এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    লেখা আহ্বান - সংক্রান্তি, নববর্ষ ও ঈদ সংখ্যা - গুরুচণ্ডা৯ | ছবি: রমিতশীতকাল বইমেলা হইচইএর দিনকাল ফুরিয়ে এসে গেল শান্ত হয়ে বসে লেখালেখির কাল। বাইরে তাপমাত্রা বাড়ছে রোদ্দুরের জন্য, নির্বাচনের জন্য। সাথে কোথাও প্যাচপ্যাচে ঘাম তো কোথাও ঝরঝর বৃষ্টি। সন্ধ্যের আবছায়ায় দোকানে ভীড় জমায় সারাদিন রোজা রাখা ক্লান্ত মানুষ, গাজনের প্রস্তুতি নেওয়া শ্রান্ত মানুষ, চৈত্রসেলের হাতছানিতে মুগ্ধ মানুষ। টুপটাপ জমে ওঠে গল্পেরা, কবিতারা। নির্বাচনী জনসভার কোণাকাঞ্চিতে, ইফতারির থালার পাশে, গাজনের সন্ন্যাসীর ঝোলায় চুপটি করে অপেক্ষা করে তারা মানুষের জন্য। আপনি দেখতে পাচ্ছেন তাদের? তাহলে খপ করে ধরে ফেলুন, ঝপ করে লিখে আগামী দশদিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দিন আমাদের guruchandali@gmail ঠিকানায়।এত যত্ন করে আবেদনটা লিখে দিয়েছেন দময়ন্তী, লেখা পাঠাতে একদম দেরি করবেন না, তাহলে উনি রেগে যাবেন কিন্তু
    ক্যালিডোস্কোপে দেখি - দোল - অমিতাভ চক্রবর্তী | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়দোলদোল নিয়ে প্রথম স্মৃতি যা আমার মনে আসে সেটা একটা পিতলের পিচকারি, আমার হাতে নয় কিন্তু কার হাতে সে আর মনে পড়ে না। তার পরের ছবি আমার উত্তর বঙ্গের জীবনের। নতুন জায়গায় নতুন স্কুলে ভর্তি হয়ে আমি এক অতি এলেবেলে জীব। মার খাই নিজের ক্লাসের পড়ুয়াদের হাতে, খুবই স্বাভাবিক একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে – আমি নতুন, বহিরাগত। এই অভিজ্ঞতা আমার আগে ছিল না। মানিয়ে নিচ্ছিলাম, পাল্টা হাত-পা চালিয়ে। কিন্তু যিনি ক্লাস নিচ্ছেন, তিনি যখন পিট্টি লাগান, কিছু করার থাকে না। সেই শাস্তি আমার নিজের বিবেচনায় যতই অমূলক, অযৌক্তিক মনে হোক না কেন। অবশ্য পরে গোটা জীবন ধরে জানব যে শাস্তির ঐটিই দস্তুর, দুনিয়া জুড়ে, অনাদি কাল ধরে, ভবিষ্যতেও এর অন্যথা হবে – এখনও অবধি তেমন মনে হয়নি।উত্তরবঙ্গের প্রথম বছরটিতেই প্রথম জানা হল শীতের তীব্র ঠান্ডা কাকে বলে। আর সেই সুবাদেই, আঁকার জন্য পাওয়া রঙের বাক্সের বাইরে, নানা রঙের সাথে পরিচয় হল - উলের সুতোয় আর মেলায় কেনা রঙিন গরম পোষাকে। কিন্তু রঙ নিয়ে যে মাখামাখি করা যায়, করাই স্বাভাবিক সেইটি একেবারে জাপটা-জাপটি করে অনুভব করা গেল দোলের সকালে। ঠাকুমা সেদিন ঘুম ভাঙ্গিয়ে জানাল – উইঠ্যা পড়, আইজ দোল, রঙ খেলবা কখন, আর বাবা আগের কোন একদিন কিনে আনা লাল আর গোলাপি/বেগুনি রঙের আবির আর সম্ভবতঃ লাল এবং সবুজ গুঁড়ো রঙ কাগজের ঠোঙা খুলে বার করল। এই দিনটা আসার প্রস্তুতি অবশ্য কয়েক দিন আগে থেকেই চলছিল। প্রতিবেশিদের কারো কারো বাড়ির উঠানে বা চাষের জমিতে ছোট মাপে আর পাড়ার খেলার মাঠে বড় করে খড়-বাঁশ-গাছের ডালের কাঠামো বানানো হচ্ছিল। তারপর দোলের আগের দিন সেই কাঠামোয় আগুন ধরিয়ে দিয়ে তাকে ঘিরে ঘিরে হাত ধরাধরি করে গাওয়া – আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া, কাল আমাদের দোল, পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল হরিবোল। বাড়ি ফেরার পর বাবা ন্যাড়া পোড়ায় হোলিকা দহন, অশুভের বিনাশ ইত্যাদি ব্যাখ্যা করেছিল। সবটা বুঝিনি কিন্তু মনের মধ্যে কিছু অস্বস্তির জন্ম হয়েছিল। অমন রাক্ষসি কি আমাদের এখানে আছে? তাকেও কি পুড়িয়ে মারতে হবে? গুজিয়া আর কি কি যেন সব মিষ্টি এসে গিয়ে সেই সব সম্ভাব্য নৃশংসতার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। সেই দোলের সকালে ফুট দুই উচ্চতার মাঝারি মাপের দুই ধাতব বালতিতে লাল আর সবুজ রঙ অল্প অল্প জলে গুলে তারপর বেশি করে জল মিশিয়ে বাবা তাদের নিজের পছন্দ মত ঘনত্বে নিয়ে এল। আমাদের সেই সময়ের দিনযাত্রায় প্লাস্টিকের প্রবল আবির্ভাব ঘটেনি। বেশির ভাগই মাটি, কাপড়, কাঠ, কাগজ আর ধাতুর বানানো। সেই সকালে পরম বিষ্ময়ে কয়েকটি প্লাস্টিকের ছুঁচলো-মুখ ছিপি ওয়ালা কৌটো আমাদের তিন ভাইয়ের হৃদয় হরণ করে নিয়েছিল – তিনটি পিচকারি। পরবর্তীকালের হাল্কা, সহজে নষ্ট হয়ে যাওয়া খেলনা নয়, রীতিমত শক্ত সমর্থ কৌটো। দুই তালুতে বন্দি করে কৌটোর পেট চেপে ধরলে তীব্র স্রোতে রঙিন জল বেরিয়ে এসে কত দুর পর্যন্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে, আর এত বড় অবাক কান্ড আমরা নিজেরা ঘটাচ্ছি!পিচকারি হাতে বাড়ি থেকে বের হয়েই আমরা বুঝলাম রণক্ষেত্র কাকে বলে, আমাদের অস্ত্র অন্যদের হাতেও আছে আর সেগুলো আমাদের দিকে তাক করা এবং ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের সুবিধা ছিল, তিন ভাইয়ের সম্মিলিত দলবদ্ধ আক্রমণ। কিন্তু তারও সীমাবদ্ধতা আছে, রসদ ফুরিয়ে যায়, তখন দৌড়ে ফিরে এসে আবার জল ভরে নিয়ে যাওয়া। আর সেই ফিরতি পথে গায়ে মাথায় প্রতিপক্ষের জলের ধারা। খুব ভালো হয় যদি পিচকারি বেশ বড় মাপের হয়, অনেকটা জল ধরে আর অনেক দূর যায়, ঐ ওদের কারো কারো হাতে ধরা পিতলের পিচকারিগুলোর মতন। কিন্তু আমাদের ত অমন পিচকারি নেই। বাবা বলল দেশভাগের আগে তাদের বাড়িতে তার নিজেরও ঐ পিচকারি ছিল। কিন্তু তাতে আমাদের ত কোন উপকার হচ্ছে না!এইবার বাবা তার কারিগরি দক্ষতার প্রকল্প চালু করল। লতানে গাছের জন্য মাচা বাঁধার খুঁটি বানাতে লাগবে বলে বেশ কিছু বাঁশের টুকরো রাখা ছিল। তারই একটাকে নিয়ে এসে দা, করাত, আর কি কি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাটাকাটি করে একটা নল বানিয়ে ফেলা, তারপর সেটার যেদিক থেকে রঙ বের হবে সেদিকের দেয়ালে, তুরপুন দিয়ে ছ্যাঁদা করা ইত্যাদির পরে একটা লম্বা টুকরোর দুই প্রান্তে দুই কাপড়ের টুকরো জড়িয়ে একটা দিক হাতলের কাজে আর অন্য দিকটা বাঁশের খোলের মধ্যে ঢুকিয়ে রঙ টানা আর বের করার পিস্টন বানিয়ে ফেলতেই পিচকারি তৈরি হয়ে গেল। আর আমাদের পায় কে! কিন্তু তিনজনের জন্য দুটো পিচকারি করা হয়েছিল, এইটাতে সুবিধা হয়েছিল না অসুবিধা সেইটা এখন আর নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। যেটা নিশ্চিত করে বলা যায় সেটা এই যে সমস্ত বাহুবলি সিনেমায় যেমন দেখায়, অস্ত্রশস্ত্র যতই ব্যবহার হোক, চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হাতাহাতি সম্মুখ সমরে। প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে শক্তিশালি দলও হেরে যায়, আমারাও আমাদের সেই প্রথম বছরের যুদ্ধে মনে হয় না খুব সুবিধা করতে পেরেছিলাম। পরের বছর থেকে রসদ সংগ্রহের দায়িত্ব নিজেরা নিয়ে নিয়েছিলাম। হাতের তালুতে রঙ মেখে নিয়ে এগিয়ে চলো, যুদ্ধে হেরে যাওয়া কোন কাজের কথা না। মুস্কিল হল, এই রঙের যুদ্ধশেষে সবাই একই রকম হেরে বসে। সবাই রঙে রঙে রাঙা আজব প্রাণী। খেলা তো হল। এরপর সেই ভয়ানক সময়। স্তরে স্তরে চেপে বসা রঙ তুলতে গিয়ে তিন ভাই, সাথে মায়ের জেরবার অবস্থা। কখনো তেল দিয়ে মোছা, তারপর অনন্ত কাল ধরে বারে বারে সাবান ঘষা আর হাতে পাম্প করে তোলা ঠান্ডা জলে সেই সাবান ধুতে ধুতে মায়ের হাতের তালু আর সমস্ত আঙ্গুলগুলো সিঁটিয়ে ওঠা। উত্তরবঙ্গ ছেড়ে চলে আসার পর বড় হতে হতে অবশ্য দেখলাম রাঙিয়ে দেওয়ার শেষ পর্বটা বড়দের দখলে। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ে তারা বের হন, তারপর দু-এক বাড়ি ঘুরতে ঘুরতেই মাথার চুল থেকে পায়ের জুতো পর্যন্ত লাল আর অভ্রকুচি ঝিলিক দেওয়া গোলাপি/বেগুনি আবিরে মাখামাখি। আমাদের সময়ে সবুজ আবিরের তেমন একটা চল ছিল বলে মনে পড়ে না। বেলা বাড়ার সাথে আবিরের গুঁড়ো জায়গা ছেড়ে দেয় রঙের গুঁড়োকে। এই পর্ব বিভিন্ন বাড়ির, পাড়ার দস্তুর মেনে মৃদু অথবা উদ্দাম। অনেক সময় সেটা রঙ ফুরিয়ে কাদা গোলা জলে শেষ হত। মিশ্র ভাষাভাষীর পাড়ায় এমনও দেখেছি, প্রথম দিন রঙ্গিন জলে দোল আর দ্বিতীয় দিনে কাদা গোলা জলে হোলি। খুব ভাল লাগত বাতাসে আবির ছুঁড়ে চারপাশ রাঙিয়ে দেওয়া। যে আবির থালায় ঢেলে নেওয়া হয়েছে তার উদ্বৃত্ত আর ঠোঙ্গায় ফিরবে না। তারা ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় দশদিক রাঙিয়ে দেবে। পরিমাণ কম থাকায় এই খেলাটা অল্পই খেলা যেত। এখন অবশ্য নানা উল্লাসে বিশেষ বিশেষ রঙের অঢেল আবিরে নানা সময় আকাশ-বাতাস রাঙা হয়ে ওঠে। উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরে আসার পর আমার বিশেষ প্রাপ্তি হয়েছিল একে একে ছয়টি খুড়তুত ভাইবোন, ফলে হামলাবাজির দল বেড়েছিল ভালোমতন। দোলের দিন-সপ্তাহ-মাস জুড়ে আরও কত টুকরো ছবি মনে পড়ে – কীর্তনের দল বের হত খোল-করতাল নিয়ে, ঠাকুমা হরিসভায় যেত, কাকি এক বছর দোলের বিকেলে পূজোর আয়োজন করেছিল আর তার পর থেকে সেটি বাৎসরিক অনুষ্ঠান হয়ে গিয়েছিল। এই ছবিগুলোর কিছু আমার স্মৃতিতে কিছু আমার ভাই-বোনেদের স্মৃতিতে ঠাঁই করে নিয়েছে, গল্পে গল্পে ঊঠে আসে। কয়েক বছর পার করার পরে আমাদের অনেকেরই রঙ খেলার ইচ্ছেটা চলে গিয়েছিল। বিশেষ করে ছোট ছোট কাঁচের শিশিতে ভরা চকচকে রঙগুলো বাজারে জাঁকিয়ে বসার পর। ওগুলো শরীর থেকে ধুয়ে-মুছে দূর করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ত। তবে সেই কারণের থেকেও যেই জন্য বেশি অপছন্দের হয়ে উঠেছিল সেটা আবেগের, অনুভূতির পার্থক্য ঘটে যাওয়ায়। রঙ মাখানো – রীতির নামে জোর খাটানোর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। খুব কম করে হলেও আমার খুশিকে আমি জোর করে এক জনের ইচ্ছে-অনিচ্ছের পরোয়া না করে তার উপর চাপিয়ে দিচ্ছি। এ তো অত্যাচার! তা বলে, স্বেচ্ছায় কি কেউ রঙ মাখে না? মাখে তো। রঙিন হয়ে ওঠার সেই আকাঙ্খা নিয়ে গান হয়, সাহিত্য হয়, শিল্প হয়। এম আর চুঘতাইয়ের একটি অপূর্ব ছবি আছে, কৃষ্ণ-রাধিকা সেখানে পরস্পরে আত্মহারা। অমন অবস্থায় ইচ্ছে হতেই পারে - প্রিয় মানুষের কাছ থেকে রঙ মাখার, ভালোবাসার রঙ, প্রেমের রঙ। সে দোল যাদের জীবনে এল তাদের পরম সৌভাগ্য। আর যারা মাখতে চায়নি সেই তাদের জন্য ও রঙ যন্ত্রণার, ঐ সকাল-দুপুর সরে থাকার, আড়ালে থাকার।বাবা-মা দেশভাগে বাস্তুহারা হয়েছিলেন। আমার জীবনে উৎখাতের বেদনা এসেছিল বাবার বদলির চাকরির ফলে। জ্ঞান হওয়া ইস্তক যে বাড়ি, যে রাস্তা-ঘাট, যে পাড়া, যে দুনিয়া নিজের বলে জেনে এসেছি সেখান থেকে উপড়ে গিয়ে কোচবিহারের এক অচেনা বাড়িতে, অচেনা জগতে ঠাঁই হয়েছিল। যতদিন সেখানে ছিলাম প্রতিদিন ভাবতাম কবে আবার পুরনো দিনে ফিরব। তিন বছর বাদে সেখান থেকে চলে এসেছিলাম। কিন্তু পুরনো দিনে আর ফেরা হয়না, আমারও হয়নি। তখন যেটা বুঝিনি, এর পর থেকে ঐ তিন বছরকে আমি খুঁজে ফিরব বাকি জীবন। এই খুঁজে ফেরার এক পর্যায়ে এসে আমার স্মৃতিচারণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লিখে রাখতে শুরু করি। বিভিন্ন টুকিটাকি ঘটনাকে জুড়ে জুড়ে ক্যালিডোস্কোপে ছবি গড়ে তোলা। একটু ঘোরালেই অন্য ছবি। কয়েকটি পর্ব এইখানে গুরুচন্ডা৯তেও লিখেছি। এবার ইচ্ছে আছে অন্যত্র লেখা পর্বগুলিকেও এখানে নিয়ে আসার। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত ক্যালিডোস্কোপ ঘোরানোর আশা নিয়ে আজ এখানেই থামছি।ক্রমশ...
    মহারাজা ছনেন্দ্রনাথের রংবেলুন ও একপাটি চটির গল্প - রমিত চট্টোপাধ্যায় | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়"ফ্যাচ !"মানেই আরো এক জন শত্রুসৈন্য ঘায়েল, কেল্লা থেকে ছোঁড়া বোমা একদম সঠিক নিশানায় গিয়ে পড়েছে। আর নিচে আহত সেনামশাইটি রাগে তিড়িং বিড়িং করে উঠে, ওপর দিকে তাকিয়ে অদৃশ্য গোলন্দাজকে খুঁজে না পেয়ে, বাছাই করা কিছু বিশেষণ ছুঁড়তে ছুঁড়তে নিজের সদ্য রঙিন জামার দিকে তাকিয়ে এলাকা ছাড়লেন।তর্জনের তোড় থামলে ছেনু একটুকুনি মুখ বাড়িয়ে একফাঁকে লোকটার অবস্থা দেখে নিয়েছে, আর ওমনি তার মুখ জুড়ে খেলে গেছে স্বর্গীয় হাসি। আজ যখন এই কেল্লার গোলন্দাজির দায়িত্ব ছেনুর কাঁধে পড়েছে, সে, কাজে কি আর ফাঁকি দিতে পারে। তাই সক্কাল বেলা উঠেই দুই দিদিকে ঘুম থেকে তুলে দিয়েছে ঠেলে ঠেলে। তারা ঘুম ভেঙে বকুনি দিতেই ছেনু বলে দিয়েছে, বাঃ রে, অতগুলো বেলুন কি আমি একলা ভরতে পারি ? আর কোনোমতে ভরে ফেললেও, আমি তো আর গিঁট বাঁধতে পারিনা। ওগুলো একটু বেঁধে ছেঁদে দে। সেই সজল চক্ষুর দিকে তাকিয়ে তাদের রাগ গলে জল। তিনজনে মিলে ছাদে উঠে বালতিতে রং গুলতে বসল। একটু করে গোলা রং পিচকিরি দিয়ে বেলুনে ঢুকিয়ে বাঁধে আর দরজার দিকে তাকায়। দরজা দিয়ে যদি দুম করে সে উঠে আসে ওমনি সব গোলমাল হয়ে যাবে আর দুই দিদি বিপদ বুঝে পিঠটান দেবে। তারা ছেনুর জন্য বেলুন বাঁধতে রাজি হয়েছে কিন্তু কানমলা খেতে নয়। আসলে ছোড়দা (ছোড়দা শুনে মোটেই পুঁচকে ভাববেন না পাঠকেরা, ওদের দুটি লম্বা লম্বা দাদার মধ্যে ইনি বয়সে ছোট, তাই নাম ছোড়দা, কিন্তু তার গলার বিষম আওয়াজে মাঝে মাঝে গুলিয়ে যায়, কে ছোড়দা আর কে বড়দা) এই সব রং খেলা টেলার ঘোর বিরোধী। তার দাবি এইদিনেও নাকি কেউ কোন হুল্লোড়পনা না পাকিয়ে সুবোধ বালক হয়ে চুপটি করে ঘরের কোণে বইখাতা নিয়ে বসে লেখাপড়া করবে, নেহাৎ পড়াশুনোয় মন না বসলে সাহিত্য পড়বে, কিন্তু পাড়া বেড়িয়ে রং খেলতে যাওয়া নৈব নৈব চ। তার কথায়, রং খেলে কে কবে মহৎ হয়েছে ? ছেনু মিনমিন করে উত্তর দিতে যাচ্ছিল বটে, কেষ্ট ঠাকুর, কিন্তু ছোড়দার বোমার মত চোখের দিকে তাকিয়ে চেপে যেতে হয়। আগের দিনই ছোড়দা বাড়িজুড়ে ঘোষণা করে দিয়েছে, ছেনুর মতো পুঁচকে ছেলের কোথাও রংটং খেলতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, এক বারান্দা থেকে বসে বসে রং খেলা দেখতে পারে, এই অব্দি। কিন্তু বাড়ির সবাই তো আর এরকম পাষাণ হৃদয় নয়। তাই বড়দা আগের দিন রাতে বাড়ি ফেরার সময় দু কৌটো রং আর এক প্যাকেট বেলুন এনে গোপনে ছেনুকে চালান করে দিয়েছে। এক দিদি আলমারির পিছন থেকে পুরোনো পিচকিরিখানা ঝুল টুল ঝেড়ে উদ্ধার করে এনেছে। আর রং গোলার জন্য ভাঙা বালতিটা জোগাড় হয়েছে তেতলার পিসিমার কাছ থেকে। সেই সব নিয়ে আজ ছাদে বসে তিনজনে মিলে সকাল সকাল সব বেলুন টেলুন বেঁধে ফেলে, চিলেকোঠার ঘরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।এরপর তিনজনে একে একে নেমে, ঠাকুরঘরে গিয়ে ঠাকুরের আর মা'র পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করেছে। ঠাকুরকে প্রণাম করলে তবেই প্রসাদের মিষ্টি মিলবে, মা হাতে সন্দেশটা দিতেই ছেনু খপ করে পুরোটা মুখে পুরে দিয়েছে, আর চিবোতে পারে না। তারপর একটু জল দিতে তবে গলা দিয়ে নামল। ছোড়দা আবার ঠাকুরকে প্রণাম টনাম করে না, তাই সে সকালে কমলা থেকে সন্দেশ কিনে আনার সময়ই নিজেরটা টপ করে খেয়ে নিয়েছে। সন্দেশটা একসাথে মুখে পোরার জন্য মা একটু বকাবকি করে বলল, যা এবার দিদিদের প্রণাম কর। ছেনু মিচকি হেসে বদ্দিকে একগাদা আবির দিয়ে প্রণাম করে পায়ে খিমচে দিতেই, বদ্দিও পাল্টা ছেনুকে ধরে খুবসে কাতুকুতু দিয়ে দিল। আর ছোদ্দিকে প্রণাম করার পালা এলে ছেনু সোজাসাপ্টা জানাল, ওকে বড়জোর মুখ ভেঙিয়ে দিতে পারে, প্রণাম করা সম্ভবপর হচ্ছে না। তাতে ছোদ্দি আবির হাতে নিয়ে ছেনুর টোবলা গালদুটোয় লাগিয়ে চুলটা একটু খেবলু খেবলু করে দিল। দিদিরা আজ যাবে লালবাড়িতে বসন্ত উৎসবে, ওখানে ওদের নেমন্তন্ন, লালবাড়ির মেয়েদের সাথে দিদিদের ভারী ভাব কিনা। ছোড়দাও মানা করতে পারে না, কারণ ওখানে রং টং খেলা হয়না, শুধুই একটু আবির ছোঁয়ায়, আর আসল কথা হল লালবাড়ির লোকেদের চটানো মুশকিল, কারণ ওরাই ছেনুদের বাড়িওলা। তবে বাড়িওলা হলেও লালবাড়ির লোকজন ছেনুদের বড্ড ভালোবাসে, ছেনু মাঝে সাঝে খেলতেও যায় ওই বাড়িতে কিন্তু আজ ছেনুর গন্তব্য অন্য জায়গা - তেতলার বারান্দা। মাকে ছেনু বলে রেখেছে, বসে বসে রং খেলাই যখন দেখব, তখন তেতলার বারান্দা থেকেই দেখা ভাল, আরো উঁচু হবে। তাতে গ্রিল শক্ত করে ধরে থাকার শর্তে ছেনুর ছাড় মিলেছে। তেতলায় গেলে ছেনুর একচ্ছত্র আধিপত্য, কেউ কিচ্ছুটি বলার নেই, সবাই তাকে মাথায় করে রাখে। ছেনু যেতেই পিসিমা একটা নারকেল নাড়ু বের করে ছেনুর গালে দিয়ে দিল। তারপর ছেনু গিয়ে সেই চিলেকোঠা থেকে নড়তে নড়তে বেলুন, বালতি, পিচকিরি সব টেনে এনে সেসব জিনিস বারান্দা জুড়ে সাজিয়ে রাখল। তারমধ্যে এক ফাঁকে নিচে গিয়ে দেখে নিয়েছে ছোড়দা কি একটা গাবদা বই খুলে পড়ছে, সুতরাং সেদিক থেকে আপাতত কোনো ভয়ের আশঙ্কা নেই। তা এইসময়ে তাদের পুরোনো লঝঝড়ে বাড়িটার তিনতলার বারান্দা থেকে নিচের রাস্তায় লোকজনের গতিবিধি দেখতে দেখতে তার মনে হল, সে আর নিতান্ত পুঁচকে ছেনু নয়, এখন তার নাম মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ, কলকাতার বুকে তার এই বিশাল কেল্লার ঝরোখা থেকে সে এখন শত্রু সৈন্যদের ওপর নজর রাখছে। এই সময় একটা চেয়ার সিংহাসন হিসেবে পেলে মন্দ হত না, বা নেহাৎ একটা কাঠের ঘোড়া। যাইহোক, নিচের পরিস্থিতি দেখে ছেনু ঠিক করল, আহত সৈন্যদের বোমা মারার কোনো মানে হয়না। তাদের আশেপাশের কিছু বাড়ির ছাদ থেকেও মাঝে সাঝে শেলিং হচ্ছে, তাই যেসব সৌভাগ্যবান সেসব এড়িয়ে তাদের বাড়ি পর্যন্ত বেরঙিন, বেদাগ জামায় আসতে পেরেছে, শুধুমাত্র তাদেরকেই সে নিশানা করবে। পুঁচকে হলেও তার হাতের টিপ মারাত্মক। সে রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে তাক করে টপাটপ রং-বেলুন ছুঁড়ছে আর গায়ে ঠিকমতো পড়লেই বারান্দা থেকে ছুট। এভাবে অন্তত গোটা ছাব্বিশ লোককে সে উজালার খরিদ্দার বানালেও দুঃখের বিষয় উজালা কোম্পানি এতবড় উপকারের প্রতিদান কোনো দিনই তাকে দিতে পারেনি, হয়ত বিষয়টা তাদের গোচরেই আসেনি, কে জানে। তা মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের বোমাবর্ষণ দিব্যি চলছিল, বেলুনরাও আজ দারুণ সার্ভিস দিয়েছে, খুব কমই ফুটো বেরিয়েছিল। মাঝে মধ্যে পিচকিরি দিয়েও সে কয়েকজনকে রং ছুঁড়েছে। তার শিকারদের জামা বিতিকিচ্ছিরি ভাবে রঙিন হয়ে গেলেও, মহারাজের জামা এখনো একদম পরিষ্কার। তার মধ্যে মৃদু মন্দ মলয় বাতাস এসে মেজাজটা ফুরফুরে করে দিচ্ছে। এই সময় দূর থেকে দেখা গেল ওনার কিছু বন্ধু এইদিকে আসছে। তারা ইতিমধ্যে রং খেলে ভূত হয়ে গেছে। ছেনু তার মধ্যে থেকেও দিব্যি চিনতে পারলো, বাচকুন, বুলটু, তোড়া, লুচকাই, অভু সবাই আছে। এরা সম্ভবত দ্বারিকের দোকানের দিকে রং খেলতে গেছিল, যেখানে একেবারে চৌবাচ্চার মধ্যে রং গোলা হয়, আর কেউ বেশি বেগড়বাই করলে ধরে সেই বিচিত্র সব রং-গোলা চৌবাচ্চায় ঝুপপুস করে চুবিয়ে দেওয়া হয়। বাঁদুরে রং, ভুতুড়ে রং, কালি, গ্যামাক্সিন এসব তো মামুলি ব্যাপার। তা বন্ধুদের আসতে দেখে ছেনু মনস্থির করল, এরা যা রং খেলেছে, তাতে বেলুন টেলুন একেবারে সামান্য ব্যাপার, পিচকিরি দিয়ে ছুঁড়লেও কামানের সামনে নকুলদানা মনে হবে, তাই গোটা বালতি ধরেই এদের মাথায় রং ঢালতে হবে। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। বালতিটা কোনো মতে ধরে তুলে (বালতিটা আসলে অনেকটা খালি হয়ে এসেছিল তাই রক্ষে) রেলিংয়ের ধার ঘেঁষে এসে ছেনু ঠিক তাক করে ওদের মাথায় গুলে রাখা রংটা ঢেলে দিল। আর বালতি ঢালতে গিয়ে ছেনুর পা-ও পিছলে গেছে। রেলিং না থাকলে বিপদ হত, কিন্তু এযাত্রা একপাটি চটি ছেনুর পা থেকে খুলে নিচে একদম রাস্তার ওপর পড়ে গেল। ওরা ওপর থেকে রং ঢালায় একটু বিভ্রান্ত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু চটিটা দেখে আর কোনো সন্দেহ রইল না। এই চটি তাদের ভীষণই চেনা, এইসব চটিকে সময় বিশেষে গোলপোস্ট বা উইকেট বানিয়ে আকছার তারা গলিপথকে মাঠে রূপান্তরিত করে থাকে। তাই তারা দেরি না করে চটির মালিকের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ল। অন্যদিন এই দরজা সারাক্ষণ খোলা থাকলেও আজ ছোড়দার নির্দেশে বন্ধ করা ছিল। মা দরজা খুলে বিস্ফারিত চোখে ভৌতিক অবয়বদের দেখে জানালেন, ছেনুর শরীর মোটে ভাল নেই, সে তাই রং খেলতে যেতে পারছে না। তারা সেই শুনে ভালোমানুষের মতো জানাল, একবার ডাকুন না ওকে, ওর চটিটা পড়ে গেছিল তো, দিয়েই চলে যাবো। আর ঠিক এই সময়ই ছেনু তার হারানো চটির সন্ধানে তেতলা থেকে গুটি গুটি পায়ে নেমে এসেছিল। বয়সজনিত কারণে তার উচ্চতা খুব বেশি না হওয়ায় বন্ধুরা যে তার বাড়িতেই ঢুকেছে এটা আর তেতলার বারান্দার রেলিং থেকে মুখ বাড়িয়ে দেখা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ওদের আর দেখতে না পেয়ে ছেনু ভেবেছে ওরাও বুঝি সেই আহত সৈন্যদের মতোই এলাকা ছেড়েছে। আর সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমেই পড়বি তো পর একদম বাচকুনের সামনে। আর যায় কোথায়। সবাই মিলে ছেনুকে চেপে ধরে ভুতুড়ে, বাঁদুরে, গিরগিটিয়ে, কিম্ভুতুড়ে, মানে আর যা যা বিদঘুটে রং সম্ভব, যা ওদের কাছে ছিল, সব আচ্ছা করে আগাপাশতলা মাখিয়ে দিল। তাতে এমনি খুব একটা অসুবিধে কিছু হয়নি, খালি পাড়ার গার্জেনরা এরপর আর হপ্তাদুয়েক ছেনুকে রাস্তায় দেখে চিনতে পারতো না, এই আরকি। বলছি বটে গপ্পো, কিন্তু এইসব ঘটনা আসলেই কলকাতায় ঘটেছিল, তা ধরে নিন আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছরেরও আগে। এখন বোধহয় আর রাস্তা জুড়ে সেই লেভেলের দোল খেলা হয়না সেইখানে। ছেনু তখন যেমন দুষ্টু মিষ্টি ছিল, এখনো মনে মনে তেমনই আছে। তবে লেখক কিছুটা শৈল্পিক স্বাধীনতা নিয়েছেন আর কি। সময় সুযোগ পেলে ছেনুর আরো কিছু ঘটনা এবং দুর্ঘটনার কথা আপনাদের সাথে ভাগ করে নেওয়া যাবেখন :-)
  • হরিদাস পালেরা...
    বারীন সাহার সিনেমাটি অবশেষে দেখা গেল  - সিএস | যে সিনেমা আদৌ দেখা যাবে কিনা , সে সন্দেহ ছিল দীর্ঘদিন ধরে, সেই সিনেমাটি অবশেষে দেখে উঠতে পারলাম। অতএব সে নিয়ে কিছু কথা ।  ১৯৬১  সালে বারীন সাহা 'তের নদীর পারে' সিনেমাটি বানিয়েছিলেন, রামধনু পিকচার্সের ব্যানারে, প্রডিউসার ছিলেন নিজের; ভাই রাজেন সাহা। বোঝাই যায়, নিজেরাই টাকা যোগাড় করে ঐ সিনেমাটি তৈরী করা। রিলিজ হয়েছিল আট বছর পরে, ১৯৬৯ তে, এক সপ্তাহ হলে চলেছিল, এরকম শোনা যায় যে কাউন্টারের কর্মীরা 'ঐ বোরিং সিনেমা 'কী দেখবেন বলে দর্শকদের নিরস্ত করতেন, যাতে সিনেমাটি অরো কিছুদিন হলে চলে সেই জন্য রাজেন সাহার কথামত তার ছেলে (বারীন সাহার ভাইপো ) সিনেমাটির টিকিটও কিনে নিয়েছিল, কিন্তু বিশেষ কিছু ফল হয়নি, দর্শকধন্য হওয়ার জন্য ! বারীন সাহার মনে হয় একরকমের গোঁ ছিল, নিজের মত সিনেমা বানানোর গোঁ বা সিনেমা লাইনের নিয়মগুলোকে না মানার গোঁ, তার পরিণতি যেমন এই সিনেমাটি, তেমনই হয়ত আর দ্বিতীয় কোন সিনেমা না বানিয়ে উঠতে না পারা, দু'টি ডকুমেন্টারি বানানো এবং তারপরে সিনেমা ছেড়ে দিয়ে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত জায়গায় স্কুল তৈরী ওর সেই কাজেই যুক্ত হয়ে থাকা। হয়ত, এই যে নিজস্বতা, নিজের কাজে বা জীবনে তার সাথে বামপন্থী রাজনীতিও যুক্ত, আইপিটিএর সাথে যুক্ত ছিলেন, ১৯৪৭ - ৪৮ সাল নাগাদ বিপ্লবাবাদী রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়া, ক্রমশঃ সেসব থেকে দূরে চলে যাওয়া (বিপ্লব অত সহজে হয় না , এই বোধ তৈরী হওয়া )। এই সময়ের পরে, ১৯৫০ এর দশকে ইউরোপে যাওয়া সিনেমা শেখার জন্য, প্যারিস ও রোমের দুটি সংস্থাতে। ফলতঃ, নিজস্বতা হয়ত গড়ে উঠেছিল, দুটি দিক তেকে, রাজনীতি আর সমসাময়িক বিশ্ব সিনেমা থেকে, সরলভাবে বললে, ঋত্বিকের সাথে মিল আছে। তো সিরিয়াস সিনেমা নিয়ে লেখাপত্রে, বাংলা সিনেমা সংক্রান্ত, সেসবে 'তের নদীর পারে ' সিনেমাটির উল্লেখ পেতাম, মনে পড়ে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর একটি লেখা, সিনেমা বানানোর ইচ্ছে যখন ওনার তৈরী হচ্ছে তখন এই সিনেমাটি ওনাকে প্ররোচনা দিত এই ছিল মন্তব্য, এরকম আরো কিছু লেখায় হয়ত সিনেমাটির কথা পড়েছিলাম। ক'বছর আগে 'মনফকিরা 'থেকে চলচ্চিত্রাক্ষর 'নামে একটি বই বেরিয়েছিল, বারীন সাহার সাক্ষাৎকার ও সিনেমা নিয়ে অল্প কিছু লেখাপত্র সমেত, সে বইও পড়েছিলাম, কিন্তু না সিনেমাটির খোঁজ পাইনি।  ক'দিন আগে পেয়ে গেলাম সেই খোঁজ।  কলকাতার SRFTI তে ফিল্ম আর্কাইভিং আর রেস্টোরেশন নিয়ে এক সপ্তাহের অনুষ্ঠান চলছিল (https://arcurea.in), সেই অনুষ্ঠানে কিছু পুরোন সিনেমা দেখানো হচ্ছিল যেগুলোকে বাঁচিয়ে তোলা গেছে, সেই সবের মধ্যে বারীন সাহার সিনেমাটিও ছিল, একটি শো ছিল এক বেস্পতিবারের সন্ধ্যেতে, অন্যটি পরের দিন সকাল ১০টায় , সন্ধ্যের শোটিতে সময় করা গেল না,  অতএব পরের দিন সকালে দেখা গেল , ছুটি নিয়ে , সকালের দিকে বেরিয়ে। শোনা যায় ১৯৯২ তে গোর্কি সদনে একটি শো হয়েছিল, তারপর কলকাতায় এইবার, সেই জন্য ছুটি - সকাল ইত্যাদি বিশেষ কিছু নয় । এও ফেসবুক থেকে জানলাম যে সিনেমাটি ছিল ৮২ মিনিটের , গোর্কি সদনের শোতেও তাই দেখানো হয়েছিল , কিন্তু এবারে সিনেমাটি ছিল ৭৮ মিনিটের , 4 মিনিট মনে হয় বাঁচানো যায় নি , হয়ত সিনেমার শেষটিতে সেই বাদ পড়া অংশ ছিল।  সিনেমার ক্ষীণকায় গল্পটি একটি সার্কাস কোম্পানীকে নিয়ে, সেই সার্কাসের ক্লাউন (জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায় ) ও ম্যানেজার প্রধান দুই চরিত্র , পরে এদের সাথে যুক্ত হয়ে পড়বে এক নাচুনী মেয়ে (প্রিয়ম হাজারিকা, ভূপেন হাজারিকার প্রথম স্ত্রী ), তিনজনের মধ্যে কন্ফ্লিক্ট এবং এই তিনজনকে ব্যবহার করে পরিচালকের 'বক্তব্য'। সিনেমাটির পুরো শুটিং-ই ছিল আউটডোরে, মেদিনীপুরে, প্রথমে কালী ব্যানার্জী ও রুমা গুহঠাকুরতা ছিলেন দুই চরিত্রে , কিন্তু কিছুদিনে শুটিং হওয়ার পরে বৃষ্টিতে শুটিং নষ্ট হয়, যা ছবি তোলা হয়েছিল সেসবও, অভিনেতারা কলকাতা ফিরে যান, তাদের ডেট আর পাওয়া যায়নি, ফলেনতুন করে শুটিং এবং অন্য দুই অভিনেতা ও অভিনেত্রীকে নিয়ে ! ক্লাউন চরিত্রটি আসলে এক আর্টিস্ট (ভাটিখানার বিশেষ এক দৃশ্যে এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়), ম্যানেজারের সাথে তার যে কনফ্লিক্ট সে আর্ট / আর্টিস্ট আর ব্যবসার দ্বন্দ (ম্যানেজার সার্কাসে লোক টানার জন্য নাচুনী মেয়ে আনে, পাশের এক সার্কাসও একই পথ নিয়ে ভোক্তা বা দর্শকের সংস্থান করছে ), অতএব সিনেমাটির একটি প্রচলিত পাঠ (পরিচালকের বক্তব্য ) এই আর্ট ও কমার্শিয়ালাইজেশন নিয়ে, এরকমই ভাবা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি ভুল কিছু নয়, একটি বক্তব্য নিশ্চয়, কিন্তু অন্যদিকে নাচুনী মেয়েটির  (প্রিয়ম হাজারিকা) সাথে ক্লাউনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, দীর্ঘ এক দৃশ্য আছে যেখানে নদীর জলের উচ্ছ্বলতার সাথে মেয়েটির উচ্ছ্বলতা মিশে যাচ্ছে, কিন্তু ক্লাউন / আর্টিস্ট কিছু দুরত্ব থেকেই ঐ দৃশ্য দেখে, যেন নাচুনী মেয়েটি প্রতিকায়িত হয় 'জীবন 'আর 'আনন্দ ' এই দুয়ের মধ্যে কিন্তু আর্টিস্ট যেন সেসবের সাথে পুরো যুক্ত হতে পারে না, সিনেমার শেষ দৃশ্যে ম্যানেজার ও নাচুনী, দু'জনেই সার্কাস থেকে চলে যায় , ক্লাউন ও আর্টিস্ট একা থেকে যায় সার্কাসটিকে নিয়ে।  আর্টিস্টের নিয়তি একা হওয়া, সিনেমটি এই কথাও বলে ?  দীর্ঘ শট আছে রাতে, ফাঁকা বাজারের মধ্যে ক্লাউনের মদ্যপ অবস্থা, একাকী কথা বলা , বাড়ির ওপর থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভাঙা , তার ক্রাইসিস। তারও আগে , দীর্ঘ, দীর্ঘ শট আছে, নাচুনী মেয়েটি যখন গ্রামে আসবে, নদীর ঘাট থেকে চটি হাতে নিয়ে বাজারের মধ্যে দিয়ে তার হেঁটে যাওয়া, লোকজনের কাজ ফেলে মেয়েটিকে অনুসরণ করা, সামনে ম্যানেজার, তার পরে মেয়েটি , পেছনে লোকের বহর বাড়তে থাকা, রাস্তা, আলজমি , নদীর ধার দিয়ে সার্কাসের তাঁবুতে পৌঁছন, সাবজেক্টিভ এক দৃশ্য, পরিচালকের বক্তব্য এই দীর্ঘ শটটির মধ্যেও রয়ে গেছে। দেখার সময় মনে হয়েছে সিনেমাটির kinship ঋত্বিকের 'অযান্ত্রিক ' সিনেমার সাথে আছে (সিনেমার দুই প্রধান চরিত্রর সমাজ থেকে আলাদা ও একা হয়ে যাওয়ার মধ্যে ), হয়ত ফেলিনির 'লা স্ত্রাদা ' সিনেমাটির সাথেও আছে (তিন চরিত্রের কনফ্লিক্টের মধ্যে )। সিনেমাটি দেখানোর আগে বারীন সাহার ভাইপো সিনেমা ও  বারীন সাহাকে নিয়ে একটি লেখা পড়েন, জানান যে সিনেমার শুটিং যেখানে হয়েছিল তার নাম ছিল তেরপাখিয়া (নন্দীগ্রামের কাছে ), সেখানে যে নদীটি তার নাম 'তের 'নদী এবং সিনেমাটি ঐ তের নদীকে নিয়েই। এই মতটি আমার পছন্দ হয়নি , এ যেন নাম ও  সিনেমাটিকে স্থানিক করে দেওয়া একটি তথ্য ব্যবহার করে, ফলে নামটির মধ্যে যে অনির্দিষ্টতা , যা দর্শকের সাথে সিনেমাটির বিষয় বা গল্পের দুরত্ব তৈরী করছে কিন্তু একই সাথে সিনেমাটিকে যা সিম্বলিক করে তুলছে (সমুদ্র আর তের নদীর পার যেভাবে করে ), সিনেমার রিয়েলিস্ট দৃশ্য আর তার মধ্যে দিয়ে প্রতিকায়িত বক্তব্য, বারীন সাহার অন্বিষ্ট হয়ত তাই ছিল(কিন্ত বারীন সাহার বইটি বার করে দেখতে হবে সিনেমাটি নিয়ে নিজে কী বলেছিলেন )।   সিনেমাটির নামলিপি নেটে পাওয়া যায়, দেওয়া গেল। (ইউটিউবে একটা ক্লিপিং ছিল ক'দিনে আগেও দেখেছিলাম কিন্তু এখন সার্চ করে আর নজরে আসছে না )  
    সালাম সালাম হাজার সালাম  - Partha Banerjee | সালামদা, আপনাকে সালাম।আজকেই নিউ ইয়র্ক ফিরে যাচ্ছি। আজকেই এই সংবাদটা পেলাম। আমাদের বহুকালের দাদা ও বন্ধু ব্রুকলিনের সালাম সারওয়ার চলে গেলেন। বৌদিকে ও তাঁদের তিন ছেলেমেয়েকে সমবেদনা জানাই।সালামদা চলে গেলেন তাঁর প্রিয় ভাইয়ের কাছে, যে ভাইটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হারিয়ে গিয়েছিলো। যার ছবি তাঁর ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউয়ের দোতলার অফিসের দেওয়ালে চিরকাল টাঙানো থাকতো। আর টাঙানো থাকতো ঢাকার এক কৃষ্ণচূড়ায় ঢাকা ঝিলের ছবি। আর থাকতো বাংলাদেশের এক মানচিত্র।সালামদাকে নিয়ে অনেক কিছু লেখার ইচ্ছে আছে। আজ আর মাত্র কয়েক ঘন্টা ভারতে। তাই খুব সংক্ষেপে লিখছি। এই মানুষটি ছিলেন বলতে গেলে আমাদের নিউ ইয়র্ক জীবনের প্রথম থেকে মেন্টর ও অভিভাবক। আমাদের বাড়ি কেনা হয়েছিল তাঁর সাহায্যে। আমার প্রথম বাংলাদেশ ভ্রমণ হয়েছিল তাঁর সাহায্যে। ব্রুকলিনের বাঙালি কমিউনিটির সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছিল তাঁর সাহায্যে।হ্যাঁ, বাংলাদেশী কমিউনিটি নয় শুধু, বাঙালি কমিউনিটি। ব্রুকলিনের পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালিদের সংগঠন প্রবাসীর দুর্গাপুজোতে দীর্ঘকালের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সালামদা। ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন পঁচিশ বছর। তারপর এলো দিন বদলের পালা। নতুন যুগের নতুন প্রবাসী বাঙালিরা তাঁকে "মুসলমান" হওয়ার কারণে অসম্মানিত করলো। তিনি সরে গেলেন।আমরা সরে যাইনি। প্রতি সপ্তাহেই দেখা হয়েছে এতগুলো বছর ধরে, তাঁর অসুস্থতার আগে পর্যন্ত। তিনিও আমাদের বাড়ি অনেকবার এসেছেন। আমার বাবার নিউ ইয়র্ক সফরের সময়ে তাঁদের মধ্যে একটা আলগা সখ্য গড়ে উঠেছিল। সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ, আপাদমস্তক বাঙালি সালাম সারওয়ারের সান্নিধ্যে এসে আপাদমস্তক আরএসএস জিতেন্দ্রনাথের মনেও হয়তো একটু পরিবর্তন এসে থাকবে।তিনি কবিতা ভালোবাসতেন। লিখতেনও। আমরা কবিতা, সাহিত্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও বাঙালিত্ব নিয়ে অনেক গল্প করেছি তাঁর ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউর সিপিএ অফিসে বসে। তিনি তাঁর কবিতা আমাকে শুনিয়েছেন। আবার আমার লেখা কবিতা আবৃত্তি করেও শুনিয়েছেন।বিজয়া দশমীর পরে প্রতি বছর আমি তাঁকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে এসেছি। তিনিও আশীর্বাদ করেছেন। আজ শেষ প্রণাম করে নিলাম আর একবার।কোনো কোনো মানুষকে কখনো ভোলা যায়না। তা তিনি যেখানেই থাকুন না কেন।সালামদা, আপনাকেও কখনো ভুলবো না।
    তেঁনারা - Kishore Ghosal | ১৪৩১ এর পয়লা বোশেখে  আসছে আমার নতুন বই "তেঁনারা"। কিশোরদের জন্যে নটি অকায়-আবছায়া গল্পের সংকলন।বইটি প্রি-বুক করলে পাবেন অনেক ছাড় - এবং বইটি পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়। নিচের লিংকে ক্লিক করলেই পাবেন বিশদ তথ্য এবং বুকিং করার  ফর্মঃ-   https://joydhakbooks.in/product/tenara/
  • জনতার খেরোর খাতা...
    ছেলেপিলেদের থেকে শিখুক - upal mukhopadhyay | কাউন্টার ন্যারেটিভের শক্তিশালী অস্তিত্ব দেশ জুড়েই আছে। সেই ন্যারেটিভের একটা এলিট, স্ট্রাকচার্ড প্রেজেন্টেশন হল জেএনইউ এসইউ নির্বাচনের ফলাফল। এটাকে বামপন্থার জয় বলার থেকে অন্য স্বরের আত্মঘোষণা হিসেবেই সবাই দেখছে, এমনকি গদি মিডিয়াও। এবিভিপি-র প্রতিনিধি আল জাজিরাতে বলেছেন এটা নাকি বামেদের নিভে যাওয়ার আগে জ্বলে ওঠা। ঠিকই, এটা এবিভিপি-র প্রার্থিত বাস্তবতা। সে অনুযায়ী পরিকল্পনার খামতি ছিল না হিন্দুত্ববাদীদের, ফলে বাম প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থীর নমিনেশন বাতিল হয়। কিন্তু বামেরা তাদের কঠোর সমালোচক বা প সা প্রার্থীকে সমর্থন করে প্রমান করল তারা কাউন্টার ন্যারেটিভের বিজয়ের পথ দেখাতে সমর্থ। এই নমনীয়তা বামেরা সর্বত্র দেখাক। এমনকি ঐতিহ্যশালী বামপন্থার ক্ষয়িষ্ণু দুর্গ পশ্চিমবঙ্গেও। ছেলেপিলেদের থেকে শিখুক।
    হেদুয়ার ধারে - ১১৪  - Anjan Banerjee | এর মধ্যে শ্রীলেখা কায়দা কৌশল করে চিঠিটা অসিতের হাতে গুঁজে দিতে পারল। ভাগ্যক্রমে আজকে ফাঁকায় পেয়ে গেল অসিতকে রিহার্সালের জন্য ওপরে ওঠার সময়।অসিত বলল, ' কি এটা ? '---- ' পরে পড়ে নিও ' বলে ধড়ফড় করতে করতে সরে গেল ঘরের ভিতর।অসিত ভাঁজ করা কাগজের টুকরোটা প্যান্টের পকেটে রেখে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে ভাবতে লাগল, এ আবার কিরে বাবা ... এতদিন বাদে আবার নতুন ক'রে চোতা ধরানো কি জন্য ! কি কেস কে জানে। সে ভাবল, যাক এখন তো 'শেষরক্ষা' হোক ... এসব চিঠিচাপাটি পরে পড়া যাবে। ভাঁজ করা কাগজটা প্যান্টের পকেটেই রইল। আসলে প্রাপ্তি ঘটে যাওয়ার পর এসব সম্পর্কে তেমন কৌতূহল বা রোমাঞ্চ বিশেষ কিছু থাকে না, অন্তত ছেলেদের দিক থেকে। সবাই যে দায়িত্বজ্ঞানশূন্য হয়, তা না। অসিত এই অবশ্যই দায়িত্ববান শ্রেণীতে পড়ে। তবে, মেয়েদের ব্যাপারটা আলাদা, বিশেষ করে শ্রীলেখার বয়সী মেয়েদের। সামান্য বাড়াবাড়ি কোন ফুলঝুরি ফুলকি চলার রাস্তায় এসে পড়লে তারা দুর্ভাবনা আর আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে যায়। কারণে বা অকারণে একটা অস্বস্তির বুদ্বুদ উঠতে থাকে মনের ভিতর অবিরত।শ্রীলেখা চিঠিটা নির্জন সন্ধ্যার সিঁড়িতে কোনরকমে অসিতের হাতে গুঁজে দিয়ে ঘরে এসে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়েছে। ব্যাপারটা অঞ্জলির চোখ এড়াল না এবং সে অবশ্যই কিছু একটা আন্দাজ করল।অসিত কিন্তু ওপরে গিয়ে নাটকের রিহার্সালে ঢুকে গেল পুরোপুরি। চিঠিটার কথা বেমালুম ভুলে গেল।রিহার্সালের শেষে অসিত যখন সদলবলে নীচে নামছে জন্মেজয়বাবুর পরিবার সমেত তখন শ্রীলেখা একবার অতি সন্তর্পণে তাদের ঘরের দরজার মুখে এসে দাঁড়াল। এক ফাঁকে দুজনের চোখাচোখি হ'ল। অসিত হাত উল্টে পাল্টে ইশারায় কিছু নির্বাক বার্তা পাঠাল, যার মানে হল --- এখনও পড়িনি ... পড়ে নেব ... চিন্তা নেই...শ্রীলেখা ঘরের ভিতর ঢুকে গেল। অসিতের ইশারাবার্তায় আশ্বস্ত হল কিনা ঠিক বোঝা গেল না। অঞ্জলি রান্নাঘরে ব্যস্ত আছে। ভাগ্যিস এসব কিছু তার চোখে পড়ল না।অসিত কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে চিঠিটার কথা বেমালুম ভুলে গেল। রাত প্রায় বারোটার সময় ঘুম ঘুম আসছে, নাটকের নানান দৃশ্যপট মাথার মধ্যে ঘুরছে, এমন সময়ে হঠাৎ শ্রীলেখার দেওয়া ভাঁজ করা কাগজটার কথা মনে পড়ে গেল। সে তড়াং করে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠল। ভাবল, এই রে ... সেটা পকেটে আছে তো ঠিকঠাক ... কোথাও পড়ে টড়ে যায়নি তো ...। আলো জ্বালিয়ে প্যান্টের পকেট হাতড়ে কাগজটা বার করল। তাড়াতাড়ি কাগজের ভাঁজ খুলে ফেলল। আর কেউ নেই। ঘরে সে একাই শোয়।কাগজটা প'ড়ে তার তো চক্ষু চড়কগাছ।ওতে যা লেখা আছে তা এরকম ----" মা কদিন ধরে খুব ঝামেলা করছে। কাল রাতে বাবার সঙ্গে খুব ঝগড়া করছিল। মা তোমাকে একদম পছন্দ করছে না কদিন ধরে। তোমার সঙ্গে মিশতে দেবে না মনে হয়। বোধহয় সেদিন কিছু দেখে ফেলেছে। অনেক বারণ করলাম, শুনলে না তুমি। চল আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি। তাছাড়া উপায় কি। তেমন কিছু হলে আমি আত্মহত্যা করব এটা জেনে রেখ "অসিত কাগজটা ভাঁজ করে আবার প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখল। তারপর আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। মনে মনে ভাবল, পাগল যে কতরকমের হয় ...সেদিন সাগর আর রাত্রি একসঙ্গে বেরল বটতলা থানার থেকে। সাগর একটু ইতস্তত করছিল। তার চমকের আবেশ, মানে যাকে বলে হ্যাংওভার এখনও কাটেনি। কিন্তু কালীবাবু ঠেলেঠুলে সাগরকে রাত্রির সঙ্গে পাঠালেন।---- ' আরে যান যান ... একটু আগায়ে দ্যান ... ম্যাডামের একটা প্রেস্টিজ আসে না ... কি বলে, একটা মিনিমাম ডেকোরাম তো মেনটেন করেন ... 'রাত্রি কোন কথা না বলে কালীবাবুর কথা শুনে মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসল। সাগর তখনও বসে আছে দেখে রাত্রি সটান বলল, ' নিন নিন অনেক হয়েছে ... এবার চলুন তো ...অনেক কাজ পড়ে আছে ... 'সাগর মন্ডল এমনিতেই এখনও ঘটনা পরম্পরার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি তার ওপর এই মধুর তিরস্কার তাকে একেবারে অবশ করে দিল। সে উঠব উঠব করছে, এমন সময়ে কালীবাবু রাত্রির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, ' এইডা কিন্তু ঠিক করলেন না ... 'রাত্রি অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, 'কেন কি হল ?'----- ' এইবার আপনি ছাইড়্যা তুমিতে আসেন ... এখন আর কি ? আপনি আজ্ঞে বলা ছাড়েন এবার ... 'রাত্রি হেসে বলল, ' ও ... হোঃ হো ... হাঃ হাঃ হাঃ ... বুঝতে পারলাম ... কিন্তু একহাতে তো তালি বাজে না স্যার ... 'কালীবাবু এবার কড়া দৃষ্টিতে সাগরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ' আমি দুইজনেরেই কইত্যাসি ... নো পার্সিয়ালিটি ... যান এবার ভাগেন তো দুইজনে, অনেক হইসে ... আর হ্যাঁ ... নিখিল স্যারের লগে দেখা করার ডেটটা ফিক্স কইরা ফেলেন ... একসঙ্গেই যাব ... 'বাইরে বেরিয়ে এসে সাগর বলল, ' এবার কোনদিকে ? 'রাত্রির এবার আর ভুল হল না। সে বলল, ' সে বলল, ' তুমি যেদিকে বলবে ... '( চলবে )********************************************
    কবিতা  - Latifur rahman Pramanik | ছুড়ে দেওয়া পাথরের খবর আর কে রাখে।কোথায় গড়ায় বা চাপা পড়ে।মরে যায় নাকি আঘাতে আঘাতে রক্ত ঝরে।
  • ভাট...
    commentঅরিন |
     
    commentঅরিন | সহস্র মূষিক ভক্ষণ করে মার্জার হজে চললেন, 
    ". It's also going to be a question of various other winnability criteria that they use... Are you from this community or are you from that religion? Are you from this? I said no, I do not think I am going to able to do it," she said at the TIMES NOW Summit 2024"
    commentইলেক্টোরাল বন্ডের টাকা নিয়ে লড়বেনা? | Finance Minister Nirmala Sitharaman said she declined the BJP's offer to contest elections pleading that she did not have the 'kind of fund' required to contest the Lok Sabha polls. BJP President JP Nadda gave her the option to contest either from Andhra Pradesh or Tamil Nadu, she said. "After thinking for a week or ten days, I went back to say, 'Maybe not'. I do not have that kind of money to contest. I also have a problem whether it is Andhra Pradesh or Tamil Nadu. It's also going to be a question of various other winnability criteria that they use... Are you from this community or are you from that religion? Are you from this? I said no, I do not think I am going to able to do it," she said at the TIMES NOW Summit 2024.
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত