এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    সিএএ-র ফাঁদে মতুয়ারা - শান্তনীল রায় | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়বাংলার উদ্বাস্তু প্রধান এলাকাগুলিতে কান পাতলেই শোনা যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে নানা গুঞ্জন। চব্বিশের লোকসভা ভোটে এই অঞ্চলগুলিতে জিততে বিজেপির মাস্টার্স স্ট্রোক এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)।বিজেপি বারবার করে বলছে, সিএএ নাগরিকত্ব প্রদানের আইন, নাগরিকত্ব হরনের নয়। আর সেই আশাতেই বুক বেঁধেছে এক বিরাট সংখ্যক উদ্বাস্তু মানুষ। সিএএ-র বিষয়ে সাম্যক ধারণা ছাড়াই। তবে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত সাহ দেশবাসীকে যেভাবে ক্রোনোলজি বুঝিয়েছিলেন, তা থেকে অতি সহজেই অনুমান করা যায় যে বিজেপির মনবাসনা কেবল সিএএ -তে থেমে থাকবার নয়। প্রথমে সিএএ, তারপর এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জী)। আর যার পরিনতি হতে পারে উদ্বাস্তুদের জন্য ভয়নক।উদ্বাস্তু মতুয়াদের নি:শর্ত নাগরিকত্বের দাবি আজকের নয়। বিজেপি ২০০৩ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে আসলে, ভিটে ছেড়ে একবার বে-নাগরিক হওয়া কোটি কোটি উদ্বাস্তু মানুষের নাগরিকত্ব পূনরায় প্রশ্নের মুখে পড়ে। ২০০৪ সালে নাগরিকত্বের দাবিতে তারা সেসময় প্রথম আন্দোলনে নামে। নাগরিকত্বের ইসুতে মতুয়াদের প্রথম আন্দোলন ছিলো বিজেপির বিরুদ্ধেই। বাংলার সাম্প্রতিক রাজনীতিতে মতুয়া তথা নম:শূদ্র সম্প্রদায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এই প্রান্তিক উদ্বাস্তু মানুষদের প্রতি সিপিআইএমের দীর্ঘ উদাসীনতাই মমতা ব্যানার্জিকে তাদের কাছে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলো। তিনি বুঝেছিলেন, উদ্বাস্তু প্রধান অঞ্চলগুলিতে জিততে হলে প্রয়োজন ঠাকুরবাড়ির সমর্থন। এর জন্য তিনি দুটো কাজ করেন। এক, ঠাকুর বাড়ির সাথে যোগাযোগ বাড়ান; দুই, উদ্বাস্তু মতুয়াদের নাগরিকত্বের সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। ফলস্বরূপ ঢেলে মতুয়া ভোট পায় তৃণমূল। কপিলকৃষ্ণ ঠকুরকে মন্ত্রী করা হয়। কিন্তু সমস্যা সমস্যা হয়েই থেকে যায়।এরপর মতুয়া ভোটকে কুক্ষিগত করতে কয়েক বছরের মধ্যেই মাঠে নামে বিজেপি। মতুয়াদের কাছে বিজেপির নানান প্রতিশ্রুতির মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি। ২০১৯ -এর লোকসভা ভোটের আগে মতুয়া ভোটকে নিজেদের দিকে টানতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ওরাকান্দিতে অবস্থিত মতুয়াদের মূল ধর্মীয় মন্দিরে ভ্রমণ করেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একাধিকবার জনসভা করেন ঠাকুরনগরে। বকলমে কথা দেন তাঁরা নাগরিকত্বের যট কাটাবেন। আর সেই আশাতেই এক বড়ো অংশের মতুয়া ভোট বিজেপির দিকে ঘুরতে থাকে। আশা একটাই -নি:শর্ত নাগরিকত্ব। কিন্তু সিএএ কি সত্যিই তাদের নি:শর্ত নাগরিকত্ব দেবে? উত্তর হলো –একেবারেই না। সিএএ শর্তসাপেক্ষ নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলে। দু-হাজার চোদ্দো সালের একত্রিশে ডিসেম্বরের পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্থান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারনে পালিয়ে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরনার্থীদের বিভিন্ন শর্তে নাগরিকত্ব প্রদান করবে কেন্দ্র। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভারতবর্ষে এই প্রথম। নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের এই নির্বাচিত সহৃদয়তার আইনি স্বীকৃতি এক কথায় নজিরবিহীন। নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য চোদ্দো সালের একত্রিশে ডিসেম্বর পর্যন্ত যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কারণ এরপর সে-সব দেশের সংখ্যালঘুদের উপর যে কোনো অত্যাচার হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সিএএ -র অধীনে নাগরিকত্বের আবেদন করতে গেলে একজন উদ্বাস্তুকে প্রমান করতে হবে যে সে আদতেই বাংলাদেশ, পাকিস্থান বা আফগানিস্থানের নাগরিক। প্রমাণ হিসেবে দেখাতে হবে ওই তিনের কোনো একটি দেশের সরকার প্রদত্ত পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট, জমির দলিল, স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেট ইত্যাদির কোনো একটি। অথবা ভারতে প্রবেশের সময় বর্ডার থেকে দেওয়া বর্ডার স্লিপ। কিন্তু শরণার্থী মানুষদের বেশিরভাগেরই সেসব কাগজ নেই। কেনো নেই সে প্রশ্ন অবান্তর। তাছাড়া, অন্য দেশের সরকার প্রদত্ত সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, দলিল ইত্যাদির সত্যতা ভারত সরকার যাচাই করতে পারে কি? সেক্ষেত্রে সাহায্য নিতে হবে সেসব দেশের। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে যে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে তাদের দেশের একজন নাগরিকও ভারতে আসেনি। তাহলে উদ্বাস্তুদের দ্বারা প্রদান করা কাগজের সত্যতা যাচাই হবে কীভাবে? উনিশ সালের সাতই জানুয়ারি জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি সিএবি (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল) সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পার্লামেন্টে পেশ করেছিলো। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো কমিটিকে জানিয়েছে, ৩১,৩১৩ জন শরনার্থী যারা ভারত সরকারের কাছে নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলো এবং ভারত সরকার যাদের দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা প্রদান করেছিলো, কেবলমাত্র তারাই এই আইন থেকে সুবিধা পাবে। তবে এই ৩১,৩১৩ জন আবেদনকারীর বেশিরভাগই বাংলার উদ্বাস্তু নয়। তাছাড়া গোটা দেশে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা কয়েক কোটি।সিএএ -র পোর্টালে করা আবেদনগুলি প্রথমে তদন্ত করবে নির্দিষ্ট জেলাস্তর কমিটির মাথায় থাকা ডেসিগনেটেড অফিসার। এরপর সে তার মতামতসহ আবেদনটিকে এমপাওয়ার্ড কমিটির কাছে পাঠাবে। কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে কিনা সেটা ঠিক করবে এই এমপাওয়ার্ড কমিটি। সম্প্রতি উনচল্লিশ পাতার নাগরিকত্ব সংশোধনী নিয়মাবলি প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। সেই নিয়ম অনুযায়ী, একজন উদবাস্তুকে এফিডেভিড করে রাষ্ট্রকে জানাতে হবে যে সে বাংলাদেশ, পাকিস্তান অথবা আফগানিস্তানের নাগরিক। ধরে নেওয়া যাক, কোনো ব্যক্তি সিএএ -র আবেদন করলো এবং এফিডেভিডের মাধ্যমে লিখে দিলো, সে ভারতের নাগরিক নয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান অথবা আফগানিস্তানের নাগরিক। এবং প্রমাণপত্রের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে এমপাওয়ার্ড কমিটি তার নাগরিকত্বের আবেদন খারিজ করে দিলো। পরবর্তীতে কেন্দ্র এনআরসি নিয়ে আসলে ওই বে-নাগরিক হওয়া ব্যক্তির ভবিষ্যৎ কী হবে? বেশিরভাগ উদ্বাস্তু পরিবারেরই ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি রয়েছে৷ সিএএ এবং এনআরসি-র মাধ্যমে বেনাগরিক প্রমাণ হলে সে-সব যে বন্ধ করে দেওয়া হবে, তা বলাই বাহুল্য। অন্তত আসামের চিত্র তাই বলে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা অথবা রেশনের চালে সংসার চালানো মানুষদের কী হবে? নাকি ডিটেনশন ক্যাম্পই এদের আগামী ভবিষ্যৎ? প্রশ্নগুলো ঘিরে রয়েছে কেবলই ধোঁয়াসা। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই আত্মহত্যা করেছে বাংলার এক যুবক।তার পরিবারের লোক জানিয়েছে, সিএএ তে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ‘কাগজ’ না থাকায় ভয়ঙ্কর আতঙ্কে ছিল বছর একত্রিশের দেবাশিস সেনগুপ্ত। দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার ভয়েই আতহননের পথ বেছে নেয় সে। উদ্বাস্তুরা উপার্জন ও ব্যয় উভয়ই এই দেশে করে থাকে। ফলে ভারতবর্ষের জিডিপিতে তাদের সম্পূর্ণ অবদান রয়েছে। কিন্তু আগামীতে এই কোটি কোটি উদ্বাস্তুকে ডিটেনশন ক্যাম্পে কয়েদিদের মতো রাখলে, এক বিপুল অর্থের বোঝা দেশের উপর পড়বে –একথা বলাই বাহুল্য। সরকারি সার্টিফিকেট যেমন ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদির তৈরির ক্ষেত্রেই ভারিভুরি ভুলের অভিযোগ ওঠে, সেখানে এত এত মানুষের নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে উক্ত কমিটির যে ভুল হবে না, তা বলা যায় না। আমরা আসামের মানুষের এনআরসি সংক্রান্ত তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা ইতিমধ্যেই জানি। সেখানে এনআরসির সর্বশেষ তালিকা বের হওয়ার পূর্বে দুটি ভুলে ভরা খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ তালিকাটিও যে নির্ভুল একথাও অনেকে বিশ্বাস করতে নারাজ। এমতো অবস্থায় কোটি কোটি উদ্বাস্তু মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ প্রশ্নের মুখে। শিক্ষাহীন, মানহীন মতুয়া সমাজকে একসময় শিক্ষা ও সম্মানের জীবন দানের জন্য নিরলস আন্দোলন করেছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। বলতেন, “খাও না খাও, ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়াও”। ভরসা সেই ‘ঠাকুর’ পদবিতে। তাই শান্তনু ঠাকুরের কথাতেই আস্থা রেখেছিলো মতুয়া জনগোষ্টির বিপুল সংখ্যক মানুষ। এমনকি টাকার বিনিময়ে তিনি তাঁর স্বাক্ষর করা ‘মতুয়া কার্ড’ বিলি করেছিলেন মতুয়াদের মধ্যে। ওই কার্ড দেখালেই নাকি পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব! সহজ, সাধারণ মানুষেরা সেটাই মেনে নিয়েছিলো।সিএএ -কে সামনে রেখে দু'হাজার উনিশ সাল থেকে বাংলার পাঁচটি উদবাস্তু প্রধান লোকসভা এবং সাতাশটি বিধানসভা আসনে বিজেপি ভালো ফল করে আসছে। আগামী লোকসভা ভোটও লড়বে এই ইসুকে সামনে রেখে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ও শান্তনু ঠাকুরকে বিশ্বাস করে মতুয়া সহ বাংলার অন্যান্য উদ্বাস্তুরা যে প্রতারিত হয়েছে, তাদের এই উপলব্ধি হওয়া এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। ************************তথ্যসূত্র: https://eisamay.com/west-bengal-news/24pargana-news/bjp-mla-asim-kumar-sarkar-opposes-new-matua-community-card-announced-by-mp-shantanu-thakur/articleshow/105538993.cmshttps://twitter.com/BanglaRepublic/status/1767893662539894828?t=qWkfn2RvaCfnrjjdqoHvSw&s=19https://bengali.abplive.com/videos/district/west-bengal-news-bjp-mla-asim-sarkar-himself-questioned-the-validity-of-matua-card-1027283https://bangla.hindustantimes.com/bengal/districts/citizenship-only-if-you-have-a-matua-card-shantanu-thakur-demand-resonates-with-tmc-bjp-31710407987896.html
    বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে…….. - সোমনাথ গুহ | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়মার্চ ও এপ্রিল পরপর দু মাসে দুজন স্বনামধন্য সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী দীর্ঘ কারাবাসের নরক-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত ৭ই মার্চ অধ্যাপক জি এন সাইবাবা প্রায় এক দশকের কারাবাসের পর নাগপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পান। এর প্রায় এক মাস বাদে ভীমা কোরেগাঁও (বিকে) মামলায় ধৃত নারী ও দলিত অধিকার কর্মী, অধ্যাপক সোমা সেন জামিন পান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই দুজনের মুক্তি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক, কিন্তু যা ঢের বেশি অস্বস্তিকর তা হচ্ছে তাঁদের গ্রেপ্তার, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বিচার বা বিচার না-হওয়া পুরো বিচারব্যবস্থার স্বরূপকে নগ্ন করে দিয়েছে। সাইবাবার কাহিনি বহু চর্চিত, তবুও সেটাকে আমরা ফিরে দেখব এবং কোন কারণে অধ্যাপক সোমা সেন সহ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ধৃত অন্যান্যদের এতো বছর কারাবাস করতে হল, এবং কয়েকজনকে এখনো করতে হচ্ছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করব। সাইবাবা আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কে সরব ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ‘অপারেশন গ্রীন হান্ট’ এর বিরুদ্ধে তিনি প্রবল ভাবে সোচ্চার হন। তাঁর বক্তব্য এই অভিযানের উদ্দেশ্য মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ আদিবাসী অঞ্চলের সম্পদ লুট করে তা কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া। ২০১৪র মে মাসে মাওবাদীদের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রায় এক বছর বাদে শারীরিক কারণে জামিন দেওয়া হয়। ২০১৫-১৬ সালে এর পুনরাবৃত্তি ঘটে। পরের বছর সিপিআই, মাওবাদীদের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে ইউএপিএ নামক দানবীয় আইনের অধীনে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। সাইবাবা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রামলাল আনন্দ কলেজে ইংরাজির অধ্যাপক ছিলেন। ২০২১ সালে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। ২০২২ এর অক্টোবরে বম্বে হাই কোর্ট তাঁকে বেকসুর খালাস করে দেয়, বিচারপতিরা বলেন যে তাঁকে অভিযুক্ত করার জন্য যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। কোর্ট সাইবাবা এবং তাঁর পাঁচ সাথিকে বেকসুর খালাস করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, মহারাষ্ট্র সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করে। এরপরে শীর্ষ আদালত যে ভাবে শনিবার, একটা ছুটির দিনে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে তাঁদের মুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে তা এক কথায় বিস্ময়কর। আদালতের সময়সীমার বাইরে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কারণে বিশেষ বেঞ্চ মিলিত হওয়া কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। সাংবিধানিক সংকট, ব্যক্তি স্বাধীনতা বা ফাঁসির আসামির আবেদন রদ করার শুনানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মধ্যরাতেও বিচারকরা মিলিত হয়েছেন। কিন্তু তথাকথিত একজন মাওবাদী, যিনি ৯০% প্রতিবন্ধি, যিনি ষোলোটি মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত, যাঁকে সামান্য দৈনন্দিন কাজ করতেও অন্যের সাহায্য প্রয়োজন হয়, তাঁর মুক্তি আটকাতে যেভাবে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাতে বিশিষ্ট আইনজ্ঞরাও স্তম্ভিত হয়ে যান। মাননীয় অধ্যাপকের আইনজীবী একটা অন্তিম চেষ্টা করেন, তিনি তাঁর মক্কেলের অসুস্থতার কারণে তাঁকে অন্তত কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দী রাখার আবেদন করেন। আদালত তাতেও আপত্তি করে, যুক্তি দেয় ঘরে বসেও তিনি নাশকতা মূলক কাজকর্ম করতে পারবেন, ফোনে কর্মীদের নির্দেশ দিতে পারবেন। প্রস্তাব দেওয়া হয় যে তাঁর ফোন বাজেয়াপ্ত করা হোক, নিষ্ঠুর আদালত তাতেও কর্ণপাত করতে অস্বীকার করে। এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে বিচারব্যবস্থা সাইবাবার মস্তিষ্ককে ভয় পায়। সেই অভুতপূর্ব স্থগিতাদেশের প্রায় ষোলো মাস পর সেই একই বম্বে হাই কোর্টের নাগপুর বেঞ্চ তাঁকে পুনরায় মুক্তি দেবার আদেশ জারি করে। আদালতের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত লক্ষ্যণীয়। তাঁরা বলেন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অপ্রমাণিত অভিযোগ আনা হয়েছে এবং চক্রান্তের প্রস্তুতি হিসাবে তাঁর কাছে কোন নির্দিষ্ট উপাদান পাওয়া যায়নি। তাঁরা আরও বলেন কী ধরনের সন্ত্রাসবাদী কাজ তা ব্যাখ্যা না করার দরুন অভিযুক্তর বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল। রাজ্য সরকার আবার শীর্ষ আদালতে আবেদন করে কিন্তু এবার তাঁরা স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করছে যে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুয়ো, সম্পূর্ণ মনগড়া যেটার ভিত্তিতে একজন গুরুতর অসুস্থ মানুষকে অন্তত সাত বছর ব্রিটিশ আমলের অন্ডা সেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত বৃদ্ধা মাকে দেখার জন্য তাঁর জামিনের আবেদন বারবার নাকচ করা হয়েছে। মার মৃত্যুর পর শেষকৃত্যেও তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি, তখনো তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এনআইএর মতে তিনি নাকি এতোই বিপজ্জনক যে কয়েক ঘণ্টার জন্য তিনি বাইরে এলেও তা রাষ্ট্রকে বিপন্ন করতে পারে। প্রক্রিয়াটাই যখন শাস্তিপ্রতিবাদী কন্ঠ দমন করার জন্য এটাই এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন বিচার ছাড়াই, শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে বছরের পর বছরের কাউকে কারাবন্দি করে রাখা। এর জন্য ইউএপিএ আইন হচ্ছে মোক্ষম হাতিয়ার যেটার লাগামছাড়া ব্যবহার হচ্ছে। ২০১৫ থেকে ২০২০ এই আইনে ৮৩৭১ জন ধৃত হয়েছেন, সাজা পেয়েছেন মাত্র ২৩৫ জন, ৩% এরও কম! ২০০৮, ২০১২, ২০১৯, বিভিন্ন সময়ে এই আইনকে সংশোধন করে আরও কঠোর, দানবীয় করে তোলা হয়েছে। এই আইন এক উলটপুরাণ যেখানে অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি দোষি নন এবং এই আইনে জামিন দেওয়া নিয়ম নয়, সেটা ব্যতিক্রম; বিচারক এবং সরকারি কৌঁসুলি যদি মনে করেন অভিযুক্ত আপাত ভাবে নির্দোষ শুধুমাত্র তবেই জামিন দেওয়া যেতে পারে। এর সেরা উদাহরণ দিল্লি দাঙ্গা মামলায় অভিযুক্ত উমর খালিদ। ২০২০র সেপ্টেম্বরে উনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারপর থেকে নানা অজুহাতে ওনার জামিনের শুনানি চোদ্দো বার মুলতুবি করা হয়েছে। ২০১৮র জুন মাসে অধ্যাপক সোমা সেন সহ আরও চারজন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমা সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি সিপিআই মাওবাদী দলের সক্রিয় কর্মী, তিনি তাঁদের হয়ে তহবিল সংগ্রহ করতেন, হিংসাত্মক কার্যকলাপে ইন্ধন যোগাতেন এবং তিনি নাকি মাওবাদীদের বিভিন্ন ছদ্ম সংগঠনের সাথে যুক্ত। এছাড়া ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ পুনের কাছে ভীমা কোরেগাঁও-য়ে জনতাকে তিনি হিংসায় প্ররোচিত করেছিলেন। সোমা সেন সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং জানান যে ২০১৭র শেষ দিনে কোরেগাঁও-য়ে তিনি উপস্থিতই ছিলেন না। ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮ তিনি প্রথম বার জামিনের আবেদন করেন। এরপর তাঁর আবেদন, এমনকি অসুস্থতার কারণে আবেদনও উপরোক্ত সব কারণের দরুন খারিজ করা হয়। অথচ আজ প্রায় ছয় বছর বাদে সুপ্রীম কোর্ট বলছে তাঁর বিরুদ্ধে যা প্রমাণ আছে তাতে আপাত ভাবে (প্রাইমা ফেসি) তিনি কোন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন এটা প্রমাণিত হয় না। আদালত এটাও বলে তিনি কিছু সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং কিছু মহিলাকে সংগ্রামে উদ্দিপ্ত করেছেন বলেই তিনি মাওবাদী বা তাঁদের কোন ছদ্ম সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন এটাও প্রমাণিত হয় না। এছাড়া আদালত জানায় তৃতীয় কোন ব্যক্তির থেকে পাওয়া তথ্য বা উপাদান থেকে প্রমাণিত হয় না তিনি তহবিল সংগ্রহে যুক্ত ছিলেন। সোমা সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যে কোন সারবত্তা নেই এই উপলব্ধিতে আসতে আদালতের প্রায় ছয় বছর লেগে গেল। ভীমা কোরেগাঁও বা দিল্লি ‘দাঙ্গা’ মামলায় এটাই হচ্ছে প্যাটার্ন! বছরের পর বছর অভিযুক্তদের কারাগারে বিনা বিচারে ফেলে রাখা হয়েছে, তারপর বহু টালবাহানার পরে কয়েকজনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে প্রাইমা ফেসি এঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত নয়, এবং জামিন দেওয়া হয়েছে। বাকিরা তো এখনো জেলের ঘানি টানছেন। ছয় বছর হয়ে গেল বিকে মামলায় এখনো বিচারই শুরু হয়নি; শোনা যাচ্ছে চার্জশীটই নাকি ৫০০০ পাতা, ২০০ জন সাক্ষী। দিল্লি ‘দাঙ্গা’ মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কেউই পরিষ্কার নন। জামিনের শর্তাবলী এরপরেও আরও গল্প আছে। যাঁরা জামিন পাচ্ছেন তাঁদের মানমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাই দুরূহ হয়ে পড়ছে কারণ জামিনের শর্তাবলী ভয়ঙ্কর! সোমা সেনের জামিনের শর্তাবলী দেখা যাকঃ (১) পাসপোর্ট জমা দিতে হবে, (২) বিশেষ আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি মহারাষ্ট্রের বাইরে যেতে পারবেন না, (৩) যেখানে বসবাস করবেন সেখানকার নিকটবর্তি থানায় তাঁকে চোদ্দো দিন অন্তর হাজিরা দিতে হবে, (৪) মোবাইল সব সময় অন রাখতে হবে এবং ব্যাটারিতে চার্জ থাকতে হবে, (৫) জিপিএস অন রাখতে হবে এবং নিকটবর্তি এনআইএ অফিসারের ফোনের সাথে সেটি লিঙ্ক রাখতে হবে। শর্ত পালনে কোন বিচ্যুতি ঘটলে তৎক্ষণাৎ জামিন বাতিল হয়ে যাবে। সোমা নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরাজির অধ্যাপক ছিলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি কি অবসরকালীন সুযোগ সুবিধাগুলি পাবেন? আদালত নীরব। একই ভাবে সাইবাবা কি তাঁর চাকরি ফিরে পাবেন? এসব ব্যাপারে আদালত কোন নির্দেশ ব্যক্ত করেনি। বিশিষ্ট ট্রেড ইউনিয়ানিস্ট, আইনজীবী, সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ ২০২১ এর ডিসেম্বর মাসে বিকে মামলায় জামিন পান। তাঁর জামিনের ষোলোটি শর্ত আছে। সোমার ওপর যে শর্তগুলি চাপান হয়েছে সেগুলো তো আছেই আরও যা আছে তা হলঃ (১) তাঁকে মুম্বাই আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে থাকতে হবে এবং আদালতের অনুমতি ছাড়া এই চৌহদ্দির বাইরে তাঁর যাওয়া নিষেধ (অথচ তিনি দিল্লির ‘ন্যাশানাল ল বিশ্ববিদ্যালয়’-এর অধ্যাপক ছিলেন। সেটা তাঁর কর্মক্ষেত্র, সেখানে না গেলে তিনি জীবিকা অর্জন করবেন কী ভাবে?) (২) রক্তের সম্পর্ক আছে এরকম তিনজন আত্মীয়ের বাড়ি ও কর্মক্ষেত্রের ঠিকানা, ডকুমেন্ট সহ জমা দিতে হবে, (৩) মিডিয়ার কাছে তাঁর মামলা সংক্রান্ত কোন বক্তব্য রাখা নিষিদ্ধ, (৪) বিচারের সময় তাঁকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে, তাঁর অনুপস্থিতির জন্য বিচার যেন বিলম্বিত না হয় (ছ বছরে বিচার শুরুই হয়নি!), (৫) বিকে মামলার অন্য সাথীদের সাথে যোগাযোগের কোন রকম চেষ্টা করবেন না, (৬) ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা ছাড়া তাঁর বাড়িতে অন্য ব্যক্তিদের জমায়েত নিষিদ্ধ ইত্যাদি। জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ এই জমানায় মুক্তির আদেশের পরেও যখন স্থগিতাদেশ হতে পারে, তখন জামিনের ওপর তো হবেই। মহেশ রাউত, টাটা ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্সের প্রাক্তনি এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ উন্নয়নের ফেলো, জুন, ২০১৮ গ্রেপ্তার হন। ২০২৩ এর সেপ্টেম্বরে আদালত তাঁকে জামিন দেয়, বলে যে ইউএপিএ-তে তাঁর বিরুদ্ধে যা অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট উপাদান নেই। এনআইএ এর বিরুদ্ধে আবেদন করে এবং কয়েক দিনের মধ্যে আদালত নিজেদের রায়ের বিরোধিতা করে বলে তাঁর সাথে মাওবাদীদের যোগাযোগ পাওয়ার কারণে তাঁরা পুনর্বিবেচনা করে রায়ের ওপর এক সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিচ্ছেন। সেই এক সপ্তাহ এখনো চলছে! কোন না কোন অজুহাতে আজ পর্যন্ত সেই স্থগিতাদেশ বহাল আছে। একই ভাবে প্রসিদ্ধ মানবাধিকার কর্মী গৌতম নাভলাখা ডিসেম্বর ২০২৩ জামিন পান এবং প্রায় সাথে সাথেই এনআইএর আবেদনের কারণে আদালত জামিনের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ জারি করে। এর মধ্যে শারীরিক অসুস্থতার কারণে কারাগার থেকে সরিয়ে তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে গৃহবন্দিত্ব বা হাউস এরেস্টের কোন কনসেপ্ট ভারতীয় আইনে স্বীকৃত নয়। যেহেতু গৌতম নিজে গৃহবন্দি হওয়ার আবেদন করেছিলেন, তাই আদালত শর্ত দেয় যে গৃহবন্দিত্বের খরচ (সিসিটিভি লাগান, যাঁরা প্রহরায় থাকবেন তাঁদের পারিশ্রমিক ইত্যাদি) অভিযুক্তকেই বহন করতে হবে। শেষ যা জানা গেছে সেই খরচ নাকি প্রায় দেড় কোটিতে পৌঁছে গেছে। বর্তমানে এই খরচ নিয়ে এনআইএ এবং অভিযুক্তের আইনজীবীর মধ্যে দরাদরি চলছে। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে চূড়ান্ত ভাবে হেনস্থা করা, বারবার বুঝিয়ে দেওয়া নিপীড়িত শ্রেণী, লিঙ্গ, জাতপাতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছ তো তুমি শেষ। বনে জঙ্গলে খনন হচ্ছে, বড় বড় কর্পোরেট মাইনিং করছে সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার, সংগ্রামি আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানর কোন অধিকার তোমার নেই। সোমা, সুধা, মহেশ, গৌতম এঁরা তো সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, আর যাঁরা নন? ২০২২য়ে ইউটিউবে ফাদার স্ট্যান স্বামীর ওপর একটি ভিডিওতে পারাকালা প্রভাকর জানাচ্ছেন ওই বছরের মার্চ মাসে ইউএপিএতে অভিযুক্ত ১২২ জন ১৯ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পেয়েছেন। ভাবা যায়! এতগুলো বছরে তাঁদের নিয়মিত আদালতে যেতে হয়েছে, জেল থেকে থানায় যেতে হয়েছে। অরুণ ফেরেরা, কার্টুনিস্ট, বিকে মামলায় অভিযুক্ত ২০০৭ থেকে ২০১২ কারাবাস করেছেন, ২০১৮য় পুনরায় গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং পাঁচ বছর বাদে মুক্তি পেয়েছেন। সেই মাওবাদী অভিযোগ, কিন্তু কোন কিছুই প্রমাণিত নয়। আমাদের রাজ্যে গৌর চক্রবর্তী সাত বছর ইউএপিএতে কারাগারে থাকার পর ২০১৬য় মুক্তি পেয়েছেন। এই তালিকার শেষ নেই, এই নরক-যন্ত্রণারও শেষ নেই।
    ইদবোশেখির লেখাপত্তর - গুরুচণ্ডা৯ | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়শীতকাল বইমেলা হইচই-এর দিনকাল ফুরিয়ে এসে গেল শান্ত হয়ে বসে লেখালেখির কাল। বাইরে তাপমাত্রা বাড়ছে রোদ্দুরের জন্য, নির্বাচনের জন্য। সাথে কোথাও প্যাচপ্যাচে ঘাম তো কোথাও ঝরঝর বৃষ্টি। সন্ধ্যের আবছায়ায় দোকানে ভিড় জমায় সারাদিন রোজা রাখা ক্লান্ত মানুষ, গাজনের প্রস্তুতি নেওয়া শ্রান্ত মানুষ, চৈত্রসেলের হাতছানিতে মুগ্ধ মানুষ। টুপটাপ জমে ওঠে গল্পেরা, কবিতারা। নির্বাচনী জনসভার কোণাকাঞ্চিতে, ইফতারির থালার পাশে, গাজনের সন্ন্যাসীর ঝোলায় চুপটি করে অপেক্ষা করে তারা মানুষের জন্য। আমরা আপনাদের কাছে ডাক পাঠিয়েছিলাম তাদের খপ করে ধরে ফেলে, ঝপ করে লিখে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে। এসে গেছে তারা। আগামী কয়েকদিন ধরে রোজ দুটি-তিনটি করে তারা এসে হাজির হবে বুলবুলভাজার পাতায় - টাটকা ভাজা, গরমাগরম। পড়তে থাকুন। ভাল লাগলে বা না লাগলে দুই বা আরো অনেক লাইন মন্তব্য লিখে জানিয়ে দিন সে কথা। মন চাইলে, গ্রাহক হয়ে যান লেখকের। আর হ্যাঁ, আপনিও লেখা নিয়ে চলে আসুন গুরু আর চন্ডালের আড্ডা গুরুচন্ডা৯-র পাতায়।সূচীপত্রঃস্মৃতিচারণবর্ষশেষ, বর্ষশুরু: অমিতাভ চক্রবর্ত্তীও চাঁদ: সেমিমা হাকিমসারেতে থাই নববর্ষ: হীরেন সিংহরায়চান রাত: সাদেকুজ্জামানকাব্যজলের সমাধি: জগন্নাথ দেব মন্ডলগিরগিটি ও অন্যান্য কবিতা: ফরিদাসমুদ্রে সনেট: সোমনাথ রায়পাঁচটি কবিতা: অমিতরূপ চক্রবর্তীতিনটি কবিতা: অরিত্র চ্যাটার্জিউপগ্রহ: অমিত চট্টোপাধ্যায়আব্বু আব্বা বাবা: মাজুল হাসানশেষের কবিতা: দীপ্তেনকবিতাগুচ্ছ: মণিশংকর বিশ্বাসসিন্দবাদের গল্প ছড়ানো ছাদে: সুকান্ত ঘোষকবিতাগুচ্ছ: বেবী সাউগপ্পোখুচরো: সুমন মুখার্জীসুফি: আফতাব হোসেন রতন, দ্য ব্যাকবেঞ্চার: নরেশ জানাডাক দিয়ে যায়: এস এস অরুন্ধতীমহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও মার্কণ্ডেয়র চিঠি: রমিত চট্টোপাধ্যায়পাখির অন্তর্ধান রহস্য: মৃণাল শতপথীএই ঘুম শারীরবৃত্তীয়: দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ওয়েথসাম: উপল মুখোপাধ্যায়কোশিশ কিজিয়ে: কিশোর ঘোষালটুনিমুনির জীবন: দময়ন্তীদৌড়বাজ হাউসকীপার: সমরেশ মুখোপাধ্যায়হন্য: সৈয়দ তৌশিফ আহমেদসীমান্তরেখা: প্রতিভা সরকারসাদা খাম: দীপেন ভট্টাচার্যসুর: অনুরাধা কুন্ডাবুড়োশিবতলা: পায়েল চট্টোপাধ্যায়ইদ বৈশাখ মানে মা: ইমানুল হকউনিশে এপ্রিল: সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়নভেলাফকির ফয়জুল্লাহ: মুরাদুল ইসলামনিবন্ধ আজ নববর্ষের আখ্যান: সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
  • হরিদাস পালেরা...
    দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ৬ - সমরেশ মুখার্জী | বিবর্তনের ধারাসুমন বলে, "ধরতাইটা ভালো‌ দিলি। স্বীকার করছি যা আলোচনা করতে যাবো তা নিয়ে আমার একটু সংকোচ ছিল কিন্তু তোদের কথায় তা কেটে গেল। তবে আমি হয়তো তোর মতো অতো গুছিয়ে বলতে পারবো না, আমার পড়াশোনা‌র গণ্ডী‌ সীমিত। তবু চেষ্টা করছি আমি যেভাবে ভাবি - বলতে। "দ‍্যাখ এটা‌ স্বীকৃত সত‍্য যে বর্তমান মানুষ আদিমানবের রূপান্তরিত রূপ। সেই আদিমানব ছিল  প্রাইমেটসদের সমগোত্রীয়। ওরাংওটাং এবং শিম্পাঞ্জি‌ তাই বর্তমান মানুষের পূর্বপুরুষের নিকটতম প্রতিনিধি হিসেবে গণ‍্য হয়। ট্রেনিং দিলে এরা মানুষের হাবভাব অনেকটা অনুকরণ করতে পারে। তবে আদিমানব ছিল পশুর‌ই মতন। চার হাত পায়ে চলতো, কাঁচা মাংস, ফলমূল খেত। একদিন সে পেছনের দুপায়ে দাঁড়াতে শিখল। সামনের দুটো হাত শরীরের ভারবহন থেকে মুক্ত হয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সৃজনশীল যন্ত্রে রূপান্তরিত হলো। তা আবিস্কার করলো আগুন, চাকা, লোহার ব‍্যবহার। এই তিনটি যুগান্তকারী আবিস্কার তাকে আর ফিরে তাকাতে দিল না। কয়েক কোটি বছরের বিবর্তনের পরে আজ‌‌‌ও গরু হাম্বা হাম্বা বা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে চলেছে কিন্তু মাত্র এক কোটি বছরের মধ‍্যে মানুষের অবিশ্বাস্য রূপান্তর হোলো। ফলে মানুষ যে কেবল পৃথিবীর তাবৎ প্রাণীকুল থেকে আলাদা হয়ে গেল তাই নয় তাদের ওপর কায়েম করলো নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রন‌। এতো অল্প সময়ে এহেন উত্তরণ কী ভাবে সম্ভব হোলো? বিবর্তনবাদে এই মিসিং লিঙ্ক বিশেষজ্ঞ‌দের গবেষণার বিষয়, তা আমাদের এক্তিয়ারের বাইরে।"সুমন একটু থামে। এখন জোৎস্না উজ্জ্বল। তিনজন গভীর অভিনিবেশে তাকিয়ে আছে সুমনের দিকে। সুমন বলে চলে, "আদিমানবের আদিতেও ছিল কয়েক কোটি বছরের ক্রমবিবর্তনের ধারা। ফলে পশুসমাজের নানান প্রবৃত্তি‌গত বৈশিষ্ট্য‌ আদিমানবের মধ‍্যে‌ও সঞ্চারিত হয়েছিল। বহু কোটি বছরের সঞ্চিত প্রবৃত্তি‌গত বৈশিষ্ট্য বা instictive characteristics মাত্র এক কোটি বছরের বিবর্তনের ফলে বিশেষ পরিবর্তিত হ‌ওয়া সম্ভব নয়। ফলে পশুসূলভ নানা প্রবৃত্তিগত বৈশিষ্ট্য বিবর্তিত মানুষের মধ‍্যে‌ও সুপ্ত‌ ভাবে রয়ে গেল।""তবে বুদ্ধি ও যুক্তিবোধের বিকাশের ফলে মানুষ বুঝতে শিখলো  সমাজবদ্ধ জীবনে মানুষ কেবল প্রবৃত্তি‌গত তাড়নায় পশুর মতো আচরণ করতে পারে না। তৈরী হোলো আইন কানুন, বিধি-নিষেধ, প্রথা, লোকাচার। ঘোষিত হোলো সমাজে গ্ৰহণযোগ‍্য আচরণের প্রেক্ষিতে বিচ‍্যূতির শাস্তি। ফলে সংখ‍্যাগরিষ্ঠ মানুষ সচেতন‌ বিবেচনাবোধ ও সংযমী অভ‍্যাসে সমাজস্বীকৃত আচরণ করতে শিখলো। তাই ক্ষিধে পেলে ভিক্ষা চাওয়া যেতে পারে কিন্তু কেড়ে খাওয়া উচিত নয়। তবে অবচেতন মনে রয়ে যাওয়া অবদমিত প্রবৃত্তি‌গত বৈশিষ্ট্যের প্রভাবে কিছু আচরণ কখনো সচেতন মনের নিয়ন্ত্রণে‌র বাইরে চলে যায়। আর তখনই হয় সমস‍্যা। কখনো তা বাহ‍্যিক‌ভাবে শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় প্রকাশিত হয়। কখোনো তা চিন্তা ভাবনাকে প্রভাবিত করে।"প্রবৃত্তি ও প্রবণতা চুনি বলে, "বাব্বা, জেঠু! লোহা, সিমেন্ট, বালি ঘাঁটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে‌ তু‌ই‌ও তো দেখছি ঈশুর মতো‌ গুছিয়ে কথা বলছিস! বিবর্তনের ফলে ক্রমশ তথাকথিত অর্থে উন্নত হয়েও মানুষের মধ‍্যে কেন কিছু পাশবিক প্রবৃত্তি রয়ে গেছে সেটা তো ভালো‌ই বললি। কিছু  উদাহরণ দিয়ে কী খোলসা করা যায়?"সুমন বলে, "ঠিক বলেছিস। যত‌ই আমরা তাত্ত্বিক আলোচনা করি না কেন, উদাহরণ তা বুঝতে সাহায্য করে। যেমন ধর প্রাণীদের মধ‍্যে লড়াই মূলত হয় প্রজননের জন‍্য সঙ্গিনী নির্বাচন, দলের ওপর আধিপত্য কায়েম এবং  এলাকার  ওপর নিয়ন্ত্রণ‌ রাখতে। মাংসাশী প্রাণীর শিকার করা লড়াই নয় কারণ তা কেবল ক্ষুধা‌র তাড়নায়। এছাড়া গোষ্ঠী‌বদ্ধ প্রাণী - যেমন হাতি বা সিংহ - দল থেকে বিতাড়িত হলে ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তেমনি সন্তানের বিপদের আশাঙ্কা‌য় মা পশু‌ও রক্ষণাত্মক কারণে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া পশুরা অহেতুক নিজেদের মধ‍্যে মারামারি, খেয়োখেয়ি করে শক্তি ক্ষয় করে না। একান্ত‌চারী শ্বাপদ, যেমন দুটো পুরুষ বাঘ‌ও যদি আচমকা জঙ্গলে মুখোমুখি হয়ে যায় তাহলে তাদের প্রথম প্রবৃত্তিগত প্রতিক্রিয়া হবে পরস্পর‌কে এড়িয়ে যাওয়া। অর্থাৎ LIVE AND LET LIVE. তবে এই আপ্তবাক‍্য তারা দর্শনশাস্ত্র, গেম থিয়োরী ইত‍্যাদি ঘেঁটে শেখেনি। শিখেছে জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতায়।" "এবার দেখা যাক বুদ্ধিমান মানুষ কী করে। ভীড় বাসে অজান্তেই পা মাড়িয়ে দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাতেও কথা কাটাকাটি থেকে খিস্তি খেউড়, হাতাহাতি হয়ে ব‍্যাপার‌টা হয়তো থানা পুলিশ অবধি গড়িয়ে গেল। তার ফলে হয়তো দুজনেই ভুগলো।" তুলি বলে, "কিন্তু জেঠু, এটা কী বুদ্ধি‌মান মানুষের  পশুর মতো প্রবৃত্তিগত তাড়নায় আচরণের উদাহরণ হিসেবে ঠিক হোলো? তু‌‌ই তো এইমাত্র বললি পশুরা ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি করে না।"সুমন বলে, "তুলি, তুই একটা মোক্ষম ক্লু দিলি। এক্ষেত্রে তুই‌ও একটি প্রবৃত্তি‌গত তাড়না, মানে কৌতূহল, দমন করতে পারিস নি। তাই আমি বক্তব্য শেষ করার আগেই পেশ করলি তোর প্রশ্ন। অবশ‍্য এ তাড়না‌ও দমন করা সহজ নয়।" তুলি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলে, "ওঃ, হ‍্যাঁ, তাই তো। তুই তো সবে একটা উদাহরণ দিয়েছিস মাত্র। তার পশ্চাৎপট, পরিণতি কিছুই ব‍্যাখ‍্যা করিস নি। সরি, সরি, ভুল হয়ে গেছে।"সুমন বলে, "ঠিক আছে। ডোন্ট মাইন্ড। এই উদাহরণ বিশ্লেষণ করলে দেখবি এতে প্রকাশ পাবে কিছু পাশবিক প্রবৃত্তি‌গত আচরণ যা মানুষের মধ‍্যে‌ আজ‌ও সুপ্ত ভাবে রয়ে গেছে। আবার দেখবি এমন কিছু প্রবণতা যা একান্ত‌ভাবে মানুষের‌ মধ‍্যে‌ই দেখা যায়। তা আবার পশুদের মধ‍্যে নেই। এই প্রবণতা‌‌গুলি‌র কিছু ধনাত্মক - যা জ্ঞান, চেতনা, শুভবুদ্ধি‌র উন্মেষে‌র ফলে মানব চরিত্রে বিকশিত হয়েছে। কিছু প্রবণতা আবার ঋণাত্মক - যেগুলি‌ মানুষের নিজের জীবনে বা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব‌ ফেলতে পারে। কখনো আপাতদৃষ্টিতে ঋণাত্মক বৈশিষ্ট্য‌র প্রভাব‌ও হতে পারে সৃজনশীল‌‌।  ফলে নানা পরিপ্রেক্ষিতে বিবিধ পরিণতি সৃষ্টি‌কারী প্রবণতা‌গুলি যথেষ্ট জটিল, কখনো বিতর্কিত। এগুলো‌কে এক ছাঁচে ফেলা খুব মুশকিল।ঈশু বলে, "এই মাত্র তুই যা বললি তা যেন loud thinking বা আত্মকথনের মতো লাগলো। মানে,  তোর মনে কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে যা তুই নিজের মনেই আওড়াচ্ছিস। একটু জটিল হয়ে যাচ্ছে জেঠু। একটু সহজ ভাবে বল না বাবা"।
    শিক্ষা দুর্নীতি রায় - একটি সারসংক্ষেপ  - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | মান্থা আবার ৫০ হাজার চাকরি খেয়ে নেবেন বলেছেন। তাই আগের রায়টা একটু কষ্ট করেই পড়ে ফেললাম। গ্রুপ-সি গ্রুপ-ডি, বাদ দিয়ে স্রেফ শিক্ষকদের নিয়েই লিখছি। কোন কোম্পানি স্ক্যান করেছে, সরকারের কী ভূমিকা, অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ, এইগুলোও  বাদ। এটা খুবই ছোট্টো সারসংক্ষেপ। বহু জিনিস বাদ যাবে। আমার বিচারে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোই থাকছে। পুরোটা জানতে হলে অবশ্যই রায়টা পড়বেন, আমার মুখে ঝাল খাবেননা।  মামলার গোড়া থেকে আমার করা সারসংক্ষেপ এরকমঃ ১। অযোগ্যদের সরানো নয়, পুরো প্যানেল যে বাতিল (সেট অ্যাসাইড) করতে হবে, এবং আবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে হবে, এই দাবীটা প্রাথমিক ভাবে তোলেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। (পাতা ৯২-৯৩) ২। পিটিশনারদের আইনজীবী আশিষ কুমার চৌধুরি, এরকম কোনো দাবী তোলেননি, অন্তত তুলেছেন বলে লেখা নেই। চৌধুরি বলেন, যে, দুটো অনিয়ম হয়েছে। এক, পার্সোনালিটি টেস্টের নম্বর বাকি নম্বরের সঙ্গে যোগ করা হয়নি। দুই, সিনিয়ারিটি বিবেচনা করা হয়নি। এছাড়াও তিনি কিছু খুচরো অনিয়মের কথা বলেন। সবকটাতেই র‌্যাঙ্ক বদলে যায়, ফলে প্রকৃত যোগ্য চাকরি নাও পেতে পারেন, বা পিছিয়ে যেতে পারে। (পাতা ৯৪) ৩। এ পর্যন্ত ওএমআর শিটে কোনো অনিয়ম থাকতে পারে সেটা আসেনি। সেটা নজরে আনে সিবিআই। তারা এসএসসির ডেটাবেস সিজ করে। এবং গাজিয়াবাদ থেকে ওএমআর শিট স্ক্যান করেছিল যে কোম্পানি, তার কর্মচারী, জনৈক বনশালএর কাছ থেকে তিনটি হার্ডড্রাইভ উদ্ধার করে। সেই হার্ডড্রাইভ গুলোতে ওএমআর শিটের স্ক্যানড কপি ছিল। ওএমআর শিটের হার্ড কপি পাওয়া যায়নি, কারণ, এক বছর পরে সেগুলো আর রাখা হয়না। এই হার্ডড্রাইভের ওএমআর এবং এসএসসির তথ্যে কিছু গরমিল পাওয়া যায়। তারা এসএসসিকে দেয় মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা নিতে। (এটা অনেকগুলো পাতার সারসংক্ষেপ, সংখ্যা দেওয়া মুশকিল।)৪। গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ড ড্রাইভ যে আসল না ওটা সিবিআই ম্যানিপুলেট করেছে, এই নিয়ে প্রচুর বাকবিতন্ডা চলে। ম্যানিপুলেট না করে থাকলেও ওটাই যে আসল, এবং সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য কিনা, এ নিয়েও চলে। কিন্তু এই আলোচনায় তাতে ঢোকা হবেনা। ৫। এসএসসি, তাদের তথ্য এবং গাজিয়াবাদের তথ্য খতিয়ে দেখে কোর্টকে রিপোর্ট দেয়, কতগুলোয় গরমিল আছে তা নিয়ে। একাধিক রিপোর্ট পেয়েছি রায়ে, কোর্ট শেষমেশ যেটা বলেছে,  যে, বিশদ তুলনা করা হয়েছে (কারা কয়েছে লেখা নেই)। তার ফলাফল এরকমঃ  শিক্ষক (ক্লাস সিক্স থেকে বারো) দের মধ্যে গরমিল আছে ১৮৫৯ জনের। (গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডিতে গরমিল আছে, ৫০০০+ ।) (পাতা ২৪০)৬। এসএসসির সার্ভারে তথ্য থাকলেও কোনো ওএমআর ইমেজ ছিলনা। তারা আরটিআই এর  জন্য স্ক্যান কোম্পানির কাছ থেকে ইমেজ চেয়ে পাঠাত। তারা ওই ইমেজগুলোর সত্যতা মেনেও নেয়। সিবিআই এরও সেরকমই বক্তব্য। ( পাতা ২২৮) ৭। সব দেখে কোর্ট বলে, তার সামনে তিনটে জিনিস বেছে নেবার সুযোগ আছে। i) রিট পিটিশন বাতিল করা। ii) বেআইনী আর আইনী নিয়োগ আলাদা করে খুঁজে বার করা। iii) পুরো প্রক্রিয়াটাই বাতিল করা। ৮। কোর্ট তিন নম্বর জিনিসটাই বেছে নেয়। বেআইনী আর আইনী আলাদা করে খুঁজে বার করার চেষ্টা না করে। তার অনেকগুলো কারণ দেখায়। ক। যে কোম্পানিকে স্ক্যান করতে দেওয়া হয়, তারা সেটা সাবকন্ট্র‌্যাক্ট করেছিল। খ। এসএসসির সার্ভারে ওএমআর শিটের ইমেজ নাই। ইত্যাদি। যদিও সব পক্ষই একমত ছিল, যে, আসল ওএমআর শিট পাওয়া গেছে, এবং তা থেকে কোর্ট প্রতিটা গরমিল খুঁজেও বার করতে পেরেছে। সংখ্যাটা রায়েই আছে, আমিও ৫ নম্বর পয়েন্টেই লিখেছি। ফলে বেআইনী আর আইনী নিয়োগ বার করার কাজটা হয়েই গিয়েছিল, ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু তারপরেও পুরো প্রক্রিয়াটাই বাতিল করা হয়। কারণ, পুরো মেশিনারিটাই এমন করে বানানো হয়েছে, যাতে করে দুর্নীতি "খুঁজে পাওয়া না যায়, পেলেও প্রমাণ করা না যায়"। সিবিআই দুর্নীতি হয়নি বলেনি। তারা খুঁজে বার করেছে। এসএসসিও দুর্নীতি অস্বীকার করেনি। কতটা হয়েছে তার পরিমাপও সিবিআই করে দিয়েছে। সেই অনুযায়ী শিক্ষকদের মধ্যে ২ হাজারের চাকরি যাবার কথা, বা সরকারের গাফিলতি প্রমাণ হবার কথা। সরকারের জন্য এটাই যথেষ্ট লজ্জার। কিন্তু তাতে তো যথেষ্ট শক তৈরি হবেনা। পুরো রায়টাই দাঁড়িয়ে আছে শক থেরাপি জাতীয় একটা ধারণার উপর। আমি তো আইনের ছাত্র নই, তবে স্বাভাবিক ন্যায়বিচার বলে একট প্রক্রিয়া আছে, আমরা জানি, যেখানে যা প্রমাণ হয়েছে, তার উপরে দাঁড়িয়েই বিচার হয়। যা খুজে পাওয়া যায়নি, প্রমাণ করা যায়নি, তার উপর দাঁড়িয়ে বিচার হয়, ক্রমশ জানছি। ২৬০০০ লোকের চাকরি খেয়ে তা নিয়ে উল্লাস করা যায় জানছি। এবং লোককে দিয়ে আট বছর খাটিয়ে মাইনে ফেরত চাওয়া যায় জানছি। এখন আইন-কানুন এই দিকেই চলেছে। মূল দাবীটা যার, সেই বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, কে যোগ্য কে অযোগ্য খুঁজে বার করা সম্ভব না। যারা টাকা দেননি, যোগ্য, তাঁদের আজকে সরকারকে প্রশ্ন করতে হবে, তোমরা দুর্নীতি কেন করেছিলে। এই প্রশ্নটা না করে তারা যদি প্রশ্ন করে, যে, সরকার দুর্নীতি করেছে বলে আমিই কেন শাস্তি পাব, সরকার দুর্নীতি করেছে বলে আপনার ওকালতি করার অধিকার কেড়ে নিলে কেমন হবে, তাহলে তিনি কি উত্তর দেন, জানার ইচ্ছে রইল। রায়ের লিংক - https://www.verdictum.in/pdf_upload/display-2024-04-22t130941416-1610751.pdf
    ভোটুৎসবে ভাট - লক্ষ্মীবাবুর নকলি সোনার টিকলি - সমরেশ মুখার্জী | এখন বড় দুঃসময়। দূষণমুক্ত পরিবেশ, পর্যাপ্ত খাদ‍্য, পরিশ্রুত পানীয় এখন অধিকাংশ‌ মানুষের ভাগ‍্যে নেই। ভাগ‍্যচক্রে আমি অতোটা দুর্ভাগা ন‌ই। তবে নিত‍্য নানান তিক্ত, খবর, পোষ্ট দেখে মন ভারাক্রান্ত হয়। অথচ কিছু করার নেই। কারণ SMW বা Social Media Warrior এর ভূমিকা ছেড়ে জমিতে 'কিছু' করার জন‍্য যে সব চারিত্রিক গুণাবলী‌র প্রয়োজন - সাহস, ক্ষমতা, উদ‍্যম, নিষ্ঠা, বিশ্বাস, সমর্পণ - সেসব কিছু‌‌ই আমার চরিত্রে নেই। আমার সম্বল ভয়, সংশয়, আত্মকেন্দ্রিক‌তা। ফলে বাড়তে থাকে হতাশা, চাপ।  চাপ কমাতে  ব‌ই পড়ি। ভারী নয় - হালকা। টিভি দেখি‌না বারো বছর। নেটে দেখি ডকু, ভ্রমণ ভিডিও। কিছুক্ষণ আত্মমগ্ন হয়ে থাকতে কিছু লিখি। বৃষ্টি‌ভেজা পথকুকুরের মাথা ঝাঁকিয়ে জল ঝাড়ার মতো আমার লেখাও মনে জমা চাপ ঝাড়তে। তাতে ঋদ্ধ পাঠকের কাঙ্খিত সারবস্তু নেই। এসব নিছক আমোদিত কালক্ষেপ। Pleasurable Pastime. সুনীল বলেছিলেন, মাতৃভাষা‌র চর্চায় মগজের পুষ্টি হয়। অসংলগ্ন ভাবনা গুছিয়ে ধরার প্রয়াস আমার কাছে cognitive exercise. তাই এসব লিখি।              * * * * * * * * * *  আটাত্তরের কাছাকাছি। নিউ এম্পায়ারে লবঙ্গলতিকা‌র প‍্যাঁচের মতো তিনথাক গ্ৰীলের লাইনে ভ‍্যাপসা গরমে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কাটতে হোতো ৭৫ পয়সার টিকিট। তার‌পর সিঁড়ি ভেঙ্গে পাঁচতলা‌য় উঠে দূর থেকে কাঠের সীটে বসে সিনেমা দেখার মজা ছিল অনবদ‍্য। ওটা আদতে ছিল থিয়েটার হল - পি সি সরকার সিনিয়র‌‌ ওখানে দেখিয়েছেন ম‍্যাজি‌ক। তাই গদী আঁটা দামি টিকিটের আসন ছিল নীচে, মঞ্চে‌র কাছে। সিনেমা হলে রূপান্তরিত হতে পাঁচতলা‌র গ‍্যালারী হয়ে গেলো গরীব দর্শকের ৭৫ পয়সার স্বর্গ। ১৯৭৬ থেকে ৯০ - সেই স্বর্ণালী ১৪ বছরে ওখানে অনেক সিনেমা দেখেছি। এই প্রসঙ্গে আসছে একটা সিনেমার কথা - The Spaghetti Western Classic - The Good, The Bad and The Ugly. তখনকার হলিউডি ওয়েস্টার্ন সিনেমার পটভূমি ছিল পশ্চিম আমেরিকার টেক্সাস, আ্যারিজোনা, নেভাডা, উটা, কলোরেডো, নিউ মেক্সিকো, মন্টানা রাজ‍্যের দিগন্ত‌বিস্তারি পাহাড়ি মরু অঞ্চল। ডাকাবুকো ডাকাত, ভাড়াটে খুনি, বাউন্টি হান্টার, জেল পালানো পলাতক - অর্থাৎ আইনকে কাঁচকলা দেখানো Outlaw বা দুর্বৃত্ত‌রাই হোতো ঐ ধরনের সিনেমার প্রোটাগনিস্ট। রুক্ষ, শৈলকঠিন মুখ। পেটানো চেহারা। গায়ে বাঁটুল বা অরণ‍্যদেবের মতো সাত জন্মে না খোলা চামড়ার জ‍্যাকেট। মাইলের পর মাইল মরুপথে ঘোড়া ছুটছে ধূলো উড়িয়ে। যেন অতিপ্রাকৃত দৃশ‍্যপট। ধূ-ধূ প্রান্তরের মাঝে দ্বীপের মতো গুটিকয় ঘরের কোনো জনপদ। সেখানে এসে হাজির হয় আগন্তুক। সরাইখানা‌র দরজায় ঝোলা ঘন্টি। ঢং আ‌ওয়াজ তুলে ঢুকলো ঘর্মাক্ত কলেবরে। তারপর ম‍্যাজিক - কাউন্টারে সরাই সেবিকা ভরা বসন্তের স্বর্ণ‌কেশী। কাউন্টারে ঝুঁকে  - she shows more than what she supposed to sell. মরুভূমিতে  দৃশ্যমান মোলায়েম মরুদ্যান। মেদুর কটাক্ষে হেলায় তাকায় তারা  আগন্তুক পানে। সেই  কটাক্ষাঘাতে দূর্ধর্ষ  দস‍্যুর‌ দৃষ্টি হয়ে আসে মিয়োনো পাঁপড়ের মতো নরম।  খেলা জমে ওঠার সম্ভাবনা‌য় ৭৫ পয়সার টিকিটের ৫০ শতাংশ ওতেই উশুল। আইন শৃঙ্খলা‌র বালাই নেই। পুলিশের টিকি দেখা যায় না। তাই আত্মরক্ষার্থে সবাই রাখে বন্দুক। দস‍্যুদের হাতে তা গ‍্যাস ওভেনে খটাস খটাস করে লম্বা পিজো-ইলেকট্রিক লাইটার জ্বালানোর মতো‌‌ চলে অবলীলায়। পলক ফেলার আগেই ছোটে কয়েক রাউন্ড গুলি। সোয়াটার (flyswatter) ব‍্যাটের চপেটাঘাতে ফটাস ফটাস করে নিমেষে মরা মশার মতো হেথা হোথা ছিটকে পড়ে জলজ্যান্ত মানুষ।    সেসব দৃশ‍্য বিস্মৃত জমানার। ফ‍্যাঁও ফ‍্যাঁও করে ম‍্যারিকান বুলি‌তে কী যে তারা বলতো তখন সিকিভাগ‌‌‌ও বুঝতাম‌ না। এখন কষ্টেসৃষ্টে কিঞ্চিৎ বুঝি। তবু তখন কথা না বুঝেও দেখতাম। মজা লাগতো বেশ। হিরো, ভিলেন, সবার মাথায় ঝুলবারান্দার মতো কাউবয় হ‍্যাট। তার নীচে মরুভূমি‌র উজ্জ্বল রোদে সরু চোখের দৃষ্টি। তাতে মেশা সাপের শীতলতা বা ঈগলের ক্রুরতা। নিভে যাওয়া চুরুট ভাবলেশহীন মুখে ওষ্ঠের কোনে অনর্থক চর্বিত হয়ে চলেছে। গলায় বাঁধা ব‍্যান্ডানা। কোমরে চামড়ার খাপে ঝিমোচ্ছে বিরাট নলের রিভলবার। দেখতে মোটেও শৌখিন নয় - তবে বহু ব‍্যবহারে চকচকে। হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে বিহারী কুটির‌শিল্প -  মুঙ্গেরী 'কাট্টা' গোছের।    কিন্তু না - হলিউড ওয়েস্টার্ন সিনেমা‌য় দেখানো সে সব যন্ত্র এক একটি রত্ন বিশেষ। যেমন কোল্ট 1873 সিঙ্গল এ্যাকশন আর্মি স্পেশাল, .45 লং ব‍্যারেল কোল্ট, রেমিংটন 1858 নিউ আর্মি, কোল্ট প‍্যাটারসন, স্মিথ এ্যান্ড ওয়েসন শোফিল্ড ইত‍্যাদি। অর্ধশতাব্দীর অধিক প্রাচীন সেই সব মডেলের নির্ভরযোগ্য‌তা প্রশ্নাতীত। ঠিক‌মতো চালালে অব‍্যর্থ যমদূত। মানুষ তো ছার বেজায়গায় লাগলে ঘোড়াও জমি নিতে পারে। মজবুত কব্জি, হিমশীতল কলিজা না হলে কিলো খানেক ওজনের সেসব মারণাস্ত্র হঠাৎ খাপ থেকে তুলে চোখের পলকে চালানো সোজা কথা নয়। যেমন জন ওয়েন ঘোড়ার বসে একহাতে টুসকিতে ঘোরাতে‌ন হেভি শটগান। দক্ষিণী রজনী অমন কায়দায় সিগারেট নিয়ে ঠোঁটে-আঙ্গুলে কেরামতি দেখা‌তেন। তাতেই উল্লসিত দেশী পাবলিক দিতো সিটি। অধূনা অনেকে দু আঙ্গুলে স্মার্টফোন ঘোরায়, তেমনই কায়দার ডিজিটাল ভার্সন বোধহয়।   পুলিশ পিতার দৌলতে বছর আঠারো বয়সে একদা তাঁর স্মিথ এ্যান্ড ওয়েসন পুলিশ স্পেশাল সার্ভিস রিভলবারটি দেখা‌র সুযোগ হয়েছিল। হয়তো সেটা ছিল .38 ক‍্যালিবারের মডেল 10 বা 15. কিন্তু কিলোখানেক ওজনের সেই লং ব‍্যারেল ধূসর যন্ত্র‌টির গাম্ভীর্য‌ময় ধাতব শীতলতা ছিল বেশ সমীহ উদ্রেককারী। বলেছিলাম, একবার চালিয়ে দেখবো? বাবা বুলেট বার করে বললেন, চালা। তখন একটু ব‍্যায়াম ট‍্যায়াম করতাম, তাও একহাতে তুলে চালাতে কব্জি ও আঙুলে বেশ জোর লাগলো।  বাবা বললেন, এটা এভাবে চালায় না, রিকয়েলের ঝটকায় কব্জিতে সটকা লাগতে পারে। এটা চালাতে হয় দুহাতে ধরে, এভাবে। এটা মেয়েদের হ‍্যান্ডব‍্যাগে রাখার উপযোগী পুঁচকে পিস্তল নয় যা স্বল্প দুরত্বে আত্মরক্ষায় চালাতে হতে পারে। এটা আরক্ষাকর্মীদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আক্রমণের উদ্দেশ্যে নির্মিত। তাই তাক করে চালাতে পারলে ৫০ ফুট দুরে‌‌ও কোনো  পলাতক দুর্বৃত্ত ধরাশায়ী হতে পারে।  এখন নেট ঘেঁটে দেখলাম এর গুলি বেরোয় প্রায় ১০০০ ফুট/সেকেন্ড গতিতে। অর্থাৎ ৫০ ফুট দুরত্ব অতিক্রম করতে সময় নেবে ০.০৫ সেকেন্ড। মানুষের চোখের পলক ফেলার সময় ০.১০ সেকেন্ড। অর্থাৎ চোখের পাতা পড়ার অর্ধেক সময়ে ৫০ ফুট দুরে পলাতক ঘায়েল হবে। শুধু বুলেট গায়ে লাগা চাই। অভ‍্যাসে‌র অভাবে পুলিশের গুলি এদেশে প্রায়শই লাগে ফুটপাতে হাঁটা বালকের গায়ে। ডাকাত পালায় পাঁচিল টপকে।  তবে .38 পুলিশ স্পেশালের গুলি ৩০০ ফুট দুরত্বে‌‌ও কারুর গায়ে লাগলে‌ বেশ জখমের সম্ভাবনা। রাইফেলের গুলি পেড়ে ফেলতে পারে ১৬০০ ফুট দুরে কাউকে। টেলিস্কোপিক সাইট লাগানো হাই ক‍্যাপাসিটি স্নাইপার বা এ্যান্টি মেটেরিয়াল ব‍্যালাস্টিক রাইফেল তো ২কিমি দুরে কাউকে শু‌ইয়ে দিতে পারে চিরনিদ্রায়। এখনো অবধি সর্বাধিক দূরত্বে ঘায়েল করার রেকর্ড ২.৪৭ কিমি। তার গুলি‌ বেরোয় ৬৫০০  ফুট/সেকেন্ড গতিতে। দু কিমি দুরে কাউকে শোয়াতে সে বুলেট সময় নেবে মাত্র ১ সেকেন্ড। দুগ্গা দুগ্গা! প্রসঙ্গত বলি, এযাবৎ যাত্রী‌বাহী বিমানের সর্বাধিক গতির রেকর্ড আছে ব্রিটিশ এয়ার‌ওয়েজের অধুনালুপ্ত সুপারসোনিক কনকর্ড বিমানের - ঘন্টা‌য় ২১৮০ কিমি. এযাবৎ তৈরি সর্বোচ্চ ক্ষমতার স্নাইপার রাইফেলের বুলেটের গতিবেগ সে জায়গায় ঘন্টা‌য় ৭১৫০ কিমি - কনকর্ড বিমানের ৩.৩ গুণ।      একদা ওয়েস্টার্ন ছবিতে দাপিয়ে বেরিয়ে‌ছেন ক্লিন্ট ইস্ট‌উড, জন ওয়েন, হেনরী ফন্ডা, ওমর শরীফ, বার্ট ল‍্যাঙ্কাস্টার,  চার্লস ব্রনসন, টেরেন্স হিল, বাড স্পেন্সার, জেমস কোবার্ন, এলি ওয়ালচ্, লী ভ‍্যান ক্লীফ, বার্ট রেনল্ডস, রোনাল্ড রেগন (আমেরিকার চল্লিশ‌তম রাষ্ট্রপতি হ‌ওয়া‌র আগে জীবনের শুরুয়াতি পর্বে) এবং কিয়দংশে গ্ৰেগরী পেক্, হামফ্রে বোগার্ট, ট‍্যালি স‍্যাভালস্, স্টিভ ম‍্যাকুইন, ইয়ুল ব্রে‌ইনারের মতো অন‍্য গোত্রে‌র অভিনেতা‌রা‌। সে তুলনায় সেই সব ছবির অভিনেত্রী‌কুল -  আমান্ডা ব্লেক, র‍্যাকোয়েল ওয়েল্চ, কেটি জুরাডো, রোন্ডা ফ্লেমিং, ডোনা রীড, ক্লেয়ার ট্রেভর - আপামর দর্শকদের স্মৃতি‌তে সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেন নি।    স্প‍্যাঘেটি ওয়েস্টার্ন সিনেমা বলতে বোঝাতো সেই‌সব ওয়েস্টার্ন ছবি যার মূল কলাকুশলীরা - প্রযোজক, পরিচালক, সম্পাদক, সঙ্গীত‌কার, ক‍্যামেরা‌ম‍্যান‌ হতেন ইতালিয়ান। যদিও বিশ্বের বাজারে বাণিজ্য করতে সেসব ছবির নায়ক নায়িকা হতেন মূলত হলিউডি। হলিউডে প্রতিষ্ঠিত ইতালিয়ান অভিনেতা‌ও ছিলেন - টেরেন্স হিল, বাড স্পেন্সার, (Django খ‍্যাত) ফ্রাংকো নিরো ইত্যাদি। সে সব ছবি নির্মিত ও বিশ্ব বাজারে বিতরিত হোতো  বিখ্যাত সব হলিউড প্রোডাকশন হাউস দ্বারা যেমন ওয়ার্নার ব্রাদার্স, এমজিএম, ইউনিভার্সাল পিকচার্স, কলম্বিয়া পিকচার্স, ইউনাইটেড আর্টিস্ট‌স্ ইত্যাদি। এসব ছবি ইংরেজি‌তে হলেও ইতালিয়ান, স্প‍্যানিশ, জার্মান ভাষায় ডাবিং বা সাবটাইটেল দিয়ে তৈরী হোতো তার মাল্টিলিঙ্গুয়াল ভার্সন। The Good, The Bad and The Ugly নির্মিত হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। পরিচালনায় ডিপ ক্লোজআপ ও লং ডিউরেশন শটের সাহায্যে সিচুয়েশন তৈরীতে সিদ্ধহস্ত বিখ্যাত ইতালিয়ান পরিচালক - সের্গি‌ও লিওন। পদবী‌টা চেনা চেনা লাগছে?  সানি লিওনের দৌলতে সেটা স্বাভাবিক তবে সের্গেইয়ের সাথে সানির কোনো যোগসূত্র‌ নেই।  সানি কানাডা প্রবাসী এক শিখ মেয়ে - করণজীৎ কৌর ভোরা। সানি তার ডাক নাম। ছোট থেকে খেলাধুলা‌য় উৎসাহী, টমবয় স্বভাবের সানি রাস্তায় ছেলেদের সাথে হকি খেলতো। এগারো বছরে পেলো প্রথম চুম্বনের স্বাদ। ষোলো বছরে এক বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সৌজন্যে খেলাচ্ছলে‌ হারালো কুমারী‌ত্ব। একুশে পা দিয়ে ২০০১ সালের মার্চের পেন্টহাউস পত্রিকার প্রচ্ছদে নূন‍্যতম আচ্ছাদনে অপরিণত সম্পদে হাজির হয়ে‌ই পেলো 'পেন্টহাউস পেট' খেতাব। যেমন প্লেবয় ম‍্যাগাজিনে আবির্ভূতা মডেল‌রা পায় 'প্লেবয় প্লেমেট' তকমা। ২০০৭ সালে সানি বাণিজ্যিক প্রয়োজনে কৃত্রিম উপায়ে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হোলো। যেমন অধূনা হোয়াটস‌এ্যাপ ফরোয়ার্ডে‌ড পোষ্ট পড়ে (বা না পড়েই) সমৃদ্ধ হয় নেটিজেন। ২০১২তে পূজা ভাটের 'জিসম-2' দিয়ে বলিউডে হোলো সানি‌র সাহসী আত্মপ্রকাশ। ভূতপূর্ব জীবিকা পরিত্যাগ করে প্রাচুর্যময় প্রতিস্থাপিত উপস্থিতিতে বলিউডে নিজেকে নবরূপে উদ্ভাসিত করায় সানি‌র নিষ্ঠা ও শৈলী প্রশংসনীয়।  সানি‌র স্বামী ড‍্যানিয়েল ওয়েবারের সংস্কারহীনতা মধ‍্যবিত্ত মানসিক‌তায় অনুধাবনের অতীত।  সানি‌র লিওন পদবী‌টি দেন পেন্টহাউস পত্রিকার তদানীন্তন মালিক বব গুচ্চিয়ন। হয়তো তাঁর পদবী‌র শেষাংশে‌র সাথে সমধ্বনীয় সাযুজ‍্যে - গুচ্চিয়ন - লিওন। এই আর কী। ইতালিয়ান পরিচালক সের্গেই লিওনের সাথে সানি লিওনের কেবল এটুকুই যোগসূত্র - এক পদবী‌তে।   ফিরে আসি সের্গেই‌তে । তিনি বানিয়ে‌ছিলেন দুটি ট্রিলজি। প্রথমটি 'ডলার ট্রিলজি'। পরে 'ওয়ান্স আপন এ টাইম ট্রিলজি'। ডলার ট্রিলজির প্রথমটি ছিল A Fistful of Dollar (১৯৬৪)। দ্বিতীয়‌টি For a Few Dollars More (১৯৬৫) এবং শেষে ঐ TGTBATU (১৯৬৬). আগের দুটি ছবি তখন কেবল ইতালি‌তে মুক্তি পেয়েছে। দুটি‌তেই মুখ‍্য ভূমিকা‌য় ছিলেন ছ ফুট চার ইঞ্চির সুপুরুষ ম‍্যাচো ম‍্যান - ক্লিন্ট ইস্ট‌উড। প্রথম ছবিটি‌ আমেরিকা‌য় মুক্তি পাবে ১৯৬৭তে।   তবে তার আগে‌ই সের্গি‌ও বানাতে  চাইলেন ট্রিলজির শেষ ছবি - TGTBATU. ছবির বাজেট মাত্র ১২ লক্ষ ডলার - বাস্তবিক‌ই fistful - মুষ্টিমেয়। কিন্তু ততদিনে ক্লিন্ট বুঝে গেছেন নিজের বাজার‌দর। তাই চেয়ে বসলেন আড়াই লক্ষ ডলার - ছবির বাজেটের ২০% (আজকের দিনে ভারতীয় মূদ্রা‌য় প্রায় ৫০ কোটি টাকা) এবং আমেরিকা‌য় প্রদর্শনের লভ‍্যাংশের ১০%. কিঞ্চিৎ অসন্তুষ্ট হলেন সের্গেই। কিন্তু চাই তার ক্লিন্টকে‌ই - কারণ The Good চরিত্র যা ভেবেছেন, তাতে তিনি নিশ্চিত - ক্লিন্ট মাত করবে বক্স অফিস। তাই রাজী হয়ে গেলেন। পরিচালকের মুন্সীয়ানা, চমৎকার ওয়াইড স্ক্রিন ক‍্যামেরা‌র কাজ, সঙ্গীত পরিচালক এন্নিও মরিকনের অপূর্ব আবহ সঙ্গীত - পর্দায় ক্লিন্ট ও লী ভ‍্যান ক্লীফের চুম্বকীয় উপস্থিতি‌ - সব মিলিয়ে এক ডেডলি প‍্যাকেজ।    ক্লিন্টের এই ডলার ট্রিলজি‌র সাফল্য‌ই তাকে ১৯৭১ এ প্রতিষ্ঠিত করে আইকনিক 'ডার্টি হ‍্যারি' চরিত্রে। যার রেশ চলে ১৯৮৮ অবধি বিভিন্ন নামে মোট পাঁচটি ছবির সিরিজে। চতুর্থ‌টির পরিচালক‌ও ক্লিন্ট। ছবিতে তিনি সানফ্রানসিস্কো পুলিশ বিভাগের নির্ভীক এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট - হ‍্যারি ক‍্যালাহান। মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চের রিয়েল লাইফ এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট দয়া নায়কের ওপরে তৈরি হয়েছিল 'অব তক ছপ্পন' সিনেমা। তাতে ইন্সপেক্টর সাধু আগাসের চরিত্রে ফাটিয়ে দিয়ে‌ছেন নানা। পরে ডলার ট্রিলজির প্রযোজকের বিনিয়োগ‌ও ফিরে এসেছে বহুগুণ হয়ে। সের্গেই বিখ্যাত হলেন Godfather of Spaghetti Western Movies হিসেবে।   ১৮৬২ সালে আমেরিকা‌ন সিভিল ওয়ারের পটভূমি‌কায় তৈরি কাহিনী‌ TGTBATU ছবির শেষে আছে একটি গোলাকার সমাধিক্ষেত্রের দৃশ‍্য - টানটান ক্ল‍্যাইম‍্যাক্সে ত্রিমূর্তীর মধ‍্যে সংঘটিত হবে ক্ল‍্যাসিক 'মেক্সিকান স্ট‍্যান্ড‌অফ' দৃশ‍্য। তাতে আহবান জানায় ক্লিন্ট (Good)। ডাকুদের মধ‍্যে অলিখিত নিয়মে পুরুষোচিত অহংকারে তাতে সাড়া দিতেই হয় লী ভ‍্যান ক্লীফ (Bad) এবং নিরুপায় হয়ে এলি ওয়ালচ্‌কেও (Ugly). ক্ল‍্যাসিক ব্রিটিশ ডুয়েল হোতো দুজনের মধ্যে যাতে দুজন বা একজনের মরার সম্ভাবনা অবধারিত। মেক্সিকান স্ট‍্যান্ড‌অফে সাধারণত তিনজন বন্দুকধারী নিজেদের মধ‍্যে হিসাব বরাবর করতে ১২০ ডিগ্ৰি কোনে দাঁড়িয়ে একে অপরকে মাপতে থাকে‌। যে আগে বন্দুক তুলবে সেই জ্বালবে স্ফুলিঙ্গ।   ছবিতে Sad Hill Cemetery নামে পরিচিত ঐ সমাধিক্ষেত্র‌টি সেই ১৯৬৬ সালে‌ই স্পেনের বুর্জোস প্রদেশে স্প‍্যানিশ সৈন‍্যদের দিয়ে পয়সার বিনিময়ে তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র ঐ একটি দৃশ্যে‌র জন‍্য। দৃশ‍্যটি আমি বেশ কয়েকবার দেখেছি। এমন দীর্ঘায়িত নাটকীয় সাসপেন্স সৃষ্টিতে সের্গি‌ও ছিলেন বিখ‍্যাত। সিনেমা‌টির দৈর্ঘ্য‌ও তাই চার ঘন্টা।  (দৃশ‍্য‌টার লিংক র‌ইলো শেষে)।    শুটিংয়ের পর ঝোপঝাড় কেটে বানানো নকল সমাধিক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত হয়। ক্রমশ প্রকৃতি আবার অধিকার করে নেয় তাকে। তবে পৃথিবী‌ব‍্যাপী TGTBATU ফ‍্যানদের স্বেচ্ছা দানে স্পেনের The Sad Hill Cultural Association ২০১৭ সালে - মানে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পর - বিস্মৃত, জঙ্গলাকীর্ণ সেই শ‍্যূটিং স্পটটি আবার খুঁজে বার করে। সাফ সাফাই করে সেটাকে রূপান্তরিত করে একটি নস্টালজিক পর্যটন‌স্থলে। পাঁচ দশক পরেও একটি পাতি এ্যাকশন সিনেমার প্রতি ফ‍্যানেদের এমন হৃদয়ের টান বেশ আশ্চর্য‌জনক।   ১৯৭০ সালে শোলে ছবির কাহিনী‌কার সেলিম-জাভেদ যে তিনটি ছবি থেকে সবিশেষ প্রভাবিত হয়েছিলেন তার একটি ছিল সের্গেই লিওন পরিচালিত 'Once upon a time in the West' - মূখ‍্য ভূমিকা‌য় হেনরি ফন্ডা ও চার্লস ব্রনসন। সে ছবির কাহিনী নির্মাণে সের্গেই‌য়ের সাথে যুক্ত ছিলেন আর এক দিকপাল ইতালিয়ান পরিচালক - বার্নার্দো বেত্রোলুচি। বাকি দুটি ছবি কুরোশোয়ার 'Seven Samurai' ও জন স্ট্রাজেসের 'The Magnificent Seven'. রাজ কুমার সন্তোষীর 'China Gate' ছবিতে‌ও The Magnificent Seven এর সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ‍্য করা যায়।    শোলের শ‍্যূটিং‌য়ের জন‍্য‌ও ব‍্যাঙ্গালোর থেকে মাইশোরের পথে ৫০ কিমি দুরে রামনগরে হাইওয়ে থেকে ভেতরে ছবির প্রয়োজনে তৈরী হয়েছিল এক গ্ৰাম। প্রায় আড়াই বছর ধরে শ‍্যূটিং চলাকালে সেই অস্থায়ী গ্ৰামের নাম হয়ে গিয়েছিল 'সিপ্পি নগর'। স্থানীয় কিছু লোক কাজ পায়। তাদের দেখা গিয়েছিল সিনেমার পর্দায় গ্ৰামবাসী হিসেবে। ওখানেই জলের ট‍্যাঙ্কের ওপরে চড়ে  ধর্মেন্দ্র‌ করেছি‌লেন সেই বিখ্যাত সুইসাইড নাটক।    কাছেই রামদেবরা টিলায় হয়েছিল গব্বরের ডেরা। সেখানে আমজাদ রাগে গরগর করতে করতে হুঙ্কার ছেড়েছিল - আরে, এ সাম্বা, কিতনা ইনাম রখ্খে হ‍্যায় রে সরকার হম পর? খাড়া গ্ৰানাইট পাথরের টঙে পা ঝুলিয়ে বসে সাম্বা বলেছিল - পুরা পচাশ হাজার, সরকার। এসব সংলাপ এখন কিম্বদন্তীপ্রায়। এখন সেই শোলে গাঁওয়ের  কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে। সে জায়গা এখন বন‍্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ‌দের কাছে অন‍্য কারণে গুরুত্বপূর্ণ। "রামদেবরা বেট্টা ভালচার স‍্যাংচুয়ারী" এখন বিলুপ্ত‌প্রায় ভারতীয় শকুনের সংরক্ষণের জন‍্য একমাত্র ঘোষিত ESZ (Notified Eco Sensitive Zone).  অবশ‍্য ভারতের নানা জায়গা এখন ঘাস, ফুল, পদ্ম শোভিত এবং গদা, তরোয়াল, ত্রিশূল আন্দোলিত অন‍্য জাতীয় শকুনের মুক্তাঞ্চল - কেবল তাদের ডানা নেই বলে চট করে চেনা যায় না। তবে খুবলে নিলে টের পাওয়া যায়।    তো যা বলছিলাম। সেই সমাধিক্ষেত্রের শেষ দৃশ‍্যে ক্লিন্ট ইস্ট‌উড এলি ওয়ালচ্‌কে একটা বিলিয়ন ডলার ডায়লগ ঝাড়ে - “You see, in this world, there’s two kinds of people, my friend. Those with loaded guns and those who dig. You dig.” কিন্তু what to dig? সিনেমা‌য় তা একটি বিশেষ কবরের নীচে লুক্কায়িত গুপ্তধন। বাস্তবে ক্ষমতাসীন‌দের শোষণে তাদের জন‍্য সম্পদ আহরণে নিম্নবর্গীয় মানুষের আমৃত্যু খুঁড়ে যাওয়া নিজেদের কবর। অথবা নির্মাণ করা নিজেদের জেল। যেমন আসামের দিনমজুর সরােজিনী হাজং। তিনি নিজেই নিজের জন্য বানাচ্ছেন জেল। সরােজিনীর মত অনেক দিনমজুর আসামে ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মানে পেটের দায়ে ঘাম ঝড়াচ্ছেন, যাঁদের নাম আসামে চুড়ান্ত NRC তালিকা থেকে বাদ গেছে। তৈরী হলে ওখানেই স্থান হবে সরোজিনী‌দের।   ১৯৭৩ সালে আমেরিকা‌য় প্রতিষ্ঠিত হয় Grammy Hall of Fame. এখানে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন‍্য প্রতি বছর কিছু বাছাই করা উচ্চমানের বা ঐতিহাসিক‌‌ গুরুত্ব আছে এমন সঙ্গীত, বাদ‍্য, কন্ঠস্বর বা বক্তৃতা সংরক্ষণের জন‍্য মনোনীত হয়। তবে তা হতে হবে অন্ততপক্ষে ২৫ বছরের প্রাচীন - অর্থাৎ অবশ‍্য‌ই থাকতে হবে তার enduring appeal. অনেক নমিনেশনের মধ‍্যে বিশেষজ্ঞ‌দের ভোটাভুটির মাধ‍্যমে নির্বাচিত হয় অল্প কিছু।  এভাবেই এখানে সংরক্ষিত হয়েছে টমাস আলভা এডিসনের ১৮৭৮ সালের রেকর্ডিং, ১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের "I have a Dream" বক্তৃতা। বব ডিলান, বীটলস, এলভিস প্রেসলি, পল রবসন, বব মার্লে, ফ্রাংক সিনাত্রা, ইহুদি মেনুহিন, জন ডেনভার, এলটন জন, জন লেনন, সাইমন ও গারফাঙ্কেলের 'সাউন্ড অফ সাইলেন্স', বার্‌বারা স্ট্রেসান্ড্ ও এমন নানা দিকপাল গায়ক, বাদ‍্যকার, বাগ্মী‌র রেকর্ডিং। এখানে আছে ১৯৫৬ সালে হিচকক্ পরিচালিত - মুখ‍্য ভূমিকা‌য় জেমস স্টূয়ার্ট ও ডোরিস ডে অভিনীত - The Man Who Knew Too Much সিনেমা‌য়  শেষ দৃশ‍্যে ডোরিসের স্বকণ্ঠে গাওয়া বিশ্ববিখ্যাত গান - Que Sera Sera - Whatever will be, will be গানটি, যার মর্মার্থ - বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই প্রযোজ্য - যা হবার, তাই হবে। (অহেতুক ভেবে কী হবে)। কিন্তু Grammy Hall of Fame এর অবতারণার কী হেতু? একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে এই গরুর রচনায় - সানি লিওন থেকে গ্ৰ‍্যামী হল অফ ফেম - কোনো প্রসঙ্গ‌ই সম্পূর্ণ সম্পর্কবিযুক্ত নয়। প্রতিটি প্রসঙ্গের দড়ি‌ই কোনো না কোনোভাবে একটি মুখ‍্য গরু‌র গলায় বাঁধা - শেষবেষ ঘুরে ফিরে - 'সেই ঘাস গরু খায়' - করে প্রসঙ্গ আবার ফিরে আসবেই সেই গরুতে। এখানে সেই গরুটি TGTBATU. এ ছবিতে সের্গেই‌য়ের প্রতিটি ছবির সঙ্গীত পরিচালক এন্নি‌ও মরিকনের একটি অনবদ‍্য থিম টিউন ছিল, যেটি পরে আইকনিক হয়ে যায়। সেটা আমি বহুবার শুনেছি - হয়তো অনেকেই শুনেছে। (তবু ড‍্যানিশ ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রা কর্তৃক সেটার রিক্রিয়েশনের ভিডিও লিংক র‌ইলো শেষে। অবাক হয়ে গেছি দেখে - একটি সিনেমার টিউন তৈরিতে এতো হ‍্যান্ডস লাগে!)   এন্নিও ছিলেন উঁচু দরের কম্পোজার। দীর্ঘ সঙ্গীত‌জীবনে তিনি ৭০টি পুরস্কার‌প্রাপ্ত সিনেমা‌য় ও টিভিতে প্রায় চারশো‌টি স্কোর ও একশোটি ক্ল‍্যাসিক সিম্ফনি কম্পোজ করেছেন। নিজে ছিলেন দক্ষ ট্রাম্পেট বাদক। TGTBATU সিনেমার সেই টিউনটি তাঁর পরিচালনায় পরিবেশন করে প্রাগ সিটি ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রার শিল্পী‌বৃন্দ। এন্নি‌ও পান ইতালির সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান - OMRI (Order of the Merit of the Italian Republic) - যা আমাদের দেশের ভারতরত্ন সদৃশ।  সঙ্গীতে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ‌টি ৬.৭.২০২০- পতনজনিত আঘাতে মারা যান ৯১ বছর বয়সে। তাঁর সুরকৃত TGTBATU সিনেমা‌র সেই বিখ‍্যাত থিম টিউনটি গ্ৰ‍্যামী হল অফ ফেমের (GHF) অন্তর্ভুক্ত হয় ২০০৯ সালে। এবার  হয়তো পাওয়া গেল GHF এর সাথে TGTBATU নিয়ে এই বাঁজা রচনার যোগসূত্র।   এই বাঁজা রচনায় আমি খাল বিল থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আমার হালহীন মনপানসি ইচ্ছা‌মতো ভাসিয়ে এমন ঘন্ট পাকিয়েছি যে মনযোগী পাঠক‌ও হয়তো এযাবৎ পড়ে খেই হারিয়ে ভুলে যেতে পারে এ লেখার শিরোনামে‌র তিলমাত্র তাৎপর্য তো এখনো অবধি বোঝা গেল না? চিন্তা নেই। এবার আসবে।    সেদিন আবার শুনছিলাম ভি শান্তারাম প্রযোজিত ও পরিচালিত 'জল বিন মছলি নৃত‍্য বিন বিজলী' সিনেমা‌য় মুকেশের কণ্ঠে আমার প্রিয় একটি গান - 'তারো মে সজকে'। বহুবার শুনে‌ও সাধ না মেটা অনেক গানের একটি।  ১৯৫৩ সালে সোহরাব মোদী প্রযোজিত, পরিচালিত 'ঝাঁসি কি রাণী'  ছিল ভারতে নির্মিত প্রথম টেকনিকালার ছবি। ১৯৭১ সালে 'জবিম-নৃবিবি' সিনেমার প্রতিটি গান স্টিরিওফোনিক সাউন্ডে রেকর্ড করে শান্তারাম‌ও করূছিলেন আর এক রেকর্ড। রিমিক্সিং করেছিলেন মঙ্গেশ দেশাই, শান্তারামের‌ রাজকমল কলামন্দির স্টুডিও‌তে।    মজরুহ সুলতানপুরীর সরল সুন্দর কথা। লক্ষীকান্ত প‍্যারেলালের অনবদ‍্য সুর। সেই গানের শুরুতে (prelude) এবং মাঝে (interlude) TGTBATU সিনেমার সেই আইকনিক থিম টিউনটির সিগনেচার শিসটি এই গানে হুবহু ব‍্যবহৃত হয়েছে। তাই এই লেখার শিরোনাম 'লক্ষীবাবুর নকলি সোনার টিকলি'। চৌরঙ্গী, এলগিন, মুন্সীবাজার রোডে গেলে দেখা যাবে পর পর কয়েকটি  'লক্ষী বাবুকা আসলি সোনা চাঁদি‌কা দোকান'। সবকটি‌ই প্রথম, একমাত্র এবং আসল। এই গানে ঐ শিস লক্ষ্মীদা জুটি প‍্যারসে নিজেদের  বলে চালিয়ে দিয়েছেন নাকি ভদ্রতার খাতিরে এন্নি‌ও‌র প্রতি অন্তত রোলিং ক্রেডিটে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন, জানা নেই।   প্রতিমা‌র মতো সুন্দর কপালে একটি ঝলমলে টিকলি ঝুললে ভালো‌ই লাগে দেখতে। তবে তা না থাকলেও অসুন্দর লাগে না। 'তারো মে সাজকে' গানটি‌ও তেমন। ঐ টিউনটি গানে অবশ্যই যোগ করেছে এক মনোহর মাত্রা। তবে তা না থাকলেও গানটি ভারতীয় আমেজের সুন্দর সুরের জন‍্য মোটেও খারাপ লাগতো না। মুকেশের গায়কীর গিটকিরি তো কান-মন জুড়ানো।   লক্ষীকান্ত‌-প‍্যারেলাল জুটি সুরকৃত গানে ঐ টুকলি করা টিউনে‌র টুকরোটা‌ই এই গরুর রচনার প্রেরণা। তাই শিরোনামে জ্ঞাপন করেছি কৃতজ্ঞতা। তবে শেষ অবধি না পড়লে তা বোঝা সম্ভব নয়। এই টুকলির কথা জেনেছি তিন দশক আগে।  দুঃসময়ে ছোট্ট স্ফূলিঙ্গ জোগায় অবান্তর রচনা লেখার প্রয়াসে আত্মমগ্নতায় ডুবে থাকা‌র দাওয়া‌ই। লেখার মশলা সংগ্ৰহকালে জানতে পারা যায় নানা আনন্দময় তথ‍্য। পলায়নবাদীরা এভাবে‌‌ও এড়িয়ে থাকতে পারে বিষাক্ত বর্তমানে‌র অভিঘাত। 
  • জনতার খেরোর খাতা...
    হেদুয়ার ধারে - ১২৪ - Anjan Banerjee | নরেণ পাল এল বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ। দিন পনের পরে এল।বলল, ' কি মাণিকবাবু ... ঘড়ির খবর কি ? আর কিছু ভুতুড়েপনা করেনি তো ? '------ ' এখন পর্যন্ত তো আর কিছু করেনি ... জানিনা, কখন কি করে ... ডাক্তার গোবিন্দ সেনের কথাই মনে হয় ঠিক ... ' মাণিকলাল বললেন।----- ' কি ? '----- ' ওই যে ... চেতন অবচেতন ... কি সব বলছিল ... বলল ঘড়িটা সবসময়ে চোখের সামনে রাখতে ... তাতে কাজ হয়েছে বলেই তো মনে হচ্ছে ... '----- ' অ ... তা হবে হয়ত ... দেখুন ... 'সৌদামিনী বললেন, ' হ্যাঁ ... দেখা ছাড়া গতি কি ? কি উটকো ঝামেলায় যে পড়েছি ... ভাল লাগে না মোটে ... '----- ' আরে ... আপনি অত চিন্তা করবেন না গিন্নীমা। কিছু হলে আমি তো আছি ... আমি হলাম গিয়ে ঘড়ির ওঝা ... হাঃ হাঃ ... 'সৌদামিনী দেবী প্রতিবারের মতো এবারও যথারীতি বললেন, ' নরেন ... খেয়ে যেও কিন্তু ... বেলা অনেক হয়েছে।নরেনও প্রতিবারের মতো মৃদু হেসে সম্মতিসূচকভাবে মাথা নীচু করল। তারপর বলল, ' গিন্নীমা ... ঘরে এবার লক্ষ্মী আনুন। এখনও সময় আছে ... 'সৌদামিনী মুখ তুলে তাকালেন নরেন পালের দিকে।----- ' হায় ভগবান ... আমার কি আর সে সৌভাগ্য হবে ? বোঝাও ওকে বোঝাও ... 'মাণিকবাবু বিড়ম্বিত মুখে বললেন, ' আঃ ... নরেনদা তুমি আবার শুরু করলে ... বুড়ো হয়ে গেছি ... এসব ছাড় না এবার ... এই বেশ আছি ...'নরেন পাল সহজে ছাড়ার পাত্র নয় ...----- ' আরে দূর ... কি যে বলেন ভাই আমার ...পুরুষমানুষ সত্তর বছরের আগে বুড়ো হয় নাকি ...'----- ' তা সত্তর তো প্রায় হয়েই এল ... '----- ' হাঃ হাঃ ... ভাল বলেছেন। আমার তো তা'লে নব্বই ছুঁই ছুঁই বলতে হবে ... ' নরেন বললেন।------ ' যাক ওসব কথা এখন থাক। আমাদের পানিহাটির জমিটা একটু বিক্রি করার ব্যবস্থা কর না নরেন ... দশ কাঠার মতো আছে ... ওটা রক্ষা করার ঝক্কি আর নিতে পারছি না। এটা একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখ তো কেনার মতো লোক পাও কিনা ... অল্প দামেই ছেড়ে দেব ... ' সৌদামিনীদেবী বললেন।----- ' ও ... আপনাদের ওই পানিহাটির জমিটা ... বিক্রি করবেন ... আচ্ছা ঠিক আছে ... খদ্দের দেখছি ... ক'টা দিন সময় দিন .... 'টং করে একটা ঘন্টা পড়ল এই সময়ে। অ্যাংলোসুইস কোম্পানির গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের দিকে তাকিয়ে সবাই দেখল একটা বেজেছে। ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাটা চলছে চিকচিক চিকচিক ...নরেন পাল বলল, ' আজ আর চাবি দেব না। মনে হচ্ছে ভালই দম আছে এখনও। চলবে কিছুদিন ...সামনের সপ্তাহে এসে দেখব একবার ... 'সৌদামিনী দেবী বললেন, ' চল খেয়ে নাও এবার। গায়ত্রী ... ওদের ভাত বেড়ে দাও ... 'গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের ওপর সূর্যের আলো এসে পড়ছে জানলা দিয়ে। ঘড়ির মুখ হয়ে উঠেছে যেন পরিতৃপ্তিতে হাস্যোজ্জ্বল। কেন তা কে জানে। গুরুতর অসুখ থেকে সেরে ওঠা এই বুড়ো দেয়াল ঘড়িটা এ পরিবারের তিন প্রজন্মের বহু সুখ দুঃখের সাক্ষী। এখন কি কোন সুখের সময় সমাসন্ন, নাকি দুঃখের তা ওই ঘড়িই জানে। সওয়া একটা বেজে গেল। আকাশ থেকে সূর্য গনগনে তাপ ছড়াচ্ছে বাতাসে। রাস্তায় হঠাৎ সাগরের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল সুরেশ্বর মল্লিকের। ওই রামদুলালের মোড়ে।সাগর বলল, ' মল্লিকবাবু যে ... কেমন আছেন ? 'জমিদার বংশের ছেলে সুরেশ্বর একটু আধটু মদ্যপান ছাড়া বাকী অভ্যাস আদতগুলো সবই বদলে নিয়েছেন। তার জীবনযাত্রা এখন সহজ সরল। এর পিছনে যে সাগরের অবদান আছে তাতে সন্দেহ নেই। সুরেশ্বর বলল, ' মোটামুটি ভালই আছি। আমি তো আর আগের মতো নেই ... আপনি অন্যরকম করে দিয়েছেন আমাকে ... ওদিকের পাড়াতেও আর যাই না ... ঘর সংসার ছেলেপিলে ... মানে, দুটো সোমত্ত মেয়ে রয়েছে ... এখন আর ওসব নয় ... 'সাগর বলল, ' হমম্ ... তা ভাল ... 'সুরেশ্বর ভয় পাচ্ছিল সাগর আবার সেদিনকার মতো কঠিন বাংলা না বলে। নিমগ্ন টিমগ্ন কি সব বলছিল সেদিন ... সে ঘোর মনে হয় কেটেছে।সাগর বলল, ' পটলের দোকানে যাব ... আপনি কোনদিকে ? '----- ' ওই... একটু হাতিবাগানের দিকে যাব ... জলযোগের দই কিনব একটু ... '----- ' জলযোগ তো ফড়িয়াপুকুরের ওখানে ... '----- ' হ্যাঁ ... ওই ফড়িয়াপুকুরেই। বলছিলাম যে, আমার বড়মেয়ে ... ওই যে আপনি আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা ... রাত্তিরবেলা ... '----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... এখন ভাল আছে তো ? '----- ' হ্যাঁ, তা আছে ... বলছিলাম যে ... আজকে ওর জন্মদিন ... কোন দিন কিছু করতে তো পারিনি ... তাই এবার একটু ইচ্ছে হল ... মানে, সন্ধেবেলায় যদি সময় করে একটু আসেন ... খুব আনন্দ পাব ... দু চারজনকেই বলেছি ... বেশি কেউ তো আমার মতো লোকের সঙ্গে মেশে না ... ইয়ে ... '----- ' এ তো খুব আনন্দের ব্যাপার... আপনি এত দোনামোনা করছেন কেন ? আর কেউ যাক না যাক, আমি যাবই এবং জলযোগের দই খাবই ...নিশ্চিন্তে থাকুন ... '----- ' হ্যাঁ ... এটা জানতাম ... অনেক ধন্যবাদ ... রাস্তার মধ্যে বললাম অপরাধ নেবেন না ... '---- ' আরে ... মল্লিকবাবু, কি যে বলেন ! আপনি কি জানেন না, রাস্তাই আমার ঘরবাড়ি। 'সুরেশ্বরবাবু বিগলিতভাবে বললেন, ' তা অবিশ্যি ঠিক ... কি আর বলব ... 'ওরা কথা বলতে বলতে পটলের দোকানের সামনে পৌঁছে দাঁড়াল। সাগর পকেট থেকে রুমাল বার করে গলার, মুখের ঘাম মুছল। রোদের বড় তাপ। জ্বালিয়ে মারছে।সুরেশ্বর কি একটা বলতে যাচ্ছিল। বোধহয়' তা'লে ওই কথা রইল ... এখন তা'লে আসি ... ' গোছের কিছু একটা বলে ফড়িয়াপুকুরের দিকে দইয়ের সন্ধানে পা বাড়াবার কথা ভাবছিল, এমন সময়ে হন্তদন্ত হয়ে উদ্বিগ্ন মুখে এক ভদ্রলোক এসে হাজির হলেন ওখানে।সাগর বলল, ' আরে অভয়দা ... কি ব্যাপার ? এত ঘামছ কেন ... কি হয়েছে ? বস বস দোকানে বস ...পটল দোকানের ছোট ফ্যানটা চালিয়ে দিল, যা সচরাচর চালানো হয় না।ছাপোষা মানুষ অভয়চরণ পাল দোকানের ভিতরে একটা টুলে গিয়ে বসল। দরদর করে ঘামছে।সুরেশ্বর মল্লিকও কৌতূহলবশত সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন।সাগর অভয়ের সামনে বসে জিজ্ঞাসা করল, ' কি হয়েছে বলুন তো ... 'অভয় পাল কোন কথা না বলে তার হাতের ঝোলা থেকে একটা লম্বা মতো খাম বার করে সাগরের দিকে বাড়িয়ে ধরল।----- ' কি এটা ? ' সাগর খামটা হাতে নিয়ে বলল।----- ' উকিলের চিঠি। রেজিস্ট্রি ডাকে এসেছে ... '----' কী আছে কী এতে ? '----- ' পাড়ার পাঁচুগোপাল সরকারকে দিয়ে পড়িয়ে জানতে পারলাম যে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির তরফে উকিল চিঠি পাঠিয়েছে। তাতে নাকি লেখা আছেসাতদিনের মধ্যে আমরা যদি তাদের তার মক্কেলের ঘরের বৌকে স্বামীর কাছে ফেরত না পাঠাই তা হলে আমার বিরুদ্ধে আইনের কি সব ধারা অনুযায়ী কড়া কড়া সব অপরাধমূলক ব্যাপারে ফৌজদারি মামলা রুজু করা হবে। পাঁচুগোপাল বলল, এতে নাকি আমার হয়রাণির শেষ থাকবে না কোর্ট কাছারি করতে করতে। মামলায় হেরে গেলে মেয়েকে তো ওদের কাছে ফেরত পাঠাতেই হবে এবং তাদের ঘরের বৌকে অপহরণ এবং গুম করার অপরাধে আমাদের বাড়ির সবাইয়ের জেল হাজতও হতে পারে। সাত দিনের মধ্যে এ চিঠির উত্তর না দিলে কোর্ট থেকে পেয়াদা আসবে .... এসব শুনে তো আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সাগরবাবু ... ছাপোষা লোক আমি ... এসব কান্ড পড়ল তো পড়ল আমারই কপালে ... সব গ্রহের ফের ... ওঃ ... 'সাগর সব শুনে কপালে চাপড় মেরে বলল, ' যাচ্ছলে ... এ তো পরের ছেলে পরমানন্দ, যত উচ্ছন্নে যায় তত আনন্দ। কোথায় ভাবলাম বেশ একটা জমাটি অ্যাকশান হবে, তা না যত সব ইকড়ি মিকড়ি চাম চিকড়ি। এসব তো ভদ্দরলোকেদের ফেরেব্বাজি ... পাঁচমিশেলি ঘ্যাঁট রান্না। যাক অভয়দা ... তুমি ওসব চিন্তা কোর না। তুমি এক কাজ কর। আমাকে একটা দিন সময় দাও ... একটা উকিল ধরতে হবে আগে। সে চিঠি চাপাটিগুলো করবে। বাকি ব্যাপারটা আমি সামলে নেব। কিন্তু ... মুশ্কিল হচ্ছে খরচাপাতির ব্যাপারটা। উকিল তো টাকা নেবে .... ঠিক আছে তুমি ওসব নিয়ে ভেব না ... দেখি আমি আ...মি ... হুঁ উ উ ... হাঁ হাঁ হাঁ ... আ... ই ... কত যেন, কত যেন .... দূর শালা ... ও হ্যাঁ ... ঠিক ... উনত্রিশ নম্বর কর্ণওয়ালিস স্ট্রিট, শ্রীমানি বাজারের কাছে ... একদম একদম ... মনে পড়ে গেছে ... 'অভয় হাঁ করে তাকিয়ে আছে সাগরের মুখের দিকে। পটল বলল, ' সাগরদা কি হল তোমার ... উল্টাপাল্টা বকছ কেন ? নাও জল খাও... 'সাগর ওর কথায় কোন কর্ণপাত না করে আপনমনে বলল, ' অ্যাডভোকেট অলোকেন্দু মিত্র। মেয়ের নাম সুমনা মিত্র .... ঠিক ঠিক ঠিক ... 'সাগর অভয় পালের কাঁধে হাত দিয়ে বলল, ' ঠিক আছে ... তুমি বাড়ি যাও অভয়দা ... আমি আজ রাত্রে কিংবা কাল সকালে তোমার সঙ্গে দেখা করব। এই খামটা আমার কাছে থাক এখন ... ' সুরেশ্বর মল্লিক বিস্তর উকিল মুহুরী ঘাঁটা লোক। সে তো সারা জীবন এই সবই করেছে। সে এতক্ষণ কৌতূহলী দৃষ্টিতে এর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটার আন্দাজ পাওয়ার চেষ্টা করছিল। তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বিষয়টা ঠিক ঠিক বুঝে নিল।এতক্ষণ চুপচাপ ছিল। এবার এই কথাগুলো ছুঁড়ে দিল ---- ' যদি কোন ফৌজদুরি উকিল লাগে বলবেন ... অসুবিধে হবে না ... পয়সার কথা চিন্তা করবেন না ... 'সাগর বলল, ' তা'লে তো খুবই ভাল। আপনি কাল সকাল এগারোটা নাগাদ একবার এখানে আসুন। আপনাকে জানাব ... 'সুরেশ্বর বলল, ' তাই হবে, কোন অসুবিধে হবে না ... কিন্তু আমার মেয়ের জন্মদিন ... আজ সন্ধেবেলা ... 'সাগর বলল, ' যাব তো ... জলযোগের দইয়ের লোভ কি সামলানো যায় ... ' ( চলবে )********************************************
    নমোসম্ভব কাব্য - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | লঙ্কায় তখন প্রচণ্ড যুদ্ধ। রামচন্দ্র হেবি বেকায়দায়। মোটাভাই বেআইনীভাবে ইন্দ্রজিৎকে মেরেছে বলে রাক্ষসরা হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে বলছে। সমস্যা সেটা নয়, হেগে তো ওরা বড়া ভাজবে। গোটা প্যানেলটাই আর্যদের, ওখানে রাক্ষসরা কখনও জিতবেনা। সমস্যা হল, পাবলিক এই সব খুচরো জিনিস নিয়ে বহুত ঝামেলা পাকায়। সেবার বালি-সুগ্রীবের বাওয়ালে বালিকে পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে, এক ফচকে ছোঁড়া ছড়া কেটেছিল, "তুমিও বানর, আমিও বানর, তফাত শুধু ল্যাজনাড়ায়", সেটাই ভাইরাল। এবারও মধু বলে কোন এক কেরেস্তান রামের হাতে বাটি ধরিয়ে দিয়ে মিম বানিয়েছে "আমি কি ডরাই কভু ভিখারি রাঘবে?"। আদেখলা পাবলিক দেখছে আর শেয়ার করছে। দুই দিনেই দেড় কোটি ভিউ। ব্যাটাকে ঢিট করতে রামিও স্কোয়াড বা বজরঙ্গী ভাইজান কাকে নামাবেন ভাবছেন, এমন সময় আর এক দুঃসংবাদ। সুষেণ এসে বিটকেল মুখ করে বলল, রাবণ ফাঁকতালে মোটাভাইকে পাইয়ে দিয়েছে মহারাজ। এখন-তখন অবস্থা।শুনে তো রামচন্দ্রের মাথায় হাত। শূর্পনখার নাক কাটা থেকে, ইন্দ্রজিতকে নিকেশ পর্যন্ত, যত অপকর্ম সবই তো একে দিয়েই করিয়েছি। এবার কী করা যায়? আর তো রক্ষে নেই। রামচন্দ্র ধনুক টনুক ফেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। সুষেণ মিউমিউ করে বলল, মহারাজ একটা উপায় হতে পারে। কিন্তু তার জন্য একটু অনুসন্ধান লাগবে। - কী উপায়?- বিশল্যকরণী বলে এক ওষধি আছে। লাগালেই মোটাভাই আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।রামচন্দ্র ধড়মড় করে  উঠে বসে বললেন, তা এখানে বকবক করছ কেন, লাগাও।সুষেণ বিড়বিড় করে বলল, সে কি আর মুখের কথা। সে বস্তু আছে অনেক দূরে গন্ধমাদন পর্বতে। যেতে-আসতে সময় লাগবে। ততদিনে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে।কোনো উপায় কি নেই? রামচন্দ্র সব ব্যাটাকে ডেকে পাঠালেন। কোনো কাজে তো লাগেনা, একটু পরামর্শ অন্তত দিক। শুনে টুনে হনুমান বলল, আমি হেবি লাফাতে পারি স্যার। যদি অনুমতি দেন তো যাব আর আসব।এত ভালো তো ভালো না। রামচন্দ্র সন্দিগ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তা বাবা টিএ বিলে ক পয়সা পড়বে? হনুমান বলল, কী যে বলেন স্যার। আপনার আমার অচ্ছেদ্য বন্ড। নতুন আর কী লাগবে। আপনি শুধু একটু দেখবেন, তাহলেই হবে। যেমন কথা তেমন কাজ। হনুমান লাফ দিয়ে চলে গেল অনেক দূরে। ভেবেছিল এ এমনকি ব্যাপার। কিন্তু গিয়ে দেখে, সব অপরাধীরই যেমন দুটো পা, সব মানুষেরই যেমন দুটো হাত, সব গাছেরই তেমনই সবুজ পাতা। এর মধ্যে বিশল্যকরণী পাবে কোথায়। জীবজন্তুরাও তেমন। পাখিদের জিজ্ঞাসা করতে তারা বলে পিউপিউ। ছাগলদের জিজ্ঞাসা করতে তারা বলে ব্যা। সহযোগিতার নামগন্ধ নেই। কিন্তু হনুমান তো হনুমানই। এর আগে ল্যাজে আগুণ দিয়ে লঙ্কা জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাকে ঠেকায় কে। খুঁজে না পেয়ে আস্ত গন্ধমাদনটাই উপড়ে নিল। চারদিকে হইচই পড়ে গেল। হরিণ বলে আমার বাড়ি কোথায় গেল। পাখিরা বলে বসব কোথায়। বর্বর লোকেরা বলল, চাষের জায়গা না থাকলে তো না খেয়ে মরব। কিন্তু হনুমান ততক্ষণে যা করার করে পগারপার।ওদিকে ততক্ষণে রামচন্দ্র খুবই অস্থির। যাব আর আসব বলে গেল, আসেইনা। হঠাৎ ঘাড়ে আস্ত পাহাড় নিয়ে  হনুমানকে আসতে দেখে তো তিনি হাঁ। করেছিস কী ব্যাটা। হনুমান ঘাড় থেকে পাহাড় নামিয়ে বলল, হেঁহেঁ, এ আর এমন কি।রামচন্দ্র ঘাড় ঘুরিয়ে সুষেণকে ডাকতে যাবেন, এমন সময় হনুমান আবার বলল, স্যার। - এবার কী? - আমার ব্যাপারটা দেখবেন বলেছিলেন যে। তাও তো বটে। রামচন্দ্র এক কথার মানুষ। সন্তুষ্ট হলে যে যা চায় তাকে তাইই দিয়ে দেন। হনুমানের মাথায় হাত ঠেকিয়ে বললেন, যা, তোকে হাইকোর্টের জজ করে দিলাম। সেই থেকে জগতে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হল।
    মাননীয়  - Eman Bhasha | মাননীয় শব্দ নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। মাননীয় তো নয় Honourable ! ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি গঠিত হয়। এর আগে ঔপনিবেশিক সরকারে কাজ করা বাবুরা নিজেদের জেন্টলম্যান বলে আখ্যায়িত করে নিজেদের হর্ষ বর্ধন করেন। বাকি দেশিয়রা ছোটলোক- নেটিভ। তাঁরা কেবল জেন্টলম্যান। ভদ্রলোক। ১৮৬১ তে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে যে চার ভদ্রলোক ঠাঁই পেলেন তাঁরা নিজেদের পেডিগ্রি এক ধাপ তুলতে চাইলেন। তাঁরা  চাইলেন নতুন শব্দ। ইতিমধ্যে সভা-সমিতার সভাপতি, পত্রিকা সম্পাদক, শিক্ষকদের উদ্দেশে মাননীয় শব্দ ব্যবহার সমাজে অল্পবিস্তর চালু হয়ে গেছে।এদিকে ইউরোপিয়ান সদস্যরাও জেন্টলম্যান বলে নিজেদের খাটো করতে চান না।অতএব ইংলিশ পার্লামেন্টের অনুসরণে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে আইন করা হল কাউন্সিল সদস্যরা এবার থেকে honourable.বাবলু দাদা তো ব্রিটিশদের লোক।অতএব অনারেবল না বলা ভারি অলেহ্য কথা।ঋণ: ঐতিহাসিকের নোটবুক।।সিরাজুল ইসলাম২০২১
  • ভাট...
    commentঅরিন | আজ, এই প্রথমবার, ANZAC সার্ভিসের দিনে যখন লাস্ট পোস্টের বিউগল বাজছিল, আমি অনুভব করলাম আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। সন্তর্পণে সেনোটাফের গোড়ায় একটা লাল পপি রেখে এলাম। 
    এই বছর আমি প্রথম আবিষ্কার করলাম যে আমার নিজের মামা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একটি হ্যাভিলাণ্ড এয়ারক্রাফটে বম্বার পাথফাইণ্ডার হিসেবে কাজ করতে করতে যুদ্ধে মারা যান, খুব সম্ভবত সে আমলের একমাত্র বিলেতে ভারতীয় বাঙালী বৈমানিক। এডিনবরার বটানিকাল গার্ডেনে তাঁর একটা ফলক রাখা আছে।
    তাঁকে নিয়ে পরিবারে কখনো কথা হয়নি। এই বছর এখানকার এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে কি কারণে কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস এর ডাটাবেস খুঁজতে গিয়ে এই চমকপ্রদ তথ্যটি আবিষ্কার করি। 
    তিনি যখন যুদ্ধে শহীদ হন, আমার মা তখন নেহাৎ শিশু, মা কিছুই প্রায় জানে না। আর তো কেউ বেঁচে নেই।
    সে এক মর্মস্পর্শী  আবিষ্কারের গল্প, এখানে পরে কখনো করব। 
    লাস্ট পোস্টের বিউগল যে সাংঘাতিক, আজকে মর্মে মর্মে অনুভব করলাম।
    commentঅরিন | অরিত্র, আপনি যে কথাটা লিখেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে restorative justice এর ব্যাপারটা উঠছে ।https://en.m.wikipedia.org/wiki/Restorative_justice
    মানুষ অপরাধ করেছে মানেই যে তার আর কোন redemption এর পথ থাকবে না, তা তো হতে পারে না। বিচার এবং শাস্তি ন্যায়বিধানের অঙ্গ, সামাজিক ন্যায় তার সবচেয়ে বড় দিক।  ন্যায়বিচার কিন্তু প্রতিশোধ নয়। যেভাবে জি এন সাইবাবার মতন মানুষ রা শাস্তি পান, সেখানে রাষ্ট্র বা সমাজ প্রতিশোধমূলক আচরণ করেন সেটা তো সভ্য সমাজের অঙ্গ নয়। এরা যে আট বছর খাটল, তার যাবতীয় পারিশ্রমিক কেটে নেবার অধিকার কে কাকে দিয়েছে? 
    যদি 'শাস্তিই দিতে হয়', এমন ব্যবস্থা করা হোক, যারা। দোষী, যারা অপরাধ স্বীকার করবে, তাদের ডিমোশন হোক, তাদের পুনরবাসনের ব্যবস্থা হোক, ট্রেনিং হোক। 
    এটাই regenerative process, একবিংশ শতকের মানবতার প্রতীক।
    প্রতিহিংসা নয়, হোক মানুষের প্রতি বিশ্বাস এবং চেতনার উন্মেষ।
    মূল সমস্যার দিকটা নিয়ে বরং ভাবি। যে সিস্টেমটা একে জিইয়ে রাখবে, চলুন তাকে পাল্টাই। 
     
    commentঅরিন | অরিত্র সউরভিআনি কথাটা ভেবে দেখা যেতে পারে।
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত