে ঢুকে গেল। ইভনীং শোয়ের সময় হয়ে গেছে।সাগর এল রাত্রিদের কাছে। মেয়েটা বলল, ' কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাব। আগেও দুবার এরকম করেছে আমাদের সঙ্গে। কি উদ্দেশ্য কে জানে ... '------ ' উদ্দেশ্য আর কি ... তোমাদের সফট টার্গেট ভেবেছে নিশ্চয়ই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে আরও অনেকের সঙ্গে এরকম করছে। আর একটা কথা ... উনি কোন ধন্যবাদ পাবার আশায় যুদ্ধে নামেন না। এই ধরণের প্রতিবাদ করাটাই ওনার ব্রত ... 'মেয়েটি বেশ গুছিয়ে বলল, ' হ্যাঁ সেটা খানিকটা বুঝতে পেরেছি। তবু আমাদের একটা ঋণ তো থেকে যায়। যদি কখনও কোন প্রয়োজন হয় দয়া করে দ্বিধা করবেন না। আমার বাবার নাম অ্যাডভোকেট অলোকেন্দু মিত্র। ঠিকানা উনত্রিশ নম্বর কর্ণওয়ালিস স্ট্রিট ... শ্রীমানি বাজারের কাছে। আমার নাম সুমনা মিত্র। বেথুন কলেজে পড়ি।দুবলা পাতলা ছেলেটা হাতজোড় করে বলল, ' আমার নাম প্রতিবিম্ব। স্কটিশে পড়ি ... আপনার নামটা জানা হল না স্যার ... 'তাকে কেউ 'স্যার' সম্বোধন করতে পারে এটা সাগর আগের মুহুর্ত পর্যন্ত চিন্তা করেনি। সে আস্তে আস্তে তার দ্বিতীয় সত্ত্বায় রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে। সে উত্তর দিতে সময় নিতে লাগল এই ভেবে যে তার নামটা সর্বসমক্ষে বলার যোগ্য নাম কিনা।রাত্রির কিন্তু ব্যাপারটা অনুভব করতে অসুবিধা হল না এবং সে কোনও সময়ও নিল না।সে দৃঢ়স্বরে বলল, ' ওনার নাম সাগর মন্ডল ... 'সুমনা আর প্রতিবিম্ব দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকাল।( চলবে )********************************************
  • ভাট...
    commentঅরিন | @&/, বইগুলো  পড়েছি, সিরিজ দেখিনি।
    comment&/ | চতুর্মাত্রিক, আপনি দেখছেন থ্রী বডি প্রব্লেম সিরিজ? ( সিনেমায় সিরিজে টিভিতে সব কীরকম যেন কর্পো কর্পো হয়ে যায়, বইতে কিন্তু অন্যরকম, অনেকটাই অন্যরকম। অনেক ভাবনার অবকাশ থাকে, কল্পনার পক্ষবিস্তারের উপায় থাকে। )
    comment&/ |
    রঞ্জন, আপনি সত্যি সত্যি বইটা কিনলেন নাকি? বইটার নাম কিন্তু ঠিকঠাক দেন নি। ঃ-) ছবি দিলাম ।
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত