![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
রবি ঘোষ
ন্যাড়া
কৈফিয়তঃ জন্মদিন-মৃত্যুদিনে লেখা নাবানো ফেসবুকাব্দের একটি অসুখ বিশেষ। এটি সেই অসুখের সিম্পটম। একমাত্রা সেভিং গ্রেস, লেখাটি অগাস্ট মাসের।
বাংলা ছবি আর কিছু না হোক চরিত্রাভিনেতাদের নিয়ে জগতসভায় গিয়ে শ্রেষ্ঠ আসনের জন্যে কম্পিটিশনে নাবতে পারে। চরিত্রাভিনেতারাই ছবির বুনিয়াদ, যার ওপর মূল অভিনেতারা নিজেদের অভিনয়ের ইমারত তৈরি করেন। সে ইমারত হর্ম্য হবে না প্রাসাদ হবে না কুটীর হবে তা স্থির হত মূল অভিনেতার অভিনয়ের জোরে। কিন্তু সে ইমারত কতটা টেঁকসই হবে তা নির্ভর করে ইমারতের ভিতের জোরের ওপর - অর্থাৎ চরিত্রাভিনেতাদের অভিনয়ের জোরের ওপর। এইবার ভেবে দেখুন বাংলা সিনেমা চরিত্রাভিনেতা, ওরফে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে, কী সব অভিনেতাদের পেয়েছে। নাম করব? ছবি বিশ্বাস, ছায়া দেবী, উৎপল দত্ত, রবি ঘোষ থেকে শুরু করে আজকের খরাজ মুখোপাধ্যায়।
রবি ঘোষকে সত্যজিৎ-সহ নাট্যামোদি দর্শক দেখেছিলেন উৎপল দত্তর দলের নাটকে একটা ছোট চরিত্রে। সেই চরিত্র থেকে 'অভিযান' ছবিতে রবি ঘোষের উত্তরণ। উত্তরণ বলে উত্তরণ! উল্কাপ্রায়। তারপর তো ইতিহাস। সৌমিত্র যদি সত্যজিতের গাড়ির ইঞ্জিন হন, রবি ঘোষকে সত্যজিতের গাড়ির আত্মা বলতে পারি। ছবির নায়ক সবসময়ে পরিচালকের কথা বলতে পারে না। অভিযানের রবি ঘোষ, অরণ্যের দিনরাত্রির রবি ঘোষ বকলমে পরিচালকের কথা বলে গেছেন। অথচ কত আলাদা তাদের চরিত্রায়ণ। এর সঙ্গে ভাবুন মহাপুরুষের রবি ঘোষ। ভাবুন জন-আরণ্যর রবি ঘোষ। বাঘা হিসেবে রবি ঘোষকে তো ছেড়েই দিলাম।
রবি ঘোষ নিজে উৎপল দত্তর দল "পিপলস লিটিল থিয়েটার"-এ দীর্ঘদিন টিঁকে না থাকতে পারলেও চিরকাল উৎপল দত্তকে অভিনয়ের গুরু হিসেবে মেনে এসেছেন। অত্যন্ত ব্যতিক্রমী 'ঠগিনী' ছবিতে উৎপলের চ্যালার চরিত্রে রবি ঘোষের চরিত্রের আন্ডার-অ্যাক্টিংটি বাংলা ছবির ইতিহাসে অনুকরণযোগ্য হয়ে থাকার কথা। ঠিক যেমন থাকার কথা জন-আরণ্য ছবিতে নটবর মিত্রর চরিত্রের অভিনয়।
অথচ রবি ঘোষের পরিচয় বাংলা ছবিতে কমেডিয়ান হিসেবে। এ যে কত বড় অপমানজনক তকমা, সে যে কোন অভিনেতা-মাত্রই বুঝবেন। এই বাক্যটা একটু বুঝিয়ে বলা দরকার। কমেডিয়ান-মাত্রই চরিত্রাভিনেতা। কিন্তু চরিত্রভিনেতা শুধু কমেডিয়ান নন। কমেডি চরিত্রাভিনয়ের একটা সাবসেট মাত্র। সুতরাং একজন অভিনেতাকে কমেডিয়ান তকমা দেওয়া মানে তাঁর অভিনয়ের বাকি অনেকগুলো দিককে চাপা দিয়ে দেওয়া হল। বাংলা ছবির সৌভাগ্য যে অসম্ভব প্রতিভাবান সব চরিত্রাভিনেতা বাংলা ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় অভিনয় করতে বাধ্য হয়েছিলেন - তুলসী চক্রবর্তী, ভানু বন্দোপাধ্যায়, জহর রায় থেকে রবি ঘোষ, অনুপকুমার। অনুপকুমারের অন্যকে মেরে নিজের প্রতি দৃষ্টি-আকর্ষণের বদভ্যেস থাকলেও, এ ব্যাপারে রবি ঘোষের পরিমিতিবোধের দিকে নজর দিতেই হয়। রবি ঘোষ যদি উৎপল দত্তর হাতে তৈরি হল, অনুপকুমার তৈরি হয়েছিলে বড়বাবু শিশির ভাদুড়ির হাতে। অনুপকুমারের পিতৃদেব ধীরেন্দ্রনাথ দাসও নেহাত হেলাফেলার শিল্পী ছিলেন না।
রবি ঘোষের এই পরিমিতিবোধই অন্য শিল্পীদের থেকে তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছিল। অভিজানের রামা নরসিঙের সাইডকিক। আবার মহাপুরুষে রবি ঘোষের চরিত্রটিও চারুপ্রকাশ ঘোষের মহাপুরুষের সাইডকিক। অথচ কত ভিন্ন তাদের চরিত্রায়ণ! মহাপুরুষে রবি ঘোষের বরাদ্দ ডায়লগই বা কটি! শুধুমাত্রা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আর মুখের মাসল দিয়ে অভিনয় করে গেলেন সারাটা ছবি। কখনই ছাড়িয়ে যেতে যেতে চাননি মূল চরিত্রকে।
একই রকম ভাবে ভাবুন 'বসন্ত বিলাপ' ছবিতে বাঙাল ও সিরিয়াস অধ্যাপক প্রেমিকের চরিত্রটি। কত আলাদা অথচ কত প্রাণবন্ত। আদ্যন্ত কমার্শিয়াল ছবি, যেমন ঘটকালি বা সুবর্ণ-গোলক ছবিতে রবি ঘোষের চরিত্রগুলো সবই একইরকম। অতি ধুরন্ধর অভিনেতার হাতেও এগুলো একই ছাঁচে পড়ে যাবার ভয় থাকে। অথচ এই চরিত্রই যখন রবি ঘোষের হাতে পড়ছে, এগুলি থেকে ভিন্ন সৌরভ বের করছেন এই অসামান্য অভিনেতা। চরিত্রাভিনেতার এই হল হলমার্ক।
লং লিভ রবি ঘোষ।
বাংলা ছবি আর কিছু না হোক চরিত্রাভিনেতাদের নিয়ে জগতসভায় গিয়ে শ্রেষ্ঠ আসনের জন্যে কম্পিটিশনে নাবতে পারে। চরিত্রাভিনেতারাই ছবির বুনিয়াদ, যার ওপর মূল অভিনেতারা নিজেদের অভিনয়ের ইমারত তৈরি করেন। সে ইমারত হর্ম্য হবে না প্রাসাদ হবে না কুটীর হবে তা স্থির হত মূল অভিনেতার অভিনয়ের জোরে। কিন্তু সে ইমারত কতটা টেঁকসই হবে তা নির্ভর করে ইমারতের ভিতের জোরের ওপর - অর্থাৎ চরিত্রাভিনেতাদের অভিনয়ের জোরের ওপর। এইবার ভেবে দেখুন বাংলা সিনেমা চরিত্রাভিনেতা, ওরফে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে, কী সব অভিনেতাদের পেয়েছে। নাম করব? ছবি বিশ্বাস, ছায়া দেবী, উৎপল দত্ত, রবি ঘোষ থেকে শুরু করে আজকের খরাজ মুখোপাধ্যায়।
রবি ঘোষকে সত্যজিৎ-সহ নাট্যামোদি দর্শক দেখেছিলেন উৎপল দত্তর দলের নাটকে একটা ছোট চরিত্রে। সেই চরিত্র থেকে 'অভিযান' ছবিতে রবি ঘোষের উত্তরণ। উত্তরণ বলে উত্তরণ! উল্কাপ্রায়। তারপর তো ইতিহাস। সৌমিত্র যদি সত্যজিতের গাড়ির ইঞ্জিন হন, রবি ঘোষকে সত্যজিতের গাড়ির আত্মা বলতে পারি। ছবির নায়ক সবসময়ে পরিচালকের কথা বলতে পারে না। অভিযানের রবি ঘোষ, অরণ্যের দিনরাত্রির রবি ঘোষ বকলমে পরিচালকের কথা বলে গেছেন। অথচ কত আলাদা তাদের চরিত্রায়ণ। এর সঙ্গে ভাবুন মহাপুরুষের রবি ঘোষ। ভাবুন জন-আরণ্যর রবি ঘোষ। বাঘা হিসেবে রবি ঘোষকে তো ছেড়েই দিলাম।
রবি ঘোষ নিজে উৎপল দত্তর দল "পিপলস লিটিল থিয়েটার"-এ দীর্ঘদিন টিঁকে না থাকতে পারলেও চিরকাল উৎপল দত্তকে অভিনয়ের গুরু হিসেবে মেনে এসেছেন। অত্যন্ত ব্যতিক্রমী 'ঠগিনী' ছবিতে উৎপলের চ্যালার চরিত্রে রবি ঘোষের চরিত্রের আন্ডার-অ্যাক্টিংটি বাংলা ছবির ইতিহাসে অনুকরণযোগ্য হয়ে থাকার কথা। ঠিক যেমন থাকার কথা জন-আরণ্য ছবিতে নটবর মিত্রর চরিত্রের অভিনয়।
অথচ রবি ঘোষের পরিচয় বাংলা ছবিতে কমেডিয়ান হিসেবে। এ যে কত বড় অপমানজনক তকমা, সে যে কোন অভিনেতা-মাত্রই বুঝবেন। এই বাক্যটা একটু বুঝিয়ে বলা দরকার। কমেডিয়ান-মাত্রই চরিত্রাভিনেতা। কিন্তু চরিত্রভিনেতা শুধু কমেডিয়ান নন। কমেডি চরিত্রাভিনয়ের একটা সাবসেট মাত্র। সুতরাং একজন অভিনেতাকে কমেডিয়ান তকমা দেওয়া মানে তাঁর অভিনয়ের বাকি অনেকগুলো দিককে চাপা দিয়ে দেওয়া হল। বাংলা ছবির সৌভাগ্য যে অসম্ভব প্রতিভাবান সব চরিত্রাভিনেতা বাংলা ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় অভিনয় করতে বাধ্য হয়েছিলেন - তুলসী চক্রবর্তী, ভানু বন্দোপাধ্যায়, জহর রায় থেকে রবি ঘোষ, অনুপকুমার। অনুপকুমারের অন্যকে মেরে নিজের প্রতি দৃষ্টি-আকর্ষণের বদভ্যেস থাকলেও, এ ব্যাপারে রবি ঘোষের পরিমিতিবোধের দিকে নজর দিতেই হয়। রবি ঘোষ যদি উৎপল দত্তর হাতে তৈরি হল, অনুপকুমার তৈরি হয়েছিলে বড়বাবু শিশির ভাদুড়ির হাতে। অনুপকুমারের পিতৃদেব ধীরেন্দ্রনাথ দাসও নেহাত হেলাফেলার শিল্পী ছিলেন না।
রবি ঘোষের এই পরিমিতিবোধই অন্য শিল্পীদের থেকে তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছিল। অভিজানের রামা নরসিঙের সাইডকিক। আবার মহাপুরুষে রবি ঘোষের চরিত্রটিও চারুপ্রকাশ ঘোষের মহাপুরুষের সাইডকিক। অথচ কত ভিন্ন তাদের চরিত্রায়ণ! মহাপুরুষে রবি ঘোষের বরাদ্দ ডায়লগই বা কটি! শুধুমাত্রা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আর মুখের মাসল দিয়ে অভিনয় করে গেলেন সারাটা ছবি। কখনই ছাড়িয়ে যেতে যেতে চাননি মূল চরিত্রকে।
একই রকম ভাবে ভাবুন 'বসন্ত বিলাপ' ছবিতে বাঙাল ও সিরিয়াস অধ্যাপক প্রেমিকের চরিত্রটি। কত আলাদা অথচ কত প্রাণবন্ত। আদ্যন্ত কমার্শিয়াল ছবি, যেমন ঘটকালি বা সুবর্ণ-গোলক ছবিতে রবি ঘোষের চরিত্রগুলো সবই একইরকম। অতি ধুরন্ধর অভিনেতার হাতেও এগুলো একই ছাঁচে পড়ে যাবার ভয় থাকে। অথচ এই চরিত্রই যখন রবি ঘোষের হাতে পড়ছে, এগুলি থেকে ভিন্ন সৌরভ বের করছেন এই অসামান্য অভিনেতা। চরিত্রাভিনেতার এই হল হলমার্ক।
লং লিভ রবি ঘোষ।
455
বার পঠিত (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে)
শেয়ার করুন |
আপনার মতামত দেবার জন্য নিচের যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করুন