![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
Debasis Bhattacharya
সম্প্রতি আয়ার্ল্যান্ডে আইনসিদ্ধ হল গর্ভপাত । যদিও এ সিদ্ধান্তকে এখনও অপেক্ষা করতে হবে রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের জন্য, তবু সকলেই নিশ্চিত যে, সে কেবল সময়ের অপেক্ষা । এ সিদ্ধান্ত সমর্থিত হয়েছে ৬৬.৪ শতাংশ ভোটে । গত ২৫ মে (২০১৮) এ ব্যাপারে আইরিশ সংসদের (Oireachtas) উভয় কক্ষে প্রস্তাবিত হয়েছে সে দেশের সংবিধানের ছত্রিশতম সংশোধনী, যাতে ওই সংবিধানের ১৯৮৩ সালের অষ্টম সংশোধনকে বাতিল করার কথা রয়েছে । ওই সংশোধনীতে গর্ভস্থ সন্তানের জীবনের মূল্য তার মায়ের জীবনের মূল্যের সমান বলে ঘোষণা করা হয়েছিল । সে সংশোধনীর ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল গর্ভপাত-বিরোধী আইন “Protection of Life During Pregnancy Act 2013” । এই আইনের বাইশ নম্বর ধারায় গর্ভপাতকে অপরাধ বলে ঘোষণা করে তার শাস্তি হিসেবে চোদ্দ বছরের কারাবাসের বিধান দেওয়া হয়েছে । বলা বাহুল্য, এ আইনটিও এ প্রস্তাবে বাতিল হয়ে যাবে, আসবে গর্ভপাতের উপযোগী নতুন আইন । বিগত দুই দশক ধরে এই বিষয়টি নিয়ে আয়ার্ল্যান্ডে ঘটনা কম ঘটেনি, হইচইও কম হয়নি । যথাসময়ে গর্ভপাতে অনুমতি না দেবার ফলে বহু ক্ষেত্রেই সেখানে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু ঘটেছে, যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত ছিল ২০১২ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা চিকিৎসক সবিতা হলাপ্পনবর-এর মর্মান্তিক মৃত্যু । এ সব ঘটনা নিয়ে হইচই তো হয়েছেই, মামলাও হয়েছে । এমন ঘটনাও আছে যেখানে “ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইট্স্ কমিটি”-র কাছে এই মর্মে অভিযোগ জমা পড়েছে যে আয়ার্ল্যান্ডের গর্ভপাত-বিরোধী আইনটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বিরোধী, এবং সে সংস্থা আইরিশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ মেনে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তকে মোটা ক্ষতিপূরণ দেবার আদেশ দিয়েছে । এই ধরনের নানা ঘটনার অভিঘাতে ১৯৯২ সালে আইরিশ সংবিধানে আনা হয় তের ও চোদ্দতম সংশোধনী, যাতে বলা হয়, গর্ভবতী মহিলাকে বিদেশে যাওয়া থেকে আটকানো যাবেনা, এবং বিদেশে কোথায় গর্ভপাত সুসম্পন্ন করবার ব্যবস্থা আছে সে ব্যাপারে খোঁজখবর করাটাও আটকানো যাবে না । এই সুবিধে কাজে লাগিয়ে বহু আইরিশ মহিলা বিদেশে (বিশেষত ব্রিটেনে) গিয়ে গর্ভপাত করিয়ে আসতেন । এখন থেকে আর আইরিশ মহিলাদেরকে সে কষ্ট পোহাতে হবে না, অবাঞ্ছিত গর্ভ থেকে রেহাই পাবার জন্য তাঁদেরকে আর বিদেশযাত্রা করতে হবে না ।
নারীর নিজের শরীর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার যে শেষ পর্যন্ত তার নিজেরই,এ কথা দেরিতেও হলেও স্বীকৃত হল সে দেশে । অর্থনীতিতে উন্নত একটি ইউরোপীয় দেশ হিসেবে এ বিলম্ব কিঞ্চিৎ বিস্ময়ের,তবু কে না জানে,সব ভাল যার শেষ ভাল । সারা পৃথিবীর সমস্ত আধুনিকমনস্ক মানুষই যে এ সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন তাতে সন্দেহ নেই ।
কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরেই আয়ার্ল্যান্ডবাসীর মনোজগতে যে সাম্প্রতিক নাটকীয় পরিবর্তন এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিত হিসেবে বিরাজ করছে,সে খবর কি আমরা সকলে রাখি ? আয়ার্ল্যান্ড একটি ক্যাথলিক দেশ, এবং গর্ভপাত সম্পর্কে তীব্র আপত্তি এ ধর্মের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য (এ বিষয়ে মাদার টেরিজার অবস্থান কলকাতাবাসী হিসেবে আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে) । তাহলে, আয়ার্ল্যান্ডবাসীর ধর্মবিশ্বাস অটুট থেকেই কি এ পরিবর্তন সম্ভব হল,নাকি সেখানেই ঘটেছে বড়সড় পরিবর্তন ? সে কথা জানতে গেলে তাকাতে হবে বিগত দিনে সংঘটিত হওয়া পৃথিবীব্যাপী ধর্মবিশ্বাস-সমীক্ষাগুলোর ফলাফলের দিকে ।
বিশ শতকের শেষ দিক থেকেই পশ্চিমী দেশগুলোতে ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপক সমীক্ষা ও চর্চা হচ্ছে,একুশ শতকে তা বিস্তৃত হয়েছে সারা পৃথিবী জুড়ে । সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সে সব সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে গবেষণাও চলছে পুরোদমে । তাতে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি,সাম্য,স্বাস্থ্য,শিক্ষা,আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা --- ধর্মবিশ্বাসের তীব্রতার সাথে এই সবকিছুরই সম্পর্ক মোটের ওপর বৈরিতার । যে সব দেশে এইসবের দশা যত ভাল,সেখানে ধর্মবিশ্বাসের প্রকোপ ততই কম (কিছু ব্যতিক্রম আছে যদিও) । আর উল্টোদিকে,যেখানে ধর্মবিশ্বাসের রমরমা বেশি,সেখানেই দারিদ্র্য,অসাম্য,অস্বাস্থ্য,অশিক্ষা,অপরাধপ্রবণতা। ফলে, স্বভাবতই, ইউরোপের দেশগুলো, জাপান, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এসব দেশে ধর্মবিশ্বাসের প্রকোপ অনেক কম । স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো, মানে সুইডেন-ফিনল্যান্ড-ডেনমার্ক এইসব দেশগুলো, যেখানে মানব-উন্নয়ন সূচকের মান সবচেয়ে বেশি, সেখানে ধর্মবিশ্বাসের প্রকোপও সব চাইতে কম ।
দুই সমাজতত্ত্ববিদ পিপ্পা নরিস এবং রাইনাস ইংগ্ল্হার্ট প্রায় দেড় দশক আগেই তাঁদের “Sacred and secular: Religion and politics worldwide” বইতে এই বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন । এ নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে আরেক মার্কিন সমাজতত্ত্ববিদ ফিল জুকারম্যান-এরও । পার্থিব জীবনের গ্লানিই ডেকে আনে অপার্থিবের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ, এই হল তাঁদের সোজাসাপটা বক্তব্য । বলা বাহুল্য, এই মোদ্দা সমাজবৈজ্ঞানিক সত্যটির কিছু ব্যতিক্রমও আছে । যেমন, কেউ কেউ বলেন চিনের কথা, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নতি ও আধুনিকীকরণ অনেকদূর এগোলেও তা পশ্চিম ইউরোপ বা জাপান বা আমেরিকার সমকক্ষ হতে পারেনি, অথচ ধর্মহীনতা ও নাস্তিকতায় সে দেশ সবার ওপরে । এ কথার উত্তর হয়ত লুকিয়ে আছে ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হবার সামাজিক প্রক্রিয়া ও প্রকৌশলগুলোর মধ্যে । একটু ভাবলেই বোঝা যায়, আমরা ধর্মবিশ্বাসগুলো পাই মূলত পারিবারিক সূত্রে, এবং পরিবার যদি ধর্মবিশ্বাসী না হয় তাহলে ধর্মবিশ্বাস পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হবার ওখানেই দফারফা । তাই, যে সমাজে ধর্ম পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় সমর্থন পায় না, সেখানে ধর্মের প্রভাব অতি দ্রুত কমতে থাকে । এ প্রসঙ্গে অনেকে অভিযোগ করেন, সমাজতান্ত্রিক বলে কথিত দেশগুলোতে ধর্মকে ভয় দেখিয়ে জোর করে দমিয়ে রাখা হয় (বা হত) । এ অভিযোগের জবাব দেবার দায় এই ছোট্ট লেখাটির ওপর নিশ্চয়ই কেউ চাপাবেন না, তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষাগুলো থেকে পাওয়া কিছু ফলাফল এ ব্যাপারে খুব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয় । সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে সমাজতান্ত্রিক সরকার অপসারিত হওয়ার পরে সেখানে ধর্মের প্রকোপ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু ধর্মবিশ্বাস মোটেই বন্যার মত ধেয়ে এসে দেশের মানুষকে মুহূর্তে ছেয়ে ফেলেনি । এখনও সে সব দেশে ধর্মমুক্ত মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি, এবং শতাংশের হিসেবে তা পশ্চিম ইউরোপের উন্নত দেশগুলো থেকে মোটেই এমন কিছু পিছিয়ে নেই ।
কিছু কূট প্রশ্ন আছে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলো এবং খোদ আমেরিকাকে নিয়েও, যেগুলো খুবই ধনী দেশ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপকতা অনেক বেশি । অতি সম্প্রতি, গত এক-দেড় দশকের মধ্যেই এ নিয়ে গবেষণা করেছেন আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ববিদ ফ্রেডেরিক সোল্ট ও তাঁর সহকর্মীরা । বহুসংখ্যক দেশ থেকে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে এবং তা আধুনিকতম পরিসংখ্যায়নিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন, এ ধাঁধার উত্তর লুকিয়ে আছে ওই সমস্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অসাম্যের মধ্যে । গড় মাথাপিছু আয় বেশি হলেও ধর্মবিশ্বাস খানিক জায়গা পেতে পারে, যদি অসাম্য বেশি হয় । অসাম্য বৃদ্ধি হলেই ধর্মবিশ্বাসেরও বাড়বাড়ন্ত হয়, এ সত্য তাঁরা প্রতিষ্ঠিত করেছেন । সেই কারণেই, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর থেকে মাথাপিছু আয়ে এগিয়ে থেকেও আমেরিকাতে ধর্মবিশ্বাস অনেক জোরালো, যেহেতু সেখানে অর্থনৈতিক অসাম্য অনেক বেশি ।
তবু, এইসব জটিলতা সত্ত্বেও, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে যে ধর্মবিশ্বাসের মোটের ওপর বৈরিতারই সম্পর্ক, এই মোদ্দা সত্যিটা নিয়ে আজ আর সমাজবিজ্ঞানীদের বেশির ভাগের মধ্যে কোনও সংশয় নেই ।
অথচ, দীর্ঘদিন যাবত আয়ার্ল্যান্ড ছিল এই মোদ্দা ছকের বাইরে, উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোর তুলনায় সেখানে ধর্মবিশ্বাসের প্রকোপ ছিল খুবই বেশি (অবশ্যই ভারত বা পাকিস্তানের তুলনায় বেশি নয়) । কাজেই, অর্থনৈতিক উন্নতি ও আধুনিকতার চাপেই সেখানে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তন হবার কথা ছিলই, এবং এ ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা । যথারীতি, সাম্প্রতিক নাটকীয় পরিবর্তনটি হয়েছে ঠিক এই জায়গাতেই । ‘উইন-গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন’ ২০১২ সালে ধর্মবিশ্বাস বিষয়ক যে সর্বশেষ সমীক্ষা প্রকাশ করে তাতে আয়ার্ল্যান্ডবাসীর ধর্মবিশ্বাসে নাটকীয় পরিবর্তনের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে । সমীক্ষাজাত তথ্য বিশ্লেষণ করে সেখানে দেখান হয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনে আয়ার্ল্যান্ড রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে । ওই সময়কালের মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের ২৩ শতাংশ হ্রাস নিয়ে ভিয়েতনাম আছে শীর্ষস্থানে, ২২ শতাংশ হ্রাস নিয়ে আয়ার্ল্যান্ড তার ঠিক পরেই । ঠিক পেছনে আছে সুইৎজারল্যান্ড ও ফ্রান্স, উভয়েরই ধর্মহ্রাস ২১ শতাংশ । অষ্টম স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ১৩ শতাংশ । ওই সময়কালের মধ্যে সারা পৃথিবীতেই কমেছে ধর্মবিশ্বাস, তার মোদ্দা পরিমাণ ৯ শতাংশ (ভারতে ৬ শতাংশ --- ৮৭ থেকে ৮১) । যাঁরা মুসলমানদের গোঁড়ামি নিয়ে অত্যধিক দুশ্চিন্তিত তাঁদেরকে জানান যেতে পারে, ভারতে যেখানে ধর্মবিশ্বাসী ৮১ শতাংশ, সৌদি আরবে তা ৭৫ শতাংশ !
কী বোঝা গেল এ সব তথ্য থেকে ?
যা বোঝা গেল তা অতীব সহজ এবং সরল । সেটা হচ্ছে এই যে, পুরুত আর মোল্লাদের টিকি আর দাড়ি যদি ইতিহাসের চাকার ফাঁকে আটকে যায়, তো তাতে শুধু টিকি আর দাড়িই ছিঁড়বে, ইতিহাসের চাকা মোটেই থামবে না ।
ওপরে সর্বশেষে যে সমীক্ষাটির কথা বলেছি তার লিঙ্ক নিচে দিলাম । গোটা রিপোর্ট-টি যদি কেউ পড়তে চান, তো তিনি সেটা এখানে পাবেন ---
https://sidmennt.is/wp-content/uploads/Gallup-International-um-tr%C3%B
A-og-tr%C3%BAleysi-2012.pdf
যদি ২৫ পাতার মূল নথিটি পড়তে চান, অথচ কোনও কারণে ওপরের লিঙ্ক থেকে তা না পান, তাহলে আমাকে জানাবেন, নথিটি আপনার ইনবক্সে দিয়ে দেব ।
নারীর নিজের শরীর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার যে শেষ পর্যন্ত তার নিজেরই,এ কথা দেরিতেও হলেও স্বীকৃত হল সে দেশে । অর্থনীতিতে উন্নত একটি ইউরোপীয় দেশ হিসেবে এ বিলম্ব কিঞ্চিৎ বিস্ময়ের,তবু কে না জানে,সব ভাল যার শেষ ভাল । সারা পৃথিবীর সমস্ত আধুনিকমনস্ক মানুষই যে এ সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন তাতে সন্দেহ নেই ।
কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরেই আয়ার্ল্যান্ডবাসীর মনোজগতে যে সাম্প্রতিক নাটকীয় পরিবর্তন এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিত হিসেবে বিরাজ করছে,সে খবর কি আমরা সকলে রাখি ? আয়ার্ল্যান্ড একটি ক্যাথলিক দেশ, এবং গর্ভপাত সম্পর্কে তীব্র আপত্তি এ ধর্মের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য (এ বিষয়ে মাদার টেরিজার অবস্থান কলকাতাবাসী হিসেবে আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে) । তাহলে, আয়ার্ল্যান্ডবাসীর ধর্মবিশ্বাস অটুট থেকেই কি এ পরিবর্তন সম্ভব হল,নাকি সেখানেই ঘটেছে বড়সড় পরিবর্তন ? সে কথা জানতে গেলে তাকাতে হবে বিগত দিনে সংঘটিত হওয়া পৃথিবীব্যাপী ধর্মবিশ্বাস-সমীক্ষাগুলোর ফলাফলের দিকে ।
বিশ শতকের শেষ দিক থেকেই পশ্চিমী দেশগুলোতে ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপক সমীক্ষা ও চর্চা হচ্ছে,একুশ শতকে তা বিস্তৃত হয়েছে সারা পৃথিবী জুড়ে । সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সে সব সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে গবেষণাও চলছে পুরোদমে । তাতে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি,সাম্য,স্বাস্থ্য,শিক্ষা,আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা --- ধর্মবিশ্বাসের তীব্রতার সাথে এই সবকিছুরই সম্পর্ক মোটের ওপর বৈরিতার । যে সব দেশে এইসবের দশা যত ভাল,সেখানে ধর্মবিশ্বাসের প্রকোপ ততই কম (কিছু ব্যতিক্রম আছে যদিও) । আর উল্টোদিকে,যেখানে ধর্মবিশ্বাসের রমরমা বেশি,সেখানেই দারিদ্র্য,অসাম্য,অস্বাস্থ্য,অশিক্ষা,অপরাধপ্রবণতা। ফলে, স্বভাবতই, ইউরোপের দেশগুলো, জাপান, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এসব দেশে ধর্মবিশ্বাসের প্রকোপ অনেক কম । স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো, মানে সুইডেন-ফিনল্যান্ড-ডেনমার্ক এইসব দেশগুলো, যেখানে মানব-উন্নয়ন সূচকের মান সবচেয়ে বেশি, সেখানে ধর্মবিশ্বাসের প্রকোপও সব চাইতে কম ।
দুই সমাজতত্ত্ববিদ পিপ্পা নরিস এবং রাইনাস ইংগ্ল্হার্ট প্রায় দেড় দশক আগেই তাঁদের “Sacred and secular: Religion and politics worldwide” বইতে এই বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন । এ নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে আরেক মার্কিন সমাজতত্ত্ববিদ ফিল জুকারম্যান-এরও । পার্থিব জীবনের গ্লানিই ডেকে আনে অপার্থিবের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ, এই হল তাঁদের সোজাসাপটা বক্তব্য । বলা বাহুল্য, এই মোদ্দা সমাজবৈজ্ঞানিক সত্যটির কিছু ব্যতিক্রমও আছে । যেমন, কেউ কেউ বলেন চিনের কথা, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নতি ও আধুনিকীকরণ অনেকদূর এগোলেও তা পশ্চিম ইউরোপ বা জাপান বা আমেরিকার সমকক্ষ হতে পারেনি, অথচ ধর্মহীনতা ও নাস্তিকতায় সে দেশ সবার ওপরে । এ কথার উত্তর হয়ত লুকিয়ে আছে ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হবার সামাজিক প্রক্রিয়া ও প্রকৌশলগুলোর মধ্যে । একটু ভাবলেই বোঝা যায়, আমরা ধর্মবিশ্বাসগুলো পাই মূলত পারিবারিক সূত্রে, এবং পরিবার যদি ধর্মবিশ্বাসী না হয় তাহলে ধর্মবিশ্বাস পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হবার ওখানেই দফারফা । তাই, যে সমাজে ধর্ম পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় সমর্থন পায় না, সেখানে ধর্মের প্রভাব অতি দ্রুত কমতে থাকে । এ প্রসঙ্গে অনেকে অভিযোগ করেন, সমাজতান্ত্রিক বলে কথিত দেশগুলোতে ধর্মকে ভয় দেখিয়ে জোর করে দমিয়ে রাখা হয় (বা হত) । এ অভিযোগের জবাব দেবার দায় এই ছোট্ট লেখাটির ওপর নিশ্চয়ই কেউ চাপাবেন না, তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষাগুলো থেকে পাওয়া কিছু ফলাফল এ ব্যাপারে খুব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয় । সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে সমাজতান্ত্রিক সরকার অপসারিত হওয়ার পরে সেখানে ধর্মের প্রকোপ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু ধর্মবিশ্বাস মোটেই বন্যার মত ধেয়ে এসে দেশের মানুষকে মুহূর্তে ছেয়ে ফেলেনি । এখনও সে সব দেশে ধর্মমুক্ত মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি, এবং শতাংশের হিসেবে তা পশ্চিম ইউরোপের উন্নত দেশগুলো থেকে মোটেই এমন কিছু পিছিয়ে নেই ।
কিছু কূট প্রশ্ন আছে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলো এবং খোদ আমেরিকাকে নিয়েও, যেগুলো খুবই ধনী দেশ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপকতা অনেক বেশি । অতি সম্প্রতি, গত এক-দেড় দশকের মধ্যেই এ নিয়ে গবেষণা করেছেন আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ববিদ ফ্রেডেরিক সোল্ট ও তাঁর সহকর্মীরা । বহুসংখ্যক দেশ থেকে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে এবং তা আধুনিকতম পরিসংখ্যায়নিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন, এ ধাঁধার উত্তর লুকিয়ে আছে ওই সমস্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অসাম্যের মধ্যে । গড় মাথাপিছু আয় বেশি হলেও ধর্মবিশ্বাস খানিক জায়গা পেতে পারে, যদি অসাম্য বেশি হয় । অসাম্য বৃদ্ধি হলেই ধর্মবিশ্বাসেরও বাড়বাড়ন্ত হয়, এ সত্য তাঁরা প্রতিষ্ঠিত করেছেন । সেই কারণেই, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর থেকে মাথাপিছু আয়ে এগিয়ে থেকেও আমেরিকাতে ধর্মবিশ্বাস অনেক জোরালো, যেহেতু সেখানে অর্থনৈতিক অসাম্য অনেক বেশি ।
তবু, এইসব জটিলতা সত্ত্বেও, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে যে ধর্মবিশ্বাসের মোটের ওপর বৈরিতারই সম্পর্ক, এই মোদ্দা সত্যিটা নিয়ে আজ আর সমাজবিজ্ঞানীদের বেশির ভাগের মধ্যে কোনও সংশয় নেই ।
অথচ, দীর্ঘদিন যাবত আয়ার্ল্যান্ড ছিল এই মোদ্দা ছকের বাইরে, উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোর তুলনায় সেখানে ধর্মবিশ্বাসের প্রকোপ ছিল খুবই বেশি (অবশ্যই ভারত বা পাকিস্তানের তুলনায় বেশি নয়) । কাজেই, অর্থনৈতিক উন্নতি ও আধুনিকতার চাপেই সেখানে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তন হবার কথা ছিলই, এবং এ ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা । যথারীতি, সাম্প্রতিক নাটকীয় পরিবর্তনটি হয়েছে ঠিক এই জায়গাতেই । ‘উইন-গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন’ ২০১২ সালে ধর্মবিশ্বাস বিষয়ক যে সর্বশেষ সমীক্ষা প্রকাশ করে তাতে আয়ার্ল্যান্ডবাসীর ধর্মবিশ্বাসে নাটকীয় পরিবর্তনের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে । সমীক্ষাজাত তথ্য বিশ্লেষণ করে সেখানে দেখান হয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনে আয়ার্ল্যান্ড রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে । ওই সময়কালের মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের ২৩ শতাংশ হ্রাস নিয়ে ভিয়েতনাম আছে শীর্ষস্থানে, ২২ শতাংশ হ্রাস নিয়ে আয়ার্ল্যান্ড তার ঠিক পরেই । ঠিক পেছনে আছে সুইৎজারল্যান্ড ও ফ্রান্স, উভয়েরই ধর্মহ্রাস ২১ শতাংশ । অষ্টম স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ১৩ শতাংশ । ওই সময়কালের মধ্যে সারা পৃথিবীতেই কমেছে ধর্মবিশ্বাস, তার মোদ্দা পরিমাণ ৯ শতাংশ (ভারতে ৬ শতাংশ --- ৮৭ থেকে ৮১) । যাঁরা মুসলমানদের গোঁড়ামি নিয়ে অত্যধিক দুশ্চিন্তিত তাঁদেরকে জানান যেতে পারে, ভারতে যেখানে ধর্মবিশ্বাসী ৮১ শতাংশ, সৌদি আরবে তা ৭৫ শতাংশ !
কী বোঝা গেল এ সব তথ্য থেকে ?
যা বোঝা গেল তা অতীব সহজ এবং সরল । সেটা হচ্ছে এই যে, পুরুত আর মোল্লাদের টিকি আর দাড়ি যদি ইতিহাসের চাকার ফাঁকে আটকে যায়, তো তাতে শুধু টিকি আর দাড়িই ছিঁড়বে, ইতিহাসের চাকা মোটেই থামবে না ।
ওপরে সর্বশেষে যে সমীক্ষাটির কথা বলেছি তার লিঙ্ক নিচে দিলাম । গোটা রিপোর্ট-টি যদি কেউ পড়তে চান, তো তিনি সেটা এখানে পাবেন ---
https://sidmennt.is/wp-content/uploads/Gallup-International-um-tr%C3%B
A-og-tr%C3%BAleysi-2012.pdf
যদি ২৫ পাতার মূল নথিটি পড়তে চান, অথচ কোনও কারণে ওপরের লিঙ্ক থেকে তা না পান, তাহলে আমাকে জানাবেন, নথিটি আপনার ইনবক্সে দিয়ে দেব ।
344
বার পঠিত (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে)
শেয়ার করুন |
মন্তব্যের পাতাগুলিঃ [1] [2] এই পাতায় আছে 7 -- 26

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
,এবরশন কি কি কারণে দরকার?
কারেন্ট ইউ কে আইন বলছে ২৪ সপ্তাহের আগে এটা করা আইন সিদ্ধ?
একজন নারী কি কি কারণে এবরশন করতে সম্মত হন?মেডিকেল গ্রাউন্ড না থাকলে, কোন এবরশনই কি করা উচিত?
২১-২৪সপ্তাহের শিশু কে মাদার এর উম্ব এর বাইরে বাঁচানো সম্ভব।
এইসব শিশুরা কি তাহলে বাঁচার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে?
কারেন্ট ইউ কে আইন বলছে ২৪ সপ্তাহের আগে এটা করা আইন সিদ্ধ?
একজন নারী কি কি কারণে এবরশন করতে সম্মত হন?মেডিকেল গ্রাউন্ড না থাকলে, কোন এবরশনই কি করা উচিত?
২১-২৪সপ্তাহের শিশু কে মাদার এর উম্ব এর বাইরে বাঁচানো সম্ভব।
এইসব শিশুরা কি তাহলে বাঁচার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে?

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
অসাধারণ লিখেছেন।
//একটা ভ্রূণ ঠিক কোন অবস্থায় পূর্ন মানুষ হিসেবে গণ্য করা হবে- গর্ভ ধরনের ঠিক কত পরে? ক হপ্তা বা মাস লাগে একটি ভ্রূণের মানুষ হতে? নাকি বার্থ ক্যানাল দিয়ে বের হয়ে না এলে ওটি ঠিক মানুষ হয় না, বেড়িয়ে এলেই মানুষ!//
পারসনহুড কবে থেকে শুরু হয় এটা নিয়ে অনেক ডিবেট আছে, বায়োলজি এজন্য বেশ কিছু অপশন অফার করে...
১। ফারটিলাইজেশন (যখন গ্যামেটগুলো প্রথম জাইগোটে পরিণত হয়, সেটাই ০ তম দিন ধরতে পারেন)
২। ইমপ্লান্টেশন (ফার্টিলাইজেশনের ১ সপ্তাহ পরে হয় যখন ফারটিলাইজড এগ ইউটেরাসের গায়ে লেগে যায়)
৩। সেগমেন্টেশন (যার পর আর টুইনিং বা যমজ হওয়া সম্ভব নয়, ফারটিলাইজেশনের ১৪ দিন পর হয়)
৪। হার্টবিট শুরু হবার পর (ফারটিলাইজেশনের ২২ দিন পর)
৫। নিউরোম্যাচিউরেশন (যখন ফিটাসের সেন্ট্রাল নারভাস সিস্টেম বায়োলজিকালি ম্যাচিওরড হয়, ফারটিলাইজেশনের ২৮ দিন পর নিউরাল টিউব তৈরি হয়।)
৬। ব্রেইন বার্থ এর পর - "ব্রেইন ডেথ" নামে একটি শব্দ আছে, যখন ব্রেইন কাজ করা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি ব্রেইন বার্থ বলেও একটা শব্দ আছে, তবে কোন সময়কে ব্রেইন বার্থ এর সময় হিসেবে গণ্য করা হবে এটা নিয়ে ডিবেট আছে, দুটি প্রস্তাব হচ্ছে:
ক. লোয়ার ব্রেইনে (ব্রেইন স্টেম) প্রথম ব্রেইন ওয়েভ শুরুর পর (ফারটিলাইজেশনের ৬-৮ সপ্তাহের পর হয়,
একে হোল ব্রেইন ডেথ এর সাথে তুলনা করা যায়, যখন লোয়ার ব্রেইনেও, মানে পুরো ব্রেইনেই ওয়েভ দেয়া
বন্ধ হয়ে যায়)
খ. হায়ার ব্রেইনে (সেরেব্রাল কর্টেক্স) ব্রেইন ওয়েভ দেখা গেলে (এটা শুরু হয় ফারটিলাইজেশনের ২২ থেকে
২৪ সপ্তাহ পরে - হায়ার ব্রেইন ডেথ এর সাথে তুলনা করা যায়, যখন কেবল হায়ার ব্রেইনের ওয়েভই বন্ধ হয়)
৭। যখন ফিটাল মুভমেন্ট (কুইকেনিং) শুরু হয় (ফার্টিলাইজেশনের ১৬ থেকে ২৫ সপ্তাহের মধ্যে)
৮। যখন ফিটাস ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে ( ফার্টিলাইজেশনের ২৭ সপ্তাহ পরে শুরু হয়)
৯। যখন ফিটাস বুঝতে সক্ষম (ফার্টিলাইজেশনের ৩৩ থেকে ৪১ সপ্তাহ পর ফিটাস অন্যান্য শব্দের সাথে তার মায়ের আওয়াজের পার্থক্য করতে সক্ষম)
১০। ফিটাল ভায়াবিলিটির পর (ফিটাসের ইউটেরাসের বাইরে বেঁচে থাকতে পারবে এমন অবস্থা - ৩৪ সপ্তাহ পরে ইউটেরাসের বাইরে বাচ্চার বাঁচার সম্ভাবনা ৯৮% এর চেয়ে বেশি, ৩০ সপ্তাহ পর ৯৫% এর বেশি, ২৭ সপ্তাহ পর ৯০% এর বেশি, ২৫ সপ্তাহের পর সম্ভাবনা ৫০% থেকে ৮০%, ২১ সপ্তাহের আগে কোন সম্ভাবনাই থাকে না।)
১১। জন্মের সময়
১২। জন্মেরও পরে
এটা কেবল গেল বায়োলজিকাল আলোচনা, এটা নিয়ে ইথিকাল, রেলিজিয়াস, লিগাল, পলিটিকাল অনেক রকম ডিবেটই আছে। ভবিষ্যতে কখনও লেখার চেষ্টা করব।
- Sumit Roy
//একটা ভ্রূণ ঠিক কোন অবস্থায় পূর্ন মানুষ হিসেবে গণ্য করা হবে- গর্ভ ধরনের ঠিক কত পরে? ক হপ্তা বা মাস লাগে একটি ভ্রূণের মানুষ হতে? নাকি বার্থ ক্যানাল দিয়ে বের হয়ে না এলে ওটি ঠিক মানুষ হয় না, বেড়িয়ে এলেই মানুষ!//
পারসনহুড কবে থেকে শুরু হয় এটা নিয়ে অনেক ডিবেট আছে, বায়োলজি এজন্য বেশ কিছু অপশন অফার করে...
১। ফারটিলাইজেশন (যখন গ্যামেটগুলো প্রথম জাইগোটে পরিণত হয়, সেটাই ০ তম দিন ধরতে পারেন)
২। ইমপ্লান্টেশন (ফার্টিলাইজেশনের ১ সপ্তাহ পরে হয় যখন ফারটিলাইজড এগ ইউটেরাসের গায়ে লেগে যায়)
৩। সেগমেন্টেশন (যার পর আর টুইনিং বা যমজ হওয়া সম্ভব নয়, ফারটিলাইজেশনের ১৪ দিন পর হয়)
৪। হার্টবিট শুরু হবার পর (ফারটিলাইজেশনের ২২ দিন পর)
৫। নিউরোম্যাচিউরেশন (যখন ফিটাসের সেন্ট্রাল নারভাস সিস্টেম বায়োলজিকালি ম্যাচিওরড হয়, ফারটিলাইজেশনের ২৮ দিন পর নিউরাল টিউব তৈরি হয়।)
৬। ব্রেইন বার্থ এর পর - "ব্রেইন ডেথ" নামে একটি শব্দ আছে, যখন ব্রেইন কাজ করা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি ব্রেইন বার্থ বলেও একটা শব্দ আছে, তবে কোন সময়কে ব্রেইন বার্থ এর সময় হিসেবে গণ্য করা হবে এটা নিয়ে ডিবেট আছে, দুটি প্রস্তাব হচ্ছে:
ক. লোয়ার ব্রেইনে (ব্রেইন স্টেম) প্রথম ব্রেইন ওয়েভ শুরুর পর (ফারটিলাইজেশনের ৬-৮ সপ্তাহের পর হয়,
একে হোল ব্রেইন ডেথ এর সাথে তুলনা করা যায়, যখন লোয়ার ব্রেইনেও, মানে পুরো ব্রেইনেই ওয়েভ দেয়া
বন্ধ হয়ে যায়)
খ. হায়ার ব্রেইনে (সেরেব্রাল কর্টেক্স) ব্রেইন ওয়েভ দেখা গেলে (এটা শুরু হয় ফারটিলাইজেশনের ২২ থেকে
২৪ সপ্তাহ পরে - হায়ার ব্রেইন ডেথ এর সাথে তুলনা করা যায়, যখন কেবল হায়ার ব্রেইনের ওয়েভই বন্ধ হয়)
৭। যখন ফিটাল মুভমেন্ট (কুইকেনিং) শুরু হয় (ফার্টিলাইজেশনের ১৬ থেকে ২৫ সপ্তাহের মধ্যে)
৮। যখন ফিটাস ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে ( ফার্টিলাইজেশনের ২৭ সপ্তাহ পরে শুরু হয়)
৯। যখন ফিটাস বুঝতে সক্ষম (ফার্টিলাইজেশনের ৩৩ থেকে ৪১ সপ্তাহ পর ফিটাস অন্যান্য শব্দের সাথে তার মায়ের আওয়াজের পার্থক্য করতে সক্ষম)
১০। ফিটাল ভায়াবিলিটির পর (ফিটাসের ইউটেরাসের বাইরে বেঁচে থাকতে পারবে এমন অবস্থা - ৩৪ সপ্তাহ পরে ইউটেরাসের বাইরে বাচ্চার বাঁচার সম্ভাবনা ৯৮% এর চেয়ে বেশি, ৩০ সপ্তাহ পর ৯৫% এর বেশি, ২৭ সপ্তাহ পর ৯০% এর বেশি, ২৫ সপ্তাহের পর সম্ভাবনা ৫০% থেকে ৮০%, ২১ সপ্তাহের আগে কোন সম্ভাবনাই থাকে না।)
১১। জন্মের সময়
১২। জন্মেরও পরে
এটা কেবল গেল বায়োলজিকাল আলোচনা, এটা নিয়ে ইথিকাল, রেলিজিয়াস, লিগাল, পলিটিকাল অনেক রকম ডিবেটই আছে। ভবিষ্যতে কখনও লেখার চেষ্টা করব।
- Sumit Roy

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
এই জন্যই তো প্রশ্ন করলাম, ২১-২৪সপ্তাহ শিশু দের এবরশন কে কিভাবে দেখেন?২৪সপ্তাহে শিশু, মাদার এর উম্বের বাইরে বাঁচার চান্স ২৫শতাংশ। অর্থাৎ বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে প্রতি চার টি শিশুর একটি বেঁচে থাকতে পারে।
ভবিষ্যতে পার্সেন্টেজ আরো বাড়বে।
এমন কি কয়েক সপ্তাহের ভ্রূণ কেও হয় তো বাঁচানো সম্ভব হবে, বিজ্ঞান উন্নত হলে।
ভবিষ্যতে পার্সেন্টেজ আরো বাড়বে।
এমন কি কয়েক সপ্তাহের ভ্রূণ কেও হয় তো বাঁচানো সম্ভব হবে, বিজ্ঞান উন্নত হলে।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমতার সাথে ধর্মত্বের (রেলিজিয়াসিটি) সম্পর্কটা গভীর, হয়তো লিনিয়ারও। এন্থলি গিল আর এরিক লান্ডসগার্ড মিলে একটা ক্রসন্যাশনাল এনালাইসিস করেছিল, ইকুইটি আর রেলিজিয়াসিটির সম্পর্ক বের করবেন বলে। করে দেখলেন, ফিলিপাইন ও আয়ারল্যান্ডের মত হতচ্ছাড়া কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে ইকুইটির সাথে প্রায় খাপে খাপ লিনিয়ারিটি মিলে যায়... ওদের গ্রাফটাই দেখুন না, চার্চে কত লোক যায় তার সাথে দেশে ওয়েলফেয়ার স্পেন্ডিং কেমন হচ্ছে তার সম্পর্কের গ্রাফ... এই যে শেয়ার করছি...

https://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/6/66/Church_Attendance_and_W
elfare_Spending_Graph.png
এখানে ফিলিপাইনটা একটু ব্যতিক্রম, তবে আয়ারল্যান্ড আরও বেশি ব্যতিক্রম। তবে এটা প্রেডিক্ট করা যায়, ওখানে যে মাত্রায় ওয়েলফেয়ার দেয়া হচ্ছে, অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে হয়তো ঠিকই রেলিজিয়াসিটি কমার একটা চাপ রয়েছে। খুব শীঘ্রই হয়তো কোন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বড় কোন পরিবর্তন আসবে... অষ্টম সংশোধনীর বাতিল হয়তো তেমনই কিছু... এই যে গিল আর লান্ডসগার্ডের স্টাডি...
http://faculty.washington.edu/tgill/Gill%20Lundsgaarde%20Welfare%20Rel
igion.pdf
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টা ভাববার মত। আমি তো তাদের দেশে এসম্পর্কিত পোলগুলোর রেজাল্ট মাঝে মাঝেই চেক করি... একবার দেখলাম দেশটির মাত্র ৩৩% মানুষ বিবর্তনে বিশ্বাস করেন, বাকিরা সৃষ্টিতত্ত্ব মানেন, অর্ধেক মানুষই বিভিন্ন মেডিকেল কনস্পিরেসি থিওরিতে বিশ্বাস করেন, আর ২৫% মানুষ তো জানেনই না যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে! গবেষক ড্যান কাহান সারভে করে বলছেন সেখানকার মানুষের উপর সাইন্টিফিক লিটারেসির তুলনায় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবটাই অনেক বেশি। আর এর কারণ হিসেবে অসমতাই দায়ী বলে মনে হয়।
একটা মজার বিষয় হচ্ছে এই ধর্মত্বের সাথে পরমতসহিষ্ণুতা, জাতিবিদ্বেষ এসবের সম্পর্কও আছে বলে মনে হয়, আর রাষ্ট্রে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও এই ব্যাপারটা সহজে ঘোচে না। মজার বিষয় হল, পোস্টের এই ইউরোপ বনাম যুক্তরাষ্ট্রের পার্থক্য এখানেও প্রযোজ্য হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা আদালত কর্তৃক বলবৎ করা হয়ে থাকে। তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি যে ধরণের আচরণ করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। এদিকে দেখুন, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান, এঙ্গলিকান চার্চের প্রধান এবং ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান নেতারা হাউজ অফ লর্ডসের সদস্য। এসব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষতার অধিকার অনেক শক্তভাবে প্রয়োগ করা হয়। এর কারণ যুক্তরাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি আইন নয়, এর ভিত্তি মানুষের সংস্কৃতি, যা অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করতে শেখায়। যে দেশে পরমতসহিষ্ণুতা আছে, সে দেশেই গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব হয়, আর গণতান্ত্রিক মানুষ হয় ধর্মনিরপেক্ষ। আর এখানে যে পরমতসহিষ্ণুতার সংস্কৃতির কথা বললাম এই যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের উদাহরণ ছাড়াও আমার মনে হয় রেলিজিয়াসিটির সাথে এর একটা সম্পর্ক আছে।
কেন মনে করি বলি। একটি গবেষণায় Charles N. Noussair ও তার দল রেলিজিয়াসিটির সাথে রিস্ক এভারশন বা ঝুঁকি এড়িয়ে যাবার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছিলেন। শুধু তারাই নয়, বিনয় কুমার অধিকারী ও অনুপ আগারওয়ালের একটা স্টাডিও তাই বলছে। এগুলোর লিংক নিচে দিলাম:
https://link.springer.com/article/10.1007%2Fs11166-013-9174-8
https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0929119916300013?vi
a%3Dihub
এদিকে বিশাল স্যাম্পল নিয়ে করা এক স্টাডির রিপোর্ট ঘেটে দেখলাম কনজারভেটিভ বা রক্ষণশীলদের ক্ষেত্রে মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্নতা, কুসংস্কার-অসহনশীলতা, শৃঙ্খলার চাহিদা, কোন কিছু হারানো বা হুমকির ভয়, স্থিতিহীনতা বেশি থাকে, অন্যদিকে কম থাকে অভিজ্ঞতার উপর ওপেননেস, অনিশ্চয়তার প্রতি সহনশীলতা, আত্ম মর্যাদা ইত্যাদি। স্টাডির লিংকটা দিচ্ছি:
http://faculty.virginia.edu/haidtlab/jost.glaser.political-conservatis
m-as-motivated-social-cog.pdf
তো এখানে আমার ফোকাসটা হচ্ছে মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্নতায় আর কোন কিছু হারানো আর হুমকির ভয়তে। যাদের এই দুটোর পরিমাণ বেশি থাকবে তাদের রিস্ক এভারশন বা ঝুঁকি এড়াতে চাওয়াটা বেশি হবেই। আর রক্ষণশীলরা যে রেলিজিয়নকে ডিফেন্ড করতে চান, আর এদের পরমতসহিষ্ণুতা কম তাও আমরা দেখতে পাই। গবেষণাটাই কিছু বলছে এদের কুসংস্কার ও অসহনশীলতা বেশি থাকে। কাজেই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে আমার মনে হয় বিষয়টা রেলিজিয়াসিটির সাথে পরমতসহিষ্ণুতার বেলাতেও খাটে। আর আমাদের উপমহাদেশে, অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শৃলঙ্কায় এখন পরমতসহিষ্ণুতার যেরকম অভাব দেখা যাচ্ছে, যত দাঙ্গা লাগছে, সংখ্যালঘু নিপীরণ চলছে তাতে এই আশঙ্কা আরও দৃঢ় হয়। অর্থনৈতিক সাম্য অর্থাৎ ওয়েলফেয়ারের ব্যবস্থাই হয়তো এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে। এটা হলে মানুষের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা বেড়ে যাবে, যা ধর্মনিরপেক্ষ আইন দিয়ে কখনই করা সম্ভব হয়নি। মানুষের ব্যক্তিগত রেলিজিয়াসিটি নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই, কে চার্চে যাবে, কে যাবে না তা ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওই রেলিজিয়াসিটির সাথে পরমতসহিষ্ণুতার নেগেটিভ কোরিলেশনের জন্যই। এটার জন্য নিজের ধর্মীয় চেতনার প্রয়োগ হয় রাজনৈতিক ভাবে, যা মাইনোরিটির জন্য ক্ষতির কারণ হয়, পাকিস্তানের মত মোটামুটি এক ধর্মের দেশেও তার সেক্টে সেক্টে দ্বন্দ্ব লাগে ওই পরমতসহিষ্ণুতার অভাবের জন্যই। এটাই বেশি চিন্তার।

https://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/6/66/Church_Attendance_and_W
elfare_Spending_Graph.png
এখানে ফিলিপাইনটা একটু ব্যতিক্রম, তবে আয়ারল্যান্ড আরও বেশি ব্যতিক্রম। তবে এটা প্রেডিক্ট করা যায়, ওখানে যে মাত্রায় ওয়েলফেয়ার দেয়া হচ্ছে, অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে হয়তো ঠিকই রেলিজিয়াসিটি কমার একটা চাপ রয়েছে। খুব শীঘ্রই হয়তো কোন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বড় কোন পরিবর্তন আসবে... অষ্টম সংশোধনীর বাতিল হয়তো তেমনই কিছু... এই যে গিল আর লান্ডসগার্ডের স্টাডি...
http://faculty.washington.edu/tgill/Gill%20Lundsgaarde%20Welfare%20Rel
igion.pdf
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টা ভাববার মত। আমি তো তাদের দেশে এসম্পর্কিত পোলগুলোর রেজাল্ট মাঝে মাঝেই চেক করি... একবার দেখলাম দেশটির মাত্র ৩৩% মানুষ বিবর্তনে বিশ্বাস করেন, বাকিরা সৃষ্টিতত্ত্ব মানেন, অর্ধেক মানুষই বিভিন্ন মেডিকেল কনস্পিরেসি থিওরিতে বিশ্বাস করেন, আর ২৫% মানুষ তো জানেনই না যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে! গবেষক ড্যান কাহান সারভে করে বলছেন সেখানকার মানুষের উপর সাইন্টিফিক লিটারেসির তুলনায় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবটাই অনেক বেশি। আর এর কারণ হিসেবে অসমতাই দায়ী বলে মনে হয়।
একটা মজার বিষয় হচ্ছে এই ধর্মত্বের সাথে পরমতসহিষ্ণুতা, জাতিবিদ্বেষ এসবের সম্পর্কও আছে বলে মনে হয়, আর রাষ্ট্রে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও এই ব্যাপারটা সহজে ঘোচে না। মজার বিষয় হল, পোস্টের এই ইউরোপ বনাম যুক্তরাষ্ট্রের পার্থক্য এখানেও প্রযোজ্য হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা আদালত কর্তৃক বলবৎ করা হয়ে থাকে। তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি যে ধরণের আচরণ করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। এদিকে দেখুন, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান, এঙ্গলিকান চার্চের প্রধান এবং ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান নেতারা হাউজ অফ লর্ডসের সদস্য। এসব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষতার অধিকার অনেক শক্তভাবে প্রয়োগ করা হয়। এর কারণ যুক্তরাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি আইন নয়, এর ভিত্তি মানুষের সংস্কৃতি, যা অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করতে শেখায়। যে দেশে পরমতসহিষ্ণুতা আছে, সে দেশেই গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব হয়, আর গণতান্ত্রিক মানুষ হয় ধর্মনিরপেক্ষ। আর এখানে যে পরমতসহিষ্ণুতার সংস্কৃতির কথা বললাম এই যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের উদাহরণ ছাড়াও আমার মনে হয় রেলিজিয়াসিটির সাথে এর একটা সম্পর্ক আছে।
কেন মনে করি বলি। একটি গবেষণায় Charles N. Noussair ও তার দল রেলিজিয়াসিটির সাথে রিস্ক এভারশন বা ঝুঁকি এড়িয়ে যাবার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছিলেন। শুধু তারাই নয়, বিনয় কুমার অধিকারী ও অনুপ আগারওয়ালের একটা স্টাডিও তাই বলছে। এগুলোর লিংক নিচে দিলাম:
https://link.springer.com/article/10.1007%2Fs11166-013-9174-8
https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0929119916300013?vi
a%3Dihub
এদিকে বিশাল স্যাম্পল নিয়ে করা এক স্টাডির রিপোর্ট ঘেটে দেখলাম কনজারভেটিভ বা রক্ষণশীলদের ক্ষেত্রে মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্নতা, কুসংস্কার-অসহনশীলতা, শৃঙ্খলার চাহিদা, কোন কিছু হারানো বা হুমকির ভয়, স্থিতিহীনতা বেশি থাকে, অন্যদিকে কম থাকে অভিজ্ঞতার উপর ওপেননেস, অনিশ্চয়তার প্রতি সহনশীলতা, আত্ম মর্যাদা ইত্যাদি। স্টাডির লিংকটা দিচ্ছি:
http://faculty.virginia.edu/haidtlab/jost.glaser.political-conservatis
m-as-motivated-social-cog.pdf
তো এখানে আমার ফোকাসটা হচ্ছে মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্নতায় আর কোন কিছু হারানো আর হুমকির ভয়তে। যাদের এই দুটোর পরিমাণ বেশি থাকবে তাদের রিস্ক এভারশন বা ঝুঁকি এড়াতে চাওয়াটা বেশি হবেই। আর রক্ষণশীলরা যে রেলিজিয়নকে ডিফেন্ড করতে চান, আর এদের পরমতসহিষ্ণুতা কম তাও আমরা দেখতে পাই। গবেষণাটাই কিছু বলছে এদের কুসংস্কার ও অসহনশীলতা বেশি থাকে। কাজেই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে আমার মনে হয় বিষয়টা রেলিজিয়াসিটির সাথে পরমতসহিষ্ণুতার বেলাতেও খাটে। আর আমাদের উপমহাদেশে, অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শৃলঙ্কায় এখন পরমতসহিষ্ণুতার যেরকম অভাব দেখা যাচ্ছে, যত দাঙ্গা লাগছে, সংখ্যালঘু নিপীরণ চলছে তাতে এই আশঙ্কা আরও দৃঢ় হয়। অর্থনৈতিক সাম্য অর্থাৎ ওয়েলফেয়ারের ব্যবস্থাই হয়তো এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে। এটা হলে মানুষের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা বেড়ে যাবে, যা ধর্মনিরপেক্ষ আইন দিয়ে কখনই করা সম্ভব হয়নি। মানুষের ব্যক্তিগত রেলিজিয়াসিটি নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই, কে চার্চে যাবে, কে যাবে না তা ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওই রেলিজিয়াসিটির সাথে পরমতসহিষ্ণুতার নেগেটিভ কোরিলেশনের জন্যই। এটার জন্য নিজের ধর্মীয় চেতনার প্রয়োগ হয় রাজনৈতিক ভাবে, যা মাইনোরিটির জন্য ক্ষতির কারণ হয়, পাকিস্তানের মত মোটামুটি এক ধর্মের দেশেও তার সেক্টে সেক্টে দ্বন্দ্ব লাগে ওই পরমতসহিষ্ণুতার অভাবের জন্যই। এটাই বেশি চিন্তার।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
"এই জন্যই তো প্রশ্ন করলাম, ২১-২৪সপ্তাহ শিশু দের এবরশন কে কিভাবে দেখেন?"
আপনার প্রশ্নটা এইভাবে ফ্রেম করি- "ভ্রূণের বৃদ্ধির সাথে কি তার মনুষ্যসত্বা (personhood) কোনো ভাবে জড়িত?" উত্তর যদি হ্যা হয় তবে সুমিত বাবুর দেয়া টাইম লাইন থেকে উপযুক্ত কোনো সময় বেছে নেয়া যায়- যদিও কোনটি যথার্থ, সে নিয়ে বিস্তর তর্ক করা যায়। যদি উত্তর না হয় - তবে বেশ চমৎকার কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন। একটা ছোট্ট উদাহরণ নিচে দিলাম।
https://www.google.co.in/amp/amp.slate.com/articles/health_and_science
/human_nature/2012/03/after_birth_abortion_the_pro_choice_case_for_inf
anticide_.html
আপনার প্রশ্নটা এইভাবে ফ্রেম করি- "ভ্রূণের বৃদ্ধির সাথে কি তার মনুষ্যসত্বা (personhood) কোনো ভাবে জড়িত?" উত্তর যদি হ্যা হয় তবে সুমিত বাবুর দেয়া টাইম লাইন থেকে উপযুক্ত কোনো সময় বেছে নেয়া যায়- যদিও কোনটি যথার্থ, সে নিয়ে বিস্তর তর্ক করা যায়। যদি উত্তর না হয় - তবে বেশ চমৎকার কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন। একটা ছোট্ট উদাহরণ নিচে দিলাম।
https://www.google.co.in/amp/amp.slate.com/articles/health_and_science
/human_nature/2012/03/after_birth_abortion_the_pro_choice_case_for_inf
anticide_.html

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
আমার লেখাটির প্রেক্ষিতে যাঁরা নানা প্রশ্ন ও আলোচনা করছেন, তাঁদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই । প্রথম প্রশ্নকর্তাকে বলি, জীবনের ঠিক কোন বিন্দুতে এসে একটা ভ্রূণ ব্যক্তি মানুষে পরিণত হয় সে চর্চা খুবই চিত্তাকর্ষক বটে, তবে অন্তত দুটো কারণে সে আলোচনা এখানে আমার উদ্দিষ্ট ছিল না । প্রথমত, আমি গর্ভপাতের ভালমন্দ নিয়ে আলোচনা করতে চাইনি, এই প্রসঙ্গকে সামনে রেখে আসলে আয়ার্ল্যান্ড তথা সারা পৃথিবীতে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তন ও তার পেছনে নানা আর্থ-সামাজিক কারণের কথা বলতে চেয়েছিলাম । দ্বিতীয়ত, গর্ভপাতের উচিত-অনুচিতের বিষয়টিও নিছক ভ্রুণের ব্যক্তি-মর্যাদার প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত নয়, এখানে গর্ভবতী মহিলাটির স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা-সম্মান-চাওয়া-না-চাওয়াই বোধহয় সবচেয়ে বড় । একটা শিশু জন্মাবার উপক্রম করছে, তাকে সাহায্য করা হোক --- এটা বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে খুবই মানবিক এক অবস্থান । কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজও আমাদের সমাজ একটি সংগঠন হিসেবে নৈর্ব্যক্তিকভাবে একটি শিশুকে বাঁচিয়ে রেখে বড় করবার দায়িত্ব নেয় না, সে দায়িত্ব বাবা এবং মায়ের ঘাড়েই চাপায় । এ বাস্তবতা যতক্ষণ না পরিবর্তিত হচ্ছে, ততক্ষণ অজাত শিশুর বাঁচার অধিকার তার মায়ের থেকে বড় হতে পারে না ।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
'অবিশ্বাসি'-র প্রশ্নের উত্তরে বলি, ধর্মবিশ্বাস সংক্রান্ত এই ধরনের সমীক্ষাগুলোতে সাধারণত নমুনা-ব্যক্তিদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, তিনি তাঁর জীবনে ধর্মকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কিনা, ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কিনা, সমাজে চালু নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন কিনা, নিজেকে কোন ধর্মগোষ্ঠীর অন্তর্গত বলে মনে করেন, নিজেকে অজ্ঞাবাদী বা নাস্তিক বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন কিনা, এই সমস্ত । এই সমস্ত প্রশ্নে তিনি কী উত্তর দেন তার ওপর ভিত্তি করে সমীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হয় ।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
আমার মনে হয় , এই ভ্রুণ ও গর্ভপাত সংক্রান্ত তর্কে আমরা একটু প্রয়োজনের বেশিই এথিকস -মরাল -ধর্ম ইত্যাদি জুটিয়ে ফেলি ।তারপর পাতার পর পাতা একটা লিমিট টেনডস টু জিরো বাট নট ইকয়াল টু জিরো তর্ক চলতেই থাকে । কাজের কাজ হয়না।
এই সমস্যার বাস্তব সমাধান উঠে আসবে সারোগেট মাদার দের কাছ থেকে । সারোগেসি আরেকটু চালু হোক , তাহলেই । কারন ,সমস্যাকে সমাধান করতে হলে যে নৈর্বক্তিক দূরত্বের দরকার ওটা সারোগেসী ছাড়া আসবে না ।
একজন সারোগেট মাদার ও তাঁর ক্লায়েন্ট হচ্চে আদর্শ সম্পর্ক যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা কন্ট্রাক্ট তৈরী করতে পারি যে , ক্যারিয়ারের রাইটস কী হবে । ক্যারিয়ার কি চাইলেই এবর্ট করতে পারেন যদিনা তাঁর কোনো শারীরিক সমস্যা তৈরী হয় ? করলে কিন্তু ব্রিচ অফ কন্ট্রাক্ট । একজন ভাড়া করা ড্রাইভার যেমন আপনাকে চাইলেই দরজা খুলে মরুভূমিতে নাবিয়ে দিতে পারেন না ঠিক তেমন ই একজন সারোগেট কী পারেন ও কী পারেন না এই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হওয়া দরকার । তবেই একটা ঠিকঠাক আইন হবে যা সমাজের বাকি নন কমার্শিয়াল ভলান্টারি ক্যারিয়ার মানে যাকে মা বলে আর কী , তাদের ও কাজে লাগবে ।
সরাসরি , নন কমার্শিয়াল ভলান্টারি ক্যারিয়ার দের মধ্যে থেকে একটা স্ট্রং লিগাল স্ট্রাকচার উঠে আসা সম্ভব না । নারী পুরুষের নন কমার্শিয়াল সম্পর্ক এমনিতেই কোয়াসি এবিউসিভ গ্রে একটা রিজিওন । তাতে চাট্টি মিটিং মিছিল প্রবন্ধ হতে পারে । দিস্সায়সিভ কিছু হবেনা ।
এই সমস্যার বাস্তব সমাধান উঠে আসবে সারোগেট মাদার দের কাছ থেকে । সারোগেসি আরেকটু চালু হোক , তাহলেই । কারন ,সমস্যাকে সমাধান করতে হলে যে নৈর্বক্তিক দূরত্বের দরকার ওটা সারোগেসী ছাড়া আসবে না ।
একজন সারোগেট মাদার ও তাঁর ক্লায়েন্ট হচ্চে আদর্শ সম্পর্ক যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা কন্ট্রাক্ট তৈরী করতে পারি যে , ক্যারিয়ারের রাইটস কী হবে । ক্যারিয়ার কি চাইলেই এবর্ট করতে পারেন যদিনা তাঁর কোনো শারীরিক সমস্যা তৈরী হয় ? করলে কিন্তু ব্রিচ অফ কন্ট্রাক্ট । একজন ভাড়া করা ড্রাইভার যেমন আপনাকে চাইলেই দরজা খুলে মরুভূমিতে নাবিয়ে দিতে পারেন না ঠিক তেমন ই একজন সারোগেট কী পারেন ও কী পারেন না এই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হওয়া দরকার । তবেই একটা ঠিকঠাক আইন হবে যা সমাজের বাকি নন কমার্শিয়াল ভলান্টারি ক্যারিয়ার মানে যাকে মা বলে আর কী , তাদের ও কাজে লাগবে ।
সরাসরি , নন কমার্শিয়াল ভলান্টারি ক্যারিয়ার দের মধ্যে থেকে একটা স্ট্রং লিগাল স্ট্রাকচার উঠে আসা সম্ভব না । নারী পুরুষের নন কমার্শিয়াল সম্পর্ক এমনিতেই কোয়াসি এবিউসিভ গ্রে একটা রিজিওন । তাতে চাট্টি মিটিং মিছিল প্রবন্ধ হতে পারে । দিস্সায়সিভ কিছু হবেনা ।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
সুমিত রায়ের চমৎকার আলোচনায় সমৃদ্ধ হয়েছি, তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমতও । "অর্থনৈতিক সাম্য অর্থাৎ ওয়েলফেয়ারের ব্যবস্থাই হয়তো এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে", এ নিয়ে কথা হবে না । তবে আমি তার সঙ্গে যোগ করতে চাই, এর সঙ্গে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কুসংস্কার ঘৃণাচর্চা হিংস্রতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে যুক্তির লড়াইটাও সমানে চালিয়ে যেতে হবে, শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি আর সরকারি পদক্ষেপের অপর নির্ভর করে বসে থাকলে বিষয়টির মোকাবিলা করা যাবে না । আর একটা কথা আমার মনে হয়, একটু সঙ্কোচের সাথে বলি । সামাজিক ইতিহাসের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে খণ্ডিত অপমানিত প্রান্তিকায়িত মানুষ কোনও এক জবরদস্ত 'কম্যুনিটি' বা 'স্টেট'-এর সঙ্গে নিজেকে মানসিকভাবে একাত্ম করার মধ্য দিয়ে নিজের তুচ্ছতাকে কল্পনায় 'কমপেনসেট' করতে পারে কিনা, এবং সেই আশাতেই রক্ষণশীল ধর্মীয়-দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকে সমর্থন করে কিনা, সেটা বোধহয় ভেবে দেখার সময় এসেছে । সেটা বুঝতে পারলে এ ধরনের রাজনীতি ও সংস্কৃতির মোকাবিলা কিঞ্চিৎ সহজ হবে বলে আমার মনে হয় ।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
মূল লেখা এবং তাকে ঘিরে আলোচনা পড়লাম। আমিও মনে করি গর্ভপাতের পুর্ণ অধিকার গর্ভধারিনীর থাকা উচিত। সেখানে রাষ্ট্র, ধর্ম, রাজনীতি কখনই মাথা গলাতে পারে না। একমাত্র পারেন চিকিৎসক, কিন্তু তাঁর মাথা গলানো উচিত গর্ভধারিনীর প্রাণ সংশয় হতে পারে কি না তা ভেবে দেখার ব্যাপারে।
তৃতীয় বিশ্বে সারোগেসি বিশুদ্ধ প্রভু-ভৃত্যের চিরাচরিত ধারণার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। পুঁজিবাদ এবং তার অন্যতম শোষণের হাতিয়ার হিসাবে সারোগেসিকে গণ্য করা দরকার।
তৃতীয় বিশ্বে সারোগেসি বিশুদ্ধ প্রভু-ভৃত্যের চিরাচরিত ধারণার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। পুঁজিবাদ এবং তার অন্যতম শোষণের হাতিয়ার হিসাবে সারোগেসিকে গণ্য করা দরকার।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
পৃথিবীর যে কোনো দেশেই একজন সারোগেট মাদার মাঝরাস্তায় নাবিয়ে দেওয়ার মত করে এবর্ট করতে পারেন না । আবার যাঁরা তাঁকে নিযোগ করেছেন তাঁরাও চাইলেই এবরশন হবে এরকম নয় । সারগেসী কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজ চলছে । তাঁর ওপর কিছু বিনিযোগ হয়েছে যার দায়িত্ব থেকে যায় । তৃতীয় বিশ্ব আলাদা কিস্যু না ।
শোষণ একশবার আছে ,হাজারবার আছে , কিন্তু তারপরেও প্রডাকশন রিলেশন এর বাইরে বেড়িয়ে সমাধান হবে কিসের ভিত্তিতে ? নারী পুরুষের অপেশাদার সম্পর্ক নিয়ে পাতার পর পাতা আলোচনা সৌখিন মজদুরি একরকমের । কারিয়ারের রাইটস এবসলিউট এটা শুনতে বেশ ফুরফুরে লাগে কিন্তু যাই শ্রবণসুখকর তাই শ্রেয়ঃ নাও হতে পারে ।
শোষণ একশবার আছে ,হাজারবার আছে , কিন্তু তারপরেও প্রডাকশন রিলেশন এর বাইরে বেড়িয়ে সমাধান হবে কিসের ভিত্তিতে ? নারী পুরুষের অপেশাদার সম্পর্ক নিয়ে পাতার পর পাতা আলোচনা সৌখিন মজদুরি একরকমের । কারিয়ারের রাইটস এবসলিউট এটা শুনতে বেশ ফুরফুরে লাগে কিন্তু যাই শ্রবণসুখকর তাই শ্রেয়ঃ নাও হতে পারে ।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
এই 'সৌখিন মজদুরি' টা অনেকের কাছেই শৌখিন হিসেবে প্রতিভাত হয় আবার অনেকের কাছেই হয় না। কারণ শৌখিন মজদুরির কোনও একমাত্রিক সংজ্ঞা নেই। নারী পুরুষের 'পেশাদার' সম্পর্কে অবধারিতভাবেই পুরুষতন্ত্র এবং পুঁজি যুগ যুগ ধরে প্রাধান্য কায়েম করে রেখেছে। সেটা জেনেও যাঁরা ভাবের ঘরে চুরি করতে চান, তাঁরা সারোগেসির শোষণের ক্ষেত্রে প্রথম বিশ্ব-তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে কিস্যু ফারাক দেখতে পান না! এই দেখাটাও বেশ দৃষ্টিসুখকর কিন্তু যা কিছু দৃষ্টিসুখকর তার অধিকাংশই শ্রেয় হয় না। হয় না বলেই তাকে দৃষ্টিসুখকর হিসাবে 'নির্মাণ' করতে অতিরিক্ত শ্রমের প্রয়োজন হয়।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
//সামাজিক ইতিহাসের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে খণ্ডিত অপমানিত প্রান্তিকায়িত মানুষ কোনও এক জবরদস্ত 'কম্যুনিটি' বা 'স্টেট'-এর সঙ্গে নিজেকে মানসিকভাবে একাত্ম করার মধ্য দিয়ে নিজের তুচ্ছতাকে কল্পনায় 'কমপেনসেট' করতে পারে কিনা, এবং সেই আশাতেই রক্ষণশীল ধর্মীয়-দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকে সমর্থন করে কিনা, সেটা বোধহয় ভেবে দেখার সময় এসেছে//
আসলে ব্যাপারটা অপমানিত আর প্রান্তিকায়িত হবার সাথেসাথেই ঘটে, পরবর্তীতে ভালো পরিবেশে যাবার পর ঘটে না। গোড়ামির উদ্ভব হয় আসলে হুমকি ও অনিশ্চয়তার কারণে সাইকোলজির টেরর ম্যানেজমেন্ট থিওরি বা মটিভেটেড সোশ্যাল কগনিশন মডেল অনুযায়ী। এখানে এই হুমকি, ভয়, অনিশ্চয়তাগুলো মানুষের মধ্যে একরকম ডিফেন্সিভ মেকানিজম তৈরি করে, আর এর ফলে মানুষের আচরণটাই এমনভাবে বদলে যায় যাতে সে আরও ডিফেন্সিভ ও এনডিউরিং হয়ে ওঠে। এই মানসিক অবস্থাটাই হচ্ছে রক্ষণশীলতা বা গোড়ামি। এই বিশেষ মানসিক অবস্থার জন্যই, সামাজিক পরিবর্তনগুলো সহ্য হয় না, এর কারণেই নিজের দলের লোকেদের প্রতি বিশেষ আবেগ কাজ করে, অন্য দলগুলোর প্রতি একরকম বিদ্বেষ কাজ করে।
এখন ঠিক কী কী ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে এরকম হুমকি ও অনিশ্চয়তা কাজ করবে, আমি নিজে এর একটা তালিকা তৈরি করেছি। সেটা এখানে লিখছি-
১। বয়স বৃদ্ধিঃ বয়স বাড়লে জীবনে রোগ শোকের কারণে মৃত্যু ভয় বাড়ে, পরকাল নিকটবর্তী ভেবে পরকালের ভয় বাড়ে, কখন মরে যাব এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করে, তাই দেখা যায় এসময় মানুষ রক্ষণশীল হবার প্রবণতা দেখায়। দেখা যায়, ব্রেক্সিট এর পক্ষে যারা ভোট দিয়েছিল তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক ছিল।
২। দারিদ্র্য ও রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বৈষম্যঃ দারিদ্র্যের কারণে জীবনে নিরাপত্তা অনেক কমে যায়, তাতে অনিশ্চয়তা বাড়ে, তৃতীয় বিশ্বের দেশের মানুষের ক্ষেত্রে তাই গোড়ামি বেশি হয়। আবার রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে বা সমতা না থাকলে একটা বড় সংখ্যক মানুষ অনিশ্চয়তায় ভোগে, যথেষ্ট ওয়েলফেয়ার না থাকার কারণে। এই অবস্থায় রক্ষণশীলতা বৃদ্ধি পায়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের উদাহরণেই এটা স্পষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্র ধনি দেশ হলেও সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্য রক্ষণশীলতা বেশি।
৩। সংখ্যালঘুঃ সংখ্যালঘুদের মধ্যে সংখ্যাগুরুদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শোষণের জন্য অনিশ্চয়তা দেখা যায়, আর এই অনিশ্চয়তা বেশি হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে গোড়ামি দেখা যায়। ইতিহাসে ব্যাবিলন ও ইউরোপে ইহুদি এর একটি উদাহরণ। এছাড়া বর্তমান তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় সংখ্যালঘুর অবস্থা এরকমই বলা যায়।
৪। জঙ্গীবাদঃ জঙ্গীবাদ মানুষের মধ্যে হুমকি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ এর হামলার পর সেখানে অনেক লিবারাল এর মধ্যেই ভয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা কনজারভেটিভ হয়ে যায়। এছাড়া এখন ইউরোপে ফার রাইট পলিটিকাল পার্টির উত্থানের পেছনে এরকম টেরোরিজমের হাত থাকতে পারে। মজার ব্যাপার হল এটা টেরোরিস্ট গ্রুপগুলো জানে। আইএস তাদের সংবাদদাতা সংস্থা দাবিকে বলেছিল, তারা মুসলিমদের মধ্যে কোনরকম মিডল গ্রাউন্ড রাখবে না, হয় এদেরকে ইসলাম ছাড়তে হবে, নয় এক্সট্রিমিস্ট হতে হবে। এইসব টেরোরিস্ট এক্টিভিটির ফলে ফিয়ারমঙারিং প্রক্রিয়ায় পলিটিকাল রাইট গ্রুপগুলো ক্ষমতায় আসবে, তারা সংখ্যালঘু হিসেবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একশন নেবে, এতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হবার প্রভাবে আরও গোড়া হয়ে গিয়ে এক্সট্রিমিস্ট হবে, আর টেরোরিস্টদের উদ্দেশ্য পুরণ হবে। এবিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত লিখন।
৫। ফিয়ারমংগারিংঃ এটি একটি রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন কৌশল, যা একটি অন্যতম প্রোপাগান্ডা টেকনিকও বটে। এখানে সমাজের লোকদেরকে একটি বিশেষ ধর্ম, জাতির প্রতি ভয় দেখানো হয়, আর এর মাধ্যমে বলা হয়, তোমরা হুমকিতে আছো, আমাদেরকে ভোট দাও, আমরা রক্ষা করব। অর্থাৎ এখানে আর্টিফিশিয়ালি ভয় দেখানো হয়, বা ভয়ের বিষয়গুলো সামনে আনা হয়, আর এই ভয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে গোড়া বানিয়ে বিশেষ পলিটিকাল পার্টির উদ্দেশ্য পূরণ করা হয়। এর উদাহরণ ভারতেই দেখা যাবে। গত দশ বছরে লাভ জিহাদ, গোহত্যা, ধর্মান্তরকরণের ভয় দেখিয়ে কাও প্রোটেকশন, ঘর ওয়াপ্সি, বেটি বাঁচাও বহু লাও টাইপের আন্দোলনকে প্রমোট করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের উপর এর প্রভাব অনেক বেশি ছিল। এরা এর ফলে হুমকি বোধ করে, আর হিন্দুত্বের প্রভাবে গোড়া হয়ে যায়। আর তার ফল দেখা যায় নির্বাচনে।
৬। কোন একটি বিশেষ ধর্মের সকলেই যদি সমাজের নিম্ন শ্রেণীতে চলে যায়ঃ এটা হয়েছিল ঔপনিবেশিক শাসনে ইসলাম ধর্মের বেলায়। ব্রিটিশ শাসনে এলিট মুসলিমরাও নিম্ন শ্রেণীতে পতিত হয়েছিল। এর ফলে পুরো গোষ্ঠীর মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ে ও একরকম ইসলামি জাতীয়তাবাদ তৈরি হয়। মার্ক্স বলেছিলেন ক্লাস স্ট্রাগলের আগে ক্লাস কনশাসনেস তৈরি হতে হয় যার মাধ্যমে প্রোলেতারিয়েতরা তাদের উপর চাপানো আইডিওলজি, ইনভারটেড রিয়ালিটিকে ঝেড়ে ফেলে, ধর্ম তেমনই একটি ইনভার্টেড রিয়ালিটি। কিন্তু দেখা যায়, একটি ধর্মের সবাই যদি নিচু শ্রেণীর হয়, আর তার শোষক ভিন্ন ধর্মই হয়, যেমন ভারতবর্ষে হিন্দু ও ব্রিটিশ খ্রিস্টান, তাহলে ক্লাস কনশাসনেসের আগেই ক্লাস স্ট্রাগলের মত ব্যাপার ঘটে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ থেকে সেই বিশেষ চেতনার উদ্ভব হয়। সেসময় বাংলায় তিতুমিরের আন্দোলন, ফরায়েজি আন্দোলন দেখা গিয়েছিল। এছাড়া সারা বিশ্ব জুড়ে ওয়াহাবিজম, থানুসি, ওয়াহাবিয়া ইত্যাদি মতবাদের উদ্ভব হয়, যেগুলো ইসলামের ক্ষেত্রে রিগ্রেসিভ সংস্কারপন্থী আন্দোলন ছিল। এর প্রভাবেই তখন মুসলিমদের মধ্যে গোড়ামি প্রবেশ করে।
৭। থিওলজিঃ এপোফ্যাটিক থিওলজি বলতে বোঝায় যে থিওলজিতে "এটা করো না" "ওটা করা যাবে না" এরকম নির্দেশনাবলি এর পরিমাণ "এটা করো", "ওটা করতে হবে" এর চেয়ে বেশি মাত্রায় থাকে। আধুনিক সমাজে যদি কোন ধর্ম তাল মিলিয়ে না চলে তাহলে এই সমাজের অনেক কাজের উপর ধর্মতত্ত্বটিকে অধিক পরিমাণে নিষেধ আরোপ করতে দেখা যায়। আর এই নিষেধ অধিক পরিমাণে পরকালের প্রতি ভয় তৈরি করে, কারণ নিষেধাজ্ঞাই অনেক বেশি, যেগুলো করে ফেললে শাস্তির বিধান থাকে। এসব ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া যদি একটি ধর্মে সমবেত হবার বাধ্যবাধকতা থাকে, প্রতিদিন একাধিকবার নির্দিষ্ট সময় পর প্রার্থনার ডাক থাকে, যা সবার কাছে সকলে জানিয়েই পৌঁছে যায় তখন কনফারমেশনাল বায়াজ তৈরি হয়, আর তার ফলে ভয় আরও বৃদ্ধি পায়, এছাড়া এমন একটি ধর্মীয় পরিবেশ যেখানে ছোটবেলা থেকেই প্রায় সব বিষয়েই অপারেন্ট কন্ডিশনিং এর দ্বারা আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন ভয় বেড়ে যায়। বিশেষ রকমের থিওলজির প্রভাবেও তাই গোড়ামি বৃদ্ধি পেতে পারে।
এগুলো এখন অবধি আমার বের করা কারণগুলো যেগুলো ওই অনিশ্চয়তা ও হুমকির প্রতি প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্যাটার্নেই পড়ে। এখানে বিস্তারিত কিছু লিখলাম না, তথ্যসূত্রেরও উল্লেখ করলাম না। এগুলো নিয়ে বিস্তারিত লিখে পরে পোস্ট করব।
আসলে ব্যাপারটা অপমানিত আর প্রান্তিকায়িত হবার সাথেসাথেই ঘটে, পরবর্তীতে ভালো পরিবেশে যাবার পর ঘটে না। গোড়ামির উদ্ভব হয় আসলে হুমকি ও অনিশ্চয়তার কারণে সাইকোলজির টেরর ম্যানেজমেন্ট থিওরি বা মটিভেটেড সোশ্যাল কগনিশন মডেল অনুযায়ী। এখানে এই হুমকি, ভয়, অনিশ্চয়তাগুলো মানুষের মধ্যে একরকম ডিফেন্সিভ মেকানিজম তৈরি করে, আর এর ফলে মানুষের আচরণটাই এমনভাবে বদলে যায় যাতে সে আরও ডিফেন্সিভ ও এনডিউরিং হয়ে ওঠে। এই মানসিক অবস্থাটাই হচ্ছে রক্ষণশীলতা বা গোড়ামি। এই বিশেষ মানসিক অবস্থার জন্যই, সামাজিক পরিবর্তনগুলো সহ্য হয় না, এর কারণেই নিজের দলের লোকেদের প্রতি বিশেষ আবেগ কাজ করে, অন্য দলগুলোর প্রতি একরকম বিদ্বেষ কাজ করে।
এখন ঠিক কী কী ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে এরকম হুমকি ও অনিশ্চয়তা কাজ করবে, আমি নিজে এর একটা তালিকা তৈরি করেছি। সেটা এখানে লিখছি-
১। বয়স বৃদ্ধিঃ বয়স বাড়লে জীবনে রোগ শোকের কারণে মৃত্যু ভয় বাড়ে, পরকাল নিকটবর্তী ভেবে পরকালের ভয় বাড়ে, কখন মরে যাব এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করে, তাই দেখা যায় এসময় মানুষ রক্ষণশীল হবার প্রবণতা দেখায়। দেখা যায়, ব্রেক্সিট এর পক্ষে যারা ভোট দিয়েছিল তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক ছিল।
২। দারিদ্র্য ও রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বৈষম্যঃ দারিদ্র্যের কারণে জীবনে নিরাপত্তা অনেক কমে যায়, তাতে অনিশ্চয়তা বাড়ে, তৃতীয় বিশ্বের দেশের মানুষের ক্ষেত্রে তাই গোড়ামি বেশি হয়। আবার রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে বা সমতা না থাকলে একটা বড় সংখ্যক মানুষ অনিশ্চয়তায় ভোগে, যথেষ্ট ওয়েলফেয়ার না থাকার কারণে। এই অবস্থায় রক্ষণশীলতা বৃদ্ধি পায়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের উদাহরণেই এটা স্পষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্র ধনি দেশ হলেও সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্য রক্ষণশীলতা বেশি।
৩। সংখ্যালঘুঃ সংখ্যালঘুদের মধ্যে সংখ্যাগুরুদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শোষণের জন্য অনিশ্চয়তা দেখা যায়, আর এই অনিশ্চয়তা বেশি হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে গোড়ামি দেখা যায়। ইতিহাসে ব্যাবিলন ও ইউরোপে ইহুদি এর একটি উদাহরণ। এছাড়া বর্তমান তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় সংখ্যালঘুর অবস্থা এরকমই বলা যায়।
৪। জঙ্গীবাদঃ জঙ্গীবাদ মানুষের মধ্যে হুমকি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ এর হামলার পর সেখানে অনেক লিবারাল এর মধ্যেই ভয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা কনজারভেটিভ হয়ে যায়। এছাড়া এখন ইউরোপে ফার রাইট পলিটিকাল পার্টির উত্থানের পেছনে এরকম টেরোরিজমের হাত থাকতে পারে। মজার ব্যাপার হল এটা টেরোরিস্ট গ্রুপগুলো জানে। আইএস তাদের সংবাদদাতা সংস্থা দাবিকে বলেছিল, তারা মুসলিমদের মধ্যে কোনরকম মিডল গ্রাউন্ড রাখবে না, হয় এদেরকে ইসলাম ছাড়তে হবে, নয় এক্সট্রিমিস্ট হতে হবে। এইসব টেরোরিস্ট এক্টিভিটির ফলে ফিয়ারমঙারিং প্রক্রিয়ায় পলিটিকাল রাইট গ্রুপগুলো ক্ষমতায় আসবে, তারা সংখ্যালঘু হিসেবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একশন নেবে, এতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হবার প্রভাবে আরও গোড়া হয়ে গিয়ে এক্সট্রিমিস্ট হবে, আর টেরোরিস্টদের উদ্দেশ্য পুরণ হবে। এবিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত লিখন।
৫। ফিয়ারমংগারিংঃ এটি একটি রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন কৌশল, যা একটি অন্যতম প্রোপাগান্ডা টেকনিকও বটে। এখানে সমাজের লোকদেরকে একটি বিশেষ ধর্ম, জাতির প্রতি ভয় দেখানো হয়, আর এর মাধ্যমে বলা হয়, তোমরা হুমকিতে আছো, আমাদেরকে ভোট দাও, আমরা রক্ষা করব। অর্থাৎ এখানে আর্টিফিশিয়ালি ভয় দেখানো হয়, বা ভয়ের বিষয়গুলো সামনে আনা হয়, আর এই ভয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে গোড়া বানিয়ে বিশেষ পলিটিকাল পার্টির উদ্দেশ্য পূরণ করা হয়। এর উদাহরণ ভারতেই দেখা যাবে। গত দশ বছরে লাভ জিহাদ, গোহত্যা, ধর্মান্তরকরণের ভয় দেখিয়ে কাও প্রোটেকশন, ঘর ওয়াপ্সি, বেটি বাঁচাও বহু লাও টাইপের আন্দোলনকে প্রমোট করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের উপর এর প্রভাব অনেক বেশি ছিল। এরা এর ফলে হুমকি বোধ করে, আর হিন্দুত্বের প্রভাবে গোড়া হয়ে যায়। আর তার ফল দেখা যায় নির্বাচনে।
৬। কোন একটি বিশেষ ধর্মের সকলেই যদি সমাজের নিম্ন শ্রেণীতে চলে যায়ঃ এটা হয়েছিল ঔপনিবেশিক শাসনে ইসলাম ধর্মের বেলায়। ব্রিটিশ শাসনে এলিট মুসলিমরাও নিম্ন শ্রেণীতে পতিত হয়েছিল। এর ফলে পুরো গোষ্ঠীর মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ে ও একরকম ইসলামি জাতীয়তাবাদ তৈরি হয়। মার্ক্স বলেছিলেন ক্লাস স্ট্রাগলের আগে ক্লাস কনশাসনেস তৈরি হতে হয় যার মাধ্যমে প্রোলেতারিয়েতরা তাদের উপর চাপানো আইডিওলজি, ইনভারটেড রিয়ালিটিকে ঝেড়ে ফেলে, ধর্ম তেমনই একটি ইনভার্টেড রিয়ালিটি। কিন্তু দেখা যায়, একটি ধর্মের সবাই যদি নিচু শ্রেণীর হয়, আর তার শোষক ভিন্ন ধর্মই হয়, যেমন ভারতবর্ষে হিন্দু ও ব্রিটিশ খ্রিস্টান, তাহলে ক্লাস কনশাসনেসের আগেই ক্লাস স্ট্রাগলের মত ব্যাপার ঘটে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ থেকে সেই বিশেষ চেতনার উদ্ভব হয়। সেসময় বাংলায় তিতুমিরের আন্দোলন, ফরায়েজি আন্দোলন দেখা গিয়েছিল। এছাড়া সারা বিশ্ব জুড়ে ওয়াহাবিজম, থানুসি, ওয়াহাবিয়া ইত্যাদি মতবাদের উদ্ভব হয়, যেগুলো ইসলামের ক্ষেত্রে রিগ্রেসিভ সংস্কারপন্থী আন্দোলন ছিল। এর প্রভাবেই তখন মুসলিমদের মধ্যে গোড়ামি প্রবেশ করে।
৭। থিওলজিঃ এপোফ্যাটিক থিওলজি বলতে বোঝায় যে থিওলজিতে "এটা করো না" "ওটা করা যাবে না" এরকম নির্দেশনাবলি এর পরিমাণ "এটা করো", "ওটা করতে হবে" এর চেয়ে বেশি মাত্রায় থাকে। আধুনিক সমাজে যদি কোন ধর্ম তাল মিলিয়ে না চলে তাহলে এই সমাজের অনেক কাজের উপর ধর্মতত্ত্বটিকে অধিক পরিমাণে নিষেধ আরোপ করতে দেখা যায়। আর এই নিষেধ অধিক পরিমাণে পরকালের প্রতি ভয় তৈরি করে, কারণ নিষেধাজ্ঞাই অনেক বেশি, যেগুলো করে ফেললে শাস্তির বিধান থাকে। এসব ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া যদি একটি ধর্মে সমবেত হবার বাধ্যবাধকতা থাকে, প্রতিদিন একাধিকবার নির্দিষ্ট সময় পর প্রার্থনার ডাক থাকে, যা সবার কাছে সকলে জানিয়েই পৌঁছে যায় তখন কনফারমেশনাল বায়াজ তৈরি হয়, আর তার ফলে ভয় আরও বৃদ্ধি পায়, এছাড়া এমন একটি ধর্মীয় পরিবেশ যেখানে ছোটবেলা থেকেই প্রায় সব বিষয়েই অপারেন্ট কন্ডিশনিং এর দ্বারা আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন ভয় বেড়ে যায়। বিশেষ রকমের থিওলজির প্রভাবেও তাই গোড়ামি বৃদ্ধি পেতে পারে।
এগুলো এখন অবধি আমার বের করা কারণগুলো যেগুলো ওই অনিশ্চয়তা ও হুমকির প্রতি প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্যাটার্নেই পড়ে। এখানে বিস্তারিত কিছু লিখলাম না, তথ্যসূত্রেরও উল্লেখ করলাম না। এগুলো নিয়ে বিস্তারিত লিখে পরে পোস্ট করব।

Re: বিশ্বাস, পরিবর্তন ও আয়ার্ল্যান্ড
বাঃ, সুন্দর আলোচনা । আমার একটি সামান্য ইঙ্গিতের প্রেক্ষিতে যেভাবে সুমিত রায় বিষয়টাকে তুলে ধরলেন তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ । তবে, এটা বোধহয় আমার ইঙ্গিতটির সাপ্লিমেন্ট, ইলাবোরেশন নয় । গরিব মানুষ যখন দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকে সমর্থন করে তখন কোন মানসিকতা থেকে তা করে এই নিয়ে ভারতে কোনও সমীক্ষা হয়েছে কিনা জানিনা । এ ধরনের গবেষণার সন্ধান থাকলে অনুগ্রহ করে জানাবেন ।
মন্তব্যের পাতাগুলিঃ [1] [2] এই পাতায় আছে 7 -- 26
আপনার মতামত দেবার জন্য নিচের যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করুন