এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    ইদবোশেখির লেখাপত্তর - গুরুচণ্ডা৯ | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়শীতকাল বইমেলা হইচই-এর দিনকাল ফুরিয়ে এসে গেল শান্ত হয়ে বসে লেখালেখির কাল। বাইরে তাপমাত্রা বাড়ছে রোদ্দুরের জন্য, নির্বাচনের জন্য। সাথে কোথাও প্যাচপ্যাচে ঘাম তো কোথাও ঝরঝর বৃষ্টি। সন্ধ্যের আবছায়ায় দোকানে ভিড় জমায় সারাদিন রোজা রাখা ক্লান্ত মানুষ, গাজনের প্রস্তুতি নেওয়া শ্রান্ত মানুষ, চৈত্রসেলের হাতছানিতে মুগ্ধ মানুষ। টুপটাপ জমে ওঠে গল্পেরা, কবিতারা। নির্বাচনী জনসভার কোণাকাঞ্চিতে, ইফতারির থালার পাশে, গাজনের সন্ন্যাসীর ঝোলায় চুপটি করে অপেক্ষা করে তারা মানুষের জন্য। আমরা আপনাদের কাছে ডাক পাঠিয়েছিলাম তাদের খপ করে ধরে ফেলে, ঝপ করে লিখে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে। এসে গেছে তারা। আগামী কয়েকদিন ধরে রোজ দুটি-তিনটি করে তারা এসে হাজির হবে বুলবুলভাজার পাতায় - টাটকা ভাজা, গরমাগরম। পড়তে থাকুন। ভাল লাগলে বা না লাগলে দুই বা আরো অনেক লাইন মন্তব্য লিখে জানিয়ে দিন সে কথা। মন চাইলে, গ্রাহক হয়ে যান লেখকের। আর হ্যাঁ, আপনিও লেখা নিয়ে চলে আসুন গুরু আর চন্ডালের আড্ডা গুরুচন্ডা৯-র পাতায়।সূচীপত্রঃস্মৃতিচারণবর্ষশেষ, বর্ষশুরু: অমিতাভ চক্রবর্ত্তীও চাঁদ: সেমিমা হাকিমসারেতে থাই নববর্ষ: হীরেন সিংহরায়কাব্যজলের সমাধি: জগন্নাথ দেব মন্ডলগিরগিটি ও অন্যান্য কবিতা: ফরিদাসমুদ্রে সনেট: সোমনাথ রায়পাঁচটি কবিতা: অমিতরূপ চক্রবর্তীতিনটি কবিতা: অরিত্র চ্যাটার্জিউপগ্রহ: অমিত চট্টোপাধ্যায়আব্বু আব্বা বাবা: মাজুল হাসানগপ্পোখুচরো: সুমন মুখার্জীসুফি: আফতাব হোসেন রতন, দ্য ব্যাকবেঞ্চার: নরেশ জানাডাক দিয়ে যায়: এস এস অরুন্ধতীমহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও মার্কণ্ডেয়র চিঠি: রমিত চট্টোপাধ্যায়পাখির অন্তর্ধান রহস্য: মৃণাল শতপথীএই ঘুম শারীরবৃত্তীয়: দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ওয়েথসাম: উপল মুখোপাধ্যায়কোশিশ কিজিয়ে: কিশোর ঘোষালটুনিমুনির জীবন: দময়ন্তীনভেলাফকির ফয়জুল্লাহ: মুরাদুল ইসলামনিবন্ধ আজ নববর্ষের আখ্যান: সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
    টুনিমুনির জীবন - দময়ন্তী | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়১) ‘আমি কক্ষনো অন্য কারুর জন্য কাঁদি নি জানো। যতবারই কেঁদেছি তা কেবল নিজের জন্য, নিজের না পাওয়া, ক্ষোভ, দুঃখ থেকে চোখে জল এসেছে। বাবা মা মারা যাওয়ার পরেও না, দাদা বৌদি সম্পর্ক কেটে চলে যাওয়ার পরেও না।‘ প্রায় একদমে বলে ফেলে একটু থমকে যায় ও, আঁচল ঘুরিয়ে এনে মুখটা মোছে। মাঝারি হাইটের গাঁট্টাগোট্টা মেয়েটির নাম দেওয়া যাক ‘আমি’। এখানে গরম একেবারেই নেই, বরং বাতাসে একটা হালকা শিরশিরে ভাব। ঘাম হওয়ার প্রশ্নই নেই। সকলের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে আবার আস্তে আস্তে বলে ‘কেউ মারা গেলে আমার ঠিক কান্না পায় না, কেমন যেন বুকের খাঁচাটা ছোট হয়ে যায়।‘ ‘আমি’র মনে হয় এবারে থামা দরকার, একদম অচেনা লোকদের কাছে অনেক কিছু বলে ফেলেছে। থেমে যায় ও। কয়েক সেকেন্ড কেউ কোন কথা বলে না। ‘তুমি যেমন অন্যের জন্যে কাঁদো নি কখনো আমার ঠিক তার উলটো। আমি নিজের লোকদের জন্য মাসের পর মাস কেঁদেছি, পাড়ার লোক যাদের রোজ দেখি তাদের কারুর কিছু হলেও কেঁদেছি। এমনকি কাগজে, টিভিতে কোথাও আগুন লেগে, জলে ডুবে, বিল্ডিং ভেঙে, ঝড়ে বন্যায় মানুষ মারা যাবার খবরেও হাউ হাউ করে কেঁদেছি। সেই থেকেই আমার নাম হয়ে গেছে খোলাকল। অন্যের জন্য এত কেঁদেছি যে নিজের জন্য আমার একটুও কান্না পড়ে নেই আর।‘ বলেই ডানহাতটা মুখেচোখে বুলিয়ে নেয় একবার, যেন দেখে নিচ্ছে সত্যিই জল নেই চোখে। হাত টান করে ছড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙে, মাথার খামচি ক্লিপ খুলে চুলে আঙুল চালিয়ে আবার ক্লিপ আটকে দেয়। হাঁটুর ভাঁজ খুলে পা ছড়িয়ে বসে। লম্বা চওড়া খেলোয়াড়ি ধরণের চেহারার মেয়েটির নাম দেওয়া যাক ‘তুমি’। সে মুখে একটা মিচকে হাসি ঝুলিয়ে চুপচাপ দেখছিল এদের। আমি বা তুমি কেউ কোন কথা বলছে না দেখে আস্তে করে গলা খাঁকারি দিল। তারপর মিচকে হাসিটা চোখের মণিতে ধরে রেখে বলল ‘না বাবা আমার অমন কোন নিয়ম কানুন নেই। আমি কান্না পেলেই কাঁদি, সে নিজের লোক হোক আর পরের। তবে কান্না টান্না আমার বিশেষ পায়ই না। হাসি ... হাসিই আমায় খেলো জানো। সেই সেবারে বোনটা শ্বশুরবাড়িতে মরে গেল আর বোনজামাই গড়াগড়ি দিয়ে কানছিল, সবাই বলল জামাই খুব ভালবাসত বোনটাকে। আমার হাসি পেয়ে গেল জোরে। সে এমন হাসি কিছুতেই আর থামাতে পারি না গো। হাগার বেগ এলে যেমন লোকে দৌড়োয় ওইরকম জোরে আমার হাসির বেগ আসে। ‘চিকমিকে মিচকে হাসিটা কি একটু ফ্যাকাশে দেখায়? রোগা হিলহিলে চেহারার এই মেয়েটার নাম দিই বরং ‘সে’। ২) সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা ছোটবড় গাড়িগুলো আর রাস্তাজুড়ে দাঁড়িয়ে বসে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে একটু চাঞ্চল্য দেখা দেয়, উল্টোদিক থেকে আপেলের ট্রাক আসছে। গুড়গুড়িয়ে পা টিপে টিপে আসছে বটে, কিন্তু বেশ বড়সড় আটচাকার ট্রাক। একটা নয় পরপর ছ’টা গেল। লাইনের সামনের দিকের তিন চারখান টেম্পো ট্রাভেলারের চালকেরা নিজেদের আসনে উঠে বসে যাত্রীদের দ্রুত গাড়িতে উঠতে বলে। ওদিকটা ছেড়েছে যখন, এদিকটাও ছাড়বে হয়ত শীগগির। ম্যাগির দোকানটায় ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যারা চা অথবা ম্যাগী অর্ডার করেছিল খোঁজ নিতে থাকে কতক্ষণ লাগবে আরো। যাদের কেনাকাটা শেষ তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে কিউয়ার কোডের ওপরে, খুচরো ফেরত নেওয়ায়। পঞ্চম গাড়ির চালক, প্রায় বাচ্চা একটা ছেলে তখনো দরজায় এক পা রেখে সামনে কি যেন দেখছিল, বলে নাহ এদিকের লাইন এখন ছাড়বে না। সামনের পুলিশ চেকপোস্টে দুজন পুলিশ রাস্তা থেকে সরে এসে পাশে রাখা চেয়ারে আবার বসে পড়েছে। বাকী চালকেরাও আবার নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। একটু পেছনে বাঁকের মুখে বাঁদিকের পাহাড় থেকে নেমে এসেছে বেশ ভরন্ত চেহারার একটা ঝরণা, সেখানে তখনো নানা ভঙ্গীতে ছবি নেওয়া চলছিল। গাড়ির লাইন এখন ছাড়বে না বুঝে কয়েকজন ভিডিও করা শুরু করল। তুমি একটু বিরক্তমুখে গজগজ করে ‘এমন সুন্দর ঝর্ণাটার একটা ফোটো নেবার জো নেই এদের জ্বালায়! দুদ্দুর!।' পাশ দিয়ে যেতে যেতে একজন ধুমসো জ্যাকেট পরা লোক বলে যায় ‘আরে দিদি মানুষও তো প্রকৃতির অংশ, তাকে বাদ দিলে চলবে কেন।' সে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে আর তুমির ভুরুজোড়া একেবারে কেন্নোর মত দলা পাকিয়ে যায়। সেদিকে তাকিয়ে ধুমসো জ্যাকেট চটপট পা চালিয়ে এগিয়ে যায়। আমি আঁচলটা টেনে কোমরে গুঁজে পুলিশচৌকির দিকে হাঁটা দেয়, হাসতে হাসতে সে’ও তার পেছনে যায়। ওদের সাথে যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতেই তুমি শোনে ভিকি, ওদের গাড়ির চালক বলছে ‘পোলিসচৌকিমে আচ্ছেওয়ালে সাফা টয়লেট হ্যায়।' ও এইজন্যই আমি গেল, অনেকক্ষণ থেকেই গুনগুন করছিল বটে। যতদূর চোখ যায় রাস্তার একপাশ জুড়ে সারি দিয়ে দাঁড়ানো ট্রাক ভ্যান আর গাড়ির কাতার। এগিয়ে পিছিয়ে গুণতে শুরু করে তুমি। ‘করিব ঢাই তিনশো হোগা ম্যাডামজি’ – ভিকি জানায়। ওদের গাড়িতে আরো দুজন ছিল, পঞ্চাশ পঞ্চান্ন বছরের দুজন লোক। তারা গেল কোথায়? ভিকি হাত উলটে দেয় ‘ক্যায়া পাতা, হোঙ্গে ইধার উধার কঁহি।' সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে দাঁড়ানো, এখন বাজে বিকেল সাড়ে তিনটে। সামনে ধ্বস নেমেছে ফলে রাস্তা বন্ধ। মিলিটারি এসে গেছে সারাতে, সারানো হলে ছাড়বে গাড়ি। ওদিক থেকে দুই ক্ষেপে কয়েকটা আপেলের ট্রাক এসেছে কেবল। ৩) এবড়ো খেবড়ো পাথরের ধাপ বেয়ে বেয়ে অনেকটা উঁচুতে ঝর্ণাটা যেখানে পাথরের ছোট্ট খোঁদল থেকে চলা শুরু করেছে তার পাশে থেবড়ে বসে ও নীচের দিকে দেখছিল। এদিকটা দিয়ে সবসময়ই দুপেয়েরা যাতায়াত করে, শীতবুড়ো যখন ধবধবে সাদা অন্ধকারের পর্দা ঝুলিয়ে দেয় চারপাশে তখনো এরা এদের বয়ে নিয়ে যাবার জন্তুগুলোর সামনে দুটো চারটে নকল সূর্য লাগিয়ে নুন ছেটাতে ছেটাতে চলে। ওদের বয়ে নেবার জন্তুগুলোও নকল। দুপেয়েরা চালালে তবেই চলে, থামালে থামে। শীতবুড়োর এদিকে আসতে এখনো দেড় কুড়ি রাত্তির বাকী, এইসময়টায় দুপেয়েদের চলাফেরা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু আজ কদিন ধরে এরা সব এখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়ছে। কী ব্যপার কে জানে! ওদের দলটা আরেকটু উপরে গেছে, উপরের ঘাস শুকিয়ে আসছে খুব তাড়াতাড়ি। তার আগে যতটা জমা করে নেওয়া যায়। কয়েকটা ছোট বড় মেঘ নিজেদের মধ্যে জটলা করছিল পাশের জাঙ্গালের কিনারা বরাবর। ও ঘাড় তুলে তাকাতেই পাতলা চেহারার সাদা মেঘ বলে ‘শুনেছ মা’য়ের চিঠি এসেছে।' ওর মাথায় তখনো দুপেয়েদের জমা হওয়ার ব্যপারটা ঘুরছিল, একটু থতমত খেয়ে জিগ্যেস করে ‘কার মা?’ মোটাসোটা কালো মেঘ চোখে বিদ্যুৎ ঝিলকিয়ে রাগী মুখে বলে ‘কার মা আবার কেমনধারা প্রশ্ন? আমাদের সবার মা। আজ সূর্যদাদু বাড়ি পৌঁছে যখন বিশ্রাম নিতে বসবে মা তখনই সব আবার উল্টেপাল্টে সাজাবে। এই ঘর দুয়ার পাথর মাটি সব নেড়েচেড়ে ঠিক করে সাজাবে বলে লিখে পাঠিয়েছে। বিপাশা আর শতদ্রুর অবস্থা খুব খারাপ। দুপেয়েরা এমন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে যে ওরা ঘোর বর্ষাতেও পাশ ফিরবার জায়গা পায় না। আর বিপাশার জানই তো একটু নেচে নেচে চলা অভ্যাস বরাব্বর।'তা সত্যি কথা। শতদ্রু এমনিতে শান্ত হলেও তারও তো একটু এপাশ ওপাশ করতে লাগে। কিন্তু এই যে দুইকুড়ি রাত্তির আগে বিপাশা আর মা সব এলোমেলো করে ওদের জন্য রাস্তা বানিয়ে দিল? ‘হ্যাঁ, কিন্তু তাতেও দুপেয়েদের শিক্ষা হল কই! সেই আবার পাথরগুঁড়ো গুলে গুলে বেঁধে রাখছে এদিক ওদিক সব পথ। দুপেয়েগুলো বড্ড বিচ্ছিরি প্রাণী' নীচের পাথর ফিসফিসিয়ে বলে। পাশের পাথরটা অমনি বলে ‘না না সব দুপেয়ে খারাপ নয়। ওই যে একলা আসে একজন, সে তো কেমন চুউপ করে বসে থাকে, কাউকে উৎপাৎ করে না। তারপরে সেই যে কারা সব ঘুরে ঘুরে পাহাড়ের খাঁজে খোঁজে ছোট্ট গাঁওগুলোতে দুপেয়েদের বলছিল সবাই মিলে রুখে দাঁড়াতে,পাহাড়ে এত বাঁধাবাধি করায় বাধা দিতে।' হাল্কা একটা সাদাকালো মেঘ ফিক করে হেসে বলে ‘সবাই তো ভয়েই মোলো ওরা, রুখে আর দাঁড়ালো কই?’ ৪) ‘চল চল সবাই এ পাহাড়খানা টপকে আমাদের ওপাশের ঢালে নেমে বুগিয়াল পেরিয়ে পরের পাহাড়ের জাঙ্গালে উঠে যেতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। শীগগির শীগগির পা চালাআ আ ও ও।' সর্দারবুড়োর গলার আওয়াজে চমকে ওঠে ও। ওদের পুরো দলটাই নেমে এসেছে কখন যেন। বক্রশৃঙ্গকে দেখে এগিয়ে যায় ও, কিছু জিজ্ঞাসা করার আগে বক্রশৃঙ্গ নিজেই বলে ‘চল অনেকটা রাস্তা যেতে হবে, দেরী করলে চলবে না।' ও বলে ‘এত তাড়াহুড়ো কেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।' ‘আরে শোনো নি, মা জানিয়েছে যে আজ তান্ডব হবে। যেতে যেতে বলছি সব।' ‘আরে সেটাই তো বলছি, মা তোমাদের কখন কোথায় জানালো?’ ওর কথায় প্রায় গোটা দলটা হেসে ওঠে। ‘কি বোকা দেখো। এই যে পাথরগুলো টপকাচ্ছ, একটু থেমে দেখো ওরা খুব আস্তে আস্তে কাঁপছে নড়ছে, গাছের পাতাগুলো দেখো, মেঘেদের দেখো। সবাই বলছে।' উপরে উঠতে গেলে আগে নীচে নামতে হবে এখানের এই নিয়ম। হালকা পাতলা সাদা মেঘেরা ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছে ওই দক্ষিণের দিকে। ওদের জায়গা নিচ্ছে মুশকো মুশকো কালো গাব্দাগোব্দা মেঘেরা। সূর্যদাদুকে ঢেকে ফেলল কয়েকজনে। ও দেখল নীচের দুপেয়েরা কয়েকজন ঘাড় উঁচিয়ে চোখের উপরে হাত রেখে সূর্যদাদুকে দেখার চেষ্টা করছে। কয়েকজন আবার গায়ে মাথায় একগাদা রঙচঙে কিসব চাপিয়ে নিচ্ছে। অনেক নীচের উপত্যকা থেকে পাক খেয়ে উঠে আসছে হু হু বাতাস, মেঘেদের সাথে লুটোপুটি করে ঠান্ডা মেখে নিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে আনাচে আনাচে। নীচে এক মাদী দুপেয়ে মাথায় দুই তিন পরত করে জড়িয়েছে যে জিনিষটা, সেটাকে দেখে খুব চেনা চেনা লাগে। কিন্তু জিনিষটা কী বুঝে উঠতে পারে না ও। মেজ সর্দার ফিসফিস করে বলে ‘ইয়াঙ্গির, আমাদেরই কারুর শরীর থেকে নিয়েছে।' পুরো দল তড়বড়িয়ে নামতে থাকে। পায়ের চাপে দুলে ওঠে পাথর, ঠোক্করে উড়ে যায় আলগা নুড়ি। একটা নুড়ি গড়িয়ে দেয় আরেকটাকে, সে আবার আরো দুটোকে। টকাটক টকাটক খটখট খটাখট আওয়াজে দুপেয়েরা তাকায় এদিক ওদিক। নীচে ততক্ষণে আমি আর সে ফিরে এসেছে গাড়ির কাছে। আকাশে যত মেঘ জমেছে ভিকির মুখেও প্রায় তত। প্রাণপণে চেষ্টা করছে ট্যুর ম্যানেজারকে ফোনে ধরতে। ওদের আরো দুটো গাড়ি অনেকটা পেছনে আছে, এদিকে নেটওয়ার্ক নেই। হঠাৎই কেমন ঠান্ডা লাগছে, জোরালো হাওয়া শুরু হয়েছে, তুমি শালটা ভাল করে মাথায় গায়ে পেঁচিয়ে নেয়। ‘আরেহ ওটা কী?’ একটা অল্পবয়সী ছেলে চেঁচিয়ে ওঠে। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে উপরে তাকিয়ে আমি দেখে একজোড়া বাঁকানো শিঙ আর একটা বাদামী ঝলক খাড়া ৫ ফুট লাফিয়ে উঠে জাঙালের ওপারে অদৃশ্য হয়ে গেল। ৫)‘আইয়ো ট্যাঙরোল! ম্যাডামজি দেখা আপনে?’ ‘ট্যাঙরোল আবার কী? এগরোল হলেও বুঝতাম।’ নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে গড়ায় সে। ‘আইবেক্স! আইবেক্স! একটা দল ছিল।' ‘লাফটা কিরকম দিল দেখলে?’ ‘ধুর আইবেক্স বসে আছে এখানে, ছাগল হবেখনে।' আরে বাবা আইবেক্স তো একরকম ছাগলই, পাহাড়ি ছাগল।’ ‘হ্যাঁ হ্যাঁ বেশ তাগড়া মাটন।' ইত্যাকার নানা কথায় এলাকা যখন গমগম করছে, ঠিক তক্ষুণি বৃষ্টিটা নামল। সূর্য ডুবে গেছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না, চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। ভিকির কাছে কল এসেছে ওদের অন্য একটা গাড়ি থেকে, ম্যানেজার সবাইকে এই মুহূর্তে ফিরতি রাস্তা ধরতে বলেছেন। ওদের গাড়ির অন্য দুজন যাত্রী ওদেরই অন্য একটা গাড়িতে উঠে গেছেন, সে গাড়ি অনেকটা এগিয়েও গেছে। তিনজনকে ঝপাঝপ গাড়িতে তুলে ভিকি চাপ দেয় অ্যাক্সিলারেটরে। বৃষ্টি বেশ চড়বড়িয়ে পড়ছে, লোকে রাস্তা ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠছে, এরই মধ্যে আরো কটা গাড়ি মুখ ঘুরিয়ে ফিরতি পথ ধরার চেষ্টায় এঁকেবেঁকে এগোচ্ছে। ‘তাহলে এগিয়ে থেকে আসলে আমরা সবার পেছনেই পড়ে গেলাম।' আমির কথায় সে খিলখিলিয়ে হেসে বলে ‘দেখো এগোন মানে আসলে পেছোনই।’ তুমি গম্ভীরভাবে বলে ‘তুমি এগিয়ে গেলে পেছনের লোক খেলা ঘুরিয়ে তোমাকে পিছিয়ে দেবে।' বৃষ্টির বেগ যত বাড়ে ভিকি তত গতি বাড়ায়, সামনেমুখো গাড়িগুলো তত বেশি করে মুখ ঘুরিয়ে পেছনমুখো দৌড়ায়। সামনে পেছনে চড়চড় দুমদাম করে তীব্র আওয়াজে পাহাড় থেকে নেমে আসছে ছোট বড় পাথর, ছোট কম মাঝারি বড়ই বেশি। সাথে সাথেই কোথা থেকে কে জানে নেমে আসছে শত ধারায় কাদামাটিগোলা জল। আকাশ চিরে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠে দেখিয়ে যাচ্ছে উপরে বাঁদিক থেকে নেমে আসা পাথর মাটির ঝাঁপ ডানদিকের খাদে। তীব্র কানফাটানো আওয়াজের সাথে গাড়ির সামনেটা ঢেকে যায় মাটি পাথরে আর ভিকির পা প্রাণপণে চেপে বসে ব্রেকের উপর। ঠিক পেছনের গাড়িটা পুরো ব্রেক ধরাতে না পারায় এসে ঢুঁসো মারে। দুলে ওঠে গাড়ি, ভিকি জানলার কাচ নামিয়ে চীৎকার করে কিছু বলে। পেছনের থেকে উত্তর আসতে না আসতে আরো পেছন থেকে তেমনি তীব্র কানফাটানো আওয়াজ আর দুই তিনজন মানুষের মর্মান্তিক আর্তনাদ। আমি খামচে ধরে তুমির হাত, তুমি দুই হাত দিয়ে দুপাশে আমি আর সে’কে জড়িয়ে ধরে। ঠকঠক করে কাঁপছে তিনজনেই। ঝলসে ওঠা বিদ্যুৎএর আলোয় দেখা যায় মাঝারি বড় পাথর আর মাটির স্তুপ নেমে এসে সামনের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে, রাস্তার চিহ্নও নেই কোথাও। জানা যায় পেছনে এরকমই পাথরের স্তুপ এসে পড়েছে একটা ছোট গাড়ির উপরে। প্রায় চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া সেই গাড়ির একজনও বেঁচে আছে কিনা সন্দেহ। ৬) রাত আটটা বাজে, বৃষ্টির এখনো বিরাম নেই। তবে পাথর পড়াটা একটু কমেছে। গত আধাঘন্টায় আর সেরকম আওয়াজ পাওয়া যায় নি। ভিকির আদেশে গাড়ির সবকটা জানলার কাচ একচুল করে নামিয়ে রাখা হয়েছে হাওয়া চলাচলের জন্য। আমি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ানর কথা বলায় প্রায় ধমকে ওঠে ভিকি। যে কোন সময় পাথর পড়তে পারে, এখন নামা চলবে না। বরং ওরা যে যার ভগবানকে ডাকুক। তুমি সঙ্গে সঙ্গেই বিড়বিড় করে কিছু প্রার্থনা করতে শুরু করে। একটু চুপ করে থেকে আমি স্বগতোক্তি করে ‘সে পাথর এসে গাড়ির ওপরেও পড়তে পারে, যেমন ওই গাড়িটায় পড়েছে।' চালক উদাসীন গলায় জানায় সে সম্ভাবনা তো আছেই, সেইজন্যই ভগবানকে ডাকতে বলা। এমনিও আজ রাত্রে তো বটেই কালকেও কতক্ষণ এখানে থাকতে হবে কেউ জানে না। মিলিটারি এসে রাস্তা বানাবে তবে বেরোন। তুমি একমনে কিছু জপ করে যাচ্ছে, আমি সে’র দিকে তাকায়। ‘আমার কোন ভগবান নেই। কোন ভগবান কোনদিন কিচ্ছু করে নি আমার জন্য, আমিও তাই আর ...’ সে নিঃশব্দে হাসে, অন্ধকারে দেখা যায় না অবশ্য। ফিসফিস করে ‘ভগবানকে অনেক ডেকেছিলাম বোনটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, বাঁচিয়ে দেবার জন্য। বিয়ের পরে য্যাতবার এসেছে একবারও শ্বশুরবাড়ি ফেরত যেতে চায় নি। মায়ের সাথে সাথে আমিও জোর করে ফেরত পাঠাতাম। আমার যা রোজগার তাতে একটা বাড়তি পেট টেনেই দিতাম। আর ও-ও কিছু না কিছু করতই। একটু যদি পিঠ শক্ত করে দাঁড়াতাম বোনটার পাশে। খুঁ খুঁ করে হাসতে থাকে সে। তুমি জপ থামিয়ে গরগর করে ওঠে ‘পিঠ শক্ত হলে আর আমায় আজ ঘরবাড়ি ছেড়ে মেয়েদের হোস্টেলে পাঁচরকম কাঁইকিচিরের মধ্যে থাকতে হয়! বাপ আর স্বামী কেমন মিলেজুলে আমায় একটেরে করে বের করে দিল। ফালতুই এদিক সেদিক দৌড়ালাম, ওদের কিচ্ছু করতে পারলাম না।' আমি একঢোঁক জল খায়। আস্তে আস্তে বলে আমি খুব মুখরা, কেউ আমায় দেখতে পারে না। মা বলত বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে সামনের দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে পিছের দরজা দিয়ে বের করে দেবে। এই বলে বিয়ের কোন চেষ্টাই করল না। আমিও মা মরে যাবার একমাসের মধ্যে মায়ের ঠাকুরের আসন তুলে বিছানা কাপড় ফেলে দিয়ে, কাঁসা তামা পেতলের বাসনগুলো আর গোপালের সোনার চোখ, সোনার মুকুট বিক্রি করে দিয়েছি।' ‘গোপালের মটুক চোখ বিক্কিরি করে দিলে?’ কাৎরে ওঠে সে। ‘হ্যাঁ দিলাম তো। লক্ষ্মী আর গোপালকে স্কচ ব্রাইট দিয়ে মেজে তাকে তুলে রেখেছি। সেই নিয়ে দিদি কত্তগুলো কথা শোনালো। কিছু উত্তর দিতে পারলাম না জানো। মুখের জন্য এত বদনাম হয়েছে অথচ ঠিক কথাগুলো ঠিক সময়ে বলতে পারি নি। পিঠের মধ্যেটা কেমন তলতলে নরম ঠ্যাকে তাই আর ...’ ৭) রাত সাড়ে বারোটা বাজে। বৃষ্টি থেমে আকাশ ভরা চিকমিকে তারা। মোবাইলের নেটওয়ার্ক একেবারেই নেই, চার্জ শেষ হবার ভয়ে তুমি তিনজনের মোবাইল ফ্লাইট মোডে রেখেছে। সঙ্গে থাকা বিস্কুট চিপস খায় সকলে, সে ব্যাগ থেকে মুড়ি আর টমাটো বের করে সবাইকে দেয়। ভিকি সামনের সিটেই লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে, অল্প অল্প নাকও ডাকছে। তুমি গুনগুন করে ‘সামনের ওই দুই ট্রাকসমান উঁচু পাথরের ঢিপি হেঁটে পেরিয়ে ওদিকে গেলে রাস্তা পাওয়া যাবে, গাড়িও থাকতে পারে দু’একটা। আমি আর সে একসাথেই হেসে ওঠে ‘ওদিকটায় হয়ত খাদ হয়ে গেছে পুরোটা।’ ‘তাহলে আর কি, এই বাঁদিকের পাহাড়ে উঠবো ওওই উঁচুতে। দেখবো কোনদিক দিয়ে যাওয়া যায়।' ‘ওরে বাবা আমার হাঁটু খুলেই যাবে।‘ কাতরে ওঠে আমি। তুমি বলে ‘আমার তো পিঠের খানিকটা নেইই। বললাম না তোমাদের তখন পিঠটা শক্ত নয় একদম।' ওদের দলটা দুই পাহাড় টপকে তিন নম্বর পাহাড়ের একদম উপরের জাঙালে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। মা যতক্ষণ সব উল্টেপাল্টে সাজাচ্ছিল ততক্ষণে ওরা দুই পাহাড় পেরিয়ে মাঝের ঘাসেভরা বুগিয়ালে একটু থেমে এই পাহাড়ের একদম চুড়োর কাছে উঠে এসেছে। এখন কয়েকদিন নিশ্চিন্ত, দুপেয়েরা আর ওদের ফটফট আওয়াজ করা নকল ঘোড়া, ভ্রররর করা চারপেয়ে নকল জন্তুদের নিয়ে এসব জায়গায় ঘুরে বেড়াতে আসবে না। শীতবুড়ো আসার আগে অবধি এই বুগিয়ালেই খাবার যোগাড় হয়ে যাবে। দুপেয়েরা না এলে ওদের লোমগুলো থেকে যাবে। গত শীতের আগে একটা মস্ত দল এলো, হাতে হাতে লম্বা লম্বা নলের মত কী যেন। তাই দিয়ে ওদের দলটাকে সেইই পাহাড়ের মাথায় খুঁজে পেয়ে গেল। অমনি দুটো লোককে পাঠিয়ে সব্বার লোম ঘ্যাস ঘ্যাস করে নিয়ে নিল। শীতকালটা ওরা কেমনি করে কাটায় বল দিকি! নিশ্চিন্ত জীবনের স্বপ্নে ঘুম গাঢ় হয় ওদের। নীচে তখন আমিদেরও চোখ লেগে আসছে। ঠিক পেছনের গাড়িটায় এক দম্পতি, তাদের সাড়াশব্দ সেই সবদিক দিয়ে আটকে যাবার সময়েই যেটুকু পাওয়া গেছিল। আমি আস্তে করে দরজা খুলে মাটিতে পা রাখে। দরজা ধরে মুখ তুলে একেবারে চুপ হয়ে যায়। আকাশে একটা মস্তবড় হীরের নেকলেস উপুড় হয়ে ঠিক ওদের মাথার উপরটায় বিছিয়ে রয়েছে। তুমি আর সে’কে ডেকে বার করে তিনজনে আচ্ছন্ন হয়ে তাকিয়ে থাকে। এত তারা আকাশে! 'আমার পিঠটা শক্ত হয়ে উঠছে জান।' ফিসফিস করে বলে সে। ‘যারা আমাকে বাড়িছাড়া করেছে, ফিরে গিয়ে তাদের আমি উকিলের চিঠি একটা দেবই।’ তুমি বিড়বিড় করে। আমি কিছুই বলে না। মনে মনে টের পায় ওর পিঠেও কেউ স্টীলের রড ভরে দিয়েছে। ঠিক করে এখন থেকে কথা বলবে একবার কি দুবার, কিন্তু তা হবে একদম মোক্ষম। তেরোশ আলোকবর্ষ দূর থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে মিচকি হাসে কালপুরুষ নীহারিকা।
    আব্বু আব্বা বাবা - মাজুল হাসান | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়শব্দহীন সাইকেল আসে৷ বেল বাজেনি ক্রিং৷ বেল বেজেছে ক্রিং। ঘরঘর করে আহ্লাদে ডেকে ওঠেনি পোষা মাদীটা। টের পায় সাড়ে তিন বছর৷ খুলে দেয় কাঠের পৌনে চার ফুটে হুড়কা আর চেয়ার টেনে ছয় ফুট উঁচুতে লোহার ছিটকিনী৷ "আব্বু আসছে"৷ এইবার গলাগলি ঘুম-ফজর আমার..ফিশফিশানি দুপুর আসে৷ রঙিন ফড়িং, বোয়ামে নীল চোপড়া মাছ! ঘুম আর ভলো লাগে না৷ মনে হয় দিনমান খেলি "ঘুঘু'র তোর তরকারি"। খেলতে খেলতে জহর গড়িয়ে আছর৷ পালানো বাছুর। সুতো ছিড়া ঘুড়ি৷ সন্ধ্যায় রুলটানা খাতা বেঁকে বেঁকে যায়৷ ক্লাস ফাইভের পদ্য লেখার রোগ… আব্বা আমাকে কি আর মারবা না কুত্তা বিলাইয়ের মতো? আমাকে দিয়ে কি আর নিজ হাতে আর ছেড়াবে না সেইসব বিভ্রান্তি? কথায় কথায় বলবা না- "তুই কুলাঙ্গার, তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না আর"৷ কান্না মাগরিবের আযান আমার…এখন আমি তেতাল্লিশটি ঘোড়ার মিলিত হ্রেষা, তবু কান্নাকে তুড়ির মতো বাজাতে পারি না৷ এখন আমি বুঝি- কী কষ্ট পরের বাড়িতে বেড়ে ওঠা, প্রতি পদে প্রতারিত হতে হতে ঘরের বউটিও যখন প্রেমনগর থেকে অন্য কোথাও রিক্সা করে চলে যায়, তখন বুঝি কতটা অসহায় তুমি! ক্লান্তি তোমার এশার জামাত…তবু পাঁজরের বাতাস ফুঁকে বড় করেছ নিদয় চৈত্র- পুত্র তোমার৷ আরেক পুত্র তাকে তো ঠিক ত্রিশ দিনের মাথায় রেখে এসেছিলে মসজিদ, পুকুর আর সরু রাস্তা বেষ্টিত নিরালায়। একটা নামফলকও জোটেনি ওর। বাবা, এখন আমি চল্লিশ এবং প্রথম হার্টএট্যাক নিয়ে ভাগ্যবান৷ মেয়ের মুখে দেখি কুসুম ও কণ্টক৷ এখন আমি বুঝতে পারি- মাটিতে থাকলে পোকামাকড়, মাথায় রাখলে উকুন শকুন, জলে দাওদেনো, উনুনে ফোসকা পড়ার ভয়! তাই "পাড়ার বাইরে কখনোই নয়, পাড়ার বন্ধু থেকে শত হাত দূর"! বাবা, আমি তো চোখফাঁকি দিয়ে সেই কবে চলে গেছি ডিপটিপাড়া, কাউগা-পাঁচবাড়ি, দশমাইল৷ এখন আমি অর্থহীন পথে ছিটিয়ে দিতে চাই অর্থের বীজ৷ বাবা, তুমি আর বলো না- "বিসিএস দে বিসিএস দে৷ দশ বছর ধুমায়া কামাবি, তারপর হজ করে তওবা-তাছির-সুফি"৷ খোদার কসম বাবা, আমার দ্বারা হবে না এইসব৷ আমি তো আইএসএসবি'র দেয়াল টপকে পালিয়ে এসেছিলাম কবিতা লিখব বলে৷ এসে দেখি তুমি আব্বু থেকে আব্বা, আব্বা থেকে বাবা, এখন কেবলি শূন্যস্থান... একটা শব্দহীন সাইকেল৷ বেল বাজেনি ক্রিং৷ বেল বেজেছে ক্রিং। তুমি এলে আমি স্বেচ্ছায় ছিড়ে ফেলব এইসব খর্বাকৃতি পংক্তি, কারুবাসনা, বেহেস্ত দোজখ আমার…
  • হরিদাস পালেরা...
    বৈঠকি আড্ডায় ১৩  - হীরেন সিংহরায় | বৈঠকি আড্ডায় ১৩ ভোটাভুটি খরচাপাতি পর্ব ৬ (ভোটে ) যদি লাগে টাকা , দেবে ক্রুপ দেবে থুসেন তখন বার্লিনে জার্মানির ভাবী পরিত্রাতার দুর্বার জয়রথ ছুটে চলে সারা দেশে । মন্ত্রমুগ্ধ জনতা সভায় হাজির হয় তাঁর দুটো কথা শোনার জন্য – তিনি বারবার বলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি জার্মানিকে ফিরিয়ে দেবেন তার গর্ব, ষাট লক্ষ বেকার মানুষকে দেবেন কাজের সুযোগ , দেশ গড়বেন নতুন করে । যুদ্ধে পরাজিত অপমানিত জার্মান জাতিকে দেবেন সামরিক সক্ষমতা । তারা  আবার  মাথা তুলে জগতসভায় দাঁড়াবে।  রাষ্ট্রশাসনের অধিকার পেতে হলে অন্তত ৫০.১% (অথবা ২৯১ আসন) জনমতের সমর্থন চাই । নাৎসি  ভোটের সংখ্যা ও পার্লামেন্টে সিটের সংখ্যা বাড়ে – ১৯২৪ সালে শূন্য আসন, ১৯২৮ সালে সালে ১২টি আসন ১৯৩০ সালে ১৮.৩৩% ভোট , ১০৭টি আসন । ভাইমার সংবিধানের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব আইন মোতাবেক গরিষ্ঠতা  অর্জন করা  ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ।  বিশের বেশি দল : অতিবামে কমিউনিস্ট পার্টি  তার একটু ডাইনে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দল, অতি দক্ষিণে নাৎসি , মাঝে আছে জার্মান জাতীয় দল, ক্যাথলিক পার্টি - তারপরে আছে নানান বর্ণের দল।  নির্বাচনের আগে গঠ বন্ধনের বা নির্বাচনের পরে অন্য দলের হয়ে নির্বাচিত সদস্যকে কিনে নেবার রেওয়াজ নেই। একমাত্র গতি সম চিন্তক বা কাছাকাছি চিন্তক দল গুলির সঙ্গে জোট বাঁধা – কোয়ালিশন সেটাও ধোপে টেকে না, দিন দুয়েক  বাদে ঝগড়া ঝাঁটি শুরু হয়ে যায়।  তখন ফিল্ড মার্শাল রাষ্ট্রপতি হিনডেনবুরগ ফিল্ডে নামেন ।আনুপাতিক নির্বাচনের ঝামেলা থেকে বেরিয়ে দেশের হাওয়া কোনদিকে বইছে বুঝতে চাইলেন পরিত্রাতা আডলফ হিটলার :  ১৯৩২ সালের মার্চে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে  তিনি  ফিল্ড মার্শাল পাউল ফন হিনডেনবুরগের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। তার আগে অবশ্য একটা ছোট্ট কাজ বাকি । তাঁর চোদ্দ পুরুষে কেউ জার্মান ছিলেন না, এই পবিত্র ভূখণ্ডে কেউ কখনো বসবাস অবধি করেন নি,  হিটলার স্বয়ং বে আইনি ভাবে । ১৯১৪ সালে যুদ্ধের বাজারে  সালে ব্যাভেরিয়ান সৈন্য বাহিনিতে ঢুকে পড়েছেন সেদিন কেউ কাগজ দেখতে চায় নি । এখন তিনি চাইছেন জার্মান পাসপোর্ট, নইলে দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া যায় না। কাগজে কলমে জার্মান নাগরিকত্ব অর্জন করলেন , বেআইনি ভাবে হলেও জার্মানিতে বাস করেছেন সেই সুবাদে ।  এন আর সি , সি এ এ টাইপের ঝামেলা কি ভাগ্যে তখন জার্মানিতে ছিল না  ।৫৪% ভোট পেয়ে হিনডেনবুরগ বিজয়ী হলেন , হিটলার পেলেন ৩৭% ভোট , কমিউনিস্ট পার্টি,   মরিয়া না মরে , তাঁদের নেতা থলমান পেলেন ১১% ভোট।  এবার উৎসাহিত হয়ে নাৎসি পার্টি লড়ল ১৯৩২ সালের পার্লামেন্ট ইলেকশন – পার্টির নামে নয়,  “ সব ক্ষমতা আডলফ হিটলারকে “ “ এক দেশ এক নেতা “ এই স্লোগানে পার্টির চেয়ে অনেক বড়ো তাঁদেরএবার  ৩৭% ভোট, ২৩০টি আসন পেয়ে  নাৎসি পার্টি দল কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠ নয় , পার্লামেন্টে কোন আইন পাস করা হয় না;  সম্ভব নয় । কয়েক  বছর যাবত প্রেসিডেন্ট  হিনডেনবুরগ ভাইমার সংবিধানে প্রদত্ত সেই অমোঘ অস্ত্র আর্টিকেল ৪৮ অনুযায়ী ( দেশ চালনা , নাগরিকদের সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষার  প্রয়োজন বোধে রাষ্ট্রপতি ডিক্রি জারি করতে পারেন- পার্লামেন্টের অনুমোদন ব্যতিরেকে ) কাজ সামলাচ্ছেন । চ্যান্সেলর বদলাতে থাকে : সেন্টার পার্টির ভিলহেলম মার্ক্স ( দু বছর , না তিনি সেই  মার্ক্সের আত্মীয়  নন ) , সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলের হ্যারমান ম্যুলার (দেড় বছর ), সেন্টার পার্টির হাইনরিখ ব্র্যুনিং (দু বছর ) ,  নির্দলীয় ফ্রান্তস ফন পাপেন (ছ মাস )ফ্রন্ট স্টেজ – ডান দিকের উইং দিয়ে এবার যিনি প্রবেশ করলেন তাঁর নাম জার্মান রাজনীতির ইতিহাসে চিরদিন জড়িয়ে থাকবে আডলফ হিটলার ও নাৎসি অভ্যুদয়ের সঙ্গে।জেনারাল কুরট ফারদিনান্দ ফ্রিডরিখ হ্যারমান ফন শ্লাইখারনির্দলীয় কিন্তু জার্মান পিপলস পার্টি সমর্থিত রাইখসটাগ সদস্য জেনারাল ফন শ্লাইখার পুতুল নাচানোয় হাত পাকিয়েছিলেন ।  যুদ্ধ লড়েছিলেন অফিসে বসে , যুদ্ধ মন্ত্রকের মন্ত্রী হিসেবে।  প্রথমে ছিলেন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট কিন্তু তাদের  যুদ্ধ বিরোধী ও শান্তি সন্ধানী মনোভাবের কারণে সে দল ত্যাগ করেন । ভয়ানক ভাবে অ্যান্টি কমিউনিস্ট ; খুঁজছিলেন কোন প্রখর জাতীয়তাবাদী পার্টি যারা ভাইমার সংবিধানকে কলা দেখিয়ে সেনা বাহিনী গড়ে তুলতে সাহায্য করবে  :তিনি ঝুঁকলেন নাৎসি পার্টির দিকে ।১৯৩০ থেকে কোন দলের সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই – অশীতিপর  ফিল্ড মার্শাল পাউল ফন হিনডেনবুরগ দেশ চালান ধারা ৪৮ অনুযায়ী; এবার ফন শ্লাইখার মনে করিয়ে দিয়ে বললেন,  মাইন হের  ফিল্ডমার্শাল , আপনার হাতে যে আরও দুটো ধারা রয়েছে !  ধারা ৫৩ অনুযায়ী ইচ্ছেমত চ্যান্সেলর নিয়োগ করতে পারেন , রাইখসটাগ তার বিরোধিতা করলে  ২৫ নম্বর ধারা মাফিক আপনি রাইখসটাগকে ডিসমিস করতেও পারেন । ফন শ্লাইখার কল কাঠি নেড়ে সেন্টার পার্টির চ্যান্সেলর  ব্র্যুনিং,  সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ম্যুলার এবং সব শেষে ফন পাপেনকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিজে চ্যান্সেলর বনলেন – ৩ ডিসেম্বর ১৯৩২ ।  এতদিন পুতুল নাচাচ্ছিলেন এবার বাঘের ওপরে সওয়ার হয়ে বুঝলেন  প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রি দিয়ে এই জানোয়ারকে সামলানো শক্ত ।  তার ওপর নিজের শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না । এবারে চেষ্টা করলেন নাৎসি পার্টির সঙ্গে সমঝোতা করতে।  কিন্তু আডলফ হিটলার নয়, তাঁর সহকারী গ্রেগর স্ত্রাসারকে দলে এনে একটা কোয়ালিশন গড়ে তোলবার ।  তাতে স্ত্রাসারের পার্টি রাজি না হলে কমিউনিস্ট বাদে অন্য পার্টিদের নিয়ে একটা কোয়ালিশন বানানো যাবে মানে থার্ড ফ্রন্ট !   খবরটা কানে আসা মাত্র হিটলার বললেন, সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই বটে কিন্তু আমার দল রাইখস্টাগে বৃহত্তম – চ্যান্সেলর হবার অধিকার একমাত্র আমার।ফন শ্লাইখার হিনডেনবুরগকে বললেন আপনি দফা ২৫ মাফিক রাইখস্টাগকে বরখাস্ত করে নিজেই রাষ্ট্র শাসন করুন না হয় , সংবিধান সে অধিকার তো আপনাকে দিয়েছে।  রণক্লান্ত ফিল্ড মার্শাল বললেন, বার  দুয়েক করেছি  আর সে ঝামেলায় যেতে চাই না । শরীরে কুলোবে না । বরং দফা ৫৩ মেনে কাউকে চ্যান্সেলর বানাতে পারি।  পুতুল নাচিয়ে অভ্যস্ত জেনারাল ফন শ্লাইখার প্রস্তাব দিলেন ‘ তাহলে হের হিটলারকে কাজটা দিন; তাঁর দলের সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই। রাইখস্টাগে বিল পাস করাতে গেলে জার্মান পিপলস পার্টির সঙ্গে একসাথে কাজ করতে হবে।  সে দলের নেতা আলফ্রেড হুগেনবেরগ আর আমি হিটলারকে সামলে রাখব ।১৯৩১ সালে প্রথমবার হিটলারের সঙ্গে মিটিঙের পর  থেকে ফিল্ড মার্শাল হিনডেনবুরগ হিটলারকে  ‘ ঐ অস্ট্রিয়ান কর্পোরাল’  , ‘ বোহেমিয়ান কর্পোরাল’  বলে  তুচ্ছ তাচ্ছিল্য এবং তাঁর অস্ট্রিয়ান ডায়ালেকটে জার্মান শুনে হাসি ঠাট্টা করে এসেছেন। হিটলার জনান্তিকে ফিল্ড মার্শালকে বৃদ্ধ ভাম (আলটার ইডিয়ট) আখ্যা দিতে ছাড়েন নি।ছাব্বিশে জানুয়ারি ১৯৩৩ সালে যখন সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা তুঙ্গে  তখনও হিনডেনবুরগ এক মিটিঙে বলেছিলেন , ভদ্রমহোদয়গণ আপনারা নিশ্চয় আশা করেন না যে আমি সেই অস্ট্রিয়ান কর্পোরালের হাতে দেশ চালানোর দায়িত্ব তুলে দেবো ?এবারে গতি না দেখে বললেন, কি দুর্গতি , শেষ পর্যন্ত সেই অস্ট্রিয়ান কর্পোরাল হবে জার্মানির চ্যান্সেলর ?ফন শ্লাইখার অভয় দিলেন তাকে বশে রাখার ভারটা আমার ওপরে ছেড়ে দিন -হিটলার একা শাসন করবেন না, ফন পাপেনকে  ভাইস চ্যান্সেলর ঘোষণা  করুন।   নাৎসি পার্টিকে তিনটে বেশি ক্যাবিনেট পোস্ট দেওয়া হবে না-।  তবে হ্যারমান গোয়েরিঙকে প্রাশিয়ার হোম মিনিস্টার করা বাদে আর  কোন দাবি হিটলার জানাবেন না । আর তিনি চাইলেই বা শুনছে কে ? ।হিনডেনবুরগের দোলাচল চিত্তের  ধন্দ মিটল যখন জার্মান শিল্পপতিরা সরাসরি তাঁকে একটি টেলিগ্রাম পাঠালেন“ দেশের চ্যান্সেলরের কাজটা এই মুহূর্তে সহজ নয় কিন্তু এই কঠিন সময়ে জার্মান শিল্পসঙ্ঘ হিটলারের পাশে সর্বশক্তি নিয়ে দাঁড়াবে । “১৯৩১ সালের সাতাশে জানুয়ারি ডুসেলডরফের ইন্ডাস্ট্রি ক্লাবে ফ্রিতস থুসেন যাকে জার্মানির পরিত্রাতা বলে সম্বর্ধনা জানিয়েছিলেন এবং সমবেত শিল্পপতিদের সামনে জার্মানির এক  উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতিকে এক সূত্রে বেঁধে দেওয়ার স্বপ্ন যিনি দেখিয়েছিলেন সেই আডলফ হিটলারকে নিঃশর্ত সমর্থন  জানালেন জার্মান বাণিজ্যিক জগতের নেতৃবৃন্দ ।তবে তাই হোক ।সোমবার তিরিশে জানুয়ারি ১৯৩৩:  ছিয়াশি বছরের ফিল্ড মার্শাল রাইখস্টাগে সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণের প্রয়োজন  সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ভাইমার সংবিধানের পঁচিশ  নম্বর ধারার বলে কম্পিত হস্তে সই করে অস্ট্রিয়ান  কর্পোরাল আডলফ হিটলারকে জার্মান চ্যান্সেলর পদে নিযুক্ত করলেন ।ভিলহেলম স্ত্রাসের ব্যালকনিতে বিজয়ী নেতা  গ্রহন লাগার আগে ফ্রাঙ্কফুর্ট  বিশ্ববিদ্যালয় , জুন ১৯৩২ বিশ্ববিদ্যালয় দরজা বন্ধ । এটা কোন ছুটির দিন তো নয় ? খুব বেশি গরম পড়েছে তাই ? না, তাও নয় ।কিছু ছাত্র ব্রাউন নাৎসি ইউনিফরম পরে ক্লাসে আসতে চেয়েছিল ।  রেকটর বলেছেন এটা পাঠাভ্যাসের পুণ্যভূমি,  পলিটিকসের নয় । তৎক্ষণাৎ নাৎসি ইউনিফরম ধারী ছাত্ররা ‘ আমাদের পতাকা উঁচুতে থাকবে’  গান গেয়ে ভাঙচুর শুরু করে।  রেকটর বিশ্ববিদ্যালয়ের দরোজা বন্ধ করে দেন।  দু দিন বাদে খুলতে হয়। । কালক্রমে  হাইডেলবেরগ হামবুর্গ মিউনিক কোয়েনিগসবেরগ মারবুরগ বিশ্ববিদ্যালয়ে , হানোভার ব্রাউনশোআইগের এঞ্জিনিয়ারিং কলেজ – সর্বত্র একই দৃশ্যের পুনরাভিনয় হবে ।প্রাশিয়ান পার্লামেন্ট , মে ২৫ , ১৯৩২ এক ন্যাশনাল সোশ্যালিসট ডেপুটি প্রাশিয়ান স্টেট অ্যাটর্নির পদত্যাগ দাবি করলেন – তাঁর অপরাধ ? সেই অ্যাটর্নি কয়েকজন নাৎসি সদস্যকে হত্যার অভিযোগে  দোষী  সাব্যস্ত করেছেন।  এক কমিউনিস্ট ডেপুটি যেই বলেছেন ‘ নাৎসিদের দল তো  খুনিতে ভর্তি’,  অমনি তুলকালাম কাণ্ড । হাতাহাতি মারামারি ভাঙচুর চলল । কারো কোন শাস্তি হয় নি ।  এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকদিন বাদে সেই কাণ্ডের নেতা এক ন্যাশনাল সোশ্যালিসট ডেপুটিকে ভবিষ্যতে পার্লামেন্টে শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব দেওয়া হলো ।শোয়াইডনিতস , ১৯৩২ অস্ত্র নিয়ে হাঁটার অপরাধে পল ক্লিঙ্গেল নামের এক  কমিউনিস্ট পার্টি মেম্বারের পনেরো মাস কারাদণ্ড হলো।জনা দশেক নাৎসি মিলে বাঙ্কাউ গ্রামে বাশি নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে বিচারক তাদের বিনা শর্তে মুক্তি দিলেন – বাশি লোকটির চাল চলন সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর ছিল।মানহাইম , ১৯৩১ চারজন ন্যাশনাল সোশ্যালিসট বোমা সহ ধরা পড়লে মহামান্য কোর্ট তাদের বেকসুর খালাস করে দেন- তাদের স্বাস্থ্য খারাপ বলে ।বার্লিন,  ১৯৩২ ১৯৩১ সালে চ্যান্সেলর ব্র্যুনিং শান্তি বজায় রাখতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পথ চলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন । কিছু এই অভিযোগে ধৃত কয়েকজন ন্যাশনাল সোশ্যালিসট সদস্যের বিচারে  জার্মান সুপ্রিম কোর্ট ( রাইখসগেরিখট ) যুগান্তকারী রায় দিলেন – কোন মানুষ যদি মনে করেন তাঁরা পথে ঘাটে আক্রান্ত হতে পারেন তাহলে আত্মরক্ষার্থে যে কোন প্রকারের আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করতে পারেন।( আমেরিকান  সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী – রাইট টু ক্যারি আর্মস ভাইমার সংবিধানে তার প্রণিধান ছিল না )বয়থেন, সাইলেসিয়া  ( অধুনা বিটম, পোল্যান্ড ) ১৯৩২ এক কমিউনিস্ট পার্টি সদস্যকে বিছানা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে খুন করা হলো সাইলেশিয়ার পাবলিক অ্যাটর্নি বারন ফন স্টাইনেকার বিচারকদের প্রতি অনুরোধ জানালেন তাঁরা যেন দু ধরনের অপরাধের পার্থক্য বিবেচনা করে শাস্তি দেন – কম্যুনিস্টরা রাইখের সম্পদ এবং সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চায়, এই ন্যাশনাল সোশ্যালিসট কর্মীদের উদ্দেশ্য ছিল দেশের সম্মান ও স্বাধীনতা রক্ষা করা ।নাৎসিদের ক্ষমতায় আসতে এখনও বছর বাকি তখন হাটে বাজারে তিনি  দেখান ম্যাজিক লুকিয়ে চক এবং ডাস্টার কে কত ভোট পেলো তার খবর রাখে কে ? সারা দেশ তখন স্বপ্ন বিক্রেতা এক  জাদুকরের খেলা দেখছে, শুনছে।পার্টি মিটিং ১৯৩২মঞ্চের  প্রশ্ন / জনতার উত্তর আডলফ হিটলার আমাদের কাছে কিসের প্রতীক ?একটি বিশ্বাসের।  আর ?শেষ আশা।  আর ?আমাদের একমাত্র নেতা ! সামরিক ব্যান্ড বাজে । এবার নেতা মঞ্চে উঠে দাঁড়ান।  মিনিট খানেকের  নিস্তব্ধতা । তারপর তিনি বলা শুরু করেন কর্কশ কণ্ঠ, সুর কঠোর ।এক ঘণ্টা , দু ঘণ্টা , চার ঘণ্টাজনতা তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি শব্দকে আঁকড়ে ধরে । তাদের নিজস্ব ভাবনা চিন্তা লুপ্ত হয়েছে ।নেতা একবার থামেন । জনতা দাবি করে আরও কিছু বলুন,  আগে কহ আর ।তিনি বলে চলেন , তার খানিক সত্য , বাকিটা  সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য ;  কিছু আজগুবি কাহিনি, কিছু অসত্য নাটক ।কখনো তাঁর কণ্ঠে বজ্র নির্ঘোষ , কখনো তিনি দু হাত জোড় করে অনুনয় বিনয় করেন ।কখনো কেঁদে ফেলেন ।তিনি সর্বদা প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন- কমিউনিস্ট , ইহুদি, বিদেশি । তিনি কখনো কোন বিশ্লেষণ করেন না , বিতর্কে যান না। কোন তথ্য , কোন প্রমাণিত সত্য  তাঁর  ভাবনার পথে বাধা হতে পারে না ।  তাঁর  মন্তব্যই  শেষ কথা।  সাধারণ মানুষের খুব কাছে পৌঁছে যান ।  যেন অত্যন্ত গোপন কথা তাঁদের সঙ্গে যেন ভাগ করে নিচ্ছেন , এমন ভাবে বলেন,“ বন্ধুগণ , আমাদের পরিকল্পনা প্রোগ্রাম নিয়ে কোন আলোচনা আমি এখানে করবো না । আপনারা অন্তরে অন্তরে তো  ঠিকই জানেন ক্ষমতায় এলে আমরা কি করবো ।“লক্ষ কি ?এক   বিপক্ষ এবং সকল প্রতিরোধকে  নির্মূলে বিনাশ করাদুই    ভাইমারে তৈরি  সাংবিধানিক বেড়াজাল চূর্ণ করাতিন   এমন এক দেশ গঠন করা যা  হবে হাজার বছর স্থায়ী তৃতীয় সাম্রাজ্য (        থার্ড রাইখ )  আম জনতা সম্মোহিত - হিটলার যখন বলছেন , ভেবে চিন্তেই বলছেন ।  পু: এমন ভাবা সম্পূর্ণ ভুল যে কোন একজন মানুষ জার্মান জাতির ওপরে একনায়কত্ব চাপিয়ে দিতে পারেন.  জার্মান জাতির বিচিত্রতা গণতন্ত্রের দাবি রাখে - বেনো রাইফেনবের্গ .ফ্রান্কফুর্টার তসাইটুং জানুয়ারি ১৯৩৩  ঋণ  স্বীকারজার্মানি পুটস দি ক্লক ব্যাক                  এডগার মাউরারনাৎসি বিলিওনেয়ারস                         দাভিদ দে ইয়ং  
    যদি ডাকে লিন্ডসে ! - সমরেশ মুখার্জী |  উপরোক্ত ছবিতে তার RV’র (Recreational Vehicle) সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে লিন্ডসে। ওর মতো কিছু Free Spirited Traveler দের পোষ্ট করা এমন সব YT ভিডিও আমি মাঝে মধ‍্যে দেখি। তাদের কেউ সোলো, কেউ স্বামী স্ত্রী, একটি পিতা পুত্রের টিম‌ও আছে। ৪০% কাস্টমস ডিউটি দিয়ে আমদানি করে প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে Airstream Atlas Camper বা ১৮ কোটি দিয়ে Earthroamer XV-HD RV কেনার ক্ষমতা কেন - স্বপ্ন‌ও আমার নেই। ভিডিও দেখে দুধের সাধ ঘোলে মেটার কথা‌ নয়। তবু দেখি। সাধ না মিটিলে‌ও আনন্দ হয় দৃশ‍্যসুখে। 4x4 ডজ স‍্যাসীতে Overland Explorer কেবিন ফিট করে লিন্ডসে চার বছর ধরে একাই ঘুরে বেড়াচ্ছে যেদিকে দুচোখ যায় মোডে। ঐ গাড়িঘরে বাস করেই স‍্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের মাধ‍্যমে ও প্রত‍্যন্ত জায়গা থেকেও আপেল ল‍্যাপটপে ওর কনসাইনমেন্ট শিপিং‌য়ের  ব‍্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ-দশের ঢ‍্যাঙা লিন্ডসের সংকল্পের তারিফ করতেই হয়। শুরুটা ও করেছিল একটা Airstream compact RV দিয়ে। ডজের পিঠে OE Cabin ফিট করা ওর অভিজ্ঞ হয়ে নেওয়া পরবর্তী পদক্ষেপ।ভাবছি‌লাম লিন্ডসেকে একটা মেল করবো। বলবো আমার‌ও আছে পচুর অবসর আর এমন কাছাখোলা মোডে বেড়ানোর খুব ইচ্ছে। আমাকে ডেকেই দ‍্যাখোনা একবার, মাইনে নয়, পরা নয়, কেবল খেতে দিলেই হবে। গাড়ি‌ও খারাপ চালাই না। ওটা আমার প‍্যাশন। হিমালয়, পশ্চিম‌ঘাটের পাহাড়ে‌ও চালিয়ে‌ছি। কখনো চাইলে - তোমায় একটু রিলিফ দিতে - ধরতে পারি ঐ দুম্বো গাড়ি‌র স্টিয়ারিং। অবশ‍্য‌ ওদেশে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তো আমার নেই। তাই চালাতে পারি বিরান কোনো জায়গায় অফ রোডে - যেখানে লালমুখো কপ এসে খপ করে ধরবে না আমায়। শোবো‌ও না তোমার চলমান ঘরের শয‍্যাকক্ষে। তুমি তোমার আপেল খুলে আঙুল চালিয়ে করবে বাণিজ্য। আমি শোবো ড্রাইভিং কেবিনের পিছনে টানা সীটে। আমি‌ও পাঁচ দশ - না হয় শুতে হবে একটু পা মুড়ে। তাতে কী?  ওভাবে তো একদা ছিলাম দশমাস - মাস তিনেকে কী‌ই বা এসে যায়? এমনি‌তেও মার্কিন অভিবাসন দপ্তর ছমাসের বেশী ট‍্যূরিস্ট ভিসায় ওদেশে থাকতে দেবে না।লিন্ডসের বিচরণ ক্ষেত্র মূলতঃ আমেরিকার পূর্ব উপকূলে। প‍্যাসিফিক ওয়েস্ট কোস্টে থাকে আমার এক অতীত বান্ধবী। অনেক‌দিন হয়ে গেল সে ওদেশে‌র নাগরিক হয়ে গেছে। বহুবার কল্পনায় শুনেছি ওর ডাক - "চলে আয় কদিনের জন‍্য এখানে - থাকবি আমার বাড়ি - শুবি আমার পাশে গেস্ট‌ রুমে। চুটিয়ে ঘুরবো দুজনে আমার MDX Acura SUVতে বা Lexus 350তে। আমার বরটা একটা বেরসিক - থাকবে ও আপেল খুলে কাজে মজে।"কোনো সকালে‌ই সে ডাক আসে নি। তাই যাওয়া‌ও হয়ে ওঠেনি। জীবনে বহু দিবাস্বপ্ন‌ই বাস্তবে সত‍্য হয় না। তা বলে কী কল্পনা‌বিলাসী মানুষ ভাবের ঘোরে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করে দেবে? আমি‌ও দিইনি। বরং আজ‌ও আশায় থাকি, সকাল গড়িয়ে দুপুর চলে গেলেও কেউ হয়তো কখনো ডাক দেবে গোধূলী‌তে - রাত্রি নামার আগে। সে হতে পারে বন্ধু বা পুত্র বা পরিচিত।। যদি আসে লিন্ডসের মতো সম্পূর্ণ অপরিচিত কারুর এমন একটা দিলখুশ করা মেল - আহা তা হবে হাতে চাঁদ পাওয়া।"চলে এসো সৌমেন - ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। যদি পারো হাত লাগাতে ফুটো টায়ার বদলাতে, ছাদে উঠে সোলার প‍্যানেল পরিস্কার করতে, খালি করতে ৪০ কিলোর গ্ৰে ওয়াটার ট‍্যাঙ্ক, মাঝে মধ‍্যে চলঘরের একটু সাফ সাফাই, কিছু DIY যোগাড়েপনা তাহলে তো খুবই ভালো। মনে হয় সুখী টাইপের নিষ্কর্মার ঢেঁকি তুমি ন‌ও - না হলে বুড়ো বয়সে একা একা ব‍্যাকপাকার স্টাইলে ঘুরে বেড়াতে না। এলে যতটুকু পারবে - ততটুকু‌ই সাহায্য করবে। আসবে তুমি ইস্ট কোস্টে - একটু আগে জানি‌য়ে - তখন আমি জর্জিয়া, মেইন, মেরিল‍্যান্ড, ভার্জিনিয়া, নর্থ ক‍্যারোলাইনা যেখানেই থাকি। খামোখা পশ্চিম উপকূলে একদা বান্ধবী‌র কাছে কদিনের জন‍্য গিয়ে কী করবে? অতীত সুরের সাথে বর্তমান ছন্দ মিলবে না। তাল কেটে মন খারাপ হবে। মনে রেখো It is not wise to travel down the memory lane. Take it easy. Take care, Lindsey" Airstream Atlas 2020  Side Extension feature সহ এটি একটি HiFi আইটেম - তাই ওদেশে এর দাম প্রায় ২.৪ লাখ ডলার - ভারতীয় মূদ্রায় ২ কোটি - ৪০% কাস্টম ডিউটি সহ ৩ কোটি। তবে লিন্ডসে হয়তো শুরু করেছিল কোনো Compact Airstream RV দিয়ে তবে ১৭ লাখ ডলারের Earth Roamer XV-HD RV সম্প্রদায়ের বড়দা। এতে ছজন দিব‍্যি শুতে পারে। দূর্ঘটনা না হলে বিজ্ঞাপিত বলা আছে এর আয়ু  ৯০ বছর। Ford F-750 স‍্যাসীতে 6700 CC / 330 HP / 4x4 ইঞ্জিনের তাকতে ইনি যে কোনো ঋতু‌তে পাঁচপেঁচিদের অগ‍ম‍্য স্থানেও চলে যেতে সক্ষম। দাম কী এর এমনি নিচ্ছে? ভারতে এনাকে‌ই বরণ করতে প্রায় ২০ কোটি খসাতে হবে বলেছিলাম শুরুতে। তবে এতে থাকলে মনে‌ই হবে না আছো  চলমান বাড়িতেরান্না বান্না করে খাও আরামসেবা লিভিং রুমে মজাসে আড্ডা মারো ছ’জনে 
    বৈঠকি আড্ডায় ১২  - হীরেন সিংহরায় | ভোটাভুটি খরচাপাতি পর্ব ৬ (ভোটে)  যদি  লাগে টাকা,  দেবে ক্রুপ দেবে থুসেন ৯ নভেম্বর ১৯১৮ সালে বার্লিনে অনধের নগরী,  চৌপট রাজা ।নৌ বিদ্রোহ বন্দরে বন্দরে , ভিলহেলমসহাফেন , কীল , হামবুর্গ থেকে নৌসেনা হাঁটছেন বার্লিনের দিকে;   মিউনিক এমনকি  বার্লিনের নয় কোয়লন নিজেদের স্বাধীন রিপাবলিক বলে ঘোষণা করেছে -  পার্লামেন্টের  সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব তাদের দাবিতে অনড় , সম্রাটের পদত্যাগ চাই । ৯ নভেম্বর ১৯১৮ সকাল এগারোটায় বেলজিয়ামের স্পা থেকে টেলিফোন বার্তায়  সম্রাট ভিলহেলম তাঁর পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে ট্রেনে চড়ে  নিরপেক্ষ হল্যান্ডের ডুরণ রওয়ানা হলেন ; আর কোন দিন জার্মানিতে পা দেবেন না , বত্রিশ বছর বাদে ভগ্ন মনোরথ সম্রাট সেখানেই ধরণী থেকে  চির বিদায় নেবেন।বার্লিনে রাইখসটাগেরসামনে সমবেত জনতা উত্তাল- এবার তাহলে কি ? পার্লামেন্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট মন্ত্রী ফিলিপ শাইডেমান সমবেত জনতাকে বললেন“ হোহেনজোলারন সম্রাট পদত্যাগ করেছেন । এই দিনটি জার্মান ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে । জার্মান প্রজাতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক ।এগারোই নভেম্বর এগারোটা বেজে এগারো মিনিটে প্যারিসের সত্তর মাইল উত্তর পূর্বে কম্পিয়েনে এক নির্জন বনের মাঝে টেনে আনা মার্শাল ফখের নিজস্ব ট্রেনের বগিতে জার্মানি  স্বাক্ষর করলো  সন্ধিচুক্তি-  পশ্চিম রণাঙ্গন হলো নিশ্চুপ।  শুরু হলো নভেম্বর বিপ্লব , পুলিশ দফতর দখল, যুদ্ধ ফেরত ফৌজ – ফ্রাইকরপস - বনাম কমিউনিস্ট বিপ্লবী,  স্পারটাসিসট , রোজা লুকসেমবুরগ কার্ল লিবককনেখট – যারা চাইলেন রাশিয়ান স্টাইলে সোভিয়েত গড়ে তুলতে।  খুন কা বদলা খুন মুখোমুখি লড়াইয়ে জিতল সরকারি সেনা; পথে পথে রক্তাক্ত অভিযান । ইতিমধ্যে দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে থাকে পাড়া।  সরকার প্রাগে পলাতক। জানুয়ারি মাসে বার্লিন থেকে নিরাপদ দূরত্বে , ভাইমারে নতুন সংবিধান রচিত হলো , জার্মানির ইতিহাসে গণতন্ত্রের প্রথম অভিষেক – অজানা অচেনা পথে একটা দেশের প্রথম পদক্ষেপ। এতদিন দেশটা চালিয়েছেন অভিজাত সমাজ এবং বনেদী জমিদারবর্গ ( ইউঙ্কার )  সেখান থেকে এসেছেন সেনাপতি , বিচারপতি ,সমাজপতি এবং অনেক শিল্পপতি। ।এখন এই নতুন ব্যবস্থায় প্রধান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ এবারট , তাঁর বাবা ঘোড়ার জিন বানাতেন।গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন এবং সেটি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হিসেবে – ষাট হাজার ভোট পেলে একটি সিট।  ১৯২০ সালর নির্বাচনে ছাব্বিশটি দল , আশি শতাংশ নাগরিক ভোট দিলেন । নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা মানে ৫০.১% ভোট কোন দল পেলেন না – সবচেয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠিত পার্টি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ৩৮%, আসন সংখ্যা ১০৩ ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় কোন জার্মান শহর গ্রামের ওপরে বোমা বর্ষণ হয় নি , শত্রু সৈন্য দেখা দেয় নি দুয়োরে। তাবৎ পরিকাঠামো,  রুর এলাকার কয়লাখনি ইস্পাত কারখানা বার্লিনের ব্যাঙ্ক মিউনিকের ব্রুয়ারি হামবুর্গ ব্রেমেনের জাহাজ কারখানা অক্ষত অটুট ।  ডুসেলডরফ কলোন ডরটমুণ্ডের শিল্পপতিরা যুদ্ধে হারান নি কোন সম্পদ কিন্তু বিজয়ী পক্ষ চাইছেন ক্ষতিপূরণ ( রেপারেশন )-সেটা আসবে তাঁদের ট্যাঁক থেকে।  ফ্রান্স বেলজিয়াম তাদের সেনা বসিয়ে রেখেছে রাইনল্যান্ডে , কারখানার দরোজায়, খনির মুখে । দেশে নিরঙ্কুশ অরাজকতা , কমিউনিস্টরা ট্রেড ইউনিয়নকে হাওয়া দিচ্ছে-  আমাদের দাবি মানতে হবে ঝাণ্ডা তুলে হেড অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন বিক্ষুদ্ধ জনতা । এবং স্ট্রাইক!   প্রাশিয়ান আমলে যা  ছিল অকল্পনীয় । দেশ চলত  একটা কঠোর ডিসিপ্লিনের শেকলে -সমাজে কারখানায় অফিসে সকলের স্থান ছিল নির্দিষ্ট।  সবাই তা মানতেন, সব্বাই করে বলে সব্বাই করে তাই !  কোন বিকল্প ছিল নাঅন্য দেশের রাষ্ট্রীয় সৈন্য বাহিনী থাকে; প্রাশিয়াতে রাষ্ট্রীয় সৈন্য বাহিনীর একটা দেশ ছিল।*জার্মান শিল্পপতিরা কখনো শ্রমিক নেতার মুখোমুখি বসেন নি , সেটা সামলাত স্থানীয় প্রশাসন -বেতনের দাবিতে কেউ অফিসের সামনে দাঁড়ায় নি , জমিদাররা ভূমিহীন কৃষকদের যেমন ইচ্ছে এমনি মজুরি দিয়েছেন। । যুদ্ধের পরে এই এলোমেলো অবস্থার সুযোগে গড়ে উঠেছে কমিউনিস্ট পার্টি যারা রাশিয়ান কায়দার সোভিয়েত বানাতে বদ্ধ পরিকর।  সেটা ব্যর্থ হল এক বছর বাদে কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি খুঁটি গেড়ে বসল , পার্লামেন্টের ভোটে প্রার্থী দিলো ।  রুর বার্লিনের বিজনেস ম্যাগনেটরা কথা বলবেন কার সঙ্গে?তাঁদের আতঙ্ক কমিউনিস্টরা এবার শ্রেণি সংগ্রাম শুরু করবে , তার মানে শিল্পে অশান্তি, খরচা বেশি , বোর্ডরুমে কমিউনিস্ট কর্মীদের অনধিকার প্রবেশ। তাদের ঠেকায় কে ?  সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকের রক্ষা করেছেন কিন্তু এই আগ্রাসী শ্রমিকদের হাত থেকে শিল্পপতিদের রক্ষা করে কে ?  তাঁরা চান রাজনৈতিক স্থিরতা এবং শ্রমিকদের দাবিয়ে রাখা-যেটা প্রাশিয়ান সরকার করে এসেছেন। তারই ছত্রছায়ায় জার্মান শিল্প, বাণিজ্য অতি দ্রুত উন্নতি করে দুনিয়ার ঈর্ষা অর্জন করেছে। আজ এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাঁরা খুঁজছেন একজন বিশ্বাসযোগ্য শক্ত রাজনৈতিক নেতা যার সঙ্গে   এই সফল  ধনী ব্যবসায়ীরা আলোচনায় বসে একটা বন্দোবস্ত করতে পারেন – সার  আপনি আমার কেসটা দেখুন আমি আপনার ব্যপারটা সামলে দেবো। নৈরাজ্য তখন এমন পর্যায়ে যে জার্মানির অন্যতম ধনী ব্যক্তি ফ্রিতস থুসেন ফ্রান্সের নরমান্দিতে তাঁর বাবার কয়লাখনির মালিকানা পাবার অভিলাষে শত্রুদেশ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নিতেও প্রস্তুত।নির্বাচন হয়, কোন দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় না।  কার সঙ্গে হাত মেলাবেন তাঁরা ? এলো অকল্পনীয় মুদ্রাস্ফীতি , আম জনতা হারালেন তাঁদের সঞ্চয় ; কিন্তু রুর মিউনিক বার্লিনের ধনপতিদের  সম্পদ অটুট  তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ গেলেন আমেরিকা- সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যের কি হালচাল ? নতুন নতুন যন্ত্রপাতি , কর্ম মুখর কল কারখানা দেখে চমকিত হয়ে দেশে ফিরে বললেন তাঁদেরও চাই ঐ সব খেলনা ।  কিন্তু তাঁদের স্বার্থ দেখার  ও অর্থ সরবরাহের জন্য কেউ নেই ।এমন সময়ে দক্ষিণ দিক থেকে উদিত হলেন এক অস্ট্রিয়ান নাগরিক , যুদ্ধে কর্পোরাল হয়েছিলেন , দ্বিতীয় শ্রেণির আয়রন ক্রস ঝোলানো থাকে গলায় ।  মিউনিকের পাবে তাঁর বক্তিমে শুনতে ভিড় জমে যায় ( হোফব্রয় হাউসের তিনতলায় সেই হলটি দেখতে পাবেন ) ; তাঁর মতে জার্মানি একটা জেতা গেমে হেরেছে কারণ সৈন্য বাহিনীর পিছন থেকে ছুরি মারা হয় । তার জন্য দায়ী কমিউনিস্ট , ইহুদি ও কিছু চক্রান্তকারী বিদেশি । ৯ নভেম্বর ১৯২৩  শখানেক লোক যোগাড় করে ব্যাভেরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ব্যর্থ অভ্যুথানের পরে গ্রেপ্তার হলেন সেই নেতা , আডলফ হিটলার । সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল ১৯২৩ সালে কিন্তু কোন অজানা কারণে তাঁর রেহাই হল নয়  মাস বাদে ।  তাঁর বহুল প্রচারিত ( এমনকি দুনিয়ার অনেক সংবাদ পত্রে ) বিচার পর্ব হিটলারকে রাতারাতি পরিচিত করাল সারা দেশে । তাঁর পার্টি,  জার্মান শ্রমিক দল  ( ডয়েচে আরবাইটার পারটাই ) প্রথম ইলেকশন লড়ে ১৯২৪ সালে, ব্যাভেরিয়ার বাইরে সম্পূর্ণ অচেনা এই দল পেলো ০.১২% ভোট , আসন শূন্য.  পার্টির নাম বদলাল -  হলো  নাতসিওনাল সোৎসিয়ালিস্তিশে ডয়েচে আরবাইটার পারটাই  সংক্ষেপে নাৎসি ( প্রথম দু  অক্ষর নিয়ে )।  মুদ্রাস্ফীতি ও যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের ঝক্কি কাটিয়ে জার্মান অর্থনীতি দুর্বার বেগে ঊর্ধ্বগামী । হিটলারের অগ্নিগর্ভ বাণী বাজারে কাটে না।  ১৯২৮ সালে নাৎসি পার্টি পেলো মাত্র ১২টি  আসন।  ১৯২৯ সালের অক্টোবরে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার বাজারে লঙ্কা কাণ্ড লাগলে যে ডিপ্রেশন দেখা দিলো জার্মানিতে তার প্রত্যক্ষ ফল দেখা গেলো ১৯৩০ সালের নির্বাচনে - ১৮% ভোট এবং ৯৫টি আসন পেলো নাৎসি দল । কিন্তু কোন দল সরকার গঠনে অক্ষম – শাসন চলে ভাইমার সংবিধানের সেই ৪৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী – রাষ্ট্রপতির ডিক্রি দ্বারা!  পার্লামেন্ট যখন সিদ্ধান্ত  নিতে অপারগ, রাষ্ট্রপতি হিনডেনবুরগ চ্যান্সেলরের পরামর্শ অনুযায়ী অথবা তা উপেক্ষা করে আপন ডিক্রি মাফিক দেশ শাসন করেন সেই মোতাবেক ।প্রসঙ্গত , যতদূর মনে পড়ে ভারতীয় সংবিধানে এই ধরণের একটি ক্লজ আছে- রাষ্ট্রপতি যুক্তিযুক্ত মনে করলে ( মনে করাটাই যথেষ্ট ) বা প্রধানমন্ত্রীর  পরামর্শ মতন পার্লামেন্ট ভাঙতে পারেন, ছ মাস নিজের  শাসন চালাতে পারেন, নতুন নির্বাচন ফলপ্রসূ নাহলে আবার রাষ্ট্রপতির শাসন ।  এটি কেউ দেখে দিলে কৃতজ্ঞ হব ।বার্লিন হামবুর্গ মিউনিকের পথে পথে লাল পতাকা বনাম সাদা কালো স্বস্তিকার লড়াই চলে ( উৎপল দত্তের ব্যারিকেড নাটকটি স্মরণ করুন) দেওয়াল লিখন দেখে জেনে নিতে হয় কাদের  পাড়ায় আছেন । তফাৎ এই যে কমিউনিস্ট বা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ছেঁড়া খোঁড়া জামা কাপড় পরে  হাতে কেবল পতাকা নিয়ে আওয়াজ তোলে - নাৎসি বাহিনী ব্রাউন ইউনিফরম পরিহিত , হরসট ওয়েসেলের ডি ফানে হোখ ( আমার পতাকা উচ্চে ) গান গেয়ে মার্চ করে লাইন দিয়ে, হাতে লাঠি , কোমরে পিস্তল , যেখানে সেখানে প্রতিপক্ষকে পেটায়, সভা ভাঙ্গে - তাদের উপস্থিতি রীতিমত উচ্চকিত ।লাইপজিগের এক সভায় (১৯৩০) নাৎসি প্রবক্তা গ্রেগর স্ত্রাসার বললেন , আমরা দশটা  আইন পাস করে এই গোলমালের সমাধা করে দিতে পারি – কেউ স্ট্রাইক করলে তাকে গুলি মারা হবে , বাকিরা কোন দেওয়ালের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে চাইবেন না “দেশের এই টালমাটাল অবস্থায় এক সবল কাণ্ডারির খোঁজে ব্যাভেরিয়ার কিছু ধনী মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন - যেমন কোবুরগের ডিউক, প্রিন্স হেঙ্কেল ভন ডোনারসমার্ক, ব্যাভেরিয়ান শিল্পসমিতির প্রধান প্রিন্স আরেনবেরগ।১৯৩১ সালে বেশ কয়েকজন জার্মান ব্যবসায়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘুরে এলেন- তাঁরা কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার প্রচণ্ড বিরোধী কিন্তু আশ্চর্য হয়ে  দেখলেন কিভাবে শ্রমিক কৃষকের সেই সরকার শ্রমিক কৃষকদেরই   দাবিয়ে রেখেছে , সেখানে কারো  ঝাণ্ডা তুলে মাইনে বাড়ানোর দাবি করার হিম্মত নেই ।  ঠিক যেমন গ্রেগর স্ত্রাসার বললেন পার্টির নামের ভেতরে সোশ্যালিস্ট শব্দটা আছে বটে কিন্তু সেটা লোক দেখানো মাত্তর।আরও খানিকটা দূর থেকে নাৎসি জয়রথের অগ্রগতি লক্ষ করছিলেন কয়েকজন শিল্পপতি – তাঁরা চান স্টেবল গভর্নমেন্ট এবং এমন কাউকে যার সঙ্গে ইউ ক্যান ডু বিজনেস উইথ ! মহা ধনপতি ফ্রিতস থুসেন জনান্তিকে বলেছিলেন উদার উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাম্য আছে ,আমাদের ধন সম্পদ বাড়ানোর সুযোগ নেই ; কমিউনিস্টরা আয়ের সাম্য আনতে পারে কিন্তু আমাদের সম্পদের পরিমাণ শূন্যে দাঁড়াবে । ক্ষমতা  যদি কেন্দ্রীভূত হয় আমরা চাইব তার অংশীদার হতে।২৭শে জানুয়ারি ১৯৩১ ডুসেলডরফের হর্ম্য মণ্ডিত ইন্দুস্ত্রি ক্লুবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফ্রিতস থুসেন সমবেত ধনপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমাদের দেশের ভাবি পরিত্রাতার সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিই -ইনি আডলফ হিটলার ।লম্বা বক্তৃতা দেবার অভ্যেসটি ত্যাগ করে হিটলার মাত্র দশ মিনিট বললেন । তিনি শুরু করলেন  “অনেকে আমাকে বলেন আপনি  জাতীয়তাবাদী জার্মানির একক ঢোল বাদক । তাই কি ? আজ এক দেশভক্তের মতন আমি এই ঢোল আবার বাজাতে চাই , জার্মানিকে দিতে চাই এক  বিশ্বাস,  সেই  আস্থা যা জার্মানি হারিয়েছে “ ।শেষে বললেন“আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই  একটি  জাতীয়তাবাদী  সরকার । বারো বছর যাবত আমি এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি । আমরা এ দেশের রাজনীতির বিশুদ্ধিকরণ করে এমন একটি দেশ ও সরকার গড়ব যেখানে কোন প্রকারের দেশদ্রোহীর কোন ক্ষমা নেই । যদি কেউ আমাদের এই জাতীয়তাবাদী দেশনীতির বিরোধিতা করেন তাদের কঠিনতম  শাস্তি দেওয়া হবে । বন্ধুত্বের হাত যদি কেউ বাড়ান সেটি আমরা সাগ্রহে  গ্রহণ করবো.”  তুমুল করতালি ।ভাবী একনায়কের সঙ্গে শিল্পপতি ও ধনপতিদের সেতু বন্ধনের প্রারম্ভক্রমশ*”Some states have an army, the Prussian Army has a state” Voltaire  আউগুস্ট থুসেন স্ত্রাসে ১ডুসেলডরফ  ফ্রিডরিখ থুসেন (১৮৭৩-১৯৫১ )পিতা আউগুসট থুসেনের ইস্পাত ও খনিজ সাম্রাজ্যের একমাত্র অধীশ্বর ( জার্মানির ৭৫% আকরিক লোহা, দু লক্ষ কর্মী)।  ১৯২৩ সালে হিটলারের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে পাঁচ লক্ষ গোল্ড মার্ক দান করেন  -কমিউনিস্ট পার্টির অরাজকতা থেকে নাৎসি পার্টি জার্মান শিল্পকে বাঁচাবেন এই আস্থায় । পার্টি মেম্বারশিপ নম্বর ২, ৯১৭, ২৯২ । মোহভঙ্গ হতে দেরি হয় নি -ইহুদি এবং ক্যাথলিকদের প্রতি দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে হিটলারকে চিঠি লেখেন।  ফলং  পদচ্যুতি , দাখাউ কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে সাময়িক আবাস। সেই কারণে তাঁর নাৎসি মেম্বারশিপকে ক্ষমা ঘেন্নার চোখে দেখা হয়েছিল ।  সেই প্রতিষ্ঠান  এখন থুসেন ক্রুপ নামে পরিচিত ।  পরিবারের শেয়ার প্রায় শূন্য , ক্রুপের ২১% । স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ফ্রাঙ্কফুর্টে কাজ করার সময়ে জয়েন্ট ম্যানেজার হ্যারমান এরেনবেরগারের সঙ্গে ডুসেলডরফ অফিসে যেতাম ।  রিসেপশনের দেওয়ালে  তাঁর ছবি দেখেছি । আমার আলোচনার পার্টনার ছিলেন ফ্রিডহেলম বাবেরসকে । কোন কোম্পানীকে তিনি সবসময় "আউটফিট "বলতেন যেমন স্টেট ব্যাংক  অফ ইন্ডিয়া একটি আউটফিট ! 
  • জনতার খেরোর খাতা...
    ভারত সন্ধানে - Pradhanna Mitra | Post Truth: Relating to or denoting circumstances in which objective facts are less influential in shaping public opinion than appeals to emotion and personal belief.৬ এপ্রিল তারিখে একটি জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্রে একটি ছোট্ট কলাম চোখে পড়েছিল। তারা আবার ইংরেজী সংবাদপত্র থেকে জেনেছেন, স্কুলের সিলেবাস, বিশেষত, ইতিহাসের সিলেবাসে বেশ কিছু বড়োসড়ো রদবদল হচ্ছে, যা সত্য অর্থে আপত্তিকর। ১১ এপ্রিল তারিখ উক্ত সংবাদপত্রে হিন্দোল ভট্টাচার্য মহাশয়ের একটা বড়ো কলাম বের হয়, যেখানে এই রদবদলের উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমাদের এদিকে এ নিয়ে তেমন হইচই হচ্ছে না। কারণ, ইতিহাস সত্য হোক কিম্বা মিথ্যা, বাবা-মায়েরা কেবল একটাই জিনিস চান, আর তা হল এই যে, এইসব ইতিহাসপাঠ অত্যাবশ্যকরূপে তার সন্তানকে ভালো রেসাল্ট তথা উন্নত ‘চাকর’ বানাতে সক্ষম কি না। কিন্তু দেশ জুড়ে যে এর একটা বড়োরকম বিবাদ হচ্ছে, তা সর্বভারতীয় সংবাদপত্র, ব্লগ, ভ্লগ, ম্যাগাজিন, ইন্টারনেট ইত্যাদি দেখলে বেশ টের পাওয়া যায়।ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে --- এই দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে একটাই প্রশ্ন, প্রকৃত ইতিহাসটি তাহলে কি? যদি ‘প্রকৃত’ জানতে সক্ষম হই, তাহলে বিকৃতিকরণ আপনি এসে ধরা দেবে। এখন, সময়ের সাথে সাথে ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত পরিবর্তন হয় বটে, কিন্তু ভাল করে স্টাডি করলে দেখা যাবে, তারও একটা ধারাবাহিকতা আছে, যা সত্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গিরগিটি বানায় না, যাকে আমরা ‘পোস্ট ট্রুথ’ বলি। তাই আমি, প্রকৃত-র খোঁজে যে বইটি হাতে তুলে নিয়েছিলাম, তা হল টনি যোশেফের ‘আদি ভারতীয়’ বইটি, যা Early Indian নামে খ্যাত।এখন প্রশ্ন এই যে, এই বইটিও প্রোপাগান্ডা নয় তা কে বলল? আসুন একটু খতিয়ে দেখা যাক্‌ --- এই বইয়ের উদ্দেশ্য ভারতের উৎস সন্ধান করা। এখন এই উৎস সন্ধানের ভিত্তি কি? টনি যোসেফ তিনতে এভিডেন্স এনেছেন – ১) জেনেটিক এভিডেন্স, ২) আর্কিওলজিক্যাল এভিডেন্স এবং ৩) লিঙ্গুইস্টিক এভিডেন্সজেনেটিক এভিডেন্সের দুটি মূল ভিত্তি --- ১) mtDNA, এবং ২) Y-DNA, প্রথমটি মা থেকে পরবর্তী প্রজন্মে, এবং দ্বিতীয়টি বাবা থেকে কেবলমাত্র ছেলের প্রজন্মে বংশানুক্রমে ধারারূপে এগিয়ে যায়। এখন আর্কিওলজিক্যাল এভিডেন্স থেকে প্রাপ্ত মানব-অবশেষের জিন থেকে আমরা পিছোতে পারব অতীতের দিকে, এবং এইভাবে আস্তে আস্তে প্রাগৈতিহাসিক ঘটনাক্রমকে জানতে পারব। বোঝাই যাচ্ছে, পুরো বিষয়টাই বিজ্ঞানসন্মত। এখানে কোনরকম কোন মহাকব্যিক কিম্বা শাস্ত্রোচিত দৃষ্টিভঙ্গি নেই। এখন এই জেনেটিক এভিডেন্সের ব্যাপারেও টনি যোসেফ ডিটেইলসে জানিয়েছেন বটে, কিন্তু তা আমি, এখানে আলোচনা করলাম না। বইটি পড়তে পারেন, অথবা ইউটিউবে এ ব্যাপারে অনেক ডকুমেন্টারি পাবেন। সেখান থেকে ব্যাপারটা আরও খোলসা হবে। অন্যদিকে লিঙ্গুইস্টিক এভিডেন্স হল মূলত লিপি এবং ভাষার ওপর ভিত্তি করে ইতিহাসকে জানার চেষ্টা, সেই ভাষা আধুনিক যুগে কীভাবে এসেছে সেটা একটা বড়ো গবেষণার পর্যায়। সেখানে আমরা তিনটে তত্ত্ব পাই --- ১) ইন্দো-ইউরোপিয়ান মাইগ্রেশান, ২) দ্রাভিডিয়ান সাবস্টেট এবং ৩) অস্ট্রোএশিয়াটিক ইনফ্লুয়েন্স। মূলত এই তিনটি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্টিত এই এভিডেন্স পূর্বোক্ত দুটো এভিডেন্সের সাথে সাজুয্য ঘটানোর চেষ্টা চলছে, অনেকাংশে সফলতা মিলেছে এবং আমরা একটা রূপরেখা আন্দাজ করতে পারছি।এই পদ্ধতিগুলো থেকে ভারতের ক্ষেত্রে ঠিক কি ক্রোনোলজি পাওয়া যাচ্ছে? মোট নটা সময়কাল পাওয়া যাচ্ছে --- প্যালেওলিথিক যুগ (২০ কোটি ~ ১০,০০০ খ্রীঃপূঃ), মেসলিথিক যুগ (১০,০০০ ~ ৬,০০০ খ্রীঃপূঃ), নিওলিথিক যুগ (৬,০০০ ~ ২,০০০ খ্রীঃপূঃ), ইন্দাস ভ্যালি সিভিলাইজেশান (৩৩০০ ~ ১৩০০ খ্রীঃপূঃ), বৈদিক যুগ (১৫০০ ~ ৬০০ খ্রীঃপূঃ), মৌর্য ও গুপ্ত যুগ (৩২২ খ্রীঃপূঃ ~ ৫৫০ খ্রীষ্টাব্দ), মধ্যযুগ (৫৫০ ~ ১৫২৬ খ্রীষ্টাব্দ) এবং কলোনিয়াল যুগ (১৫২৬ ~ ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দ)মোটামুটি এই যুগগুলোকে এবং পদ্ধতিগুলোকে ধরে নিয়ে যদি এগোনো যায়, তাহলে দেখতে পাবো, টনি যোসেফ বলছেন, সূদূর আফ্রিকা থেকে মানুষের আগমন ঘটেছে এবং পরবর্তীকালে বেশ কতকগুলি মাইগ্রেশান ঘটেছে। সেগুলো হল ---১) আউট অফ আফ্রিকা মাইগ্রেশান --- আধুনিক মানব অভিবাসী, ২) এনশিয়েন্ট মাইগ্রেশান --- জার্গোসের অভিবাসী, ৩) ইন্দো-আরিয়ান মাইগ্রেশান --- স্তেপভূমির অভিবাসী, ৪) দ্রাভিডিয়ান মাইগ্র্যান্টস --- হরপ্পার অভিবাসী, ৫) পরবর্তীকালে আগত বিভিন্ন অভিবাসী।অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত করছেন টনিভাই যে, আমাদের সভ্যতার সূচনা হরপ্পার হাত ধরে অন্তত নয়, কিম্বা মেহেরগড় থেকেও নয়। বরং হরপ্পা এবং মেহেরগড় নির্মাণে যাদের হাত ছিল, সেইসব অভিবাসীরা ধীরে ধীরে হাজার হাজার বছর ধরে এখানে আসে, ধীরে ধীরে বসতি স্থাপন হয়, ধীরে ধীরে নগর সভ্যতার পত্তন হয়, ধীরে ধীরে তার লয়-ও হয় এবং তারা সেখান থেকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে জম্বুদ্বীপের আরও গভীরে। তিনি লিখছেন, “ভারতীয় সংস্কৃতিতে জোর করে কৃত্রিম অভিন্নতা আরোপ করার জন্য অব্যাহত ও সর্বনাশা প্রচেষ্টার একটি কারণ আমাদের ইতিহাস রচনার ধরন, যেখানে প্রায়শই যুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে আত্মপক্ষ সমর্থন করা হয়েছে। যবে থেকে তথ্যাদি উপলব্ধ হয়েছে, ইতিহাস বইগুলি ঠিক সেই সময় থেকেই শুরু হয়; তার পূর্ববর্তী অংশগুলি হয় উপেক্ষা করা হয় বা খুব বেশি হলে সামান্য কয়েকটি অনুচ্ছেদ বা পৃষ্ঠার মধ্যে সেসব কথা সেরে ফেলা হয়।”এখন টনিভাইয়ের এই বইটির কতটা প্রোপাগান্ডা, কতটা পোস্ট ট্রুথ আর কতটাই বা সত্যতা আছে, সেটার বিচার করা দরকার। তবে তা অবশ্যই সনাতন পদ্ধতিতে নয়। বিজ্ঞাসন্মতভাবে। বিজ্ঞানের যুগে টেকনোলজিকে হাতিয়ার করে আমরা যদি সনাতন পদ্ধতির জয়গান করি, তাহলে সেটা বড়োই হাস্যকর। টনিভাই কিন্তু তা করেন নি। তিনি বিজ্ঞানসন্মত পদ্ধতিতেই এগিয়েছেন, তার বইটা পড়ে, অন্তত আমার, এইটুকুই মনে হল। মাঝখান থেকে ছোটবেলায় কাকাকে একটা ছড়া খুব বলতে শুনতাম, আমরা যখন জোরে জোরে ‘স্বরে অ’, ‘স্বরে আ’ পড়তাম তখন, সেইটাই বারবার করে আজ মনে পড়ছে, তবে তা আধুনিক পরিভাষায়, আর সেটা হল ---“ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোলপোস্ট ট্রুথে মাথা নেই, হয়েছি পাগোল।”======================Early IndiansTony josephJuggernaut PublicationPrice: 341/-বাংলা অনুবাদঃ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জীমঞ্জুল প্রকাশনমুদ্রিত মূল্যঃ ৩৯৯ টাকাছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা
    ভারতে মুসলমান কি  বেশি জন্মায়?  - PRABIRJIT SARKAR | সগর রাজার ষাট হাজার ছেলে ছিল। এসব মিথ। অর্থনীতির তত্বে আধুনিক যুগে তিনটে স্তর আছে (Theory of demographic transition)। প্রথমে প্রচুর বাচ্চা জন্মায় (অশিক্ষা আর অভাবে) আর মরে তাই জনসংখ্যা তেমন বাড়ে না। পরের ধাপে জন সংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি থাকে (চেতনার অভাবে) কিন্তু জন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি তে মৃত্যুর হার কমে তাই জনসংখ্যা বাড়ে। শেষ ধাপে শিশু জন্ম মৃত্যুর হার দুটোই কম থাকায় জন সংখ্যা বিশেষ একটা বাড়ে না। গত একশ বছরের ইতিহাসে ভারতে ও দেখা গেছে। হিন্দু মুসলমান গল্প এখানে নেই। আছে অশিক্ষা আর দারিদ্য। তাই নিচের তলার হিন্দু মুসলিম সবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে তফাৎ বেশি নেই। আমার মত অনেক হিন্দুর একটা কিংবা দুটো এবং আমার মুসলিম বন্ধুদের ও তাই। কিন্তু আমাদের ভাই বোন ৫ বা ৭ জন। খেটে খাওয়া গরিব মানুষের (হিন্দু মুসলিন নির্বিশেষে) ৪ বা ৫ সন্তান। একটা দেশের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। ভারতে হিন্দু মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত বাড়ছে বলে পাওয়া যায় নি। পাকিস্তানে হিন্দু খেদান হয়েছে তাই হিন্দুদের অনুপাত কমেছে ব্যাপক ভাবে।
    মুখোশ (কবিতা) - Tanusree Mukherjee | মুখোশ এক অদ্ভূত জিনিস তুমিও পরো, আমিও পরি ৷ওটা সরিয়ে নিলে ধরা পরবোতুমিও জানো,আমিও জানি ৷মুখোশের অন্তরালের বহুরূপতাতোমারও আছে,আমরও আছে ৷লালসা কামনা বাসনা -নিপুনতায় আড়াল করি,তুমি আর আমি ৷তুলাদন্ড হাতে নিয়ে ফিরি -পাল্লায় ভার বেশী কার,তোমার না আমার ৷মাপছি প্রতিনিয়ত মাপছিতুমি এগোলে,না আমি পিছোলাম ৷সুখ প্রদর্শনের খেলায় -তুমিও মজেছ,আমিও মজেছি ৷জেতা হারার লড়াই চলছেসামিল আছো তুমি,সামিল আছি আমি ৷মুখোশটা শক্ত করে এঁটে নাওআমি আর তুমি,কেউ যেন কাউকে না চিনি ৷দূষিত লোকটা আড়ালেই থাকনাহলে সর্বনাশ তোমারও,সর্বনাশ আমারও৷
  • ভাট...
    comment&/ | সিপিএমকেই আনুন। অন্যরা তো --- এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ। আরে দেখবো আবার কী? একটা কানকাটা খরগোশ, আরেকটা ডাবা হুঁকো, আরেকটা হাঁ করা বোয়াল।
    commentবকলম -এ অরিত্র | কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টো খারাপ নয়। বিশেষ করে ফেডারেলিসম নিয়ে গোটা চ্যাপ্টার রেখেছে, সংবিধান রক্ষা নিয়েও। সেখানে দুটো পয়েন্ট ভালো লাগলো (কারণ আধার ইত্যাদি নিয়ে) —
    5. We will review the Telecommunications Act, 2023 and remove the provisions that restrict freedom of speech and expression and that violate the right to privacy. 6. We promise to review all laws that interfere with the right to privacy and make suitable amendments to various laws to uphold the right to privacy.
     
    সিপিএমের ম্যানিফেস্টোতেও এটা আছে —
    * Scrapping of the mandatory use of Aadhaar and biometrics for all social
    welfare schemes.
     
    তৃণমূলে আধার নিয়ে কিছু নেই, তবে caa ও nrc বাতিল করার কথা বলেছে, npr বাতিল বলেনি। 
     
    ম্যানিফেস্টো গুলো কেউ পড়ে না, কিন্তু সেটা আলোচিত হলে ভালই হয়।
    commentবকলম -এ অরিত্র | শতাব্দী রায় বলেছে বিজেপি যেভাবে খুব চেঁচিয়ে জয় শ্রীরাম বলে সেটা ভীষণ খারাপ, কিন্তু আস্তে করে বললে (কিন্তু ফিসফিসিয়ে নয়, তাহলে কানে বাতাস লাগে) সেটা একেবারে মা-মাটি-মানুষীয় ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাপার হয়। আরও বলেছেন, পার্টি যার যার কিন্তু রাম নবমী সব্বার।
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত