![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
যে গ্রামে যাবার কথা ছিল।
Prativa Sarker
ওপরচালাক, পেশীকলাগর্বিত, ধনগর্বী, অথচ ভেতরে শিশুর মতো অসহায় এক চিত্রাভিনেতা সাজা পেয়েছে বলে, পুরো সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হয় প্রবল চ্যাঁ ভ্যাঁ, নয়ত থুথুছেটানো ছিছিক্কার দেখে হাসি পায়, রাগও ধরে। হয় লোকে অন্ধ, কেবল সুগঠন দেখে অক্কা পায়, নয় তো মিচকে, ভেতর ভেতর বেজায় খুশি যে কোন ক্ষেত্রে ইন্দ্রপতন হলেই। দ্যাখ ব্যাটা কেমন লাগে, খুব বাড় বেড়েছিলি তো - গোছের মানসিকতা আর কি। স্যাডিস্ট, মর্ষকামী।
এই তুমুল আলোড়নে বিচারের বাণী বা বিচারব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়ে কোন আলোচনা সেঁদোতেই পারছে না। সত্যিকারের নায়কদের জন্য কোন কথাই নেই। সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে ফ্যান ক্লাবের মাসলবাজ সদস্যরা বা থু থু ছেটানো পাবলিকের দল।
এই হাল্লাবোলে তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না। মানে বিশনইদের কথা। কতটা গোঁ থাকলে এতো বছর ধরে অক্লান্ত লড়া যায়, কি বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত হলে বিশ বছর আগের কথায় তন্নিষ্ঠ থাকা যায় ভয় বা লোভ ত্যাগ করে, তা বুঝতে হলে আজ বিশনইদের (২০+৯) নিয়ে আলোচনা জরুরী।
এই আখাম্বা ধর্মহীন পাপিষ্ঠার মুখেও মৌলবাদী না হলে সহিষ্ণু ধার্মিকদের প্রতি চোখা চোখা গালাগাল যে আসে না, তার কারণ ত্রিশ বত্রিশ বছর আগে এক তরুণীর যোধপুরে এক বিশনই দর্শন। তখন না ছিল স্মার্ট ফোন, না ফেসবুক। তবু যে সাদা ধুতি আর মস্ত পাগড়ির আবছা ছবিটি বয়ে নিয়ে বেড়ায় সে, তার মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট মানুষটির গাছ আর অন্য প্রাণীর জন্য ভালোবাসা।
অনেক গল্প হয়েছিল সেদিন। তাদের গ্রাম দেখতে যাবার প্রতিশ্রুতি। পাঁচমুড়ো পাহাড়ের তলায় শ্যামলী নদীর ধারে নয়, মাঝে মাঝেই মরুঝড় বিচিত্র আলপনা আঁকে সেখানে উঠোনে, আর খেজুর গাছের সারি উসকে দেয় খেজারলি গণহত্যার স্মৃতি।
সুন্দর লাল বহুগুণার চিপকো আন্দোলনের বহু আগেই বৃক্ষনিধনে বাধা দিয়ে প্রাণ দিয়েছিল ৩৬৩ জন বিশনই নারীপুরুষ। সবার পুরোভাগে ছিলেন হয়তো পৃথিবীর প্রথম নারী পরিবেশ আন্দোলনকারী অমৃতা দেবী।
সেটা ১৮৪৭ সালের কথা। যোধপুররাজ অভয় সিংহের ইচ্ছে হয়েছিল বিশনইদের এলাকার খেজুরবন ধ্বংস করে রাজমহিষীর প্রাসাদ বানাবে। ভাবতেও পারেনি দলে দলে মানুষ এসে জড়িয়ে ধরবে গাছ আর কচুকাটা হবে সৈন্যদের তলোয়ারে। এতো অনুতাপ হয় তার, যে ওই এলাকায় রাজাদেশে বন্ধ হয়ে যায় গাছ কাটা এবং বন্য প্রাণ শিকার।
রাজশক্তি এবং উদ্যত অস্ত্র যাদের ভয় দেখাতে পারেনি, প্রকৃতির জন্য ভালবাসা যাদের কোষে কোষে, তারা কি কয়েকটি মনুষ্যের বন্দুকবাজি এবং টাকার খেলায় ভয় পাবে ! হোক এই সুদর্শন মনুষ্যেরা মুম্বাইয়ের রুপোলী স্বর্গের বাসিন্দা। চিঙ্কারাশাবকের গলা কাটার সময় তেনারা এইসব জানলে ভালো হতো।
যাইহোক, বিশনই মানুষটি আমায় বলেছিলেন তাদের গুরু জাম্ভোজী এবং তার শেখানো ২৯টি জীবনদীক্ষার কথা। দীর্ঘ খরায় প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন এই মানুষটি গাছের গোড়ায় সঞ্চিত জলভান্ডারের স্বপ্ন সবাইকে বলে। শিখিয়েছিলেন প্রকৃতিতে সবার সমান অধিকার। পশুর এবং মনুষ্যের। তারপর থেকেই স্বভাবরুদ্র ক্ষত্রিয়দের একাংশ বিশনই সম্প্রদায়ভুক্ত হয়। নিরামিষাশী তো বটেই, জ্যান্ত গাছ কাটে না আর, জ্বালানির মূল উৎস ঘুঁটে ও মরা শুকনো ডালপালা। সাম্যের রঙ এদের কাছে শ্বেত, পুরুষ তাই সাদা ধুতি, মেয়েরা মূলত লাল। নীল রঙ নিষিদ্ধ, কারণ এই রঙে ছোপাতে হলে একবারে প্রচুর পরিমাণ উদ্ভিদকে নিংড়ে নিতে হয়।
কৃষ্ণসার এবং চিঙ্কারা হরিণ শুধু চারপেয়ে জীব নয় এদের কাছে। পূর্বজদের আত্মার বাস ঐ নিরীহ শান্ত প্রাণিগুলির মধ্যে এই নাকি প্রচলিত বিশ্বাস। তাই বিশনই গ্রামে এদের অবাধ বিচরণ।
মৃত্যুর পর বিশনই-দেহ চিতায় যায় না, গায়ে মাটি জড়িয়ে সোজা সমাধিতে। পাছে গাছ কেটে কেউ চিতা জ্বালায়, তাই এ সাবধানতা। রাতে সেই কবরে শুয়ে মাটির ওপর ছুটে যাওয়া অসংখ্য খুরের শব্দ গোণে হয়তো দেহহীন বিশনই।
এই মানুষগুলো শিকারি, চোরাশিকারি কাউকে রেয়াৎ করে না আজ অব্দি। তাদের লড়াই জারি আছে।
মাতামাতি করতে হয় তো এদের নিয়ে করি, বন্দুকবাজদের নিয়ে নয়।
বিশাল পাগড়ি বিদায় নেবার সময় তার হাতের রাবণহাত্থা দেখিয়ে বলেছিলাম, এক গানা শুনাও না।
হা হা হাসিতে টাল খেলো ত্রিভুবন। সে বলল, পাধারিয়ে মেরা গাঁও।
সে তো হলো, কিন্তু গ্রামের নামটা কি যেন বলেছিল সে ? জাম্ভা না মুকাম ! ভেবেছিলাম এতোদিন পর এবার রাজস্থান গিয়ে বিশনই ভিলেজ সাফারিতে যাব। তা এতো ভুলে গেলে আর কি হবে ! 😊
এই তুমুল আলোড়নে বিচারের বাণী বা বিচারব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়ে কোন আলোচনা সেঁদোতেই পারছে না। সত্যিকারের নায়কদের জন্য কোন কথাই নেই। সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে ফ্যান ক্লাবের মাসলবাজ সদস্যরা বা থু থু ছেটানো পাবলিকের দল।
এই হাল্লাবোলে তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না। মানে বিশনইদের কথা। কতটা গোঁ থাকলে এতো বছর ধরে অক্লান্ত লড়া যায়, কি বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত হলে বিশ বছর আগের কথায় তন্নিষ্ঠ থাকা যায় ভয় বা লোভ ত্যাগ করে, তা বুঝতে হলে আজ বিশনইদের (২০+৯) নিয়ে আলোচনা জরুরী।
এই আখাম্বা ধর্মহীন পাপিষ্ঠার মুখেও মৌলবাদী না হলে সহিষ্ণু ধার্মিকদের প্রতি চোখা চোখা গালাগাল যে আসে না, তার কারণ ত্রিশ বত্রিশ বছর আগে এক তরুণীর যোধপুরে এক বিশনই দর্শন। তখন না ছিল স্মার্ট ফোন, না ফেসবুক। তবু যে সাদা ধুতি আর মস্ত পাগড়ির আবছা ছবিটি বয়ে নিয়ে বেড়ায় সে, তার মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট মানুষটির গাছ আর অন্য প্রাণীর জন্য ভালোবাসা।
অনেক গল্প হয়েছিল সেদিন। তাদের গ্রাম দেখতে যাবার প্রতিশ্রুতি। পাঁচমুড়ো পাহাড়ের তলায় শ্যামলী নদীর ধারে নয়, মাঝে মাঝেই মরুঝড় বিচিত্র আলপনা আঁকে সেখানে উঠোনে, আর খেজুর গাছের সারি উসকে দেয় খেজারলি গণহত্যার স্মৃতি।
সুন্দর লাল বহুগুণার চিপকো আন্দোলনের বহু আগেই বৃক্ষনিধনে বাধা দিয়ে প্রাণ দিয়েছিল ৩৬৩ জন বিশনই নারীপুরুষ। সবার পুরোভাগে ছিলেন হয়তো পৃথিবীর প্রথম নারী পরিবেশ আন্দোলনকারী অমৃতা দেবী।
সেটা ১৮৪৭ সালের কথা। যোধপুররাজ অভয় সিংহের ইচ্ছে হয়েছিল বিশনইদের এলাকার খেজুরবন ধ্বংস করে রাজমহিষীর প্রাসাদ বানাবে। ভাবতেও পারেনি দলে দলে মানুষ এসে জড়িয়ে ধরবে গাছ আর কচুকাটা হবে সৈন্যদের তলোয়ারে। এতো অনুতাপ হয় তার, যে ওই এলাকায় রাজাদেশে বন্ধ হয়ে যায় গাছ কাটা এবং বন্য প্রাণ শিকার।
রাজশক্তি এবং উদ্যত অস্ত্র যাদের ভয় দেখাতে পারেনি, প্রকৃতির জন্য ভালবাসা যাদের কোষে কোষে, তারা কি কয়েকটি মনুষ্যের বন্দুকবাজি এবং টাকার খেলায় ভয় পাবে ! হোক এই সুদর্শন মনুষ্যেরা মুম্বাইয়ের রুপোলী স্বর্গের বাসিন্দা। চিঙ্কারাশাবকের গলা কাটার সময় তেনারা এইসব জানলে ভালো হতো।
যাইহোক, বিশনই মানুষটি আমায় বলেছিলেন তাদের গুরু জাম্ভোজী এবং তার শেখানো ২৯টি জীবনদীক্ষার কথা। দীর্ঘ খরায় প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন এই মানুষটি গাছের গোড়ায় সঞ্চিত জলভান্ডারের স্বপ্ন সবাইকে বলে। শিখিয়েছিলেন প্রকৃতিতে সবার সমান অধিকার। পশুর এবং মনুষ্যের। তারপর থেকেই স্বভাবরুদ্র ক্ষত্রিয়দের একাংশ বিশনই সম্প্রদায়ভুক্ত হয়। নিরামিষাশী তো বটেই, জ্যান্ত গাছ কাটে না আর, জ্বালানির মূল উৎস ঘুঁটে ও মরা শুকনো ডালপালা। সাম্যের রঙ এদের কাছে শ্বেত, পুরুষ তাই সাদা ধুতি, মেয়েরা মূলত লাল। নীল রঙ নিষিদ্ধ, কারণ এই রঙে ছোপাতে হলে একবারে প্রচুর পরিমাণ উদ্ভিদকে নিংড়ে নিতে হয়।
কৃষ্ণসার এবং চিঙ্কারা হরিণ শুধু চারপেয়ে জীব নয় এদের কাছে। পূর্বজদের আত্মার বাস ঐ নিরীহ শান্ত প্রাণিগুলির মধ্যে এই নাকি প্রচলিত বিশ্বাস। তাই বিশনই গ্রামে এদের অবাধ বিচরণ।
মৃত্যুর পর বিশনই-দেহ চিতায় যায় না, গায়ে মাটি জড়িয়ে সোজা সমাধিতে। পাছে গাছ কেটে কেউ চিতা জ্বালায়, তাই এ সাবধানতা। রাতে সেই কবরে শুয়ে মাটির ওপর ছুটে যাওয়া অসংখ্য খুরের শব্দ গোণে হয়তো দেহহীন বিশনই।
এই মানুষগুলো শিকারি, চোরাশিকারি কাউকে রেয়াৎ করে না আজ অব্দি। তাদের লড়াই জারি আছে।
মাতামাতি করতে হয় তো এদের নিয়ে করি, বন্দুকবাজদের নিয়ে নয়।
বিশাল পাগড়ি বিদায় নেবার সময় তার হাতের রাবণহাত্থা দেখিয়ে বলেছিলাম, এক গানা শুনাও না।
হা হা হাসিতে টাল খেলো ত্রিভুবন। সে বলল, পাধারিয়ে মেরা গাঁও।
সে তো হলো, কিন্তু গ্রামের নামটা কি যেন বলেছিল সে ? জাম্ভা না মুকাম ! ভেবেছিলাম এতোদিন পর এবার রাজস্থান গিয়ে বিশনই ভিলেজ সাফারিতে যাব। তা এতো ভুলে গেলে আর কি হবে ! 😊
শেয়ার করুন |

Re: যে গ্রামে যাবার কথা ছিল।
কথা দিয়ে এলে, যেতে হয়। ভারতীয় ঐতিহ্য, 'প্রাণ যায়ে পর বচন না জায়ে'। সিরিয়াস হয়ে বলি, ভ্রমন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ লেখা পাওয়া যায় তো প্রতিবার বেড়িয়ে এলেই , তাই..., আর সে বড়ো মনোগ্রাহী লেখা! কত অজানা তথ্য, জানা তথ্যের নতুন বিশ্লেষণ, নতুন করে ভাবতে শেখা। বিশনই সম্প্রদায়ের কথাই যেমন, এত বিস্তারিত জানতাম না তো। আরো চাই , আরো চাই।
আপনার মতামত দেবার জন্য নিচের যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করুন