![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
অনন্ত লেকের জলে চাঁদ পড়ে আছে
Sakyajit Bhattacharya
তারপর একদিন আমরা জেগে উঠি দীর্ঘ নিদ্রার পর। রূপকথার মতো, নারীর মতো, প্রেমের মতো সেইসব প্রথম ভোরের আলোয় সত্যের মুখ দেখা যায়। সেই অনাস্বাদিত ভোরবেলায় আমি ফিরে আসি গন্তব্য ছেড়ে, লাস্ট ট্রেন মিস করে নিজের শিকড়ের কাছে। সে আমার নিজস্ব মাকন্দো। আমার দক্ষিণ কলকাতা। প্রথম প্রেমের মত যাকে লুকিয়ে রাখতে হয় টেস্টপেপারের পাতার ভাঁজে। সেই প্রেম তাত্বিকতার খবর রাখে না। তা ছিল নিতান্তই সমর্পণ। তাতে সরলতা ছিল।
আমরা যারা গদার বর্ণিত মার্ক্স ও কোকাকোলার সন্তান, তাদের নব্বই দশকের প্রেমে তুমুলভাবে ফিরে ফিরে এসেছে দক্ষিণ কলকাতা। এমনকি উত্তরের ছেলেমেয়েরাও প্রেম করতে চলে আসত এখানে। এই সেই গড়িয়াহাটার মোড়, যেখানে ভিড়ে ভিড়াক্কার রাস্তায় প্রেমিকার হাতবদল হয়ে যায় অনায়াসে। এই সেই গলফগ্রিন কবরখানা, যেখানে অ্যাংলো তরুণীর কবরের ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়া যেত। এবং এখানেই সেই ঢাকুরিয়া, যার অনন্ত লেকের জলে চাঁদ পড়ে ছিল। আছে।
আমি বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে পড়তাম, এবং অবধারিতভাবে আমাদের বন্ধুদের প্রথম প্রেম ঘুরেফিরে ধাক্কা খেয়েছে রিচি রোড, লাভলক সরণী আর ম্যাডক্স স্কোয়ারের আধো অন্ধকার গলিঘুঁজিগুলোতে। শীত পড়ার আগে আগে, যখন একটা আবছা ধোঁয়াটে চাদর জড়িয়ে থাকে সন্ধের শহরের গায়ে, সেই সময়ে এইসব জায়গাগুলো মায়াময় হয়ে ওঠে। একটা নরম মনকেমন আলগা লেগে থাকে ফুটপাতের পাশে কৃষ্ণচূড়ার শরীরে, ম্যাডক্সের ঘাসের শিশিরে, উঁচু উঁচু পুরনো ফ্ল্যাটবাড়ির কালচে বিবর্ণ দেওয়ালে। হাজরা রোড থেকে তিনখানা পরপর গলি দিয়ে ম্যাডক্স স্কোয়ারে ঢোকা যায়। তার একটার গায়ে আটকে থাকা অনেক পুরনো পুরনো বাড়ি আছে। সেখান দিয়ে হেঁটে গেলে সন্ধেবেলা নাচের ধপধপ আওয়াজ পাওয়া যেত। পাওয়া যেত ঘ্যাসঘ্যাসে রেডিওর বেগম আখতারকে। কত কত সন্ধেবেলা আমি এবং সেই মেয়েটি দুজনে হাঁটতে হাঁটতে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়েছি সেইসব বাড়িদের সামনে ! চুপচাপ শুনে গেছি ‘তুঝসে মিল কর হামে, রোনা থা, বহোত রোনা থা’। বেগম কাঁদতেন। গ্র্যান্ডফাদার ক্লকে ঢং ঢং করে ছ’টা বাজত। কেউ একজন দোতলা থেকে গলা তুলে বলত, “মালতি, চায়ের জল চাপানো হল?” অন্ধকার ম্যাডক্স স্কোয়ারের বেদিগুলো তখন সন্ধ্যের পাগল, পথহারানো ভিখিরি আর মনকেমন ক্লান্ত বেশ্যাদের মাথা রাখার জায়গা। এই পৃথিবীর কোনো ঈশ্বর যে জীবনকে কখনো কুড়িয়ে নেবে না।
আরো ছিল বিড়লা মন্দিরের পাশের গলি। গোটা গলিটা অস্বাভাবিক রম্য এবং নির্জন। প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে যাবার পর দুম করে ধাক্কা খেয়ে শেষ হচ্ছে এক প্রাসাদোপম নিস্তব্দ বাড়ির গেটে। রাস্তার দুধারে প্রহরীর মত পাহারা দিচ্ছে কৃষ্ণচুড়া এবং রাধাচুড়া, ঝড়ের সময় আমাদের শরীরে যারা ঝরণার মত ফুলের কুঁড়ি বিছিয়ে দিত। হিম হিম নীরব সেই গলির একটা ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকত এক অন্ধ অ্যালসেশিয়ান। তাকে নিয়ে তার বৃদ্ধা মানুষ বন্ধুটি প্রতিদিন বিকেলবেলা গলিপথে হাঁটতেন। অন্ধ কুকুর মাঝে মাঝে চলতে চলতে ল্যাম্পপোস্টের গায়ে ধাক্কা খেত। ককিয়ে উঠত আলতো। কিন্তু বৃদ্ধা কিছুতেই তাকে চেনে বাঁধতেন না। ছেড়ে দিতেন নিজের মত করে। গন্ধ শুঁকে শুঁকে নড়বড়ে পায়ে আবার সে টলতে টলতে ফিরে আসত বন্ধুর কাছে। হাঁটুতে মাথা ঘষত। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া হত। রাস্তার ধারে একটা বেঞ্চে বসে থাকত দুজনে । সম্ভবত এই পৃথিবীতে দুজনেই নিঃসংগ ছিল। অনুমান করতাম, কারণ আমার প্রেমিকা একবার সেই কুকুরটির মাথায় হাত বোলাচ্ছিল, আর কুকুরটি বারেবারে গন্ধ শুঁকে অনুমান করবার চেষ্টা করছিল কে এই নতুন মানুষ! বারেবারে মাথা ঝাঁকিয়ে, নাক ওপরে তুলে, প্রাণপণে হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিচ্ছিল, জিভ দিয়ে চেটে দিচ্ছিল গা। সম্ভবত বৃদ্ধাটিকে বাদ দিলে তার ভাগ্যে অন্য মানুষের আদর জুটত না। আমি অ্যালসেশিয়ানটির অন্ধ চোখে তখন জল দেখেছিলাম। দক্ষিণ কলকাতার প্রেমের কথা উঠলে আমার আজও অবধারিত মনে পড়ে যায় এক অন্ধ অ্যালসেশিয়ানের চোখের কোণায় এক ফোঁটা জলকে।
আমরা তখন সদ্য স্কুল পেরচ্ছি, কলেজে ঢুকব ঢুকব করছি। দুহাজার সাল ততদিনে দুই তিন বছরের পুরনো হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যবিত্ত টানাটানির ছাত্রজীবনে প্রেম মানে তখন টিউশনির টাকা বাঁচিয়ে বালিগঞ্জ ধাবায় এক প্লেট মাটন কষা আর দুখানা রুটি ভাগাভাগি করে খাওয়া। বইমেলাতে সারাদিন দুজনে ঘুরে ঘুরে দুখানা লিটল ম্যাগ কিনে শুকনো মুখে বাইরে বেরনো। প্রেম মানে তখন হাজরা থেকে হেঁটে হেঁটে আনোয়ার শা রোড আসা। বাসভাড়া দিয়ে একটা এগরোল কিনে দুজনে ভাগ করে খাওয়া। যখন রোলটা শেষ হয়ে আসত, দুজনেই শক্ত করে কাগজটা চেপে ধরে রাখতাম। পালা করে অল্প অল্প কামড় দিতাম। যাতে অপরজন শেষ টুকরোটুকু খেতে পারে। প্রেম মানে তখন পাড়ার এসটিডি বুথে ২ টাকা দিয়ে পাঁচমিনিট ফোন করে তিনমিনিট দুজনেই চুপ করে থাকা। কি বলব কেউ জানত না। আজকের জেন ওয়াই সম্ভবত ভাবতেও পারবে না মোবাইল ফোনবিহীন সেই যুগে চিঠি লিখে প্রোপোজ করার অনুভূতি কেমন ছিল। ডায়রির পাতা ছিঁড়ে যত্ন করে গোটা গোটা অক্ষরে লিখে তাকে দুভাঁজ করে রেখে দেওয়া বইয়ের ফাঁকে। দুরুদুরু বুকে নীল স্কার্ট আর দুই বিনুনীর গম্ভীর চশমাওয়ালা মুখের সামনে গিয়ে দাঁড়ানো। কাঁপা হাতে তুলে দেওয়া চিঠি। বেশিরভাগ সময়েই উত্তর আসত ‘পরে জানাব’। সেই ‘পরে’টা সাধারণত আর আসত না। আস্তে আস্তে সকলেই ভুলে যেত। একলা রোগা ছেলেটি শুধু মাঝে মাঝে একটু অন্যমন্সক হয়ে পড়ত যখন মেয়েটির স্কুলের সামনে দিয়ে যেত। হয়ত পা-টা ধীর হয়ে যেত অজান্তেই। তারপর সমবেত স্কুলবালিকাদের খিলখিল হাসির শব্দে চমকে গিয়ে কান ফান লাল করে দ্রুত পায়ে প্রায় দৌড়ে পার হয়ে যেত সেই চত্বর। তারপর যা হয়, জীবন নিজের ছন্দে গড়িয়ে যেত। সেই ছেলেটা বড় হত। বিদেশ চলে যেত পড়াশোনা করতে। তার আর মনেও থাকত না সেই চিঠি বা মেয়েটির মুখ। কিন্তু দেশে ফিরে আসার পর এক শীতের বিকেলে সে আবার অজান্তেই বেলতলার সেই স্কুলের সামনে চলে যেত। পা যেন তাকে চালিয়ে নিয়ে আসত। আর তারপর স্কুলের উল্টোদিকের তিনকোণার বেদীর রেলিং-এ সে অনেক অনেকটা সময় বসে থাকত। চুপচাপ। কোনো কারণ ছাড়াই।
দক্ষিণ কলকাতার এই আলো-আঁধারি রহস্যের ম্যাজিক মোমেন্টগুলোই আমাদের একটা প্রজন্মকে প্রেম চিনিয়ে দিয়েছিল। ম্যাডক্স স্কোয়ারের দুর্গাপুজোর কথা বলছি না। সেটা বছরের একটা বিশেষ সময়ে ঘটত, আর সত্যি বলতে কি আমার বেশ কৃত্রিম এবং ওভারহাইপড লাগত ব্যাপারটা। তার বাইরে সারা বছর ধরে কুয়াশার চাদর গায়ে অথবা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে, রোদে পুড়ে কিংবা যাদবপুরের বাবুর্চির রোলের দোকানের সামনে লম্বা লাইনে যে প্রেম, সেই প্রেমের কোনো তুলনা আমি পৃথিবীর অন্য কোনো শহরে পাইনি। প্যারিসে স্যিয়েন নদীর ধারে দেখেছি প্রেমিকা বই পড়ে শোনাচ্ছে আর প্রেমিক তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ডাবলিনে টেম্পল বারের রাস্তায় দুই প্রেমিকা পরস্পরকে নরম আদর করছে দেখেছি। কিন্তু স্বার্থপর এবং অন্ধ গোঁয়ারের মত তারপরেও নিজের শহর নিয়ে লড়ে গেছি, দুখানা মাত্র কারণে। ডাবলিন হোক বা প্যারিস, ওদের কোনও দক্ষিণ কলকাতা ছিল না। আর ওদের ভাষাটা বাংলা নয়। সদ্য ক্লাস ইলেভেনের একটা রোগা, নরম দাড়ি ওঠা ছেলেকে যোধপুর পার্কের আর্চিস গ্যালারির সামনে দাঁড়িয়ে এক নরম আকাশী রং-এর ওড়না দেওয়া সালোয়ার কামিজ একবার বলেছিল, “তুমি করে ডাকবি না। বুড়োদের মত শোনায়। তুই করে ডাকিস প্লিজ”। ছেলেটার তখন মনে হয়েছিল পরের সাতদিন ধরে মেয়েটার নরম আংগুল ছুঁয়ে থেকে আলতো করে শুধু ‘তুই, তুই আর তুই’ বলে যায়। মেয়েটা চলে যেতে যেতে পেছন ফিরে তাকিয়ে গালের পাশ থেকে একটা চুলের গোছা আলতো হাতে সরিয়ে বলেছিল, “তুই সিগারেট খেলে সেই গন্ধটা আমার খুব ভাল লাগে জানিস!” সেলিমপুর ঢাকুরিয়ার সাতাত্তর রকম আলোর ছটা ছিটকে এসে তখন ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের চোখ।
সেই প্রেম কালের নিয়মেই টেকেনি। কিন্তু তাতে কি ! দক্ষিণ কলকাতার গল্পগুলো, মায়া রহস্য আর ম্যাজিকগুলো তো তাতে মিথ্যে হয়ে যায় নি !
(চলবে। আরো কিছুটা)
শেয়ার করুন |
মন্তব্যের পাতাগুলিঃ [1] [2] [3] [4] এই পাতায় আছে 52 -- 71

Re: অনন্ত লেকের জলে চাঁদ পড়ে আছে
আমজনতার সিংহভাগ এর দশভাগের একভাগও পেত না সেই আমলে। টালির বাড়িতে থাকতো, বৃষ্টি হলে জল পড়তো, ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না, লন্ঠন দিয়ে কাজ চলতো। খাওয়াদাওয়া বলতে কচুঘেচু শাকপাতাই বেশীরভাগ দিন, হয়তো মাঝে মাঝে চুনোমাছ।
গার্লফ্রেন্ড!!! রামো রামো রামকহ! পাড়ার মরাল জ্যেঠামশাইরা লম্বা ছাতার বাড়ি দিয়ে বখাটেপনা ঘুচিয়ে দিত। ঃ-) (এমনকি নব্বইঅয়ের দশকেও আমাদের বেম্ম মফস্বলে পেরেম পীরিত ছিল লুজারস গেম। ছেলেপিলে বখাটে হয়ে গেলে তবে ওসব করে এই সামাজিক নিদান ছিল ঃ-) )
আর বীমা, ব্যাংক ব্যালেন্স???? এইগুলোর নাম ক'জনে শুনেছিল সেই আমলে?
গার্লফ্রেন্ড!!! রামো রামো রামকহ! পাড়ার মরাল জ্যেঠামশাইরা লম্বা ছাতার বাড়ি দিয়ে বখাটেপনা ঘুচিয়ে দিত। ঃ-) (এমনকি নব্বইঅয়ের দশকেও আমাদের বেম্ম মফস্বলে পেরেম পীরিত ছিল লুজারস গেম। ছেলেপিলে বখাটে হয়ে গেলে তবে ওসব করে এই সামাজিক নিদান ছিল ঃ-) )
আর বীমা, ব্যাংক ব্যালেন্স???? এইগুলোর নাম ক'জনে শুনেছিল সেই আমলে?

Re: অনন্ত লেকের জলে চাঁদ পড়ে আছে
কমরেড এর সোনার কলম হোক, মানে যদি অলরেডি না হয়ে থাকে। কিন্তু বন্ধুত্ত্ব পূর্ণ প্রতিবাদ রেজিস্টার করে গেলাম, এটা করবিন এর লিডারশিপ চ্যালেঞ্জ না;-)
'একলা রোগা ছেলেটি শুধু মাঝে মাঝে....' এই যে বাংলা সাহিত্যে রোগা না হলে লোকের অসহায়তা বোঝানো যায় না, এর তো একটা বিহিত দরকার কমরেড। এই জন্যেই আমার আত্মজীবনী অলিখিত এবং প্রায় অনেকটা সে কারণেই অপ্রকাশিত থেকে গেল। তাছাড়া এটা রেকর্ড করা জরুরী, ছোটো ছোটো মেয়েরা মোটা ছেলেদের ব্যাপারে হেবি হারামি হয়, তারা যাদের ওমা কি সুইট বলে বা যাদের দিকে তাকায়, তাদের জন্য মোটে কান্না কাটি অভিমান চোখ ফোলানো, ঠোঁট কাঁপানো , গেল গেল বেহুলা ভাব কিংব আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে সন্ধের দিকে টুনটুনি মূলক গিলিগিলি সমূহ সব তুলে রাখে হয় রোগাদের জন্যো, নইলে ছাত্র পরিষদের বাইকওয়ালা মস্তান দের জন্য। তখন বিমান দা জোট ও করেনি, আমারো বাইক ছিল না, প্লাস যারা সরু হয় এবং কবিতা নিয়ে মেয়েদের হোস্টেলের সামনে দিয়ে বার বার যাতায়াত করে তাদের বাজার অন্যায় রকম ভালো হওয়ায় আমার এ বলিবর্দ্দসম কাঁধে হায় মাথা রেখেছে শুধুই শান্তিনিকেঅনি দুষ্ট ঘুঘুর বিষ্ঠা। তাই প্রতিবাদের পথ আমি ছাড়িনি, শোভোন ও দেখিয়ে দিয়েছে, বাইক চড়ে ধর্মতলার মোড় কিংবা মিন্টুপার্ক কিংবা সিয়ালদা যেতে গার্সিয়া বর্নাল এর মতো সরু বা হেঁপো না হলেও চলে।
'একলা রোগা ছেলেটি শুধু মাঝে মাঝে....' এই যে বাংলা সাহিত্যে রোগা না হলে লোকের অসহায়তা বোঝানো যায় না, এর তো একটা বিহিত দরকার কমরেড। এই জন্যেই আমার আত্মজীবনী অলিখিত এবং প্রায় অনেকটা সে কারণেই অপ্রকাশিত থেকে গেল। তাছাড়া এটা রেকর্ড করা জরুরী, ছোটো ছোটো মেয়েরা মোটা ছেলেদের ব্যাপারে হেবি হারামি হয়, তারা যাদের ওমা কি সুইট বলে বা যাদের দিকে তাকায়, তাদের জন্য মোটে কান্না কাটি অভিমান চোখ ফোলানো, ঠোঁট কাঁপানো , গেল গেল বেহুলা ভাব কিংব আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে সন্ধের দিকে টুনটুনি মূলক গিলিগিলি সমূহ সব তুলে রাখে হয় রোগাদের জন্যো, নইলে ছাত্র পরিষদের বাইকওয়ালা মস্তান দের জন্য। তখন বিমান দা জোট ও করেনি, আমারো বাইক ছিল না, প্লাস যারা সরু হয় এবং কবিতা নিয়ে মেয়েদের হোস্টেলের সামনে দিয়ে বার বার যাতায়াত করে তাদের বাজার অন্যায় রকম ভালো হওয়ায় আমার এ বলিবর্দ্দসম কাঁধে হায় মাথা রেখেছে শুধুই শান্তিনিকেঅনি দুষ্ট ঘুঘুর বিষ্ঠা। তাই প্রতিবাদের পথ আমি ছাড়িনি, শোভোন ও দেখিয়ে দিয়েছে, বাইক চড়ে ধর্মতলার মোড় কিংবা মিন্টুপার্ক কিংবা সিয়ালদা যেতে গার্সিয়া বর্নাল এর মতো সরু বা হেঁপো না হলেও চলে।

Re: অনন্ত লেকের জলে চাঁদ পড়ে আছে
ঃ-) এটা সত্যি ই আমার মনে নেই ঃ-))) এই পাতা টাকে ঢপের খাতা বলাটা কি শিষ্টতা হবে? আমি তো গত দশ বছরে যা ভেবেছি বা ভাবার ভান করেছি, সব ই এইখানেই অলরেডি আছে আর যা ভাবা উচিত ছিল সেগুলো বাকিদের লেখা পড়লেই পাওয়া যাবে ;-) তাই লোড নিচ্ছি না, কনসিস্টেন্সি ইজ দেয়ার, বিট স্ক্যাটার্ড , জাস্ট লাইক ট্রুথ;-)

Re: অনন্ত লেকের জলে চাঁদ পড়ে আছে
কিছু কিছু জিনিস কন্ট্রোল-সি কন্ট্রোল-ভি করে নিলেই বেশ নিজেকে ম্যাপ করে নেওয়া যায়। যেমন স্কুলের বদলে কলেজ, বালিগঞ্জ ধাবার বদলে নিজাম, কষা মাংসের বদলে বীফ কাবাব, বিড়লা মন্দিরের পাশের গলির বদলে এল-স্কোয়্যার...
শুধু এই একটা জিনিসই ম্যাপ হল না - " সদ্য ক্লাস ইলেভেনের একটা রোগা, নরম দাড়ি ওঠা ছেলেকে যোধপুর পার্কের আর্চিস গ্যালারির সামনে দাঁড়িয়ে এক নরম আকাশী রং-এর ওড়না দেওয়া সালোয়ার কামিজ একবার বলেছিল, “তুমি করে ডাকবি না। বুড়োদের মত শোনায়। তুই করে ডাকিস প্লিজ”।"
ব্যাপারটা উল্টো হল। সেইটা আমার একটা বিরাট বিরাট দুঃখ।
শুধু এই একটা জিনিসই ম্যাপ হল না - " সদ্য ক্লাস ইলেভেনের একটা রোগা, নরম দাড়ি ওঠা ছেলেকে যোধপুর পার্কের আর্চিস গ্যালারির সামনে দাঁড়িয়ে এক নরম আকাশী রং-এর ওড়না দেওয়া সালোয়ার কামিজ একবার বলেছিল, “তুমি করে ডাকবি না। বুড়োদের মত শোনায়। তুই করে ডাকিস প্লিজ”।"
ব্যাপারটা উল্টো হল। সেইটা আমার একটা বিরাট বিরাট দুঃখ।

Re: অনন্ত লেকের জলে চাঁদ পড়ে আছে
স্যান, সময়ের স্থানের ম্যাজিক ফ্যাজিক কিসু না, বয়সটাই ম্যাজিক। চার্ল্স সিমিচ বলে একজন কবি আছেন, হয়তো পড়েছিশ, সম্ভবত সার্বিয়ার থেকে ইমিগ্রেট করা অধুনা টিম দের ওদিকে থাকে আমেরিকার কোথায় যেন, তাঁর একটা অসামান্য লেখা আছে বুঝলি, লেজেন্ডারি জোহান ক্রুয়েফ কে নিয়ে, তো তাতে একটা কথা আছে, মোটামুটি এরকম, 'সে যাই বলুন, ক্রুয়িফ এর কালজয়ী বিস্ময়কর মহত্ত্বের মূল কারণ আমার ছোটোবেলাটা, আমার রেডিও টা।' অন্য জায়্গায় কি লোকে প্রেম করছে না, সকলেই বিশেষ জায়গা মনে করছে নিজের জায়গাটা কে, উইদাউট ডিসরেস্পেক্ট টু শাক্য। গিভেন অফ কোর্স, শহরে ল্যান্ডস্কেপের পরিবর্তন তাড়াতাড়ি হয়, তাই চেনা কেও অচেনা লাগে ঝট করে, কিন্তু এর মধ্যে কি লোকে স্বপ্ন দেখছে না, খাবার ভাগ করে খাচ্ছে না, নেকু নেকু কবিতা লিখছে না? আমার এক ভাইপো, বেশ ছিল ফ্ল্যাট বেচার একটা এজেন্সী তে কাজ করতো, বিয়ার টিয়ার খেত, সল্লেকে খেলা থাকলে টিকিট জোগাঅড় করে দিত, সে এখন কিরকম একটা ঘোরের মধ্যে, এত খারাপ কবিতা লেখা আরম্ভ করেছে কল্পনা করা যায় না, সে এখন প্রচন্ড প্রেম করছে, আমার ধারণা অকারণে মুছো ও যাছে দিনে বার দুয়েক। এ হবেই, এ বয়সের কেস।
আরে পাই, আমার তো যা লেখার ছিল সব ই লেখা হয়ে গেছে, প্রতিটিই এখানে ই আছে।
আরে পাই, আমার তো যা লেখার ছিল সব ই লেখা হয়ে গেছে, প্রতিটিই এখানে ই আছে।

Re: অনন্ত লেকের জলে চাঁদ পড়ে আছে
হানুদাকে বিরাট ক। দক্ষিণ কলকাতা আলাদা করে কিছু না। কারোর কাছে তার দক্ষিণ কলকাতা হল বরানগরের মাঠ, কারোর কাছে হয়ত ফেলে আসা বগুড়া। ওই ক্রুয়েফের মহত্বের মতই, ঢাকুরিয়া লেকের মহত্বের মূল কারণ আমার ছোটবেলা, এবং নব্বই-এর দশক। নস্টালজিয়ার ডিহিস্ট্রিফিকেশন ঘটানোটা কোনো কাজের কথা নয়।

Re: অনন্ত লেকের জলে চাঁদ পড়ে আছে
কলকাতার ধারেকাছে না থেকেও গঞ্জ মফস্সলের বড় হবার দিনগুলোও ঠিক সেই এক রকম। হুবহু একরকম। মাঝে মাঝে মনে হয় শাক্যই কি আমি? কলকাতার জাদু আমি কোনওদিন দেখি নি, মফস্সলের যে জাদু আছে কিশোরোকিশোরীবেলায়, সে জাদুর মাঝখান দিয়ে আমি হেঁটেছি সগর্বে। বাঁচার মত ঐ একটা সময়ই বেঁচেছিলাম। এখন তো অন্যরকম দিনযাপন।
মন্তব্যের পাতাগুলিঃ [1] [2] [3] [4] এই পাতায় আছে 52 -- 71
আপনার মতামত দেবার জন্য নিচের যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করুন