![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
রামায়ণ, ইন্টারনেট ও টেনিদা (পর্ব ২)
Abhijit Majumder
ঘুগনীটা শেষ করে শালপাতাটা আমার দিকে এগিয়ে টেনিদা বললে, "বলতো, রামায়ণ কাকে নিয়ে লেখা?"
আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলাম শালপাতায় কোণায় এককুচি মাংস লেগে আছে। টেনিদা পাতাটা এগোতেই তাড়াতাড়ি করে কোণে লেগে থাকা মাংসের কুচিটা মুখে চালান করে দিয়ে বললুম, "কেন, রামচন্দ্রকে নিয়ে।"
টেনিদা একটা পিলে চমকানো হাসি হেসে বললে, "ফুংসুক ওয়াংড়ুর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমিও তাই ভাবতাম।"
ফুংসুক ওয়াংড়ুর নাম শুনে দেখলাম সবজান্তা ক্যাবলাও চোখ পিটপিট করে ঘুরে বসল।
-মতলব, বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ফুংসুক ওয়াংড়ু? যার নামে তিনশো বাষট্টিখানা পেটেন্ট আছে?
ক্যাবলার প্রশ্নে টেনিদা চোখদুটো আধা বুজে মাথা নাড়লে। তারপর বললে, "এই যে গল্পটা তোদের এখন বলব সেটা আমাকে বলেছে তোদের ওই ফুংসুক ওয়াংড়ু। আমি অবশ্য ওকে ফুং বলেই ডাকি। আমরা বুজুম ফ্রেন্ড কি না। এর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা সেই যখন আমি টিবেট গেলাম তখন। ফুং তখন অনেকদিন ধরে একটা জুতো বানানোর চেষ্টা করছে। যেটা পায়ে পড়ে লাফালে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে চলে যাওয়া যায়। একটা জুতো ও বানিয়েছিল বটে, কিন্তু সেটা পড়ে লাফালে হিসেবের থেকে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি আগেই ওটা থেমে যাচ্ছিল। আর বুঝতেই পারছিস, পাহাড়ে ওই হিসেবের গোলমাল হওয়া মানে সোওজা খাদে। বেচারা খুব মনের কষ্টে ছিল। আমি ভাল করে দেখে বুঝলুম যে স্প্রীংটা ও লাগিয়েছে, সেটা দু মিলিমিটার ছোট। আমি টেনে একটু লম্বা করে দিতেই, জুতোটা একদম পারফেক্ট হয়ে গেল। ফুংসুক তো খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে টড়িয়ে ধরে বললে, মিস্টার টেনি, ওয়াংশু কুশ থুংপা থুংপা। মানে তিব্বতি ভাষায় থ্যাংকু ভেরি ভেরি মাচ। তারপর বললে,
তুমি আজ আমার এক অনেক বড় প্রবলেম সলভ করে দিলে। এই জুতোর আধা পেটেন্ট তোমার। কিন্তু জানিসই তো, আমি ফকির মানুষ, আমার কোনও লোভ নেই। তাই আমি ওকে না করে দিলুম। তখন ফুং বললে, ঠিকআছে, মিস্টার টেনি। কিন্তু আমরা তিব্বতিরা বিনা প্রতিদানে কিছু নেই না। তোমাকে এর পরিবর্তে আমি এমন একটা গুপ্ত তথ্য জানাবো, যা কেউ জানে না। এক তিব্বতি গুম্ফার সাধুর কাছে লুকিয়ে রাখা পাঁচ হাজার বছরের পুরনো পান্ডুলিপিতে আমি এটা পড়েছি। এই বলে, ও ওর সিন্দুক খুলে একটা তালপাতার পুঁথি বার করল। সেই পুঁথি পড়ে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। এই দ্যাখ সেকথা বলতেও আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।"
ক্যাবলা একটু নাক কুঁচকে বললে, "তুমি কবে তিব্বত ঘুমতে গেলে? আর তিব্বতী ভাষাই বা কবে শিখলে?" অনেক বছর পশ্চিমে কাটানোয় ক্যাবলার কথায় এখনো পশ্চিমা হিন্দির টান।
টেনিদা দাঁত খিঁচিয়ে বললে, "সে খবরে তোর কি দরকার রা? আমি চার বছরে চুয়াত্তর বার কোন দেশে কি কাজে যাই, সব কি তোকে বলে যাব? গল্প শুনতে হলে শোন, নয়তো বাদ দে। আমি চললুম।"
হাবুল হাঁ হাঁ করে উঠলে। "ছাড়ান দাও, ছাড়ান দাও। পোলাপান।"
-"হুঁ, পোলাপান। এদের ধরে জলপান করে ফেলতে হয়।"
আমি জিজ্ঞেস করলুম, "ফুংসুক কি বললে?"
-"শোন তবে। রামায়ণ বলতে আমরা কি বুঝি? রামের গল্প, তাই তো? কিন্তু গল্পটা আসলে কাকে ঘিরে বলত?
আমি একটু মাথ চুলকে বললুম, "হনুমান?"
-তোর মুন্ডু। গল্পটা হচ্ছে আসলে সীতাকে নিয়ে। সীতাহরণ হচ্ছে যাবতীয় ঘটনার মূলে। বল তো এই সীতা কে?
ক্যাবলা বললে, "সীতা মাইয়া জনক রাজার মেয়ে আর রামজীর বিবি।"
হেঁ, হেঁ করে একটা উচ্চাঙ্গের হাসি হেসে টেনিদা বলল, "সেটাই তো সবাই জানে। কিন্তু ফুংসুক যেটা বলল সেটাই আসল গুপ্তকথা।"
(চলবে)
আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলাম শালপাতায় কোণায় এককুচি মাংস লেগে আছে। টেনিদা পাতাটা এগোতেই তাড়াতাড়ি করে কোণে লেগে থাকা মাংসের কুচিটা মুখে চালান করে দিয়ে বললুম, "কেন, রামচন্দ্রকে নিয়ে।"
টেনিদা একটা পিলে চমকানো হাসি হেসে বললে, "ফুংসুক ওয়াংড়ুর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমিও তাই ভাবতাম।"
ফুংসুক ওয়াংড়ুর নাম শুনে দেখলাম সবজান্তা ক্যাবলাও চোখ পিটপিট করে ঘুরে বসল।
-মতলব, বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ফুংসুক ওয়াংড়ু? যার নামে তিনশো বাষট্টিখানা পেটেন্ট আছে?
ক্যাবলার প্রশ্নে টেনিদা চোখদুটো আধা বুজে মাথা নাড়লে। তারপর বললে, "এই যে গল্পটা তোদের এখন বলব সেটা আমাকে বলেছে তোদের ওই ফুংসুক ওয়াংড়ু। আমি অবশ্য ওকে ফুং বলেই ডাকি। আমরা বুজুম ফ্রেন্ড কি না। এর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা সেই যখন আমি টিবেট গেলাম তখন। ফুং তখন অনেকদিন ধরে একটা জুতো বানানোর চেষ্টা করছে। যেটা পায়ে পড়ে লাফালে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে চলে যাওয়া যায়। একটা জুতো ও বানিয়েছিল বটে, কিন্তু সেটা পড়ে লাফালে হিসেবের থেকে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি আগেই ওটা থেমে যাচ্ছিল। আর বুঝতেই পারছিস, পাহাড়ে ওই হিসেবের গোলমাল হওয়া মানে সোওজা খাদে। বেচারা খুব মনের কষ্টে ছিল। আমি ভাল করে দেখে বুঝলুম যে স্প্রীংটা ও লাগিয়েছে, সেটা দু মিলিমিটার ছোট। আমি টেনে একটু লম্বা করে দিতেই, জুতোটা একদম পারফেক্ট হয়ে গেল। ফুংসুক তো খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে টড়িয়ে ধরে বললে, মিস্টার টেনি, ওয়াংশু কুশ থুংপা থুংপা। মানে তিব্বতি ভাষায় থ্যাংকু ভেরি ভেরি মাচ। তারপর বললে,
তুমি আজ আমার এক অনেক বড় প্রবলেম সলভ করে দিলে। এই জুতোর আধা পেটেন্ট তোমার। কিন্তু জানিসই তো, আমি ফকির মানুষ, আমার কোনও লোভ নেই। তাই আমি ওকে না করে দিলুম। তখন ফুং বললে, ঠিকআছে, মিস্টার টেনি। কিন্তু আমরা তিব্বতিরা বিনা প্রতিদানে কিছু নেই না। তোমাকে এর পরিবর্তে আমি এমন একটা গুপ্ত তথ্য জানাবো, যা কেউ জানে না। এক তিব্বতি গুম্ফার সাধুর কাছে লুকিয়ে রাখা পাঁচ হাজার বছরের পুরনো পান্ডুলিপিতে আমি এটা পড়েছি। এই বলে, ও ওর সিন্দুক খুলে একটা তালপাতার পুঁথি বার করল। সেই পুঁথি পড়ে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। এই দ্যাখ সেকথা বলতেও আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।"
ক্যাবলা একটু নাক কুঁচকে বললে, "তুমি কবে তিব্বত ঘুমতে গেলে? আর তিব্বতী ভাষাই বা কবে শিখলে?" অনেক বছর পশ্চিমে কাটানোয় ক্যাবলার কথায় এখনো পশ্চিমা হিন্দির টান।
টেনিদা দাঁত খিঁচিয়ে বললে, "সে খবরে তোর কি দরকার রা? আমি চার বছরে চুয়াত্তর বার কোন দেশে কি কাজে যাই, সব কি তোকে বলে যাব? গল্প শুনতে হলে শোন, নয়তো বাদ দে। আমি চললুম।"
হাবুল হাঁ হাঁ করে উঠলে। "ছাড়ান দাও, ছাড়ান দাও। পোলাপান।"
-"হুঁ, পোলাপান। এদের ধরে জলপান করে ফেলতে হয়।"
আমি জিজ্ঞেস করলুম, "ফুংসুক কি বললে?"
-"শোন তবে। রামায়ণ বলতে আমরা কি বুঝি? রামের গল্প, তাই তো? কিন্তু গল্পটা আসলে কাকে ঘিরে বলত?
আমি একটু মাথ চুলকে বললুম, "হনুমান?"
-তোর মুন্ডু। গল্পটা হচ্ছে আসলে সীতাকে নিয়ে। সীতাহরণ হচ্ছে যাবতীয় ঘটনার মূলে। বল তো এই সীতা কে?
ক্যাবলা বললে, "সীতা মাইয়া জনক রাজার মেয়ে আর রামজীর বিবি।"
হেঁ, হেঁ করে একটা উচ্চাঙ্গের হাসি হেসে টেনিদা বলল, "সেটাই তো সবাই জানে। কিন্তু ফুংসুক যেটা বলল সেটাই আসল গুপ্তকথা।"
(চলবে)
283
বার পঠিত (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে)
শেয়ার করুন |
আপনার মতামত দেবার জন্য নিচের যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করুন