এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এই সময় এবং

    Jhanku Sengupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মে ২০২৪ | ১৭৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • এখন কেমন মন খারাপের কথা
    ম্লেচ্ছ টেচ্ছ ছোঁয়াচ বাঁচানো ঘৃনা
    ধর্মের নামে শ্মশান ধোঁয়ানো লাশ

    প্রশ্নটা ছিল মন ভালো হবে কবে?

    মন ভালো হওয়ার জন্য চাই এক পশলা হাস্নুহানা বৃষ্টি, এক পলাশ বসন্ত দামাল হাওয়া আর একমুঠো শিউলি রোদ্দুর!
    এসব এখন স্বপ্ন!

    আমরা এখন আমাদের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা জালে নিত্য নতুন ফাঁদে পড়ছি। আমরা জড়িয়ে পড়ছি বিভিন্ন বিপদের মধ্যে। আমরা এগোতে পারছি না।
    বরং কেউ কেউ পিছনের অন্ধকারকে আলো ভেবে পিছিয়ে যাচ্ছি!!

    আমরা আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে প্রায় প্রতি মুহূর্তে ছিটকে নিমজ্জিত হচ্ছি সেই পুরোনো কুয়োর মধ্যে; ব্যাঙ হয়ে চিৎকার করে বলছি - " আমিই সে! "

    চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসছে। ক্ষিদে মিটছে না। অথচ একটা দেখনদারি উন্নয়নের গল্প চলছে।
    তার সাথে উল্লসিত গর্জন; ক্ষমতার এবং বৃহত্তর ক্ষমতার।
    পাহাড় ভাঙছে! ধ্বস নামছে। অথচ ভগবানের নামে চারধাম প্রকল্প চলছে!
    হিমালয় গলছে! সমুদ্রে জল বাড়ছে! নদী বাঁধ ভেঙে লোনা জল ঢুকছে! হারিয়ে যাচ্ছে মিস্টি জলের পুকুর, দিঘি, বিল! পাখি পরিযান যাচ্ছে হারিয়ে! পাখিদের সাথে আমরাও হারিয়ে যাচ্ছি! ডাহুক পাখি নেই! চড়ুই পাখির নাচন নেই! মাঝে মধ্যে হঠাৎ কোথাও একটা কাক ডেকে উঠলে আমরা বিস্মিত হই! আমাদের মন চুরি হয়ে যাচ্ছে!

    ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা বুঝে অথবা না বুঝে এই সিস্টেমকে মেনে নিতে থাকি।

    সমাজ বিবর্তনের নিজস্ব ধারায় আজকের রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। পুঁজিবাদী সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনে রাষ্ট্র বলপ্রয়োগ ও দমন করে। আধুনিক রাষ্ট্র এই দমন - পীড়নের সাথে সাথে তার নিজস্ব নাগরিক সমাজের ( Civil Society ) মাধ্যমে মতাদর্শগত আধিপত্য ( Ideological Hegemony ) ছড়িয়ে দিতে থাকে।

    সাধারণ মানুষের চিন্তা আর চেতনার জগতে এই মতাদর্শের প্রভাব অপরিসীম। নাগরিকরা মনে করতে থাকে এই বুর্জোয়া শ্রেণী বিদ্যা - বুদ্ধিতে এগিয়ে আছে। সুতরাং এদের শাসন করার অধিকার আছে।

    ইতালীয় মার্ক্সবাদী ও দার্শনিক আন্তোনিও গ্রামসির ( ১৮৯১ - ১৯৩৭ ) মতে এই Ideological Hegemony বা মতাদর্শগত আধিপত্যের মাধ্যমে একটা Common Sense বা সাধারণ ধারণা তৈরি হতে থাকে।

    মজার কথাটা এটাই যে এই বোধের উৎস ভূমি নাগরিক সমাজের বিভিন্ন স্তরের সংগঠন - স্কুল, কলেজ, ধর্মীয় সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্লাব ইত্যাদি। এইধরণের সংগঠনগুলো সরাসরি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকে না বলেই সাধারণ মানুষ বুর্জোয়া শ্রেণীর তৈরি করা এই সাধারণ বোধগুলোকে স্বাধীন চিন্তার প্রকাশ বলে মনে করতে শুরু করে।

    সাধারণ মানুষেরা বিশ্বাস করতে শুরু করে বুর্জোয়ারা শিক্ষিত, জ্ঞানী। তাদের পুঁজি আছে। তারাই তো চাকরি দিতে পারে। অচ্ছে দিন ' আসতে পারে। প্রয়োজনে গরীব মানুষকে বিভিন্ন নামে ডোল ' হিসেবে সাহায্যও করতে পারে। এই রাষ্ট্র সাধারণ মানুষের কল্যাণ চায়। সুতরাং এহেন রাষ্ট্রের বিরোধিতা করা উচিৎ নয়।

    এভাবেই সাধারণ মানুষের চিন্তা - চেতনায় সঞ্চারিত হতে থাকে বুর্জোয়াদের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্য! অতএব নাগরিকের এই সম্মতিতেই বুর্জোয়ারা কোনরকম বলপ্রয়োগ না করেই যা খুশি তাই করতে পারে।

    সম্মতি ' হয়ে ওঠে একটি আশ্চর্য শব্দ!!!

    '......তোমার বিক্রমে
    চন্দ্রস্পর্শ মেঘের অমৃত ভাষণের শব্দকে
    অনায়াসে বলে দেয়া যায় শঙ্খনিনাদ!
    ধর্ম পথ চেয়ে থাকে জরাজীর্ণ কুটিরে!
    যুদ্ধ বিমানের আবাহনী সঙ্গীতের মূর্ছনায়
    ভক্ত মানুষেরা শ্লোগান তোলে
    জয় হো ! '

    সুতরাং এই দেশ - এই সময়ে সম্মতি ও বলপ্রয়োগের আধুনিক প্ল্যাটফর্ম - এই রাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদ মানুষের মনে যে জায়গা করে নেয়, তাকে স্থানচ্যুত করতে হলে একটি বিকল্প সামাজিক - সংস্কৃতিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, যেটি হবে ফ্যাসিস্ট সংস্কৃতিক ভাবাদর্শের প্রতির্স্পর্ধী।

    এটি হল আধিপত্য (Hegemony) প্রতিষ্ঠার লড়াই, অর্থাৎ রাষ্ট্রশক্তির দখল নেওয়ার চেয়ে কোনও অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় মনন ও মস্তিষ্ক দখলের সাংস্কৃতিক - মতাদর্শগত লড়াই ।

    গ্রামশির এই কথাটাই এই মূহুর্তে জরুরি !

    সংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে আমাদের এ ভাবেই কাজ করা উচিৎ !

    এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে কিভাবে এগোনো যায়, ভাবতে হবে আমাদের সবাইকে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Gahan Sengupta | 2401:4900:1a5d:5042:6c3a:8c82:a355:7011 | ২২ মে ২০২৪ ১২:৫৪532145
  • Excellent presentation . Reflection of the present scenario in the society . Triggers a thought process in the mind of the reader
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন