এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    ইদবোশেখির লেখাপত্তর - গুরুচণ্ডা৯ | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়শীতকাল বইমেলা হইচই-এর দিনকাল ফুরিয়ে এসে গেল শান্ত হয়ে বসে লেখালেখির কাল। বাইরে তাপমাত্রা বাড়ছে রোদ্দুরের জন্য, নির্বাচনের জন্য। সাথে কোথাও প্যাচপ্যাচে ঘাম তো কোথাও ঝরঝর বৃষ্টি। সন্ধ্যের আবছায়ায় দোকানে ভিড় জমায় সারাদিন রোজা রাখা ক্লান্ত মানুষ, গাজনের প্রস্তুতি নেওয়া শ্রান্ত মানুষ, চৈত্রসেলের হাতছানিতে মুগ্ধ মানুষ। টুপটাপ জমে ওঠে গল্পেরা, কবিতারা। নির্বাচনী জনসভার কোণাকাঞ্চিতে, ইফতারির থালার পাশে, গাজনের সন্ন্যাসীর ঝোলায় চুপটি করে অপেক্ষা করে তারা মানুষের জন্য। আমরা আপনাদের কাছে ডাক পাঠিয়েছিলাম তাদের খপ করে ধরে ফেলে, ঝপ করে লিখে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে। এসে গেছে তারা। আগামী কয়েকদিন ধরে রোজ দুটি-তিনটি করে তারা এসে হাজির হবে বুলবুলভাজার পাতায় - টাটকা ভাজা, গরমাগরম। পড়তে থাকুন। ভাল লাগলে বা না লাগলে দুই বা আরো অনেক লাইন মন্তব্য লিখে জানিয়ে দিন সে কথা। মন চাইলে, গ্রাহক হয়ে যান লেখকের। আর হ্যাঁ, আপনিও লেখা নিয়ে চলে আসুন গুরু আর চন্ডালের আড্ডা গুরুচন্ডা৯-র পাতায়।সূচীপত্রঃস্মৃতিচারণবর্ষশেষ, বর্ষশুরু: অমিতাভ চক্রবর্ত্তীও চাঁদ: সেমিমা হাকিমসারেতে থাই নববর্ষ: হীরেন সিংহরায়চান রাত: সাদেকুজ্জামানকাব্যজলের সমাধি: জগন্নাথ দেব মন্ডলগিরগিটি ও অন্যান্য কবিতা: ফরিদাসমুদ্রে সনেট: সোমনাথ রায়পাঁচটি কবিতা: অমিতরূপ চক্রবর্তীতিনটি কবিতা: অরিত্র চ্যাটার্জিউপগ্রহ: অমিত চট্টোপাধ্যায়আব্বু আব্বা বাবা: মাজুল হাসানশেষের কবিতা: দীপ্তেনকবিতাগুচ্ছ: মণিশংকর বিশ্বাসসিন্দবাদের গল্প ছড়ানো ছাদে: সুকান্ত ঘোষগপ্পোখুচরো: সুমন মুখার্জীসুফি: আফতাব হোসেন রতন, দ্য ব্যাকবেঞ্চার: নরেশ জানাডাক দিয়ে যায়: এস এস অরুন্ধতীমহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও মার্কণ্ডেয়র চিঠি: রমিত চট্টোপাধ্যায়পাখির অন্তর্ধান রহস্য: মৃণাল শতপথীএই ঘুম শারীরবৃত্তীয়: দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ওয়েথসাম: উপল মুখোপাধ্যায়কোশিশ কিজিয়ে: কিশোর ঘোষালটুনিমুনির জীবন: দময়ন্তীদৌড়বাজ হাউসকীপার: সমরেশ মুখোপাধ্যায়হন্য: সৈয়দ তৌশিফ আহমেদসীমান্তরেখা: প্রতিভা সরকারসাদা খাম: দীপেন ভট্টাচার্যসুর: অনুরাধা কুন্ডানভেলাফকির ফয়জুল্লাহ: মুরাদুল ইসলামনিবন্ধ আজ নববর্ষের আখ্যান: সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
    সুর - অনুরাধা কুন্ডা | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়ফোন বেজে উঠতেই শ্যামশ্রীর গলা ভেসে এলো। ছটফটে, তরতরে শ্যামশ্রীর গলা নয়। রাগী, কড়া শ্যামশ্রীর গলাও নয়। চটপটে, স্মার্ট নয়। একটু ভেজা ভেজা। দরদী। নরম।ত্রিলোকেশের এখন ঠিক যেমন দরকার তেমনটি।যখন যেমন দরকার, তেমনটি।যখন খোলামেলা চাই তখন খোলামেলা।যখন লাজুক চাই তখন লাজুক।যখন লাস্য চাই তখন লাস্য।এইভাবেই। ঠিক এইভাবেই প্রোগ্রাম করা আছে। কন্ঠস্বর, চলাফেরা, ওঠাবসা, ফুড হ্যাবিট, যৌনতা , এমনকি পটি টাইমিং পর্যন্ত।শ্যামশ্রী না। শ্যামশ্রীর ক্লোন। শ্যামশ্রী দত্তগুপ্ত টু। হাইট পাঁচ পাঁচ। রঙ মাজা। চুল স্ট্রেইট। গোল্ডেন হাইলাইট।অবিকল ওরিজিনাল শ্যামশ্রী।শ্যামশ্রীর চেহারা নিয়ে তো কোন সমস্যাই ছিল না ত্রিলোকেশের। এককথায় ভেরি অ্যাট্রাকটিভ। হাইলি ডিজায়ারেবল। শ্যামশ্রীর নিজের অবশ্য সেক্সি শব্দটা বেশি পছন্দ। এটা ত্রিলোকেশের একেবারে হজম হত না। যদিও পরের বৌকে সে হামেশা সেক্সি বলে কমপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকে কিন্তু শ্যামশ্রী সম্পর্কে সে ভীষণ সেনসিটিভ ছিল। তার নিজের মতে। শ্যামশ্রীর মতে শব্দটা হবে পজেসিভ। ওভার পজেসিভ। সাফোকেটিংলি পজেসিভ।ছয় ফিট এক ইন্চির ত্রিলোকেশ দত্ত এইসব মতান্তর বরদাস্ত করে না। তার কথাই শেষ কথা। তার মা শুনেছে। ঠাকুমা শুনেছে। বাবা অবশ্য শোনেনি। ত্রিলোকেশের মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি গত হয়েছেন। ত্রিলোকেশ সেল্ফ মেড ম্যান। আই টি সেক্টরে প্রিটি ফেমাস। শ্যামশ্রীকে সে নিজেই পছন্দ করেছিল। শী ওয়জ আ ট্যালেন্টেড সিংগার।ওয়জ।ছিল। এখন নেই। কেন নেই? ত্রিলোকেশ তো কখনও শ্যামশ্রীকে গান ছাড়তে বলেনি! বরং সে বলেছে গো ফর রেকর্ডিংস। টেক মিউজিক লেসনস। প্রোগ্রাম করো।আসলে শ্যামশ্রী ঠিক প্রোগ্রাম বা রেকর্ডিং এর মেয়ে নয়। কেন নয় সেটা ত্রিলোকেশ ঠিক বুঝতে পারতো না।অথচ অসম্ভব ভালো টোনাল কোয়ালিটি। মসৃণ অথচ দানাদার গলা।ত্রিলোকেশ অত গান টান বোঝে না। কিন্তু সবাই বলতো শ্যামশ্রীর গলা অসামান্য। সো ডু রিওয়াজ। অনুষ্ঠান করো। নাম কামাও। লেট পিপল নো ইওর ট্যালেন্ট।ত্রিলোকেশের অফিসে হিউজ অ্যানুয়াল প্রোগ্রাম হয়। নাচ,গান। খানা পিনা। পার্টি টপ লেভেলের।। শুভা মুদ্গল আসেন। রশিদ খান এসেছেন। রেখা ভরদ্বাজ কি খুশি শ্যামশ্রীর গান শুনে।আরে ওয়াহ! ক্যা কোমল নিখাদ লগায়া। ব্যস। ঐ একবার।শ্যামশ্রী আর কখনো অ্যানুয়াল ইভেন্টে গেলই না।নাও হু কুড টলারেট দিস? পরের দুবছর একা গেল ত্রিলোকেশ।অ্যান্ড সাচ এমব্যারাসিং কোয়েশ্চনস! তিলুকে তাই ডিসিশনটা নিতেই হল।তিলু। হ্যাঁ।ঐ নামেই ত্রিলোকেশকে ডাকতো শ্যামশ্রী।অ্যান্ড হি হেটেড দ্যাট।আফটার টু ইয়ারস। এর বেশি ধৈর্য্য রাখা অসম্ভব। লং ড্রাইভে যেতে যেতে হুট করে গাড়ি থামিয়ে দিত শ্যামশ্রী। মাঠ। পুকুরের ধার। বাঁশঝাড়। ড্রাইভ করতে ভালোবাসত নিজে।ত্রিলোকেশ রিল্যাক্স করতো। শ্যামশ্রী ওয়ান।ওর দীঘল শরীর ঘিরে সাদা হলুদ ইক্কতের আবরণ। পায়ের রূপোর পায়জনিয়া।ও গেয়ে উঠতো..দেখিয়া সজলঘন...অথবা দূরে কোথায় দূরে দূরে....কেমন পেনসিভ সুর। ত্রিলোকেশের এসব ভালো লাগত না।ফাঁকা মাঠে কাকে গান শোনাচ্ছে তার বৌ?আরে বাবা, গাইতে হলে ইউ নিড অডিয়েন্স। হ্যায় না? চিরদিনের টপার ত্রিলোকেশ। পরীক্ষাতে টপার। চাকরিতে টপার। বৌয়ের সিলেকশনেও টপার হতে হবে। তাই তো শ্যামশ্রী ওয়জ সিলেক্টেড।কিন্তু এরকম বৌ নিয়ে সংসার প্রিটি ডিসগাস্টিং। এত মুডি। এত আনপ্রেডিকটেবল।একদিন শ্যামশ্রী নিজেই বললো।আমি চলে যাচ্ছি তিলু।হাউ অফেনসিভ! ত্রিলোকেশ দত্তকে কেউ ছেড়ে যেতে পারে! ইজ ইট পসিবল? রিসেপ্টিভ এন্ডে কখনো থাকেনি সে।কিন্তু শ্যামশ্রীকে আটকানো গেল না। মুম্বাই, তিনহাজার স্কোয়ার ফিটের দুপ্লে, শাঁসালো বর, পার্টি, কন্টিনেন্টাল ট্যুওর ছেড়ে সে চলে গেল বৃষ্টিগুড়ি নামে একটা জায়গাতে। সেখানে নাকি স্কুলে মাষ্টারি করে সে।পিওর ননসেন্।কিন্তু ডিভোর্স উড বি আ স্ক্যান্ডাল।রাম, শ্যাম, যদু, মধু নয়। ত্রিলোকেশ দত্ত। সি ই ও। আরহানহাসিস। শ্যামশ্রীকে লুজ করা যাবে না। শী ইজ আ প্রাইজ পিস।তাই গ্যাস, অম্বল, বদহজম নয়। ফোন কলস। মানি। এবং ক্ষমতা।অ্যাজ আ রেজাল্ট- শ্যামশ্রী টু।কেউ জানল না। বুঝল না। ত্রিলোকেশের মাও না।একদিন শ্যামশ্রী টু উবের করে চলে এলো ত্রিলোকেশেরবাড়িতে।ত্রিলোকেশ বললো- নাচো। রাম্বা হো রিমিক্স।শ্যামশ্রী টু নাচেত্রিলোকেশ বললো- আজ অফিস পার্টিতে তোমাকে গজল গাইতে হবে। চুলে ফুল দেবে।শ্যামশ্রী টু চুলে ফুল দিয়ে গাইল।বললো, তোমাকে কি বলে ডাকবো?ত্রিলোকেশ একটু ভেবে বললো- টিডি।শ্যামশ্রী টু ঘাড় নাড়লো।শ্যামশ্রী ওয়ানকেও ও তাইই ডাকতে বলেছিল। সে হেসে কুটিপাটি হয়ে বলেছিল, মাগো, তুমি কি আমার অনার্স ক্লাসের স্যর নাকি তিলু? ওর এই হেসে উড়িয়ে দেওয়া ব্যাপারটা জঘন্য লাগতো ত্রিলোকেশের। জঘন্য লাগতো ওর ইচ্ছেগুলো। অনিচ্ছেগুলো।ত্রিলোকেশ মধ্যরাতে শ্যামশ্রীর নাইটির স্ট্র্যাপ খুলতে চাইলে, কতরাত শ্যামশ্রী বলেছে, আজ ইচ্ছে করছে না।ত্রিলোকেশ নোংরা লোক নয়। কিন্তু তার ইগো হার্ট হত।শ্যামশ্রী টু কখনো না বলে না।ত্রিলোকেশ চাইলে সে আপেল কেটে দেয়, রসালো করে ভেজে দেয় সসেজ।শ্যামশ্রী ওয়ান ত্রিলোকেশ কফি খেতে চাইলে, তাকে কফি দিয়ে নিজে চা নিয়ে বসতো। ত্রিলোকেশ আপেল খেতে চাইলে একগাদা পেয়ারা কেটে নিয়ে এসে বলতো, বেশি ভিটামিন আছে। খাও।শ্যামশ্রী টু কখনো অবাধ্য হয় না।সে ত্রিলোকেশকে কখনো তিলু বলে না। চা চাইলে দুজনের জন্যই চা করে।অ্যাভোকাডো আর ব্রকোলি স্যালাড চাইলে মুড়িমাখা নিয়ে আসে না শ্যামশ্রী ওয়ানের মতোশরীর উন্মুক্ত করতে বললেই সে ত্রিলোকেশের জন্য বিছিয়ে দেয় তার মখমলসদৃশ দেহ।অতিথিদের সামনে গান গাইতে বললে সে গান গায়। রেকর্ডিং করবে জানুয়ারিতে।টিডির অফিস প্রোগ্রামে সে নিয়মিত গায়িকা।শুধু তার টোনাল কোয়ালিটি একটু সরু হয়ে গেছে। তার কোমরও সরু।ত্রিলোকেশের ইরিটেশন হয় না। আজ ফোন করে টিডি শ্যামশ্রী টু কে বললো, এমা দাৎসি খাবো। রেড ওয়াইন সহযোগে।শ্যামশ্রী টু মধুর কন্ঠে বললো, ইট উইল বি রেডি।বাড়ি ফিরে টিডি বললো , ওয়েস্টার্ণ শুনবো আজ।আর লেট আস প্ল্যান বেবি নেক্স্ট ইয়ার।শ্যামশ্রী টু একটা জেরেমি লোপেজের স্যাক্সোফোন চালিয়ে দিল।তারপর পুতুলের মতো ঘাড় নেড়ে বললো, ওকে। নেক্সট ইয়ার হুইচ মান্থ? টেবল পরিস্কার হয়ে গেলে শ্যামশ্রী টু স্নানে গেল। যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলো, টিডি, আজ কোন রঙের নাইটি পরবো?ত্রিলোকেশ দত্ত আজ কেমন যেন অন্যমনস্ক। অথচ সবকিছু তার পছন্দমতোই হয়ে চলেছে। আজ ঝিবঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। নভি মুম্বাইতে বৃষ্টি বড়ো সুন্দব।কিন্তু স্যাক্সোফোনের শব্দ পার হয়ে কি একটা সুর ত্রিলোকেশের কানে চলে আসছে।সে কিছুতেই মনে করতে পারছে না।অন্যমনস্কভাবেই বললো, পিংক। বেবি।গানটা কি শ্যামশ্রী ওয়ান গাইতো?সে সুরটা ভাঁজবার চেষ্টা করলো। পারলো না।শ্যামশ্রী টু বাথরুমে চলে গেছে।ত্রিলোকেশ ফোনটা নিয়ে শ্যামশ্রী ওয়ানকে পেতে চাইল।যাস্ট ওয়ান্স। মাত্র একবার।ত্রিলোকেশকে মনে করতেই হবে।কিন্তু বৃষ্টিগুড়ি একটা ধ্যাধ্ধেড়ে গ্রাম। সেখানে কিছুতেই ত্রিলোকেশের কল পৌঁছালো না।স্যাক্সোফোন আরো জোরে করে দিল ত্রিলোকেশ।মুখ বিকৃত করে বললো. ডিসগাস্টিং!
    সাদা খাম - দীপেন ভট্টাচার্য | অলংকরণ: রমিতজানালাটা খুলে বাইরের পাহাড়ের খাড়া দেয়ালটা একবারই দেখানো হয়েছিল তাকে। মাঝে গভীর গিরিখাত। জানালায় ছিল কড়িবর্গা, সেটা ধরে গিরিখাতের তল সে দেখতে পায়নি। জানালাটা খোলা হয়েছিল, তাকে জানতে দেওয়া হয়েছিল জানালার ওই পাড়ে আছে শৈলশিরা, কারণ তারা জানত সে পাহাড় ভালোবাসে। এতো কাছে পাহাড় থাকা সত্ত্বেও সেটি সে দেখতে পাবে না – এটাও এক ধরণের নিপীড়ন। জানালাটা আর এক বার খোলা হয়েছিল পরে, তার জন্যই। তার স্ত্রী তাকে ফিরে আসতে না করেছিল, অনেক অনুনয় করেছিল, কিন্তু সে শোনেনি। বিমানবন্দরে নামামাত্রই তাকে আটক করা হয়েছিল। নিয়ে আসা হয়েছিল রাজধানী থেকে বহু দূরে এই বন্দিশিবিরে। সে জানত এরকমই হবে।সকালে তাকে নিয়ে যাওয়া হতো অন্য একটি ঘরে, পার হতে হতো একটি করিডর, এক পাশে দেয়াল, অন্য পাশে পর পর আটটি কামরা, এর মধ্যে একটি ছিল তার। কিন্তু সেটা সে বুঝতে পারত না, কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকত চোখ। ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগলে বুঝতে পারত বাড়িটি থেকে সে বের হয়েছে। এর পরে ত্রিশটি পদক্ষেপ, অন্য একটি বাড়িতে ঢোকা। সেখানে একটি ঘরে তাকে চেয়ারে বসিয়ে চোখের বাধন সরিয়ে নেওয়া হতো। মিনিট দশেক অপেক্ষার পর আসত কমিসার। প্রথম দিন সে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমি কে আপনি জানেন?’ কমিসার বলেছিল, ‘আমি জানি আপনি জনগণের শত্রু, এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।’ বেশি জানা কমিসারের জন্য ভালো নয়। বহুদূরে রাজধানী, সেখান থেকে একটা গাড়ির প্রায় পুরোটা দিন লেগে যায় এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে। তবু দু দিন অন্তর একটি করে গাড়ি আসে। দুদিন অন্তর কমিসারের কাছে আটটি সাদা খাম পৌঁছে দেওয়া হয়। নির্দেশনামা। সেই নির্দেশ পালন করে কমিসার আবার আটটি খামে প্রমাণসহ উত্তর পাঠিয়ে দেয় দু দিন পরে।কমিসার তার কাছে থেকে কোনো উত্তর জানতে চাইত না, কোনো জবানবন্দী নয়। বেশিরভাগ দিনই তাকে বসিয়ে রাখা হতো, আর কোনো কোনো দিন আসত একটা শারীরিক আঘাত। আঘাতটা আসতো কোনোরকম অগ্রিম জানান না দিয়ে। কমিসার নিজ হাতেই সেটা করত। এমনই সব শর্ত – সাদা খামের শর্ত। আর এক দিন তার জানালাটা খোলা হয়েছিল। সার্জেন্ট এসে জানালাটা খোলে, একটা ভারি তালা দিয়ে বদ্ধ থাকে জানালা। সার্জেন্ট জানালা খুলে দিয়ে তাকে বলেছিল, আধ ঘন্টার মধ্যে আবার জানালা বন্ধ হয়ে যাবে, তাই লোভীর মতো সে বাইরের পাহাড়টা শুষে নিতে চাইছিল তার সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে। এরপর সে দেখতে পায় বাইরের শূন্যে উড়ন্ত এক মানুষকে, সমস্ত ভার থেকে মুক্ত হয়ে সে পড়ে যাচ্ছিল গিরিখাতে, তার দেহ আঁকছিল এক প্রাসের গতিপথ। সেদিন বাড়ির ছাদ থেকে আটজন বন্দীর একজনকে এমনভাবে ছুঁড়ে ফেলা হয়, যাতে সবক’টা কক্ষ থেকেই সেই গতিপথ দেখা যায়। সাদা খামে শুধু লেখা ছিল এই নির্দেশ, ‘সাত নম্বর বন্দীকে গিরিখাতে ফেলে দেবেন ছাদ থেকে। এর আধ ঘন্টা আগে সব কক্ষের বাইরের জানালা খুলে দেবেন। বন্দীকে এমনভাবে ফেলবেন যেন সবক’টা জানালা থেকে তা দেখা যায়। প্রমাণ পাঠাবেন।’একটি ক্যামেরা বরাদ্দ ছিল সেই শিবিরে। ছাদে সাত নম্বর কক্ষের বন্দীকে উঠিয়ে, দুজন সার্জেন্ট দু দিক থাকে তার হাত ও পা ধরে, চ্যাংদোলা করে ছুঁড়ে দিয়েছিল গিরিখাতে। কমিসার ছবি তুলেছিল। ছবির ক্যাসেটটি পরে গাড়িতে রাজধানী যাবে। যাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তার নাম ছিল আলাজিয়া। শূন্য উড়ে যাবার সময় তাকে চিনতে পেরেছিল সে। আলাজিয়া যে এই শিবিরেই ছিল সেটা সে তখনই জানল। পাঁচ বছর আগে দেশের সীমানার বাইরে চলে যাবার আগে তাদের শেষ দেখা, আলাজিয়াকে তার অল্প সময় পরেই আটক করা হয়।শূন্যে উড়ে যাওয়া আলাজিয়ার হৃদস্পন্দনকে ধারন করতে চাইল সে, যদিও সেই চিন্তার বেশ কয়েক মিনিট আগে, গভীর গিরিখাতের নিচে, আলাজিয়ার শরীর অভিকর্ষজ ত্বরণে ভূপাতিত হয়েছিল চরম বেগে। ‘আমি এখনো বেঁচে আছি, হয়তো আর একটা দিন, কিংবা সপ্তাহ, মাস, একটা বছরও হতে পারে, কিন্তু একদিন আলাজিয়ার মতো আমিও উড়ব,’ এরকম একটা চিন্তা তার মস্তিষ্কের কোনো এক কোনায় জেগে উঠে মিলিয়ে যায়, কিন্তু মিলিয়ে যাবার আগে সেটা তার অনুভবকে, অস্তিত্বকে স্বচ্ছতা দেয়।দুদিন পরে তাকে আবার কমিসারের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে চেয়ারে বসিয়ে সার্জেন্টরা চলে যায়। সামনে একটা টেবিল। দশ মিনিট পরে কমিসার ঘরে ঢোকে, কিন্তু সামনের চেয়ারটায় বসে না, বরং পেছনে থাকে। পেছনে থাকে, পায়চারি করে। মিনিটখানেক পরে বলে, ‘আমি যদি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারতাম এমনভাবে যাতে কেউ সেটা খেয়াল করবে না।’ এরপরে সে পেছনের জানালাটা খোলে, এই প্রথম সেই জানালাটা খোলা হলো তার উপস্থিতে। রোদ একটা চতুষ্কোণ স্তম্ভ বেয়ে তার চেয়ারের পাশে একটা উজ্জ্বল আয়াতক্ষেত্র হয়ে থাকে। এরপরে খুব দ্রুত, এত দ্রুত যে চোখের দুটো পলকের মধ্যে যে সময়টা থাকে, সেই সময়টুকুর মধ্যে, কমিসার তার বাঁ হাতটিকে ধরে টেবিলের ওপর মেলে দিয়ে, একটা চাপাতি দিয়ে কনে আঙুলটাকে হাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। ঘটনাটির চকিত বিহ্বলতা এমনই ছিল যে, সে প্রথমে কোনো ব্যথাই অনুভব করল না। আঙুলটা টেবিল থেকে গড়িয়ে মেঝেতে পড়ল। অনেক সময় নিয়ে যেন পড়ল। একজন সার্জেন্ট সাথে সাথেই ঘরে ঢুকে আঙুলটা মেঝে থেকে তুলে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে টেবিলের ওপরই রাখল, তারপর দ্রুত কোথা থেকে ব্যান্ডেজের কাপড় বের করে তার বাঁ হাতটা মুড়িয়ে দিল। ব্যথাটা শুরু হতে কয়েক মিনিট লাগল, তার আগে সে টেবিলেই মাথা নিচু করে বসে ছিল। এক অদ্ভুত উদাসীনতায় সে কনিষ্ঠাকে জীবন থেকে ত্যাজ্য করে দিতে চাইল, মনে করল তাতে ব্যথার উপশম হবে। ব্যান্ডেজটা লাল হয়ে যেতে থাকে। দুই সার্জেন্ট তাকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যায়, তার চোখ খোলা ছিল। এই প্রথম সে দেখত পেল তাদের শিবিরটি কেমন দেখতে। এখানে বিলাসিতার কোনো স্থান নেই, ন্যূনতম সরঞ্জামে বানানো হয়েছে তাদের একতলার কারাগারটি। চারদিকে মরু রুক্ষতা, কিছু পাথর, দু একটি অতি উষ্ণ আবহাওয়ার গাছ। না, রাজধানী থেকে এতদূরে তার কখনই আসা হয়নি। তাকে ছয় নম্বর কক্ষে ঢুকিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় সার্জেন্টরা। একটু পরে কমিসার ঢোকে, তার হাতে একটা বাক্স। বাক্স থেকে একটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ বার করে সে, একটা শিশি থেকে সিরিঞ্জে তরল ঢোকায়, তারপর তার বাহুর ওপরে সিরিঞ্জের সুঁইটা প্রবেশ করায়।এরপরে সে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙে বাইরের করিডরে তুমুল চেচামেচিতে। একটা ভোঁতা ব্যথা মনে করিয়ে দেয় সে একটা আঙুল হারিয়েছে। দরজা খুলে যায়, দুই তরুণ, তাদের সে চেনে না। তারা উত্তেজিত উচ্ছ্বসিত। ‘আমাদের বরেণ্য নেতা, নেতা!’ তারা চিৎকার করে, তাদের আনন্দকে ধরে রাখা যাচ্ছিল না। বিছানা থেকে তারা তাকে উঠতে সাহায্য করে। বাইরে রোদে নিয়ে যায়, সেখানে অপেক্ষা করছিল আর এক নেতা – তাকে তরুণেরা ‘কাপিতান’ বলে সম্বোধন করে। চত্বরের এক কোনায় দুটি দেহ পড়ে আছে।‘বিপ্লব সফল হয়েছে,’ কাপিতানের মুখমণ্ডল গর্বে স্ফীত, ‘আপনাকে আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি।’ কাপিতানের পেছনে ছজন প্রাক্তন বন্দী, তাদের কাউকেই সে চিনতে পারল না। আলাজিয়ার মতো এরা কেউই উড়তে পারেনি। ‘আপনাকে আমরা রাজধানীতে নিয়ে যাব।’ এই সময়ে কমিসারের ঘর থেকে একটি ফোনের আওয়াজ ভেসে আসে। আর একজন তরুণ সেই ঘর থেকে বের হয়ে আসে, ‘কাপিতান, আপনাকে চাইছে, রাজধানী থেকে।’ ফোন ধরে কাপিতান আবার ফিরে আসে, তার মুখমণ্ডল গম্ভীর। ‘স্যার, নতুন পরিচালনা পর্ষদ আপনাকে এই শিবিরের কমিসার নিয়োগ করেছে। অভিনন্দন, স্যার।’ উত্তর দিতে দেরি করে না সে। ‘আমি এই পদ প্রত্যাখান করছি, আমাকে রাজধানী নিয়ে চলুন।’ ‘আমার এতে কোনো হাত নেই, স্যার। আমি বিপ্লবের ছোটো এক যোদ্ধা মাত্র।’ কাপিতান তার তরুণ সহকর্মীদের মাথা নাড়িয়ে কিছু একটা ইঙ্গিত করে। তারা কমিসারের ঘরে গিয়ে পুরাতন কমিসারকে বের করে নিয়ে আসে, তার হাতে হাতকড়ি, মুখাবয়বে আঘাতের চিহ্ন। ‘এই লোকটি আপনার ওপর অত্যাচার করেছে, এখন থেকে সে আপনার অধীনে,’ বলে কাপিতান। তরুণদের উদ্দেশ্য করে বলে, ‘একে এক নম্বর কক্ষে নিয়ে যাও।’মাথার ওপরে প্রায় সূর্য, তার তাপ বাড়তে থাকে, হাতের ভোঁতা ব্যাথাটা তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে। ‘আমার চিকিৎসা লাগবে,’ সে বলে। তার কন্ঠস্বর শুষ্ক। তার হাতের দিকে তাকায় কাপিতান। ‘নিশ্চয়, আমি রাজধানী গিয়েই আপনার জন্য চিকিৎসক পাঠাবো। আর আপনার জন্য একজন নতুন সার্জেন্ট রেখে গেলাম, খুব করিৎকর্মা, ও আপনাকে দেখে রাখবে।’তাকে ফিরে যেতে না করেছিল তার স্ত্রী। স্ত্রীর অনেক অনুনয় – ধুলো উড়িয়ে চলে যাওয়া কাপিতানের গাড়িটা দেখতে দেখতে - তার এখন মনে পড়ে। পরদিন সন্ধ্যায় রাজধানী থেকে একটা বড় গাড়ি আসে, তাতে সাতজন নতুন বন্দী। তাদের জন্য বরাদ্দ হলো সাতটি কক্ষ। গাড়ির সঙ্গে আসে আটটি সাদা খাম, আটজন কয়েদীর জন্য নির্দেশনামা। গাড়িতে কোনো চিকিৎসক ছিল না। তার পরদিন সকালে পুরাতন কমিসারের সঙ্গে দেখা করতে যায় সে, কারাগারের প্রথম কক্ষে। পুরাতন কমিসার বলে, ‘চাকার পাখি কী জিনিস জানেন? সেটা হল চাকার কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত বিস্তৃত যে শলাকা, চাকার গোলাকৃতি আকার এই পাখিগুলো ধরে থাকে। তবে এই পাখিগুলোর সেরকম দাম নেই।’চাবি দিয়ে বাইরের জানালার তালাটা সে খুলে দেয়। কারাগারের ছোটো চৌখুপি জানালার বাইরে গিরিখাতের মসৃণ দেয়াল। সকালের সূর্য মসৃণ পাথরের ওপর ঝলকায়। সেই ঝলকানিতে সে জীবন খোঁজে। পুরাতন কমিসার বলে, ‘আমার ঘরে টেবিলের সর্বনিম্ন ড্রয়ার খুললে নিচে যে পাটাতন, সেটা উঠিয়ে কিছু কাগজপত্র পাবেন। আমি চলে গেলে ওইগুলো যদি একটু পৌঁছে দেন …।’ কারাগারের জানালাটি সে বন্ধ করে না। কমিসারের ঘরে ফিরে এসে সে কাগজগুলো খুঁজে পায়। সেগুলোর একটিতে লেখা, ‘আমার সুপ্রিয়া, এখানে সূর্য কিছুই ক্ষমা করে না। সেই অগ্নিগোলক তোমরা কেমন আছ, কোথায় আছ, কীভাবে আছ – এসব কোনোকিছুই আমাকে ভাবতে দেয় না। রাজধানী থেকে নির্দেশনামা পাই, সেই নিদারুণ আদেশগুলো আমাকে এমন এক অস্তিত্বে রূপান্তর করে যাকে তুমি চিনবে না। তুমি জানো এই অপরিচিত হবার মূল্য হলো আমাদের ছোটো মেয়েটির আর তোমার জীবনের নিশ্চয়তা। ওরা তোমাকে কীভাবে রেখেছে জানিনা, শুধু আশা করতে পারি এই অন্ধকার একদিন দূর হবে।…’ আর একটি চিঠির কিছু অংশ – ‘এই চিঠি হয়তো কোনোদিন তুমি হাতে পাবে। ততদিনে আমাদের মেয়ে বড় হয়ে গেছে। তুমি বুঝতে পারছ এই দূর মরুবাস থেকে আমার আর ফেরা হবে না …’চাকার পাখি, এই মরুবাস থেকে তার কি আর ফেরা হবে? গতকাল সন্ধ্যায় পাওয়া নির্দেশনামাগুলো টেবিলে পড়ে আছে। এক নম্বর কক্ষের সাদা খামটা সে আবার খোলে। ভেতরে আরো শুভ্র, আরো সাদা একটি কাগজ, তাতে লাল কালিতে টাইপ করা – ‘এক নম্বর বন্দীর বাঁ হাতের ছোটো আঙুল কেটে, প্রমাণ হিসেবে সেটি একটি ব্যাগে করে পরের গাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন।’ নতুন কর্তৃপক্ষ কি তার স্ত্রীর খোঁজ পেয়েছে? টেবিল থেকে উঠে সে ঘরের কোনায় রাখা হিমায়কটি খোলে। একটি প্লাস্টিক ব্যাগে কাপড়ে মুড়িয়ে রাখে আছে তার কনিষ্ঠা আঙুলটি। পরের গাড়িতে প্রমাণ হিসেবে সে এটা পাঠিয়ে দিতে পারে, তার আরো কয়েকটা দিন লাগবে প্রস্তুত হতে, এই মরু কারাগার থেকে পালাতে। এর মধ্যে সূর্য থেকে দূরে থাকতে হবে। সূর্য তার স্ত্রী কোথায় আছে, কীভাবে আছে তা ভাবতে দেবে না।
  • হরিদাস পালেরা...
    চান রাত!  - মহম্মদ সাদেকুজ্জামান শরিফ | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়ইদের আসল মজা কখন? বয়স্ক মানুষ, বাড়ির মা খালাদের খবর জানি না, বাকি সবার সম্ভবত একটাই রা হবে, তা হচ্ছে ইদের আগের রাত মানে চান রাত! কোন কথা হবে না, সবাই মেনে নিবে যে আসল মজা আগের রাতেই। কী হয় এই রাতে? কিচ্ছু না, স্রেফ গুলতানি মারা চলে, লম্বা আড্ডা চলে। এই দিন সবাই দেরি করেই বাড়ি ফিরবে এইটা অলিখিত আইন। আড্ডার মধ্যেই আগামী দিনের নীতি নির্ধারণ হয়ে যাচ্ছে, নতুন কিছুর ইঙ্গিত তৈরি হচ্ছে, প্রেমের চাবি নাড়াচাড়া হচ্ছে, প্রাণ খোলা হাসি হচ্ছে! এই রাতে মন খারাপের কোন জায়গা নেই। মা খালাদের কথা জানি না কেন বললাম? কারণ এই রাতে তাঁদেরকে প্রচুর খাটাখাটনি করতে হয় ইদের প্রস্তুতি হিসেবে। তাই তাঁদের চান রাত খুব মজায় কাটবে এইটা সম্ভবত বেশি বেশি কল্পনা। তাই জানি না বললাম। কিশোর কিশোরী, তরুণ তরুণী, সবারই একই রকম অনুভূতি হবে। মেয়েরা হাত ভরতি করে মেহেদি দিচ্ছে, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি দৌড়াদৌড়ি চলছে। কারণ মেহেদি শিল্প হাতে গোনা দুই একজনই পারে, আর চান রাতে তাকে ঘিরেই বসে থাকে বাকিরা। উপগ্রহের মতো ঘুরপাক খেতে থাকে এরা যতক্ষণ না পর্যন্ত হাত মেহেদি দিয়ে পূর্ণ হচ্ছে। আবার আমাদের আড্ডায় ফিরি। ইদ যেহেতু আলাদা করে উদযাপনের কিছু না। সকালে ইদের নামাজ পড়লেই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে যায়। তাই খাওয়া, আড্ডা, বেড়ানো আর ঘুম ছাড়া ইদের ছুটিতে আর কিছুই করা হয় না। বিশেষ করে রোজার ইদে। চান রাতে ছুটির কয়দিন কী করে কাটানো যায়, কী করা যায় এর পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি সময় যায়। যেমন এবার সারাদিন শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত আমাদের কাটছে ইদের পরদিন কী করা যায় এই সলাপরামর্শ করেই। স্থান নির্বাচন হয় তো মানুষ হয় না, মানুষ, স্থান হয় তো যানবাহন মিল হয় না। ঠ্যালা ধাক্কা, ধুর শালা সব বাদ! এই চলছে, চলতে চলতে দেখি ঘড়িতে রাত বারোটা! শেষ পর্যন্ত কী করলাম, কী হইল, ছাতু মাখাইলাম গু হইল... যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাঁদের আমাদের মতো এমন সৌখিন চিন্তা ভাবনা করার ফুসরত নাই। শেষ মুহূর্তে কেনাকাটার হিড়িক লাগে কেন জানি। কিছু মানুষই আছে যারা কোন অজ্ঞাত কারণে সারা মাস কেনাকাটার আশপাশ দিয়েও যেতে রাজি না। প্রথম থেকেই নিয়ত পাকা যে তিনি যাবেন চান রাতেই! কেউ কেউ তো এমনও বলে যে চান রাত ছাড়া শপিং করে মজাই পাওয়া যায় না। কেউ চান রাত ছাড়া আবার ইদ শপিং হয় না কি? এমন প্রশ্নও করে। তো এই খদ্দেরদের জন্য চান রাতে চলে ভোর পর্যন্ত জমজমাট কেনাকাটা। রাত একটা দুইটা তিনটা যেন সন্ধ্যা রাত! ঢাকায় কোন দিন ইদ করা হয়নি। কিন্তু বন্ধুদের অনেকের কাছেই শুনেছি যে ঢাকায় চান রাতের জৌলুসের সাথে কোন কিছুর তুলনাই হয় না। দেড় দুই কোটি মানুষ চান রাতের আগে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। ঢাকা হাঁফ ছেড়ে গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা বের হচ্ছে তারা চলে ফিরে, দেখে শুনে, কিনে না কিনে আলাদা সুখ পাচ্ছে। ঢাকার জ্যাম ঘাম গরম যে দেখছে সে চান রাতে না থাকলেও অনুমান করতে পারে যে কতটা হালকা লাগছে সবার এই দিন! তবে সবার সমান না। শেষ মুহূর্তেও যারা কিছুই কেনাকাটা করতে পারে নাই আপনজনের জন্য তাঁদের চান রাত এক বিভীষিকার নাম! আমার জীবনে আমি এমন বেশ অনেক ইদ করছি যে ইদে একটা সুতাও কেনা হয়নি আমার জন্য। এমন বহু ঈদ কেটেছে যে কোন একটা দেওয়া হবে আমাকে এইটা আগেই বলা হয়েছে! হয় শুধু জুতা, না হয় শুধুই প্যান্ট বা শার্ট! আপদমস্তক নতুন, ইদের জন্য কেনা এইটা সম্ভবত বহু বহু পরে কপালে জুটেছে। তখন যখন নতুন কিছু না হলেও সমস্যা না, যখন জানি নতুন জামা কাপড়ে ইদ নাই, পুরোটাই সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু। যাই হোক, অপ্রাপ্তির ওই চান রাত গুলি কীভাবে কাটিয়েছি এখন চিন্তা করলে বুঝি যে কতটা কঠিন অনেকের জন্য এই রাত। এই বোধটা আমাকে উদার হতে শিখিয়েছে। হাত খুলে সাহায্য করতে শিখিয়েছে। ইদটা যেন সবার জন্য আনন্দের হয় এইটা ভাবতে শিখিয়েছে। এখন আমাদের একটা ফাউন্ডেশন হয়েছে, ওইখান থেকে এমন সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ইদের জন্য নানা সাহায্য করছে। এগুলা আলাদা তৃপ্তি দেয়। আরও কিছু মানুষের জন্য চান রাত অভিশাপ! যারা আপনজন হারিয়েছে! সবার সমান অনুভূতি হবে না আমি জানি। কিন্তু আমি আমার খবর জানি। চান রাতের ফুর্তি শেষ হচ্ছে যতক্ষণ সবার সাথে আছি ততক্ষণ। যখন বাড়ির পথে আগানো শুরু করছি তখন থেকে প্রতিটা পদক্ষেপ আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমি যেখানে ফিরছি সেখানে যারা আমার শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যকে যারা আলোকিত করে রেখেছিল, যারা কিছু নাই নাই করেও রঙিন করে দিয়ে গেছিল আমার ইদ গুলি তাঁরা কেউ নাই! আমার মা, যে খুব সাদাসিধে কিছু পদ রান্না করত ইদের দিন, সেই সামান্য আয়োজনই সম্ভবত স্বর্গীয় কোন উপদান ব্যবহার করে তৈরি করত। হয়ত আঁচল থেকে গোপনে মিশিয়ে দিত কোন জাদুকরী উপদান! হাতের স্পর্শে হয়ত পরশ পাথরের মতো কিছু ছিল, যার স্পর্শে সামান্য সেমাই হয়ে উঠত অমৃত! কাঁচা চুলায় রান্নার সময় আগুন ধরানোর জন্য বাঁশের চোঙায় যখন মা ফু দিত তখন হয়ত সেই ফুঁয়ের সাথে মিশে আম্মার অদ্ভুত স্নেহ, আদর্শ, ভালোবাসা, আর যার ফলে তৈরি হয় ইদের নানান বেহেশতি খাবার, যা আমাদের এখন পর্যন্ত বিস্ময়, এখন পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে বসে থাকি আমি। আমি জানি ভোরে সব সময়ের মতো, যা ছিল আশৈশবের সেরা স্মৃতি। আব্বা আমাদের ঘুম থেকে উঠার অনেক আগেই গোসল করে তৈরি হয়ে গেছেন, আতরের গন্ধ নাকে আসছে যেন এখনও, যা আর কোনদিন আসবে না। আমি জানি নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে আর কোনদিনই আম্মা আব্বাকে ইদের সালাম করা হবে না। আমি জানি এই বছর অনেকেই হতভম্ব হয়ে বসে আছে, হয়ত বুঝতেছেই না কেন এমন লাগছে, কোথা থেকে শূন্যতা এসে খোঁচা দিচ্ছে! আমি জানি দিনে দিনে এমন হতভম্ব হয়ে যাওয়াদের সংখ্যা বাড়বে। আর একদিন নিজেদের সময় এসে হাজির হবে! চান রাতে মন খারাপের জায়গা নেই শুরুতে লিখছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, শেষ লাইনে এসে আমি জানি মনটা খারাপ হবেই। মানুষ উৎসব আনন্দে একটা সময় স্বজন হারানোর বেদনা অনুভব করবেই, এই থেকে কি আর রেহাই আছে? সবাইকে শুভেচ্ছা ইদের। ইদ মুবারক। আমার আত্মীয়, বন্ধু সকলকে শুভেচ্ছা। কত দূর দূরান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমার কত শুভাকাঙ্ক্ষী। সকলকে শুভেচ্ছা। অপাত্রে বুঝে না বুঝে যে স্নেহের নানা উপকরণ আমার প্রতি ঢেলে গেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ইদ মুবারক, ইদ মুবারক, ইদ মুবারক। সুখি সমৃদ্ধ হোক সকলের জীবন।
    ভারত -- শেষ ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে - Partha Banerjee | ভারত -- শেষ ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে। লেখক -- পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযান পাবলিশার্স, কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা। মার্চ ২০২৪। দাম ৩০০ টাকা। বুক রিভিউ -- লেখক প্রশান্ত ভট্টাচার্য্য। প্রকাশিত হয়েছে "দৈনিক সুখবর" কাগজে। _____________________'...হিন্দুরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলিয়া 'হিন্দুরাজের' ধ্বনি শোনা যায়। এগুলি সর্বৈব অলস চিন্তা। ... শ্রমসিক্ত জনসাধারণ যে সব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন, সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি তাহার কোনোটির সমাধান করিতে পারিবে কি? কীভাবে বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, দারিদ্র প্রভৃতি সমস্যার সমাধান হইবে সে সম্বন্ধে তাহারা কোনো পথ নির্দেশ করিয়াছে কি?' ১৯৩৮ সালের ১৪ জুন কুমিল্লায় ভাষণে এই কথাগুলো উচ্চারণ করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজীর তথাকথিত ভক্তকুলের শিরোমণি নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের মূল সমস্যাকে ডেস্কের তলায় ফেলে দেশটাকে হিন্দু বানানোর যজ্ঞে আহুতি দিয়ে চলেছেন। এটা প্রায় সব বিরোধী নেতারা নিজেদের ভাষণে বলছেন, মোদী ফের ক্ষমতায় এলে, দেশে আর ভোট হবে না। অথচ মোদীর তৃতীয়বার মসনদে আসীন হওয়া ঠেকাতে তাঁদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব।  এমন পরিস্থিতিতে পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের  'ভারত শেষ ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে' বইটি হাতে এল। পার্থ মার্কিন প্রবাসী ভারতীয়। আরএসএসের গর্ভগৃহ থেকে জন্ম তাঁর। ফলে যে উৎকণ্ঠা থেকে এই বইয়ের প্রবন্ধ ক'টি পার্থ লিখেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সমাজে তো নেইই, এমনকী, অ্যাকাডেমিক ওয়ার্ল্ডেও নেই। এই দুই বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা, এরা আরএসএস ও বিজেপির মধ্যে একটা বিভেদ রেখার কল্পনা করে নিয়ে, তাকেই মান্যতা দেয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কোনো এক সভায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে সচকিত করে জানালেন, 'আরএসএস নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই; ধর্ম নিয়ে তারা থাকেন, কাজ করে ইত্যাদি, প্রভৃতি।  অর্থাৎ সেই বিসমিল্লাহে গলদ। যত সঙ্কট ও হাঙ্গামা নাকি ভারতীয় জনতা পার্টি নামক রাজনৈতিক দলটিকে নিয়ে। আরও নির্দিষ্ট৷ করে, মোদী-শাহর বিজেপিকে নিয়ে, বাজপেয়ী-আদবানির বিজেপিটা যেন ছিল পাতে দেওয়ার মতো! যেমনটা, একসময়ে জ্যোতি বসুদের নেতৃত্বাধীন বামপন্থী দলগুলো বুঝত। অনেকটাই সেই রবীন্দ্রনাথের 'ভালো ইংরেজ', 'খারাপ ইংরেজ' এর মতো, এঁরাও খোঁজেন 'ভালো-বিজেপি', 'খারাপ-বিজেপি'। আলোচ্য গ্রন্থের লেখকের ব্যথাটা এখানে। কেননা, 'দানবের পেটে দু-দশক' কাটিয়ে আসা পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় এই মনুবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী দলটির বিষাক্ত নখ-দাঁত দেখে এসেছেন তার সঙ্গে ঘর করে। বিজেপির হিংস্র হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে নরম হিন্দুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। রামমন্দির নির্মাণের কালাপাহাড়ি হিন্দুত্বকে জগন্নাথ মন্দির গড়ে মোকাবিলা করা যায় না। বড়োজোর ভোটে জেতা যায়।  আলোচ্য গ্রন্থটিতে মোট ১৪টি প্রবন্ধ আছে। কোনো প্রবন্ধই অতিদীর্ঘ নয়। বেশির ভাগই ১২ থেকে ১৪ পাতায় শেষ। আমার বিবেচনায় এ বইয়ের সেরা প্রবন্ধটি হল --  ফাঁকা আওয়াজ, কিন্তু 'দেশপ্রেমমূলক' পজিটিভ বার্তা প্রচারের ফ্যাসিস্ট রাজনীতি-- শিরোনামের লেখাটি। প্রবন্ধটির শুরুতেই  লেখক তাঁর গুরু নোম চমস্কির কথা এনেছেন। এই মহান ভাবুক-অ্যাক্টিভিস্টের 'ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট' বা গণসম্মতি উৎপাদনের তত্ত্ব থেকে তিনি কী আহরণ করেছেন, তার পণ্ডিতি না ফলিয়ে ঢুকে পড়ছেন ঘটমান বর্তমানে।   লেখকের আলোকপাত, 'একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। কীভাবে স্পোর্টসকে মনোপলি করে এবং তার বুক বাজানো উল্লাসকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে মেকি মেসেজ দেওয়া হয়, এবং ড্রাগের মতোই মানুষ হয় ঘুমিয়ে থাকে আর নয়তো বিকটভাবে দেশপ্রেম দেখায়, যার সঙ্গে দেশ বা প্রেম কোনোটারই সম্পর্ক নেই, শুধু মগজের ডোপামিন নামক হরমোনের হার্ডরক ড্যান্স আছে, তাঁর সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ আমেরিকা, ব্রিটেন এবং আজকের ভারত। আমেরিকায় ফুটবল (যার সঙ্গে ফুটের কোনো সম্পর্কই নেই), ব্রিটেনে ফুটবল (যেখানে ভায়োলেন্স একেবারে প্রাতঃকৃত্যের মতোই অবশ্যম্ভাবী), আর ভারতে ক্রিকেট। দশ দেশের 'বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন'। লক্ষ কোটি টাকা জুয়া।' এই যে দেশপ্রেমের বা নিওনরম্যাল ন্যাশনালিজম, এরসঙ্গে না আছে জাতীয়তাবাদ, না আছে দেশপ্রেম। একটা মেকি ফানুস। এমনভাবে একটা 'গণচেতনা' ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যে রোটি-কাপড়া-মকান এর মতো জরুরি সমস্যা ও সঙ্কটগুলো রিসাইকল বিনে ফেলে, এই দেশপ্রেমে মেতে ওঠো। মোদী দেশের পদকজয়ী মহিলা কুস্তিগিরদের সম্মান রক্ষার্থে না এগিয়ে, এবেলা-ওবেলা ট্যুইটবাজি করে যাচ্ছেন কারও সাফল্যে। বিজেপি ও তার রাজনৈতিক মেন্টর আরএসএস জানে, মানুষকে যদি শুধুমাত্র দেশপ্রেম বা হিন্দুত্ব বা রামমন্দির বা উগ্র ইসলাম বা ইউএসএ বা মোদী, বা ক্রিকেট-কোহলি-সচিন-ধোনি বা চন্দ্রযান বা বন্দে ভারত  বা সুপারপাওয়ার বা পুলওয়ামা -- যেটা যখন কাজে লাগে লাগিয়ে নাচানো যায়, তাহলেই কেল্লা ফতে।এই ফ্যানাটিক ন্যাশনালিজমের জন্য সবসময় একটা অপর লাগে। দেশের মধ্যে মুসলিম আর বাইরে পাক-ই-স্তান আর চিন। অথচ কতকাল আগে ১৮৯৫ সালে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের 'স্বপ্নলব্ধ ভারতের ইতিহাস' ছাপা হয়।  তাতে তিনি লিখেছিলেন, 'আমাদের এই জন্মভূমি চিরকাল অন্তর্বিবাদানলে দগ্ধ হইয়া আসিতেছিল, আজি সেই বিবাদানল নির্বাপিত হইবে। আজি মাতৃভক্তিপরায়ণ পুত্রেরা সকলে মিলিত হইয়া ইহাকে শান্তিজলে অভিষিক্ত করিবেন। ভারতভূমি যদিও হিন্দুজাতীয়দেরই যথার্থ মাতৃভূমি, যদিও হিন্দুরাই ইঁহার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তথাপি মুসলমানেরাও আর ইঁহার পর নহেন, ইনি উঁহাদিগকেও আপন বক্ষে ধারণ করিয়া বহুকাল প্রতিপালন করিয়া আসিতেছেন। অতএব মুসলমানেরাও ইঁহার পালিত সন্তান। এক মাতারই একটি গর্ভজাত আর একটি স্তন্যপালিত দুইটি সন্তানে কি ভ্রাতৃত্ব-সম্বন্ধ হয় না? অবশ্যই হয়- সব শাস্ত্র মতেই হয়।' কী অদ্ভুতভাবে সোশাল মিডিয়া দিয়ে মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে মিথ্যার ন্যারেটিভ। রীতিমতো পেশাদার ভক্তদের দিয়ে একাজ করানো হচ্ছে। বুস্ট করিয়ে লাইক বাড়ানো হচ্ছে৷ শেয়ার করা আর লাইকের ঠেলায় ভাইরাল করা হচ্ছে। লেখককে হন্ট করেছে, বাঙালির বদলে যাওয়া চেহারাটা। গত ৫০ বছরের শাসকদের অবিমৃষ্যকারিতায় আর ইদানীংকালের গোদিমিডিয়ার কল্যাণে একাংশ বাঙালি বিজেপিকে দুর্নীতিমুক্ত পার্টি হিসেবে ঠাউরে নিয়েছে।  লেখকের ভাষায় 'মিডিয়ার কল্যাণে বহু সাধারণ মানুষ মনে করেন যে, বিজেপি দুর্নীতিমুক্ত পার্টি, নরেন্দ্র মোদী পরিচ্ছন্ন নেতা এবং অমিত শাহ ভদ্র মানুষ। অনেক বাঙালি এদের ইতিহাস, রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং বিজেপির সঙ্গে আরএসএসের যোগসূত্র নিয়ে মোটেই ভাবেন না। আরএসএস যে বিজেপিকে চালায় এবং আরএসএস যে ফ্যাসিস্ট শক্তি, মানুষের সে বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা নেই। পশ্চিমবঙ্গে এমন কিছু মানুষও আছেন যাঁরা নাথুরাম গডসে কে, অথবা গডসে-সাভারকারের গান্ধিহত্যার বিষয়টি জানলেও বিষয়টা নিয়ে সরব নন। আর অন্য একদল নব্য বাঙালি গান্ধি-হত্যাকে সমর্থন করেন।' আমরা যার সর্বশেষ উদাহরণ দেখলাম অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তমলুকের এই বিজেপি প্রার্থী ভারতীয় জনতা পার্টিকে যেমন দুর্নীতিমুক্ত মনে করেন, তেমনই গান্ধী না গডসে প্রশ্নে গডসেতে আশ্রয় খোঁজেন। এ যদি ফ্যাসিস্টবান্ধব ও আত্মঘাতী বাঙালি না হয়, তবে কে?  বিজেপি ও তার দুধ খাওয়ানো আরএসএসের কতগুলো কায়দা আছে। ওদের সবচেয়ে বড়ো সুবিধে হল, আজকের দিনে এক বিশালসংখ্যক মানুষ-শিক্ষিত মানুষ কিছু পড়ে না। সুতরাং, মিডিয়াকে কিনে ফেলতে পারলেই, আর আইটি সেলের মাধ্যমে গার্বেজ ছড়িয়ে যেতে পারলেই ওদের কাজ অর্ধেক হয়ে গেল। বাকি অর্ধেক বিরোধীরা নিজেরাই ব্যবস্থা করে গেছে এবং করে যাচ্ছে, মূলত তাদের অনৈক্য এবং মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতার অভাব প্রমাণ করে। এই বিপদে নিঠক ভোট রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করা যেতে পারে কিন্তু চূড়ান্তভাবে পারা যায় এই লড়াই আসলে মতাদর্শ বনাম মতাদর্শের নয় তাই বিজেপি মার্কা ফ্যাসিবাদ আটকানোর জন্য দরকার যেমন গণ আন্দোলন ঠিক তার পাশাপাশি দরকার চিন্তার স্বচ্ছতা।   ধর্মনিরপেক্ষ মন গণতন্ত্রের প্রতি ষোলআনা আস্থা ছাড়া কোনোভাবেই বিজেপিচারিত ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা সম্ভব নয়।  যদিও এই বইয়ের লেখক পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তত এখনো অনেক আশাবাদী, কেননা বইয়ের নামকরণে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। তিনি এখনো মনে করছেন ভারত ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে, অতএব সেই সন্ধিক্ষণ দাঁড়িয়ে যদি সব লড়াইটাই মতাদর্শগতভাবে হয় তবে সুড়ঙ্গের শেষে আলো পাওয়া যাবে।  জার্মান কবি-দার্শনিক ফ্রেডরিখ হ্যেল্ডার্লিন বলেছিলেন, 'ভাষা মানুষের সবচেয়ে বিপজ্জনক সম্পত্তি'। একসময় বুঝিনি, এখন বুঝছি, যখন 'মোদীর গ্যারান্টি' মোদী নিজেই গেয়ে চলেছেন আর ভক্তরা প্রণিপাত করছেন।
    ফারাও-এর দেশে কয়েকদিন - পর্ব ৯ - সুদীপ্ত | ভ্যালি অব দ্য কিংস থেকে বেরিয়ে আসতে ঘড়ির কাঁটা প্রায় বারোটা ছুঁই ছুঁই! উপত্যকা তখন রোদে ভেসে যাচ্ছে, বেশ গরম বেড়ে গেছে; পার্কিং এ বাসে উঠতেই সুশান্ত আর সামাহ আমাদের সকলের  হাতে এক এক করে ধরিয়ে দিল চনমনে আইসক্রিম। এ যেন মেঘ না চাইতেই জল! কিন্তু তারপরেই একখানি দুঃসংবাদ। কার্নাকের মন্দির, যা আমাদের দেখার কথা ছিল গতকাল বিকেলে, সেটা এখন দেখা হবে, কিন্তু সময়ের অভাবে সেজন্যে বাদ পড়বে হ্যাৎসেপশুটের দাইর-এল-বাহারির মন্দির। মানে দেখা হবে কিন্তু তা বাইরে থেকে, ভিতরে প্রবেশ করার সময় পাওয়া যাবে না, যেহেতু আমরা কার্নাকের মন্দির দেখে মধ্যাহ্নভোজ সেরে সোজা রওনা দেবো হুরগাদা। পৌঁছোতে সন্ধ্যে পেরিয়ে যাবে। আমাদের পুরো প্ল্যানে এইটুকুই কলঙ্ক রয়ে গেল তাহলে। তবে যা দেখলাম বা দেখবো তাই বা কম কী! সেই একই পাহাড়ি উপত্যকার রাস্তা দিয়ে খানিক চলার পরেই দূর থেকে দেখা গেল ফারাও হ্যাৎসেপশুটের মন্দির। প্রাচীন তো বটেই, এমনকি আধুনিক মিশরেও মনে হয় নারীদের জন্যে নির্মিত এবং নির্দিষ্ট মন্দির দুটি, একটি আবু সিম্বেলের নেফারতারির মন্দির, অপরটি দাইর-এল-বাহরিতে হ্যাৎসেপশুটের মন্দির।  হ্যাৎসেপশুটের যেকটি প্রতিকৃতি বা মূর্তি পাওয়া গেছে, সেসব  সাক্ষ্য দেয়, তিনি ছিলেন সুন্দরী আর তার সঙ্গে ইতিহাস যোগ করে, তিনি ছিলেন ব্যক্তিত্বময়ী এবং শিক্ষিত। অষ্টাদশ রাজবংশের ফারাও প্রথম থুৎমোস এবং তাঁর পাটরাণী আহমোসের কন্যা ছিলেন হ্যাৎসেপশুট। সৎভাই দ্বিতীয় থুৎমোসের সঙ্গে পরে তাঁর বিবাহ হয় এবং পরে তাঁদের কন্যার সঙ্গে বিবাহ হয় সৎ-পুত্র তৃতীয় থুৎমোসের। এতরকম থুৎমোস (এর সঙ্গে আছে রামেসিস আর আমেনহোটেপ) শুনলে অবধারিত-ভাবে বাঙালীর মনে পড়বেই ‘আমার নাম হিজিবিজ্‌বিজ্‌, আমার ভায়ের নাম হিজিবিজ্‌বিজ্‌, আমার বাবার নাম হিজিবিজ্‌বিজ্‌’ অথবা ‘আমার মামার নাম তকাই, আমার খুড়োর নাম তকাই, আমার মেসোর নাম তকাই, আমার শ্বশুরের নাম তকাই’। তো হেন থুৎমোস বংশের হীরকখন্ডটি ছিলেন হ্যাৎসেপশুট, শিক্ষা-দীক্ষা-ব্যক্তিত্বে এবং রাজত্ব পরিচালনায়। দ্বিতীয় থুৎমোসের অকালমৃত্যুর পর যখন তৃতীয় থুৎমোস খুবই ছোট, তখন রাজ্যপরিচালনার ভার তুলে নেন হ্যাৎসেপশুট, আর কয়েক বছরের মধ্যেই নিজেকে ফারাও বলে ঘোষণা করেন। যদিও তাঁর ফারাও হওয়ার পথ এত মসৃণ ছিল না। মিশরের জনগণের মন পেতে হাজির করতে হয়েছিল এক অভিনব গল্পের, যেখানে দেবতা আমুন প্রথম থুৎমোসের রূপ ধরে এসে মিলিত হয়েছিলেন রাণী আহমোসের সঙ্গে আর আমুনের আশীর্বাদে বা ঔরসে আহমোসের গর্ভে এসেছিলেন হ্যাৎসেপশুট, সুতরাং তিনি দেবকন্যা এবং যোগ্য ফারাও। ভেবে দেখলে আমাদের রামায়ণ-মহাভারতের নায়কদের জন্মের গল্প প্রায় একইরকম – দেবতার আশীর্বাদে অথবা শিকড় বেটে খেয়ে অথবা কোনো বায়বীয় পথে কোথা থেকে কি হইয়া গেল, রাণী গর্ভবতী হইলেন। মিশর ঘুরে আসার পর এখন কেমন সন্দেহ হয়, এই প্রাচীনতর সভ্যতাগুলোর মধ্যে হয়ত সেযুগে যোগাযোগ ছিল বা ঘটেছিল, হয়ত মুখে মুখে প্রচার হয়েছিল এই গল্পগুলোর-ও, যা থেকে নতুন গল্প অনুপ্রেরণা পেয়েছিল, কি জানি! এছাড়াও হ্যাৎসেপশুটের মূর্তি, ছবি বা রিলিফে আনা হল পুরুষ ফারাও-এর অবয়ব, ছেঁটে ফেলা হল নারীত্বের প্রকাশটুকু, জুড়ে দেওয়া হল নকল দাড়ি, তৈরী হল স্ফিংক্স (দ্বিতীয় পর্বে এসব আমরা দেখে এসেছি, আবার দেখবো কার্নাকের মন্দিরে)  হ্যাৎসেপশুটের প্রায় বাইশ বছরের রাজত্বকালে (১৪৭৯ থেকে ১৪৫৮ খ্রীষ্টপূর্ব) মিশরে বিশেষ যুদ্ধবিগ্রহের কথা শোনা যায় না (শুধু দুটি বাদে, কানান এবং নুবিয়ায়, তবে সেসব নেহাৎ ছোটোখাটো দস্যুদমন ধরণের, গায়ে পড়ে যুদ্ধ নয়), বরং শান্তি-সমৃদ্ধি ছিল। পুন্তের সঙ্গে মিশরের বাণিজ্যের যোগাযোগ-ও ঘটেছিল এই সময়ে ফারাও-রাণীর নিজের উদ্যোগে, মূলতঃ মজবুত কাঠ, রজন, পশুর চামড়া, সোনা আর নানারকম সুগন্ধী, মশলা ইত্যাদি আমদানী করা হত পুন্ত থেকে। এই পুন্ত দেশটি ছিল অধুনা লোহিত সাগরের একেবারে প্রান্তে মিশরের দক্ষিণে। এই যে আমাদের মন্দিরে যাওয়া হল না, এই মন্দিরে পুন্তের সাথে মিশরের বাণিজ্যের কিছু ছবি/রিলিফ রয়ে গেছে, সেটুকু দেখা হল না। আর দেখা হল না কিছু রিলিফ যেখানে বোঝা যায় বেশ ইচ্ছাকৃতভাবেই হ্যাৎসেপশুটের নামের কার্তুশ মুছে দেওয়া হয়েছে, এর পাশেই থেকে গেছে পরবর্তী ফারাও তৃতীয় থুৎমোসের কার্তুশ।  এখনও পর্যন্ত মনে করা হয় তৃতীয় থুৎমোস প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় এই তিন থুৎমোসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মাঝে কোনো নারী ফারাও-এর অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে মুছে দিতেই একাজ করেছিলেন, তবে এমনও হতে পারে এ-কাজ হয়েছিল তৃতীয় থুৎমোসের মৃত্যুর পর অথবা আরও পরে! প্রশ্ন উঠতেই পারে, মিশর কি কোনোকালেই এক নারীকে ফারাও হিসেবে চেয়েছিল বা মেনে নিয়েছিল মনে-প্রাণে? এই প্রশ্ন নিয়ে তর্ক চললেও, ইতিহাস বলে, সেই নারী  ফারাও-এর রাজত্বেই মিশর ছিল সবচেয়ে সুখে, শুধু যুদ্ধ নয়, বাণিজ্য দিয়েও যে প্রতিবেশী রাজ্য বা দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং শান্তি স্থাপন করা যায় এও হ্যাৎসেপশুট দেখিয়েছিলেন। হ্যাৎসেপশুটের মন্দির মন্দিরের দুটি তল মূলতঃ, প্রথম তলে ওঠার জন্যে মাটি থেকে উপরের দিকে চলে গেছে লম্বা ঢালু একটি পথ। দুই তলেই শুরুতে লম্বা থামের সারি। দ্বিতলে থামের সঙ্গে রয়েছে হ্যাৎসেপশুটের মূর্তি , কিন্তু মাত্র চার-পাঁচটি অবশিষ্ট আছে এখন। এর পিছনে নাকি আছে আরও একটি চাতাল। আমরা নীচ থেকেই মন্দির দেখলাম; সামাহ তাড়া দিল যাতে কার্নাকে আমরা বেশী সময় কাটাতে পারি। অতএব ফিরে এসে এবার আমরা ধেয়ে চললাম কার্নাকের মন্দিরের পথে, অর্থাৎ আবার আমরা ফিরবো নীলনদের পূর্বপাড়ে।  অ্যভিনিউ অব স্ফিংক্স - দূরে কার্নাকের মন্দির লাক্সর মন্দির থেকে কার্নাকের মন্দির পর্যন্ত ছিল একটি সুপ্রাচীন রাস্তা, যার নাম ‘Alley of Sphinxes’ বা ‘Avenue of Sphinxes’। এই রাস্তাটি ছিল প্রায় দু-কিলোমিটার দীর্ঘ। আমরা বাস থেকেই দেখলাম সেই রাস্তা আর তার দুপাশে স্ফিংক্স-এর সারি, যদিও অধিকাংশ-ই ভাঙা। বাসের একদিকে রয়েছে লাক্সর মন্দির, অন্যদিকে কার্নাক। আর আমাদের বাস এই অ্যাভিনিউ-এর উপর দিয়ে একটি সেতু পার হয়ে এগিয়ে চলল। এই স্ফিঙ্কস-গুলির কিছু তৈরী হয়েছিল ফারাও তুতানখামুনের আমলে, কিছু তৃতীয় আমেনহোটেপের আমলে আর বাকিটুকু ফারাও প্রথম নেকতানেবো-র সময়ে। প্রায় মিনিট পনেরো পরে আমরা এসে দাঁড়ালাম কার্নাক মন্দিরের পার্কিং-এ। নেমে আমাদের হাতে সামাহ টিকিট ধরিয়ে দিল। ভিজিটর সেন্টারে প্রবেশ করে একটি বেশ বড় হলঘরে নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে দেখি ঘরের মাঝখানে পুরো মন্দির চত্বরের একটি প্রতিরূপ কাচের বাক্সে রাখা রয়েছে। আর একপাশে দু-দুটি সেই পরপারে যাওয়ার নৌকো, একটি হোরাসের, একটি আমুনের। এখান থেকে বেরিয়ে বেশ কিছুটা ফাঁকা এলাকা পেরিয়ে মন্দিরের তোরণ, তার আগে রয়েছে দুটি ওবেলিস্ক আর দুপাশে সারি দিয়ে ভেড়া-মুখী আমুনের আদলে স্ফিংকস। ওবেলিস্ক দুটি অবশ্য ছোটো, নির্মাণ করিয়েছিলেন ফারাও দ্বিতীয় সেতি। আর স্ফিংকসগুলির পায়ের কাছে দ্বিতীয় রামেসিসের ছোটো মূর্তি যা দেখে সহজেই নির্মাতার কথা জানা যায়। কার্নাক মন্দিরের প্রধান দেবদেবীরা হলেন তিনজন, আমুন, মাত এবং মন্টু। মন্টু ছিলেন যুদ্ধের দেবতা। কার্নাকের একেবারে উত্তরদিকে এঁর মন্দিরটি এখন প্রায় পুরোটাই ধ্বংসাবশেষ! মাত-এর মন্দিরটির অবস্থাও ভগ্নদশা। মাত হলেন আমুন-এর স্ত্রী। এই দুটি মন্দিরই অবশ্য কার্নাকের মূল মন্দির চত্বর থেকে কিছুটা দূরত্বে। দেখার বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নেই, তাই আমরা ওদিকে আর গেলাম না। এই মন্দিরের নির্মাণ ধাপে ধাপে বিভিন্ন যুগের ফারাওদের রাজত্বকাল জুড়ে হয়েছে। প্রায় ২০০০ খ্রীষ্টপূর্বের আশেপাশে এর পত্তন। প্রত্যেক ফারাও-ই নাকি চাইতেন এখানে, এই আমুন বা আমুন-রা-এর মন্দিরে নিজের নাম খোদাই করা থাক আর কিছু স্থাপত্যকার্য থাক, এতে নাকি অমরত্ব লাভ করা যায়। এই মন্দিরের একটি বিশেষত্ব হল, যখন যে ফারাও স্থাপত্য বানিয়েছেন, দরকার মত আগের স্থাপত্যগুলিকে ধূলিসাৎ করে তার উপর নিজের নির্মাণ করেছেন। তাও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপত্য এত হাজার বছর পরেও টিকে গেছে। কার্নাক মন্দিরের ভিজিটর সেন্টার  নৌকোর মডেল, সামনে হোরাসের নৌকো পিছনে আমুনের  কার্নাক মন্দিরের প্রবেশপথ - সামনে দুটি ছোটো আধভাঙ্গা  ওবেলিস্ক আর দু-সারি আমুনের অবয়বে স্ফিংক্স   কার্নাক মন্দিরে সব মিলিয়ে প্রায় দশটি তোরণদ্বার আছে। এর মধ্যে মূল চত্বরে আছে ছটি তোরণ।  প্রথম তোরণটি সম্ভবতঃ কুশাইট রাজবংশের ফারাওদের তৈরী, এটি পেরনোর পর একটি বিশাল প্রাঙ্গণ। এর ডানদিকে রয়েছে ফারাও তৃতীয় রামেসিসের নির্মিত ছোটো একটি মন্দির। মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে দুদিক জুড়ে হায়রোগ্লিফ কুঁদে কুঁদে লেখা রয়েছে নাকি তৃতীয় রামেসিসের বিভিন্ন যুদ্ধজয়ের কাহিনী! ভিতরে ঢুকে একটি খোলা চত্বরের তিনদিকে ঘেরা, দুইদিকে দুই সারি তৃতীয় রামেসিসের মূর্তি, যদিও কোনোটিই অক্ষত নেই আর। সামনে একটি ছোটো হাইপোস্টাইল হল। এরপর তিনটি গর্ভগৃহ যেখানে পূজিত হতেন আমুন, মাত আর তাঁদের পুত্র খোনসু। শুধুমাত্র ফারাও এবং প্রধান পুরোহিতেরই দেবতাদের মূর্তির দিকে তাকানোর অধিকার ছিল। মন্দিরে থেকে বেরিয়ে মূল প্রাঙ্গণে ফিরে এসে দেখলাম দ্বিতীয় রামেসিসের একটি সুউচ্চ গ্র্যানাইটের মূর্তি, পায়ের কাছে নেফারতারির ছোটো একটি মূর্তি, নেফারতারির এই মূর্তিটি প্রায় অক্ষত। তৃতীয় রামেসিসের মন্দির  দ্বিতীয় রামেসিস ও নেফারতারি  দ্বিতীয় তোরণ পার হয়ে এরপর এই মন্দিরের বিখ্যাত হাইপোস্টাইল হল আর তার আকাশচুম্বী থামের সারি। ঘাড় উঁচু করে সেইসব থামের গায়ে আঁকা রঙিন কারুকাজ দেখতে সত্যি ঘাড় ব্যথা হওয়ার জোগাড়!  দ্বিতীয় তোরণটি সম্ভবতঃ উনিশতম রাজবংশের আমলে নির্মিত। এই হলের অধিকাংশটাই নির্মাণ করেছিলেন ফারাও প্রথম সেতি আর দ্বিতীয় রামেসিস – পিতাপুত্র মিলে। থামের গায়ে সুন্দর রঙিন কারুকাজ, আমুন-রা-এর রিলিফ, ছবি, সেতি আর রামেসিস তো আছেনই, দেওয়ালে অন্যান্য ফারাওদের ছবিও রয়েছে। এই হলের উত্তরের দেওয়ালে রয়েছে প্রথম সেতি-র বিভিন্ন যুদ্ধজয়ের (অধুনা সিরিয়া ও লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে হওয়া যুদ্ধ) রিলিফ, আর দক্ষিণের দেওয়ালে দ্বিতীয় রামেসিসের কাদেশের যুদ্ধের (পর্ব ৬ দ্রষ্টব্য) শান্তি-চুক্তির কিছু অংশ হায়রোগ্লিফে খোদাই করা। এই হল থেকে বেরনোর পথে তৃতীয় তোরণটি তৈরী করিয়েছিলেন ফারাও তৃতীয় আমেনহোটেপ। এই তোরণ পার হলে দ্বাদশ রাজবংশের ফারাও সেনুসারেত-এর একটি প্যাভিলিয়ন (যা মাটির নীচ থেকে খননকার্যের ফলে পাওয়া), আর তারপর সামনেই ফারাও প্রথম থুৎমোসের ওবেলিস্ক। প্রথম থুৎমোস দুটি ওবেলিস্ক নির্মাণ করিয়েছিলেন, যা ছিল কার্নাক মন্দিরের প্রথম ওবেলিস্ক, এখন অবশ্য একটিই অবশিষ্ট আছে। এরপর চতুর্থ এবং পঞ্চম তোরণ দুটি-ই নির্মাণ করেছিলেন প্রথম থুৎমোস। এই চত্বরটির অধিকাংশই এখন ভগ্নাবশেষ। যদিও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রথম থুৎমোসের কন্যা  ফারাও হ্যাৎসেপশুটের সাড়ে ঊনত্রিশ মিটার উচ্চতার ওবেলিস্ক যেটি প্রথম থুৎমোসের ওবেলিস্কের চেয়েও উচ্চতর। একটিমাত্র সুবিশাল অখন্ড গ্র্যানাইট পাথরকে কেটে এই ওবেলিস্ক তৈরী করা হত, পাথর আনা হত আসোয়ান থেকে নীলনদ বেয়ে, আর তারপর সেই ওবেলিস্কে খোদাই করা হত হায়রোগ্লিফ, কার্তুশ, ছোটোখাটো রিলিফ, সব সম্পন্ন হলে তারপর শায়িত অবস্থা থেকে খাড়া করে দাঁড় করানো হত, দেখে বোঝা যায় কি বিরাট কর্মযজ্ঞ চলত। হ্যাৎসেপশুটের আরেকটি ওবেলিস্ক অবশ্য ভেঙে দুভাগ হয়ে যাওয়ায়, উপরের ভালো অংশটিকে পাশেই একটি চত্বরে স্থাপন করা হয়েছে। এরপর ষষ্ঠ তোরণ, যেটি আকারে অনেকাংশে ছোটো, নির্মাণ করিয়েছিলেন ফারাও তৃতীয় থুৎমোস। সবশেষে গর্ভগৃহ, আর তার পূর্বদিকে তৃতীয় থুৎমোসের নির্মিত আমন-রা কে উৎসর্গীকৃত মন্দির। তৃতীয় থুৎমোস, হ্যাৎসেপশুটের মৃত্যুর পর তাঁর একক রাজত্বকালে প্রায় সতেরোটি যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন, তার স্মারক হিসেবে নাকি এই মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন। এখন অবশ্য এগুলির ধ্বংসাবশেষ ছাড়া কিছু নেই। হাইপোস্টাইল হলের কারুকার্যময় গগনচুম্বী থামের সারি  কাদেশের শান্তিচুক্তির কিছু অংশ মন্দিরের গায়ে  আরও কিছু লিপি খোদাই করা - সম্ভবতঃ প্রথম সেতির যুদ্ধজয়ের বর্ণনা  প্রথম থুৎমোসের ওবেলিস্ক হ্যাৎসেপশুটের ওবেলিস্ক - ধ্বংসস্তূপের মাঝে  পিতা-পুত্রীর ওবেলিস্ক (বাঁয়ে প্রথম থুৎমোস,ডানে হ্যাৎসেপশুট) হ্যাৎসেপশুটের অর্ধভগ্ন দ্বিতীয় ওবেলিস্কের উপরের অংশটুকু  স্কারাব (খেপের) ও তিনটি ওবেলিস্ক একসাথে - ওদিকে প্রদক্ষিণ চলছে স্কারাবের চারপাশে  ফেরার পথে ডানপাশে রয়েছে আরও চারটি তোরণ। সপ্তম তোরণটি তৃতীয় থুৎমোসের, অষ্টমটি হ্যাৎসেপশুটের, নবম আর দশম তোরণটি যথাক্রমে ফারাও তুতানখামুন এবং হোরেমহেব-এর নির্মিত। এই চত্বরের পাশেই রয়েছে পবিত্র হ্রদ, যেখানে পুজোর নানা আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হত। আর রয়েছে বিখ্যাত সূর্য-দেবতার প্রতীক স্কারাব বিটল (খেপের) অর্থাৎ গুবরে পোকার একটি বড় গ্র্যানাইটের মূর্তি, যার নির্মাণ করিয়েছিলেন ফারাও তৃতীয় আমেনহোটেপ। এর চারপাশে তিনবার প্রদক্ষিণ করলে নাকি অভীষ্ট সিদ্ধি হয়। অনেকেই দেখলাম প্রদক্ষিণ করছেন। আমরা পাশের অর্ধভগ্ন হ্যাৎসেপশুটের দ্বিতীয় ওবেলিস্কটি কাছ থেকে ভালো করে দেখে এলাম। এই চত্বরটি থেকে একই ফ্রেমে স্কারাব সহ তিনটি ওবেলিস্ক-কে সুন্দর ধরা গেল। দেখতে দেখতে কখন যে ঘন্টা আড়াই কেটে গেছে বুঝতেই পারি নি। সামাহ-র তাড়ায় সম্বিত ফেরে। ততক্ষণে দলের অন্য পর্যটকরা পার্কিং এর কাছে চলে গিয়েছে। কার্নাকের এই সুবিশাল মন্দিরকে বিদায় জানিয়ে আমরাও ফিরে চললাম জোর কদমে।
  • জনতার খেরোর খাতা...
    গণতন্ত্র নয়া জমানা - Eman Bhasha | বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়!!! এতো কলেজ নির্বাচনে হতো!  বা পঞ্চায়েত নির্বাচনে।ত্রিপুরায় ৯৬% আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।উত্তরপ্রদেশে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিন লাখ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এবার লোকসভাতেও।  এবার মনোনয়নপত্কর সবার বাতিল করানোর পালা। গুজরাটে। সুরাট কেন্দ্রে। অরুণাচল প্রদেশে ১০ জন এমএলএ একই কায়দায়!!! ২০১৯ এ বেনারসের সাধু ও সন্ত সমাজের প্রতিনিধি ভগবান দাস মহন্তের মনোনয়ন বাতিল করানো হয়েছিল।সেনা জওয়ানের মনোনয়নপত্র বাতিল করানো হয়েছিল। 
    বকবকস (বইদিবস) - Falguni Ghosh | আজ শেক্সপিয়ার সহ আরো অন্যান্য বিখ্যাত লেখকদের জন্ম নাহয় মৃত্যুদিবস। ক্লাসিক উপন্যাস 'লা মানচার দন কিহোতে'র স্রষ্টা লেখক মিগেল দে সারভেন্তেসের মৃত্যু দিবসকে স্মরণীয় রাখার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সূচনা হয় বইদিবসের। পরবর্তীতে ইউনেস্কোর উদ্যোগে বইপড়া, বইছাপানো, কপিরাইট সংরক্ষণ -- এইসব ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়াতে পালিত হয় বইদিবস।  এখন দিবসের উপলক্ষ্য যদি যাপনের উৎসব হয় তাহলে বই তো ঈশ্বরের আরেক রূপ। মানুষের মন ঐশ্বরিক ঐশ্বর্যে ভরে ওঠে অথবা ঈশ্বর হাত বাড়িয়ে মানুষের অবচেতন - চেতনার সঙ্গম ঘটান, যাই হোক না কেন, বই একটি দুর্লভ এবং দুর্মূল্য আগ্রহ, কৌতূহল, উদ্দামতা, নীরবতা এবং সর্বপোরি নিজের সঙ্গে নিজের একাত্মতা।  এই যে এক আত্মা হওয়া এর ভিত্তিটি আজকের দিনে কেমন যেন নড়বড়ে হয়ে আসছে। শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত থাকার দৌলতে দেখি- বুঝি প্রায় প্রতিনিয়ত যে, আজকাল বাচ্চাদের চোখে সেই অবুঝ, অনবুঝ স্বপ্নের চাষবাস নেই!  কেন নেই!  তারা সবই ভিসুয়ালাইজ করে নিয়েছি। নন্টে ফন্টে, হাঁদা -ভোঁদা, ছোটা ভীম,  মিকি মাউস, টম-জেরি, আলাদিন সবই তারা দেখে নিয়েছে।  ফলত কল্পনার খাতা এদের হাতে শূন্য!  এসব দেখতে দেখতে একছুটে  রাশিয়া থেকে টুকি দেওয়া দুই ইয়ারের দোস্তির আজব বদমাশি বুদ্ধি আমার মাথায় কিলবিলিয়ে ওঠে।  শুধু কি হাঁদা ভোঁদা নন্টে ফন্টেই নাকি! এক পৃথিবী চষে বেড়ালে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায়, দেশে বিদেশে এইরকম দুষ্টু মিঠে জুটি যে কত তার ইয়ত্তা নেই।  আবার দাঁত ফোকলা ঠানদি, ঠাকুরমা আর দাদামশায়েরা তাঁদের থলে থেকে কতই না রূপকথার গল্প বিনিয়ে বিনিয়ে বুনতেন আমাদের মনে,  সে রূপকথা দেশ কাল ছাপিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ঘুরে জাপান, রাশিয়া হয়ে চীনদেশে এসে জিরিয়ে নিত।  আহা চীনদেশের গল্প বইয়ে কী সুন্দর পালকের মত নরম শিরশিরে রূপসীর আনাগোনা।  কেউ বা লোভী।  তার যে কী শাস্তি! কেউ বা খুব পরিশ্রমী, ভালো মানুষ -- তার জন্যই তো ফিনিক্স পাখির ডানা থেকে রঙিন পালক ঝরে পড়ে। ওদিকে আলোর ফুলকি,  সেরা সন্দেশ-- এসব তখন দীক্ষামন্ত্রের মত নিত্য জপ করে চলা। এক গ্রামীণ লাইব্রেরিই ছিল এসবে সম্বল। আর বাবার এনে দেওয়া রঙ বেরঙের বইয়ে ভর করে, সমুদ্র, পাহাড়, জঙ্গল প্রায় সে ছোট বয়সেই চষে ফেলেছিলাম স্বপ্নে। কিন্তু চিরকাল তো স্বপ্ন জড়িয়ে দিন কাটে না!  ধীরে ধীরে বাস্তবের কঠোরতা ঠোক্কর দিতে থাকলেও বইকেই জড়িয়ে ধরেছি। বুঝেছি এই যে কত না সূক্ষাতিসুক্ষ আবেগ আমাদের নিত্য বাঁচায় এবং মারেও। কখনও যদি হেসে সুখ, কখনও প্রাণভরে কাঁদার জন্য প্রাণ আকুলিবিকুলি করে ওঠে। আর ভালোবাসা ঈশ্বরের আরেক ছদ্মরূপ। -- এইসব সবকিছুই বইয়ের আশ্রয়ে কোল পায়। আমাদের বাল্য, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্যের সমস্ত রঙ, রস, স্বাদ, বিস্বাদে আমরা বইকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারি। কেননা বই একমাত্র বই-ই পারে আমার, আমাদের প্রত্যেকের মনের কথা টেনে পৃথিবীর মাটিতে ভূমিষ্ঠ করাতে। বই যেমন স্বপ্নের জগতে ঠেলে দিতে পারে তেমনই বাস্তবের ধূ ধূ রুক্ষ মুরুভূমির মধ্যে একটুকরো স্বপ্নের মেঘ দমকা হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে আসতে পারে। যাতে মানুষেরা মরে যেতেও যেতেও খুব জোরে একবার শ্বাস নিয়ে বলে উঠতে পারে-- মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে.... ক্লাসরূমে ছেলেপিলের মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া বোধ করি, দেখি এরা কথা বলে খুব, কিন্তু এদের ভাষার বড়ই অভাব। এদেরকে কেউ বলে নি, নিজেই নিজের সঙ্গে একাত্মা হয়ে দ্যাখোএরা শুধু সিলেবাস মুখস্থ করে! আর গ্রাম্য এক দিদিমণি সেই ইঁদুর দৌড়ের দৈনন্দিন বাস্তবতায় মাঝে মধ্যেই ছেলেপিলের আঙিনায় লাইব্রেরি,  বই আর রূপকথার স্বপ্নের মেঘ বুনতে থাকেন। আজকের দিনে এটুকুই আমার অর্ঘ্য। যে বইয়ের কাছে বড় ওঠার চিরঋণ, সেই বইয়ের জন্য এটুকুই হয়ত করতে পারি।
    কেন চাকরি বাকরির ব্যাপরে পিএমএল এ প্রয়োগের বিরোধিতা করছে ট্রেড ইউনিয়ন  - upal mukhopadhyay | অনুরোধ করব কেন সার্ভিস ম্যাটারে বা চাকরি বাকরির ব্যাপারে পিএমএলএ ঢোকানোর বিরোধিতা করছি একজন ট্রেড ইউনিয়ন এক্টিভিস্ট হিসেবে সেটা শুনতে। আপনারা জানেন ওই ভয়াবহ আইনের ১২০বি ধারায় যে কোন কিছুকে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র হিসেবে ধরা যায়, এমনকি সুপ্রিম কোর্টও এর প্রয়োগের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে, তৃণমূল সরকার শুধু নয়, ২৬০০০ শিক্ষক শিক্ষিকাকেই অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ধরে, পিএম এল এ সরাসরি প্রয়োগ না করেও, সেই স্পিরিটেই এই রায় দেওয়া হয়েছে। সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নই এর বিরোধিতা করছে। এটা একটা ভয়ানক রায়। এর ফলে সারা দেশ জুড়ে শ্রমিক-কর্মচারী বিরোধী ভয়াবহ বাতাবরণ তৈরি হবে যা এক কথায় ফ্যাসিস্ট। এটা বিকাশবাবুরা জেনেশুনে করিয়েছেন যার ক্ষমা নেই।
  • ভাট...
    commentb |
    কেকে কয়েকদিন আগে যে ভিডিওটি দিয়েছিলেন , তার মূল চিঠিটি ঃ
     
    "I can tell you the obvious: that I’m sorry, that I tried.
    I can tell you how sorry I am, that it ate me up. That even as we sat in bed with the nightlight on, reading together about coral reefs and finding Dory, I knew there was not much time left for those bright and beautiful places.
     
    I can tell you that I tried, that even though it felt hopeless, still if there was any chance left then I wasn’t going to quit. I can tell you that this is why we always took the train, why I pestered politicians, why we changed what we ate, why I got myself arrested that time.
     
    But what I really want you to know: that the hardest thing was living through a time when we could have turned this around, but that most people just carried on as if it didn’t matter.
     
    There will be a thousand explanations for this. You’ll hear that people were selfish, that we were trapped in a consumer culture, that our politicians were craven servants of fossil fuels, that the media didn’t keep us informed, too preoccupied with dance contests, fashions and trivia.
     
    There is something in all of this, but I want you to know what it felt like at the time. It felt like a dream, where everything seemed so normal, but where under the surface there was a horrible and brutal truth we all pretended didn’t exist. Hardly anyone even spoke about climate change and the destruction of the natural world. If you did, more often than not the conversation would be shut down, familiar devices pulled out of nowhere to dismiss, sidetrack, and silence your concerns.
     
    And outside, the world — the thoughtless, concrete and metal, fume-choked, all-consuming human world — rumbled on, deaf to the warnings and unwilling to lift a finger.
     
    I want to tell you that I am sorry, and that I tried.
     
    Your dad,
    Stuart"
    (Stuart Capstick/ Deputy director/ Centre for Climate Change & Social Transformations/ Cardiff)
    commentati baam der | তৃনমূলকে সমার্থন করার এই নোংরামি বন্ধ হোক 
    comments | সৈকত বলেছেন "বেশ তো। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস হয়ে থাকে, সে তো ফৌজদারি অপরাধ। পর্ষদের কর্তাদের তো জেল হওয় উচিত। তা না করে কোর্ট চাকরি খাচ্ছে কেন? তার মানে 'ধ্বংস করা হয়েছে' দাবীতে কিছু ঘাপলা আছে।" পর্ষদের কর্তাদের জেলে পোরা কোর্টের এক্তিয়ারে পড়ে না। তাদের জেলে পুরতে হলে আগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে। আর ফৌজদারি মামলা হলে করতে হবে স্টেটকে, মানে রাজ্য সরকারকে। সেই মামলায় অপরাধ প্রমান হলে তবে কোর্ট জেল হবার রায় দিতে পারেন। তা পর্ষদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার মামলা করেছেন কি? এইচ আর ইন্টার্ভিউ রেকর্ড হারিয়ে ফেললে এইচ আরের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে কাউকে। তা না হলে কোর্ট স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কাউকে শাস্তি দিতে আসবে না। যেটা মনে হচ্ছে, কোর্ট পর্ষদকে যোগ্য অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা বানাতে বলেছিল কিন্তু পর্ষদ সেই তালিকা বানায়নি। অতএব, কোর্ট সমস্ত প্রার্থীকে বাতিল করে দিয়েছে। এতে সব থেকে বেশী দোষ স্টেটের, মানে রাজ্য সরকারের। তাদের উচিৎ ছিল পর্ষদের দোষী কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা এবং সেই সাথে পর্ষদ যাতে প্রার্থী বাছাই ঠিক্ঠাক সময়্মত করতে পারে তার ব্যাবস্থা করা। নিজের ইনেফিশিয়েন্সি চাপা দিতে অন্য কাউকে রাজানৈতিক এসব বলা হয়ে থাকে সাধারনত। আর বললে যারা শোনার তারা শুনবে আর যারা ইগনোর করার তারা ইগনোর করবে, এই তো ব্যাপার।
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত